You dont have javascript enabled! Please enable it!

HSC BANGLA 1ST – BIDROHI – CQ

১. আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুনঃ মহাবিপ্লব হেতু
এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু!
সাত-সাতশ নরক-জ্বালা জ্বলে মম ললাটে।
মম ধূম-কু-লী করেছে শিবের ত্রিনয়ন ঘন ঘোলাটে।
আমি স্রষ্টার বুকে সৃষ্টি পাপের অনুতাপ-তাপ হাহাকার
আর মর্ত্যে শাহারা-গোবী-ছাপ
আমি অশিব তিক্ত অভিশাপ।
ক. কবি কী মানেন না?
খ. ‘যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না’ – একথা বলার কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের সাথে বিদ্রোহী’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিক্টি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সমগ্রভাব ধারণ করেনা”- মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।

 ১ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. কবি কোনো আইন মানেন না।
খ. নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের দুঃখকষ্ট ও আর্তচিৎকার বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কবি বিপ্লব-প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন বোঝাতে তিনি প্রশ্নোক্ত কথা বলেছেন।
অসাম্য ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে কবির বিদ্রোহ নিরন্তর। যেখানেই তিনি অত্যাচার ও অনাচার দেখেছেন, সেখানেই বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। নিপীড়কের বিরুদ্ধে এবং আর্তমানবতার পক্ষে প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন তিনি। তাঁর হুংকারে কেঁপে উঠেছে অত্যাচারীর ক্ষমতার মসনদ। অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলেও উৎপীড়িত মানুষের পক্ষে বিপ্লব-প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। এ বিষয়টিকে স্পষ্ট করতেই তিনি প্রশ্নোক্ত চরণটির অবতারণা করেছেন।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি হচ্ছে বিদ্রোহী চেতনা।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় নানা ব্যঞ্জনায় কবির বিদ্রোহের স্বরূপ ফুটে উঠেছে। যেখানেই অন্যায়-অত্যাচার দেখেছেন, সেখানেই তিনি বিদ্রোহের অগ্নিমন্ত্রে ফুঁসে উঠেছেন। বিশেষ করে পরাধীন মাতৃভূমিতে বিজাতীয় শাসকদের আগ্রাসন ও শোষণ-নির্যাতন তাঁকে পীড়িত করেছে। সংগত কারণেই এই অপশক্তির বিরুদ্ধে দ্রোহ ঘোষণা করেছেন তিনি। বস্তুত, মানুষ হয়ে মানুষের ওপর প্রভুত্ব ফলানো সামন্ত প্রভুদের ধ্বংসের মধ্যেই তিনি মুক্তির নতুন আলো দেখতে পেয়েছেন।
উদ্দীপকের কবিতাংশে বিপ্লবী মানসের বারংবার ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে। কালের খেয়ালে ব্যক্তি মানুষের মৃত্যু হলেও বিপ্লবী চেতনার মৃত্যু নেই। সময় পরিক্রমায় তা একজন থেকে অন্যজনে সঞ্চারিত হয়। ফলে বিপ্লবীর বজ্রকেঠার আহ্বানে পরিবেশ ঘোলাটে হয়ে আসে। শিব বা মহাদেবের ত্রিনয়নও তখন অন্ধকারে ঢেকে যায়। প্রভুত্ব ফলানো নরপিশাচদের জীবন অভিশপ্ত হয়ে ওঠে বিপ্লবীদের প্রত্যাঘাতে। তথাকথিত সামন্ত প্রভুদের কাছে তারা যেন মূর্তিমান অভিশাপে পরিণত হয়। বিপ্লব-বিদ্রোহের এই বিধ্বংসী রূপটি আলোচ্য কবিতায়ও একইভাবে ফুটে উঠেছে। সেখানে বীর ধর্মের অনুসারী কবি সামন্ত প্রভুদের তৈরি সকল নিয়ম ও শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে প্রয়াসী হয়েছেন। অর্থাৎ উদ্দীপক ও ‘বিদ্রোহী’ কবিতা উভয় ক্ষেত্রেই বিদ্রোহী চেতনার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়। এটিই উদ্দীপকের সঙ্গে আলোচ্য কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিক।
ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশে কেবল বিদ্রোহী চেতনার দিকটি ফুটে ওঠায় তা ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সমগ্রভাবকে ধারণ করতে পারেনি।
আলোচ্য কবিতাটি কবির বিদ্রোহী চেতনার এক অনন্য প্রকাশ। বিদ্রোহের স্বরূপ উদ্ঘাটনে কবিতাটি অনন্য মাইলফলকও বটে। তবে এ কবিতায় শুধু দ্রোহ চেতনাই নয়, সেখানে বিদ্রোহী হিসেবে কবির আত্মপরিচয়, প্রেম ও দ্রোহের স্বরূপসহ বিচিত্র বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। এছাড়াও কবিতাটিতে আর্তমানবতার মুক্তির লক্ষ্যে কবি প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
উদ্দীপকের কবিতাংশে বিদ্রোহী চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। অন্যায় ও অসাম্য ঘুচাতে সেখানে বিপ্লবী সত্তার পুনরুত্থানের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। এই বিদ্রোহী সভা অকুতোভয় ও মানবকল্যাণে নিবেদিত। শত প্রতিবন্ধকতাও তার পথ রুদ্ধ করতে পারে না। অন্যায়ের প্রতিভূদের জন্য সাক্ষাৎ অভিশাপ হিসেবে আবির্ভূত হয় সে। আলোচ্য “বিদ্রোহী’ কবিতায়ও কবি তাঁর বিদ্রোহী সত্তার এমন বৈশিষ্ট্যের কথাই তুলে ধরেছেন। যেখানে পরাধীন জন্মভূমিতে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবি দ্রোহ করেছেন সমাজে বিরাজমান অপশাসন ও অচলায়তনের বিরুদ্ধে। তাঁর বিশ্বাস, এই অচলায়তন ভেঙেই একদিন দেখা মিলবে মুক্তির পথ। একইভাবে, উদ্দীপকের কবিতাংশেও কবি মহাবিপ্লবের কথা বলেছেন। অর্থাৎ উভয়স্থানে ববজ্রনির্ঘোষ বিপ্লবের কথা প্রকাশিত হলেও কবিতাটির ব্যাপ্তি উদ্দীপকের কবিতাংশের তুলনায় ব্যাপক। তাছাড়া এ কবিতায় মানবতাবোধে উদ্ভাসিত কবির সদম্ভ উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। মুহূর্তের জন্যও তিনি অপশক্তির কাছে মাথা নিচ করতে রাজি নন। সর্বোপরি কবির বিপ্লব প্রতিবাদের পেছনে রয়েছে মানুষের প্রতি তাঁর অপরিসীম ভালোবাসা। আলোচ্য কবিতার এ সকল বিষয় উদ্দীপকের কবিতাংশে উঠে এসেছে আসেনি। সে বিবেচনায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

২. দুর্বাসা হে! রুদ্র তড়িৎ হান্ছিলে বৈশাখে,
হঠাৎ সে কার শুনলে বেণু কদম্বের ঐ শাখে।
বজ্রে তোমার বাজলে বাঁশি, বহ্নি হলো কান্না, হাসি
সুরের ব্যথায় প্রাণ উদাসী-
মন সরে না কাজে।
তোমার নয়ন-ঝুরা অগ্নি-সুরেও রক্ত-শিখা বাজে!’
ক. কবি নিজেকে কার শিষ্য বলে ঘোষণা করেছেন?
খ. ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ-তূর্য’- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশিত হয়েছে? আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের দুর্বাসা ‘বিদ্রোহী’ কবিতার ক্ষ্যাপা দুর্বাসার স্বরূপ উন্মোচনে সহায়ক কি? যৌক্তিক বিশ্লেষণ করো।

