You dont have javascript enabled! Please enable it!

HSC BANGLA 1ST – BILASHI – CQ

১. উজ্জয়িনীর রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজসভার প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ বরাহপুত্র মিহিরের স্ত্রী খনা। একদিন পিতা বরাহ এবং পুত্র মিহির আকাশের তারা গণনা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে খনা এ সমস্যার সমাধান দেন। রাজা বিক্রমাদিত্য তাঁর গুণে মুগ্ধ হন। গণনা করে খনার দেওয়া পূর্বাভাসে রাজ্যের কৃষকরা উপকৃত হতেন বলে রাজা বিক্রমাদিত্য খনাকে দশম রত্ন হিসেবে আখ্যা দেন। কিন্তু খনার এই খ্যাতি ও সম্মান অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর জীবনে বিড়ম্বনা নিয়ে আসে। রাজসভায় প্রতিপত্তি হারানোর ভয়ে ও নারীর জ্ঞানের কাছে নিচু হওয়ার লজ্জায় প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে বরাহের আদেশে মিহির খনার জিহ্বা কেটে দেন। এর কিছুকাল পরে খনার মৃত্যু হয়।
ক. খুড়া কোন বংশের?
খ. ‘ইহা আর একটি শক্তি’ – বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. বিলাসী চরিত্রের কোন দিকটি খনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ তা বর্ণনা করো।
ঘ. ‘মৃত্যুঞ্জয় ও মিহির পরস্পর বিপরীত চরিত্রের মানুষ।’- মন্তব্যটি যাচাই করো।

 ১ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. খুড়া মিত্তির বংশের।
খ. ‘ইহা আর একটি শক্তি’ – কথাটি দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার প্রকৃত ভালোবাসার প্রসঙ্গকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
স্বামী-স্ত্রী বহুবছর একত্রে বসবাস করলেও সত্যিকারের ভালোবাসার সন্ধান খুব কম যুগলই পায়। আলোচ্য গল্পে প্রসঙ্গক্রমে গল্পকথক তাঁর এক আত্মীয়ার উদাহরণ টেনেছেন। সেই নারী স্বামীর সাথে পঁচিশ বছর ঘর করেছে। অথচ স্বামীর মৃতদেহ আগলে পাঁচ মিনিটও একাকী থাকার সাহস তার নেই। এর কারণ প্রকৃত ভালোবাসার সম্পর্কের অনুপস্থিতি। স্বামীর মৃতদেহের কাছে থাকার জন্য প্রয়োজন ছিল আর একটু শক্তি, অর্থাৎ খাঁটি ভালোবাসা। প্রশ্নোক্ত উদ্ভিটির মধ্য দিয়ে এ বিষয়টিই ইঙ্গিতময় হয়ে উঠেছে।
গ. বিলাসী চরিত্রের করুণ পরিণতির দিকটি উদ্দীপকের খনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘বিলাসী’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র বিলাসী। উচ্চবর্ণের মৃত্যুঞ্জয় তাকে ভালোবেসে বিয়ে করে। কিন্তু রক্ষণশীল সমাজ তাদের এই সম্পর্ককে মেনে নেয়নি। ফলে সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে মৃত্যুঞ্জয় নিজের জাত বিসর্জন দিয়ে সাপুড়ে হয়ে ওঠে। একদিন গোখরো সাপ ধরতে গিয়ে সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে বিলাসীও বিষপানে আত্মহত্যা করে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত খনা জ্যোতির্বিদ্যায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তাঁর দেওয়া পূর্বাভাসে কৃষকরা উপকৃত হলে রাজদরবারে তাঁর মর্যাদা বেড়ে যায়। তাঁর এই সুনাম অর্জনের বিষয়টিকে শ্বশুর বরাহ ভালোভাবে নেননি। শুধু তাই নয়, রাজসভায় প্রতিপত্তি এবং নারীর কাছে সম্মান হারানোর ভয়ে তাঁর শ্বশুর বরাহ নিজের ছেলেকে খনার জিহ্বা কেটে নেওয়ার আদেশ দেন। পিতার আদেশ মতো পুত্র মিহির নিজ স্ত্রী খনার জিভ কেটে নিলে কিছুদিন পর খনার মৃত্যু হয়। একইভাবে, ‘বিলাসী’ গল্পের বিলাসীও রক্ষণশীল সমাজের প্রতিহিংসার শিকার। এ কারণেই তার স্বামী মৃত্যুঞ্জয়কে সর্বস্ব হারিয়ে সাপুড়ে হতে হয় এবং পরিণতিতে সর্প দংশনে মৃত্যু হয় তার। আর পতিঅন্ত্য প্রাণ বিলাসীও স্বামীর মৃত্যু শোক সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে। অর্থাৎ প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও আলোচ্য গল্পের বিলাসী এবং উদ্দীপকের খনা উভয়েই করুণ পরিণতির শিকার। এ দিক থেকে খনার সাথে বিলাসীর সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
ঘ. মৃত্যুঞ্জয় স্ত্রীকে গভীরভাবে ভালোবাসলেও উদ্দীপকের মিহির স্ত্রীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘বিলাসী’ গল্পটি বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের প্রণয় এবং তাদের করুণ পরিণতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। মৃত্যুপথযাত্রী মৃত্যুঞ্জয়কে নিম্নবর্ণের বিলাসী সেবা-শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তুললে ভালোবেসে তাকে বিয়ে করে সে। বিলাসীর হাতে মৃত্যুঞ্জয় ভাত খাওয়ার অজুখতে গ্রামবাসীর প্রতিহিংসার শিকার হয় তারা। অবশেষে মৃত্যুঞ্জয় জাত বিসর্জন দিয়ে বিলাসীর সাথে ঘর বাঁধে এবং পুরোদস্তুর সাপুড়ে হয়ে ওঠে।
উদ্দীপকের মিহিরের স্ত্রী খনা ছিলেন অত্যন্ত গুণী। জ্যোতির্বিদ শ্বশুর ও স্বামী আকাশের তারা গণনা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে বন্য নারীর কাছে প্রতিপত্তি হারানোর বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। পরিশেষে তাঁর নির্দেশে পুত্র মিহির খনার জিহ্বা কেটে নিলে ঘনায় মৃত্যু হয়। স্ত্রীর প্রতি মিহিরের এমন ঘৃণ্য আচরণের বিপরীতে আলোচ্য গল্পের মৃত্যুঞ্জয় স্ত্রী বিলাসীর প্রতি অনুরত্ব ও দায়িত্বশীল ছিল। সাপুড়ে
মৃত্যুঞ্জয় অকৃত্রিমভাবে বিলাসীকে ভালোবেসেছে। নিজে উচ্চবর্ণের হলেও সাপুড়ের মেয়ে বিলাসীকে বিয়ে করতে দ্বিধা করেনি সে। তাদের ভালোবাসা রক্ষণশীল ও অনুদার গ্রামীণ সমাজ মেনে নিতে না পারায় সে জাত বিসর্জন দিয়েছে অবলীলায়। বিলাসীর সাথে। বেদেপল্লিতে গিয়ে ঘর বেঁধে সাপুড়ে হয়েছে। নিজের বিশাল সহায়-সম্পত্তি হারানোর ভয় তাকে এতটুকুও আচ্ছন্ন করেনি। পক্ষান্তরে, উদ্দীপকের মিহির স্ত্রীর খ্যাতিতে খুশি না হয়ে বরং প্রতিহিংসাপরায়ণ পিতার কথায় তার জিহ্বা কেটে নেওয়ার মতো গর্হিত কাজ করেন। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা থাকলে তিনি এমনটি অন্যায় করতে পারতেন না। সেদিক বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।

২. ভালোবাসা যে কোন বাধা মানে না, এটা প্রমাণ করেই ডাক্তারের ছেলে সুবোধ বিয়ে করল রিক্সাওয়ালার মেয়ে নন্দিতাকে। সুবোধের বাবা অগ্নিশর্মা হয়ে সুবোধকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। সুবোধের বাবা ভেবেছেন হয়তো ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসবে। কিন্তু সুবোধের ভালোবাসা মহের চটকদার মোড়কে মোড়ানো ছিল না। নন্দিতা ও তার পরিবারকে নিয়ে গ্রামছাড়া সুবোধ। পা বাড়ালো অজানা ভবিষ্যতে।
ক. মৃত্যুঞ্জয়ের বাগানটা কত বিঘার ছিল?
খ. ‘ভয় পাইবার সময় পাইলাম না’- উক্তিটির প্রেক্ষাপট বর্ণনা কর।
গ. ‘বিলাসী’ গল্পের সমাজবাস্তবতা উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সুবোধ ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয় প্রতিনিধিত্ব করেছে- এ মন্তব্যের যথার্থতা বিচার কর।

