You dont have javascript enabled! Please enable it!

HSC – BANGLA 1ST – 52 AR DEN GULI – CQ

 অনুশীলন অংশ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বর্ণবাদ, বৈষম্য আর নিপীড়নের কারণে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এক সময় ফুঁসে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকার কালো মানুষগুলো। এদের পুরোধা ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। আন্দোলন নস্যাৎ করতে শুরু হয় নির্যাতন। তাঁকে পুরে দেয়া হয় জেলে। সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় তাঁকে। পাথর ভাঙার মতো সীমাহীন পরিশ্রমের কাজ করতে গিয়ে একসময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু এ সময় এ পাষাণ হৃদয়ের মানুষগুলোর পাশাপাশি কিছু ভালো মনের মানুষও ছিলেন সেখানে যাদের ভালোবাসা, মমত্ববোধ আর সেবায় সিক্ত হয়েছেন তিনি। অবশেষে দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগের পর তাঁর মুক্তি মেলে।
ক. “বায়ান্নর দিনগুলো” রচনায় বর্ণিত মহিউদ্দিন সাহেব কোন রোগে ভুগছিলেন?
খ. ‘মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে’ লেখক এ কথা বলেছিলেন কেন?
গ. উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে “বায়ান্নর দিনগুলো” রচনায় লেখকের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি তুলে ধর।
ঘ. প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও চেতনাগত ঐক্যই নেলসন ম্যান্ডেলা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একসূত্রে গেঁথেছে উদ্দীপক ও “বায়ান্নর দিনগুলো” রচনার আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর। ১



১ নং প্রশ্নের উত্তর

 প্লুরিসিস রোগে ভুগছিলেন।

 বিশ্বের ইতিহাসে কোনো শাসকই ভাষার জন্য আন্দোলনকারীদের হত্যা করেনি। অথচ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এ কাজ করে অপরিণামদর্শিতার প্রমাণ দিয়েছে। এজন্যই লেখক বলেছিলেন, “মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে।”
 পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন বার বার ঘোষণা করছিল উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তখন বাঙালিরা প্রতিবাদ করে। ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের প্রস্তুতি নিলে শাসকগোষ্ঠী ১৪৪ ধারা জারি করে। বাঙালিরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করলে পুলিশ মিছিলে গুলি করে কয়েকজনকে হত্যা করে। ফলে এ আন্দোলন আরো চরম আকার ধারণ করে। সাধারণ জনগণ আন্দোলনে সমর্থন ও যোগদান করে। রাজবন্দিদের মুক্তি চেয়ে স্লোগান দেয়া হয়। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, শ্লোগান দেয়া হয়। অবশেষে শাসকগোষ্ঠী রাজবন্দিদের মুক্তি ও বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। অর্থাৎ, লেখক প্রমাণ করেছেন, মানুষ হত্যা ছিল শাসকগোষ্ঠীর ভুল- যার জন্য তাদের পতন হয়।

 ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র লেখক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শাসকদের শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে বন্দি হন এবং কিছু মানবিক মানুষের সহযোগিতা ও ভালোবাসা পান। যেটি নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
 ‘বায়ান্নর দিনগুলো’তে শেখ মুজিবের জেলজীবন ও মুক্তি লাভের স্মৃতি বিবৃত হয়েছে। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী লেখকসহ অনেককে রাজবন্দি হিসেবে জেলে বন্দি করে। এমতাবস্থায় লেখক অনশন করেন। ক্রমশ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন সিভিল সার্জনসহ বেশকিছু আমলা তাকে অনশন ভাঙতে বোঝান এবং মমত্ববোধ ও ভালোবাসা প্রদর্শন করেন। অবশেষে দুই বছর তিনমাস পর তাঁর মুক্তি মেলে।
 উদ্দীপকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা নেলসন ম্যান্ডেলার কারাজীবন বর্ণিত হয়েছে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন নস্যাৎ করতে শাসকগোষ্ঠী ম্যান্ডেলাকে জেলে পাঠায় এবং নির্যাতন করে। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে কিছু ভালো মনের মানুষের ভালোবাসা ও সেবা পান। এরপর ২৭ বছর কারাভোগের অবসান ঘটে। শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন, কারাভোগ, বন্দি অবস্থায় সেবা পাওয়া এবং দীর্ঘদিন পর মুক্তির বিষয়গুলো উদ্দীপকের ম্যান্ডেলা এবং ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ এর লেখকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

 নেলসন ম্যান্ডেলা ও বঙ্গবন্ধুর আন্দোলনের প্রেক্ষাপট যথাক্রমে বর্ণবৈষম্য ও ভাষার দাবি-এদিক থেকে তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কিন্তু শাসকের শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনের দিক থেকে দু’জনের মধ্যেই ঐক্য পরিলক্ষিত হয়।
 ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে আলাদা হয়ে পড়ে। যেহেতু শাসকগোষ্ঠী ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি তাই তারা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার ঘোষণা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলন চরমে ওঠে। এ সময় শাসক গোষ্ঠী অনেক রাজনীতিবিদকে কারাবন্দি করে। শেখ মুজিবও ছিলেন রাজবন্দিদের অন্যতম। তাঁকে প্রায় সাতাশ-আটাশ মাস কারাভোগ করতে হয়।
 উদ্দীপকে নেলসন ম্যান্ডেলার ২৭ বছর কারাভোগের উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি কারাভোগ করেছেন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন করে। কারাভোগ অবস্থায় তাঁকে পাথর ভাঙার মতো পরিশ্রমী কাজও করতে হয়েছে। কিন্তু তিনি সেখানে অনেকের সেবা, ভালোবাসা ও মমতা পেয়েছেন। এরপর তিনি মুক্তিও পেয়েছেন।
 উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বিষয়ভিত্তিক দিক থেকে পার্থক্য থাকলেও কর্মকাণ্ড ও ঘটনার দিক থেকে তাদের মধ্যে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। দু’জনই শোষকের বিরুদ্ধে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য বন্দি হন। কারা অভ্যন্তরে অনেকের সেবা-সহযোগিতা পান এবং দীর্ঘদিন পর মুক্তি পান।