 ২ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. কবি নিজেকে বিশ্বামিত্রের শিষ্য বলে ঘোষণা করেছেন।
খ. প্রেম ও দ্রোহের সমন্বয়ে নিজ অস্তিত্বের স্বরূপ তুলে ধরতেই কবি প্রশ্নোত্ত চরণটির অবতারণা করেছেন।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি। মানবপ্রেম ও সাম্যচেতনা তাঁর কবিতার মূল প্রেরণা। আর তাই যেখানেই অসাম্য ও অনাচার লক্ষ করেছেন, ব্যথিত কবি সেখানেই উচ্চারণ করেছেন দ্রোহের পক্তিমালা। আলোচ্য কবিতাটিতেও কবির দ্রোহ পরাধীনতার শৃঙ্খল এবং অসাম্যের বিরুদ্ধে, যার মুখ্য উদ্দেশ্য মানবমুক্তি। নিপীড়িত মানুষের ক্রন্দন বন্ধ করার প্রয়াসেই তাঁর এই দ্রোহ। কবি সত্তার এই বিদ্রোহী রূপ এবং তার অন্তরালে মানবপ্রেমের বিষয়টি বোঝাতেই কবি প্রশ্নোত্ত চরণটির অবতারণা করেছেন।
গ. উদ্দীপকে আলোচ্য কবিতায় প্রকাশিত বিদ্রোহী কবির রুদ্ররূপের দিকটি প্রকাশিত হয়েছে।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবি সূর্মর দ্রোহের বাণী উচ্চারণ করেছেন। পরাধীনতার শৃঙ্খল এবং সামাজিক ভেদ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে করতে গিয়ে কবি বিধ্বংসী নানারূপে নিজেকে কল্পনা করেছেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, সাম্যের বাণী ঔপনিবেশিক ও শাসকশ্রেণির কর্ণগোচর হবে না। তাই আলোচ্য কবিতাটিতে তিনি এই অত্যাচারী অপশক্তির বিরুদ্ধে অভিশাপ হয়ে ফিরে আসতে চান।
উদ্দীপকের কবিতাংশে দুর্বাসার বুদ্ধরূপের পরিচয় পাওয়া যায়। দুর্বাসার সে রূপে সুরের বাঁশি যেন বজ্র হয়ে যায়, কান্না-হাসির সরল আবেগ নেয় অগ্নিরূপ। আর তার মনোমোহিনী সুরও যেন ম্লান হয়ে যায় অভিঘাতের বেদনায়। দুর্বাসার নয়ন-ঝুরা অগ্নি-সুরে উপস্থিত হয় রক্ত-শিখা। এই চরম ক্ষ্যাপাটে দুর্বাসা তথা দ্রোহের বিধ্বংসী রূপ আলোচ্য ‘বিদ্রোহী’ কবিতায়ও একইভাবে ফুটে উঠেছে। সেখানে কবি কেবল প্রবল বিক্রমে বিদ্রোহ ঘোষণা করেই থেমে থাকেননি, বরং ধ্বংসকামী বিচিত্র রূপে নিজেকে প্রকাশ করেছেন। কবিতায় উঠে আসা বিদ্রোহী কবির রুদ্র রূপটিই প্রকাশিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের দুর্বাসার ধ্বংসাত্মক রূপ ‘বিদ্রোহী’ কবিতার ক্ষ্যাপা দুর্বাসার স্বরূপ উন্মোচনে সহায়ক বলেই আমি মনে করি।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় বিদ্রোহের স্বরূপ উন্মোচন করতে গিয়ে কবি নিজেকে নানা ধ্বংসাত্মক রূপে কল্পনা করেছেন। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে নিজেকে ক্ষ্যাপা দুর্বাসা বলে পরিচয় দেওয়ার মধ্য দিয়ে। কেননা পুরাণ মতে, মুনি দুর্বাসা ছিলেন অত্যন্ত কোপন-স্বভাববিশিষ্ট। তাঁর কোপানলে পড়ে অনেকেই দগ্ধ হন; এমনকি তা থেকে দেবতারাও রেহাই পাননি।
উদ্দীপকের কবিতাংশে দুর্বাসা মুনিকে অবলম্বন করে বিদ্রোহী চেতনার স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। কবির দৃষ্টিতে, দুর্বাসার রুদ্ররূপ দর্শনে সুরের আধার বাঁশি যেন বজ্র হয়ে যায়, কান্না-হাসির সরল আবেগ আগুনের রূপ পায়, এমনকি নয়ন-ঝুরা সুরেও তার রক্ত-শিখা বেজে ওঠে। অর্থাৎ তার প্রভাবে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। উদ্দীপকের কবিতাংশে প্রকাশিত দ্রোহের এই বিধ্বংসী রূপটি আলোচ্য কবিতায় ক্ষ্যাপা দুর্বাসার প্রতীকে উঠে এসেছে।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় বিদ্রোহী হিসেবে কবি তাঁর আত্মপরিচয় দান করেছেন। আর তা করতে গিয়ে তিনি কোপন-স্বভাবের মুনি দুর্বাসার প্রসঙ্গ উপস্থাপন করেছেন। এখানে কবি তাকে অবলম্বন করেছেন ধ্বংসের প্রতীক হিসেবেই। নিজেই বলেছেন যে, তিনি শুধু দুর্বাসা নন; বরং ক্ষ্যাপা দুর্বাসা। উদ্দীপকে আমরা যে দুর্বাসাকে পাই, প্রকৃত অর্থে তিনি এসেছেন ‘বিদ্রোহী’ কবিতার দুর্বাসা চরিত্রের ব্যাখ্যা হিসেবে। আলোচ্য কবিতায় কবি দুর্বাসাকে শুধু ক্ষ্যাপা বলেছেন; কিন্তু তার সেই ক্ষ্যাপা রূপ কেমন হতে পারে তা বলেননি। উদ্দীপকের দুর্বাসার দিকে নজর দিলে আমরা দুর্বাসার প্রকৃত রূপটি খুঁজে পাই। সেদিক থেকে দেখলে উদ্দীপকের দুর্বাসা ‘বিদ্রোহী’ কবিতার ক্ষ্যাপা দুর্বাসার স্বরূপ উন্মোচনে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।

৩. যাহারা পদে পদে আনিয়া দিল লাঞ্ছনা, অপমান, অত্যাচার, নির্যাতন, প্রত্যেক সুযোগে যাহারা হানিল বৈরিতার বিষাক্ত বাণ, হযরত তাঁহাদের সহিত কী ব্যবহার করিলেন? জয়ীর আসনে বসিয়া ন্যায়ের তুলাদ- হাতে লইয়া বলিলেন: ভাইসব, তোমাদের সম্বন্ধে আমার আর কোনো অভিযোগ নাই, আজ তোমরা সবাই স্বাধীন, সবাই মুক্ত। মানুষের প্রতি প্রেমপুণ্যে উদ্ভাসিত এই সুমহান প্রতিশোধ সম্ভব করিয়াছিল হযরতের বিরাট মনুষ্যত্ব।
ক. কবি নিজেকে কাদের মরম বেদনা বলেছেন?
খ. ‘আমি দুর্বার/ আমি ভেঙে করি সব চুরমার’ – ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার বৈসাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের হযরত মুহম্মদ (স.) ও “বিদ্রোহী’ কবিতার কবির মধ্যে পার্থক্য থাকলেও তাঁদের মূলচেতনা একই” – মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

