You dont have javascript enabled! Please enable it!

HSC BANGLA 1ST – POTIDAAN – CQ

১. এক বুড়ি হযরত মুহম্মদ (স.) এর চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতো এবং পথ চলতে নবির পায়ে কাঁটা ফুটলে আনন্দিত হতো। একদিন পথে কাঁটা না দেখে নবিজী চিন্তায় পড়ে গেলেন এবং বুড়ির বাড়িতে গিয়ে দেখলেন বুড়ি অসুস্থ। নবি (স.) কে দেখে বুড়ি ভীত হলেন। তিনি বুড়িকে ক্ষমা করে দিলেন এবং সেবাযত্ন দিয়ে সুস্থ করে তুললেন।
ক. কবি কাকে বুকভরা গান দেন?
খ. কবিকে যে পর করেছে তাঁকে আপন করার জন্য কেঁদে বেড়ান কেন?
গ. উদ্দীপকের ভাবের সাথে ‘প্রতিদান’ কবিতার মূলভাবের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উদ্দীপক ও ‘প্রতিদান’ কবিতার ভাবার্থ ধারণ করলে একটি সুন্দর সমাজ গড়া সম্ভব’ – বক্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

 ১ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. কবিকে যে বিষে-ভরা বাণ দিয়েছে, কবি তাকে বুকভরা গান দেন।
খ. ব্যক্তিস্বার্থ পরিহার করে পরার্থপরতার মাধ্যমে সুখী ও সমৃদ্ধ পৃথিবী নির্মাণ করতে চান বলে কবিকে কেউ পর করলেও কবি তাকে আপন করতে কেঁদে বেড়ান।
‘প্রতিদান’ কবিতার কবি প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা আর বিভেদে বিশ্বাস করেন না। তিনি মনে করেন, ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই নির্মাণ করতে পারে সুন্দর, নিরাপদ পৃথিবী। অনিষ্টকারীর ক্ষতি না করে তার উপকার করাই কবির আদর্শ। তাই কবিকে যে পর করে, কবি তাকে আপন করতে কেঁদে বেড়ান।
গ. উদ্দীপকের ভাবের সাথে ‘প্রতিদান’ কবিতার মূলভাবের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি হচ্ছে, অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করেই নয় প্রতিদান হিসেবে তার উপকার করাই মানবজাতির আদর্শ হওয়া উচিত।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি বলতে চেয়েছেন, মানুষের জীবনের প্রকৃত সুখ ও সার্থকতা অপরের কল্যাণেই নিহিত। ত্রুটিপূর্ণ সমাজব্যবস্থায় বিভেদ-হিংসা-হানাহানি দ্বারা আক্রান্ত হলেও কবি দয়া, ভালোবাসা ও সহমর্মিতায় বিশ্বাস করেন। লোভ-লালসা, প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার বিপরীতে ভালোবাসাপূর্ণ সুন্দর, নিরাপদ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন কবি। কবি অনিষ্টকারীর উপকার করার মাধ্যমে মহানুভবতার শক্তিতে পৃথিবীকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করতে চেয়েছেন।
উদ্দীপকে যে বুড়ি হযরত মুহম্মদ (স.)-এর চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে তাঁকে কষ্ট দিতে চেয়েছে, নবিজী তাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন। শুধু তাই নয়, বুড়ির বিপদে তাকে সাহায্য করেছেন। তাই বলা যায়, অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে, তার মঙ্গল কামনাই মানবজাতির মূল লক্ষ্য, যা উদ্দীপকের ভাবের সাথে ‘প্রতিদান’ কবিতার মূলভাবের সাদৃশ্য নির্দেশ করে।
ঘ. উদ্দীপক ও ‘প্রতিদান’ কবিতার ভাবার্থ বিভেদ-হিংসা-হানাহানির পরিবর্তে প্রীতি, দয়া, ভালোবাসা ও পরোপকার যা মনে ধারণ করলে একটি সুন্দর সমাজ গড়া সম্ভব।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরার্থপরতার মধ্যেই যে ব্যক্তির প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা নিহিত সেই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। সমাজ-সংসারে বিদ্যমান বিভেদ-হিংসা-হানাহানি দ্বারা আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও কবির কণ্ঠে প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার বিপরীতে ব্যক্ত হয়েছে প্রীতিময় এক পরিবেশ সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা।
উদ্দীপকে হযরত মুহম্মদ (স.)-এর জীবনাদর্শ ফুটে উঠেছে। সেখানে এক বুড়ি নবি (স.)-এর পথে কাঁটা বিছিয়ে তাঁকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পেত। কিন্তু একদিন নবিজী পথে কাঁটা দেখতে না পেয়ে বিচলিত হয়ে বুড়ির খোঁজ নিতে তার বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি। জানতে পারলেন বুড়ি অসুস্থ। তখন নবি (স.) বুড়িকে ক্ষমা করে দিয়ে সেবাযত্ন করে বুড়িকে সুস্থ করে তুললেন। ‘প্রতিদান’ কবিতায় অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে তার উপকারের যে আহ্বান ধ্বনিত হয়েছে সেটিই উদ্দীপকে প্রকাশ লাভ করেছে।
পরার্থে জীবন উৎসর্গ করাতেই মানবজন্মের সার্থকতা নিহিত। মহৎ হৃদয়ের ব্যক্তিগণ আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্কর। নিজের বৃহত্তর কল্যাণ সাধনে তারা সর্বদা তৎপর থাকেন। উদ্দীপকে হযরত (স.)-মাশীলতা এবং মহৎ উ দূর কার নিজেকে নিবেদন করেন। তেমনি ‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করেই নয়, প্রতিদান হিসেবে অি উপকার করার মাধ্যমে পৃথিবীকে সুন্দর, বাসযোগ্য করতে চেয়েছেন। ভাই বলা যায়, উদ্দীপক ও ‘প্রতিদান’ কবিতার ভাবার্থ করে করলে একটি সুন্দর সমাজ গড়া সম্ভব।

২. ফতেপুর গ্রামের সমিরউদ্দীন ও রহিমউদ্দীন দুই ভাই। বড়ো ভাই সমিরউদ্দীন ছোটো ভাই রহিমউদ্দীনকে ঠকিয়ে বাবার সঙ্গী সম্পত্তি আত্মসাৎ করে। বর্তমানে সমিরউদ্দীন কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত। এই বিপদের দিনে কেউ তার পাশে নেই। কিন্তু ছোটো ভাই রহিমউদ্দীন সব ভুলে সমিরউদ্দীনের পাশে দাঁড়িয়েছে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সে-ই ভাইকে সুস্থ করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
ক. পল্লিকবি জসীমউদ্দীন কোন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন?
খ. ‘আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর’ এ পঙ্ক্তিতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের রহিমউদ্দীন চরিত্রের সাথে প্রতিদান’ কবিতার কবিভাবনার সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপক ও ‘প্রতিদান’ কবিতার মূল লক্ষ্য একই।’ বিশ্লেষণ করো।