 অতিরিক্ত অনুশীলন (সৃজনশীল) অংশ

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
রানা প্লাজা ধসের পর ক্ষতিগ্রস্ত কিছু শ্রমিক তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য আন্দোলন করে আসছিল। পুলিশ এদের লাঠিপেটা করে কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায়। এর মধ্যে শ্রমিক নেতা সাঈদও ছিল। সাঈদ জেলহাজতেই অনশন করে এবং বাইরে আন্দোলন ক্রমশ প্রকট আকার ধারণ করে। অবশেষে প্রশাসন সাঈদকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
ক. জেলের ভেতর শেখ মুজিবের সঙ্গে কে ছিলেন?
খ. “আপনাদের সাথে আমাদের মনোমালিন্য হয় নাই।”কাদের সাথে, কেন মনোমালিন্য হয়নি?
গ. উদ্দীপকের সাঈদের সাথে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র কোন চরিত্রটির সাদৃশ্য রয়েছে তা বর্ণনা কর।
ঘ. ‘দাবি আদায়ে আন্দোলনের বিকল্প নেই’- উদ্দীপক ও ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর। ১



২ নং প্রশ্নের উত্তর

 জেলের ভেতর শেখ মুজিবের সাথে মহিউদ্দিন আহমদ ছিলেন।

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমদের সাথে জেল কর্তৃপক্ষের কোনো মনোমালিন্য হয়নি।
 ভাষা আন্দোলনের জন্য শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিনকে রাজবন্দি করা হয়। জেলের ভেতর তারা অনশন ধর্মঘট করলে সুপারিনটেনডেন্ট ও ডেপুটি জেলার তাদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন। তখন তারা সুপারিনটেনডেন্ট ও ডেপুটি জেলারকে বলেন, আপনাদের বিরুদ্ধে তো অনশন করছি না। সরকার বিনা অপরাধে বছরের পর বছর আটকে রাখছে, তারই প্রতিবাদ করার জন্য অনশন করছি। সরকারের হুকুমেই আপনাদের চলতে হয়। আপনাদের সাথে তাই আমাদের কোনো মনোমালিন্য নেই।

 উদ্দীপকের সাঈদের সাথে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র শেখ মুজিবের চরিত্রটির সাদৃশ্য রয়েছে।
 ভাষা-আন্দোলন শুরু হলে শেখ মুজিবুর রহমান রাজবন্দি হিসেবে আটক হন। এরপর তিনি সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদে অনশন ধর্মঘট করেন, ঢাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হয় এবং কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। এদিকে বঙ্গবন্ধুর অনশন চলতেই থাকে। এরপর মুক্তির আদেশ এলে তিনি অনশন ভঙ্গ করেন।
 উদ্দীপকের সাঈদ অধিকার আদায়ে আন্দোলন করে এবং আটক হয়। জেলের ভেতর সে অনশন করে এবং পরবর্তীতে মুক্তি পায়। এসব ঘটনা বায়ান্নর দিনগুলোর শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সুতরাং উদ্দীপকের সাঈদের সাথে বায়ান্নর দিনগুলোর শেখ মুজিবুর রহমানের সাদৃশ্য রয়েছে।

 আন্দোলন করতে গিয়ে আটক এবং পরবর্তীতে আন্দোলন জোরদার হলেই মুক্তি ও দাবি আদায় হয়। উদ্দীপক ও ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ থেকে এ কথা প্রমাণিত হয়েছে।
 ‘বায়ান্নর দিনগুলো’তে ভাষা-আন্দোলনের ফলে শাসকগোষ্ঠীর ভিত নড়ে ওঠে। এ আন্দোলনকে ঠেকাতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করলে পুলিশ মিছিলে গুলি করলে শহিদ হন বেশক’জন। এছাড়া ও জেলহাজতে শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমদ অনশন করেন। সব মিলিয়ে আন্দোলন জোরদার হয়।
 উদ্দীপকের গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণের ন্যায্য দাবি করে। দাবি না মানায় আন্দোলন করলে পুলিশ লাঠিপেটা করে কয়েকজনকে আটক করে। আটককৃতরা জেলে অনশন করে। ফলে আন্দোলন আরো বেগবান হয়।
 উদ্দীপক ও ‘বায়ান্নর দিনগুলো’তে প্রাথমিক আন্দোলনে শাসকের নির্যাতনের শিকার হয় সাধারণ মানুষ ও আন্দোলনকারীরা। অবশেষে আন্দোলন জোরদার হলেই কেবল দাবি আদায় হয়েছে। মুক্তি পেয়েছে বন্দিরা। অতএব, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, দাবি আদায়ে আন্দোলনের বিকল্প নেই।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী হল উদ্ধারে আন্দোলন করতে গেলে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয়। গোলযোগ চরম আকার ধারণ করলে তরিকুলসহ কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে। পরের দিন ঢাকা থেকে বাগেরহাট জেলে নিয়ে যাওয়া হবে জেনে ইচ্ছে করে গড়িমসি শুরু করে তরিকুল। সে ভাবে রওনা দিতে দেরি হলে যদি পরিচিত কারো সাথে দেখা হয় তবে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানানো যাবে।
ক. কবে ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিনকে ফরিদপুরের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়?
খ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিনকে কেন নারায়ণগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়?
গ. উদ্দীপকের তরিকুলের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাদৃশ্য নির্ণয় কর।
ঘ. জেল থেকে স্থানান্তরের খবর শুনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ইচ্ছে করে দেরি করাটা রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচায়ক- উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর। ১