 ২ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. মৃত্যুঞ্জয়ের বাগানটা কুড়ি-পঁচিশ ছিল।
খ. বাল্যবন্ধু মৃত্যুঞ্জয়কে দেখা শেষে বাড়ি ফেরার পথেই ‘বিলাসী’ গল্পের কথক ন্যাড়া উদ্ধত উক্তিটি করেছেন।
সাপুড়ে কন্যা বিলাসী একদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে ন্যাড়া মৃত্যুঞ্জয়কে দেখতে পোরোবাড়িতে গেল। গভীর বনের মধ্যে দিয়ে অন্ধকার রাতে ফেরার পথে কিছুটা হলেও ভয় পাচ্ছিল। কিন্তু বিলাসীর সাহসের কথা মনে পড়তেই তার ভয় দূর হয়ে গেল। কেবল ভারতে থাকল, একটা মৃত্যুকল্প রোগী নিয়ে এমন স্থানে একা একটা মেয়ের রাত্রি পাড়ি দেওয়া কত কঠিন কাজ। মৃত্যুঞ্জয় তো যে কোন মুহূর্তে মারা যেতে পারত। তখন নিশ্চয় মেয়েটিকে স্বামীর মৃতদেহের পাশে বসে একাকী রাত কাটাতে হতো। এ পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাড়া বিলাসীর সাহসের উৎস হিসেবে আবিষ্কার করল স্বামী মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি তার সীমাহীন ভালোবাসা। এ সত্য আবিষ্কারের ন্যাড়ার মন এমনই আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল যে শ্বাপদসংকুল পথ পাড়ি দিতে গিয়ে সে ভয় পাওয়ার সময়ই পায় নি।
গ. ‘বিলাসী’ গল্পের সমাজ বাস্তবতা উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে। উনিশ শতকে বাংলাদেশ বিশেষ হিন্দু সমাজের জাত-পাত শ্রেণি বর্ণ-বৈষম্য ছিল অমোঘ নিয়তির মতোই স্বাভাবিক ঘটনা। জাত্যভিমান অনেক ক্ষেত্রে মানবিক বোধ ও শাশ্বত সুন্দরকে ধ্বংস করেছে। সামাজিকভাবে জাত্যভিমান চাপিয়ে দেওয়া অনেক সুকুমার বৃত্তি বা মানবিক চাওয়া-পাওয়া অকালে ঝরে গেছে। ‘বিলাসী’ গল্পে যে সমাজ জীবন চিত্রিত হয়েছে তার মধ্যে জাতিগত বিভেদ সংকীর্ণতা এত নির্মমভাবে উদ্ভাসিত অঙ্কিত হতে চায়।
উদ্দীপকের সুবোধ ভালোবাসার টানে ডাক্তারের ছেলে হয়েছে রিক্সাওয়ালার মেয়ে নন্দিতা কে বিয়ে করে। সুবোধের বাবা অগ্নিশর্মা হয়ে সুবোধকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। কারণ সুবোধের সমাজ জাতিভেদ প্রথায় আকীর্ণ। ‘বিলাসী’গল্পের সমাজ ব্যবস্থা ও তাই। কারণ তৎকালীন হিন্দুসমাজ মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীর প্রেম ও বিয়ের বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। কায়স্থের ছেলে মৃত্যুঞ্জয় সাপুড়ে কন্যা বিলাসীকে বিয়ে করার অপরাধে মৃত্যুঞ্জয়কে সমাজচ্যুত হতে হয়। বিলাসী কে নিয়ে মৃত্যুঞ্জয় পরবর্তীকালে বেঁধে জীবন গ্রহণ করে যাযাবর হয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়।

৩. মুসলমান বন্ধুর বাড়িতে ভাত খাওয়ায় অপরাধ করে ভারত। সে ব্যাপারে বিধান নেওয়ার জন্য জমিদার শশাঙ্ক ন্যায়রত্ন রামনিধি চট্টোপাধ্যায়কে নির্বাচন করেন। ন্যায়রত্ন সমাজ পতিদের বৈঠকে ভারতের সমস্যার সাথে সম্পর্কহীন কিছু কাহিনী বলে চোখ বন্ধ করেন। কিছুক্ষন পর চোখ খুলে বলেন, ভারতের সর্বনিম্ন শাস্তি সমাজচ্যুতি। তার সাথে যারা বসবাস করে তারাও সমাজচ্যুত।
ক. কোন যুক্তিকে কলি যুগ বলা হয়?
খ. ‘তাহার বয়স আঠারো কি আঠাশ ঠাহর করিতে পারিলাম না’ কেন? বুঝিয়ে বল।
গ. অনুচ্ছেদে লঘু পাপের মে গুরু শাস্তি তা ‘বিলাসী’ গল্পের কোন ঘটনাকে মনে করিয়ে দেয়? তা তুলে ধর।
ঘ. অনুচ্ছেদের এবং ‘বিলাসী’ গল্পের সমাজপতিদের ধর্মরক্ষার কেঠার বিধান মানব ধর্মের পরিপন্থী। ব্যাখ্যা কর।

 ৩ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. হিন্দু পুরাণে বর্ণিত চার যুগের শেষ যুগকে কলি যুগ বলা হয়।
খ. অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়ের সেবায় বিলাসী নিজেকে বিসর্জন দিয়েছে। রাতদিন সেবা করে করে বিলাসীর শরীর একেবারে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। এ কারণেই ন্যাড়া তার বয়স ঠাহর করতে পারে নি। মৃত্যুঞ্জয় একবার কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে আত্মীয়স্বজন কিংবা পাড়া-প্রতিবেশীদের কেউ তার সেবায় এগিয়ে আসেনি। সাপুড়ে কন্যা বিদেশি মৃত্যুর কবল থেকে সে যাত্রায় মৃত্যুঞ্জয়কে রক্ষা করেছে। একদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে ন্যাড়া মৃত্যুঞ্জয়কে দেখতেই পোরোবাড়িতে গেল। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখতে পায় বিদেশি মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা করতে করতে ফুলদানির ফুলের মধু শুকিয়ে গেছে। তার প্রকৃত বয়স আঠারো কিংবা আঠাশ কোনটাই বুঝার উপায় ছিল না। তাই মেয়েরা আলোচ্য মন্তব্যটি করেছিল।
গ. অনুচ্ছেদে লঘু পাপের যে গুরু শাস্তি তা ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীকে সমাজচ্যুত করার ধারাটিকে মনে করিয়ে দেয়। ‘বিলাসী’গল্পের মৃত্যুঞ্জয় ছিল কায়স্থের সন্তান। কিন্তু সে সাপুড়ের মেয়ে বিলাসীকে বিয়ে করেছে। কিন্তু সে সাপুড়ের মেয়ে বিলাসীকে বিয়ে করেছে এবং তার হাতে ভাত পর্যন্ত খেয়েছে। তৎকালীন হিন্দু সমাজে কোন যুগের মানুষ নিচু বংশের মেয়েকে বিয়ে এবং তার হাতে ভাত খেলে পাপ হয় মনে করা হতো। মৃত্যুঞ্জয় সাপুড়ে কন্যা বিলাসীকে বিয়ে করে তার হাতে ভাত খেয়েছে বলে তাকে অন্নপাপের জন্য দায়ী করে সমাজচ্যুত করা হয়েছে।
উদ্দীপকের ভারত মুসলমান বাড়িতে ভাত খেয়ে অপরাধ করেছে। ন্যায়রত্ন সমাজপতিদের বৈঠকে ভারতকে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতে সমাজচ্যুত হওয়ার বিষয়টি বিলাসী গল্পে মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীকে সমাজচ্যুত করার বিষয়টিকে মনে করিয়ে দেয়। কারণ উভয়ই অন্নপাপের জন্য দায়ী। উদ্দীপকের ভারত যেমন মুসলমান ঘরে খাবার খেয়ে অন্নপাপ করেছে তেমনি মৃত্যুঞ্জয় সাপুড়ের মেয়ে বিলাসীর হাতে খাবার খেয়ে অন্নপাপ করেছিল। তাইতো উভয়কেই সমাজচ্যুত করা হয়। তাই আমরা বলতে পারি, উদ্দীপকের ভারতে সমাজচ্যুত হওয়ার বিষয়টি ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীর সমাজচ্যুত হওয়ার বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে।
ঘ. অনুচ্ছেদের এবং ‘বিলাসী’ গল্পের সমাজ পতিদের ধর্মরক্ষার কেঠার বিধান মানবতার বিচারে মানব ধর্মের পরিপন্থী।
তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা ছিল যেমন রক্ষণশীল তেমনি কুসংস্কারচ্ছন্ন। প্রেমের টানে সাপুড়ের মেয়ে বিলাসী মুমূর্ষু মৃত্যুঞ্জয়কে সেবা-যত্ন করে মৃত্যুর ধারা প্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনে এবং উভয় উভয়ের হৃদয় জয় করে পরিণত সূত্রে আবদ্ধ হয়। ফলে তারা সমাজ থেকে হয় বিতাড়িত। তাদের এই বিয়ে এবং ভালোবাসা তৎকালীন কুসংস্কারছন্ন গোঁড়া হিন্দু সমাজ মেনে নিতে পারেনি।
উদ্দীপকের ভারত মুসলমান বন্ধুর বিয়ে বাড়িতে খেয়ে অপরাধ করেছিল। তাইতো ন্যায়রত্ন সমাজ পতিদের বৈঠকে ভারতের সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কহীন কিছু কাহিনী বলে চোখ বন্ধ করেন। চোখ খুলে তিনি ভারতকে সমাজচ্যুত শাস্তি প্রদান করেন, যা চরম মানবতাবিরোধী। বিলাসী গল্পের মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীর ভাগ্যেও একই ঘটনা ঘটেছিল। মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীর হাতে ভাত খাওয়ার অপরাধে সমাজচ্যুত হয় এবং বিলাসীকে সহ্য করতে হয় অমানবিক নির্যাতন, যেকোনো মানব ধর্মের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।
তৎকালীন গোঁড়া হিন্দু সমাজের কাছে মানুষের জীবনের চেয়ে ধর্মের মিথ্যার বেসাতি বড় ছিল। তারা ধর্ম রক্ষার নামে মানুষের উপর যে অত্যাচার নির্যাতন চালাত তা মানব ধর্মের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। হিন্দু ছেলে মুসলমান ঘরে ভাত খাওয়ার জন্য, কায়স্থের ছেলে সাপুড়ে মেয়ের হাতের ভাত খাওয়ার জন্য সমাজচ্যুত হয়। সমাজপতিরা ধর্মের দোহাই দিয়ে তাদেরকে সমাজচ্যুত করে যা মানবতাবিরোধী। মানব ধর্মের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তা হতে পারে না। কারণ পৃথিবীতে ধনী-গরীব, হিন্দু-মুসলমান, সাপুড়ে কায়স্থের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তাদের প্রধান পরিচয় তারা মানুষ। কিন্তু উদ্দীপক ও ‘বিলাসী’ গল্পের সমাজপতিরা ধর্মের নামে যা করেছেন তা সত্যিই মানব ধর্মের পরিপন্থী।