 ২ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. পল্লিকবি জসীমউদ্দীন ফরিদপুরের তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
খ. আলোচ্য পঙক্তিতে কবি অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে তার উপকার করার কথা বলেছেন।
কবি প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা আর হানাহানিতে বিশ্বাস করেন না। তিনি মহৎ হৃদয়ের মানুষ। শান্তিময়, নিরাপদ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন বসেই তাঁর ঘর যে ভেঙেছে তিনি তাকেই ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। অর্থাৎ শত্রুকে ক্ষমা করে পরম আপন করে নিয়েছেন।
গ. অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে তার উপকার করার মধ্য দিয়ে ভালোবাসাপূর্ণ পৃথিবী বিনিমার্ণের প্রেক্ষিতে উদ্দীপকের রহিমউদ্দীনের সাথে ‘প্রতিদান’ কবিতার কবিভাবনার সাদৃশ্য রয়েছে।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে তার উপকার করার মাধ্যমে সুন্দর, নিরাপদ পৃথিবী নির্মাণ করতে চেয়েছেন। কবি তাকেই ঘর বেঁধে দিতে চেয়েছেন যে কবির ঘর ভেঙে দিয়েছে। যে কবিকে পর করেছে তাকেই কবি আপন করতে কেঁদে বেড়িয়েছেন কবি বিষে-ভরা বাণের পরিবর্তে বুকভরা গান দিতে চেয়েছেন। মূলত কবি সমাজ-সংসারের যাবতীয় বিভেদ-হিংসা-হানাহানির বিপরীতে প্রেম ভালোবাসা ও উদারতার বার্তা পৌঁছাতে চেয়েছেন।
উদ্দীপকের রহিমউদ্দীন তার বড়ো ভাই সমিরউদ্দীন দ্বারা বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়। তবুও রহিমউদ্দীন তার ভাইকে ক্ষমা ক দেয় এবং ভাইয়ের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়ায়। ‘কোভিড-১৯’-এ আক্রান্ত সমিরউদ্দীন যখন সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন কর তখন রহিমউদ্দিন ভাইয়ের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে। তাই বলা যায়, প্রতিদান’ কবিতায় কবি যেমন অনিষ্টকারীকে ক্ষমা কর তার উপকারের মধ্য দিয়ে সর্বময় কল্যাণের কথা বলেছেন, উদ্দীপকের রহিমউদ্দীন ও তেমনই চেতনা ধারণ করে বড়ো ভাইয়ের অপরাধ ক্ষমা করে তার সেবার ব্রত নিয়েছে।
ঘ. প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপক ও ‘প্রতিদান’ কবিতার মূল লক্ষ্য মানবতার জয়গান।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে মানবতার বৃহৎ কল্যাণে আত্মনিয়োগের কথা বলেছেন। অন্যের উপকারের মধ্যেই ব্যক্তির প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা নিহিত বলে কবি মনে করেন। সমাজ-সংসারে বিদ্যমান বিভেদ-হিংসা-হানাহানি দ্বারা আক্রান্ত হলেও কবি সকল সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে মানবতার জয়গান গেয়েছেন।
উদ্দীপকের রহিমউদ্দীন বড়ো ভাই দ্বারা বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু এ কারণে সে বড়ো ভাইয়ের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়নি। বরং তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। তাছাড়া বড়ো ভাই ‘কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে ভাইয়ের সুস্থতার জন্য তার পাশে দাঁড়িয়েছে। অনিষ্টকারীর প্রতি ক্ষোভ পোষণ না করে তার প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা ‘প্রতিদান’ কবিতায়ও বলা হয়েছে।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি ক্ষমাশীলতা ও উদারতার পথ নির্দেশ করেছেন। কবিতায় কবি তাদের জন্য এগিয়ে এসেছেন যারা তার ক্ষতি করে। যারা তাঁকে কাঁদিয়েছে, তাদের মালের জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। বিষে ভরা বাদ পেলেও কবি বুকভরা গান উপহার দিয়েছেন। অন্যদিকে উদ্দীপকে বড়ো ভাই দ্বারা শোষণের শিকার রহিমউদ্দীনের মহানুভবতা ফুটে উঠেছে। বড়ো ভাই সমিরউদ্দীন তাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলেও সে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ভাইয়ের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। তাই উদ্দীপক ও জাগোচা কবিতার প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও মূল লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। আর তা হলো প্রতিশোধ ও হিংসার মনোভাব পরিত্যাগ করে উপার ও মানবিক হয়ে ওঠা।

৩. বজলু মতিন ম-লের চায়ের দোকানে কাজ করে। একদিন বজলু চায়ের কাপ পরিষ্কার করতে গিয়ে অসতর্কতাবশত দুটি কাপ ভেঙে ফেলে। এতে মতিন ম-ল তাকে অনেক মারধর করে। রাতের কাজ শেষে যখন বজলু বাড়ি ফিরবে হঠাৎ সে দোকানের ক্যাশ বাক্সের পাশে কিছু টাকা দেখতে পায়। তার বুঝতে দেরি হয় না যে, দোকানির মালিক টাকা বাক্সে তুলতে ভুলে গেছে। পরদিন কাজে এসে বালু মতিন ম-লকে টাকাগুলো ফেরত দেয়। তখন মতিন মিয়া বজলুকে শাস্তি দেওয়ার জন্য অনুতপ্ত হয় এবং বজলুর বেতন বাড়িয়ে দেয়।
ক. ‘নিরন্তর’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘ফুল করি দান সারাটি জনম-ভর’ – পঙক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সাথে প্রতিদান’ কবিতার সাদৃশ্য আলোচনা করো।
ঘ. ‘মতিন ম-লের মানসিক পরিবর্তন যেন কবির ভালোবাসাপূর্ণ পৃথিবী নির্মাণের সহায়ক।’- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