৩ নং প্রশ্নের উত্তর

 ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিনকে ফরিদপুরের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।

 সকাল এগারোটায় জাহাজ ধরতে না পারায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিনকে নারায়ণগঞ্জ ঘাট থেকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
 ঢাকা থেকে ফরিদপুরে জেলখানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে জাহাজে করে গোয়ালন্দ ঘাটে যেতে হয়। একটা জাহাজ ছিল সকাল ১১টায়। অন্যটি রাত ১টায়। সামান্য দেরি হওয়ায় ১১টার জাহাজ ধরতে না পারায় রাত ১টা পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিনকে নারায়ণগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

 দাবি আদায়ে পুলিশের হাতে আটকা পড়া এবং ঢাকা জেল থেকে জেলা শহরে স্থানান্তর হওয়ার দিক থেকে তরিকুলের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা-আন্দোলনের সময় ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে ছিলেন। আন্দোলনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে মহিউদ্দিনসহ তাকে ঢাকা থেকে সরিয়ে নেয়ার আদেশ এলে ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা কোথায় যাচ্ছে তা অন্যান্য নেতাকর্মী যেন জানতে পারে সেজন্য তিনি ইচ্ছে করেই গোছগাছ হতে বেশি সময় নিচ্ছিলেন।
 উদ্দীপকের তরিকুল হল উদ্ধারের আন্দোলনে পুলিশের হাতে আটক হয় এবং তাকে শেখ মুজিবের মতোই জেলা শহরের জেলে স্থানান্তর করা হয়। তরিকুল ইচ্ছে করেই গোছগাছ হতে বেশি সময় নেয় যাতে করে তার পরিচিত কাউকে তার গন্তব্যস্থানের কথা জানাতে পারে। অতএব, বিষয় দুটির দিক থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সথে তরিকুলের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

 আকস্মিকভাবে জেল থেকে স্থানান্তরের খবর শুনে তাৎক্ষণিকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সিদ্ধান্ত নেন সময় বেশি নেয়ার যাতে করে পরিচিত কাউকে গন্তব্যস্থলের কথা জানানো যায়। সিদ্ধান্তটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের উপস্থিত-বুদ্ধি ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে।
 ১৫ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিনকে ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত এলে বঙ্গবন্ধু ভাবেন তারা কোথায় যাচ্ছে সেটা নেতাকর্মীদের জানানো দরকার। তাই তিনি তাঁর কাপড়চোপড়, বই-খাতা, টাকা-পয়সা ইত্যাদি গোছগাছ করতে বেশি সময় নিলেন। আবার ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে এসেও খানিকটা দেরি করলেন যে পরিচিত কাউকে দেখা যায় কি-না।
 উদ্দীপকের তরিকুলকে যখন ঢাকা থেকে বাগেরহাটের জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয় সেও প্রস্তুত হতে ইচ্ছে করে দেরি করছিল যেন পরিচিতি কাউকে জানানো যায় যে, তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
 আমরা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ এবং উদ্দীপকের চরিত্রে একই ধরনের উপস্থিত-বুদ্ধির পরিচয় পাই। যার মধ্যে তাদের উভয়েরই রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় মেলে। সুতরাং বলা যায়, জেল থেকে স্থানান্তরের খবর শুনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ইচ্ছে করে দেরি করাটা তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচায়ক।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে রাজবন্দি হয় নজরুল। জেলের মধ্যে অনশন করলে তাঁকে প্রথমে অনশন ভাঙানোর জন্য বোঝানো হয়। এরপর নাকের মধ্যে নল ঢুকিয়ে তরল খাবার খাওয়ানো হয়। এভাবে ক্রমশ নাকের ভেতর ঘা হয়ে যায় নজরুলের। তবুও মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত অনশন ভাঙে না। তিনি আস্তে আস্তে অতিশয় দুর্বল হয়ে পড়েন।
ক. অনশনের আগে শেখ মুজিব কী খেয়েছিলেন?
খ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লেবুর রস দিয়ে লবণ পানি খেলেন কেন?
গ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নাকের মধ্যে নল দিয়ে খাওয়ানো উদ্দীপকের আলোকে বর্ণনা কর।
ঘ. কারাবন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিছানা থেকে ওঠার শক্তি হারানোর বিষয়টি উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর। ১



৪ নং প্রশ্নের উত্তর

 অনশনের আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পেট পরিষ্কার করার ওষুধ খেয়েছিলেন।

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনশনরত অবস্থায় লেবুর রস দিয়ে লবণ পানি খেয়েছিলেন। কারণ এতে কোনো ফুডভ্যালু ছিল না।
 অনশনরত অবস্থায় মহিউদ্দিন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। এমতাবস্থায় তাঁদেরকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নাকের ভেতর দিয়ে নল ঢুকিয়ে তরল খাবার খাওয়ানো হয়। তাঁদের নাকের ভেতর ঘা হয়ে যায়। ফলে তাঁরা ফুডভ্যালু নেই এমন খাবার হিসেবে কাগজি লেবুর রস দিয়ে লবণ পানি খেতেন।

 জেলে অনশনরত অবস্থায় জেল-কর্তৃপক্ষ জোর করে নাকের মধ্যে নল দিয়ে তরল খাবার খাওয়ায়। আর এর সাদৃশ্য আমরা উদ্দীপকেও দেখতে পাই।
 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অনশনরত অবস্থায় কারা-কর্তৃপক্ষ নাকের ভেতর নল দিয়ে তরল খাবার খাওয়ায়। কেননা, রাজবন্দিরা যেন মারা না যায়। মরতেও দেবে না আবার মুক্তিও দেবে না। এমতাবস্থায় নাকের মধ্যে ঘা হয়ে যায়। পরে ইচ্ছে করে তিনি লেবুর রস দিয়ে লবণ পানি খান।
 উদ্দীপকের নজরুলকে প্রথমে কারা-কর্তৃপক্ষ অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন। অকৃতকার্য হওয়ায় তাকে নাকের মধ্যে নল দিয়ে তরল খাবার খাওয়ানো হয়। অর্থাৎ যে-কোনোভাবে না খাওয়ালে বন্দি মারা যাবে। তাই শেষ পর্যন্ত নল দিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। এদিক থেকে প্রবন্ধ ও উদ্দীপকের মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

