অনুশীলন অংশ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
যারে খুব বেসেছিনু ভালো
সে মোরে ছেড়ে চলে গেল
যে ছিল মোর জীবন ছায়া
রেখে গেছে শুধু মায়া।
লাগে না ভালো অপরূপ প্রকৃতি
যতই করুক কেউ মিনতি
আমি এখন রিক্ত শূন্য
মন পড়ে রয়েছে তার জন্য
সে দিল মোরে কেমনে ফাঁকি
আমি এখন বড় একাকী।
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি প্রথম কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?
খ. “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?” উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের প্রথম দুচরণে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি যেন ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবির মর্মবাণীকেই ধারণ করেছে। তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও। ১
২
৩
৪
১ নং প্রশ্নের উত্তর
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি প্রথম ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
“উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা” উক্তিটি দ্বারা সানন্দে বসন্ত না করে তার দিকে কবির মুখ ফিরিয়ে থাকার কথা বোঝানো হয়েছে।
প্রতি বছর বসন্তের আগমন ঘটে। গাছে গাছে ফুল ফোটে, বিচিত্র রঙের ফুলে ফুলে শাখা ভরে যায়। মাধবী কুঁড়ি সুগন্ধ ছড়িয়ে দেয় চারদিকে। প্রকৃতি বিচিত্র সাজে সজ্জিত হয়ে ফুল ও তার সৌরভ উপহার দিয়ে বসন্তকে বরণ করে নেয়। কবি ভক্তের অনুযোগ, বসন্তকে কবি বরণ না করায়, বসন্তের আবেদন যেন গুরুত্ব হারিয়েছে। কবিভক্ত বুঝতে পারছেন না, কেন কবি বসন্তের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ঋতুরাজকে উপেক্ষা করে কবি যেন তাকে তীব্র ব্যথা দিয়েছেন।
উদ্দীপকের প্রথম দুচরণে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার বিষাদময় রিক্ততার হাহাকার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার বসন্ত প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য কবিমনে আনন্দের শিহরন জাগাবে, তিনি তাকে ভাবে ছন্দে সুরে ভরিয়ে তুলবেন সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু কবিমন যদি কোনো কারণে শোকাচ্ছন্ন বা বেদনা ভারাতুর থাকে তবে তা কবির অন্তরকে স্পর্শ করতে পারবে না। কবির মন জুড়ে আছে শীতের রিক্ত ও বিষণœ ছবি। তাঁর মন গভীরভাবে দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাঁর কণ্ঠ নীরব। শীতের করুণ বিদায়কে কবি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। আর তাই বসন্তও তাঁর মনে কোনো সাড়া জাগাতে পারছে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তাঁর প্রথম স্বামী তাঁর কাব্য সাধনার প্রেরণা-পুরুষ ছিলেন। তাঁরই আকস্মিক মৃত্যুতে কবির অন্তরে যে বিষণœ বেদনার রিক্ততার সুর বেজে উঠেছে, তারই সুস্পষ্ট প্রভাব ও ইঙ্গিত এ কবিতায় বিধৃত হয়েছে। উদ্দীপকের কবিতাংশেও রয়েছে আকস্মিক বিচ্ছেদ-বেদনার করুণ হাহাকার। কেননা, কবি যাকে ভালোবেসেছিলেন। সে ছিল তাঁর জীবন-ছায়া, সে শুধু মায়াভরা স্মৃতি রেখে তাঁর জীবন থেকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে। তাঁর জীবন এখন ফাঁকা, তিনি এখন একাকী। সব সৌন্দর্যবোধ, সব কিছুর গুরুত্ব এখন ম্লান হয়ে গেছে। তাই অপরূপ প্রকৃতির রূপের প্রতি তাঁর কোনো আকর্ষণ নেই। কেননা, সমস্ত মন পড়ে আছে কেবল তাঁরই জন্য। কাজেই একথা বলা যায় যে, উদ্দীপকের প্রথম দুরচণে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার বিষণœ বেদনার রিক্ততার সুর প্রকাশ পেয়েছে।
“উদ্দীপকটি যেন ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মর্মবাণীকেই ধারণ করেছে” কথাটা যথার্থ ও যৌক্তিক। কেননা উদ্দীপক এবং ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মর্মবাণী একই।
প্রিয়জন হারানোর বেদনা বড়ই মর্মান্তিক। যে প্রিয়জন কষ্ট-দুঃখে সমব্যথী, উৎসাহ-অনুপ্রেরণায় উদার, প্রেম-ভালোবাসায় অতুলনীয়, বন্ধুত্বে অনুপম, সেই প্রিয়জনকে কখনো বিস্মৃত হওয়া যায় না। তাঁকে হারিয়ে জীবন হয়ে যায় রিক্ত-শূন্য-মূল্যহীন।
উদ্দীপকে এবং ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রিয়জন হারানোর বিষণœ বেদনার রিক্ততার হাহাকার ধ্বনিত হয়েছে। এটাই এ দুটোর মর্মবাণী বা মূলসুর। উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি যাকে ভালোবেসেছিলেন, সে তাঁর জীবন থেকে চলে গেছে চিরদিনের মতো। শুধু রয়ে গেছে মায়াভরা স্মৃতি। অপরূপ প্রকৃতি সৌন্দর্য তাঁর ভালো লাগে না। রিক্ত শূন্য একাকী জীবনে তাঁর স্মৃতিটুকুই এখন সান্ত্বনা। একইভাবে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবি তাঁর স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনকে হারিয়ে রিক্ত ও শূন্য হয়ে গেছেন। কেননা, তিনিই ছিলেন তাঁর সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও প্রেরণাদাতা। এর ফলে তাঁর সাহিত্য সাধনায়ও নেমে আসে এক দুঃসহ বিষণœতা। কবিমন আচ্ছন্ন হয়ে যায় রিক্ততার করুণ হাহাকারে।
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, উদ্দীকপটি ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মর্মবাণীকেই ধারণ করেছে।
অতিরিক্ত অনুশীলন (সৃজনশীল) অংশ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আর ক’দিন পরেই পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে প্রতিবছরই কলেজে বৈশাখী উৎসব হয়। সকলে প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যস্ত। কিন্তু শিখা কই? শিখাকে ছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কথা চিন্তা করা যায় না। গান, আবৃত্তি, অভিনয় সকল শাখায়ই তার এতটা দখল যে কলেজে তার দ্বিতীয়টি নেই। সকলে মিলে শিখাকে খুঁজতে লাগল। অনেক খোঁজাখুঁজি শেষে তাকে পাওয়া গেল, পুকুর পাড়ে। জলের পানে এক দৃষ্টিতে নীরবে চেয়ে আছে। সবাই গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল ওর উপর। “কীরে, তুই এখানে? আর আমরা তোকে সারা ক্যাম্পাস খুঁজে খুঁজে হয়রান!” শিখার চিন্তায় যেন বাধা পড়ল, “হ্যাঁ তোমরা? ও বৈশাখী উৎসব তাই না? থাক না এবার না হয় নাই যোগ দিই উৎসবে।” বন্ধুরা আর পীড়াপীড়ি করে না, ওরা জানে শিখা কেন এ কথা বলছে।
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কোন ঋতুর কথা বলা হয়েছে?
