Bangla 2nd – Board Ques

1. (ক) অর্থ অনুসারে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ উদাহরণসহ আলোচনা কর।

অথবা,

(খ) বন্ধনীর নির্দেশ অনুসারে যে কোনো পাঁচটি বাক্যান্তর কর :

(i) তিনি ধনী হলেও অসাধু নন। (জটিল) 
(ii) পৃথিবী অস্থায়ী। (নেতিবাচক) 
(iii) সত্যি সেলুকাস, এদেশ বড় বিচিত্র। (বিস্ময়বোধক)
(iv) তুমি দীর্ঘজীবী হও। (নির্দেশক)
(v) তার বয়স হলেও শিক্ষা হয়নি। (যৌগিক)
(vi) সরস্বতী বর দেবেন না। (প্রশ্নবাচক) 
(vii) আইন মেনে চলা উচিত। (অনুজ্ঞাসূচক)
(viii) ঠাট্টার সম্পর্কটাকে স্থায়ী করিবার ইচ্ছা আমার নাই।

0/5DB-23

(ক) উত্তরঃ অর্থানুসারে বাক্য প্রধানত সাত ভাগে বিভক্ত। যথাঃ

১. বিবৃতিমূলক বা বর্ণনাত্মক বা নির্দেশাত্মক বাক্য : সাধারণভাবে হ্যাঁ বা না বাচক বাক্য হলো বিবৃতিমূলক বাক্য। যে বাক্যে কোনো ঘটনারভাব বা তথ্য থাকে এবং সে বক্তব্যকে নির্দেশাত্মক বাক্য বলে। একে নির্দেশমূলক, নির্দেশসূচক, নির্দেশাত্ম, বিবৃতিমূলক বাক্যও বলা হয়। যেমন- কৃষ্ণ বাঁশি বাজায়। ঐন্দ্রিলা রুদ্রকে ভালোবাসে ইত্যাদি।

২. প্রশ্নবোধক বাক্য : যে ধরনের বাক্যে কোনো বিষয় সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা বা প্রশ্নসূচক অর্থ প্রকাশ পায় তাকে প্রশ্নবোধক বাক্য বলে। যেমন- আপনি কোথা থেকে এসেছেন? সে কি আমাদের এখানে আসবে না?

৩. অনুজ্ঞাবাচক বাক্য : যে বাক্য দ্বারা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কালের আদেশ, অনুরোধ, উপদেশ, নিষেধ, প্রস্তাব ইত্যাদি বোঝায়, তাকে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য বলে। যেমন- আদেশ: ঘর থেকে বের হয়ে যাও। অনুরোধ: দয়া করে বইটি দিন।

৪. ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক বাক্য : যে বাক্যে ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক অর্থ প্রকাশ পায় তাকে ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক বাক্য বলে। যেমন- ইচ্ছা : আমার যেতে ইচ্ছে করে গ্রামে। প্রার্থনা : খোদা তোমার মঙ্গল করুক।

৫। কার্যকরণাত্মক বাক্য : যদ্যপি, যদি প্রভৃতি অব্যয়ের সাহায্যে যে বাক্য গঠিত হয় এবং যাতে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রকাশ পায় তাকে কার্যকারণাত্মক বাক্য বলে। যেমন- দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কী মহীতে। (শর্ত), নিয়ম-কানুন না মানলে জীবনে উন্নতি করা যায় না। (নিয়ম)

৬. সংশয়সূচক বা সন্দেহদ্যোতক বাক্য : যে ধরনের নির্দেশক বাক্যে বক্তব্য বিষয় সম্পর্কে সংশয়, সন্দেহ, সম্ভাবনা, অনুমান, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি ভাব প্রকাশিত হয়, তাকে সংশয়সূচক বা সন্দেহদ্যোতক বাক্য বলে। এ ধরনের বাক্যে হয়তো, বুঝি, বুঝিবা, সম্ভবত, বোধ হয়, নাকি প্রভৃতি সন্দেহসূচক ক্রিয়া বিশেষণ ব্যবহৃত হয়। যেমন- লোকটাকে খারাপ বোধ হয়। মনে হয়, সুমন পাস করবে।

৭. আবেগসূচক বাক্য :- যে বাক্যে আশ্চর্য কিছু বোঝায় বা বিস্ময়, হর্ষ, ঘৃণা, বিষাদ, ক্রোধ, ভয়, শোক ইত্যাদি প্রকাশিত হয় তাকে আবেগসূচক বাক্য বলে। যেমন- হর্ষ- হুররে, আমরা ক্রিকেট খেলায় জিতেছি! আবেগ- বাহ, সুন্দর গান গাইলে তুমি!

(খ) উত্তরঃ

(i) (জটিল) যদিও তিনি ধনী, তবুও তিনি অসাধু নন।
(ii) (নেতিবাচক) পৃথিবী স্থায়ী নয়।
(iii) (বিস্ময়বোধক) সেলুকাস! কী বিচিত্র এ দেশ।
(iv) (নির্দেশক) তোমার দীর্ঘ জীবন কামনা করি।
(v) (যৌগিক) তার বয়স হয়েছে কিন্তু শিক্ষা হয়নি।
(vi) (প্রশ্নবাচক) সরস্বতী বর দেবেন কি?
(vii)  (অনুজ্ঞাসূচক) আইন মেনে চলো।
(viii) (জটিল) যাহা ঠাট্টার সম্পর্ক,তাহা স্থায়ী করিবার ইচ্ছা আমার নাই।

2. (ক) আবেগ-শব্দ বলতে কী বোঝ? আবেগ-শব্দের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর ।

অথবা,

(খ) নিম্নোক্ত যে কেনো পাঁচটি বাক্যের নিম্নরেখ শব্দের ব্যাকরণিক শ্রেণি নির্দেশ কর:

(i) বিপদ কখনও একা আসে না।
(ii) আজ নয় কাল তাকে আসতেই হবে।
(iii) দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে? 
(iv) ) গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে ।
(v) মোদের গরব মোদের আশা আ-মরি বাংলা ভাষা। 
(vi) বুঝিয়াছিলাম মেয়েটির রূপ বড় আশ্চর্য।
(vii) শাবাশ! দারুণ কাজ করেছ।
(viii) সানজিদা দ্রুত দৌড়াতে পারে।

0/5DB-23

(ক) উত্তরঃ যে শব্দের মাধ্যমে মনের নানা ভাব ও আবেগকে প্রকাশ করা হয়,তাকে আবেগ শব্দ বলে। প্রকাশ অনুসারে আবেগ শব্দকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:

সিদ্ধান্তবাচক আবেগ শব্দ: এই জাতীয় আবেগ শব্দের সাহায্যে অনুমোদন প্রকাশ পায়।যেমন:বেশ,তাই হবে।
প্রশংসাবাচক আবেগ শব্দ: এ ধরনের আবেগ শব্দ প্রশংসা প্রকাশ করে।যেমন:বাঃ!বড় ভালো কথা বলেছ।
বিরক্তিবাচক আবেগ শব্দ: এ ধরনের আবেগ শব্দ ঘৃণা প্রকাশ করে।যেমন:ছিঃ ছিঃ,তুমি এত নীচ!
যন্ত্রণাবাচক আবেগ শব্দ: এ ধরনের আবেগ শব্দ আতঙ্ক প্রকাশ করে।যেমন:আঃ,কী আপদ।
সম্বোধনবাচক আবেগ শব্দ: এ ধরনের আবেগ শব্দ আহবান করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।যেমন:হে বন্ধু,তোমাকে অভিনন্দন।
বিস্ময়বাচক আবেগ শব্দ: এ ধরনের আবেগ আশ্চর্য হওয়ার ভাব প্রকাশ করে।যেমন:আরে,তুমি আবার এলে!

(খ) উত্তরঃ

(i) বিপদ কখনও একা আসে না। ( বিশেষ্য)
(ii) আজ নয় কাল তাকে আসতেই হবে। (বিকল্প যোজক)
(iii) দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে? (অনুসর্গ)
(iv) ) গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে । ( ক্রিয়াবিশেষণ)
(v) মোদের গরব মোদের আশা আ-মরি বাংলা ভাষা । (সর্বনাম)
(vi) বুঝিয়াছিলাম মেয়েটির রূপ বড় আশ্চর্য। (ক্রিয়া)
(vii) শাবাশ! দারুণ কাজ করেছ। (আবেগ)
(viii) সানজিদা দ্রুত দৌড়াতে পারে। (ক্রিয়াবিশেষণ)

3. (ক) তোমার কলেজে ‘বসন্তবরণ’ পালিত হয়েছে। ওই দিনের বর্ণনা দিয়ে একটি দিনলিপি লেখো।

অথবা,

(খ) তোমার এলাকার গণগ্রন্থাগারের অবস্থা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন রচনা করো।

