You dont have javascript enabled! Please enable it!

HSC BANGLA 1ST – BILASHI SHORT QUES & ONUDHABON

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?      প্রশ্ন-১.

উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।      

শরৎচন্দ্র চট্টোপধ্যায় এর মুদ্রিত প্রথম গল্পের নাম কী?   প্রশ্ন-২.

উত্তর: শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর মুদ্রিত প্রথম গল্পের নাম ‘মন্দির’।       

মন্দির গল্পটি কোন পুরস্কারে ভূষিত হয়?          প্রশ্ন-৩.

উত্তর: মন্দির গল্পটি ‘কুন্তলীন’ পুরস্কারে ভূষিত হয় ।     

‘দেনা-পাওনা’ শরৎচন্দ্রের কোন জাতীয় রচনা?              প্রশ্ন-৪.

উত্তর: ‘দেনা-পাওনা’ শরৎচন্দ্রের একটি উপন্যাস ।       

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে কত সালে ডিলিট ডিগ্রি প্রদান করে?    প্রশ্ন-৫.

উত্তর: ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ডিলিট ডিগ্রি প্রদান করে ।

লেখক কয় ক্রোশ পথ অতিক্রম করে বিদ্যা অর্জন করতে যেতেন?              প্রশ্ন-৬.

উত্তর: লেখক দুই ক্রোশ পথ অতিক্রম করে বিদ্যা অর্জন করতে যেতেন ।  

কত ক্রোশ পথ হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়?             প্রশ্ন-৭.

উত্তর: চার ক্রোশ পথ হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করতে হয় ।               

কে মৃত্যুঞ্জয়ের নামে নানাবিধ দুর্নাম রটাত?    প্রশ্ন-৮.

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয়ের নামে নানাবিধ দুর্নাম রটাত তার খুড়া ।          

কে মৃত্যুঞ্জয়ের চিকিৎসা করে?           প্রশ্ন-৯.

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয়ের চিকিৎসা করে মালো পাড়ার এক বুড়ো মালো ।              

মৃত্যুঞ্জয়ের পোড়োবাড়িতে কীসের বালাই ছিল না?         প্রশ্ন-১০.

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয়ের পোড়োবাড়িতে প্রাচীরের বালাই ছিল না।।      

ফুলদানিতে ভিজাইয়া রাখা বাসি ফুলের মতো – কে?     প্রশ্ন-১১. ‘

উত্তর: ফুলদানিতে জল দিয়া ভিজাইয়া রাখা বাসি ফুলের মতো বিলাসী।   

মৃত্যুঞ্জয় কত মাস শয্যাগত ছিল?      প্রশ্ন-১২,

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয় প্রায় দেড় মাস শয্যাগত ছিল ।               

কতদিন মৃত্যুঞ্জয় অজ্ঞান-অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে ছিল? প্রশ্ন-১৩,

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয় দশ-পনের দিন অজ্ঞান-অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে ছিল।         

মৃত্যুঞ্জয়ের বাগানটি কত বিঘার ছিল?              প্রশ্ন-১৪.

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয়ের বাগানটি কুড়ি-পঁচিশ বিঘার ছিল।    

খুড়া কোন বংশের?              প্রশ্ন-১৫.

উত্তর: খুড়া মিত্তির বংশের।               

মৃত্যুঞ্জয় কোন বংশের ছেলে?              প্রশ্ন-১৬.

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয় মিত্তির বংশের ছেলে।               

মৃত্যুঞ্জয়ের অমার্জনীয় অপরাধ কী ছিল?          প্রশ্ন-১৭.

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয়ের অমার্জনীয় অপরাধ ছিল বিলাসীর হাতে ভাত খাওয়া । 

মৃত্যুঞ্জয় কী পাপ করেছিল? প্রশ্ন-১৮.

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয় অন্নপাপ করেছিল।   

গোখরা সাপ ধরে পোষার শখ ছিল কার?         প্রশ্ন-১৯.

উত্তর: গোখরা সাপ ধরে পোষার শখ ছিল ন্যাড়ার।      

কেউটে কার বাহন?             প্রশ্ন-২০.

উত্তর: কেউটে মনসার বাহন।           

‘বিলাসী’ গল্পে কোন কোন দেবীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে?          প্রশ্ন-২১.