খ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতির কোন রূপ চিত্রিত হয়েছে?
গ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির অনুভূতির আলোকে শিখার বৈশাখী উৎসবে যোগ না দেয়ার কারণ উদঘাটন কর।
ঘ. ‘‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতা এবং উদ্দীপকের আলোকে বাইরের আনন্দ-উৎসবের সাথে মানুষের মনের অবস্থার সম্পর্ক নির্ণয় কর। ১
২
৩
৪
২ নং প্রশ্নের উত্তর
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বসন্ত ঋতুর কথা বলা হয়েছে।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বসন্তের অপরূপ রূপ চিত্রিত হয়েছে।
বসন্ত ঋতুর আগমনে প্রকৃতি জুড়ে নতুন রূপের পসরা বসেছে। পত্র-পুষ্প-মঞ্জুরিতে অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়েছে সমগ্র প্রকৃতি। বাতাসের দিক বদলে গেছে। উত্তরের হিমেল বাতাস নয়, বরং এসেছে উদাসী, মৃদু-মন্দ দখিনা বাতাস, সাথে এনেছে পৃথিবীর সমস্ত সৌরভ। ফুলের বুকে ভ্রমরের গুঞ্জন, কাননে বাতাবি লেবু ফুলের সুবাস, কুঞ্জে-কুঞ্জে আম্র মঞ্জুরির সুগন্ধ প্রকৃতিকে করে তুলেছে উন্মাতাল। নানা ফুলে শোভিত বৃক্ষরাজি, আর মাধবীর বুকে উঁকি দেয়া সদ্যজাত কুঁড়ি সগৌরবে ঘোষণা করছে বসন্তের জয়ভেরি। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বসন্তের এমন রূপই চিত্রিত হয়েছে।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্যময় রূপ প্রকাশিত হলেও সেটা মুখ্য হয়ে ওঠে নি। বরং কবির আপনজন হারানোর ফলে তার মনোবেদনাই এখানে প্রধান হয়ে উঠেছে।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবি প্রকৃতিতে বসন্ত আসলেও তার সাথে যোগ দিতে পারেন নি। কারণ, একরাশ বেদনার মেঘ ছড়িয়ে আছে তাঁর মনের আকাশে। সেখানে প্রকৃতির এই আনন্দ উৎসবের কোনো প্রভাব নেই। কবি অত্যন্ত বেদনাক্রান্ত তাঁর হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনের কথা মনে করে। এমন উৎসবের দিনে ঐ প্রিয়জন কাছে থাকলে হয়তো সবকিছু রঙিন মনে হতো। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণই উল্টো।
কবির মতো উদ্দীপকের শিখাও বৈশাখী উৎসবে যোগ দিচ্ছে না, কারণ তার মন ভালো নেই। প্রকৃতি, প্রতিবেশ উৎসবমুখর, কিন্তু তাঁর মন উদাস। সে প্রকৃতির এই উৎসবমুখর পরিবেশের সাথে একাত্ম হতে পারছে না। কারণ, তার মনও আজ বিরহ বেদনাকাতর। এই বেদনা ও দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে আনন্দে যোগ দিলে তা সফল হয় না। তাই ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির মতো উদ্দীপকের শিখাও উৎসবে যোগ দেবে না।
বাইরের অবস্থার সাথে মানুষের মনের সরাসরি সম্পর্ক বিদ্যমান। প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবে মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে।
প্রকৃতির সাথে মানুষের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। প্রকৃতির প্রভাব যেমন মানুষের উপর পড়ে, তেমনি মানুষের মনের প্রভাবও প্রকৃতিতে প্রতীয়মান হয়। প্রকৃতির আনন্দ মনে শিহরন জাগায়, আবার প্রকৃতির বিমর্ষতা মনকে দুঃখভারাক্রান্ত করে।
মন ভালো থাকলে সবকিছু আনন্দময় মনে হয়। কিন্তু মন যখন প্রিয়জন হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত, তখন প্রকৃতির অনেক কিছুই মনকে আর স্পর্শ করে না। বরং তা থেকে কেবল প্রকৃতির এই সুন্দর মুহূর্তে প্রিয়জন সান্নিধ্যে থাকতে পারলে কী আনন্দময় হয়ে উঠত মুহূর্তগুলো, সে ভাবনায় মন উদাস হয়। সুতরাং, বাইরের আনন্দ-উৎসব মানুষের মনকে প্রভাবিত করলেও মন দুঃখভারাক্রান্ত থাকলে সবকিছু বিষাদময় মনে হয়।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায়ও বাইরের আনন্দ উৎসবের সাথে মনের এমন সম্পর্কের ছবিই ফুটে ওঠেছে। এখানে দেখা যায়, কবির মন প্রিয়জন হারানোর বেদনায় আক্রান্ত বলে তিনি বসন্তের উৎসবে যোগ দিতে পারছেন না। বরং তা থেকে তার মনে দুঃখের বিলাপ। একই অবস্থা প্রকাশিত হয়েছে উদ্দীপকের শিখার মাধ্যমে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
অনিতা মাঝে মাঝে কবিতা লেখে। বিশেষ বিশেষ দিবসকে সামনে রেখে কবিতা লেখা তার নৈমিত্তিক কর্ম। কলেজের ম্যাগাজিনের প্রতি সংখ্যায় তার কবিতা থাকা চাই-ই-চাই। এবার বসন্ত উপলক্ষে সংখ্যা বের হবে, তাকে কবিতা লিখতে বলা হলো। কিন্তু কই, সেতো সেরকম আনন্দের কবিতা লিখতে পারছে না। অনিতা আনন্দের কবিতা, বসন্ত বরণের কবিতা লিখতে চাইছে, কিন্তু তার কলম দিয়ে বেরিয়ে আসছে দুঃখঝরা বাণী। মনের কোণে ব্যথা টনটনিয়ে ওঠে। দুঃখভারাক্রান্ত মনে চেয়ে রয় আকাশপানে। হয়তো প্রিয়জনের স্মৃতি বার বার ডাকছে তাকে।
ক. ‘মিনতি’ শব্দটির অর্থ ও বুৎপত্তি নির্দেশ কর।
খ. বসন্তের আগমনেও কবির পুষ্পসাজ নেই কেন?