৪. কায়েস্থের ছেলে আদিত্য বিয়ে করে সাপুড়ে কন্যা রীনাকে। তাদের মধ্যে কোনো ভালোবাসার কমতি ছিল না, কিন্তু হিন্দু রক্ষণশীল সমাজ তাদের বিয়েকে মেনে নিতে পারে নি। তারা তাদের যন্ত্রনা দিয়ে গ্রাম ছাড়া করে। গ্রাম ছেড়ে দিয়ে আদিত্য সাপুড়ে পেশা গ্রহণ করে কিন্তু এই পেশাটা গ্রহন করাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এদিন কাল সাপের ছোবলে আদিত্য প্রাণ হারায়, ভালোবাসার টানে রীনা তাকে অনুসরন করে পরপারে চলে যায়।
ক. মৃত্যুঞ্জয়ের বাগানটা কত বিঘার ছিল?
খ. বাঙালির মন্ত্রতন্ত্রের সাথে সাপের বিষের তুলনা প্রসঙ্গে ন্যাড়ার উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের রীনার সঙ্গে ‘বিলাসী’ গল্পের বিলাসীর বৈসাদৃশ্য কোথায়?- নির্ণয় কর।
ঘ. ‘‘উদ্দীপকে বর্ণিত আদিত্য যেন ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জেেয় প্রতিচ্ছবি।”- মন্তব্যের যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।

 ৪ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. মৃত্যুঞ্জয়ের বাগানটা কুড়ি-পঁচিশ ছিল।
খ. ‘বিলাসী’ গল্পে ন্যাড়া বাঙালির মন্ত্র তন্ত্রের সাথে সাপের বিষের তুলনা করে প্রকৃত সত্যটি উপস্থাপন করেছেন এবং দেখিয়েছেন যে বাঙালির মন্ত্র সিদ্ধ মিথ্যা হতে পারে কিন্তু সাপের বিষ কখনোই অকার্যকর হয় না।
মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীকে বিয়ে করে সমাজ থেকে বিতাড়িত হয়। প্রচলিত প্রকারভেদ প্রথা সমাজে তার স্থান হয় না, কিন্তু বিলাসীর প্রতি সে ছিল একনিষ্ঠ। মৃত্যুঞ্জয় সাপুড়েবৃত্তিকে গ্রহণ করেছিল। মৃত্যুঞ্জয় সাপুড়ে হোক বিলাসি তা চাননি। সমাজ থেকে বিতাড়িত হয়ে এসে বিলাসীকে বিয়ে করে সাপুড়ে হয়। সাপ ধরা এবং পোষা তার পেশায় পরিণত হয়। অবশেষে এই সাপই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। গোয়ালার বাড়িতে সাপ ধরতে গিয়ে দংশিত হয় সে। ন্যাড়া এবং বিলাসীসহ সব সাপুড়ে তাদের সমস্ত বিদ্যার প্রয়োগ করেছে তাকে বাঁচানোর জন্য, কিন্তু তা কোনো কাজে আসেনি। তাই ন্যাড়া উল্লিখিত উক্তিটি করেছে।
গ. উদ্দীপকের রিনার সঙ্গে বিলাসী গল্পের বৈশিষ্ট্য হল বিলাসের মধ্যে যে সেবাপরায়ণতা ছিল তা উদ্দীপকের রিনার মধ্যে অনুপস্থিত।
প্রেমের জন্য ঘর সমাজ ছাড়তেও মানুষ দ্বিধাবোধ করে না। জাত-বর্ণ সকল কিছুর উর্ধ্বে গিয়ে তারা প্রেমকেই বেশি মূল্য দেয়। উদ্দীপকের রিনাও বিলাসী গল্পের মধ্যে আমরা এর চরিত্র দেখতে পাই। তবে বিলাসীর ঘটনায় আমরা তার সেবাপরায়ণতা চিত্র পাই। কিন্তু উদ্দীপকের রিনার ঘটনায় তা অনুপস্থিত।
উদ্দীপকের রিনার সঙ্গে বিলাসী সবদিক দিয়ে সাদৃশ্য থাকলেও সেবাপরায়ণতা দিক দিয়ে বৈসাদৃশ্য রয়েছে। রোগগ্রস্ত মৃত্যুপথযাত্রী মৃত্যুঞ্জয়কে তার বাড়িতে ন্যাড়া দেখতে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে সে দেখতে পায় মৃত্যুঞ্জয় ঘরের ভেতর তক্তপোশের উপর শুয়ে আছে। আর শিওরে সেবাপরায়ণ বিলাসী পাখা দিয়ে মৃত্যুঞ্জয়কে বাতাস করছে। মৃত্যুঞ্জয়কে তার স্বজাতির কোন লোক এমনকি তার জ্ঞাতি খুড়ো পর্যন্ত দেখতে আসে নি, বলতে গেলে খোঁজও নেয় নি। অথচ ভিন্ন জাতের অস্পৃশ্য সাপুড়ে কন্যা বিলাসী শুধু মানব ধর্মের কারণে দিন রাত ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে একাগ্রচিত্তে তাকে সেবাশুশ্রূষা করে প্রাণে বাঁচিয়ে তুলেছে।। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের রিনার সঙ্গে বিলাসীর বৈসাদৃশ্য রয়েছে সেবাপরায়ণতা।
ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকে বর্ণিত আদিত্য ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতিচ্ছবি।
প্রেমের কারণে মানুষ অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলে। জাত ধর্ম বিসর্জন দিয়ে মানুষ অন্যের ধর্ম গ্রহণ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। নিচু পেশা গ্রহণ করে অনেকেই সেরকম হয়ে যায়। উদ্দীপকের আদিত্য ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয় এর মধ্যে চরিত্র দেখতে পাই।
উদ্দীপকের আদিত্য চরিত্রটির সঙ্গে মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্রটির সাদৃশ্য রয়েছে। আদিত্যর মত মৃত্যুঞ্জয় ও কায়স্থের ছেলে, সে সাপুড়ে কন্যা বিলাসীকে বিয়ে করে সমাজের দাপটে গ্রামছাড়া হয়, গ্রাম ছাড়া হয়েছে সাপুড়ে বৃত্তি গ্রহণ করে। কিন্তু সেই সাপুড়ে জীবনই তার জীবন প্রদীপ নিঃশেষ করে দিয়েছিল।
বিলাসীকে নিয়ে মালোপাড়ায় ঘর বাঁধে মৃত্যুঞ্জয়। সাপুড়ের মেয়ে বিলাসীকে নিয়ে চলছিল তার সুখের সংসার। কিন্তু বিলাসী মৃত্যুঞ্জয়কে এ পেশা ত্যাগ করার জন্য বারবার অনুরোধ জানিয়েছে। কারণ সে জানে সাপ ধরার বিদ্যা এক ধরনের ধোঁকাবাজি।
মৃত্যুঞ্জয় একনিষ্ঠ প্রেমিক। প্রেমের সাধনায় সে বিলাসী হৃদয় জয় করেছে। এজন্য তাঁকে জাত কুলমান ত্যাগ করতে হয়েছে। আন্তজশ্রেণীর বিলাসীর হাতে ভাত খাওয়ার কারণে সমাজ তাকে অন্য পাপের দায়ে অভিযুক্ত করেছে। প্রেমে একনিষ্ঠ মৃত্যুঞ্জয় এ অভিযোগ নীরবে মেনে নিয়েছে। কিন্তু সামাজিক রীতিনীতির কাছে সে হার মানেনি। শেষ পর্যন্ত সে বিয়ে করে বিলাসীকে ঘরে তোলে। এর জন্য সে সমাজচ্যুত হয়েছে। মালোপাড়ায় ঘর তুলে বিলাসীকে নিয়ে সংসার বেধেঁছে। এভাবেই মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীর প্রেমের মূল্য দিয়ে প্রেমকে মহিমান্বিত করেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের আদিত্য ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতিচ্ছবি।

৫. সৌদামিনী মালো স্বামীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারসূত্রে ধানী জমি, বসতবাড়ি, পুকুরসহ কয়েক একর সম্পত্তির মালিক হয়। এই সম্পত্তির ওপর নজর পড়ে সৌদামিনীর জ্ঞাতি দেওর মনোরঞ্জনের। সৌদামিনীর সম্পত্তি দখলের জন্য সে নানা কৌশল অবলম্বন করে। একবার সৌদামিনী দুর্ভিক্ষের সময় ধান ক্ষেত্রের পাশে একটি মানবশিশু খুঁজে পায়। অসহায়, অসুস্থ শিশুটিকে সে তুলে এনে পরম যতেœ আপন সন্তানের মতো লালন পালন করে। মনোরঞ্জন সৌদামিনীকে সমাজচ্যুত করতে প্রচার করে যে, নমশূদ্রের ঘরে ব্রাহ্মণ সন্তান পালিত হচ্ছে। এ যে মহাপাপ, হিন্দু সমাজের জাত ধর্ম শেষ হয়ে গেল।
ক. ‘বিলাসী’ গল্পের বর্ণনাকারী কে?
খ. মৃত্যুঞ্জয়ের ‘জাতবিসর্জনের’ কারণ বর্ণনা কর।
গ. সৌদামিনী চরিত্রের কোন বৈশিষ্ট্যটি বিলাসীর চরিত্রের সঙ্গে মিলে যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘মনোরঞ্জন যেন বিলাসী গল্পের খুড়ারই প্রতিচ্ছবি’- বিষয়টি মূল্যায়ন কর।