0/10DB-23

(ক) উত্তরঃ

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ,

বুধবার,

রাত ১০টা,

ঢাকা।

আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। শীতের পরে বসন্ত এসে প্রকৃতিকে নতুনভাবে সাজিয়ে দেয়, বসন্তের প্রকৃতি আমার খুব ভালো লাগে। আমাদের কলেজে প্রতিবছরই বসন্তবরণে একটি অনুষ্ঠান হয়। আজ সকালে আমি বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়েছিলাম। কলেজের মাঠে একটি মঞ্চ বানিয়ে সেখানে মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে গান, কবিতা, নাচ ইত্যাদি পরিবেশনার সঙ্গে চলছিল বসন্ত বন্দনা। একজন গেয়েছিল লগ্নজিতার ‘বসন্ত এসে গেছে’ গানটি। তবে সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আহা আজি-এ বসন্তে’ গানটির পরিবেশনা। আমার বন্ধু সাদিয়া ‘ফুলে ফুলে, ঢোলে ঢোলে…’ গানটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছিল। অনুষ্ঠান শেষে একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে সংগীত পরিবেশন করেছিল শিল্পী অর্ণব। কনসার্ট শেষে সমাপনী বক্তব্য রাখেন আমাদের কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি তাঁর বক্তব্যে বসন্তবরণের সঙ্গে বাঙালি জাতির ঐতিহ্য ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বলেন। কিছুক্ষণ আগেই বাসায় এসেছি। আজ সারা দিন খুব আনন্দে কেটেছে, আবার কবে বসন্ত আসবে তার জন্য আমি অপেক্ষা করছি।

(খ) উত্তরঃ

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জেলা প্রশাসক,

কুড়িগ্রাম।

বিষয়: কুড়িগ্রাম জেলা শহরে গ্রন্থাগার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন।

সূত্র: প্র.ম./২৯(১১)/২৪

জনাব,

উপর্যুক্ত সূত্র ও বিষয়ের আলোকে কুড়িগ্রাম শহরের লাইব্রেরি সরেজমিনে জরিপ করে এর বর্তমান অবস্থা-সম্পর্কিত তথ্যাবলি আপনার অবগতির জন্য প্রতিবেদন হিসেবে উল্লেখ করছি.

১. জেলার একমাত্র লাইব্রেরি হলেও বর্তমানে লাইব্রেরির অবস্থা খুবই করুণ। বইয়ের সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তার ওপর রয়েছে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাঠোৎসাহী মানুষের সংখ্যা বাড়লেও বইয়ের সংখ্যা বাড়েনি। এছাড়া অনেক মানুষ বই নিয়ে ফেরত দেননি। বর্তমানে লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা মোট ২২৫, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।

২. নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের বাইরেও শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ, জানার পরিধি বৃদ্ধির জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সাহিত্যের নানা শাখার বই পড়া উচিত। অথচ এ লাইব্রেরিতে এসব বইয়ের বড়োই অভাব। তাছাড়া গ্রন্থাগারিকের পদটি শূন্য। এমতাবস্থায় সাময়িকভাবে একজন গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে অন্যান্য দায়িত্ব থাকায় তিনি প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারেন না।

৩. লাইব্রেরির বই রক্ষণাবেক্ষণে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় না। তাছাড়া এই লাইব্রেরিতে ক্যাটালগ নেই। এর বাইরে বই ইস্যু এবং ফেরত নেওয়ার ব্যাপারেও অব্যবস্থাপনা রয়েছে।

প্রয়োজনীয় সুপারিশ:

১. জনসাধারণের প্রয়োজন মেটাতে বিভিন্ন বিষয়ের পর্যাপ্তসংখ্যক বই ক্রয় করে কলেজ লাইব্রেরিকে সমৃদ্ধ করা।

২. লাইব্রেরিতে বইয়ের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করা।

৩. বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে অনুদান হিসেবে লাইব্রেরির জন্য বই সংগ্রহ করা।

৪. গ্রন্থাগারিকের শূন্য পদে অবিলম্বে লোক নিয়োগ দেওয়া।

৫. যথাযথভাবে বই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দশমিক পদ্ধতিতে পুস্তকের তালিকা প্রণয়ন এবং বই ইস্যু করার পর নির্দিষ্ট সময়ে বই ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করা।

বিনীত ,

এলাকাবাসীর পক্ষে,

মারুফ আহমেদ

কুড়িগ্রাম।

* [এখানে প্রতিষ্ঠান ও প্রতিবেদকের ঠিকানাসহ খাম আঁকতে হবে]

4. (ক) যে কোনো পাচটি বাক্য শুদ্ধ করে লেখ :

(i) দৈন্যতা প্রশংসনীয় নয়।
(ii) দশচক্রে ঈশ্বর ভূত। 
(iii) শুধুমাত্র কথায় কাজ হবে না। 
(iv) তার কথাই প্রমাণ হলো।
(v) তিনি স্বস্ত্রীক এসেছেন।
(vi) রিমা ভয়ঙ্কর মেধাবী।
(vii) করোনাকালীন সময়ে আমরা কোথাও যাইনি।
(viii) পরবর্তীতে এ বিষয়ে কথা হবে।

অথবা,

(খ) নিচের অনুচ্ছেদের অপপ্রয়োগগুলো শুদ্ধ কর :

সেদিন বাবুল স্যার বললেন, “ তোমরা পড়ালেখায় মনোযোগি হও। চর্চা না করিলে বানান ভূল হবেই। বিদ্যান, সমিচিন বানান দুটো ঠিক করে লেখো তো।”

0/5DB-23

(ক) উত্তরঃ

(i) দীনতা/ দৈন্য প্রশংসনীয় নয়।
(ii) দশচক্রে ভগবান ভূত।
(iii) শুধু কথায় কাজ হবে না।
(iv) তার কথাই প্রমাণিত হলো।
(v) তিনি সস্ত্রীক/ স্ত্রীসহ এসেছেন।
(vi) রিমা অত্যন্ত মেধাবী।
(vii) করোনাকালীন/ করোনার সময়ে আমরা কোথাও যাইনি। 
(viii) পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে কথা হবে।

(খ) উত্তরঃ

সেদিন বাবুল স্যার বললেন, “তোমরা পড়ালেখায় মনোযোগী  হও। চর্চা না করলে  বানান ভুল  হবেই। বিদ্বান, সমীচীন বানান দুটো ঠিক করে লেখো তো।

5. (ক) যে কোনো দশটি শব্দের পারিভাষিক রূপ লেখ।

Sabotage, Zodine, Will, Roalism, Oath, Nomination, Liberal, Kingdom, Jail-code, Immigrant, Globalisation, Geology, Fiction, Era, Biography.

অথবা,

(খ) নিচের অনুচ্ছেদটি বাংলায় অনুবাদ কর :

Time is valuable. It is even more valuable than money. We can regain lost money, we can regain lost health but time once gone is gone for ever. So every moment of life should be used properly.

0/5DB-23

(ক) উত্তরঃ পারিভাষিক রূপ: অন্তর্ঘাত, রাশিচক্র, ইচ্ছাপত্র, বাস্তববাদ, শপথ, মনোনয়ন, উদার, রাজ্য, কারা সংহিতা/কারাবিধি, অভিবাসী, বিশ্বায়ন, ভূ-তত্ত্ব, কথাসাহিত্য, যুগ, জীবনী।

(খ) উত্তরঃ সময় মূল্যবান। এটি অর্থের চেয়েও বেশি মূল্যবান। আমরা হারানো অর্থ ফিরে পেতে পারি, আমরা হারানো স্বাস্থ্য ফিরে পেতে পারি কিন্তু একবার চলে যাওয়া সময় চিরতরে চলে যায়। তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে।

6. (ক) সারাংশ লেখো:
বার্ধক্য তাহাই – যাহা পুরাতনকে, মিথ্যাকে, মৃত্যুকে আঁকড়িয়া পড়িয়া থাকে। বৃদ্ধ তাহারাই – যাহারা মায়াচ্ছন্ন, নবমানবের অভিনব জয়যাত্রায় শুধু বোঝা নয়; বিঘ্ন; শতাব্দীর নব যাত্রীর চলার ছন্দে ছন্দ মিলাইয়া যাহারা কুচকাওয়াজ করিতে জানে না, পারে না; যাহারা জীব হইয়াও জড়; যাহারা অটল সংস্কারের পাষাণ-স্তূপ আঁকড়িয়া পড়িয়া আছে। বৃদ্ধ তাহারাই – যাহারা নবঅরুণোদয় দেখিয়া নিদ্রাভঙ্গের ভয়ে দ্বার রুদ্ধ করিয়া পড়িয়া থাকে। আলোকপিয়াসী প্রাণচঞ্চল শিশুদের কল-কোলাহলে যাহারা বিরক্ত হইয়া অভিসম্পাত করিতে থাকে, জীর্ণ পুঁথি চাপা পড়িয়া যাহাদের নাভিশ্বাস বহিতেছে, অতিজ্ঞানের অগ্নিমান্দ্যে যাহারা আজ কঙ্কালসার – বৃদ্ধ তাহারাই।

অথবা,

(খ) ভাবসম্প্রসারণ করো:

মনেরে আজ কহ যে,

ভালো-মন্দ যাহাই আসুক

সত্যেরে লহ সহজে।

0/10DB-23

(ক) উত্তরঃ

সারাংশ: বার্ধক্যকে সব সময় বয়সের ফ্রেমে বেঁধে বিচার করা ঠিক নয়। মন যাদের জড় পদার্থের মতো কুসংস্কারাচ্ছন্ন, নতুন উদ্যম ও চেতনাকে- যারা ভয় পায়- তারাই প্রকৃতপক্ষে বৃদ্ধ। অপরপক্ষে যারা উদ্যমী, নতুনকে বরণ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয় না- তারা বয়সে বৃদ্ধ হয়েও তরুণ।