গ. অনিতা কেন আনন্দের কবিতা লিখতে পারছে না? ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির অবস্থার সাপেক্ষে আলোচনা কর।
ঘ. “অলখের পাথার বাহিয়া তরী তার এসেছে কী? বেজেছে কি আগমনী গান?” ব্যাখ্যা কর। ১
২
৩
৪
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
‘মিনতি’ শব্দের অর্থ অনুরোধ। ‘মিনতি’ শব্দটি সংস্কৃত বিনতি এবং আরবি মিনত শব্দযোগে তৈরি হয়েছে।
বসন্তের আগমনে সাধারণত মানুষের মন প্রফুল্ল থাকে। কিন্তু বসন্তের আগমনে কবি সুফিয়া কামালের মন বিষণœ। তাই বসন্তের আগমনে তার পুষ্পসাজ নেই।
বসন্তে আগমনে কবির বর্ণাঢ্য সজ্জা থাকার কথা। কিন্তু নির্বিকার কবির সে রকম কোনো সজ্জা চোখে পড়ছে না। বরং কবির মনে রিক্ত, বিমর্ষ, পুষ্পহীন বিগত শীতের অবস্থান স্থায়ী হয়ে আছে। বসন্ত তো কবির একক বন্দনার অপেক্ষা করে নাই। সকলেই তার উৎসবে মুখরিত। কবি বরং উৎসবহীন শীতের প্রতিই ধ্যানমগ্ন থাকতে চান। বর্ণহীন, পুষ্পহীন, নিরাসক্ত শীত প্রকৃতপক্ষে কবির প্রয়াত স্বামীর প্রতি কবির অনুভূতির প্রতীক। স্বামী নেই, তাই প্রকৃতির সব সজ্জা কবির কাছে অর্থহীন মনে হয়। সুতরাং, বলা যায়, প্রয়াত স্বামীর স্মৃতি-কাতরতার জন্যেই কবির পুষ্পসাজ নেই।
স্বজন বিয়োগে কোনো কালই মানুষের মনে আনন্দ দিতে পারে না। তাই কবি সুফিয়া কামাল ও অনিতা স্বজন বিয়োগে মনের আনন্দে কবিতা লিখতে পারছেন না।
উপরের অনুচ্ছেদে দেখা যায়, সারাজীবন নানা উৎসব উপলক্ষে কবিতা লিখে আসলেও এবার বসন্ত উপলক্ষে কবিতা লিখতে পারছে না অনিতা। অনিতার কাছে সবার প্রত্যাশা সে যেন বসন্তকে বরণ করে একটা কবিতা লিখে। কিন্তু আনন্দের যেন অবসান হয়ে গেছে অনিতার জীবনে। তার মন বিষাদগ্রস্ত তাই সে আনন্দের কবিতা লিখতে পারছে না।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির সাথে তুলনীয় অনিতার অবস্থা। এ কবিতার কবি তার প্রয়াত স্বামীর স্মৃতিতে আচ্ছন্ন। থেকে থেকে কেবল স্বামীকে হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত তার মন। তাই ভক্তের বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও কবিতা লিখতে পারছেন না কবি। তার মনে হচ্ছে, প্রকৃতিকে বরণ করে নেবার মতো আনন্দ তার মনে নেই।
সুতরাং, ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কবির সাথে তুলনায় বলা যায়, কবি যেমন তার স্বামীকে হারানোর বেদনার আচ্ছন্নতা কাটিয়ে বসন্ত বরণের কবিতা লিখতে পারছেন না, তেমনি অনিতাও প্রিয়জন হারানোর কষ্ট ভুলে আনন্দের কবিতা রচনা করতে পারছে না।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার উল্লিখিত পঙ্ক্তিতে কবি মনের বিষণœতা প্রকাশ পেয়েছে।
আলোচ্য অংশটুকুর শাব্দিক অর্থ হলো, কবি প্রশ্ন করছে, সকলের অলক্ষে সমুদ্র বেয়ে তার নৌকা এসেছে কিনা, আর তার জন্য আগমনী গান বেজেছে কিনা! এখানে বসন্তের আগমনের কথা বলা হয়েছে।
প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে নিজস্ব নিয়মে, সাড়া জাগিয়ে নয়। কবির কাছে বসন্তের আগমন বার্তা ধরা পড়ে নি। তাই কবিভক্ত তার উন্মনার কারণ জিজ্ঞেস করলে কবি উদাস মনেই প্রশ্ন করে বসন্তের আগমন সম্পর্কে। প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও সে বসন্ত কবির মনকে ছুঁতে পারে নি। তাই কবি আনমনা।
উদ্দীপকেও আমরা দেখতে পাই, অনিতা বিশেষ বিশেষ দিবসকে সামনে রেখে কবিতা লিখত। কলেজের ম্যাগাজিনের প্রতি সংখ্যায় তার কবিতা বের হতো। কিন্তু বসন্ত উপলক্ষ্যে তাকে কবিতা লিখতে বললে সে কোনো আনন্দের কবিতা লিখতে পারছে না, কেবলই তার কলম দিয়ে ঝরে পরে দুঃখের বাণী। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন চেয়ে থাকে আকাশ পানে। তার প্রিয়জনের স্মৃতি তাকে কাতর করে তুলে। আর এজন্যই প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও তা অনিতার মনকে ছুঁতে পারেনি। তাই বলা যায়, অনিতা আর কবির বিয়োগ ব্যথা একই সুতোয় গাঁথা।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
শুধু তাকে এবং তাকেই ভালোবেসেছিল আরতি। কিন্তু ছয়মাস হলো সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় সে। তার স্মৃতিগুলো কুড়ে কুড়ে খায় আরতিকে। এদিকে বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। ছেলে ভালো, দেখতে সুদর্শন, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। পরিবারের সকলে এ ছেলের সাথে তার বিয়ে ঠিক করেছে এবং সকলে চায় আরতি এর সাথে মাঝে মাঝে বেড়াতে যাক।
আজ পহেলা ফাল্গুন। তবু বর আদ্রির অনুরোধ ফেলতে পারে না আরতি। রাস্তায় বের হয়ে দেখে চারিদিকে কত উৎসব! কিন্তু আরতি পারছে না সহজ হতে। আদ্রির কাছে বিষয়টি ধরা পড়ল। সে বলল, “অভিমান করেছ? চুপ করে আছ কেন? এমন দিনে তুমি চুপ থাকলে পুরো বসন্তই যে বৃথা হয়ে যাবে।” আরতি মৃদু হেসে উত্তর দেয় “না, বৃথা যাবে কেন! গাছে গাছে ফুলতো ঠিকই ফুটেছে, বসন্তকে বরে নেয়ার জন্য চারদিকে কত আয়োজন। প্রকৃতি কারো জন্য অপেক্ষায় থাকে না, সে চলে নিজের গতিতে।”
ক. ‘পুষ্পারতি’ শব্দটির অর্থ কী?