 ৫ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ‘বিলাসী’ গল্পের বর্ণনাকারী ন্যাড়া।
খ. মৃত্যুঞ্জয়ের বিসর্জন এর কারণ হল বিলাসিতার অকৃত্রিম ভালোবাসা।
মৃত্যুঞ্জয় কায়স্থের ছেলে। তার বাপ মা বেঁচে নেই। গ্রামের আর দশটা ছেলের মত সেও লেখাপড়া করে। কিন্তু ছাত্র হিসেবে ভাল নয় বিধায় সে কখনো থার্ডক্লাস অতিক্রম করতে পারেনি। এদিকে মৃত্যুঞ্জয় অসুস্থ হয়ে পড়লে পাড়ার এক সাপুড়ের মেয়ে বিলাসী সেবা যত্ন দিয়ে তাকে সারিয়ে তোলে, ফলে বিলাসী সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু গ্রামের রক্ষণশীল হিন্দুসমাজ কিছুতেই সে সম্পর্ক মেনে নেয়নি। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় তার ভালোবাসার টানে সাপুড়ে কন্যা বিলাসীকে বিয়ে করার ভেতর দিয়ে তার ধর্ম বিসর্জন দেয়। মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীর ভালোবাসা যেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অপূর্ব সৃষ্টি।
গ. তৎকালীন হিন্দু সমাজের দিক থেকে বিচার করলে মৃত্যুঞ্জয়কে সমাজচ্যুতি করার অপচেষ্টার ক্ষেত্রেই সৌদামিনী মালো চরিত্রের সঙ্গে চরিত্রের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আবার জাতধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে কাউকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে উভয়ের মাঝে একটি বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে।
সেবাপরায়ণতা নারী চরিত্রের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। কিছু কিছু নারী স্বাভাবিক এই চরিত্রের চেয়ে অনেক বেশি সেবাধর্ম দেখিয়ে নিজেদের অনেক মহৎ স্থানে নিয়ে যায়। তাদের কাছে কোনো বাছ-বিচার নেই। সকল ধর্মের, সকল ধরনের মানুষকে তার আপন করে নিতে পারে। মানবচরিত্রের এই মহৎ গুণাবলী আমরা ‘বিলাসী’ গল্পের সৌদামিনীর মাঝে দেখতে পাই।
সৌদামিনী দুর্ভিক্ষের সময় ধানক্ষেতের পাশে কুড়িয়ে পাওয়া এক অসহায় অসুস্থ মানব শিশুকে তুলে এনে একান্ত আপন জনের মত লালন-পালন করে। ফলে সমাজ থেকে সে ধিক্কার পায়। অন্যদিকে সাপুড়ে কন্যা বিলাসী মৃত্যুঞ্জয়কে ভালোবেসে বিয়ে করে ও সমাজ কর্তৃক ধিক্কৃত হয়। এদিক থেকে সৌদামিনী ও বিলাসের মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান। কাজেই আমরা বলতে পারি যে, সৌদামিনী মালো চরিত্রের সাথে বিলাসী চরিত্রটি অপরূপ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মূলত সৌদামিনী চরিত্রের সেবাব্রতী বৈশিষ্ট্যটির চরিত্রের সঙ্গে মিলে যায়।
ঘ. উদ্দীপকের মনোরঞ্জন এবং ‘বিলাসী’ গল্পের খুরা একে অন্যের একাকার।
সামাজিক কিছু স্বার্থন্ধ মানুষ থেকে যারা অন্যের সম্পত্তি নিচের কুক্ষিগত করতে চায়। তারা সব সময় ছুঁতো খুঁজে। যেকোনো কুট কৌশল প্রয়োগ করতে তারা বাদ দেয় না। নির্যাতিত স্বজনরাও তাদের কাছ থেকে রেহাই পায় না; বরং তারাই হয় কূটকৌশলের নির্মম শিকার। বিলাসী গল্পের খুড়াা এবং উদ্দীপকের মনোরঞ্জন এর মধ্যে আমরা এই বৈশিষ্ট্যগুলো দেখতে পাই।
মনোরঞ্জন সৌদামিনীকে শায়েস্তা করার লক্ষ্যে তার বিরুদ্ধে সমাজে অপপ্রচার চালিয়েছে। সে বলে বেড়াচ্ছে যে, ‘নমশুদ্রের ঘরে ব্রাহ্মণ সন্তান পালিত হচ্ছে। এযে মহাপাপ, হিন্দু সমাজের ধর্ম সব শেষ হয়ে গেল।’ অন্যদিকে মৃত্যুঞ্জয়ের জ্ঞাতি খুরা মৃত্যুঞ্জয় অভিলাষী সম্পর্ককে না মেনে নিয়ে এই বলে অপপ্রচার চালিয়ে ছিল যে, ‘নির্জন জায়গায় কায়স্থের ছেলে হয়ে মৃত্যুঞ্জয় সাপুড়ে মেয়েকে বিবাহ করেছে। এমনকি, তার হাতে ভাত পর্যন্ত খেয়েছে।’ মৃত্যুঞ্জয়ের জ্ঞাতি খুড়া একে অন্নপাপ বলতেও পিছপা হয়নি।
উদ্দীপকের মনোরঞ্জন এবং বিলাসী গল্পের খুরা এর মধ্যেই পরিস্ফুটিত হয় সীমাহীন লোভ। লোভ-লালসা বশবর্তী হয়ে পথ নেই যা তারা অবলম্বন করেনি। উদ্দীপকের মনোরঞ্জন ভাবির সম্পত্তি দখল করার জন্য তার ধর্ম বিসর্জনের কথা বলে সমাজচ্যুত করার চেষ্টা চালিয়েছে। ‘বিলাসী’ গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের জ্ঞাতি ঘুরাও মৃত্যুঞ্জয়ের সম্পত্তি দখল করার জন্য জাত-ধর্ম বিসর্জনের অভিযোগ তুলে সমাজচ্যুত করার চেষ্টা চালিয়েছে। তাই একথা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, মনোরঞ্জন যেন বিলাসী গল্পের খুড়ারই প্রতিচ্ছবি।

৬. সুধীর রায় কুলীন বংশের লোক। তার বাগান বাড়িতে কেশব নামের এক মালি কাজ করে। নিচু বংশের বলে তিনি মালিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের চোখে দেখেন। একদিন তিনি বাগান বাড়িতে তার বসার চেয়ারে মালিকে বসতে দেখে রাগান্বিত হন। তিনি তৎক্ষনাৎ চেয়ারটি ভেঙে ফেলেন এবং তার রক্ষীকে দিয়ে বেদম প্রহার করান। এর কিছুদিন পর এ বাগান বাড়িতে তিনি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাঁকে দ্রুত চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার কোনো যানবাহন পাওয়া গেল না। এ অবস্থায় কেশব অস্থির হয়ে পড়ে। সে সময়ক্ষেপণ না করে সুধীর রায়ের অজ্ঞান দেহটাকে নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে প্রাণপণে ছুটতে থাকে। দীর্ঘ পথ পার হয়ে অবশেষে চিকিৎসাকেন্দ্রে পৌঁছায়। চিকিৎসা-সেবা পেয়ে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
ক. বিলাসীর পারিবারিক পদবী কী?
খ. কোন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে খুড়া মৃত্যুঞ্জয়ের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে? ব্যাখ্যা কর।
গ. সুধীর রায়ের আচরণে সমাজের কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ‘বিলাসী’ গল্প অবলম্বনে উত্তর দাও।
ঘ. কেশবের চারিত্রিক গুণাবলির আলোকে ‘বিলাসী’ গল্পে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নীচতলার মানুষগুলোকে যে মানব-মহিমি দিয়ে চিত্রিত করেছেন তা প্রমাণ কর।