উত্তর: ‘বিলাসী’ গল্পে সরস্বতী ও মনসা দেবীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।    

মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসী কোথায় সাপ ধরতে গিয়েছিল?         প্রশ্ন-২২.

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসী এক গোয়ালার বাড়িতে সাপ ধরতে গিয়েছিল    

কখন বিলাসী মৃত্যুঞ্জয়কে নানা অজুহাতে বাধা দিত?     প্রশ্ন-২৩.

উত্তর: সাপ ধরার বায়না এলে বিলাসী মৃত্যুঞ্জয়কে নানা অজুহাতে বাধা দিত ।         

গোয়ালার বাড়িতে মৃত্যুঞ্জয় কী জাতের সাপ ধরেছিল?  প্রশ্ন-২৪.

উত্তর: গোয়ালার বাড়িতে মৃত্যুঞ্জয় খরিশ গোখরা জাতের সাপ ধরেছিল ।

গোয়ালার বাড়িতে মৃত্যুঞ্জয় সাপ ধরে কার হাতে দিল?  প্রশ্ন-২৫.

উত্তর: গোয়ালার বাড়িতে মৃত্যুঞ্জয় সাপ ধরে ন্যাড়ার হাতে দিল  

বিলাসী’ গল্পে মৃত্যুঞ্জয়কে সাপে কামড়ালে কোন মন্ত্র আবৃত্তি করা হয়?         প্রশ্ন-২৬. ‘

উত্তর: ‘বিলাসী’ গল্পে মৃত্যুঞ্জয়কে সাপে কামড়ালে বিষহরির আজ্ঞা মন্ত্রটি আবৃত্তি করা হয় ।    

মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যু হয়েছিল কোন সাপের দংশনে?               প্রশ্ন-২৭.

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যু হয়েছিল খরিশ গোখরা সাপের দংশনে ।  

মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুর পর বিলাসী কতদিন বেঁচে ছিল?         প্রশ্ন-২৮.

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুর পর বিলাসী সাত দিন বেঁচে ছিল ।         

বিলাসী কী পান করে আত্মহত্যা করে?              প্রশ্ন-২৯.

উত্তর: বিলাসী বিষপান করে আত্মহত্যা করে ।               

মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যু হলে খুড়া কত আনা বাগান দখল করে নেয়?       প্রশ্ন-৩০.

উত্তর: মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যু হলে খুড়া ষোল আনা বাগান দখল করে নেয় ।        

কোন ব্যাপারটা অনেকের কাছে পরিহাসের বিষয় হলো?               প্রশ্ন-৩১.

উত্তর: বিলাসীর আত্মহত্যার ব্যাপারটা অনেকের কাছে পরিহাসের বিষয় হলো।      

■ শব্দার্থ ও টীকা   

হিন্দু পুরাণ অনুসারে বিদ্যা ও কলার দেবী কে?                প্রশ্ন-৩২.

উত্তর: হিন্দু পুরাণ অনুসারে বিদ্যা ও কলার দেবী সরস্বতী।          

বীণাপাণি কিসের দেবী?      প্রশ্ন-৩৩.

উত্তর: বীণাপাণি বিদ্যার দেবী।         

‘কামস্কাট্‌কা’ কোথায় অবস্থিত?        প্রশ্ন-৩৪.

উত্তর: কামস্কাটকা রাশিয়ার অন্তর্গত সাইবেরিয়ার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত । 

‘নিকা’ শব্দটির অর্থ কী?  প্রশ্ন-৩৫.

উত্তর: ‘নিকা’ শব্দটির অর্থ— বিয়ে।   

বিষকণ্ঠ মহেশ্বরের অন্য নাম কী?     প্রশ্ন-৩৬.

উত্তর: বিষকণ্ঠ মহেশ্বরের অন্য নাম মৃত্যুঞ্জয় ।              

পিণ্ডি কী?               প্রশ্ন-৩৭,

উত্তর: পিণ্ডি এক ধরনের ঢেলা, যা মৃতের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়।       

শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে মৃতের উদ্দেশে দেওয়া চালের গোলাকার ঢেলার নাম কী?    প্রশ্ন-৩৮.