খ. কবি অভিমান করেছেন কি-না এ প্রশ্ন করার কারণ কী?
গ. “প্রকৃতি কারো জন্য অপেক্ষায় থাকে না, সে চলে নিজের গতিতে”- ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় এ ভাবের কী দৃষ্টান্ত ফুটে ওঠেছে?
ঘ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য ও কবির মনের অবস্থার মধ্যে কোনটি প্রধান হয়ে উঠেছে বলে তুমি মনে কর? ১
২
৩
৪
৪ নং প্রশ্নের উত্তর
‘পুষ্পারতি’ শব্দটির অর্থ হলো ফুলের বন্দনা বা নিবেদন।
কবি বসন্ত উপলক্ষে কোনো কবিতা না লেখার কারণে তাকে এ প্রশ্ন করা হয়েছে।
ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে স্বভাবসিদ্ধ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন না কবি। নেই তার পুষ্পসাজ কিংবা রচনা করছেন না কোনো কবিতা। বসন্তের প্রতি কবির ঔদাসীন্যের কারণ জিজ্ঞেস করলে কবি উত্তরে বলেন যে, প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন তার বন্দনাগীত রচনার অপেক্ষা করে নি। তিনি বন্দনাগীত রচনা না করলেও ইতোমধ্যে প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন ঘটেছে এবং যথানিয়মেই ঘটেছে। বসন্তকে ফাল্গুন গাছে গাছে ফুল ফুটিয়ে, পুষ্পমুকুলের গন্ধে বাতাস মুখরিত করে বরণ করে নিয়েছে। কবিমনের দুঃখের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বসন্ত তার আগমনকে বিলম্বিত করে নি, যথানিয়মে সে এসেছে। তাই কবি নির্লিপ্ত থাকলেও তাতে বসন্তের কিছু আসে-যায় না। বসন্তের এই উদাসীনতা কবিকে আহত করেছে কি-না এখন সে প্রশ্নই দেখা দিয়েছে। না-হলে তিনি হয়তো বসন্তকে বরণ করে কোনো কবিতা লিখতেন।
বসন্তে কবিমন বিষণœ। তাই সে কোনো কবিতা লিখে নি। কিন্তু প্রকৃতি তার আপন গতিতে চলে। উদ্দীপকে উল্লিখিত লাইনে প্রকৃতির সে ধর্মের কথা বলা হয়েছে।
সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সে তার গতিতে বয়ে যায়। প্রকৃতির নিয়ম মেনে শীতের পরে বসন্ত আসে। তাতে কার মনে কী অনুভূতি হলো সেটা বিবেচ্য নয়। কেউ কেউ হয়তো কোনো দুঃসহ স্মৃতির কারণে প্রকৃতির এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না। কিন্তু তাতে প্রকৃতির কিছু আসে-যায় না। প্রকৃতির চলার স্বতন্ত্র পথ রয়েছে। প্রকৃতি সেই পথে চলে, সেই নিয়মে আবর্তিত হয়। শত বাধা দিলেও প্রকৃতি শুনবে না। কারো কোনো মান অভিমান প্রকৃতির কাছে বিবেচ্য নয়।
এই ভাবটির বেশ কিছু দৃষ্টান্ত ফুটে ওঠেছে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায়। এখানে দেখা যায় কবি বসন্তের আগমনে কোনো পুলক অনুভব করছেন না, বসন্তকে বরণ করে নেয়ার জন্য তার কোনো প্রস্তুতি নেই। কিন্তু নানা পুষ্প, পত্রে, মঞ্জুরীতে প্রকৃতি ঠিকই বরণ করে নিয়েছে বসন্তকে। কবির মন শীতের শোক ভুলতে না পারলেও প্রকৃতি ঠিকই শীতকে ভুলে বসন্তকে বরণ করে নিয়েছে। সুতরাং, বলা যায়, প্রকৃতি কারো জন্য অপেক্ষায় থাকে না, সে চলে নিজের গতিতে।
‘তাহাড়েই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির মনের বিষণœতাই প্রধান হয়ে উঠেছে।
প্রকৃতিতে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের আগেই কবির প্রিয়তম স্বামী চলে গেছে অনন্ত পারাপারে, পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে। ফলে প্রকৃতিতে বসন্তের আবির্ভাবের পূর্বেই কবির মনকে গ্রাস করছে শীতের স্থায়ী রিক্ততা। তাই বসন্তের সাড়ম্বর আবির্ভাব কবিকে ভাবোচ্ছ্বাসে আপ্লুত করতে পারে নি।
বসন্ত এসেছে ঠিকই, কিন্তু মাঘের পুষ্পশূন্য রিক্ততার কথা কবি আদৌ ভুলতে পারেন নি। প্রকৃতপক্ষে শীতের নিঃস্বতার মাঝে কবি তার নিঃসঙ্গ জীবনের সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন।
কুহেলি উত্তরী তলে চলে যাওয়া মাঘের বিষণœতা আর অনন্ত পরপারে চলে যাওয়া তার প্রিয়জনের বিয়োগব্যথা একই সুতোয় গাঁথা। তাইতো তিনি শীতকে মাঘের সন্ন্যাসী বলেছেন। মাঘের সন্ন্যাসীরূপী শীতের অপসৃয়মান মূর্তিটি কবির ভাষাকে স্তব্ধ করেছে, তাঁকে করেছে রক্তাক্ত। কবির এই হাহাকারের পাশাপাশি প্রকৃতিতে বসন্ত আগমনকালের সৌন্দর্য-বর্ণনা বিবেচনা করলে কবির হাহাকার বেশি করে আঘাত করে পাঠক হৃদয়ে। প্রকৃতির বসন্ত-সজ্জার আনন্দ নয়, বরং কবির রিক্ততাই পাঠক হৃদয়কে অধিক আপ্লুত করে। তাই বলা যায়, আলোচ্য কবিতায় বসন্ত প্রকৃতির সৌন্দর্যের চেয়ে কবির মনের রিক্ত হাহাকারই প্রধান হয়ে উঠেছে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সৃষ্টির