ক. ‘নিরন্তর’ শব্দের অর্থ- অবিরাম।
খ. কবি অহিংসা ও মানবতায় বিশ্বাসী বলে সারাটি জীবন ফুল দান করেছেন।
কবি কখনো অনিষ্টকারীর ওপর প্রতিশোধ গ্রহণ চান না। তিনি অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে, তার বিপদে পাশে থাকতে চান। তাই কেউ কবিকে কাঁটা দিলেও প্রতিদান হিসেবে কবি তাকে ফুল দিয়ে যাবেন সারাজীবন। কারণ প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ নয় বরং ভালোবাসাই পৃথিবীতে সুন্দর করে তুলতে পারে বলে কবির বিশ্বাস।
গ. অনিষ্টকারীর মঙ্গল কামনা করার প্রেক্ষিতে উদ্দীপকের সাথে ‘প্রতিদান’ কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে দিতে বলেছেন। প্রয়োজন হলে উপকার করে অনিষ্টকারীকে প্রতিদান দিতে বলেছেন। কারণ কবি হিংসা-বিদ্বেষে বিশ্বাস করেন না। তিনি মনে করেন, ভালোবাসাই পৃথিবীতে চূড়ান্ত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। প্রতিহিংসা— প্রতিশোধ কখনো মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। তাই ক্ষমা ও দায়িত্বশীল আচরণই মানুষকে একত্রিত করতে পারে।
উদ্দীপকের মতিন ম-লের দুটি কাপ ভেঙে ফেললে বজলুকে অনেক মারধর সহ্য করতে হয়। কিন্তু তবুও বজলু তার মনিবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। সে মনিবের আমানত ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই বলা যায়, মনিবের অত্যাচার সহ্য করেও তার প্রতি সৎ ও দায়িত্বশীল থাকার মাধ্যমে বজলুর মাঝে অনিষ্টকারীকে ক্ষমা প্রদর্শন করে, তার মঙ্গলকামনার মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এ দিকটি ‘প্রতিদান’ কবিতার সাথে সংগতিপূর্ণ।
ঘ. বজলুর সৎ ও দায়িত্বশীল আচরণের জন্য মতিন ম-লের মধ্যে যে অনুশোচনার জন্ম হয়, সেই বিষয়টিই পারে ‘প্রতিদান’ কবিতার কবির ভালোবাসাপূর্ণ পৃথিবীর স্বপ্ন পূরণ করতে।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি ক্ষুদ্র স্বার্থকে তুচ্ছ করে সমষ্টির জন্য কাজ করতে আগ্রহী। সমাজ-সংসারে বিভেদ-হিংসা-হানাহানি দ্বারা আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও কবির কণ্ঠে প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার বিপরীতে প্রীতিময় পরিবেশ সৃষ্টির বাসনা ব্যক্ত হয়েছে। কবির মতে, ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই নির্মাণ করতে পারে নিরাপদ পৃথিবী। মানুষ যদি হিংসা, লোভ, ঈর্ষা, হিংস্রতা না ছড়িয়ে ভালোবাসার প্রসার ঘটায় তবেই পৃথিবীতে শান্তি বিরাজ করবে।
উদ্দীপকের মতিন ম-ল সামান্য দুটি চায়ের কাপ ভাঙার জন্য বজলুর ওপর নির্যাতন করে। তার বিনিময়ে বজলু সং ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয় টাকা ফিরিয়ে দিয়ে। তখন মতিন ম-লের মধ্যেও শুভবোধের উদয় ঘটে। সে সামান্য কারণে বজলুকে শান্তি দিয়েছে বলে অনুতপ্ত বোধ করে এবং বজলুর সততায় মুগ্ধ হয়ে তার বেতন বাড়িয়ে দেয়। ভালোবাসার শক্তিতে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রত্যয় ব্যস্ত হয়েছে ‘প্রতিদান’ কবিতায়ও।
উদ্দীপকের বজল যদি সততার পরিচয় না দিত তবে হয়তো মতিন ম-লের মানসিক পরিবর্তন হতো না। সে অন্ধকারেই গড়ে থাকত। তাই ক্ষমা ও ভালোবাসা দিয়ে অমঙ্গলকে দূর করা যায়। মূলত ‘প্রতিদান’ কবিতায় কবির ভাবনায় এই বিষয়টিই ফুটে উঠেছে। কবি অকল্যাপের প্রতিদানস্বরূপ কল্যাণ দিয়ে পৃথিবীতে শান্তির আকাঙ্ক্ষা করেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন হিংসার জবাবে হিংসা প্রদর্শন করলে পৃথিবীতে অস্থিরতা আরও বাড়বে। এর বিপরীতে প্রীতি পরিচয় দিলে সুদিন একদিন আসবেই। উদ্দীপকের বজলু ও মতিন ম-লের দৃষ্টান্তে বিষয়টি স্পষ্টতা লাভ করেছে। তাই বলা যায়, মতিন ম-লের মতো প্রত্যেকের মানসিক পরিবর্তনই পারে পৃথিবীকে অধিক সুন্দর ও নিরাপদ রাখতে।
৪. সাহার বানু একজন স্কুলশিক্ষিকা। তাছাড়া গ্রামের নানা উন্নয়নমূলক কাজের সাথে তিনি যুক্ত। গ্রামের মানুষের বিপদের দিনে তিনি সবসময় পাশে দাঁড়ান। কিন্তু তার প্রতিবেশী আফজাল হোসেন তাঁকে সহ্য করতে পারেন না এবং নানাভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। তবে স্কুলশিক্ষিকা সাহার বানু কখনোই আফজাল হোসেনকে নিজের শত্রু ভাবেন না। বরং তার বিপদের দিনেও সাহার বানু সবার আগে এগিয়ে আসেন।
ক. জসীমউদদীন কী হিসেবে সমধিক পরিচিত?
খ. যে মোরে করিল পথের বিবাগী- পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি – ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের আফজাল চরিত্রের সাথে প্রতিদান কবিতার বৈপরীত্য কোথায়? আলোচনা করো।
ঘ. ‘সাহার বানু যেন কবি ভাবনার প্রতিচ্ছবি’- উক্তিটি যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।