উত্তর: শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে মৃতের উদ্দেশে দেওয়া চালের গোলাকার ঢেলার নাম পিণ্ডি ।  

পাঠ-পরিচিতি      

‘বিলাসী’ গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়?        প্রশ্ন-৩৯.

উত্তর: ‘বিলাসী’ গল্পটি ‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় ।    

‘বিলাসী’ গল্পের বর্ণনাকারী কে?         প্রশ্ন-৪০.

উত্তর: ‘বিলাসী’ গল্পের বর্ণনাকারী ন্যাড়া ।     

‘বিলাসী’ গল্পের ন্যাড়া কে? প্রশ্ন-৪১.

উত্তর: ‘বিলাসী’ গল্পের ন্যাড়া গল্পকথক।         

‘বিলাসী’ গল্পের কোন চরিত্রের মধ্যে শরৎচন্দ্রের ছেলেবেলার ছায়াপাত ঘটেছে?        প্রশ্ন-৪২.

উত্তর: ‘বিলাসী’ গল্পের ন্যাড়া চরিত্রের মধ্যে শরৎচন্দ্রের ছেলেবেলার ছায়াপাত ঘটেছে।          

প্রশ্ন-১. ‘মা সরস্বতী খুশি হইয়া বর দিবেন কি, তাহাদের যন্ত্রণা দেখিয়া কোথায় যে তিনি লুকাইবেন, ভাবিয়া পান না’– উক্তিটি ব্যাখ্যা করো ।               

উত্তর:     তৎকালীন বাস্তবতায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যার্জনের ক্লেশ প্রসঙ্গে প্রশ্নোক্ত উক্তিটির অবতারণা করা হয়েছে।

                ন্যাড়া, মৃত্যুঞ্জয়সহ শিক্ষার্থীদের তখন বহু কষ্টে দুই ক্রোশ পথ অতিক্রম করে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হতো। প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবে এ পথ যেন আরও দুর্গম হয়ে উঠত। এত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে শেষ পর্যন্ত গ্রামের ছেলেদের পরীক্ষার ফল আশানুরূপ হতো না। তৎকালীন বাস্তবতায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালাভের এই বিড়ম্বনাকে বোঝাতেই লেখক প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।

প্রশ্ন-২. ‘গ্রামের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয়ের ছিল এমনি সুনাম’ –ব্যাখ্যা করো ।            

উত্তর:     প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে গ্রামের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয়ের নেতিবাচক ভাবমূর্তিকে ব্যঙ্গার্থে ‘সুনাম’ বলা হয়েছে । মৃত্যুঞ্জয় সম্পর্কে উদ্ধৃত উক্তিতে ‘সুনাম’ শব্দটি গল্পকথক ন্যাড়া ‘দুর্নাম’ অর্থে ব্যবহার করেছে।

                আত্মীয়-পরিজনহীন মৃত্যুঞ্জয়ের এক জ্ঞাতি খুড়া ছিল । সে তার নামে দুর্নাম রটনা করে বেড়াত। দুর্নাম প্রচারের কল্যাণে গ্রামের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয়ের এমন একটা নেতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছিল যে, গ্রামবাসী তার সঙ্গে প্রকাশ্যে মেলামেশা দূরে থাক, তার সঙ্গে সংশ্রব থাকার কথাটা পর্যন্ত স্বীকার করত না। নিজ গ্রামে মৃত্যুঞ্জয়ের এমন নেতিবাচক ভাবমূর্তি প্রসঙ্গেই গল্পটিতে উদ্ধৃত উক্তিটির অবতারণা করা হয়েছে।

প্রশ্ন-৩. ‘ঠিক যেন ফুলদানিতে জল দিয়া ভিজাইয়া রাখা বাসি ফুলের ‘মতো’— কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?             

উত্তর:     উদ্ধৃত উক্তিটির মাধ্যমে অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়ের সেবারত বিলাসীর অবস্থা বোঝানো হয়েছে।

                ‘বিলাসী’ গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় অসুস্থ হয়ে পড়লে বিলাসী রাতের পর রাত জেগে তার সেবা-শুশ্রূষা করে। এই নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রমে বিলাসী শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। তার সারা শরীরে একটা অপরিসীম ক্লান্তি ও নিরবচ্ছিন্ন রাত জাগার ছাপ পড়ে যায়। তার এ সজীবতাহীন ও অবসন্ন শরীরকে গল্পের কথক তুলে ধরেছে উক্তিটির মাধ্যমে।