বিয়ে হয়েছে পাঁচদিন হলো। এটা তার দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম যেবার বিয়ে করেছিল তখন ছিল শীতকাল। এখন বর্ষাকাল। আকাশে মেঘ। সৃষ্টি তাকিয়ে আছে জানালার বাইরে, দৃষ্টি তার কোথায় নিবন্ধ জানে না। তার স্বামী এসে পাশে দাঁড়ায়। এমন সময় বৃষ্টি ঝরতে থাকে। স্বামী আনন্দে চিৎকার করে, “দেখো কী সুন্দর বৃষ্টি!” সৃষ্টি প্রত্যুত্তরে শুধু মৃদু হাসে। আরোও জোরে বৃষ্টি নামে। স্বামী হাত ধরে টানে, চলো ভিজি দুজনে। কিন্তু সৃষ্টি নীরব, নিথর। স্বামী তার ভাবটি বুঝতে পেরে বলে, “সৃষ্টি, তোমার এই উপেক্ষা আর আমার সহ্য হচ্ছে না। আমায় ব্যথা দিয়ে কী সুখ তুমি পাও?” সৃষ্টি আর থাকতে পারে না। স্বামীর কাছে হাত জোড় করে বলে, “ওগো, আমি যে কিছুতেই ভুলতে পারছি না, শুধু তাহারেই পড়ে মনে।”
ক. ‘উত্তরী’ শব্দের অর্থ কী?
খ. কবি কাকে কেন মাঘের সন্ন্যাসী বলেছেন?
গ. “তাহারেই পড়ে মনে”- উক্তিটি কবির সাথে কীভাবে অনুচ্ছেদের সৃষ্টিকে তুলনীয় করে তুলেছে?
ঘ. প্রিয়জনের বিরহে মানুষ শূন্যতা অনুভব করে কেন? ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার আলোকে আলোচনা কর। ১
২
৩
৪
৫ নং প্রশ্নের উত্তর
‘উত্তরী’ শব্দটি উত্তরীয় শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ। ‘উত্তরীয়’ অর্থ চাদর।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি সুফিয়া কামাল শীত ঋতুকে মাঘের সন্ন্যাসী বলেছেন।
ষড়ঋতুর এই দেশে পৌষ মাঘ এ দু’মাস শীতকাল। মাঘের শেষ দিকে শীতের বিদায় ঘণ্টা বেজে ওঠে। এ সময় প্রকৃতি কুয়াশার চাদর জড়িয়ে শীতের তীব্রতায় মুছড়ে পড়ে। গাছপালা পাতাশূন্য হয়ে পড়লে প্রকৃতিকে সংসার ত্যাগী সন্ন্যাসীর মতো মনে হয়। প্রকৃত সন্ন্যাসীর যেমন রিক্ততা, নিঃস্বতা, ধন-সম্পদ হীনতার অবস্থা থাকে, তেমনি শীতকালের প্রকৃতিও রিক্ত, নিঃস্ব এবং আবরণহীন। প্রকৃতির এই অলংকারবিহীন রূপের কারণেই কবি শীতকে মাঘের সন্ন্যাসী বলেছেন।
কবি জীবনের প্রাণপুরুষের বিয়োগের প্রেক্ষাপটে যেভাবে কবিতাটি লিখেছেন ঠিক সেভাবেই অনুচ্ছেদের সৃষ্টির জীবনের প্রথম স্বামী বিদায়ের বিরহ ফুটে উঠেছে।
কবি তাঁর প্রয়াত প্রিয়জনকে ভুলতে পারছেন না। কবির ব্যক্তিজীবনে সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুতে কবির জীবনে প্রচণ্ড শূন্যতা নেমে আসে। তার ব্যক্তিজীবন ও কাব্যসাধনার ক্ষেত্রে নেমে আসে এক দুঃসহ বিষণœতা। কবিমন আচ্ছন্ন হয়ে যায় রিক্ততার হাহাকারে। কবি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না তাকে। এই হাহাকারই ফুটে ওঠেছে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার প্রতিটি পঙ্ক্তিতে।
ঠিক একই ধরনের অনুভূতি উপরের অনুচ্ছেদের সৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। বর্ষার প্রেমাতাল প্রকৃতির টান আর তার দ্বিতীয় স্বামীর আহ্বানও তাকে উদ্বেলিত করতে পারছে না। মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিকে তাকিয়ে তার কেবলই মনে পড়ে মৃত প্রথম স্বামীর কথা। সে বৃষ্টিকে তার কেবলই হৃদয়ের কান্না মনে হয়। তার কাছে প্রেমসিক্ত প্রকৃতির কোনো আবেদন নেই। ভীষণ শূন্যতায় তার হৃদয়টা যেন পূর্ণ হয়ে আছে। সুতরাং, বলা যায়, ‘তাহারেই পড়ে মনে’- উক্তিটি কবির অনুভূতিকে অনুচ্ছেদের সৃষ্টির অনুভূতির সাথে একাত্ম করে তুলেছে।
মানুষ একা বাস করতে পারে না। বেঁচে থাকতে হলে কাউকে না কাউকে সুখ-দুঃখের সাথী করে নিতে হয়। দীর্ঘদিন বসবাসে সেই সঙ্গীটি অনেক সময় মানুষের সত্তার সাথে মিশে যায়। তাই যখন সঙ্গীটি হারিয়ে যায় বা ছেড়ে চলে যায়, তখন মানুষ আপন সত্তাকে পূর্ণাঙ্গভাবে অনুভব করে না তাই তার মধ্যে দেখা দেয় শূন্যতা। নিজেকে অসম্পূর্ণ মনে হয় তার।
কোনো মানুষের সাথে দীর্ঘদিন বসবাসের ফলে পরস্পরের মধ্যে গড়ে উঠে মধুর সম্পর্ক। আর সে সম্পর্ক যদি হয় স্বামী-স্ত্রীর, তাহলে তা কখনই ভোলা যায় না। তাই কোনো স্বামী যদি তার স্ত্রীকে ছেড়ে পরোলোক গমন করে তাহলে তার স্ত্রীকে চরম শূন্যতায় ভুগতে হয়। কবির ক্ষেত্রে ঠিক তাই হয়েছে।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি তার প্রথম স্বামীকে কোনো ভাবেই মন থেকে মুছে ফেলতে পারছেন না। কবির কবিতা লেখার উৎসাহদাতা, সুখ-দুঃখের সার্বক্ষণিক সঙ্গীর স্মৃতিগুলো কবিকে বার বার ডাকছে। প্রেরণাদায়ী স্বামীর অকাল মৃত্যুতে কবির জীবনে নেমে এসেছে প্রচণ্ড শূন্যতা। তাই প্রকৃতি জুড়ে বসন্ত উৎসব শুরু হলেও কবি সে উৎসবে শামিল হতে পারছেন না। বসন্তের আগমনকে নিশ্চিত করতেই বিদায় নিতে হয়েছে শীত ঋতুকে। শীতের এই রিক্ত ও নিঃস্ব বিদায়ের সঙ্গে কবি তার প্রিয়তমের বিদায়ের এক গভীর তাৎপর্য ও মিল খুঁজে পেয়েছেন। তাই তার মন জুড়ে কেবল শীতের রিক্ততা ও বিষণœতার ছবি।