 ৪ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. জসীমউদ্দীন ‘পল্লিকবি’ হিসেবে সমধিক পরিচিত।
খ. ‘যে মোরে করিল পথের বিবাগী পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি’- পঙক্তির মধ্য দিয়ে কবি পরার্থপরতার দিকটি তুলে ধরেছেন।
কবি বিশ্বাস করেন প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধের মনোভাব বর্জন করে পরার্থপরতার মধ্যেই প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা লাভ করা সম্ভব। তাই যে কবিকে পথের বিবাগী করেছে কবি তার জন্যই পথে পথে ঘোরেন। অর্থাৎ অনিষ্টকারীর মঙ্গল কামনায় কবি নিজেকে নিবেদন করেন। অপকারীর উপকার করার মাধ্যমে তার মাঝে ইতিবাচক পরিবর্তন আনাই কবির লক্ষ্য।
গ. ‘প্রতিদান’ কবিতায় স্বার্থত্যাগী পরার্থপরতার বিষয়টি ফুটে উঠেছে কিন্তু উদ্দীপকের আফজাল হোসেনের মধ্য দিয়ে সংকীর্ণ মনের পরিচয় পাওয়া যায়।
‘প্রতিদান’ কবিতায় সমাজ-সংসারে বিদ্যমান বিভেদ-হিংসা-হানাহানি দ্বারা আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও কবির কণ্ঠে প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার বিপরীতে ব্যস্ত হয়েছে প্রীতিময় এক পরিবেশ সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা। কবি অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করেই ক্ষান্ত হননি, বরং প্রতিদন দিয়েছেন তার উপকার করে।
উদ্দীপকের আফজাল হোসেন একজন সংকীর্ণ মনের মানুষ। তিনি আদর্শ স্কুলশিক্ষিকা সাহার বানুর মানবহিতৈষী কর্মকা- সহ্য করতে পারেন না এবং তাঁর ক্ষতিসাধন করতে চান। অথচ সাহার বানু একজন মহৎ হৃদয়ের মানুষ। তিনি গ্রামের মানুষদের সহায়তায় সবসময়ই এগিয়ে আসেন। কিন্তু আফজাল হোসেন সাহার বানুর ভালো কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ান। গ্রামের লোকজন সাহার বানুর ওপর নির্ভর করে, এই বিষয়টি আফজাল হোসেনের সহ্য হয় না। বিভিন্নভাবে তিনি সাহার বানুর ক্ষতি করতে চান। তাই ‘প্রতিদান’ কবিতায় মানুষের প্রতি ভালোবাসাপূর্ণ দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শনের যে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তা উদ্দীপকের আফজাল হোসেনের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত।
ঘ. দায়িত্বশীলতা ও উদার মানসিকতার জন্য সাহার বানু কবি ভাবনার প্রতিচ্ছবি।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি পরার্থপরতার মধ্য দিয়ে মানুষের জন্য নিজেকে নিবেদন করেছেন। তিনি সমাজে বিদ্যমান বিভেদ-হিংস-হানাহানিতে বিশ্বাস করেন না। তাঁর কাছে ভালোবাসাই পরম সত্য। তাই তিনি অনিষ্টকারীকেও দ্বিধাহীনভাবে ক্ষমা করেছেন। অনিষ্টকারীর উপকার করে মহৎ মনের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস, ভালোবাসাই পারে পৃথিবীকে সুন্দর ও নিরাপদ বাসস্থানে পরিণত করতে।
উদ্দীপকের সাহার বানু একজন পরোপকারী স্কুলশিক্ষিকা। তিনি পেশাগত জীবনের বাইরে নানা উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। গ্রামের মানুষদের সুখে-দুঃখে তিনি সবসময় এগিয়ে আসেন। তাদের জন্য কাজ করাকেই তিনি জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছেন। এমনকি তাঁর অনিষ্টকারী আফজাল হোসেনকে সাহায্য করতেও এতটুকু কার্পণ্য করেন না তিনি। আফজাল হোসেন তাঁর ক্ষতি চাইলেও তিনি আফজাল হোসেনের জন্য মঙ্গল কামনা করেন। এমন মনোভাবই ‘প্রতিদান’ কবিতার মূলকথা।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবির ভাবনায় স্বার্থহীন মহান হৃদয়ের সন্ধান পাওয়া যায়, যে সহজেই অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে তাকে আমি করতে পারে। তেমনি উদ্দীপকের সাহার বানু ক্ষমাশীল মহৎ মনের মানুষ। আফজাল হোসেন তাঁর ক্ষতি করতে ব্যস্ত থাকলেও তিনি তাঁকে ক্ষমা করে তাঁর প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তাছাড়া গ্রামের উন্নয়নে এবং মানুষের উপকারে তিনি সব সময় ব্যস্ত থাকেন। অর্থাৎ উদ্দীপকের সাহার বানু ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করে মানবতার জয়গানকে উর্ধ্বে তুলে ধরতেই সচেষ্ট। ‘প্রতিদান’ কবিতায়ও কবির এমন মহৎ আকাঙ্ক্ষার পরিচয় মেলে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সাহার বানু যেন ‘প্রতিদান’ কবিতার কবি ভাবনার প্রতিচ্ছবি।

৫. সম্প্রতি আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আম্পান ল-ভ- করে দিয়ে গেছে রূপপুর গ্রাম। কালাম ও গম্বুর দুজনই এই গ্রামের বাসিন্দা। কিন্তু সীর্ঘদিন ধরেই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগেই আছে। গত কয়েক দিন থেকেই তারা ত্রাণের আশায় ইউনিয়ন পরিষদে খোজখবর করছিল। অবশেষে গফুর ত্রাণের বস্তা পেলেও ঝালাম কোনো ত্রাণ পেল না। বিষয়টি জানতে পেরে গফুর তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে সো। সে নিজের ত্রাণের কিছু অংশ কালামকে দেয়। এতে তাদের মধ্যে শত্রুতার পরিবর্তে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়।
ক. কবি জসীমউদ্দীনের পৈতৃক নিবাস কোথায়?
খ. “আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন।
গ. উদ্দীপকের গফুর চরিত্রটি ‘প্রতিদান’ কবিতার কোন দিকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘গফুরের কালামকে সাহায্য করা ‘প্রতিদান’ কবিতার চেতনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

 ৫ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. কবি জসীমউদ্দীনের পৈতৃক নিবাস ফরিদপুরের গোবিন্দপুর গ্রামে।
খ. আলোচ্য চরণের মাধ্যমে কবি বোঝাতে চেয়েছেন কাছের-দূরের সব মানুষের প্রতিই তিনি সমান ভালোবাসা অনুভব করেন।
যে কবিকে পর করে দিয়েছে তাকেই আপন করতে কবির প্রাণ কাঁদে। কবি সকলকে আপনজন মনে করেন। তিনি কাউকে শত্রু ভাবতে পারেন না। তাই যারা কবিকে ভুল বুঝে পর করে দেয়, কবি তাদের জন্যই কেঁদে বেড়ান। কারণ তারা তাঁকে পর ভাবলেও কবি তা ভাবেন না। পরম মমতায় তাদের আপন করতে চান।
গ. ‘প্রতিদান’ কবিতার অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার দিকটি উদ্দীপকের গফুর চরিত্রটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ‘প্রতিদান’ কবিতার কবিভাবনায় সহনশীলতা, ক্ষমাশীলতা ও উদারতার দৃষ্টান্ত ফুটে উঠেছে। কবির যে অপকার করেছে, তাঁকে নানা বঘ্ননা দিয়েছে কবি তাকেই আপন করে নিতে চেয়েছেন ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে। কারণ কবি বিশ্বাস করেন প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসা নয়, ভালোবাসাই পারে পৃথিবীকে সুন্দর করতে।
উদ্দীপকের গফুরের সাথে কালামের সম্পর্ক ভালো না হলেও কালামের বিপদে সে-ই সবার আগে এগিয়ে আসে। গফুর নিজের ত্রাণ থেকে কিছুটা কালামকে দিয়ে সাহায্য করে। এতে তাদের মধ্যে সৌহার্দ্যের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করেই নয় বরং প্রতিদান হিসেবে অনিষ্টকারীর উপকার করার মাধ্যমে পৃথিবীকে সুন্দর এবং বাসযোগ্য করতে চেয়েছেন। এ বিষয়টি উদ্দীপকের গফুর চরিত্রের মাঝেও ফুটে উঠেছে। তাই বলা যায়, গফুর চরিত্রটি ‘প্রতিদান’ কবিতার ক্ষমাশীলতা ও পরোপকারিতার আহ্বানকে ধারণ করে।
ঘ. গফুরের কাছ থেকে কালামের সাহায্য প্রাপ্তি মানবতার উদার বাণীকেই সমর্থন করে, যা ‘প্রতিদান’ কবিতারও মর্মকথা।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি এমন এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছেন যেখানে প্রতিশোধ প্রতিহিংসা থাকবে না। মানুষ মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে আপন করে নেবে। এমনকি অনিষ্টকারীকেও ক্ষমা করে, তার উপকার করবে বলেই কবি মনে করেন। কারণ ভালোবাসাপূর্ণ মনোভাবই পৃথিবীকে সুন্দর করে তুলতে পারে।
উদ্দীপকের গফুর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ত্রাণের সাহায্য ছাড়া তার সংসার চালানো দায়। তবুও যখন সে জেনেছে তার শত্রু কালাম ত্রাণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েও ত্রাণ সংগ্রহ করতে পারেনি, তখন সে সব দ্বন্দ্ব-সংঘাত ভুলে তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ফলে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ‘প্রতিদান’ কবিতায় মানুষের এমন ইতিবাচক মনোভাবকেই উৎসাহিত করা হয়েছে।
‘প্রতিদান’ কবিতায় মূলত কবি বলতে চেয়েছেন, মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে আপন করা, মানুষ হয়ে মানুষের উপকার করাই জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। একজন মানুষ যদি অপরাধীও হয় তবুও তার বিপদে পাশে দাঁড়াতে হবে। এই বিষয়টি উদ্দীপকে লক্ষণীয়। উদ্দীপকে বর্ণিত গফুর কালামের বিপদের দিনে দুজনের মাঝে থাকা দূরত্বকে ভুলে গিয়েছে। মানবতার উদার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার কল্যাণে আত্মনিবেদন করেছে। আলোচ্য কবিতায়ও মানবতার জয়গান করা হয়েছে এবং মানবকল্যাণে আত্মত্যাগকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি আলোচ্য কবিতার মূল চেতনার সাথে সংগতিপূর্ণ।