প্রশ্ন-৪. ‘ঘন জঙ্গলের পথ, একটু দেখে পা ফেলে যেয়ো – ব্যাখ্যা করো ।       

উত্তর:     আলোচ্য উক্তিটিতে ন্যাড়া জঙ্গলের পথ ধরে বাড়ি পৌঁছতে কোনো সমস্যায় পড়তে পারে বলে বিলাসীর আশঙ্কা প্রকাশিত হয়েছে। এক সন্ধ্যায় গল্পকথক ন্যাড়া লুকিয়ে অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়কে দেখতে যায়। ততদিনে শয্যাশায়ী মৃত্যুঞ্জয়ের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কথাবার্তা শেষে বাড়ি ফেরার সময় বিলাসী ন্যাড়াকে ভাঙা প্রাচীর পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়কে একা রেখে ন্যাড়াকে এর বেশি এগিয়ে দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই দীর্ঘ জঙ্গল পথে সাপ থাকতে পারে এই আশঙ্কায় ন্যাড়াকে সাবধান থাকার জন্য সে অনুরোধ করে।

প্রশ্ন-৫. ‘ভয় পাইবার আর সময় পাইলাম না’- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো ।          

উত্তর:     গল্পের কথক ন্যাড়ার রাতের অন্ধকারের সহজাত ভয় বা ভীতিকর চিন্তাভাবনার উদ্রেক না ঘটার কারণ বিলাসীকে নিয়ে ভাবনা ।

                অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়কে দেখে ফেরার পথে বিলাসী গল্পের কথক ন্যাড়াকে এগিয়ে দিতে আসে। বিশাল আম বাগানের ঘন অন্ধকারে সাপের ভয় উপেক্ষা করে বিলাসী ন্যাড়াকে এগিয়ে দেয়। বিলাসীর এরকম সাহসিকতাপূর্ণ পরোপকারী মনোভাব ন্যাড়াকে এমনভাবে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে যে, পরবর্তী পথের সাপ বা অন্য কিছুর ভয় ন্যাড়ার চিন্তাতে ক্ষণিকের জন্যও আসে না।

প্রশ্ন-৬. “এ যে মিত্তির বংশের নাম ডুবিয়া যায়”- উক্তিটি কেন করা হয়েছিল?      

উত্তর:     কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের নিষ্ঠুর জাত-কুল-ভেদের কারণে উক্তিটি করা হয়েছে।

                মৃতপ্রায় মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা-শুশ্রূষায় এগিয়ে আসে নিচু বংশের’ সাপুড়েকন্যা বিলাসী। অসুস্থতার এক পর্যায়ে মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীর রান্না করা ভাত খায়।

                কিন্তু আচারসর্বস্ব কুসংস্কারাশ্রয়ী তৎকালীন হিন্দু সমাজে এটি ছিল অনেক বড় ধরনের পাপ, যেটিকে অন্নপাপ বলা হতো। মৃত্যুঞ্জয় অন্নপাপ করায় বংশের মান ডুবেছে— মৃত্যুঞ্জয়ের অমঙ্গলপ্রত্যাশী লোভী খুড়া এই ব্যাপারটিই ফলাও করে বলছিল। মৃত্যুঞ্জয়কে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এবং সে জন্যই আলোচ্য উক্তিটি সে করেছে।

প্রশ্ন-৭. ‘আমরা বলি যাহারই গায়ে জোর নাই, তাহারই গায়ে হাত তুলিতে পারা যায়’– উক্তিটি ব্যাখ্যা করো । 

উত্তর:     তৎকালীন নিষ্ঠুর হিন্দু সমাজব্যবস্থায় দুর্বলের উপর যে অত্যাচার করা হতো, সে প্রসঙ্গেই উক্তিটি উত্থাপিত হয়েছে গল্পকথক ন্যাড়ার মাধ্যমে।