 মুক্তির জন্য অনশন করার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শারীরিক অবস্থার দিন দিন অবনতি হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁর অবস্থা এমন হলো যে, তিনি আর বিছানা থেকে উঠতে পারলেন না।
 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালে কারাবন্দি অবস্থায় মুক্তির জন্য অনশন শুরু করেন। তিনি ও মহিউদ্দিন আমরণ অনশন করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁদের অবস্থা নাকাল হয়ে পড়ে। তাঁরা ফুডভ্যালু নেই এমন খাবার যেমন-লেবুর রস দিয়ে লবণ মেশানো পানি খেতেন। তবে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁদের নাকের ভেতর নল দিয়ে তরল খাবার খাওয়ায়। এতে তাঁদের নাকের ভেতর ঘা হয়ে যায় এবং তাঁরা আরো নিস্তেজ হয়ে পড়েন।
 উদ্দীপকের নজরুল আন্দোলনে আটক হলে এ অন্যায় আটক থেকে মুক্তি পেতে অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। কারাকর্তৃপক্ষ তাঁকে নাক দিয়ে নল ঢুকিয়ে খাবার পেটে ভরে দেয়। তবুও তার শারীরিক অবস্থা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। তাঁর প্রতিজ্ঞা মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত অনশন ভাঙবেন না।
 উদ্দীপক ও ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র কারাবন্দিদের শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতির বিষয়টি একসূত্রে গাঁথা। কেননা, ‘বায়ান্নর দিনগুলো’তে রাজবন্দি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে-পন্থা অবলম্বন করেছিলেন উদ্দীপকের নজরুলও একই পন্থা অবলম্বন করেন। সুতরাং উদ্দীপকের নজরুলের নাকের ভেতরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতোই ঘা হয় এবং শরীর ক্রমশ এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে, বিছানা থেকে ওঠার শক্তিও হারিয়ে ফেলেন।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সিরাজগঞ্জ জেলের ভেতর থেকেই হাবিব খবর পেলেন ঢাকায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। এদিকে জেলগেটে ছাত্র-ছাত্রী মিছিল করছে। “গণতন্ত্র মুক্তি পাক” এবং সরকারের পতন এবার হবেই ভেবে হাবিব মনে মনে বলে, এ ভুলের কারণেই শাসকচক্র ক্ষমতাচ্যুত হবে।
ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হার্টের অবস্থা খারাপের জন্য কী হয়?
খ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গোপনে কয়েদিকে দিয়ে কাগজ আনালেন কেন?
গ. উদ্দীপকের গুলি খেয়ে মরার ঘটনাটি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র সাথে কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ?-ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে।”কথাটি উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর। ১



৫ নং প্রশ্নের উত্তর

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হার্টের অবস্থা খারাপের জন্য নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হয় এবং প্যালপিটিশন হয়।

 কারাবন্দি অবস্থা এবং তাঁদের অবস্থান জানাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গোপনে কয়েদিকে দিয়ে কাগজ আনালেন।
 অনশনের কারণে শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিনের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল; বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা নেই। আর দু’এক দিন পর বোধ হয় মারা যাবেন। এ ভেবে শেখ মুজিব এক কয়েদিকে দিয়ে গোপনে কয়েক টুকরা কাগজ আনালেন তার অবস্থা তার বাবা, তার স্ত্রী, শহিদ সোহরাওয়ার্দী ও ভাসানী সাহেবকে জানানোর জন্য।

 ১৯৫২ সালে ভাষা-আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্রছাত্রী মিছিল বের করলে পুলিশ মিছিলে গুলি করে কয়েকজনকে হত্যা করে। ফলে আন্দোলন আরো চরম আকার ধারণ করে।
 পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন ঘোষণা করে, ‘উর্দুই হবে সমগ্র পাকিস্তানের মাতৃভাষা’ তখন পূর্ব পাকিস্তানি বাঙালিরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবি করে। এ নিয়ে আন্দোলনের এক পর্যায়ে শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশে মিছিলে গুলি করে কয়েকজনকে হত্যা করা হয়।
 উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন চরমে উঠলে সাধারণ মানুষকে দমাতে শাসকগোষ্ঠী তাদের গুলি করে। এতে বেশ কয়েকজন ছাত্র শহিদ হন। ঘটনাটি বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’তেও দেখা যায়। এখানে তিনি বর্ণনা করেছেন, ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল বের করলে পুলিশ কয়েকজনকে গুলি করে হত্যা করে। সুতরাং উভয় ঘটনা প্রায় একই রকম একথা যথার্থই বলা যায়।