 ৬ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. বিলাসীর পারিবারিক পদবী হল মালো।
খ. ‘বিলাসী’ গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় কায়স্থের ছেলে। তার মা-বাবা কিংবা ভাই-বোন কেউ বেঁচে নেই। এ পৃথিবীর বুকে বলতে গেলে সে একা। তাই খুড়া মৃত্যুঞ্জয়ের সম্পত্তি দখল করার উদ্দেশ্যে তার নামে কুৎসা রটনা করে বেড়াত।
মৃত্যুঞ্জয়ের ছিল গ্রামের এক প্রান্তে একটা প্রকা- আম-কাঁঠালের বাগান। আর তার মধ্যে একটা প্রকা- পোরোবাড়ি। তাছাড়া তার ছিল এক জাতি খুড়া। খুড়ার কাজ ছিল ভাইপোর বিরুদ্ধে বলে বেড়ানো- ‘সে গাঁজা খায়; সে গুলি খায়’ এমনকি আর কত কি! সে বাগানের অর্ধেক অংশের দাবিদার বলেও সমাজে প্রচার করে বেড়াত। বস্তুত সম্পত্তির লোভেই সে মৃত্যুঞ্জয়ের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে বেড়াত।
গ. ঊনিশ শতকের বাংলাদেশের বিশেষ করে তৎকালীন হিন্দু সমাজে যে জাত-পাত; ও বর্ণবৈষম্য ছিল সে দিকটি প্রকাশ পেয়েছে উদ্দীপকের আচরণে।
হিন্দু ধর্মে বর্ণপ্রথা খুবই মারাত্মকভাবে বিদ্যমান। ঊনিশ শতক ও বিশ শতকের প্রথম দিকে তা আরও ভয়াবহ ছিল। নিম্নবর্ণের লোকদের উচ্চবংশীয় লোকেরা ভালোচোখে দেখতো না। তাদের প্রতি অত্যাচার অবিচার করতে তারা বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করত না। ‘বিলাসী’ গল্পে ও উদ্দীপকের সুধীর রায়ের চরিত্রের মাধ্যমে এই বিষয়টি প্রধানরূপে ধরা পড়ে।
বস্তুত উদ্দীপকের সুবীর রায় তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার প্রতিটি চরিত্র। সে সময়ে উচ্চবর্ণের লোকজন কর্তৃক নিম্নবর্ণের সদস্যরা যে নির্যাতিত ও অত্যাচারিত হতে হতে তার চিত্রায়ণ করা হয়েছে উদ্দীপকের রায় নামক চরিত্রের ভেতর দিয়ে। ঠিক তেমনি বিলাসী গল্পেও নিচু বর্ণের প্রতীক অসম্পৃক্ততার এ করুণ চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। যেমন সাপুড়ে কন্যা বিলাসীকে বিয়ে করে কায়স্থের ছেলে মৃত্যুঞ্জয় সমাজ কর্তৃক হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে। কিন্তু উভয়ের ভালোবাসার কাছে তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার যেন নবজাতক শিশুর মত। কারণ সমাজ তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারেনি।
ঘ. অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের কথা শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছেন সন্দেহ নেই। তাঁর কথা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তিনি সমাজের নিচু তলার মানুষদের মানবিক মহিমা দিয়ে পরিচয় করেছেন সর্বক্ষেত্রে। বিলাসী গল্পেও তার কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
নিম্ন বর্ণের মানুষ হলেই যে স্বভাব চরিত্র খারাপ হবে এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই। স্বভাব চরিত্র মানুষের মানসিকতার উপর নির্ভর করে। যে কেউ ইচ্ছা করলে মহৎ গুণাবলী অর্জন করতে পারে। উদ্দীপকের কেশব এবং বিলাসী গল্পের বিলাসী এরকম মানবীয় গুণাবলীতে উদ্ভাসিত।
বিলাসী অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়কে তিলে তিলে সুস্থ করে তুলেছে তার জীবন বিলিয়ে দিয়ে। যদিও তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা বিলাসীর হৃদয়টাকে পরিমাপ করার কোন প্রয়োজনই অনুভব করেনি, কিন্তু শরৎচন্দ্র চট্টপদ্ধায় তার আপন তুলির স্পর্শতে দান করেছেন মানবতার অতলস্পর্শী মহিমা। উদ্দীপকের কি সব মালিক সুধীর রায়ের অত্যাচার নিগ্রহের শিকার হয়েও তার বিপদের সময় অসীম কষ্ট স্বীকার করে তাকে বাঁচিয়ে তুলেছে।
উদ্দীপকের চরিত্রটি সমাজের নিচু তলার মানুষ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সে কুলীন বংশের লোক সুধীর রায়ের বাগানের মালি। সুধীর রায়ে তাকে চোখ রাঙাতো, বকা দিত এবং রক্ষী দিয়ে প্রভার পর্যন্ত করেছে। এত অত্যাচার সহ্য করার পরও কেশব সুধীর রায়ের অজ্ঞান দেহটাকে নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে চিকিৎসাকেন্দ্রে পৌঁছায়। কেশব নিচু তলার মানুষ হলেও চরিত্রটি মানব মহিমায় ভরপুর। এরকম মানবীর গুণসম্পন্ন নিচু তলার মানুষ আমরা দেখতে পাই ‘বিলাসী’ গল্পে বিলাসীকে। মৃতপ্রায় মৃত্যুঞ্জয়কে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলে এবং আমৃত্যু শত কষ্টেও তার সঙ্গে থেকে বিলাসী যে মহত্ত্ব দেখায় তা সত্যই বিরল। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিচতলার মানুষগুলো এমনই মহিমা দিয়ে চিত্রত করেছেন।

৭. অনির্বাণ ব্রাহ্মণের ছেলে। কিন্তু বিলেতফেরত উচ্চশিক্ষিত অনির্বাণ ধর্মীয় অনেক কিছুই মানে না। বিশেষ করে বর্ণভেদ প্রথা তার কাছে মানবতাবিরোধী বলে মনে হয়। সে বাগানের মসনা মালির অপূর্ব সুন্দরী, শিক্ষিতা মেয়ে নির্মলাকে বিয়ে করে নিজে পছন্দ করে। নিম্নবর্ণ বলে পরিবারের কেউ এ বিয়ে মেনে নিল না। পিতা জয়ন্ত বাবু অনির্বাণকে তার সমস্ত কিছু থেকে বঞ্চিত করলেন। সমাজের সংস্কারবাদী হিন্দুরা তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে একঘরে করল। অনির্বাণ নির্মলাদের সবাইকে নিয়ে শহরে চলে গেল।
ক. কামাখ্যা কী?
খ. মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি খুড়োর বৈরী মনোভাবের কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের অনির্বাণ ও নির্মলার বিয়ে প্রসঙ্গে গ্রামবাসীর ক্ষোভ ‘বিলাসী’ গল্পের কোন অংশের সাথে মিল পাওয়া যায়।- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও নির্মলা ও বিলাসী দুজনই হিন্দু সমাজের অনুদারতা ও বর্ণপ্রথার শিকার। মূল্যায়ণ কর।

 ৭ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. কামাখ্যা হলো ভারতের আসাম রাজ্যে অবস্থিত প্রাচীন তীর্থস্থান। স্থানটি তান্ত্রিক সাধক ও উপাসকদের তন্ত্র মন্ত্র সাধনা জন্য বিখ্যাত।
খ. ‘বিলাসী’ গল্পে মৃত্যুঞ্জয় এর প্রতি বৈরী মনোভাব এর মূল কারণ মৃত্যুঞ্জয়ের বিশাল বাগানটি নিজের করে নেওয়ার লোভ।
মৃত্যুঞ্জয়ের জ্ঞাতি খুড়ো সবসময় ভাইপো মৃত্যুঞ্জয়ের অনিষ্ট করার কাজে লেগে থাকত। তাকে কিভাবে সমাজের কাছে হেয় করা যায়, নিন্দিত করা যায়, সে চেষ্টায় তার কোনো ত্রুটি ছিল না। ভাইপোকে গ্রামবাসীর কাছে কোণঠাসা করার জন্য মৃত্যুঞ্জয়ের অন্যপাপের কথা প্রচার করেছে। খুড়ো মৃত্যুঞ্জয়ের কুড়ি পঁচিশ বিঘা বাগান নিজের নামে প্রতিষ্ঠার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করত।
গ. উদ্দীপকের অনিবার্ণ ও নির্মলার বিয়ে প্রসঙ্গে গ্রামবাসীর ‘বিলাসী’ গল্পের বিলাসীর হাতে ভাত খেয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের এবং তাদের বিয়ে করার ঘটনা অংশের সাথে মিল পাওয়া যায়।
উদ্দীপকে উচ্চবংশীয় জমিদার পরিবারের ছেলে হওয়া সত্বেও নিম্ন বর্ণের হিন্দু মালির মেয়ে নির্মালাকে বিয়ে করেছে। সমাজ ও সমাজপতি উভয়ের কাছেই ব্যাপারটি অপরাধের। কারণ তারা জাতি-ধর্ম-বর্ণ কে বড় করে দেখে, প্রেম ও মানবতা তাদের কাছে তুচ্ছ বিষয়। নিম্নবর্ণ বলে পরিবারের লোকজন অনির্বাণকে সহ্য করতে পারলো না। সংস্কারবাদী হিন্দুরা তাকে এক ঘরে করল। অনিবার্ণ এর পিতা তাকে সমস্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলো। এ ঘটনাটি ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুপথযাত্রী মৃত্যুঞ্জয়ের সেবাদানকারী বিয়ে করার তৎকালীন হিন্দু সমাজের কর্তাব্যক্তিদের বৈরী আচরণ এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
বিলাসী গল্পে মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীর প্রেমের মধ্যে দিয়ে হিন্দু সমাজের সংকীর্ণ কূপমন্ডুকতা, ধর্মান্ধতা ও সংস্কারপ্রীতি মানসিকতার পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। সনাতন হিন্দু সমাজে তৎকালে নিয়ম-শৃঙ্খলা নামে অন্যায় কে প্রশ্রয় দিয়ে দুর্বল নারী-পুরুষের ওপর অত্যাচার চালানো হতো। ‘বিলাসী’ গল্পে তারই বাস্তব প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। সামাজিক বর্ণপ্রথা তখনকার দিনে একটি প্রকট সমস্যা ছিল। কোন অবস্থাতেই সেই প্রথার অন্যথা করা হতো না। কেউ তা ভাঙলে তাকে শাস্তি পেতে হত। ‘বিলাসী’ গল্পে বিলাসী ও বর্ণপ্রথার শাস্তির শিকার হয়েছে। নীচুবর্ণের মানুষের হাতে ভাত খেয়ে অন্নপাপের পর্যায়ভুক্ত হয়ে শাস্তি পেয়েছে। উদ্দীপকে এ ঘটনাটির প্রতিফলন ঘটেছে নির্মলা ও অনিবার্ণ- এর শাস্তি ভোগ করার মধ্যে দিয়ে। সেখানে অন্নপাপ নেই, কিন্তু বর্ণপ্রথার অমানবিক শাসন ও শাস্তির দিকটি ফুটে উঠেছে; যা ‘বিলাসী’ গল্পের বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয় এর জীবনের সাথে পুরোপুরি মিলে গেছে।
ঘ. প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও নির্মলা বিলাসী দু’জনই সমাজের অনুদারতা ও বর্ণপ্রথার শিকার -উক্তিটি যথার্থ।
উদ্দীপকের নির্মলা সুন্দরী, শিক্ষিতা, রুচিশীল। কিন্তু তার জন্ম নিম্নবর্ণের হিন্দু মনা মালির ঘরে। মেয়ের গুন যতই থাকুক, বর্ণভেদ প্রথার কাছে তাকে যে পরাজয় মানতে হবে, তাতে সন্দেহ নেই। এ ছিল নির্মলা সম্পর্কে তার বাবার ধারণা। মনা মালির ধারণা মিথ্যা করে দিয়েছিল বিলেতফেরত উচ্চশিক্ষিত যুবক অনিবার্ণ। সে বর্ণ প্রথাকে বিবর্ণ করে দিয়ে নির্মলাকে বিয়ে করে। নিম্নবর্ণের বিয়ে করে সে পরিবার ও সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। সমাজের সংস্কারবাদী হিন্দুরা নির্মালাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তাদেরকে একঘরে করে। ঘটনাটি ‘বিলাসী’ গল্পের বিলাসী’র সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘বিলাসী’ গল্পের বিলাসী নিম্নবর্ণের হিন্দু সাপুড়ের মেয়ে। বিলাসিতার হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসা নিয়ে অসুস্থ কায়স্থ মৃত্যুঞ্জয়কে আপন করে নেয়। মৃত্যুঞ্জয় অভিলাষী চিরন্তন প্রেমের আবেদন গ্রহণ করেছে সমাজ-সংস্কার, বংশ-মর্যাদা ও পৈশাচিক সম্পত্তির মোহত্যাগের মাধ্যমে। তখনকার দিনে উচ্চবর্ণের হিন্দুরা বিনা অপরাধে নিম্নবর্ণের নিরীহ ও দুর্বলের উপর অত্যাচার করত। তখন প্রকট ছিল উঁচু বর্ণ আর নিচু বর্ণের পার্থক্য। মৃত্যুঞ্জয় উচ্চবর্ণের আর বিলাসি নিম্ন বর্ণের হওয়াতে সমাজ তাদের ভালোবাসাকে গ্রহণ করেনি। উচ্চবর্ণের হয়ে নিচু বর্ণের মানুষের হাতে ভাত খাওয়া কি অন্য পাপ বলে অভিহিত করা হত। পিতৃমাতৃহীন মৃত্যুঞ্জয়ের যখন মৃত্যুমুখে পতিত, তখন সমাজের কেউ তাকে সাহায্য করতে আসেনি। একনজর দেখতে আসেনি কেউ। এমন অবস্থায় সমাজ পতিদের বাধা-নিষেধ আর মিথ্যে অপবাদের তোয়াক্কা না করে বিলাসী সেবা-যত্ন করে মৃত্যুঞ্জয়কে সুস্থ করে তুলেছে। মৃত্যুঞ্জয় ও সকল বৈশ্বিক সম্পত্তি বিসর্জন দিয়ে সামাজিক রীতিনীতির বাইরে নতুন করে সংসার ধর্ম করতে শুরু করেছে। সাপুড়ের পোশাক পরে এসেও সাপুড়ের বনে গেছে। কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে মৃত্যুঞ্জয় যত লাঞ্চিত হয়েছে, তার চেয়ে বহু গুণ হয়েছে বিলাসী। উদ্দীপকের নির্মলা এবং ‘বিলাসী’ গল্পের বিলাসীর দুঃখ-যন্ত্রণার মূল্যে বর্ণ-প্রথার শাস্তির সূত্রে গাঁথা। উভয় ক্ষেত্রে তারা বর্ণপ্রথার কেঠার শাস্তির শিকার।
‘বিলাসী’ গল্পে উনিশ শতকের হিন্দু সমাজের মিথ্যাচার, বর্ণপ্রথা, কুসংস্কার, সমাজপতিদের অন্ধ মানসিকতা ইত্যাদি প্রতিফলিত হয়েছে। প্রেমের ক্ষেত্রে কঠরতা ও অমানবিকতা প্রকাশ পেয়েছে। উচ্চবর্ণের অহংবোধ ও অত্যাচারের মৃত্যুবরণের হিন্দুরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সমাজের কাছে ব্যক্তির হৃদয়বৃত্তির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে হতেই বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে গেছে। উদ্দীপকের নির্মলা এবং গল্পের বিলাসী জীবন সেসবের উদাহরণ। সুতরাং আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও নির্মলা বিলাসী দুজনই হিন্দু সমাজের ও বর্ণ-প্রথার শিকার।