(খ) উত্তরঃ

মূলভাব: সত্যই সুন্দর, সত্যই বাস্তব। জীবন চলার পথে ভালো-মন্দ যা- ই ঘটুক সত্যকে সহজ ও সাবলীলভাবে গ্রহণ করতে পারলেই প্রকৃত সুখ পাওয়া যায়। ভালো এবং মন্দ উভয় সময়েই যে সত্যকে আঁকড়ে থাকতে পারে সেই প্রকৃত মানুষ।

সম্প্রসারিত ভাব: মানবজীবন বিচিত্র বৈশিষ্ট্যে গড়া, সুখ-দুঃখের সমন্বয়েই সে জীবন এগিয়ে চলে। জীবনে সফলতা লাভের জন্য অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে মানুষকে সামনে এগোতে হয়। একজন মানুষ সারা জীবন সুখেই কাটাবে, এটা হতে পারে না। সুখের বিপরীত পিঠেই রয়েছে দুঃখের দহন। অবশ্য ভালো-মন্দ দুটোই যদি না থাকত তবে মানুষ তার জীবনকে আপন সাধনায় সাজিয়ে মানবজন্মকে সার্থক করে তুলতে পারত না। শুধু সুখময় জীবন যেমন একঘেয়ে, শুধু দুঃখের জীবনও অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ফলে এ দুইয়ের সমন্বয়েই জীবনকে সাজাতে হবে, এটাই জীবনের অমোঘ বাস্তবতা। তাই সবরকম বাস্তবতায় সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ানোই শ্রেয়। যাঁরা পৃথিবীর এই যথার্থ সত্যটি মাথা পেতে গ্রহণ করতে পারেন তাঁরাই জগতে পূজনীয় ব্যক্তিত্ব, তাঁদেরই মানুষ যুগ যুগ ধরে সম্মানের আসন দান করে, শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। সাময়িক লাভ কিংবা লোভের বশে সত্যকে পাশ কাটিয়ে গেলে পরিণামে এর ফল ভালো হয় না। কারণ আমরা এড়িয়ে গেলে বা অস্বীকার করলেই প্রকৃত সত্যটি মিথ্যা হয়ে যায় না। সত্যকে অস্বীকার করার দণ্ড হিসেবে পরবর্তী জীবনে চড়া মাসুল দিতে হয়। যে ব্যক্তি মূল সত্যকে চেনে এবং উপলব্ধি করতে জানে তার কাছে সত্য যে রূপেই আসুক না কেন সে তা গ্রহণ করবে এবং তাতে তার কোনো দ্বিধা থাকার কথা নয়। কিন্তু জীবন নিয়ে যারা ভয়ে থাকে, যারা প্রকৃত সত্যসন্ধানী নয় তারা মন্দ দেখলেই পিছিয়ে যায়। তাই সত্যসন্ধানী হতে হলে, বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চাইলে – মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন। সত্য যে রূপেই আসুক না কেন তাকে সহজভাবে গ্রহণ করা উচিত।

মন্তব্য: বাস্তবতার পথে অগ্রসর হওয়াই জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। ভালো-মন্দ সকল পরিস্থিতিতে প্রকৃত সত্যের অনুসন্ধান করাই যথার্থ মানুষের বৈশিষ্ট্য। সাময়িক সুখ অর্জন বা দুঃখ এড়ানোর জন্য সত্যকে পরিহার করা অনুচিত।

7. (ক) বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।

অথবা,

(খ) যে কোনো পাঁচটি শব্দের বানান শুদ্ধ করে লেখ :

পরজীবি, স্বরস্বতী, ইতিমধ্যে, মনজোগ, মহিয়সী, নিরস, উপরোক্ত, মণিষি ।

0/5DB-23

(ক) উত্তরঃ বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম নিম্নরূপ :

১. যেসব শব্দে ই, ঈ বা উ, ঊ উভয় শুদ্ধ কেবল সেসব শব্দে ই বা উ এবং কার চিহ্ন  ি বা  ু হবে। যেমন—পল্লী, ধরণি, শ্রেণি, সূচিপত্র, রচনাবলি ইত্যাদি।

২. রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন—অর্জন, কর্ম, কার্য, সূর্য ইত্যাদি।

৩. সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম স্থানে ং হবে। যেমন—অহম্ + কার = অহংকার, সম্ + গীত = সংগীত ইত্যাদি।

৪. শব্দের শেষে বিগর্স (ঃ) থাকবে না। যেমন—কার্যত, প্রথমত, প্রধানত, প্রায়শ, মূলত ইত্যাদি।

৫. সব অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই, ঊ এবং এদের কারচিহ্ন  ি বা  ু ব্যবহার হবে। যেমন—আরবি, আসামি, ইংরেজি, বাঙালি, সরকারি, চুন ইত্যাদি।

(খ) উত্তরঃ শুদ্ধ বানান: পরজীবী, সরস্বতী, ইতোমধ্যে,,মনোযোগ, মহীয়সী, নীরস, উপর্যুক্ত/উপরিউক্ত, মনীষী।

8. (ক) শিক্ষাসফরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে তোমার বন্ধুর নিকট একটি বৈদ্যুতিন চিঠি লেখো।

অথবা,

(খ) তোমার এলাকার রাস্তাঘাট নিয়মিত পরিষ্কার রাখার জন্য পৌরসভার মেয়রের নিকট একটি আবেদনপত্র লেখো।

0/10DB-23

(ক) উত্তরঃ

শিক্ষাসফরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে বন্ধুর নিকট একটি বৈদ্যুতিন চিঠিঃ

New Message.

To:

jamilkhan@gmail.com;

nitinkumar@yahoo.com;

ummebegumsumaiya@yahoo.com;

shgotkhan@gmail.com;

nilkonthi82@gmail.com;

suptiislam@yahoo.com

Cc:

Всс:

Subject: শিক্ষাসফরে যাওয়া আমন্ত্রণ প্রসঙ্গে।

Text:

বন্ধু, শিক্ষাসফর আয়োজনের জন্য আমরা যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছি তা আগামী মাসের ৭ তারিখে কার্যকর হবে। এ উপলক্ষ্যে আমাদের শিক্ষাসফর কমিটি জনপ্রতি ৬৭০/- চাঁদা নির্ধারণ করেছে। আগামী বুধবারের মধ্যে চাঁদা পরিশোধ করে শিক্ষাসফরে অংশগ্রহণ করার জন্য তোমাদের অনুরোধ জানাচ্ছি।

(খ) উত্তরঃ

২০ আগস্ট ২০২৪

মেয়র,

দুর্গাপুর পৌরসভা দুর্গাপুর, নেত্রকোনা

বিষয়: রাস্তাঘাট নিয়মিত পরিষ্কার রাখার জন্য আবেদন।

জনাব,

বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা দুর্গাপুর পৌর এলাকার অধিবাসী। নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে দুর্গাপুর শহরের রাস্তাঘাট এতটাই ময়লা- আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে পড়েছে যে তাকে রাস্তা বলে মানতেই কষ্ট হয়। এই নোংরা রাস্তায় নিয়মিত চলাচল করা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের শহরে বিভিন্ন জীবাণুবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

অতএব, মহোদয় সমীপে প্রার্থনা, দুর্গাপুর শহরের রাস্তাঘাট নিয়মিত পরিষ্কার রাখার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে বাধিত করবেন।

নিবেদক

দুর্গাপুর পৌরসভাবাসীর পক্ষে,

তহমিনা আক্তার।

দুর্গাপুর, নেত্রকোণা।

9. (ক) উদাহরণসহ ম-ফলা উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখ।

অথবা,

যে কোনো পাঁচটি শব্দের উচ্চারণ লেখ : চর্যাপদ, রাষ্ট্রপতি, প্রত্যাশা, সংবাদপত্র, তন্বী, চিত্রকল্প, অন্য, উদ্বেগ ।

0/5DB-23

(ক) উত্তরঃ

 ম-ফলা উচ্চারণের ৫ টি নিয়ম নিচে দেওয়া হলোঃ(১) পদের আদ্য ব্যঞ্জনবর্ণে ‘ম’-ফলা সংযুক্ত হলে সাধারণত তার কোন উচ্চারণ হয় না, তবে প্রমিত উচ্চারণে ‘ম’-ফলা যুক্ত বর্ণের উচ্চারণ সামান্য নাসিক্য প্রভাবিত হয়ে ওঠে। যথাঃ স্মরণ (শঁরোন্), শ্মশান (শঁশান্), স্মৃতি (সৃঁতি), স্মারক (শাঁরোক্) ইত্যাদি।

২) পদের মধ্যে বা অন্তে ‘ম’-ফলা সংযুক্ত বর্ণের  দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়ে থাকে। যথাঃ ছদ্ম (ছদ্ দোঁ), পদ্ম (পদ্ দোঁ), আত্ম (আত্ তোঁ), অকস্মাৎ (অকোশ্ শাঁত্), ভস্ম (ভশ্ শোঁ), রশ্মি (রোশ্ শিঁ), মহাত্মা (মহাত্ তাঁ), আকস্মিক (আকোশশ্ শিঁক) ইত্যাদি।