৬. উদ্দীপক-১: সন্তানদের পড়ালেখা করানোর জন্য ২৬ বছর চাকরি করে গেছেন। নিজে টাকা জমাননি। পড়ালেখা শেষে সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় পাঠিয়েছেন লন্ডনে। সেখানে উচ্চশিক্ষা শেষে বড়ো ছেলে ডাক্তারি করছে। মেয়েও লন্ডনে ৭ বছর চাকরি করছে। কিন্তু তবুও শেষ বয়সে ঠাই হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। নিজের বেদনা ঢেকে বৃদ্ধা মা বলেন, ‘আমি কেমন আছি সেটা দেখার বিষয় না, আমি কেমন আছি এটাও বড়ো ব্যাপার না। আমি সবসময় দোয়া করব আমার সন্তানেরা যেন দুধে-ভাতে থাকে।’
উদ্দীপক-২: প্রাক-ইসলামি যুগে আরবের অবস্থা ছিল শোচনীয়। তখন গোত্রে গোত্রে মারামারি ছিল নিত্য ঘটনা। এক গোত্রের কেউ অন্য গোত্রের কারো দ্বারা আক্রান্ত হলে সেই মারামারি বংশ পরম্পরায় চলে আসত। এখনই সময়ে আবির্ভাব ঘটে মহানবি হজরত মুহম্মদ (সা.) এর। তিনি ক্ষমার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে শান্তির বার্তা পৌঁছে দেন সকলের কাছে। ফলে আরব অঞ্চলে সৃষ্টি হয় প্রীতিময় পরিবেশ।

ক. কবি কোথায় আঘাত পেয়েছেন?
খ. ‘প্রতিদান’ কবিতায় ভালোবাসাপূর্ণ মানুষ কামনা করা হয়েছে কেন?
গ. উদ্দীপক-১ ‘প্রতিদান’ কবিতার সঙ্গে কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক-২ ‘প্রতিদান’ কবিতার মূলভাবকে ধারণ করতে পেরেছে কি? তোমার মতামত দাও।

 ৬ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. কবি বুকে আঘাত পেয়েছেন।
খ. ভালোবাসাপূর্ণ মানুষ সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবী নির্মাণ করতে পারে বলে কবিতায় এমন মানুষের কামনা করা হয়েছে।
প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণ মানুষেরা কখনো অন্যের ভালো করতে পারে না। বরং তাদের দ্বারা সমাজের অমঙ্গল আর অনিষ্ট হয়। অন্যদিকে ভালোবাসাপূর্ণ মানুষ সহজেই পরকে আপন করতে পারে। তারা অন্যের দুঃখে সহায় হতে পারে। নিজেদের মনের সৌন্দর্য দিয়ে পৃথিবীকে নতুন করে সাজাতে পারে। তাই পৃথিবীতে ভালোবাসাপূর্ণ মানুষকেই কবি আকাঙ্ক্ষা করেছেন।
গ. ক্ষমাশীলতার প্রেক্ষিতে উদ্দীপক-১ ‘প্রতিদান’ কবিতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি ক্ষমাশীলতার কথা বলেছেন। তিনি অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করার পাশাপাশি তার উপকার করতে চেয়েছেন। কবির প্রত্যাশা সুন্দর ও বাসযোগ্য পৃথিবী বিনির্মাণ। আর ক্ষমাশীলতাই পারে এই পথে মানুষকে এগিয়ে নিতে। শত্রুকে ক্ষমা করে দিয়ে তার উপকার করলে প্রীতিময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ফলে সমাজে বৈষম্য দূরীভূত হয়। আলোচ্য কবিতায় এই বিষয়টিই প্রাধান্য পেয়েছে।
উদ্দীপক-১-এ বৃদ্ধা মায়ের মধ্যে ক্ষমাশীলতার উৎকৃষ্ট নিদর্শন প্রকাশ পেয়েছে। তিনি সারাজীবন সন্তানদের জন্য নিজের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিলেও শেষ বয়সে তাঁর ঠাঁই হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। তারপরও মা তাঁর সন্তানদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন। সন্তানের সুখই তাঁর সুখ। তাইতো বৃদ্ধাশ্রমে বসেও তিনি নিজের সন্তানদের দুধে-ভাতে থাকার কামনা করেছেন। আর এ দিকটিই উদ্দীপক-১-কে ‘প্রতিদান’ কবিতার সঙ্গে সাদৃশ্যময় করে তুলেছে।
ঘ. ‘প্রতিদান’ কবিতার মূলকথা হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে প্রীতিময় পরিবেশ সৃষ্টি, যা উদ্দীপক-২-এ বাস্তব রূপ লাভ করায় তা কবিতার মূলভাবকে ধারণ করতে পেরেছে।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি প্রীতিময় পরিবেশের প্রত্যাশা করেছেন। আর এজন্য তিনি পরকে আপন করতে কেঁদে বেড়িয়েছেন। কেউ কবিকে কাঁটা দিলে কবি বিনিময়ে তাকে ফুল দিতে চেয়েছেন। সর্বোপরি অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে কবি বিভেদ-হিংসা ভুলে ভালোবাসা ও উদারতার বার্তা পৌঁছাতে চেয়েছেন। আর এটিই আলোচ্য কবিতার মূলকথা।
উদ্দীপক-২-এ প্রীতিময় পরিবেশ সৃষ্টির দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়। সেখানে বিভেদ-হিংসার বিপরীতে উদারতার জয়গান গাওয়া হয়েছে। উদ্দীপক-২-এ গোত্রে গোত্রে মারামারি ও হিংসা-বিদ্বেষের দৌরাত্ম্য থাকলেও মহানবি হজরত মুহম্মদ (স.) তা দূর করেন। তিনি সবার কাছে শান্তির বার্তা পৌঁছে দেন। তাঁর প্রচেষ্টাতেই আরব অঞ্চলে ফিরে আসে সুন্দর ও ভালোবাসাপূর্ণ পরিবেশ।
‘প্রতিদান’ কবিতায় হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সৌহার্দের সম্পর্ক সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। আর উদ্দীপক-২-এ তার বাস্তব রূপ ফুটে উঠেছে। আলোচ্য কবিতায় কবি অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে প্রেমময় পরিবেশ সৃষ্টির তাগিদ দিয়েছেন। আর এটিই কবিতার মূল কথা। উদ্দীপক-২ কবিতার এই দিকটিকেই বাস্তব রূপে ফুটিয়ে তুলেছে। ফলে উদ্দীপক-২ ‘প্রতিদান’ কবিতার মূলভাবকে ধারণ করতে পেরেছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