 কথাটি দ্বারা শাসকের অদূরদর্শিতার কথা বোঝানো হয়েছে। ভাষার জন্য আন্দোলনরত মানুষের ওপর গুলি, ১৪৪ ধারা জারি, সিংহভাগ মানুষের ভাষাকে অবজ্ঞা করা-এসব সিদ্ধান্ত ছিল ভুল। যার ফলে সরকারের পরাজয় ঘটে।
 ভাষার জন্য মানুষ হত্যা করা সত্যিই অমানবিক। অথচ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মাতৃভাষা যখন উপেক্ষিত হতে যাচ্ছিল তখন আন্দোলন করে বাঙালিরা। সে আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ১৪৪ ধারা জারি, নির্বিচারে গণহত্যা, গণগ্রেফতার ইত্যাদি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছিল। ফলে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে ওঠে।
 উদ্দীপকের হাবিব আন্দোলনরত অবস্থায় গুলি করে শাসক কর্তৃক সাধারণ জনগণকে হত্যার কথা শুনে দূরদৃষ্টিতে ভাবলেন সরকারের পরাজয় এবার নিশ্চিত। কেননা, দফায় দফায় সরকার ভুল করছে। সুতরাং সাধারণ জনগণ সরকারের এত বড় অন্যায় মেনে নেবে না।
 অতএব দেখা যায় যে, প্রবন্ধের “মানুষের যখন পতন হতে থাকে তখন পদে পদে ভুল করে” কথাটি সত্যে পরিণত হয়েছিল, যেমনটি উদ্দীপকেও ধারণা করা হয়।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
অং সাং সূচি অনেকদিন কারাভোগ ও অনশনের এক পর্যায়ে মৃতপ্রায় হয়ে গেলেন। জেল-কর্তৃপক্ষ তাঁকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তাঁর সহবন্দি তাকে জুস খাইয়ে অনশন ভাঙান। অন্যদিকে তাঁর দলের বেশক’জন জ্যেষ্ঠ নেতাকে বন্দি ও নির্যাতন করা হচ্ছে। নিরুপায় অং সাং সূচি জেলগেটের বাইরে বেরিয়ে দেখলেন তার বাবা তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন।
ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতে থাকলে একজন কয়েদি কী করল?
খ. “অনেক লোক আছে, কাজ পড়ে থাকবে না”। কথাটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের অং সাং সূচির সহবন্দি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র কোন চরিত্রকে প্রতিফলিত করে? বর্ণনা দাও।
ঘ. “উদ্দীপকের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বন্দি ও নির্যাতনের মতো ঘটনা প্রবন্ধেও ঘটেছে- বিশ্লেষণ কর। ১



৬ নং প্রশ্নের উত্তর

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতে থাকলে একজন কয়েদি তাকে সরিষার তেল মালিশ করে দিচ্ছিলেন।

 জেলে অনশনরত অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মৃতপ্রায় হয়ে পড়লে কর্তব্যরত ডাক্তারের এক প্রশ্নের উত্তরে মুজিব এ কথাটি বলেন।
 জেলবন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের শারীরিক অবস্থা যখন নিস্তেজ প্রায় তখন ডাক্তার বললেন, ‘এভাবে মৃত্যুবরণ করে কি কোনো লাভ হবে? বাংলাদেশ যে আপনার কাছে অনেক কিছু আশা করে।” ডাক্তারের এ প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেন।

 উদ্দীপকের অং সাং সূচির সহবন্দি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’র মহিউদ্দিনকে প্রতিফলিত করে।
 ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ প্রবন্ধে জেলবন্দি হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন সহবন্দি হিসেবে থাকেন। তাঁরা দুজনই অনশন করেন এবং মুক্তির শর্তেই কেবল অনশন ভাঙবেন বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের মুক্তির আদেশ আসে। তখন মহিউদ্দিন বঙ্গবন্ধুকে ডাবের পানি খাইয়ে অনশন ভাঙান।
 উদ্দীপকে অং সাং সূচি অনশন করে মুমূর্ষুপ্রায়। এমতাবস্থায় তাঁকে মুক্তির আদেশ এলে তিনি অনশন ভাঙতে রাজি হন এবং তাঁর সহবন্দি তাঁকে জুস খাইয়ে অনশন ভাঙান। অং সাং সূচির সহবন্দির এ ঘটনাটি প্রবন্ধের মহিউদ্দিন চরিত্রকে প্রতিফলিত করে।

 ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ প্রবন্ধে মুক্তির প্রাক্কালে শেখ মুজিব জানতে পারেন তাঁর দলের জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীদের আটক করে নির্যাতন করা হয়।
 জেলবন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খবরের কাগজে দেখতে পান তর্কবাগীশ, খান সাহেব, আবুল হোসেনসহ বেশ ক’জন নেতা শাসকগোষ্ঠীর হাতে আটক হয়েছেন। মুক্তির প্রায় প্রাক্কালে এসে জানতে পারেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা- যেমন মওলানা ভাসানী, শামসুল হকসহ আরো অনেককেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
 উদ্দীপকে অং সাং সূচির কারাবন্দির শেষ অবস্থায় তাঁকে যখন মুক্তি দেয়া হবে তখন তাঁর দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক করা হয়। তাছাড়াও তাঁদের ওপর নির্যাতনের মাত্রাও বৃদ্ধি করা হয়।
 প্রবন্ধ ও উদ্দীপকে আমরা প্রায় অনুরূপ ঘটনা দেখতে পাই। অর্থাৎ, কনিষ্ঠ নেতাকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক ও নির্যাতন করার বিষয়টি লক্ষণীয়। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের বন্দি ও রাজবন্দিদের নির্যাতনের বিষয়টি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ প্রবন্ধেও লক্ষ করা যায়।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বিনা বিচারে অনেকদিন জেলবন্দিত্বের পর মুক্তি পেলেন রাজনীতিবিদ সৈয়দ শামসুর রহমান। ফিরে এলেন বাড়িতে। অনেক দিন না দেখে নিজের ছেলেও ভুলে গেছে তাকে। সৈয়দ সাহেব মুক্তি পেলেও সারাদেশে আন্দোলন আরো চরমে ওঠে। গ্রামের হাটবাজারে পর্যন্ত হরতাল ধর্মঘট পালিত হয়।
ক. জনমতের বিরুদ্ধে যেতে কারা ভয় পায়?
খ. “আব্বা রাজবন্দিদের মুক্তি চাই, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”হাসু বাবার গলা জড়িয়ে কেন এ কথা বলেছিল?
গ. ‘অনেক দিন না দেখলে নিজের ছেলেও ভুলে যায়’উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্য বর্ণনা কর।
ঘ. ছোট ছোট হাটবাজারে পর্যন্ত হরতাল হয়েছে- কথাটি দ্বারা আন্দোলনের তীব্রতা উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর। ১