(৩) কিন্তু বাংলা ভাষায় পদের মধ্যে কিংবা অন্তে সর্বত্র ‘ম’-ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণটির উচ্চারণ দ্বিত্ব হয় না; গ, ঙ, ট, ণ, ম এবং ল-এর সঙ্গে সংযুক্ত ‘ম’-এর উচ্চারণ সাধারণ অবিকৃত থাকে। যথাঃ বাগ্মী (বাগ্ মি), যুগ্ম (জুগ্ মো), বাঙ্ময় ( বাঙ্ ময়), উন্মাদ (উন্ মাদ), জন্ম (জন্ মো), সম্মান (শম্ মান্), গুল্ম (গুল্ মো) ইত্যাদি।

(৪) যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত ‘ম’-ফলার কোন উচ্চারণ হয় না। যথাঃ সূক্ষ্ম (শুক্ খোঁ), লক্ষ্মী (লোক্ খিঁ), লক্ষ্মণ (লক্ খোঁন্) ইত্যাদি।

(৫) এছাড়া বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত ‘ম’-ফলা যুক্ত কতিপয় সংস্কৃত শব্দ আছে (কৃতঋণ শব্দ) যার বানান ও উচ্চারণ সংস্কৃতি অনুযায়ী হয়। যথাঃ কুষ্মাণ্ড (কুশ্ মান্ ডো), স্মিত (স্মিতো), সুস্মিতা (শুস্ মিতা) ইত্যাদি।

(খ) উত্তরঃ

10. (ক) উপসর্গ কাকে বলে? উপসর্গের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।

অথবা,

(খ) ব্যাসবাক্যসহ সমাস নির্ণয় কর (যে কোনো পাঁচটি) :

নীপবৃক্ষ, শতবর্ষ, হরতাল, গিন্নিমা, রক্তারক্তি, সজল, সত্যাসত্য, তোরা ।

0/5DB-23

(ক) উত্তরঃ যেসব বর্ণ বা বর্ণের সমষ্টি ধাতু এবং শব্দের আগে বসে সাধিত শব্দের অর্থের পরিবর্তন, সম্প্রসারণ কিংবা সংকোচন ঘটায়, তাদের বলা হয় উপসর্গ। যেমন: প্র, পরা, পরি, নির ইত্যাদি।

উপসর্গের প্রয়োজনীয়তাঃ

শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ হয়: উপসর্গের মাধ্যমে যেহেতু নতুন নতুন শব্দ সৃষ্টি হয়, ফলে ভাষার শব্দসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ভাষার শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ হয়।

ব্যঞ্জনা বাড়ে: উপসর্গের ব্যবহারে শব্দের ভাব-ব্যঞ্জনা অনেক গুণ বেড়ে যায়। যেমন: ‘জয়’ বললে শব্দটির যতটা ভাব প্রকাশিত হয়, পক্ষান্তরে ‘বিজয়’ বললে শব্দটির আবেদন অনেকটাই বেড়ে যায়।

প্রকাশক্ষমতা বাড়ে: উপসর্গের ব্যবহারে ভাষার প্রকাশ ক্ষমতা বেড়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্ভবত এ কারণেই উপসর্গের তুলনা করেছেন মাছের পাখনার সঙ্গে। কারণ, পাখনার সাহায্যে মাছ যেমন ডান-বাঁয়ে বা সামনে-পেছনে চলার জন্য বিশেষ গতি লাভ করে, ঠিক তেমনি উপসর্গের মাধ্যমে শব্দ তার ব্যবহারিক ক্ষেত্রের বিস্তৃতি ঘটিয়ে থাকে।

অর্থের সম্প্রসারণ ঘটে: নির্দিষ্ট কোনো শব্দের আগে উপসর্গ যোগ করলে অনেক সময় সংশ্লিষ্ট শব্দটির অর্থের সম্প্রসারণ ঘটে। ফলে শব্দটির প্রচলিত অর্থের আবেদনে যোগ হয় ভিন্ন মাত্রা। যেমন: ‘তাপ’ থেকে হয় ‘প্রতাপ’ কিংবা পরিতাপ ইত্যাদি।

পরিভাষা সৃষ্টিতে: অনেক সময় উপসর্গের মাধ্যমে পরিভাষা ও প্রণয়ন করা হয়। যেমন: Conductor-পরিবাহী, Requisition-অধিগ্রহণ ইত্যাদি উপসর্গের উপযুক্ত গুণাবলি বিবেচনা করে অনেক বৈয়াকরণিক মনে করেন, ‘উপসর্গ কেবল প্রয়োজনীয় নয়, ভাষার পক্ষে পরিহার্য।’

(খ) উত্তরঃ নীপ নামক বৃক্ষ (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়); শত বর্ষের সমাহার (দ্বিগু); তাল তাল (নিত্য) যিনি গিন্নি তিনি মা (কর্মধারয়); রক্তপাত করে যে যুদ্ধ (ব্যতিহার বহুব্রীহি); জলের সঙ্গে বর্তমান (বহুব্রীহি); সত্য ও অসত্য (দ্বন্দ্ব); সে ও তুই (একশেষ দ্বন্দ্ব)।

11. (ক) অমর একুশে বইমেলা নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা করো।

অথবা,

(খ) “শিশুশ্রম” শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।

0/10DB-23

(ক) উত্তরঃ

বইমেলা সম্পর্কে দুই বন্ধুর সংলাপঃ

সবুজ : কেমন আছ হীরক? কোথায় যাচ্ছ?

হীরক : আমি ভালো আছি। একটু বইমেলায় যাচ্ছি।

সবুজ : বইমেলায় গিয়ে কী করবে?

হীরক : বই দেখব, বই কিনব।

সবুজ : তুমি তো দেখছি বই পড়তে অনেক পছন্দ করো।

হীরক : হ্যাঁ বই পড়তে আমার খুব ভালো লাগে।

সবুজ : বইমেলা থেকে কোন বই কিনবে তুমি?

হীরক : আমি মূলত ইতিহাস ও সাহিত্য বিষয়ক বই পড়তে পছন্দ করি। এবারের বইমেলা থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস, ইউরোপের ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ে বেশ কিছু বই কেনার ইচ্ছা আছে। তাছাড়া আমার নিজ জেলার খুলনাই ইতিহাস বিষয়েও কিছু বই কিনতেও ইচ্ছুক।

সবুজ : সাহিত্য বিষয়ক কোনো বই কিনবে না?

হীরক : এবারের বইমেলা থেকে আমি মূলত মধ্যযুগের বাংলা কবিতার কিছু বই কিনতে আগ্রহী। মধ্যযুগের বাংলা কবিতা সম্পর্কে আমার ধারণা খুবই সীমিত। তবে আমিন শুনেছি সেই সময়ে আমাদের দেশে অনেক গুণী কবিরা ছিলেন। সৈয়দ সুলতান, শাহ মুহম্মদ সগীর, আলাওল, বড়ু চণ্ডীদাস, দ্বিজ কানাই ইত্যাদি কবির কিছু কবিতার বই কিনবো। তুমিও কি আমার সঙ্গে বইমেলায় যাবে?

সবুজ : বইমেলায় তো অনেক ভিড় থাকে। এত ভিড়ের মধ্যে গিয়ে আমার বই কিনতে ভালো লাগে না। তাই আমি সাধারণত বইয়ের দোকান থেকেই বই কিনি।

হীরক : কিন্তু তুমি হয়তো জান না বইমেলা উপলক্ষ্যে অনেক নতুন বই প্রকাশিত হয়। তাছাড়া বইমেলায় গিয়ে তুমি একসঙ্গে যত বই পাবে দোকানে কিন্তু তত বই পাবে না। যেহেতু বইমেলা একটা উৎসব তাই এখানে লোকের সমাগম তো হবেই। আমার মনে হয় তুমি বইমেলা থেকে তোমার প্রয়োজনীয় প্রায় সব বই পেতে পার। তুমি কোন ধরনের বই পড়তে পছন্দ করো?

সবুজ : আমি সাধারণত ভ্রমণ ও বিজ্ঞান বিষয়ক বই পড়তে পছন্দ করি। বইমেলায় নিশ্চয়ই আমার পছন্দের বইগুলো পাব?