৭. কেতুপুর গ্রামের দুলাল মিয়া অত্যন্ত প্রতিশোধপরায়ণ মানুষ। কেউ তার ক্ষতি করলে সে ছেড়ে কথা বলে না। যেভাবেই হোক প্রতিশোধ নেওয়াই তার স্বভাব। যদিও স্ত্রী আয়েশা বানু তার বিপরীত মেরুর মানুষ। সে স্বামীকে সর্বদা বোঝানোর চেষ্টা করে যে, অপরাধীকে ক্ষমা করে তার উপকার করার মধ্যেই মানবজন্মের সার্থকতা।
ক. ‘প্রতিদান’ কবিতাটি কবি জসীমউদ্দীনের কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।
খ. কবি কাঁটার বিনিময়ে ফুল দান করতে চান কেন?
গ. উদ্দীপকের দুলাল মিয়া চরিত্রের মনোভাবের সাথে প্রতিদান’ কবিতার বৈসাদৃশ্য নির্দেশ করো।
ঘ. “উদ্দীপকের আয়েশা বানু ‘প্রতিদান’ কবিতার কবিভাবনার সমর্থক”- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

 ৭ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ‘প্রতিদান’ কবিতাটি কবি জসীমউদ্দীনের ‘বালুচর’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।
খ. কবি অনিষ্টকারীর উপকার করতে চান বলে কাঁটার বিনিময়ে ফুল দান করেন।
কবি বিশ্বাস করেন, অনিষ্টকারীকে কেবল ক্ষমা করেই নয়, বরং প্রতিদান হিসেবে তার উপকার করার মাধ্যমে পৃথিবীকে সুন্দর করা সম্ভব। কেউ ক্ষতি করেছে বলে প্রতিশোধের বশবর্তী হয়ে তারও ক্ষতি করতে হবে কবি তা মানতে নারাজ। তাই কবিকে কেউ কাঁটা দিলে কবি তাকে প্রতিদানে ফুল উপহার দেন। অর্থাৎ কেউ তাঁর অনিষ্ট করলে বিনিময়ে তার মঙ্গল সাধন করেন।
গ. উদ্দীপকের দুলাল মিয়া চরিত্রটি স্বার্থান্ধ ও প্রতিশোধপরায়ণ যার বিপরীতে ‘প্রতিদান’ কবিতায় পরার্থপরতা ও ক্ষমাশীলতার কথা বলা হয়েছে।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি জসীমউদ্দীন ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরার্থপরতার কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, অনিষ্টকারীকে ক্ষমা করে দিয়ে তাকে ভালোবাসতে পারাই মনুষ্যত্বের পরিচায়ক। প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ নয় বরং ক্ষমা, সহযোগিতা, দয়া, ভালোবাসা এ সবই মানুষকে মহৎ জীবনের স্বাদ দিতে পারে।
উদ্দীপকের দুলাল মিয়া অত্যন্ত প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণ একজন মানুষ। স্বার্থে আঘাত লাগলে সে কাউকে ছেড়ে দেয় না। যে করেই হোক সে তার শত্রুর ক্ষতি করে। তার কাছে সব কিছুর ওপর নিজের স্বার্থ। স্বার্থ ছাড়া সে কোনো কাজ করে না। প্রতিদান’ কবিতায় কবি ব্যক্তিস্বার্থকে তুচ্ছ করে দেখেছেন এবং উদার মানবিকতার বাণী শুনিয়েছেন। কিন্তু উদ্দীপকের দুলাল মিয়া চরিত্রের মধ্য দিয়ে স্বার্থসন্ধানী, প্রতিশোধপরায়ণ মানুষের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠেছে। তাই বলা যায়, চারিত্রিক কলুষতার জন্য দুলাল মিয়া ‘প্রতিদান’ কবিতার সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. প্রতিহিংসায় নয় বরং ক্ষমা ও উদারতায় বিশ্বাস করে বলেই আয়েশা বানু ‘প্রতিদান’ কবিতার কবিভাবনার সমর্থক।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি ক্ষমাশীলতার আদর্শে উজ্জ্বল মহান জীবনের প্রেরণা ফুটিয়ে তুলেছেন। সমাজ-সংসারে বিদ্যমান বিভেদ-হিংসা হানাহানির দ্বারা আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও কবির কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে পরার্থপরতার উদাত্ত আহ্বান। কবি তাঁর অনিষ্টকারীকে দ্বিধাহীন মনে ক্ষমা করে দিয়ে তারই কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।
উদ্দীপকের আয়েশা বানু স্বার্থসন্ধানী ও প্রতিহিংসাপরায়ণ দুলাল মিয়ার স্ত্রী। কিন্তু স্বামীর মতো তার মন কলুষিত নয়। সে ক্ষমাশীলতা ও উদারতায় বিশ্বাস করে। সে চায় তার স্বামী যেন নিজের ভুল বুঝতে পারে। তাই স্বামীকে সে মহৎ জীবনের সন্ধান দেয়। ‘প্রতিদান’ কবিতায়ও কবির মাঝে এমন মানসিকতার স্বরূপ লক্ষ করা যায়।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি সার্থক জীবনের আদর্শ তুলে ধরেছেন। প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ নয়, ক্ষমাশীল মহৎ জীবনের উপলব্ধিই মানুষকে সার্থক করে তোলে। যে বিষয়টি উদ্দীপকের আয়েশার মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। সেও নিজের সৎ উপলব্ধির মধ্য দিয়ে স্বামীর নেতিবাচক স্বভাবে পরিবর্তন আনতে চায়। আয়েশা বিশ্বাস করে পরার্থপরতার মধ্য দিয়েই কেবল জীবন সার্থক হয়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের আয়েশা বানু ‘প্রতিদান’ কবিতার কবি ভাবনার সমার্থক। কেননা, কবির মতো সেও বিশ্বাস করে ক্ষমাশীলতার মাহাস্থ্যে ভাস্কর ভালোবাসাপূর্ণ মানবসত্তা।

৮. হিংসা-ক্ষ্যে রহিবে না কেহ কারে করিবে না ঘৃণা
পরস্পর বাঁধি দিন প্রীতির কখনে
বিশ্বজুড়ে এক সুরে বাজিবে গো মিলনের বীণা
মানব জাগিবে নয় জীবন স্পন্দনে।
ক. কবি জসীমউদ্দীনকে ডিলিট উপাধি প্রদান করে কোন বিশ্ববিদ্যালয়?
খ. যে গেছে বুকেতে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি’- কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. ‘প্রতিদান’ কবিতার কোন দিকটি উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের তাৎপর্য ‘প্রতিদান’ কবিতার সামগ্রিক চেতনাকে ধারণ করে কি? বিশ্লেষণ করো।