৭নং প্রশ্নের উত্তর

 জনমতের বিরুদ্ধে যেতে শাসকেরা ভয় পায়।

 একুশে ফেব্রুয়ারি হাসু ও শেখ পরিবার ঢাকায় ছিল বলে এই স্লোগান শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। তাই বাবাকে পেয়েই হাসু স্লোগানটি শুনিয়েছিল।
 জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাড়িতে এলে বড় সন্তান শেখ হাসিনা বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিল, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, রাজবন্দিদের মুক্তি চাই। কেননা, একুশে ফেব্রুয়ারি এসব স্লোগান ঢাকার অলিতে-গলিতে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। আর হাসুরা ঢাকায় থাকার ফলে এ স্লোগানের সাথে পরিচয় হয়ে গিয়েছিল। ফলে রাজবন্দিত্ব থেকে মুক্ত হয়ে বাড়িতে এলেই হাসু বাবাকে স্লোগানটি শুনিয়েছিল।

 কথাটির দ্বারা একজন রাজনীতিবিদ পিতার করুণ আফসোসের কথা বর্ণিত হয়েছে- যার অনুরূপ কথা উদ্দীপকেও উদ্ধৃত হয়েছে।
 ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ প্রবন্ধে একজন রাজনীতিবিদ বাবার অসহায় নির্মম ও বাস্তব আফসোসের আর্তি ফুটে উঠেছে। মজলুম জনগণের অধিকার আদায়ে রাজবন্দি থাকতে হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। আর তাই সাতাশ-আটাশ মাস পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন তিনি। ছেলে কামালের বয়স মাত্র কয়েক মাস। বাবাকে অনেকদিন না দেখে ছেলেও ভুলে গেছে উনি তার কী হন। ‘হাসু আপা তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলে ডাকি’কথাটি দ্বারা তা প্রমাাণিত।
 উদ্দীপকে সৈয়দ শামসুর রহমান একজন রাজনীতিবিদ। তিনি জেলবন্দিত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বাড়িতে এসে বুঝতে পারলেন তার ছোট ছেলেটি তাকে চিনতে পারছে না। তাই প্রশ্নোক্ত সমান কথাটি উদ্দীপকেও এসেছে। সুতরাং বলা যায়, কথাটি উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

 বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, গ্রামগঞ্জের ছোট ছোট হাটবাজারেও হরতাল পালিত হচ্ছিল- যার সমরূপ দৃশ্য আমরা উদ্দীপকেও দেখতে পাই।
 ১৯৫২ সালে ঢাকায় মিছিলে গুলি করে সাধারণ মানুষ হত্যার পর ভাষা-আন্দোলন চরমে ওঠে। জনসাধারণ বুঝতে পারে যারা শাসন করছে তারা জনগণের আপনজন নয়। শাসকগোষ্ঠী মাতৃভাষা বাংলাকে মানুষের মুখ থেকে কেড়ে নিতে চায়। খবর বাতাসের সাথে সাথে গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। ছোট ছোট হাটবাজারেও হরতাল ধর্মঘট পালিত হতে থাকে।
 উদ্দীপকের সৈয়দ সাহেব জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বাড়িতে ফেরেন। অথচ তখন আন্দোলন চরমে ওঠে। এমনকি গ্রামের হাটবাজার পর্যন্ত হরতাল ধর্মঘট পালিত হয়। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে শাসকচক্র তাদের মঙ্গল চায় না; বরং শোষণ করতে চায়।
 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ১৯৫২ সালের প্রেক্ষাপটভিত্তিক আত্মজীবনীতে দেখা যায়, ভাষা নিয়ে বিতর্কের এক পর্যায়ে তা আন্দোলনে রূপ নেয়। শাসকগোষ্ঠী মিছিলে গুলি চালায় এবং এ খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে মানুষ গ্রামেও হরতাল পালন করে। অনুরূপ ঘটনা আমরা উদ্দীপকেও লক্ষ করি। সুতরাং প্রশ্নোক্ত কথাটি দ্বারা বায়ান্নর ও উদ্দীপকের আন্দোলনের তীব্রতারই প্রমাণ হয়।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ভারতের দুর্নীতিবিরোধী মানবাধিকার কর্মী আন্না হাজারে। তিনি সর্বদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি ও তার দলের কর্মীরা দাবি আদায়ে একটু ব্যতিক্রমধর্মী আন্দোলন করেন। তা হলো অনশন ধর্মঘট। তারা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন ধর্মঘট পালন করেন।
ক. বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কে অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন?
খ. বঙ্গবন্ধু অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার কোন বিষয়টি দৃশ্যমান? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দাবি আদায়ে ব্যতিক্রমধর্মী পন্থা অবলম্বনে উদ্দীপকের আন্না হাজারে যেন ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করেছেন।- বক্তব্যটির সত্যতা নিরূপণ কর। ১



৮ নং প্রশ্নের উত্তর

 বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মহিউদ্দিন সাহেব অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন।

 বঙ্গবন্ধু কারামুক্তির জন্যই অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন।
 পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে বছরের পর বছর কারাবন্দি করে রেখেছিল, যা বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। তাই বাধ্য হয়েই বঙ্গবন্ধু আমরণ অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন। এতে পাক-সরকার বাধ্য হয়েই তাঁকে মুক্তি দিয়েছিল। মূলত অপশাসনের হাত থেকে মুক্তির জন্যই বঙ্গবন্ধু অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন।