হীরক : অবশ্যই পাবে। বইমেলায় এসব বিষয়েও প্রচুর বই পাওয়া যায়। তোমার আর একটা খবর দিচ্ছি। বইমেলা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকাশনীগুলো মূল্য ছাড়ে বই বিক্রি করে। তুমি ইচ্ছা করলে কম দামে অনেক ভালো বই কিনতে পারবে।

সবুজ : তোমার কথা শুনে আমার এখন মনে হচ্ছে বই কিনতে আমারও অবশ্যই বইমেলায় যাওয়া উচিত।

হীরক : : তাহলে চলো। আমরা দুই বন্ধু আজকে বইমেলায় যাই।

সবুজ : হ্যাঁ, তাহলে চলো।

হীরক : চলো।

(খ) উত্তরঃ

শিশুশ্রম

আমাদের বাসার কাজের মেয়েটার খুব সাজার শখ। সে সারাদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে সুযোগ পেলেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাজে। আম্মা এজন্য তাকে খুব বকাবকি করেন। আমার খুব খারাপ লাগে। আমরা দুজনেই কাছাকাছি বয়সের, বাসা থেকে কোথাও যাবার সময় আমিও সাজি কিন্তু মা তো আমাকে বকেন না। আচ্ছা আমি যদি এ বাড়ির মেয়ে না হয়ে এ বাড়ির কাজের মেয়ে হতাম, মা কি আমাকেও বকতেন? আমি কখনো কখনো ভাবি যে, আমি যদি শিউলির মতো ভাগ্য নিয়ে জন্মাতাম। যদি আমাকেও মানুষের বাড়িতে কাজ করে বেঁচে থাকতে হতো তাহলে কি হতো? আম্মা যখন শিউলিকে বকেন তখন আমার খুব কষ্ট হয়। আমি দৌড়ে আমার ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে কাদি। কিন্তু কেউ আমার কান্না শুনতে পায় না। কেন আমার কষ্ট হয়, তাও কেউ জানতে চায় না। রাতে জানালার ধারে বসে আমি শিউলির কথা ভাবতে থাকি। আচ্ছা ও যদি ওর বাড়িতে ওর বাবা-মায়ের সামনে সাজতো তবে কি তারাও ওকে এভাবে বকাবকি করতো। নিশ্চয়ই করতো না। কারণ প্রত্যেক মানুষই তার সন্তানকে প্রাণাধিক ভালোবাসে। ওর বাবা-মা নিশ্চয়ই ওকে অনেক সাজার জিনিস কিনে দিত। এসব ভেবে আমার মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। আমি ভাবি কালই মায়ের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলব। সকালে নাস্তার টেবিলে আমি মায়ের পাশে বসে মাকে বললাম ‘মা তুমি শিউলিকে এভাবে আর বকবে না। ওর জায়গায় যদি আমি থাকতাম তবে কি আমাকে তুমি এভাবেই বকতে?’ মা কথা শুনে অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকালেন। তার মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের হলো না। কলেজে গিয়ে আমি সিমির সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলাম। সিমি আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমি আমার জীবনের সব কথা সিমিকেই বলি। ও আমার কাছ থেকে শিউলির বয়স শুনে বলল, ‘শিশুশ্রম আমাদের দেশে অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু আমরা কেউই কথাটা মানি না। শিশুদের শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করা আইনত দণ্ডনীয়।’ এসব শুনে আমার মাথা ঘুরে গেল। বাড়িতে এসেই আমি ইন্টারনেট খুলে বিষয়টি সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করলাম। দেখলাম শিশুশ্রম সত্যিকার অর্থেই দণ্ডনীয় অপরাধ। সঙ্গে সঙ্গে আম্মাকে ডেকে আমি সমস্ত কথা বললাম। আম্মা প্রথমটায় বিরক্ত হলেও পরে কথার গুরুত্ব অনুধাবন করলেন। পরদিন থেকেই শিউলির সঙ্গে তিনি ব্যবহার পরিবর্তন করে ফেললেন। শিউলি সাজতে গেলে আম্মা আর আগের মতো তাকে বকাবকি করেন না। বরং কাজের ফাঁকে ফাঁকে ওকে সাজার জন্যে অবসর করে দেন। আব্বুকে বলে ওর জন্য আলাদা একটা আয়না কেনার ব্যবস্থা করেছি আমি। ও এখন খুব খুশি থাকে, আর ওর খুশি দেখে আমার নিজেরও খুব ভালো লাগে। এক অজানা আত্মতৃপ্তির স্ফূরণ ঘটে আমার মধ্যে।

প্রবন্ধ রচনা (5)

যেকোনো একটি বিষয় অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা করো:

1. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশ।

0/20DB-23

ভূমিকা:

সাম্প্রদায়িকতা হচ্ছে যা সম্প্রদায়ে-সম্প্রদায়ে ঝগড়া-বিভেদ সৃষ্টি করে সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি করা। এতে সৃষ্টি হয় মানুষের মনে অমানবিক বিদ্বেষ ও ঘৃণা। তাই সাম্প্রদায়িকতা কোনো শুভবুদ্ধির উনোষ ঘটায় না। মানুষের মনকে করে সংকীর্ণ। বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতার কারণে হত্যা, দাঙ্গা, লুণ্ঠন প্রভৃতি ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে। সভ্যতার অগ্রগতিতে সাম্প্রদায়িকতা একটি কঠিন বাধার সৃষ্টি করে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব – “আশরাফুল মাখলুকাত”। এ শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে হলে মানুষকে অবশ্যই মানবতাবাদী হয়ে হবে। আর এ জন্যেই কবি বলেছেনঃ

সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই,সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই উক্তিটি করেছেন মধ্যযুগের প্রখ্যাত কবি বাংলা ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলীর আদি রচিয়তা চণ্ডীদাস।

উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িকতা:

এ উপমহাদেশে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যকার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা বিশ্বের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে আছে। বিহারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল ১৯৪৬ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত, যেখানে হিন্দু জনতা মুসলিম পরিবারগুলিকে টার্গেট করেছিল। যা ১৯৪৬ বিহার দাঙ্গা নামে পরিচিত।১৯৪৬ বিহার দাঙ্গা – মোগল আমলে ১৭৩০ সালে দোল খেলাকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা লেগেছিল এবং লক্ষ লক্ষ লোকের রক্তক্ষয় হয়েছিল। ১৯২০ থেকে ১৯৪৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশের নানা জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটে। ১৯২২ থেকে ১৯২৭-এর মধ্যে ১১২টি দাঙ্গার কথা জানা যায় এবং এতে অসংখ্য লোকের প্রাণহানি ঘটে। ১৯৩০ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই ভারতে দাঙ্গা সংঘটিত হয়। ১৯৪৬, ১৯৯০ সালেও ছোটখাটো দাঙ্গা লেগেছিল। ভারতের বাবরী মসজিদকে কেন্দ্র করে যে দাঙ্গা হয় তা অবর্ণনীয়। Tully, Mark (৫ ডিসেম্বর ২০০২)। “Tearing down the Babri Masjid”। হাজার হাজার লোক সে দাঙ্গায় জীবন দিয়েছে। এর পেছনে ভারতীয় রাজনৈতিক নেতাদের অদৃশ্য হাত ছিল। এসব দাঙ্গার রেশ আজও কাটেনি ।

সাম্প্রদায়িকতার কালো ছোবল:

সাম্প্রদায়িকতা মানবকল্যাণে কখনো সুফল বয়ে আনেনি। বরং মানুষে-মানুষে বিভেদ সৃষ্টির বিষবাষ্প সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রভৃতি পড়ছে মুখ থুবড়ে। মানুষ শান্তি বিসর্জন দিয়ে যেন অশান্তির বাঁশি বাজিয়ে চলেছে। সাম্প্রদায়িকতার যূপকাষ্ঠে অগণিত শিশু-কিশোর-যুবা-বৃদ্ধ বলি হচ্ছে। পৃথিবীকে স্বর্গ করার প্রতিশ্রুতি গ্রহণের পরিবর্তে মানুষ যেন শশ্মশান করার ব্রত গ্রহণ করেছে। মানুষ তার মানবিক বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।

সাম্প্রদায়িকতার কুফল:

জীবন হল গতিশীল। প্রগতিই হল সমাজ উন্নয়নের চাবিকাঠি। এ যাত্রাপথে পাড়ি দিতে হলে মানুষকে ভ্রাতৃত্ববোধে আবদ্ধ হতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে সমাজ প্রগতির পথকে রুদ্ধ করে দেয়। অথচ কোন ধর্ম, কোন আদর্শই পৃথিবীতে এ সর্বনাশা ভেদবুদ্ধিকে সমর্থন করে নি। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-ধর্মের ব্যাপারে কোনাে জবরদস্তি নেই।

প্রতিকারের উপায়:

কিছু স্বার্থপর-কুৎসিত স্বভাবের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা উসকে দিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। এদেরকে চিহ্নিত করে জনগণের সামনে এদের মুখোশ খুলে দিতে হবে। ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে জাতিকে উদ্ধারের জন্য মৌলবাদী রাজনৈতিক দলসমূহ নিষিদ্ধ করতে হবে। দেশের মধ্যে জনসংখ্যানুপাতে সরকার গঠনে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের লোকেরই প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে এবং দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের মানুষ সুখে ও শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।

বিভেদ নয়, ঐক্যই মুক্তির পথ:

আমরা আজ উন্নয়নমুখী। আমাদের জাতীয় জীবনে গঠনমূলক কাজের উৎকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। চাষি, জেলে, কামার, কুমার, মুচি, ডোম, সকলকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেই জাতির উন্নয়নের জন্য গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা আমাদের জন্যে অপরিহার্য।

প্রতিকারের উপায়:

কিছু স্বার্থপর-কুৎসিত স্বভাবের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা উসকে দিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। এদেরকে চিহ্নিত করে জনগণের সামনে এদের মুখোশ খুলে দিতে হবে। ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে জাতিকে উদ্ধারের জন্য মৌলবাদী রাজনৈতিক দলসমূহ নিষিদ্ধ করতে হবে। দেশের মধ্যে জনসংখ্যানুপাতে সরকার গঠনে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের লোকেরই প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে এবং দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের মানুষ সুখে ও শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।

বিভেদ নয়, ঐক্যই মুক্তির পথ:

আমরা আজ উন্নয়নমুখী। আমাদের জাতীয় জীবনে গঠনমূলক কাজের উৎকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। চাষি, জেলে, কামার, কুমার, মুচি, ডোম, সকলকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেই জাতির উন্নয়নের জন্য গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা আমাদের জন্যে অপরিহার্য।

অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ, ছাত্রসমাজের ভূমিকা ও শিক্ষা সংস্কার:

সাম্প্রদায়িকতা এক দুরারোগ্য ব্যাধি। এই ব্যাধির জীবাণু জাতির জীবনের গভীরে প্রোথিত। শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলার কঠোরতার মধ্যেই এর সমাধান সূত্র নেই। তরুণ শিক্ষার্থীরাই হল দেশের সবচেয়ে আদর্শপ্রবণ, ভাবপ্রবণ অংশ। ছাত্র-সমাজই দেশের ভবিষ্যৎ, জাতির কাণ্ডারী। তাদের মধ্যে আছে অফুরান প্রাণশক্তি। পারস্পরিক শ্রদ্ধার মনোভাব, আন্তরিক মেলামেশা, ভাবের আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় হবে এক নতুন প্রজন্মের। এরই মধ্য দিয়ে ছাত্ররা নতুন করে অনুভব করবে মানবতার উদার মহিমা। শুনবে সেই মহামিলনের মন্ত্র। ছাত্রাবস্থায়ই সাম্প্রদায়িকতার রাহু মুক্তির শপথ নিতে হবে। সম্প্রীতির মহাব্রত অনুষ্ঠানের তারাই হবে প্রধান পুরোহিত। শুধু পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া নয়, সুকুমার বৃত্তিগুলো যথাযথ বিকশিত হলেই তাদের শিক্ষার পূর্ণতা, সার্থকতা। মনুষ্যত্বের অধিকার অর্জনই হবে তাদের শিক্ষানুশীলনের পরম প্রাপ্তি। শিক্ষার নিবেদিত প্রাঙ্গণে তারা নতুন করে উপলব্ধি করবে সবার উপরে মানুষই সত্য। মানুষে মানুষে প্রীতি-বন্ধনই হবে তার শেষ কথা।

উপসংহার:

সাম্প্রদায়িকতা বিশ্ববিবেকের কাছে নিঃসন্দেহে ঘৃণ্য বিষয়। মানবকল্যাণ পরিপন্থী এবং সভ্যতাবিধ্বংসী সাম্প্রদায়িকতা বেশি দিন স্থায়ী হতে পারে না। আমরা যদি একটু সচেষ্ট হই তাহলে এ হানাহানি সমাজ থেকে নির্মূল করা অবশ্যই সম্ভব হতে পারে। এ বিষবাষ্প অপসারিত হলেই মানবসমাজে সম্প্রীতির শান্তির হাওয়া বইবে এবং ‘মানুষ মানুষের জন্য’ কথাটি সার্থকতা পাবে। আমাদের জীবন হয়ে উঠবে আরো সুন্দর, আরো সুখময়। বিশ্বের বুকে একটি সত্য ও আদর্শ জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাব আমরা।

2. বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ।

0/20DB-23

ভূমিকা:

বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও বিজ্ঞান মনষ্ক সমাজের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতি হল মানব সভ্যতার অগ্রগতির অন্যতম চালিকাশক্তি। বিজ্ঞানের অগ্রগতির মাধ্যমে আমরা প্রকৃতির রহস্য উদঘাটন করে নতুন নতুন জ্ঞান ও প্রযুক্তি লাভ করেছি। এই জ্ঞান ও আবিষ্কারগুলো আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে, আমাদের সমাজের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। 

বিজ্ঞানমনস্কতার সেকাল ও একাল:-

বিজ্ঞানমনস্কতার ধারণাটি প্রাচীনকাল থেকেই বিদ্যমান। প্রাচীন গ্রীসের দার্শনিকরা বিজ্ঞানের উপর জোর দিয়েছিলেন এবং যুক্তিবাদী চিন্তাধারার বিকাশে অবদান রেখেছিলেন। মধ্যযুগে, ইসলামী বিশ্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি হয়েছিল। তবে, রেনেসাঁর সময় বিজ্ঞানমনস্কতা একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁনছেছিল। এই সময়কালে, বিজ্ঞানীরা প্রাচীন বিশ্বের জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে নতুন আবিষ্কার ও তত্ত্বগুলির বিকাশ করেছিলেন।

আধুনিক যুগে, বিজ্ঞানমনস্কতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে আমাদের জীবনযাত্রার অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। বিজ্ঞান আমাদের স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, পরিবহন, এবং উৎপাদনশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করেছে। বাংলাদেশে বিজ্ঞানমনস্কতার অগ্রগতিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর গবেষণার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি হয়েছে।

বিজ্ঞানমনস্কতা ও জাতীয় উন্নয়ন:

জাতীয় উন্নয়ন বলতে একটি দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নকে বোঝায়। বিজ্ঞানমনস্কতা একটি দেশের জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিজ্ঞানমনস্কতার জাতীয় উন্নয়নে অবদানগুলি নিম্নরূপ:

ক) অর্থনৈতিক উন্নয়ন: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। বিজ্ঞানমনস্কতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে।

খ) সামাজিক উন্নয়ন: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি সামাজিক উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানমনস্কতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে সাহায্য করে।

গ) সাংস্কৃতিক উন্নয়ন: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি সাংস্কৃতিক উন্নয়নে অবদান রাখে। বিজ্ঞানমনস্কতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি থেকে সৃষ্ট নতুন ধারণা ও সম্ভাবনাগুলোকে গ্রহণ করতে সাহায্য করে।

ঘ) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি: বিজ্ঞানমনস্কতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে। বিজ্ঞানমনস্ক মানুষরা নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করে। ফলে দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নায়ন হয়। 

উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে বিজ্ঞানমনস্কতা একটি দেশের জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ সমাজ।

বিজ্ঞানমনস্ক সমাজের রূপরেখা :

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি, বিজ্ঞানমনস্কতা হল চিন্তা-ভাবনার একটি প্রক্রিয়া যা যুক্তিবাদ, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রমাণের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। বিজ্ঞানমনস্ক মানুষেরা বিশ্বাস করে যে বিজ্ঞান হল বিশ্বকে বোঝার একটি নির্ভরযোগ্য উপায়। তারা প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে এবং অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের প্রতি সংবেদনশীল হয়। 

বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব :

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি বিশ্বকে দ্রুত গতিতে পরিবর্তন করছে। এই অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে, আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। বিজ্ঞান শিক্ষা আমাদেরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মূল ধারণা এবং তত্ত্বগুলি বুঝতে সাহায্য করে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পগুলিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাকরি পেতে হলে, আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। বিজ্ঞান শিক্ষা আমাদেরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করে তোলে এবং বিজ্ঞানের ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে সাহায্য করে। 

বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলার উপায়:

আমরা জানি, বিজ্ঞানমনস্কতা হল একটি চিন্তা-ভাবনার প্রক্রিয়া যা যুক্তিবাদ, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রমাণের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। বিজ্ঞানমনস্কতা আমাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে, জটিল সমস্যা সমাধানে এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতি থেকে সর্বাধিক সুবিধা পেতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলার জন্য নিম্নলিখিত উপায়গুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:

ক) বিজ্ঞান শিক্ষা: বিজ্ঞান শিক্ষা হল বিজ্ঞানমনস্কতার বিকাশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায়। বিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের মূল ধারণা এবং তত্ত্বগুলি বুঝতে পারে।

খ) বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের প্রচার: বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের প্রচার বিজ্ঞানমনস্কতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের মাধ্যমে, মানুষ বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং বিজ্ঞানের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে পারে।

গ) বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের প্রচার: বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের প্রচার বিজ্ঞানমনস্কতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের প্রচার মাধ্যমে, মানুষ বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারে।

ঘ) কুসংস্কার দূরীকরণ: কুসংস্কার বিজ্ঞানমনস্কতার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। কুসংস্কার দূরীকরণের মাধ্যমে, মানুষ বিজ্ঞান ও যুক্তির উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এছাড়াও, প্রাথমিক স্তর থেকেই শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা। বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়গুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত করা এবং বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন  করতে হবে। 

এই পদক্ষেপগুলি গ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গড়ে তুলতে পারি, যেখানে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ সমাজের মূল্যবোধ হবে।

উপসংহার :

বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে বিজ্ঞানমনষ্ক সমাজ একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিজ্ঞানমনষ্ক সমাজ গঠন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানমনষ্ক সমাজের মাধ্যমে বাংলাদেশে দারিদ্র্য দূরীকরণে, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ, প্রযুক্তি বিকাশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করতে পারবে। বাংলাদেশের জনগণের বিজ্ঞানমনস্ক হতে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজ্ঞানের গুরুত্ব বৃদ্ধি করতে হবে এবং গণমাধ্যমে বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়বস্তু প্রচার করতে হবে। বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ বিজ্ঞানের প্রতি মানুষের আস্থা হ্রাস করে। আমরা যদি বিজ্ঞানকে দায়িত্বশীল ভাবে ব্যবহার করি, তবে মানুষ বিজ্ঞানের উপর আরও বেশি আস্থা জ্ঞাপন করবে। বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলার জন্য পরিবার, শিক্ষক, গণমাধ্যম এবং সরকারের সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।

3. বাংলাদেশের পোশাকশিল্প।

0/20DB-23

ভূমিকা: বাংলাদেশ শিল্পোন্নত দেশ নয়। তথাপি যেসব শিল্পে বাংলাদেশ এভূত উন্নতি সাধন করেছে তাদের মধ্যে পোশাকশিল্পের নাম সর্বাগ্রে। বাংলাদেশের পোশাক-শিল্পমান বিশ্বমানের। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের শতভাগই রপ্তানিমুখী। বিশ্ববাজারে এর বেশ চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ তার মোট রপ্তানি আয়ের ৮১.২% এর বেশি অর্জন করে তৈরি পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে।

পোশাকশিল্পের অতীত অবস্থা: প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশে পোশাক বা বস্ত্রশিল্প সম্প্রসারিত হয়নি। ভারত ভাগের সময়, অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের দিকে উভয় পাকিস্তান মিলে কাপড়ের কলের সংখ্যা ছিল ১৪টি। ১৯৭০ সাল নাগাদ তা ১৪০টিতে উন্নীত হয়। যার মধ্যে মাত্র ৪৩টি ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বা বর্তমান বাংলাদেশে। বাংলাদেশকে পশ্চিম পাকিস্তানের কাপড়ের বাজার তৈরিই ছিল এ বৈষম্যের মূল কারণ।

পোশাকশিল্পের বর্তমান অবস্থা: স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে পোশাকশিল্পে কয়েক লক্ষ শ্রমিক কর্মে নিয়োজিত। এসব শ্রমিকের ৮৪% নারী। নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, টঙ্গী এলাকায় প্রধান কেন্দ্রগুলো অবস্থিত। আর্দ্র জলবায়ু, নদী, সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগের সুব্যবস্থা, সুদক্ষ শ্রমিক ও প্রয়োজনীয় মূলধনের প্রতুলতা এসব অঞ্চলের পোশাকশিল্প উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে। চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, খুলনা, কুমিল্লা, কালীগঞ্জ এবং গোয়ালন্দে কাপড়ের কল রয়েছে। এছাড়া তাঁতশিল্প তো রয়েছেই।

বাংলাদেশের অনেক জায়গায় বেশ উন্নতমানের তাঁতের কাপড় তৈরি হয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাকশিল্পের অবদান: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাকশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এগুলো নিম্নরূপ:

ক. পোশাকশিল্প থেকে রপ্তানি আয়: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনে বিশেষ করে রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে তৈরি পোশাকশিল্পের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮১.২% আসে পোশাকশিল্প থেকে।

খ. বেকার সমস্যা সমাধানে অবদান: পোশাকশিল্প বাংলাদেশের বেকার সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে পোশাকশিল্পে প্রায় ৪০ লক্ষ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ করে দিয়েছে এ শিল্প। নারীদের যোগ্যতানুযায়ী কাজের ধরন নির্ধারণ করে তাদের এ শিল্পে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিত্তহীন, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা নারীরা তাদের শ্রম বিনিয়োগ করে এ শিল্পের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে।

গ. দ্রুত শিল্পায়নে অবদানঃ পোশাকশিল্প আমাদের দেশে শিল্পের দ্রুত গ প্রসার ঘটাচ্ছে। এ শিল্পকে কেন্দ্র করেই স্পিনিং, উইভিং, নিটিং, ডাইং, ফিনিশিং এবং প্রিন্টিংশিল্প গড়ে উঠছে। শুধু তা-ই নয়, প্যাকেজিং, গামটেপ, জিপার, বোতাম ও বগলস শিল্পের প্রসারও ঘটছে এ শিল্পের ওপর নির্ভর করেই।

ঘ. অন্যান্য অবদান: এ শিল্পের আমদানি-রপ্তানি কাজে ব্যবহারের জন্য পরিবহণ সেক্টর তার কার্যক্ষমতা প্রসারের সুযোগ লাভ করেছে। এ শিয়ে বিনিয়োগ করে ব্যাংকগুলো লাভবান হচ্ছে এবং বিমা কোম্পানির প্রিমিয়াম বাড়ছে।

আমদানিকারক দেশসমূহ: বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারপরই রয়েছে জার্মানির স্থান। এরপর যথাক্রমে ফ্রান্স, ইতালি, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, বেলজিয়াম, স্পৈন ও অন্যান্য দেশ।

পোশাকশিল্পের বাধা : বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ক্ষেত্রে বড়ো বাধাগুলো নিম্নরূপ:

অস্থিতিশীল রাজনীতি: দেশের অস্থিতিশীল রাজনীতি পোশাকশিল্পের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরিমাণমতো ও সময়মতো উৎপাদন ও অর্ডার অনুযায়ী কাজ সরবরাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক অস্থিরতা তথা হরতাল ও অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কার্যাবলির জন্য চুক্তি অনুযায়ী সময় মতো কাজ করতে না পারায় অনেক সময় কাজের অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। বাতিলকৃত কাজের ফলে লোকসান দিয়ে তখন এ শিল্পকে চরম অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় পড়তে হয়।

দক্ষ শ্রমিকের অভাব: পোশাকশিল্পে দক্ষ শ্রমিকের অভাব একটি বড় সমস্যা। এ শিল্পের সিংহভাগ শ্রমিকই নারী। নারীদের প্রশিক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই এ শিল্পকে অদক্ষ নারী শ্রমিক নিয়ে কাজ করতে হয়। শুধু তা-ই নয়, এ ক্ষেত্রে দক্ষ পুরুষ শ্রমিকেরও অভাব রয়েছে। কাঁচামাল সমস্যা: কাঁচামাল এ শিল্পের অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা। দেশে পর্যাপ্ত কাঁচামাল না থাকায় বিদেশ থেকে তা আমদানি করতে হয়। এতে করে রপ্তানি আয়ের একটা বিরাট অংশ খরচ হয়ে যায়। অনেক সময় আমদানিকৃত কাঁচামাল নিম্নমানের হওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক বিদেশি ক্রেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে।

কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়া: যুক্তরাষ্ট্র ২০০৫ সালে পোশাক আমদানি ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি তুলে দিলে এ শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান এতে করে বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া শুল্ক জটিলতা, আইটেমের বৈচিত্র্যহীনতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আন্তর্জাতিক বাজারে বিরূপ প্রভাব, দুর্বল শিল্পনীতি, আর্থিক মন্দা ইত্যাদি সমস্যা এ শিল্পের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

সমস্যা সমাধানে করণীয়: নিম্নলিখিত বিষয়গুলো পোশাকশিল্পের সমস্যা সমাধানে বিবেচ্য হতে পারে-

ক. দ্রুত রপ্তানির জন্য কার্গো বিমান চার্টার করার অনুমতি প্রদান

খ. নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা

গ. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা

ঘ. কোটানীতি সংক্রান্ত দুর্নীতির অবসান

ঙ. প্রয়োজনীয় কাঁচামাল দেশেই উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ

চ. ইপিজেড-এর মতো সুযোগ-সুবিধা প্রদান

উপসংহার: পোশাকশিল্প আমাদের গর্ব, আমাদের সম্পদ। দেশের বাইরে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের পোশাকশিল্পের প্রদর্শনী দেশে-বিদেশে প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছে। তাই এ শিল্পের সকল সমস্যা. সমাধানে এবং জাতীয় অর্থনীতির এ অন্যতম সফল অংশকে গতিশীল রাখতে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বস্ত্রকলের পাশাপাশি তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য ও গুরুত্ব অনুধাবন করে এর ব্যবহার বজায় রাখতে হবে।

4. একুশের চেতনা ও বর্তমান বাংলাদেশ।

0/20DB-23

সূচনা: একুশ বাঙালিকে বিশ্বের দরবারে এক বিরল মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। একুশের মধ্য দিয়েই জেগে উঠেছে বাঙালির আপন সত্তা আর সংস্কৃতির মূর্ত চেতনাবোধ। আর সে চেতনাবলেই বাঙালি জাতি স্বকীয় ভাষায় ভাবের উপলব্ধি আর অনুভূতি প্রকাশের প্রতিজ্ঞাকে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা নিজেদেরকে স্বতন্ত্র সম্মানে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে পেয়েছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমি। আজ তাই বাঙালির গর্ব আর অহংবোধের উদ্দীপ্ত ধারায় স্নাত একুশ।