                ংল্যান্ডসহ বিভিন্ন পাশ্চাত্য দেশে শারীরিকভাবে দুর্বল বলে নারীদের গায়ে হাত না তোলার একটি রীতি প্রচলিত ছিল। কিন্তু তৎকালীন আচারসর্বস্ব হিন্দু সমাজ ছিল দুর্বলদের জন্য আরও অনেক নিষ্ঠুর। তাই তারা দুর্বল বলে নারীদের ওপর হাত তুলতে কুণ্ঠিত নয় বরং সিদ্ধহস্ত। .‘বিলাসী’ গল্পে সমাজের নিষ্ঠুর লোকদের প্রহারের শিকার বিলাসীর ওপর এই শারীরিক নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে ন্যাড়া উক্তিটি করেছে।

প্রশ্ন-৮. বিলাসীকে কেন টেনে-হিঁচড়ে গ্রামের বাইরে নেওয়া হলো? ব্যাখ্যা করো।     

উত্তর:     নিষ্ঠুর সামাজিক লোকাচারের অন্যতম সৃষ্টি অন্নপাপ সংঘটনের কারণেই বিলাসীকে টেনে-হিঁচড়ে গ্রামের বাইরে নেওয়া হলো।

                মৃতপ্রায় মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা-শুশ্রূষায় এগিয়ে আসা বিলাসীর রান্না করা ভাত খায় মৃত্যুঞ্জয়। কিন্তু তৎকালীন কুসংস্কারাশ্রয়ী সমাজের চোখে নিচু শ্রেণির কারো হাতে ভাত খাওয়া ছিল ঘোর পাপ, সেটি অন্নপাপ। এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত নেই, এটি ছিল সেই সমাজের ভাবনা। পাপের ছোঁয়া যেন তাদের গায়ে না লাগে, সেই জন্যই নিষ্ঠুর সমাজের নিষ্ঠুর মানুষগুলো প্রায়শ্চিত্তের অভিপ্রায়ে দুর্বল বিলাসীকে টেনে-হিঁচড়ে গ্রামের বাইরে নিয়ে যায় ।

প্রশ্ন-৯. সাপ ধরার মন্ত্রের সত্য-মিথ্যার মীমাংসা হলো কীভাবে?  

উত্তর:     সাপের কাপড়ে মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুর মাধ্যমেই সাপ ধরার মন্ত্রের সত্য-মিথ্যার মীমাংসা হয়ে গেল ।

                সাপ ধরার একটি মন্ত্র রয়েছে যেটিকে বিষহরির আজ্ঞা বলা হয়। সেই মন্ত্র বলে সাপকে পোষ মানানো যায়, সাপকে যা বলা যায় সাপ তাই করতে বাধ্য হয়। কিন্তু এটিও ছিল নিছক অন্ধ-বিশ্বাস। গোয়ালার বাড়িতে সাপ ধরতে গিয়ে সাপের কামড়ে মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়েই বিষহরির আজ্ঞা যে নেহায়েত একটি কুসংস্কার, সেটিই প্রমাণিত হয়।

প্রশ্ন-১০. ন্যাড়াকে কোন পাপের দণ্ড দিতে হয়েছিল? ব্যাখ্যা করো।             

উত্তর:     সাপ ধরার ব্যাপারটি যে ঝুঁকির ব্যাপার, এটি মাথায় না রাখার প্রায়শ্চিত্ত ন্যাড়াকে করতে হয়েছিল।

                সাপ ধরা ব্যাপারটিকে ন্যাড়া আর মৃত্যুঞ্জয় আনন্দের একটি কাজ হিসেবে নিয়েছিল। এটি যে ভয়ের সেই ভাবনা ন্যাড়ার মনে কখনোই আসেনি এবং এটি আনন্দের ব্যাপার বলে সাপ ধরতে যাওয়ায় তারা কখনোই ভয় পায়নি। এর প্রায়শ্চিত্ত ন্যাড়াকে করতে হয়েছে বন্ধুতুল্য মৃত্যুঞ্জয়কে হারানোর মধ্য দিয়ে

প্রশ্ন-১১. বিলাসী যে জাত সাপুড়ের মেয়ে তা কেমন করে প্রমাণিত হলো?   