 ৩ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. কবি নিজেকে অবমানিতের মরম বেদনা বলেছেন।
খ. আলোচ্য উত্তিতে কবির বিধ্বংসী রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবি শোষণ-বঞ্চনা ও অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ। পরাধীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বেনিয়া শাসকগোষ্ঠী ও তাদের দোসরদের অপশাসন ও ভেদ-বৈষম্যের জাঁতাকলে পিষ্ট দেশবাসীকে তিনি মুক্ত করতে চান। এ লক্ষ্যেই দুর্বার গতিতে তিনি শোষক ও অত্যাচারীর সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দিতে চান। প্রশ্নোক্ত চরণটিতে বিদ্রোহী কবিসত্তার এমন বিধ্বংসী রূপই প্রতিফলিত হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের মহত্ত্ব ঘোষণার সঙ্গে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার দ্রোহের দিকটি বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি দ্রোহ ও বিক্ষোভে উচ্চকিত। কবিতায় সকল অন্যায়, অনিয়ম ও শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা হয়েছে।
অত্যাচারী, শোষক ও অপশাসনের অবসানে রুদ্ধ মূর্তিতে কবিতার কবির অবস্থান।
উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে ক্ষমা ও মহত্ত্বের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। যারা হ্যরতকে অপমানিত, লাঞ্ছিত করেছেন তিনি সুযোগ পেয়েও তাদের প্রতি কোনো প্রতিশোধ নিলেন না। বরং বৈরিতার বিপরীতে তিনি বন্ধুত্বের ঘোষণা দিয়েছেন। জয়ীর আসনে বসেও তিনি ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করলেন। ঘোষণা করলেন, কারো বিরুদ্ধে তাঁর কোন অভিযোগ নেই। সবাইকে তিনি স্বাধীন ও মুক্ত বলে ঘোষণা করলেন। চিরশত্রুকে এভাবে ক্ষমার মহত্ত্ব প্রদর্শন সত্যিই বিরল। ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি এখানেই উদ্দীপক থেকে পৃথক। কবিতাটিতে অত্যাচারী ও শোষকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাদেরকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত কবি ক্ষান্ত হবেন না বলেও ঘোষণা করেছেন। কিন্তু উদ্দীপকে শত্রুর প্রতি প্রদর্শিত হয়েছে সীমাহীন উদারতা ও ক্ষমার বাণী। কোন প্রতিশোধ স্পৃহা সেখানে স্থান পায়নি।
ঘ. উদ্দীপকের হযরত মুহাম্মদ (স.) ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কবির মধ্যে স্বভাবগত পার্থক্য থাকলেও তাঁদের মূলচেতনা মানবকল্যােণে আবদ্ধ।
‘বিদ্রোহী’ কবিতার কবি মানবসমাজে শান্তি ও স্থিতি প্রতিষ্ঠায় প্রত্যাশী। এজন্য তিনি শোষক, অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে কেঠার হস্ত। উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল বন্ধ করতে তিনি অনমনীয় ও বিদ্রোহী। শোষককে শাস্তি দিয়ে তিনি মানবসমাজে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর।
উদ্দীপকের হযরত মুহম্মদ (স.) বিশ্ব মানবতার এক অতুলনীয় আদর্শ। তাঁর স্বভাব ছিল উদারতা ও মহানুভবতায় পরিপূর্ণ। শত্রুর প্রতিও তিনি ছিলেন দয়ার্দ্র। পদে পদে যারা তাকে অপমান, লাঞ্ছনা, অত্যাচার, নির্যাতন করেছিল বিজয়ী হয়ে তাদের প্রতি তিনি ক্ষমার অমিয় বাণী উচ্চারণ করেন। কতটা মহত্তম হলে এমন ঘোষণা দিতে পারেন তা অভাবনীয়। মানবসমাজে জিঘাংসা দূর করে পরমতসহিষ্ণুতা প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর মূল চেতনা।
‘বিদ্রোহী’ কবিতার কবি স্বভাবে তীব্র ও বিক্ষুব্ধ ছিলেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাঁকে পীড়া দিত। উৎপীড়িত যন্ত্রণা তিনি সহ্য করতে পারতেন না। মানুষের দুর্দশা লাঘবে তিনি কেঠার থেকে কেঠারতর ছিলেন। ভারতীয় ঔপনিবেশিক শাসকের শোষণে তৎকালীন সমাজে মানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল। দুর্বলের ওপর শাসক শ্রেণির অবর্ণনীয় নিষ্পেষণে মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছিল। অধিকার বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে বিদ্রোহ চেতনা ধারণ করেন আলোচ্য কবিতার কবি। তিনি শোষক ও নির্যাতনকারীদের নির্মূল করেই সমাজে স্থিতি ফেরাতে চান। তাঁর এ মূল চেতনা উদ্দীপকের মানবকল্যাণকামী হযরত মুহম্মদ (স.)-এরই চেতনা। যদিও স্বভাবে আলোচ্য কবিতার কবি ও হযরত মুহম্মদ (স.) ভিন্ন ছিলেন, কিন্তু চেতনায় তারা অভিন্ন।

৪. “মুক্তি আলোকে ঝলমল করে আঁধারের যবনিকা
দু’শ বছরের নিঠুর শাসনে গড়া যে পাষাণবেদি
নতুন প্রাণের অঙ্কুর জাগে তারই অন্তর ভেদী।
নব ইতিহাস রচিব আমরা মুছি কলঙ্ক লেখা।”
ক. ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?
খ. কবি নিজেকে ‘অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল’ বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে, তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশটি ‘বিদ্রোহী’ কবিতার মূলভাবকে কতটুকু প্রতিফলিত করতে পেরেছে? যৌক্তিক বিশ্লেষণ করো।

 ৪ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি ‘অগ্নি-বীণা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
খ. নিয়ম-শৃঙ্খলার বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব নয় বলে কবি নিজেকে ‘অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল’ অভিহিত করে শৃঙ্খল ভাঙার বার্তা দিয়েছেন।
পরাধীন ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের জাঁতাকলে মানুষকে নিষ্পেষিত হতে দেখে কবির হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। তিনি দেখেছেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলেই আইন ও বাধ্যবাধকতার বেড়াজালে মানুষকে নাকাল হতে হয়। সংগত কারণেই তিনি আইনের এই বেড়াজাল ভেঙে বেরিয়ে আসতে চেয়েছেন। শুধু তাই নয়, এ লক্ষ্য সামনে রেখেই তিনি অনিয়ম দিয়ে প্রচলিত নিয়মকে এবং উচ্ছৃঙ্খলতা দিয়ে শৃঙ্খলিত ও প্রথাবদ্ধ জীবনব্যবস্থাকে ভাঙতে চেয়েছেন। এজন্যই কবি নিজেকে ‘অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল’ বলে অভিহিত করেছেন।
গ. উদ্দীপকে ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় উঠে আসা ধ্বংসের মধ্য দিয়ে নতুনের সূচনার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় নিরন্তর বিদ্রোহের বাণী উচ্চারিত হলেও তা লক্ষ্যহীন নয়। কবি জন্মজন্মান্তরে শুধু বিদ্রোহই করে যাবেন, বিষয়টি এমন নয়; বরং তাঁর ঈজ্জিত শোষণ ও বঞ্চনাহীন সমাজ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে এ বিদ্রোহেরও অবসান ঘটবে। এছাড়াও তিনি বিদ্রোহ করতে গিয়ে বারবার ধ্বংসকামী মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন, নিজেকে নানা বিধ্বংসী রূপে কল্পনা করেছেন। তবে তাঁর এই বিধ্বংসী রূপ সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই চালিত।
উদ্দীপকের কবিতাংশে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন-শোষণের অবসান কামনা করা হয়েছে। কবি মনে করেন, সেদিন হয়তো খুব দূরে নয়, যখন এ অন্ধকার যুগের পরিসমাপ্তির মধ্য দিয়ে আলো ঝলমলে নতুন দিনের সূচনা হবে। জাতীয় জীবনের কলঙ্করেখা মুছে গিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে সেদিন, সূচনা হবে সোনালি ভবিষ্যতের। আলোচ্য ‘বিদ্রোহী’ কবিতায়ও কবি এ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। কবি সেখানে অত্যাচারী ব্রিটিশ রাজশক্তিসহ সকল অপশক্তির ধ্বংস কামনা করেছেন। পাশাপাশি তিনি স্বপ্ন দেখেছেন শোষণ-বঞ্চনাহীন এক নতুন পৃথিবীর। সকল অশুভকে মুছে দিয়ে সেই নতুন দিনের প্রত্যাশাতেই তাঁর নিরন্তর সংগ্রাম-বিদ্রোহ। সে বিবেচনায় উদ্দীপকটিতে আলোচ্য কবিতায় উঠে আসা ধ্বংসের মধ্য দিয়ে নতুন দিনের সূচনার দিকটিই ফুটে উঠেছে।
ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশটি ‘বিদ্রোহী’ কবিতার মূলভাবকে আংশিক প্রতিফলিত করতে পেরেছে।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে কবির দ্রোহের স্বরূপ ফুটে উঠেছে। এ কবিতায় পরাধীন ভারতবর্ষের সমস্যাসংকুল আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে বিপর্যস্ত জাতির মুখপাত্র হিসেবে কবি নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসাই কবিকে এমন অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। সর্বোপরি, কবিতাটিতে তিনি অপশক্তির কুপ্রভাব দূর করে একটি বৈষম্যহীন ও শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছেন।
উদ্দীপকে দুইশ বছরের ব্রিটিশ শাসন-শোষণের অন্ধকার অধ্যায়কে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দেওয়া হয়েছে। মুক্তির আলোকে জাতীয় জীবন ঝলমলে হয়ে ওঠার প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়েছে সেখানে। কবির বিশ্বাস, ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের পাষাণবেদি একদিন ধ্বংস হবেই, সূচনা হবে নতুন দিনের। একইভাবে, ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কবিও অপশাসন ও সামাজিক অচলায়তনের বিরুদ্ধে দ্রোহ করেছেন। তবে কবির ধ্বংসকামী বিদ্রোহী রূপটি শোষণ-নির্যাতনবিহীন এক নতুন পৃথিবী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই চালিত।
‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও আলোচ্য উদ্দীপক উভয়ক্ষেত্রেই অপশক্তির ধ্বংস কামনা করা হয়েছে। তবে এই ধ্বংসের মূল উদ্দেশ্য বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হওয়া। তবে এটিই আলোচ্য কবিতার একমাত্র বিষয় নয়। কেননা, এ বিষয়টি ছাড়াও সেখানে কবির দ্রোহের স্বরূপ এবং এর অন্তর্গত প্রেরণা হিসেবে মানবতাবোধকে চিহ্নিত করা হয়েছে। উদ্দীপকের কবিতাংশে এ সকল বিষয়ের উল্লেখ নেই। তাছাড়া কবিতাটির বিস্তৃত পরিসরে উঠে আসা নানা চিত্রকল্প এবং পৌরাণিক অনুষঙ্গের যে ব্যবহার আমরা দেখতে পাই, উদ্দীপকের কবিতাংশে তা অনুপস্থিত। সে বিবেচনায় উদ্দীপকটি আলোচ্য কবিতার আংশিক ভাবকে প্রতিফলিত করে।