৮. গোপী দাস একজন সাপুড়ে। তার স্ত্রী হিমানিও সাপুড়ে। সাপ খেলা দেখিয়ে, তাবিজ বিক্রি করে তাদের সংসার চলে। কিন্তু হিমানি এখন আর সাপুড়ে পেশা পছন্দ করে না। সে গোপীকে সাপুড়ে পেশা ছেড়ে অন্য কিছু করতে বলে। কারণ প্রথমত সাপের কামড়ে স্বামীর মৃত্যুর আশঙ্কা, দ্বিতীয়ত শেকড়-বাকড় বিক্রির মাধ্যমে টাকা অর্জন করা লোক ঠকানোর নামান্তর। কিন্তু গোপীদাস তা আমলে নেয় না। সে বলে, আমরা লোক ঠকাই না, লোকদের খেলা দেখিয়ে আনন্দের বিনিময়ে উপার্জন করি।
ক. অন্নপাপ কী?
খ. ‘গ্রামের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয়ের ছিল এমনি সুনাম।’ বিষয়টি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে হিমানি স্বামীর পেশা সম্পর্কে যা ভেবেছে তা ‘বিলাসী’ গল্পের বিলাসীর দৃষ্টিভঙ্গির সাথে কতটুকু সংগতিপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের হিমানি ও ‘বিলাসী’ গল্পের বিলাসীর ক্ষেত্রে নৈতিকতার যে দিকটি ফুটে উঠেছে, তা সামাজিক মূল্য নিরূপণ কর।

 ৮ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. বর্ণবাদী হিন্দু সমাজের অনুশাসনে উচ্চবংশীয় লোক নিম্ন বংশের লোকের হাতের ভাত খেলে তাকে অন্নপাপ হিসেবে ধরা হয়।
খ. ‘গ্রামের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয়ের এমনি সুনাম।’ এটি ‘বিলাসী’গল্পের লেখক এর ব্যাঙ্গাত্মক উক্তি।
আমরা জানি যে, সুনাম শব্দটি একটি আদর্শ অর্থ বহন করে, যা দিয়ে কারো প্রশংসা কে বোঝানো হয়। কিন্তু বিলাসী গল্পে উক্তিটি লেখক ব্যাঙ্গার্থে করেছেন। গল্পে পরোপকারী মৃত্যুঞ্জয়ের উপকার স্বীকার না করে নিচু মনের মানুষ যখন তাকে অবহেলা অবজ্ঞা করেছে, লেখক তখনই সার্থকভাবে উক্তিটি করেছেন। মৃত্যুঞ্জয় শিক্ষার্থীদেরকে খাওয়ানো, বই কিনে দেওয়া, বাচ্চাদের স্কুলের পাওনা মিটানো ইত্যাদি কাজের মধ্য দিয়ে মানবীয় গুণাবলীর পরিচয় দিয়েছিল। তৎকালীন সংকীর্ণমনারা তা মনে রাখেনি; বরং তার অসুস্থতার সময় তাকে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলার বিষয়কে পাপ হিসেবে দেখেছে, তাকে সমাজচ্যুত করে মৃত্যুর দিকেই ঠেলে দিয়েছে।
গ. উদ্দীপকে হিমানী স্বামীর পেশা সম্পর্কে যা ভেবেছে তা বিলাসী গল্পের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ।
উদ্দীপকে হিমানীর স্বামী গুপিদাস সাপুড়ে। সাপ খেলা দেখানো ও তাবিজ বিক্রি করা তার পেশা এবং এই পেশা থেকে আয় দিয়েই তাদের সংসার চলে। ‘বিলাসী’ গল্পে অন্নপাপের অপরাধ নিয়ে বিয়ে করে মৃত্যুঞ্জয় ও সাপুড়ের পেশা গ্রহণ করে। সে পেশা থেকে আয় দিয়েই তাদের সংসার চলে। এক্ষেত্রে উদ্দীপক ও গল্পের হিমানী অভিলাষী চরিত্র দুটির মধ্যে সংগতি লক্ষ করা যায়। উদ্দীপকের হিমানী সাপুড়ে হলেও সে মানবীয় গুণাবলী বর্জিত নয়। সে মিছে মিছি লোক ঠকানো আর ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে দূরে রাখতে স্বামীকে সাপুড়ে পেশাতে করতে চাপ দেয়। ‘বিলাসী’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র বিলিসীকেও আমরা দেখেছি তার স্বামী মৃত্যুঞ্জয়কে হিমানীর মতোই প্রতারণামূলক ব্যবসায় করতে বলেছে।
হিমানী সাপুড়ে হলেও অন্য সবার মত নয়। সে অন্যদের তুলনায় একটু বেশি সৎ ও সচেতন। সে জানে সাপুড়ে পেশা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রতারণামূলক। কেননা সাপ ধরার মন্ত্র তন্ত্র এগুলো সত্য নয়। তাছাড়া সাপুড়েরা যে শেকড়- বাকড় বিক্রি করে অর্থ রোজগার করে সে রোজগারও বৈধ নয়। কেননা শেকড়- বাকড় সত্যিকার অর্থে কার্যকরী নয়। এসব বিবেচনায় হিমানী তার স্বামীকে সাপুড়ে পেশা ত্যাগ করতে চাপ দিতে থাকে। ‘বিলাসী’ গল্পে ‘বিলাসী’ হিমানীর মত সচেতন ও মানবিকতাপূর্ণ এক নারী হিসেবে পাই আমরা। সেও তার স্বামী মৃত্যুঞ্জয়কে সাপুড়ে পেশা ত্যাগ করতে বলে। শেকড়-বাকড় বিক্রি করার মতো প্রতারণামূলক কাজ ত্যাগ করতে চাপ দেয়। ‘বিলাসী’ ভয়ানক আপত্তি করে মৃত্যুঞ্জয়কে বলে- ‘দেখ, এমন করে মানুষ ঠকায়ো না।’ সুতরাং আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকের হিমানীর দৃষ্টিভঙ্গি আর ‘বিলাসী’ গল্পের বিলাসীর দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ।
ঘ. উদ্দীপকের হিমানী ও ‘বিলাসী’ গল্পের ক্ষেত্রে নৈতিকতার যে দিকটি ফুটে উঠেছে তার সামাজিক মূল্য অল্প; নেই বললেই হয়।
উদ্দীপকের হিমানী এবং ‘বিলাসী’গল্পের বিলাসী সাপুরে ডিজে দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার বিবেচনা করে তাদের স্বামীদের এ পেশা ছেড়ে দিতে বলেছে, তাতে সমাজের ওপর তেমন প্রভাব ফেলে না। যদিও তা একটি সামাজিক অনাচারের অবসান, মানুষকে প্রতারণার হাত থেকে মুক্তি দানের বিশেষ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচ্য, তবুও তা কূপমন্ডুক সমাজের কাছে মূল্যহীন।
আমরা জানি যে, ব্যক্তি সমাজের উপাদান। ব্যক্তি নিজেই সমাজ। একটি সঙ্গে অন্যটির অবস্থান ও সম্পর্ক অবিচ্ছিন্ন। তবু নিম্ন আয়ের ও নিচু শ্রেণি পেশার লোকদের মহৎ উদ্যোগকে সম্মানের সাথে গ্রহণ করে না। সমাজ সমাজ পতিদের কথায় চলে বলে এ দূরবস্থা। কাজেই দেখা যায়-সমাজ ব্যক্তির ওপর চাপিয়ে দেয় ব্যক্তি তা মানতে বাধ্য। আর ব্যক্তি সমাজের ওপর চাপাতে চায়, সমাজ তা গ্রহণ না করে ছুঁড়ে ফেলে। সাপুড়ের পেশা নিয়ে ‘হিমানীর’ এবং বিলাসী’ যে শুভ চিন্তা তার মূল্য অপরিসীম। কিন্তু সমাজ তার মূল্য দিতে রাজি নয়। তাদের সত্য-ভাষণে যদি সমাজের কাছে পৌঁছতে তাহলে সমাজের চেহারা হয়ে উঠত আশানুরূপ উজ্জ্বল। কিন্তু সমাজের কানে ব্যক্তির সৎ চিন্তা ও উপলব্ধি অনেক সময়ে পৌঁছে না। এসব কারণে উদ্দীপকের হিমানীর এবং ‘বিলাসী’ গল্পের উপলব্ধির মূল্যায়ন সমাজে হয় না।
সাপুড়দের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসায় হচ্ছে গাছের শিকড় বিক্রি করা। অথচ এটি এক ধরনের প্রচারণামূলক কাজ। তাই ‘বিলাসী’ গল্পের বিলাসী এবং উদ্দীপকের হিমানী এটি পছন্দ করত না। নৈতিকতার দিক থেকে বিলাসী ও হিমানীর এ ধরনের উপলব্ধি অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু সমাজে নানা মত ও পথের ভিন্নতার কারণে তাদের ব্যক্তিগত উপলব্ধির মূল্যায়ন হয় না। অথচ তাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির সামাজিক ইতিবাচক মূল্যায়ন হলে সমাজ অনেকাংশে উপকৃত হতো।