 ৮ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. কবি জসীমউদ্দীনকে ডিলিট উপাধি প্রদান করে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।
খ. কবি প্রতিহিংসাপরায়ণ নন বলে তাঁকে কেউ আঘাত করলেও তিনি আঘাতকারীর অকল্যাণে ব্যথা অনুভব করেন।
কবি পৃথিবীর সামগ্রিক কল্যাণে বিশ্বাস করেন। ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে কবির কাছে পরার্থপরতাই মুখ্য। তাই কবিকে কেউ আঘাত করলে, কবি তাকে পাল্টা আঘাত করেন না। বরং আঘাতের পরিবর্তে আঘাতকারীর জন্য কাঁদেন এবং তার মঙ্গল কামনা করেন।
গ. ‘প্রতিদান’ কবিতায় ভালোবাসাপূর্ণ পৃথিবী বিনির্মাণের যে বাসনা ব্যক্ত হয়েছে সেই দিকটি উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবির কণ্ঠে সমাজ-সংসারে বিদ্যমান হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি-মারামারি, বিভেদ, প্রতিশোধ ইত্যাদির বিপরীতে প্রীতিময় সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবীর আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হয়েছে। কবি বিশ্বাস করেন মানবিক মানুষই নির্মাণ করতে পারে সুন্দর ও বাসযোগ্য পৃথিবী। তাই প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ ভুলে ভালোবাসায় পৃথিবীকে ভরিয়ে তুলতে হবে।
উদ্দীপকের কবিতাংশে মানবজাতির জন্য এক নব জীবন-আকাঙ্ক্ষা ধ্বনিত হয়েছে, হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। সারা বিশ্বের সকল মানুষ প্রীতির বন্ধনে বাঁধা পড়বে। বিশ্বজুড়ে মিলনের সুর ধ্বনিত হবে। কেউ কাউকে ঘৃণা করবে না বরং ভালোবাসার শক্তিতে এক নতুন সমাজ গড়ে তুলবে। কলুষমুক্ত, ভালোবাসাপূর্ণ পৃথিবী নির্মাণের বিষয়টি ‘প্রতিদান’ কবিতা ও উদ্দীপককে সাদৃশ্যপূর্ণ করে তুলেছে।
ঘ. উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে মানবিক পৃথিবী গড়ার আহ্বান, যা ‘প্রতিদান’ কবিতার সামগ্রিক চেতনাকে ধারণ করে।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরার্থপরতার মধ্যেই যে মানবের প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা নিহিত সেই বিষয়টি তুলে ধরেছেন। লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ কখনো মানুষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। ভালোবাসা, পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতাই পারে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, হিংসা, দ্বেষ, ঘৃণা ভুলে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হলেই পৃথিবীতে নতুন জীবনের স্পন্দন ধ্বনিত হবে। সারা বিশ্বের মানুষ যখন সকল দ্বন্দ্ব-ভেদাভেদকে দূরে ঠেলে ভালোবাসার সুরে মিলিত হবে তখনই মানবজাতির প্রকৃত সার্থকতা অর্জিত হবে। অর্থাৎ উদ্দীপকে একটি মানবিক সমাজ নির্মাণের প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে। আলোচ্য কবিতায় কবির প্রত্যাশাও তাই।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি সংকীর্ণ মানসিকতা পরিহার করে মানবতার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। সকল ভেদাভেদ, হিংসা, দ্বেষ ভুলে উদার মনোভাব ধারণের বিষয়টি কবি তাঁর কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছেন। মানবকল্যাণে আত্মত্যাগই ‘প্রতিদান’ কবিতার মূলকথা। সেই লক্ষ্যে কবিতায় মানুষে মানুষে প্রীতিময় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছে। আর উদ্দীপকের মূল ভাবনাও সেই বাণীকেই সমর্থন করে। পারস্পরিক দূরত্ব ভুলে প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারলেই মানুষ প্রকৃত জীবনের স্পন্দন শুনতে পারবে। যে জীবন হবে সৌহার্দ্য, প্রীতি ও শান্তিতে পরিপূর্ণ। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের তাৎপর্য আলোচ্য কবিতার সামগ্রিক চেতনাকে ধারণ করে।

৯. প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদের কুঁড়েঘরে।”
ক. ‘বিবাগী’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই নির্মাণ করতে পারে সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবী’ – ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ‘প্রতিদান’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে?
ঘ. ‘উদ্দীপকটিতে ‘প্রতিদান’ কবিতার সামগ্রিক ভাব প্রকাশিত হয়নি।’ – উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

 ৯ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ‘বিবাগী’ শব্দের অর্থ উদাসীন।
খ. হিংসা-বিদ্বেষ নয় পারস্পারিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সহমর্মিতার সম্পর্ক পৃথিবীকে সুন্দর ও নিরাপদ করতে পারে।
বিভেদ, বিবাদ, হিংসা, বিদ্বেষ কখনো মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। সমাজ-সংসারে নানা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিরাজ করলেও কেবল ভালোবাসাপূর্ণ মনোভাবই পারে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে। ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরার্থপরতার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা এবং নিরাপদ পৃথিবীর নিশ্চয়তা নির্ভর করে। তাই ভালোবাসাপূর্ণ মানুষই পারে সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে।
গ. প্রতিটি মানুষ হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে প্রীতি ও প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারলেই সুন্দর পৃথিবী নির্মাণ সম্ভব— ‘প্রতিদান’ কবিতার এই দিকটি উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে অন্যের সুখের কথা ভেবেছেন। পরার্থপরতার মধ্যেই যে ব্যক্তির প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা নিহিত সেই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার পরিবর্তে করি ভালোবাসাময় এক নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন।
উদীপকে বলা হয়েছে, প্রীতি ও প্রেমের বন্ধনে নিজেদের বাঁধতে পারলে পৃথিবীতেই স্বর্গ রচিত হতে পারে। ঝগড়া-বিবাদ ভুলে মানুষে মানুষে যদি সম্প্রীতির ডাব চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তবে পৃথিবী হয়ে উঠবে আরও সুন্দর ও নিরাপদ। প্রতিহিংসা-প্রতিশোধের বিপরীতে প্রীতি ও প্রেমের প্রসার এবং সুন্দর পৃথিবী গড়ার আহ্বানই ‘প্রতিদান’ কবিতার সাথে উদ্দীপকটিকে সাদৃশ্যপূর্ণ করে তুলেছে।
ঘ. পারস্পরিক ভালোবাসার মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে স্বর্গতুল্য করে তোলার বিষয়টি উদ্দীপকে ফুটে উঠলেও ‘প্রতিদান’ কবিতায় উল্লিখিত।আপন স্বার্থ বিলিয়ে দিয়ে বৃহৎ কল্যাণের দিকটি এখানে অনুপস্থিত।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতার দিকটি তুলে ধরেছেন। নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে পরার্থে জীবনকে উৎসর্গ করার কথা বলেছেন। সেই সাথে প্রতিহিংসা-প্রতিশোধের মনোভাব পরিহার করে প্রীতিময় পরিবেশ সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। কবি মনে করেন, যে অন্যের অনিষ্ট করতে চায়, তাকে ক্ষমা করে দিতে হয় এবং তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হয়।
উদ্দীপকে প্রেম ও প্রীতির মধ্য দিয়ে পুণ্যের বন্ধনে একত্রিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। মানুষের মধ্যে যদি হানাহানি, মারামারি, হিংসা, বিদ্বেষের পরিবর্তে প্রেম ও প্রীতিময় সম্পর্ক বিরাজ করে তবে এই পৃথিবীকেই স্বর্গের মতো সুন্দর মনে হবে। পৃথিবীতে অফুরান ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে পারলেই স্বর্গ এসে দাঁড়াবে প্রতিটি মানুষের কাছে। ‘প্রতিদান’ কবিতায়ও এমন একটি পৃথিবী নির্মাণের স্বপ্ন দেখা হয়েছে। ‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি সদগুণ দ্বারা অসৎ চিন্তা ভাবনাকে দূর করতে বলেছেন। পারস্পরিক ভালোবাসাই পারে বিদ্বেষের বিষবাষ্প অপসারণ করে পৃথিবীকে সুন্দর করতে। এজন্য অনিষ্টকারীকেও ক্ষমা করে আপন করে নিতে হবে। উদ্দীপকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে নিরাপদ ও স্বর্গতুল্য পৃথিবী বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হয়েছে। কিন্তু নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে পরার্থপরতার দিকটি এখানে অনুপস্থিত। অর্থাৎ উদ্দীপকে কেবল সুন্দর পৃথিবী নির্মাণে সামষ্টিক প্রয়াসের দিকটি এসেছে। ‘প্রতিদান’ কবিতায় ব্যক্তিপর্যায়েও কীভাবে মানবতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়, তার উপায় কাব্যিক ব্যঞ্জনায় ধরা পড়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি আলোচ্য কবিতার সামগ্রিক ভাব নয় বরং খ-াংশকে প্রকাশ করে।