৫. তুমিই আমার মাঝে আসি
অসিতে মোর বাজাও বাঁশি,
আমার পূজার যা আয়োজন
তোমার প্রাণের হবি।’
ক. অর্ফিয়াসের পিতা এ্যাপোলো ছাড়া অন্য কে হতে পারে বলে মত পাওয়া যায়?
খ. ‘আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সূত বিশ্ব-বিধাতৃর’- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ফুটে ওঠা বিদ্রোহের বীজ ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সাথে কীভাবে সম্পর্কিত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘প্রেম ও দ্রোহের সমন্বয় উদ্দীপক ও ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় সমান্তরালরূপে প্রকাশিত হয়েছে’ – বিশ্লেষণ করো।

 ৫ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. অর্ফিয়াসের পিতা এ্যাপোলো ছাড়া থ্রেসের রাজা ইগ্রাস হতে পারে বলে মত পাওয়া যায়।
খ. অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী চেতনার ধারক হিসেবে কবি নিজেকে বিশ্ববিধাতার বিদ্রোহী পুত্র বা সুত বলে অভিহিত করেছেন।
পরাধীন ভারতবর্ষে তখন আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে সমাজে শক্ত আসন গেড়েছে অন্যায়-অত্যাচার ও বৈষম্য। সরে কারণেই সমাজে জেঁকে বসা এই বৈষম্য ও অচলায়তনকে ভাঙতে চেয়েছিলেন কবি। এ লক্ষ্যেই তিনি উচ্চারণ করেন দ্রোহের পরিমাণ। তাঁর এই দ্রোহ কোনো নির্দিষ্ট গ-িতে আবদ্ধ নয়। অত্যাচারীর বিরুদ্ধে তিনি বিধ্বংসী রূপ নিয়ে আবির্ভূত হন। বিদ্রোহী চেতনার ধার হিসেবে অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে তাঁর এই নিরন্তর দ্রোহের বিষয়টি বোঝাতেই কবি নিজেকে বিশ্ব-বিধাতার বিদ্রোহী-সুত বা ধীর পর বলে অভিহিত করেছেন।
গ. উদ্দীপকে ফুটে ওঠা বিদ্রোহের বীজ অর্থাৎ প্রেমানুভূতির দিকটি কবির বিদ্রোহের প্রেরণা হিসেবে প্রতীয়মান হওয়ার দিক থেকে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সাথে সম্পর্কিত।
‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি পরাধীনতা ও অচলায়তনের বিরুদ্ধে কবির দুর্মর দ্রোহের বহিঃপ্রকাশ। আত্মানুসন্ধানী কবি পরাধীন ভারতবর্ষের শৃঙ্খলিত জীবন ও বৈষম্যকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন নিবিড়ভাবে। সংগত কারণেই আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক এই অচলায়তনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, কবির দ্রোহের বীজ লুকিয়ে আছে তাঁর প্রেমানুভূতিতে। মানুষের প্রতি ভালোবাসাই তাঁকে ঘোরে পথে চালিত করেছে।
উদ্দীপকের কবিতাংশে প্রেয়সীর প্রতি কবির গভীর ভালোবাসা ব্যক্ত হয়েছে। কবির বিদ্রোহী সত্তা প্রেয়সীর অনুরাগের স্পর্শেই প্রেমিক সভায় পরিণত হয়েছে। পক্ষান্তরে, প্রিয়ার প্রেমই তাঁর বিদ্রোহের অনুঘটক। অর্থাৎ বিদ্রোহী কবি প্রেমিক কবিরই রূপান্তর মাত্র। একইভাবে, আম সত্তার পরিচয় দিতে গিয়ে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কবি বলেছেন- “মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ-তূর্য।’ অর্থাৎ প্রেম এবং দ্রোহ্ এ দুয়ের সমন্বয়েই কবির অস্তিত্ব পূর্ণতা লাভ করে। মানুষের প্রতি ভালোবাসার কারণেই তিনি দ্রোহ করেছেন। সংগত কারণেই কবির এই দ্রোহ তার প্রেমিক সত্তারই ভিন্ন রূপ। উদ্দীপকের কবিতাংশেও দ্রোহের মাঝে প্রেমের সন্নিবেশ ঘটতে দেখা যায়। সে বিবেচনায় উদ্দীপকে ফুটে ওঠা বিদ্রোহের বীজ তথা প্রেমানুভূতি কবির বিদ্রোহের প্রেরণা হিসেবে আলোচ্য কবিতার সাথে সম্পর্কিত।
ঘ. প্রেম ও দ্রোহের সাবলীল প্রকাশ দেখে বলা যায় যে, উক্তিটি যথার্থ।
‘বিদ্রোহী’ কবিতার মূলসুর বিদ্রোহী চেতনা হলেও সেই বিদ্রোহের বীজ লুক্কায়িত আছে প্রেমে। কেননা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে কেউ অন্যের দুঃখ-বেদনা নিজের মাঝে অনুভব করতে পারে না। কবিও তার ব্যতিক্রম নন। তিনি সর্বগ্রাসী বিদ্রোহী রূপ ধারণ করেছেন মূলত প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই। মানুষের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসাই তাঁকে দ্রোহের পথে চালিত করেছে।
উদ্দীপকের কবিতাংশে কবির প্রেমানুভূতির প্রকাশ ঘটেছে। কবির প্রেয়সীর করস্পর্শে তাঁর বিদ্রোহের বা যুদ্ধের অসি বাঁশিতে রূপ নেয়। অর্থাৎ কবির কাছে অসি আর বাঁশি সমার্থক; যখন যেটা প্রয়োজন, তখন সেটার ব্যবহার করেছেন তিনি। তবে কবির অস্তিত্বজুড়ে রয়েছে তাঁর প্রেমিক সত্তা। এই প্রেমিক সত্তাই তাকে দুর্মর দ্রোহের পথ দেখিয়েছে, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ‘বিদ্রোহী’ কবিতায়। বিদ্রোহী রূপে তাঁর যে বিধ্বংসী রূপ, তা মূলত প্রেমময় একটি সুন্দর পৃথিবী বিনির্মাণের লক্ষ্যে। তাই কবির কাছে প্রেম আর দ্রোহ সমার্থক। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় ও উদ্দীপকে যুগপৎ প্রেম ও দ্রোহ প্রকাশিত হয়েছে। আসলে যার হৃদয়ে প্রেম নেই, তার পক্ষে বিদ্রোহী হয়ে ওঠা সম্ভব নয়। আলোচ্য কবিতার কবির ক্ষেত্রেও বিদ্রোহের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে মানবপ্রেমকে কেন্দ্র করেই। অর্থাৎ নিপীড়িত মানুষের হাহাকারই কবিকে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে। উদ্দীপকের কবিতাংশেও আমরা কবিচিত্তের প্রেমময় রূপটি প্রত্যক্ষ করি। প্রেয়সীর ভালোবাসার নিমগ্ন কবির যুদ্ধের অসিই যেন রূপ নেয় বাঁশিতে, তাঁর অন্তরে বেজে চলে সেই মোহন বাঁশির সুর। অর্থাৎ আলোচ্য কবিতা বা উদ্দীপকের কবিতাংশ উভয় ক্ষেত্রে দ্রোহের অন্তরালে কবিদ্বয়ের প্রেমময় রূপটিই প্রতিভাত হয়। সে বিবেচনায় প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথাযথ।