৯. পাটনী পাড়ার পাঁচু দফাদারের বউ এমনিতে খুব শান্ত, কিন্তু ক্ষেপলে দিগ্বিদিক জ্ঞান থাকে না। এই তো সেইদিন, কাকাশ্বশুর তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য লোকজন নিয়ে এসেছিল। দফাদারের বউ রামদা হাতে এমন তাড়া করল যে, লোকজন ভয়ে ছুটে পালাল। আর কাকাশ^শুর তো সাতদিন বাড়িতেই এলেন না। বউ ভালো করেই জানে, ভয় পেলে আর বাড়ি রক্ষা হবে না।

ক. ‘কানাচ’ শব্দটির অর্থ কী?
খ. ‘বদন দগ্ধ না হয়’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপেেক পাঁচু দফাদারের বউ-এর সাথে ‘বিলাসী’ গল্পের বিলাসীর কী সাদৃশ্য রয়েছে, তুলনামূলক আলোচনা কর।
ঘ. ‘‘বউ ভালো করেই জানে ভয় পেলে আর বাড়ি রক্ষা হবে না”- উদ্দীপকের এ উক্তিটির মধ্য দিয়ে বিলাসীর মানসিক দৃঢ়তার সমানভাবে প্রকাশ পেয়েছে।-কথাটির যৌক্তিকতা প্রমাণ কর।

 ৯ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ‘কানাচ’ শব্দটির অর্থ ঘরের পেছনে দিককার লাগানো জায়গা।
খ. ‘বদন দন্ধ না হয়’ – এর আভিধানিক অর্থ মুখ যেন না পোড়ে। কিন্তু এ কথাটি সুনাম যেন নষ্ট না হয় এই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ‘বিলাসী’ গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় দেড় মাস প্রায় অচেতন অবস্থায় পড়েছিল জ্বরে। গ্রামের কেউ খবর নিতে আসেনি। সাপুড়ের মেয়ে বিলাসি তাকে সেবা-শুশ্রূষা দিয়ে সুস্থ্য করে তুলেছে। কৃতজ্ঞ মৃত্যুঞ্জয় তাকে বিয়ে করেছে। এতে গ্রামের বদন দন্ধ হয়েছে অর্থাৎ সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। বিষয়টি যেন বাইরের কেউ জানতে না পারে এবং একই সাথে ঘুরার স্বার্থোদ্ধার হয়, সেজন্য খুরা অভিভাবক হয়ে বলেছেন ব্যবস্থা নিতে। আর সংঘের যুবক ছেলেরা চলেছে গ্রামের বদন যেন দগ্ধ না হয় তারই একটা মীমাংসা করতে।
গ. উদ্দীপকের পাঁচু দফাদারের বউয়ের সাথে ‘বিলাসী’ গল্পের ‘বিলাসীর’ সাদৃশ্য থাকলেও কিছুটা বৈসাদৃশ্য রয়েছে। কেননা পাঁচু দফাদারের বউ শুধু প্রতিবাদী নয়- রুখে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য অর্জন করতে পিছপা হয়না। কিন্তু বিলাসী শুধু প্রতিবাদী।
অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সচেতন মানুষ প্রতিবাদী হয়। অনেক সময় দেখা যায়, সমাজ ও স্বার্থান্বেষী মানুষের প্রবল বাধার মুখে শুধু মৌখিক প্রতিবাদও করতে সমর্থ হয় অত্যাচারিত মানুষ। আবার অনেককে দেখা যায়, শুধু মৌখিক প্রতিবাদী নয় রীতিমতো রুখে দাঁড়াতে; বিলাসী গল্পে ‘বিলাসী’ সূর্যমুখী প্রতিবাদ জানাতে সক্ষম হলেও উদ্দীপকের পাশে দফাদারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।
উদ্দীপকের পাঁচু দফাদারের বউ কোন কারণে ক্ষেপে গেলে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে। তখন তার সামনে দাঁড়াতে সবাই ভয় পায়। আর যদি সেটা হয় অন্যায় বা জবরদস্তি তাহলে সে মৃত্যুকে মুঠিতে নিয়ে রুখে দাঁড়ায়। তার কাকা শশুর তাদেরকে এই বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য লোকজন নিয়ে আসে। এ পর্যায়ে দফাদারের বউ রামদা হাতে তাদেরকে এমন তারা করেছে যে, ভাড়াটে লোকজন ছুটে পালিয়েছি। আর কাকা শশুর তো সাত দিন বাড়িতে আসেনি। অন্যদিকে ‘বিলাসী’ গল্পের ‘বিলাসী’ যখন মৃত্যুঞ্জের জন্য রুটি তৈরি করছিল তখন পাড়ার ছেলে মেয়েদের সাথে নিয়ে তার ওপর হামলা করে, মারধর করে এবং বাইরের রাস্তায় নিয়ে ফেলে দেয়। সে তীব্র প্রতিবাদ করে বলেছিল, ‘বাবা আমারে বাবুর সাথে নিকা দিয়েছে জানো?’ তার এ প্রতিবাদের গুরুত্ব কেউ দেয়নি; বরং রুটিগুলো ঘরে দিয়ে আসার জন্য সুযোগ চেয়ে-অনুরোধ করেছে বিলাসী।
ঘ. ‘বউ ভালো করেই জানে, ভয় পেলে আর বাড়ি রক্ষা হবে না’-কথাটির মধ্যে অধিকার আদায়ের মানসিক দৃঢ়তা এবং কল্যাণকর বিবেচনাবোধের পরিচয় ফুটে উঠেছে উদ্দীপকে পাঠ্যবইয়ের তৎপরতায়। অবশ্য বিদেশী গল্পের নায়িকা বিলাসীর উচ্চারণেও রয়েছে সত্য প্রকাশের দৃঢ়তা এবং স্বামীর প্রতি দায়িত্বশীল সহানুভূতি।
মানুষ স্বাভাবিকভাবেই সত্যের প্রতি অনুরাগী, দায়িত্ব সচেতন এবং পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। পাশাপাশি সময়ের প্রয়োজনে অধিকার আদায় হয়ে উঠতে পারে প্রচন্ড সংগ্রামী। শেষ সংগ্রাম মৃত্যুকে তুচ্ছ করে এগিয়ে যাওয়ার এবং লক্ষ্যে পৌঁছায়। তাতে থাকে না কোনো ভয়-ভীতি থাকে নানা নতি স্বীকারের অভিপ্রায়।
বিলাসী গল্পের দৃঢ়চেতা বিলাসীর মধ্যে আমরা যে তেজ এবং প্রতিবাদ ফুটে উঠতে দেখেছি। সে প্রতিবাদী উচ্চারণ অধিকারের এবং সত্যের মৃত্যু ইচ্ছে অনুযায়ী বিলাসী সাথে তার বিয়ে হয়েছে। প্রথমে ভয় পেলেও এই সত্যতাকে সাহসী করে তুলেছে। লাঠিসোটা হাতে অনেক লোকের সামনে তাই নির্ধিদায় বলতে পেরেছে-“বাবা আমারে বাবুর সাথে নিকা দিয়েছে জানো?”আর সেই অধিকার এই স্বার্থপর সমাজব্যবস্থাকে ঘৃণা করে মৃত্যুর জয়কে নিয়ে চলে গেছে দূরে, বেঁধেছে সুখের নীড়। উদ্দীপকে আমরা দেখি, শান্তিপ্রিয় মানুষ অধিকার আদায় বা রক্ষার জন্য কতটা সাহসী তেজস্বী হয়ে উঠতে পারে। ভিটেছাড়া হলে স্বামী সন্তান নিয়ে কোথায় দাঁড়াতো সে? তাই পাঁচু দফাদারের স্ত্রী লোকজনসহ কাকা শশুর কে তাড়া করেছে রামদা হাতে নিয়ে। ভয় ছুটে পালিয়েছে বাড়ি দখল করতে আসা লোকজন। আর কাকা শশুর তো সাত দিন বাড়িতে আসেননি। ভয়ে সিঁটকে থাকলে কি এবারে রক্ষা হতো? হতো না।
উদ্দীপকের ঘটনায় আমরা পাঁচু দফাদারের বউকে প্রতিবাদী হতে দেখতে পাই। সে জানে ভয় পেলে বাড়ি রক্ষা করা যাবে না। ক্যায়সে প্রতিবাদী হয়। বিলাসী গল্পে বিলাসী মধ্যেও আমরা এই চেতনা দেখতে পাই। মৃত্যুঞ্জয়ের জ্ঞাতি খুরা দলবল নিয়ে এলে সে তাদের অত্যাচারের প্রতিবাদ করে। তাই বলা যায়, ‘বউ ভালো করেই জানে ভয় পেলে আর বাড়ি রক্ষা হবে না।’ উদ্দীপকের এ উক্তির মধ্য দিয়ে ‘বিলাসী’ গল্পের বিলাসীর মানসিক দৃঢ়তা ও প্রকাশ পেয়েছে।