উত্তর:     গোয়ালার বাড়িতে কয়েক টুকরো কাগজ দেখে বিলাসী যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল তা ফলে গিয়েই প্রমাণিত হয় যে, বিলাসী জাত সাপুড়ের মেয়ে।

                গোয়ালার বাড়িতে মৃত্যুঞ্জয় সাপ ধরতে যায়, সাথে ছিল বিলাসী। ঘরের মেঝে খুঁড়ে যে গর্ত পাওয়া গেল তা থেকে পাওয়া কাগজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিলাসী রায় দেয় সাপ একজোড়া তো আছেই বেশিও থাকতে পারে। পরে বিলাসীর কথা সত্যে পরিণত হয়। একটি কাগজ দেখে নির্ভুল ধারণা দিতে পারার কারণেই প্রমাণিত হলো যে, বিলাসী জাত সাপুড়ের মেয়ে ।

প্রশ্ন-১২. মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা-মার দেওয়া নাম মিথ্যা প্রতিপন্ন হয় কীভাবে?    

উত্তর:     মৃত্যুঞ্জয়ের অকাল মৃত্যুর মাধ্যমেই তার বাবা-মায়ের দেয়া নাম মিথ্যা প্রতিপন্ন হলো।-

                ‘মৃত্যুঞ্জয়’ নামের অর্থ— যিনি মৃত্যুকে জয় করেন। মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা মা পুত্রের নাম মৃত্যুঞ্জয় রাখলেও সে মৃত্যুকে জয় করতে পারেনি। বিষধর

                সাপের কামড়ে মৃত্যুর সাথে লড়ে ব্যর্থ হয়ে মৃত্যুঞ্জয় অচিরেই ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে । আর এর সাথেই তার বাপ মায়ের দেওয়া মৃত্যুঞ্জয় নামের সার্থকতা মিথ্যা প্রতিপন্ন হয় ।

প্রশ্ন-১৩. বিলাসীর আত্মহত্যার বিষয়টি অনেকের কাছে পরিহাসের বিষয় হলো কেন?            

উত্তর:     নিষ্ঠুর সমাজে নিচু শ্রেণির মানুষের জীবন যেমন পরিহাসের, মৃত্যুও সেই সমাজে করুণার উদ্রেক না ঘটিয়ে পরিহাসের উদ্রেক ঘটায়। মৃত্যুশয্যাশায়ী মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীর রাঁধা ভাত খায় বলে সমাজে অন্নপাপ করেছে বলে তাদের সমাজচ্যুত করা হয়। সমাজচ্যুত মৃত্যুঞ্জয় সাপ ধরতে গিয়ে সাপের কামড়ে মারা যায়। ভালোবাসার মানুষের অকাল প্রয়াণে বিলাসীও আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কিন্তু নিচুকুলের মানুষের এই ভালোবাসার মূল্য সেই নিষ্ঠুর সমাজে ছিল না এবং তাদের কৃত পাপের ফলে তাদের এই পরিণতি অনিবার্য ছিল বলেই তারা মনে করে। একে তো নিচু জাতের, তার ওপর স্বামীর জন্য আত্মহত্যা- ফলে বিলাসীর এই আত্মত্যাগ সমাজে পরিহাসের বিষয় হয়েই রইল।

প্রশ্ন-১৪, ‘অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? 

উত্তর:     হিন্দু সমাজের নানান আচারবিধি যে নানা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে টিকে আছে মাত্র, তা বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত উক্তিটির অবতারণা করা হয়েছে।

                প্রাচীনকাল থেকে হিন্দু সমাজের আচার-নীতিগুলো মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করত । এসব রীতিনীতির কিছু সমাজের বিকাশের জন্য বাধা তৈরি করে । নানা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এসব রীতি আজ গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে কিন্তু মৃত্যুঞ্জয়ের ‘খুড়ার মতো রক্ষণশীলদের মতে, এতকিছুর পরেও হিন্দু সমাজের রীতিগুলোর কিছু তো টিকে আছে।

                কিন্তু গল্পকথকের মতে, এমন টিকে থাকা সমর্থনযোগ্য নয়। অতিকায় হস্তী পৃথিবী থেকে বহু আগে বিদায় নিলেও তেলাপোকা আজও টিকে আছে। এমনভাবে টিকে থাকার মাঝে গৌরবের কিছু নেই – সাপের কামড়ে মৃত্যুর সাথে লড়ে ব্যর্থ হয়ে মৃত্যুঞ্জয় অচিরেই ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে। আর এর সাথেই তার বাপ মায়ের দেওয়া মৃত্যুঞ্জয় নামের সার্থকতা মিথ্যা প্রতিপন্ন হয় ।