৬. “আমার এ কূল ভাঙিয়াছে যেবা আমি তার কূল বাঁধি,
যে গেছে বুকেতে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি।
যে মোরে দিয়েছে বিষে-ভরা বাণ,
আমি দেই তারে বুকভরা গান;
কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম-ভর,-
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।
ক. কাকে ঘৃনটি বলা হয়?
খ. কবি নিজেকে ‘অর্ফিয়াসের বাঁশরী’ বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশের সঙ্গে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার বৈসাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উদ্দীপকের কবিতাংশে প্রতিফলিত চেতনা যেন ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কবির চেতনার প্রতিরূপ।’- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

 ৬ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. শিব বা মহাদেবকে ধূর্জটি বলা হয়।
খ. বাঙালি জাতিকে বিদ্রোহের অগ্নিমন্ত্রে জাগ্রত করার মানসে কবি গ্রিক পুরাণে উল্লিখিত মহান শিল্পী অর্ফিয়াসের বাঁশির সাথে নিজের তুলনা করেছেন।
অর্ফিয়াস গ্রিক পুরাণের একজন মহান কবি ও শিল্পী। তিনি যন্ত্রসংগীতে সকলকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতেন। শুধু তাই নয়, সুরের ইন্দ্রজাল সৃষ্টি করে তিনি ভালোবাসার পাত্রী ইউরিডিসের মন জয় করেছিলেন। কবির প্রত্যাশা, অর্ফিয়াসের বাঁশির সুরের মতো তাঁর বিদ্রোহের সুরও মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যাবে। সে সুরে বিদ্রোহের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হবে দেশবাসী। মিলবে কাঙ্ক্ষিত মুক্তি। এমন ভাবনা থেকেই কবি নিজেকে অর্ফিয়াসের বাঁশি বলে অভিহিত করেছেন
গ. মূল উদ্দেশ্য অভিন্ন হলেও উদ্দীপকের কবিতাংশ ও আলোচ্য কবিতার বৈসাদৃশ্যপূর্ণ দিক হলো দুজন কবি সমস্যা সমাধানে সম্পূর্ণ। ভিন্ন পথ অবলম্বন করেছেন।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় সমাজে জেঁকে বসা অপশাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। এখানে কবি অত্যাচারীর অত্যাচারের অবসান চান। এজন্য তিনি বিদ্রোহীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এক্ষেত্রে উৎপীড়িত জনতার ক্রন্দনরোল যতদিন পর্যন্ত থাকবে ততদিন তাঁর বিদ্রোহী সভাও শান্ত হবে না।
উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি পরার্থপরতার মধ্যেই যে ব্যক্তির প্রকৃত সুখ ও জীবনের সার্থকতা নিহিত সে বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। সমাজ-সংসারে বিদ্যমান বিভেদ-হিংসা-হানাহানি দ্বারা আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও কবির কণ্ঠে প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার বিপরীতে ব্যক্ত হয়েছে প্রীতিময় পরিবেশ সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা। সেজন্য তিনি তাঁর পরম শত্রুকে শুধু ক্ষমা করেই ক্ষান্ত হননি বরং তার উপকারে আত্মনিয়োগ করেছেন। অর্থাৎ, একজন সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান শত্রুর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে, আর অন্যজন অত্যাচারীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এখানেই উদ্দীপকের কবিতাংশের সঙ্গে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার বৈসাদৃশ্য।
ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশে প্রতিফলিত চেতনার মূলে রয়েছে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা, যা ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কবির চেতনার প্রতিরূপ।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে আত্মজাগরণে উন্মুখ কবির সদম্ভ আত্মপ্রকাশ লক্ষ করা যায়। তাঁর বিদ্রোহ মূলত সামাজিক বৈষম্য ও উৎপীড়নকারীর বিরুদ্ধে। তিনি সমাজের উৎপীড়িত জনতার ক্রন্দনরোল না থামা পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতেই তিনি সকল অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন।
উদ্দীপকের কবিতাংশে সমাজের হিংসা-বিদ্বেষের বিপরীতে ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। এখানে কবি তাঁর পরম শত্রুকে কেবল ক্ষমা করেই নয়, বরং প্রতিদান হিসেবে অনিষ্টকারীর উপকার করার মাধ্যমে পৃথিবীকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করতে চেয়েছেন। যে কবিকে বিষেভরা বাণ দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করেছে কবি তাকে বুকভরা গান দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন। আবার যে তাঁকে কাঁটা দিয়ে গেছে তাকে তিনি ফুল দিয়েছেন। কিন্তু ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় এর বিপরীত চিত্র লক্ষ করা যায়।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় শত্রুর প্রতি কবির ক্রোধের বিপরীতে, আলোচ্য কবিতাংশের কবি ভালোবাসা দিয়ে শত্রুকে জয় করতে চেয়েছেন। অর্থাৎ একজন অত্যাচারীর প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেছেন এবং অন্যজন অত্যাচারীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। আপাত দৃষ্টিতে তাঁদের মধ্যে পার্থক্য দেখা গেলেও তাঁরা মূলত একই উদ্দেশ্যকে ধারণ করেন, আর তা হলো সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা। সমাজকে বৈষম্যমুক্ত করতে একজন বিদ্রোহী ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেও অন্যজন প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন। সুতরাং উদ্দেশ্যগত দিক বিচারে উদ্দীপকের কবিতাংশে প্রতিফলিত চেতনা ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কবির চেতনার প্রতিরূপ হয়ে উঠেছে।

৭. যে ব্যক্তির হৃদয় অভাবী, অসহায়, নিঃস্ব, এতিম ও দুর্বলকে দেখে আপ্লুত হয় না, কষ্টে চিত্ত ব্যথিত হয় না; তার মনে প্রেম নেই, মায়া নেই, কোনো মমতা নেই। যার মনে মানবপ্রেম নেই, মসজিদ কিংবা মন্দিরে গিয়ে যতই ফ্রন্দনরত অবস্থায় থাকুক; সৃষ্টিকর্তার প্রেম সে পাবে না, পেতে পারে না, সৃষ্টিকর্তা সবার প্রতিই করুণা করেন কিন্তু প্রেম সবার ললাটে জোটে না।
ক. কবি নিজেকে কার মরম বেদনা বলেছেন?
খ. ‘আমি চেঙ্গিস’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে প্রতিফলিত চেতনা ‘বিদ্রোহী’ কবিতার ক্ষেত্রে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে? বিশ্লেষণ করো।