১০. কারো উপকার করে খোঁটা দেওয়া একটি বিশ্রী অভ্যাস। এটা মানুষের ব্যক্তিত্বকে ছোটো করে দেয়। দেখা যায়, এক শ্রেণির মানুষ দান-খয়রাত করে এবং ঋণ দিয়ে পরক্ষণেই খোঁটা দেয়। বিশেষত যদি গ্রহীতার সঙ্গে কোনো কারণে সম্পর্ক নষ্ট হয় বা মতপার্থক্য দেখা দেয়, তখন অতীতের উপকারের ফিরিস্তি খুলে দিয়ে খোঁটা দিতে শুরু করে। সমাজে এটি একটি গর্হিত কাজ।
ক. ‘নিঠুরিয়া’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘কত ঠাঁই হতে কত কী যে আনি, সাজাই নিরন্তর’- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘প্রতিদান’ কবিতার সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ও ‘প্রতিদান’ কবিতার কবির মনোভাব পরস্পর সমান্তরাল’- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

 ১০ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ‘নিঠুরিয়া’ শব্দের অর্থ- নির্দয়।
খ. যে কবিকে নিষ্ঠুর বাণী দিয়েছে কবি তার মুখখানি সাজিয়ে দিতে চেয়েছেন।
কবি বিশ্বাস করেন কারো ক্ষতি করা নয়, উপকার করাই মানুষের প্রকৃত ধর্ম। তাই কেউ নিষ্ঠুর বাণী শোনালে কবি তার মুখ সাজিয়ে দিতে চেয়েছেন। দেখিয়ে দিয়েছেন প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ নয়, ভালবাসাই জীবনের আদর্শ।
গ. উদার মনোভাবের গুরুত্ব তুলে ধরার দিক থেকে উদ্দীপকের সঙ্গে ‘প্রতিদান’ কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি মনে করেন, ভালোবাসাই পৃথিবীতে চূড়ান্ত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ কখনো মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। কারণ প্রকৃত মানুষ তারাই যারা মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে। তাই ক্ষমা ও দায়িত্বশীল আচরণই মানুষকে একত্রিত করতে পারে এবং পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে পারে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, কারো উপকার করে খোঁটা দেওয়াটা মানুষের ব্যক্তিত্বকে ছোটো করে দেয়। কোনো কারণে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেলে বা মতপার্থক্য দেখা গেলে তখন অতীতের উপকারের কথা বলে খোটা দেয় যা গর্হিত কাজ। ‘প্রতিদান’ কবিতায় কবিও বলেছেন, অনিষ্টকারীদের ক্ষমা করে দিয়ে উপকার করতে। কবিকে কেউ কাঁটা দিলে তার বিনিময়ে ফুলও দেওয়ার কথা বলেছেন। অর্থাৎ উভয়ক্ষেত্রে উদার মনোভাবাপন্ন হওয়ার প্রেরণা দেওয়া হয়েছে। এ দিক থেকে উদ্দীপকের সঙ্গে ‘প্রতিদান’ কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. “উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ও ‘প্রতিদান’ কবিতার কবির মনোভাব পরস্পর সমান্তরাল”- মন্তব্যটি যথার্থ।
‘প্রতিদান’ কবিতায় কবির মতে, কেউ আঘাত করতে চাইলে তাকে পাল্টা আঘাত না করে ভালোবাসার মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন করা সম্ভব। সমাজ সংসারে বিদ্যমান হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি-মারামারি, বিভেদ, প্রতিশোধ অশান্তি বাড়ায়। কবি মনে করেন পরার্থপরতার মধ্যেই ব্যক্তির প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা নিহিত।
উদ্দীপকে দেখা যায় যে, উপকার করে খোঁটা দেওয়া মানুষগুলো নিম্ন রুচির অধিকারী। কোনো কারণে উপকারভোগীর সাথে সম্পর্ক নষ্ট হলে বা মতপার্থক্য দেখা দিলে তখন অতীতের কথা বলে খোঁটা দেয়া একটি গর্হিত কাজ। ‘প্রতিদান’ কবিতার কবির ভাষায়, যারা ক্ষতি করতে চাইবেন তাদের ওপর আমরা যেন প্রতিশোধপরায়ণ না হই। কারণ ক্ষমা আর উদারতার মাধ্যমেই পৃথিবীটা সবার জন্য নিরাপদ থাকবে। ‘প্রতিদান’ কবিতায় কবির মতে, সমাজ-সংসারে বিভেদ-হিংসা-হানাহানি থাকলেও অনিষ্টকারীদের ভালোবাসা দিয়ে, ক্ষমা করার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। সংকীর্ণ মানসিকতা পরিহার করে সকল ভেদাভেদ, হিংসা-প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণতা ভুলে পরিহীতব্রতী হয়ে সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব। উদ্দীপকেও অনিষ্টকারীর উপর প্রতিশোধ না নিয়ে তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার বিষয়টি লক্ষ করা যায়। অর্থাৎ উভয়ক্ষেত্রে উদার হওয়ার উপর গুরুত্বরোপ করা হয়েছে। সে দিক থেকে উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ও ‘প্রতিদান’ কবিতার কবির মনোভাব পরস্পর সমান্তরাল।