১০. সুন্দর আলি জাত সাপুড়ে হলেও সে সাপ ধরে না বা শিকড়-তাবিজ বিক্রি করে করে না। নিজে হাতে বাঘ মার্কা মলম তৈরি করে গানের আসর বসিয়ে তা বিক্রি করে। এতে লাভ অনেক বেশি। আবার মানুষের উপকারও হয। তার স্ত্রী বেশি লাভ করে মানুষ ঠকানো মোটেও পছন্দ করে না।
ক. ‘বুকফাটা’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘বাঙালির বিষ’ বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের সুন্দর আলীর স্ত্রীর সাথে ‘বিলাসী’ গল্পের কার সাদৃশ্য আছে? তুলনামূলকভাবে আলোচনা কর।
ঘ. সাদৃশ্য থাকলেও ‘মৃত্যুঞ্জয় পুরোপুরি সুন্দর আলী নয়’- ‘বিলাসী’ গল্প অনুসরণে কথাটির যৌক্তিকতা প্রমাণ কর।

 ১০ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ‘বুকফাটা’ শব্দটির অর্থ হৃদয়বিদারক।
খ. ‘বাঙালির বিষ’ বলতে বাঙালির ক্ষণস্থায়ী ক্রোধ বা বিদ্বেষকে বুঝানো হয়েছে।
বাঙালির রাগ আছে, হিংসা-বিদ্বেষ আছে। কিন্তু তা কখনো দিনের পর দিন বা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে না। মনের মধ্যে প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত পুষে রাখে না। রাগের বশে বা হিংসার বসে কারো কোন ক্ষতি বা খুন-খারাবি ও করেনা। বাক বিতন্ডা ও অকথ্য গালাগালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এবং ক্ষণস্থায়ী। সাপের বিষ যেমন অবাধ্যভাবে কার্যকর অর্থাৎ কমর দেওয়ার সাথে সাথেই তার মৃত্যুর ঘন্টা বাজিয়ে দেয়। বাঙালির কথার বিষ এমন অব্যর্থভাবে কার্যকর নয়।
গ. উদ্দীপকের সুন্দর আলীর স্ত্রীর সাথে ‘বিলাসী’ গল্পের বিলাসীর মন-মানসিকতার চমৎকার সাদৃশ্য আছে। কেনোনা সুন্দর আলীর স্ত্রী যেমন মানুষকে ঠকিয়ে অর্থ-বিত্তের মালিক হতে পছন্দ করেনা, তেমনি বিলাসী ও তাবিজ-কবজ, শিকর-বাকর, বিক্রির মাধ্যমে মানুষকে ঠকাতে পছন্দ করে না। যদিও তাতে লাভ অনেক।
সমাজে অনেক লোকই মানুষকে ঠকিয়ে ব্যবসা করে। অনেকে মানুষের এই লোক ঠকানো কে চরমভাবে ঘৃণা করে। তারা নিজেরাও কাউকে ঠকায় না এবং অন্যরা ঠকাক তাও চায়না। উদ্দীপকের সুন্দর আলীর স্ত্রী এবং ‘বিলাসী’ গল্পের বিলাসীর মধ্যে এসব দেখতে পাওয়া যায়।
উদ্দীপকের সুন্দর আলী কম খরচে বেশি লাভ করতে আগ্রহী। স্ত্রী মনে করে খরচ যেহেতু কম সে হতো বেশি দামে মলম বিক্রি করার প্রয়োজন কী? মানুষকে ঠকিয়ে বেশি লাভ করা সে পছন্দ করে না। ক্রেতারা কম দামে জিনিস পাবে আবার উপকৃত হবে- এটাই সে মনেপ্রানে চায়। অন্যদিকে বিলাসী গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রী বিলাসী ও বেশি লাভ বা অর্থবিত্ত পছন্দ করেনা। এমনিতেই দুজন মানুষের খাওয়া-পরা সচ্ছন্দে মিটে যায়। মানুষকে ঠকিয়ে শিকড়- বাকড় বিক্রি করার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ সে জানে, সাপ ধরার পর বিষ দাঁত ভেঙে দিলে বা মুখে চাপা দিলে সে ভয় পায় এবং পালিয়ে বাঁচে। অথচ মৃত্যুঞ্জয় শিকড়-বাকড় সাপের বিষ নষ্ট করে একথা বলে মানুষকে ঠকিয়ে পয়সা নেয়। তাই সে মৃত্যুঞ্জয়কে বোঝায় যে, তাদেরতো খাবার ভাবনা নেই, কাজেই লোক ঠকানোর প্রয়োজন কী? অর্থের বিনিময়ে লোক ঠকানোর কাজটা যে বিলাসীর পছন্দ নয়, তা এই কথার মাধ্যমে বুঝা যায়।
ঘ. সাদৃশ্য থাকলেও ‘মৃত্যুঞ্জয় পুরোপুরি সুন্দর আলী নয়’ কথাটি যথার্থ যুক্তিযুক্ত ও বাস্তবসম্মত। মৃত্যুঞ্জয় সাপুড়ে না হয়েও সাপুড়ের কাজ করে, আর সুন্দর আলী জাত সাপুরে হয়েও ভিন্ন পেশা অবলম্বন করেছে।
মানুষ দু’রকমের পেশা অবলম্বন করে-এক উপায়ান্তর না দেখে বাধ্য হয়ে, দুই, স্বেচ্ছায় বা নিজের পছন্দমত। বাধ্য হয়ে যারা কোন পেশা বেছে নেয় তাতে তাদের প্রাণবন্ত আনন্দ থাকে না। কিন্তু যারা পছন্দমতো বেছে নেয় তাদের সেই কাজে মনোযোগ ও স্বতঃস্ফূর্ততা থাকে। এখানেই উদ্দীপকের সুন্দর আলী ও বিলাসী গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের মধ্যে পার্থক্য।
বিলাসী গল্পে আমরা দেখতে পাই, বিলাসীকে বিয়ে করে মৃত্যুঞ্জয় আকস্মিকভাবেই সাপুড়ের পেশাটি বেছে নিয়েছে। কোন পূর্ব পরিকল্পনা বা ইচ্ছা ছিল না। তার পোশাক কথাবার্তা বা আচরণ এ একেবারে যা সাপুরে মনে হয়। আসলে সেটা নয়। কায়স্থ ঘরের ছেলে হয়েও সে আনন্দের সঙ্গে সাপুড়ের পেশা বেছে নিয়েছে এবং অর্থ উপার্জন করেছে সচ্ছন্দে। অপরদিকে সুন্দর আলী জাত সাপুড়ে হয়ে অন্য পেশা গ্রহণ করেছে।
সুন্দর আলী জাত সাপুড়ে। সাপুড়ের ঘরে সে জন্মেছে। সাপের খেলা দেখানো, শিকড়-তাবিজ বিক্রি করা, সাপ ধরা ও বিষ বিক্রি করার সবই সে জানে। এইসবই লাভজনক সন্দেহ নাই। তবুও সেই পেশা গ্রহণ করেনি। সে নিজ হাতে ব্যথা বেদনা উপশমের বাঘ মার্কা মলম বানায়। তাতে খরচ পরড় যৎসামান্য, কিন্তু লাভ হয় অনেক বেশি। হাটে বাজারে গানের আসর বসিয়েছে এগুলো বিক্রি করে। অবশ্য তার স্ত্রী এটাকে মানুষ ঠকানোর ব্যবসায়ী মনে করে। তাই পছন্দ করে না। আলোচনার প্রেক্ষিতে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, মৃত্যুঞ্জয় যেমন পৃথক সত্তার, সুন্দর আলী ও তাই। কাজেই মৃত্যুঞ্জয় সুন্দরী নয়।