 ৭ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. কবি নিজেকে অবমানিতের মরম বেদনা বলেছেন।
খ. কবি নিজের মাঝে বিধ্বংসী যোদ্ধা চেঙ্গিস খানকে কল্পনা করে নিজের বিদ্রোহ ও সংগ্রামকে নতুন মাত্রা দিতে প্রয়াসী হয়েছেন। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবি নানা বিধ্বংসী চরিত্রকে অবলম্বন করে তাঁর দ্রোহের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। এক্ষেত্রে কখনো পুরাণ আবার কখনো ঐতিহাসিক অনুষঙ্গে ভর করে কবি তাঁর ধ্বংসকামী সত্তার পরিচয় জ্ঞাপন করেছেন। এরই অংশ হিসেবে কবি নিজেকে দূর্র্ধষ মোঙ্গল যোদ্ধা ও সেনাপতি চেঙ্গিস খানরূপে কল্পনা করেছেন। চেঙ্গিস খান অত্যন্ত নৃশংস ছিলেন। আলোচ্য কবিতায় কবি নিজেকে চেঙ্গিস খান রূপে কল্পনা করে মূলত অপশক্তিকে ধ্বংসের বার্তা দিতে চেয়েছেন।
গ. উদ্দীপকে ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় প্রকাশিত দ্রোহের অন্তরালে কবির মানবপ্রেমের দিকটি প্রকাশিত হয়েছে।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবির বিদ্রোহী সত্তার স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। তিনি বিদ্রোহ করেছেন শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়-অত্যাচার ও সামাজিক অচলায়তনের বিরুদ্ধে। এর মূলে রয়েছে নিপীড়িত মানুষের প্রতি কবির অকৃত্রিম ভালোবাসা। বস্তুত, একটি সুখী ও শান্তিপূর্ণ সময় বিনির্মাণের লক্ষ্যেই কবির এই দ্রোহ।
উদ্দীপকে মানবপ্রেমকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বক্তা মনে করেন, যে ব্যক্তির মনে মানুষের প্রতি ভালোবাসা নেই, মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখে যার হৃদয় বিগলিত হয় না, পরম স্রষ্টার আশীর্বাদ থেকে সে বঞ্চিত থেকে যায়। অর্থাৎ, মানুষকে ভালোবাসার মধ্য দিয়েই সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহের পথ প্রশস্ত হয়। অন্যদিকে, ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবি অন্যায়-অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে লেখনী ধারণ করেছেন। নিপীড়িত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার লক্ষ্যেই কবির এই বিদ্রোহ। এর মূলে রয়েছে তাদের প্রতি কবির অকৃত্তি ভালোবাসা। আলোচ্য উদ্দীপকেও মানুষকে ভালোবাসার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সে বিবেচনায় উদ্দীপকটিতে আলোচ্য করিতর কবির মানবপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
ঘ. উদ্দীপকটিতে উঠে আসা মানবপ্রেমের চেতনা ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় নিপীড়িত মানুষের প্রতি কবির ভালোবাসার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে।
‘বিদ্রোহী’ কবিতার মূলসুর বিদ্রোহী চেতনা হলেও সেই বিদ্রোহের বীজ লুক্কায়িত আছে প্রেমে। কেননা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা ন থাকলে কেউ অন্যের দুঃখ-বেদনা নিজের মাঝে অনুভব করতে পারে না। কবিও তার ব্যতিক্রম নন। তিনি সর্বগ্রাসী বিদ্রোহী রূপ ধারণ করেছেন মূলত প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে। মানুষের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসাই তাঁকে দ্রোহের পথে চালিত করেছে।
উদ্দীপকে মানুষকে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। উদ্দীপকটির বক্তা মনে করেন, স্রষ্টার অনুগ্রহ লাভের জন্য সর্বাগ্রে মানুষকে ভালোবাসতে হবে। অন্যথা সেই ব্যক্তি মসজিদ-মন্দিরে গিয়ে যতই কান্নাকাটি করুক তা গ্রহণযোগ্য হবে না। তাছাড়া যে ব্যক্তির মনে আর্ত-পীড়িত মানুষের প্রতি করুণা তৈরি হয় না, মানুষের অসহায়ত্ব দেখে যার মন কাঁদে না মানবিকতাবিবর্জিত সেই ব্যক্তি মানুষের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে। এভাবে আলোচ্য উদ্দীপকটিতে মূলত মানবপ্রেমের চেতনাই ফুটে উঠেছে।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় দ্রোহের অন্তরালে নিপীড়িত মানুষের প্রতি কবির গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বস্তুত, সামাজিক অচলায়তন ও ভেদ-বৈষম্য দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই পরাধীনতার শৃঙ্খলকে ভাঙতে চেয়েছেন তিনি। নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই তাঁর এই নিরন্তর সংগ্রাম। কবিহৃদয়ের প্রগাঢ় মানবিকবোধই এর কারণ। একইভাবে, আলোচ্য উদ্দীপকটিতেও মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমে পরম স্রষ্টার অনুগ্রহ লাভের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সেখানে মানবপ্রেমের জয়গানই ধ্বনিত হয়েছে, যা আলোচ্য কবিতারও অন্যতম বিষয়। সে বিবেচনায় উদ্দীপকের প্রতিফলিত মানবপ্রেমের চেতনা ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় নিপীড়িত মানুষের প্রতি কবির ভালোবাসার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে।

৮. কারবালা ময়দানে ইমাম হোসেন তাঁর বাহাত্তরজন সঙ্গীসহ নৃশংস হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন। শত অনুরোধ ও ভয-ভীতি উপেক্ষা করে তিনি সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করেছেন। মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন, কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। সকলেই যখন অর্থলোভে, রাজ্যলোভে বা মৃত্যুভয়ে ইয়াজিদের বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে, তখন তিনি একাই ইয়াজিদি শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন।
ক. কাজী নজরুল ইসলাম কোথা থেকে নিম্ন প্রাইমারি পাস করেন?
খ. কবি নিজেকে ‘মহা-প্রলয়ের নটরাজ’ বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সাদৃশ্য কোন দিক থেকে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “চির-উন্নত মম শির’ – উদ্ভিটিতে প্রকাশিত আদর্শবোধই উদ্দীপকের ইমাম হোসেনের মাঝে প্রতিফলিত হয়েছে- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