 উদ্দীপকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার দাবি আদায়ে অনশন ধর্মঘট পালনের বিষয়টি দৃশ্যমান।
 সমাজে নানা প্রকার অন্যায়-অবিচার, অত্যাচার বিদ্যমান থাকে। এর বিরুদ্ধে সচেতন মানুষরা বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানায়। সে প্রতিবাদ ব্যতিক্রমধর্মী হয়ে ওঠে, যখন কোনো ব্যক্তি তার স্বার্থকে বলি দিয়ে জনমানবের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করে।
 উদ্দীপকে দাবি আদায়ে অনশন ধর্মঘট পালনের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। ভারতের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতা আন্না হাজারে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার। তিনি সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ অনশন ধর্মঘট পালন করেন। অন্যদিকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় পাকিস্তানিদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হন বঙ্গবন্ধু। তাইতো তাঁকে বছরের পর বছর নির্বিচারে কারাবন্দি করে রেখেছিল কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা নীরবে মেনে নেননি। তিনি জেলে বসেই অনশন ধর্মঘট পালন করে এর বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ জানিয়ে দেন। তাই বলা যায়, ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় অনশন ধর্মঘট পালনের বিষয়টি উদ্দীপকেও দৃশ্যমান।

 দাবি আদায়ে ব্যতিক্রমী পন্থা অবলম্বনে উদ্দীপকের আন্না হাজারে যেন ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করেছেন।- বক্তব্যটি সত্য।
 সচেতন মানুষরা শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে নানাভাবে প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো অনশন ধর্মঘট। এ ধরনের প্রতিবাদে ব্যক্তি তার নিজ স্বার্থকে বলি দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করে। তার এ প্রতিবাদে শাসন-শোষণের ভিত পর্যন্ত কেঁপে ওঠে।
 উদ্দীপকের আন্না হাজারে একজন মানবাধিকারকর্মী। তিনি সর্বদা অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। অন্যায় শাসন প্রতিরোধে তিনি অনশন ধর্মঘট পালন করেন। অন্যদিকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী চেতনা তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালি নেতাকর্মী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন। এতে বঙ্গবন্ধুর মতো নেতাকর্মীও দীর্ঘদিন বিনাবিচারে কারাগারে আটক ছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এ অন্যায় শাসন মেনে নেননি। তাইতো তিনি জীবনের মায়া তুচ্ছ করে জেলের মধ্যেই প্রতিবাদস্বরূপ অনশন ধর্মঘট পালন করেছিলেন। এতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসনের ভিত পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিল।
 শাসকদের শোষণের জাঁতাকল গুঁড়িয়ে দিতে যুগে যুগে জন্ম নেন বীরসন্তানেরা। যাঁরা তাঁদের স্বীয় স্বার্থ বলি দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে পরের জন্য আত্মনিবেদন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তেমনি একজন মানুষ। আর বঙ্গবন্ধুর দাবি আদায়ের আদর্শ উদ্দীপকের আন্না হাজারের মধ্যে বিদ্যমান। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত বক্তব্যটি যথার্থ।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
চৌ-এন-লাই চীনের জননন্দিত বিপ্লবী রাজনীতিবিদ ও নব্য চীনের জন্মদাতা। সুদীর্ঘকাল তিনি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই উনিশ শতকের শেষ দিকে এবং বিশ শতকের গোড়ায় চীনের মঞ্চ সম্রাটদের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বেশ কিছু বিপ্লবী আন্দোলন হয়েছিল। সাম্যবাদ ও বিপ্লবে সুগভীর আস্থা, চীনের জাতীয় কর্মসূচি প্রণয়ন ও রাজতন্ত্রের বিরোধিতার জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানায় কীভাবে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন?
খ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তান সরকার মুক্তি দিয়েছিল কেন?
গ. উদ্দীপকে চৌ-এন-লাই ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার কোন চরিত্রের প্রতীক? নির্ণয় কর।
ঘ. “প্রদত্ত উদ্দীপকটি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার সম্পূর্ণ ভাবার্থের দর্পণ নয়।”- এ বিষয়ে তোমার মতামত উপস্থাপন কর। ১



৯নং প্রশ্নের উত্তর

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানায় ধর্মঘটের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন।

 অনশন ধর্মঘটের কারণে বাধ্য হয়ে পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিয়েছিল।
 পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপশাসনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু জেলখানায় আমরণ অনশন ধর্মঘট পালন করেন। এতে তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁর আদর্শ থেকে সরে আসেননি। এভাবে তাঁর মুক্তির আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে। তখন পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়েই বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিয়েছিল।

 উদ্দীপকের চৌ-এন-লাই ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চরিত্রের প্রতীক।
 অন্যায় শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে যুগে যুগে জন্ম নেন জাতির বীরসন্তানরা। যাঁরা তাঁদের স্বীয় মেধা, বুদ্ধি, নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে দেখান মুক্তির পথ। অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার থাকে তাদের প্রতিবাদের অস্ত্র। যার কবলে পড়ে শাসক-শোষকেরা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
 উদ্দীপকে চৌ-এন-লাই চীনের বিপ্লবী রাজনীতিবিদ। যিনি সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে নিঃস্বার্থভা
 বে আত্মনিবেদন করেছেন। অন্যদিকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী চেতনা বর্ণিত হয়েছে। ১৯৪৭-এ পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির ফলে শাসন-শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকে বাঙালিরা। তখন দিশেহারা জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন বাঙালির এই অবিসংবাদিত নেতা। সুতরাং বলা যায়, ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বঙ্গবন্ধু চরিত্রের প্রতীক হলো উদ্দীপকের চৌ-এন-লাই।