সুতরাং, প্রিয়জনের মৃত্যুবিরহে কবি পরম শূন্যতা অনুভব করছেন। প্রকৃতিতে বসন্ত, আনন্দ-উৎসব বহমান কিন্তু কবির মন শূন্যতায় পূর্ণ। প্রিয়জনের বিরহে সবকিছু তার কাছে শূন্য মনে হচ্ছে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটির প্রকাশকাল কত?
খ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটির ছন্দবৈশিষ্ট্য লেখ।
গ. অনুচ্ছেদে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কোনো ভাবটিকে অবলম্বন করা হয়েছে?
ঘ. “তাহারেই পড়ে মনে ভুলিতে পারি না কোনো মতে”- পঙ্ক্তিটির আলোকে উপরের চিত্রকল্পের তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর। ১
২
৩
৪
৬ নং প্রশ্নের উত্তর
সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়।
বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান মহিলা কবি বেগম সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত।
এ কবিতায় ৮ ও ১০ মাত্রার পর্ব লক্ষ্য করা যায়। তবে স্তবক বিন্যাসে কিছুটা বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। অক্ষরবৃত্ত ছন্দরীতি অনুযায়ী কবিতায় সুললিত ছন্দ ও মার্ধুযতার ছাপ রয়েছে।
কবি সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকাশিত ভালোবাসার অনুভবের সাথে মিল আছে উদ্দীপকের চিত্রকল্পের।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রিয় হারানোর বেদনার যে সুর ধ্বনিত হয়েছে, ভালোবাসার যে প্রগাঢ়তা প্রকাশ পেয়েছে তার সাথে সম্পর্ক আছে উদ্দীপকের। উদ্দীপকে তাজমহলের ছবির মধ্য দিয়ে সম্রাট শাহজাহানের প্রয়াত প্রিয়তমার প্রতি ভালোবাসা এবং স্মৃতিকাতরতা প্রকাশ পেয়েছে।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায়ও আমরা কবির তার প্রয়াত স্বামীর প্রতি গভীর প্রেম এবং স্মৃতিকাতরতা লক্ষ করি। প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে, বসন্ত বরণ করে নিতে চারিদিকে সাজসাজ রব কিন্তু কবি যোগ দিতে পারছেন না সেই উৎসবে। তার হৃদয়ের সমগ্রটা জুড়ে প্রয়াত স্বামীর জন্য শোক। তাঁর সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুতে কবির জীবনে প্রচণ্ড শূন্যতা নেমে আসে। তাঁর ব্যক্তিজীবন ও কাব্য সাধনার ক্ষেত্রে নেমে আসে এক দুঃসহ বিষণœতা। কবির মন আচ্ছন্ন হয়ে যায় রিক্ততার হাহাকারে। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাকে আচ্ছন্ন করে আছে সেই বিষাদমর রিক্ততার সুর। এ রিক্ততা যেন তাজমহলের স্রষ্টা সম্রাট শাহজাহানের হৃদয়ের রিক্ততা। উভয়ই একীভূত হয়ে আছে প্রিয়জন হারানোর বেদনায়।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার উল্লিখিত উক্তিতে প্রিয়জন হারানোর যে বেদনা ও শূন্যতাবোধ ফুটে উঠেছে তা-ই এ কবিতার মূলসুর।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহিলা কবি সুফিয়া কামাল রচিত এ কবিতায় কবির ভালোবাসার অনুভূতির মাঝে প্রকৃতি ও জীবনের আর সব আয়োজন যেন অর্থহীন হয়ে গেছে।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় ব্যক্তি কবির প্রিয়জনের প্রতি স্মৃতিকাতরতা প্রকাশ পেয়েছে। তাই প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবির মন জুড়ে আছে শীতের রিক্ততা আর বিষণœতা। কবির হৃদয় দুঃখে ভারাক্রান্ত তাঁর কণ্ঠ নীরব। শীতের করুণ বিদায়কে তিনি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। তাই বসন্ত তার মনে কোনো সাড়া জাগাতে পারছে না। বসন্তের সৌন্দর্য তার মনে কোনো আবেদন জাগাতে পারছে না। কবি তার প্রিয়জন হারানোর বেদনাকে কিছুতেই মুছে দিতে পারছেন না হৃদয় থেকে। বার বার তাকে তাড়িত করছে সেই স্মৃতি। কবি তাই উদাস। কবিভক্ত তাই আজ বসন্তের আনন্দ উৎসবে যোগ দিতে বললেও মনোব্যথা প্রকৃতির প্রতিকূলে। হৃদয়ের দুঃখভারাকে তাই প্রকাশ করেছেন এই বাণীর মধ্য দিয়ে “তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনো মতে।”