 ৮ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. কাজী নজরুল ইসলাম গ্রামের মক্তব থেকে নিম্ন প্রাইমারি পাশ করেন।
খ. নটরাজ শিবের মতো ধ্বংসলীলা চালিয়ে অপশক্তি নাশ করে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই করি নিজেকে মহা-প্রলয়ের নটরাজ বলেছেন।
ভারতীয় পুরাণ মতে, নৃত্যকলার উদ্ভাবক হিসেবে মহাদেব শিবের আর এক নাম নটরাজ। তাঁর ধ্বংসের সময়কার নৃত্যকে তা-ব নৃত্য বলা হয়। গজাসুর ও কালাসুরকে নিধন করে তিনি তা-ব নৃত্য করেছিলেন। কবিও পুরাণের সে ঐতিহ্য স্মরণ করে সমকালীন প্রেক্ষাপটে অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীসহ সকল প্রকার অপশক্তিকে ধ্বংস করতে চেয়েছেন। তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে নিজেকে তিনি মহা-প্রলয়ের নটরাজ বলে অভিহিত করেছেন।
গ. অপশক্তির বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাবের দিক থেকে উদ্দীপকের সাথে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবি অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। সেসময় পরাধীন ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক শাসনের জাঁতাকলে প্রতিনিয়ত নিষ্পেষিত হচ্ছিল মানুষ। নিপীড়িত মানুষের সেই আর্তনাদ ব্যথিত করে কবিচিত্র্যকে। সংগত কারণেই সমাজসচেতন কবি তাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সগর্বে উচ্চারণ করেন দ্রোহের পঙক্তিমালা। ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি তারই ফল।
উদ্দীপকে সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠায় ইমাম হোসেনের সংগ্রামের কথা বলা হয়েছে। সঙ্গী-সাথিদের নিয়ে কারবালা ময়দানে এক অন্যায় যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছেন তিনি। তবুও রাজশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ইয়াজিদ বাহিনীর অন্যায়কে কখনো মেনে নেননি, বশ্যতা স্বীকার করেননি তার কাছে। আলোচ্য ‘বিদ্রোহী’ কবিতায়ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রায় একইরূপ দৃঢ়তা লক্ষ করা যায়। সেখানে অপশক্তির বিনাশ কামনায় কবি বিধ্বংসী নানা পৌরাণিক চরিত্রকে অবলম্বন করেছেন। কবিতাটিতে তিনি অন্যায়ের অবসান না হওয়া পর্যন্ত তাঁর এই সংগ্রাম অব্যাহত রাখার ঘোষণা শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মানবমুক্তির এই সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন তিনি। অর্থাৎ, আলোচ্য কবিতা এবং উদ্দীপকে বিরুদ্ধ শক্তির কাছে মাথা নত না করার দৃঢ়তা লক্ষ করা যায়। এদিক থেকে উদ্দীপকের সাথে আলোচ্য কবিতাটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. প্রশ্নোত্ত উদ্ভিটিতে ফুটে ওঠা আদর্শবোধ তথা অপশক্তির কাছে মাথা নত না করার দৃঢ়তা উদ্দীপকের ইমাম হোসেনের চরিত্রে বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় ফুটে ওঠা দ্রোহ নিছক মানবমনের ক্ষোভ বা দুঃখের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং এক আদর্শবোধের নামান্তর। এ কবিতার ছত্রে দর্শবোধই প্রতিফলিত হয়েছে। এখানে কখনো কবি ধ্বংসের প্রতীক, কখনো তিনি প্রেমের প্রতীক, কখনো বা মানবতাবাদের প্রতীক হয়ে অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে দ্রোহ করেছেন তিনি। এক্ষেত্রে কবির আপসহীন মনোভাবের পরিচয় মেলে।
উদ্দীপকের ইমাম হোসেন ইয়াজিদি রাজশক্তির অন্যায়, অবিচার ও অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। যেখানে রাজশক্তির অধীনস্থ রাষ্ট্রীয় বাহিনী ছিল সুবিশাল, সেখানে মাত্র বাহাত্তর জন সঙ্গী নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে তিনি অসম যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। এক্ষেত্রে হার জিত তাঁর কাছে মুখ্য ছিল না; আদর্শ প্রতিষ্ঠাই ছিল মূল লক্ষ্য। একইভাবে, ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কবিও সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। অত্যাচারিত ও নিপীড়িত মানুষের পক্ষে প্রতিবাদী কণ্ঠ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় এবং উদ্দীপকে যুগপৎভাবে অপশক্তির বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করার কথা বর্ণিত হয়েছে। মলত একটি আদর্শবোধকে কেন্দ্র করেই চালিত হয়েছে; আর তা হলো- সাম্যচেতনা ও ন্যায়। এ আদর্শকে ধারণ করেই ইমাম হোসেন এবং আলোচ্য কবিতার কবি বিদ্রোহ করেছেন। পরাজয়ের সম্ভাবনা জেনেও মানমর্যাদা প্রতিষ্ঠার পিছপা হননি। অর্থাৎ, শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তাঁরা ছিলেন আপসহীন। আলোচ্য কবিতার উদ্ভিটিতে এ ভাবাদর্শই প্রতিফলিত হয়েছে। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

৯. আরাফ ছোটবেলা থেকেই একরোখা। সে যা ভাবে, তাই করে। মা-বাবার শাসন-বারণ মানে না। লেখাপড়ায় মনোযোগ নেই; কিন্তু পাড়া-প্রতিবেশীর যেকোনো সমস্যায় সে সবার আগে এগিয়ে আসে। সেবার পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে কিশোর বয়সি আরাফের প্রচেষ্টায় আগুন লাগা ঘরে আটকে পড়া তিন বছর বয়সি শিশু অমিতের জীবন রক্ষা পায়। আরাফ কোনোকিছুকেই পরোয়া করে না।
ক. ডমরু কী?
খ. “শির নেহারি’ আমারি, নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির” ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘আরাফ যেন ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কবির মানসপুত্র’- উক্তিটির যথার্থতা বিচার করো।

 ৯ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. ‘ডমরু’ হচ্ছে ডুগডুগি জাতীয় একপ্রকার বাদ্যযন্ত্র।
খ. “শির নেহারি’ আমারি, নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির’’ – কথাটির মধ্য দিয়ে আত্মজাগরণে উন্মুখ কবির সদম্ভ আত্মপ্রকাশ ঘোষিত হয়েছে।
আলোচ্য কবিতার কবি বীর ধর্মের অনুসারী। আত্মপ্রত্যয়ী বীরের চিত্র সর্বদাই সমুন্নত। সংগত কারণেই কবির এই বীর সত্ত্বা কোনোকিছুকে পরোয়া করে নাঃ ধ্বংসের দামামা বাজিয়ে এগিয়ে যায় নতুন সৃষ্টির লক্ষ্যে। কবি মনে করেন, আত্মগৌরবে বলীয়ান তাঁর সেই সসম্ভ বিরোচিত রূপ অবলোকন করে হিমাদ্রি তথা হিমালয়ও যেন মাথা নত করে। প্রশ্নোত্ত চরণটির মধ্য দিয়ে এ বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।
গ. উদ্দীপকে ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় প্রকাশিত কবির দৃঢ়চেতা মনোভাব এবং মানবপ্রেমের দিকটি প্রকাশিত হয়েছে।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় নানাভাবে বিদ্রোহ ও বিদ্রোহীর আদর্শের কথা বর্ণিত হয়েছে। স্বীয় আদর্শ ও চেতনাবোধে অবিচল থাকার প্রেরণা এ কবিতা থেকে পাওয়া যায়। কবি বিপ্লব-প্রতিবাদ করতে করতে কখনো দুর্বার হয়ে সবকিছু ভেঙে চুরমার করে ফেলতে চান, আবার কখনো বিধ্বংসী রূপ ধারণ করে বিশ্বকে ধ্বংসযজ্ঞ বানাতে চান; কিন্তু তিনি আদর্শে ও চেতনায় অবিচল। তিনি যা কিছু করেন, তা মূলত সমাজের মালের কথা ভেবেই করেন।
উদ্দীপকের আরাফ ছোটোবেলা থেকেই একরোখা। মা-বাবার শাসন-বারণ সে মানে না। ঠিকমতো লেখাপড়া না করায় নিজের ভবিষ্যৎ জীবন হুমকির মুখে ফেলে দেয় সে। তা সত্ত্বেও মানুষের বিপদে-আপদে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও এগিয়ে যায় সে। এক্ষেত্রে আগুনের সর্বগ্রাসী বিধ্বংসী রূপও তাকে আটকাতে পারে না। একইভাবে, আলোচ্য ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কবিও সামাজিক অচলায়তনের বিরুদ্ধে উদ্দীপকের আরাফের মতোই দুর্বার। বিরাজমান অসাম্য ও অনিয়মের বেড়াজালকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে এগিয়ে যেতে চান তিনি। তবে তিনি এ সবকিছুই করেন একটি আদর্শ ও চেতনাবোধ থেকে; আর তা হলো মানবতাবোধ। অর্থাৎ উদ্দীপকের আরাফ এবং ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কবি উভয়েই দৃড়চেতা মনোভাবের অধিকারী এবং মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। এদিক বিবেচনায় উদ্দীপকটিতে আলোচ্য কবিতায় প্রকাশিত কবির মানবপ্রেম ও দৃঢ়চেতা মনোভাবের প্রতিফলন ঘটেছে।
ঘ. জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানবকল্যাণে ঝাঁপিয়ে পড়ার দিক থেকে উদ্দীপকের আরাফকে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কবির মানসপুত্র বলা যায়।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবি নিরন্তর বিদ্রোহের বাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি প্রচলিত নিয়মকানুনের বেড়াজাল ভেঙে ফেলার লক্ষ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়চেতা মনোভাব রাখেন। ধ্বংসের মধ্য দিয়ে নতুন দিনের সূচনাই কবির মূল লক্ষ্য। এসবের পেছনে কবিমনে একটি বিষয়ই ক্রিয়াশীল, আর তা হলো দেশ ও দশের কল্যাণ।
উদ্দীপকের আরাফ একরোখা স্বভাবের। সে মা-বাবার শাসন-বারণ মানে না। ঠিকমতো লেখাপড়াও করে না; অর্থাৎ সে নিজের ব্যক্তিগত উন্নতি ও সফলতার বিষয়ে অনেকটাই উদাসীন। অথচ সে-ই আবার সবার বিপদে-আপদে এগিয়ে আসে, তথা মানবকল্যাণের প্রশ্নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এমনকি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও অন্যের জীবন বাঁচাতে সে বন্ধপরিকর। এ বিষয়ে আরাফ যেন ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কবি মানসেরই অনুসারী।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় ফুটে ওঠা দ্রোহের অন্তরালে কবি মানবতাবোধের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এ কবিতায় তিনি সকল অসংগতি ও ভেদ-বৈষম্য দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পরাধীনতার শৃঙ্খলকে ধ্বংস করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। আর্ত-নিপীাড়ত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই তাঁর এই নিরন্তর সংগ্রাম। উদ্দীপকের আরাফের মাঝেও আলোচ্য কবিতার কবির এই মানবতাবোধের আদর্শই প্রতিফলিত হয়েছে। অর্থাৎ এ কবিতায় কবি যেমন মানবপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে অসাম্য দূর করতে প্রয়াসী হয়েছেন, তেমনি উদ্দীপকের আরাফও জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে কবির মতো মানুষকে ভালোবাসে বলেই। সংগত কারণেই তাকে কবির যোগ্য উত্তরসূরিও বলা চলে। সে বিবেচনায় প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথাযথ।