 “প্রদত্ত উদ্দীপকটি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার সম্পূর্ণ ভাবার্থের দর্পণ নয়।”- এ বিষয়ে আমি একমত।
 শাসন-শোষণের জাঁতাকল থেকে মানুষকে বাঁচাতে যুগে যুগে জন্ম নেন বিপ্লবীরা। যাঁরা তাঁদের নিজ মেধা, বুদ্ধি, নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে মুক্তির পথ দেখান। আর সেসব বিপ্লবী যেহেতু রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ তাই তাঁদেরও থাকে প্রিয়জনের প্রতি পিছুটান। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা স্বীয় মেধা বলে স্থান করে নেন ইতিহাসের পাতায়।
 উদ্দীপকের চৌ-এন-লাই চীনের বিপ্লবী রাজনীতিবিদ। তিনি সুদীর্ঘকাল সংগ্রাম করেছেন শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে। কথা বলেছেন চীনের শোষিত মানুষের পক্ষে। অন্যদিকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনাতেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনী বর্ণিত হয়েছে, যিনি পাকিস্তানিদের হাত থেকে বাঙালিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন। এছাড়া এ রচনায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিজীবনের কথাও বর্ণিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার পিতার ছিল গভীর স্নেহ-মমতা। তাইতো তিনি জেল গেটে মৃত্যুপথযাত্রী সন্তানকে দেখে চোখের জল সামাল দিতে পারেননি। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর সহধর্মিণীর অকৃত্রিম ভালোবাসার বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। আর বঙ্গবন্ধুর দুই আদরের সন্তান হাসু ও কামালের পিতৃভক্তির বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে এ রচনায়।
 ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন, পাকসরকারের অত্যাচার ও বাঙালির প্রতিবাদ এবং বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিজীবনের কথা বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকে শুধু শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটির সাথে আমি একমত পোষণ করি।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন বর্ণবাদ-বৈষম্য চরম আকার ধারণ করে শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা, দেশটির কালো মানুষগুলোর অধিকার যখন ক্ষুণœ হতে থাকে তখন তিনি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। এতে শোষকদের দ্বারা তাঁকে নানারকম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও তিনি পিছ-পা হননি; সংগ্রাম করে প্রতিষ্ঠা করেছেন কালো মানুষদের অধিকার।
ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোন কারাগারে বন্দি ছিলেন?
খ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিনাবিচারে কারাবরণ করতে হয়েছিল কেন?
গ. উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার কোন চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে ফুটে ওঠা দিকটি যেন ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার মূল সুর।”- বিশ্লেষণ কর। ১



১০ নং প্রশ্নের উত্তর

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন।

 পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে শেখ মুজিবুর রহমানকে বিনা বিচারে কারাবরণ করতে হয়েছিল।
 পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সকল প্রকার অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু সর্বদাই সোচ্চার ছিলেন, যা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চোখে তাকে বিষিয়ে তুলেছিল। তাই তো শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে বাঙালিকে এবং বাঙালির এই অবিসংবাদিত নেতাকে কারাবন্দি থাকতে হয়েছিল।

 উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
 সমাজজীবনে শাসন-শোষণ বিদ্যমান থাকে। আর এর বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম করেন তারাই প্রতিবাদী। জাতির এই বীর সন্তানেরা নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে জাতির স্বার্থে নিজেকে নিবেদন করেন জনগণের কল্যাণে। শোষণ-নির্যাতনের জাঁতাকল থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেন দৃঢ় মনোবল নিয়ে।
 উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী মহান নেতা। তিনি সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের পক্ষে। দক্ষিণ আফ্রিকার কালো মানুষের পক্ষে সংগ্রাম করতে গিয়ে কারাবরণ করেছেন, সহ্য করেছেন, অত্যাচার, নির্যাতন; কিন্তু তারপরও পিছু হটেননি। অন্যদিকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর কথা বর্ণিত হয়েছে। তিনি সারাজীবন শোষিত মানুষের পক্ষে সংগ্রাম করেছেন। পাকিস্তানিদের অত্যাচারে দিশাহারা বাঙালিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। অতএব বলা যায়, উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

 “উদ্দীপকে শোষণশাসন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ ফুটে উঠেছে তা যেন ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনারই মূল সুর।”
 সমাজজীবনে অন্যায় শাসন-শোষণ ও বৈষম্য বিদ্যমান। যার জাঁতাকলে কেবল পিষ্ট হয় সাধারণ মানুষ। কিন্তু সবসময় সাধারণ মানুষ তা সহ্য করে না। তাই যুগে যুগে শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সংগ্রামী মানুষ জন্ম নেয়।
 উদ্দীপকে শোষণ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়েছে নেলসন ম্যান্ডেলার কণ্ঠে। দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে তখন তিনি তা মুখ বুজে সহ্য করেননি। সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে গড়ে তুলেছেন প্রতিরোধ, সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেছেন স্বাধিকার চেতনায়। অন্যদিকে ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনাতেও বাঙালির প্রতিবাদী মানসিকতা তুলে ধরা হয়েছে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরনীতির বিরুদ্ধে বাঙালিরা গড়ে তুলেছে প্রতিরোধ, যুবকেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে মাতৃভাষার মর্যাদা, শাসকগোষ্ঠীর হীন অহমিকা দৃঢ় প্রতিবাদের মাধ্যমে দমিয়ে দিয়েছে । এ সবকিছুর পেছনে ছিল বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ নেতৃত্বগুণ।
 উদ্দীপকে মূলত অত্যাচার-নিপীড়ন বৈষম্যনীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে, যা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার মধ্যেও বিদ্যমান। তাই সঙ্গত কারণেই বলা যায়, উদ্দীপকে ফুটে ওঠা দিকটি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার মূল সুর।