ঠিক একই বিষয় প্রকাশিত হয়েছে তাজমহল গড়ার পেছনেও। সম্রাট শাহজাহান প্রিয়তমা পত্মীর বিয়োগ ব্যথায় কাতর হয়ে তার স্মৃতিকে হৃদয়ে অমলিন করে রাখার জন্য গড়ে তুলেছিলেন তাজমহল। যমুনার তীরে গড়ে ওঠা এ সমাধিসৌধ তাজমহলের অস্তিত্ব প্রতিনিয়ত তার স্ত্রীর কথা স্মরণ করিয়ে দিতো সম্রাটকে। এক মুহূর্তের জন্যও তিনি বিস্মৃত হতে পারতেন না প্রিয়তমা স্ত্রীকে। তাজমহল প্রতীকের মধ্যে শাহজাহানের এ মনোভাব আর ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির মনোভাবের মধ্যে এ স্মৃতিকাতর দিকটি সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
কেতকীর ক্ঞ্জুবনে গুঞ্জরিল মধুপের গান।
…………………
হেমন্ত ফুটাতে চাহি হাসি শীর্ণ কেতকীর মুখে
চমকি ফিরিয়া এল বিস্ময়ে সে ব্যথাভরা বুকে,
এত দুঃখভার
কোন দানে মুছাবে সে এ ব্যথিতা মূর্ছিতা কেয়ার।
গন্ধে হলো ভারাক্রান্ত সে নিশীতে কেয়া কুন্তবনে,
রূপগন্ধ বিকশিত। ব্যথা তার রহিল গোপন।
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কী কী ফুলের উল্লেখ আছে?
খ. ‘অর্ঘ্য বিরচন’ কথাটি দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. অনুচ্ছেদের ‘হেমন্ত ফুটাতে চাহি’-অংশটুকুর সাথে ‘ফাগুন যে এসেছে ধরায়’ অংশটুকুর তুলনা কর।
ঘ. “অনুচ্ছেদটিতে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার ভাববস্তু পরিস্ফুটিত হয়েছে”- মন্তব্যটির পক্ষে/বিপক্ষে তোমার অবস্থান তুলে ধর। ১
২
৩
৪
৭ নং প্রশ্নের উত্তর
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বাতাবি লেবুর ফুল, আমের মুকুল, মাধবী কুঁড়ির উল্লেখ রয়েছে, এর সবগুলোই বসন্তের ফুল।
“অর্ঘ্য” অর্থ হচ্ছে অঞ্জলি বা উপহার আর “বিরচন” শব্দটির অর্থ হলো রচনা করা।
প্রকৃতি বিচিত্র সাজে সজ্জিত হয়ে ফুল ও তার সৌরভ উপহার দিয়ে বসন্তকে বরণ করে নেয়। কেউ স্মরণ করুক বা না করুক প্রকৃতি ঠিকই আপন রীতিতে বরণ করে নেয় বসন্তকে। এ বিষয়টিই প্রকাশিত হয়েছে অর্ঘ্য বিরচন কথাটির মধ্য দিয়ে।
কবি বেগম সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় ‘ফাগুন যে এসেছে ধরায়’ কথাটির মধ্যে বসন্তের যে সৌন্দর্য সমৃদ্ধির আভাস রয়েছে তার সাথে ভাবগত মিল আছে অনুচ্ছেদের ‘হেমন্ত ফুটাতে চাহি’-অংশটুকুর।
অনুচ্ছেদটিতে প্রকৃতির আনন্দমুখর সত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। হেমন্ত প্রকৃতির এক শস্যনির্ভর বর্ণিল আবর্তন। ‘হেমন্ত ফুটাতে চাহি’ কথাটি কর্তৃক প্রকৃতির আনন্দ ঘন পরিবেশের বার্তা অভিব্যক্ত। হেমন্তের আগমনে এক শস্য সমৃদ্ধ সময়ের আগমনবার্তা ধ্বনিত হয়। ঘরে ঘরে আনন্দ উপলক্ষ নিয়ে আসে হেমন্ত।
হেমন্তের সমৃদ্ধ আভাসের মতো ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায়ও “ফাগুন যে এসেছে ধরায়” কথাটির কর্তৃক প্রকৃতির উৎসবমুখর ক্ষণকে নির্দেশ করা হয়েছে। চারদিকে ফাগুনের আগমনে সাজসাজ রব। প্রকৃতি যেন নানা অর্ঘ্যে অভিনন্দন জানাচ্ছে বসন্তকে। ফাগুনের পরশে যেন প্রকৃতি হয়ে উঠেছে সমৃদ্ধির প্রতিচ্ছবি। সুতরাং, বলা যায় অনুচ্ছেদের ‘হেমন্ত ফুটাতে চাহি’ আর কবিতার ‘ফাগুন যে এসেছে ধরায়’ একই সুরে গাঁথা।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির প্রিয় হারানোর বেদনার সাথে অনুচ্ছেদের উল্লিখিত কবিতাংশের বেদনার সুরটি যেন একই ভাব থেকে উৎসারিত।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি সুফিয়া কামালের ব্যক্তিগত দুঃখ যেন সমস্ত পাঠকের প্রিয় হারানোর বেদনায় রূপান্তরিত হয়েছে। প্রকৃতির উৎসবের মাঝে নিজের একান্ত দুঃখ চর্চা করলেও কবি যেন সমস্ত মানবসত্তাকেই ছুঁয়ে গেছে। উপরের অনুচ্ছেদেও তাই। প্রিয় হারানোর বেদনা প্রকাশে অনুচ্ছেদ আর ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি যেন একই ভাবাপন্ন।
অনুচ্ছেদে লক্ষণীয় কেতকী অর্থাৎ কেয়ার দুঃখ ভারাক্রান্ত মন। প্রকৃতির আনন্দমুখর পরিবেশে কেতকী বিষণœ, তার হৃদয় শোকাচ্ছন্ন। কোনো গোপন ব্যথা লুকানো তার মনের গহীনে। তাই সে আনন্দময় প্রকৃতিতে সাবলীলভাবে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। থেকে থেকে বেজে উঠছে তার ব্যথার বীণা।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় লক্ষ করা যায়, ব্যক্তি কবি শোকে মুহ্যমান। প্রকৃতির কোনো আয়োজনই তাঁকে আলোড়িত করতে পারছে না। কবিভক্তের শত অনুরোধেও তিনি কবিতা রচনায় আত্মনিয়োগ করতে পারছেন না। বাইরের প্রকৃতি যতই বর্ণিল হোক না কেন প্রকৃতির বিষাদ স্মৃতি তাকে ঘিরে রয়েছে। এক্ষেত্রেও যেন “ব্যথা তার রহিল গোপন।” সুতরাং বলা যায়, অনুচ্ছেদের সাথে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার ভাববস্তুগত গভীর মিল রয়েছে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