১০. (র) “দুই হাত কাটা তবু শের-নর আব্বাস,
পানি আনে মুখে, হাঁকে দুশমনও সাব্বাস!”
(রর) “দ্রিম দ্রিম্ বাজে ঘন দুন্দুভি দামামা,
হাঁকে বীর “শির দেগা, নেহি দেগা আমামা।”
ক. কবিকে রুষে উঠতে দেখে কী ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে নিভে যায়?
খ. কবি নিজেকে পৃথিবীর অভিশাপ বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপক (র)-এ ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপক (রর)-এর কবিতাংশটি ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কবির আপসহীন মনোভাবের সমার্থক’ বিশ্লেষণ করো।

 ১০ নং প্রশ্নের উত্তর 
ক. কবিকে রুষে উঠতে দেখে সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে নিভে যায়।
খ. সমাজে বিরাজমান অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে তাঁর বিধ্বংসী রূপ বোঝাতেই কবি নিজেকে পৃথিবীর অভিশাপ বলে উল্লেখ করেছেন।
পরাধীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ রাজশক্তি তখন জগদ্দল পাথরের মতো এদেশবাসীর ওপর চেপে বসেছে। অত্যাচারী এই শাসকগোষ্ঠীর অপশাসনে সমগ্র দেশই যেন নরকে রূপান্তরিত হয়েছে। এদের ধ্বংস করতে হলে এক ভয়ানক রুদ্রের প্রয়োজন, যে এদের সাজানো বাগানকে তছনছ করে দিতে পারে। কবি নিজেই সেই রুদ্ররূপ ধারণ করে অত্যাচারীর জন্য মহাপ্রলয় আনতে চেয়েছেন। তিনি যেন সাক্ষাৎ অভিশাপ, যিনি অত্যাচারী ও শোষকের সাম্রাজ্যকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবেন। এমন মনোভাব থেকেই নিজেকে তিনি পৃথিবীর অভিশাপ বলেছেন।
গ. উদ্দীপক (র)-এ ‘বিদ্রোহী’ কবিতার ফুটে ওঠা দিকটি হলো লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত প্রাণপণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবি নানা উপমায় ও প্রকরণে তাঁর বিদ্রোহী চেতনাকে মূর্ত করে তুলেছেন। সামাজিক নানা অসংগতি ও অত্যাচার নির্যাতনের চিত্র কবিকে দুর্বার বিদ্রোহী করেছে। কিন্তু বিপ্লব-প্রতিবাদ বরাবরই প্রবল বাধার সম্মুখীন হয়, তবে তাতে বিপ্লবী থেমে যায় না। তাকে অবধারিতভাবেই লক্ষ্য পানে এগিয়ে যেতে হয়। আর তাই কবি বিদ্রোহ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও অন্যায়-অত্যাচারের অবসান না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।
উদ্দীপক (র)-এ আব্বাস নামের এক বীরপুরুষের অদম্য মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। নিজের দুই বাহু হারানো সত্ত্বেও দমে যায়নি সে। সকল বাধা অতিক্রম করে হাত বিহীন শরীর নিয়েই পানি আনতে এগিয়ে যায় সে। তার এমন দৃঢ়তা দেখে দুশমনরাও বাহবা না দিয়ে থাকতে পারে না। একইভাবে, ‘বিদ্রোহী’ কবিতায়ও কবির অদম্য মনোভাবের পরিচয় মেলে। কবির বর্ণনামতে, বিদ্রোহ করতে করতে তিনি ক্লান্ত হয়ে গেলেও শান্ত হতে রাজি নন। অত্যাচার ও অসাম্য ঘোচানোর মাধ্যমে মানবমুক্তির পথ প্রশস্ত করাই তাঁর দ্রোহের লক্ষ্য। এ লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবিরাম লড়াই চালিয়ে যেতে চান তিনি। তাঁর এমন অদম্য মনোভাবের দিকটি উদ্দীপক (র)-এর আব্বাস চরিত্রেও পরিলক্ষিত হয়। সে বিবেচনায় লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে আলোচ্য কবিতার কবির দৃঢ়চেতা মনোভাব এবং প্রাণপণ প্রচেষ্টার দিকটিই উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।
ঘ. সর্বাবস্থায় স্বীয় আদর্শ ও চেতনাবোধে স্থির থাকা এবং অন্যায় শক্তির কাছে মাথা নত না করার দিক থেকে প্রশ্নোত্ত উক্তিটিকে যথার্থ বলে মনে করা যায়।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবি বিদ্রোহকে একটি আদর্শ ও চেতনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কবি মনে করেন, বিদ্রোহী হতে হলে ব্যক্তিকে ইতিবাচক আদর্শবোধে উদ্বুদ্ধ হতে হবে এবং অপশক্তির কাছে মাথা নত না করার মতো চারিত্রিক দৃঢ়তা থাকতে হবে। তাঁর বিশ্বাস, বিদ্রোহীর আদর্শ ও দৃঢ়তার কাছে হিমালয় চূড়ার মতো পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গকেও তুচ্ছ বলে মনে হবে।
উদ্দীপক (রর)-এর কবিতাংশে দেখা যায়, শত্রুসৈন্যের সঙ্গে বীরযোদ্ধার লড়াই চলছে। চারদিকে যুদ্ধের দামামা বাজছে। শত্রুসৈন্যের প্রবল আঘাতে বীরের মস্তক ধড় থেকে আলাদা হলেও আদর্শের প্রশ্নে সে কোনোমতেই মাথা নত করবে না, অর্থাৎ মৃত্যুও তাকে আদর্শচ্যুত করতে পারবে না। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায়ও প্রায় একইরূপ দৃঢ় মনোভাবের পরিচয় মেলে। তাই কবি নিরন্তর বিদ্রোহ করে যান নিপীড়ক অপশক্তির বিরুদ্ধে। অর্থাৎ বীরধর্ম বা আদর্শবোধের ক্ষেত্রে তিনি আপসহীন।
‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবির বিদ্রোহী সত্তার স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে। বৈষম্য ও শৃঙ্খলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী এই কবিসত্তা দুর্দমনীয় ও বিধ্বংসী। এ মূল প্রেরণা কবির মানবতাবোধ। মানবপ্রেমের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই তিনি বিদ্রোহ করেছেন অনাচার ও অসাম্যের বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে তিনি আপসহীন মনোভাব পোষণ করেন। একইভাবে, উদ্দীপক (রর)-এর কবিতাংশে উল্লিখিত বীর প্রয়োজনে জীবন দিতেও প্রস্তুত, কিন্তু আত্মসম্মানবোধকে বিসর্জন দিতে মোটেও রাজি নয় সে। অর্থাৎ ‘বিদ্রোহী’ কবিতা এবং উদ্দীপক (রর)-এর কবিতাংশের কবিদ্বয় আদর্শবোধ ও মর্যাদার প্রশ্নে আপসহীন। তারা কোনোমতেই অপশক্তির কাছে মাথা নত করবে না। এদিক বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।