অনন্যার বয়স পাঁচ বছর। সে ধনীর ঘরের একমাত্র আদুরে কন্যা। পাশের বাড়ির অর্নব তার খেলার সাথী। কিন্তু অনন্যার বাবার তাতে ঘোর আপত্তি। অর্নবের মতো দরিদ্রশ্রেণির বাচ্চাদের সাথে মেলামেশা করবে কেন তার মেয়ে? অনন্যার বাবা তাই তাকে অর্নবদের বাসায় যেতে, নিষেধ করে দেন। অনন্যার তাই মন খারাপ। বাবা মন ভালো করার জন্য অনেক দামি দামি খেলনা এনে দেন, উৎসবের আয়োজন করেন কিন্তু অনন্যার মন খারাপ ভালো হলো না।
ক. “বসন্তরে আনিতে বরিয়া” এখানে ‘বরিয়া’ শব্দটির চলিত রূপ কী।
খ. “হে কবি, নীরব কেন?” এখানে কবি ‘নীরব কেন’ বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
গ. অনুচ্ছেদের অনন্যার সাথে কবিমনের তুলনা কর।
ঘ. অনুচ্ছেদটিতে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার ভাববস্তু প্রতিফলিত মন্তব্যটি কতটুকু যুক্তিযুক্ত আলোচনা কর। ১
২
৩
৪
৮ নং প্রশ্নের উত্তর
‘বরিয়া’ শব্দটির চলিত রূপ হলো ‘বরণ করে’।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি কবি সুফিয়া কামালের স্মৃতিচারণমূলক একটি কবিতা।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শুরুতেই কবিভক্ত কবিকে প্রশ্ন করছেন, কবি নীরব কেন, “ফাগুন যে এসেছে ধরায়।” কবির নীরবতা এখানে উদাসীনতাকে ইঙ্গিত করছে। কবি কেন কাব্য এবং গান রচনায় সক্রিয় হচ্ছেন না সেটাই প্রশ্ন রাখা হয়েছে।
কবি সুফিয়া কামাল বিরচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি তাঁর স্মৃতিচারণমূলক একটি শোকগাঁথা।
প্রিয়জন হারানো শোকার্ত মনে জাগতিক কোনো কিছুই প্রশান্তি এনে দিতে পারে না। এ কবিতায় কবিমনের উপলব্ধিতে তাই প্রকাশিত হয়েছে।
অনুচ্ছেদের পাঁচ বছরের অনন্যা নামের মেয়েটির সখ্যতা গড়ে উঠেছিল পাশের বাড়ি অর্নবের সাথে। কিন্তু সামাজিক অবস্থানে সমান না হওয়ায় অনন্যার বাবা তাকে অর্নবের সাথে মিশতে নিষেধ করে দেয়। স্বাভাবিকভাবেই অনন্যার মন দুঃখভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। বাবা তাকে অনেক খেলনাদি এনে দিলেও তার মন পড়ে রয় অতীতের স্মৃতিতে। ঠিক ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবিমনের মতো। কবিমনও বসন্তের আগমনে জেগে উঠতে পারে নি। যোগ দিতে পারে নি উৎসব আনন্দে। তার সমগ্র মন প্রিয়জন হারানোর বেদনায় আচ্ছন্ন। এখানে অনন্যা এবং কবিমনের অবস্থা একই সুরে গাঁথা।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি কবি সুফিয়া কামালের ব্যক্তিজীবনের দুঃখ বেদনার একটি রূপালেখ্য।
কবি সুফিয়া কামাল ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বসন্তের আগমন লগ্নে দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে অতীত হয়ে যাওয়া শীতের স্মৃতিচারণ করেছেন। মানুষের মন সাধারণত প্রগতিশীল। অর্থাৎ সামনের দিকে ধাবিত হয়। কিন্তু কবির বেলায় তার ব্যতিক্রম ঘটে। অনুভূতিশীল কবিহৃদয় অতীতের শোকস্মৃতি ভুলতে পারে না কিছুতেই।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তাৎপর্যকর অভিব্যক্তি পেয়েছে। সাধারণভাবে প্রকৃতির সৌন্দর্য মানবমনের অফুরন্ত উৎস। বসন্ত প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য যে মনে আনন্দ শিহরণ জাগাবে তথা তিনি তাকে ছন্দে ফুলে ফুটিয়ে তুলবেন সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু কবিমন যদি কোনো কারণে শোকাচ্ছন্ন কিংবা বেদনা-ভারাতুর থাকে তবে বসন্ত তার সমস্ত সৌন্দর্য সত্ত্বেও কবির অন্তরকে স্পর্শ করতে পারে না। কবিমন সত্যিই প্রিয়জন হারানোর বেদনায় আচ্ছন্ন। তাই তাকে কোনো আনন্দই স্পর্শ করতে পারছে না ঠিক যেন অনুচ্ছেদের অনন্যার ছোট্ট হৃদয়ের মতো। তার পিতা তার জন্য আনন্দ উৎসবের আয়োজন করলেও সে উৎফুল্লিত নয়, তার ছোট্ট হৃদয় জুড়ে রয়েছে খেলার সঙ্গী হারানোর বেদনায় আচ্ছন্ন।
সুতরাং অনুচ্ছেদটিতে কবিতার ভাববস্তুর পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেছে বলা যায়। এ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনের দুঃখময় বিষয়বস্তুর বেদনাঘন উপস্থাপন রীতির মাধ্যমে গীতিময়তা প্রধান্য পেয়েছে।