যেভাবে এই একুশের সৃষ্টি: ভাবের আদান-প্রদান বা সার্বক্ষণিক অনুভূতি প্রকাশের নিমিত্তে ভাষার দরকার হয়। এই ভাষা জন্মসূত্রে বা মাতৃমুখ থেকে প্রাপ্ত প্রকাশ কলা। তাই প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠী বা ভূখণ্ডের নাগরিকদের কাছে তাদের মাতৃভাষা মধুময়। বাংলা একটি সমৃদ্ধ ভাষা এবং এ ভাষার সাহিত্য সংস্কৃতির ভান্ডারও সমৃদ্ধ। তাইতো কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এর রূপ-রস আস্বাদন করে লিখেছেন, ‘হে বঙ্গ ভান্ডারে তব বিবিধ রতন।’

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলা ও বাঙালির এ সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে প্রত্যক্ষ করে বুঝেছিল যে, বাঙালিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। তারা এটিও বুঝেছিল যে, কোনো একটি জাতি-গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন বা আধিপত্য বিস্তারকে স্থায়ী রূপ দিতে হলে আগে তার ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানতে হবে। তাই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গণপরিষদের বৈঠকে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাবের বিপরীতে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে ইংরেজি ও উর্দুর সাথে সংযুক্তির দাবি জানান। পরবর্তীকালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় রাগে, ক্ষোভে গর্জে ওঠে বাঙালি এবং মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। এ সময় সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে পূর্ববঙ্গ বাজেট অধিবেশনকে ঘেরাও করা হবে এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি পাশ করানো হবে। পাকিস্তান সরকার বিষয়টি বুঝতে পেরে ২০ ফেব্রুয়ারি থেকেই ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু ২১শে ফেব্রুয়ারি ভোরে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এই স্লোগান নিয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকার রাজপথে নেমে আসে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনের নির্দেশে পুলিশ শান্তিপূর্ণ ঐ মিছিলে গুলি চালায়। এতে সালাম, রফিক, বরকতসহ আরও অনেকে শহিদ হন। পরবর্তী সময়ে চাপে পড়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। এভাবে বাঙালির আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে। মাতৃভাষার জন্য আত্মদানের এ পুণ্য স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

একুশ যেভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা পেল: মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আজ শুধু বাংলাদেশি বা বাঙালিরই নয়। বর্তমানে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে দিনটি সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে। কানাডা প্রবাসী বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের জন্য প্রথম উদ্যোগী ভূমিকা নেন। তাঁরা ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে একটি চিঠি লেখেন। বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে কফি আনান তাঁদের ইউনেস্কোর সাথে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন। অবশেষে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর মহাসচিব কইচিরো মাতসুরার উপস্থিতিতে প্যারিসের সদর দপ্তরে ১৯১টি সদস্য রাষ্ট্রের সম্মতিক্রমে বিলটি পাশ হয়। এরপর ২০০০ সাল থেকে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে ২১শে ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

তাৎপর্যমণ্ডিত একুশের গুরুত্ব: একুশ শুধু বাঙালিকে নয়, পৃথিবীর সকল জাতিসত্তাকে শিখিয়েছে যে, ভাষার অবদমন বা কোনো ভাষাকে ঘৃণা করার অধিকার কারোরই নেই। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে এ দেশের বাঙালির ওপর যে অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়ন চালাচ্ছিল তার যবনিকাপাতের মূল পথ তৈরি করেছিল ৫২’র ২১শে ফেব্রুয়ারির ভাষা-আন্দোলন। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বিস্মৃত বাঙালিরা জাতি হিসেবে তাদের স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে আবিষ্কার করেছিল। পরবর্তী সকল জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-সংগ্রামে একুশের চেতনা প্রেরণার উৎসস্থল হিসেবে কাজ করেছে। সর্বোপরি, একুশ গোটা পৃথিবীকে নিজের ভাষা-সংস্কৃতি আর সমাজের প্রতি ভালোবাসার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছে। মাতৃভাষার প্রতি মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসার স্মারক হিসেবে একুশের তাৎপর্য তাই অনস্বীকার্য।

উপসংহার: বাংলা একটি সমৃদ্ধ ভাষা। হাজার বছরের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এ ভাষা আজকের রূপ পরিগ্রহ করেছে। এ দীর্ঘ পথপরিক্রমায় এ দেশের সংস্কৃতির উদার মূল্যবোধ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলা। এ দেশের সাহিত্য, কাব্য ও সংগীতে বাঙালির যে আবেগ ও অনুভূতিকে প্রত্যক্ষ করা যায়, বাংলা ভাষাতেই তা প্রাণ পায়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এ ভাষা ব্যবহার করেই আমরা মনের ভাব প্রকাশ করি, স্বপ্ন সাজাই। ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরেই আমাদের জাতীয়তাবাদী চেতনার পুনরুত্থান ঘটেছিল, যার ধারাবাহিকতায় অর্জিত হয়েছে প্রিয় স্বাধীনতা। বাঙালি হিসেবে একুশ আমাদের অহংকার।

5. করোনা-উত্তর বিশ্ব অর্থনীতি ও বাংলাদেশ।

0/20DB-23

ভূমিকা: চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়। ভাইরাসটি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে। জাতিসংঘের মতে, গত ৭৫ বছরে বিশ্ব এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি। এ বৈশ্বিক মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিতে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলেছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) বর্তমান পরিস্থিতিকে একটি নতুন মন্দা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং ২০০৯ সালের ইউরোপের আর্থিক সংকটের সঙ্গে এটির তুলনা করেছে। ২০২০ সাল থেকে গোটা পৃথিবী শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহতম সময় পার করেছে কোভিড-১৯ এর কারণে। এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব এত মারাত্মক যে বিশ্বের বহু শক্তিশালী রাষ্ট্র এখনো এর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে লড়াই করছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারি-বেসরকারি নানান পদক্ষেপ এ সময়ে আলোচনায় এসেছে। তবে বাংলেদেশ এই অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উত্তরণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ব অর্থনীতি: কোভিড-১৯ অতিমারির অভিঘাত এবং চলমান রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান বিরূপ প্রভাবের ফলে ২০২৩ সালের বিশ্ব • অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এখনো অনিশ্চিত অবস্থায় রয়ে গেছে। “ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক (ডব্লিউইও), এপ্রিল ২০২৩-এ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালের ৩.৪ শতাংশ হতে ২০২৩ সালে ২.৮ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। এ পূর্বাভাস ডব্লিউইও জানুয়ারি ২০২৩ সালের হালনাগাদের তুলনায় ০.১ শতাংশ কম। বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং যুদ্ধের প্রভাবে সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধার ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মন্থরতা স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অর্থনৈতিক মন্থরতা উন্নত অর্থনীতি, উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির মধ্যে ভিন্ন হবে। উন্নত অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালের ২.৭ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে ১.৩ শতাংশে নেমে আসবে এবং ২০২৪ সালে ১.৪ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। উদীয়মান এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালের ৪.০ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে ৩.৯ শতাংশে এবং ২০২৪ সালে ৪.২ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।” [তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৩]

বেহাল অর্থনৈতিক অবস্থা: গত ছয় দশকের মধ্যে করোনাকালে বিশ্বব্যাপী সরকারি ঋণের পরিমাণ সর্বোচ্চ হয়েছে, যা প্রায় ৪০ শতাংশ। দেশের অভ্যন্তরে ও পৃথিবীজুড়ে ব্যাপক আর্থিক ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বৃদ্ধি কোভিড-১৯ এর একটি বড়ো ক্ষতিকর প্রভাব। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে জ্বালানি তেল, খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে শ্রমঘাটতি ও সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটেছে। ফলে হঠাৎ মূল্যস্ফীতি পুরো বিশ্ব অর্থনীতিকে টালমাটাল করে দিয়েছে।

অর্থনৈতিক অবস্থার পুনরুদ্ধার: ভবিষ্যতের উন্নয়ন মূলত নির্ভর করবে নীতি-নির্ধারণ কার্যক্রম, আর্থিক অবস্থার বিবর্তন, দ্রব্যমূল্য এবং দেশভেদে স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কার্যক্রম গ্রহণের সক্ষমতার ওপর। এসব বিষয়ে উত্থান-পতন এবং দেশভেদে যথাযথ কার্যক্রম অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি নির্ধারণ করবে।

করোনা-উত্তর পরিবর্তনশীল রাজনীতি-অর্থনীতি: পৃথিবীর বড়ো দেশ আমেরিকায় বাইডেন প্রশাসন ইতোমধ্যে তার মধ্যপ্রাচ্য নীতি অনেকখানি পরিবর্তন করেছে। তারা ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিতে আসতে চায়। ওবামা ও ট্রাম্পের আমলের মধ্যপ্রাচ্য নীতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। ফলে মধ্যপ্রাচ্য হয়তো আগের থেকে অনেকখানি শান্ত হতে পারে। পাশাপাশি করোনা-পরবর্তী সময়ে সব দেশই নতুন করে তাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চায়, বিশ্বে তাই তেলের দাম অস্থিতিশীজ হয়েছে। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতি কিছুটা চাঙ্গা হলে সেখান বাংলাদেশের শ্রমিকদের কাজের সুযোগ বাড়তে পারে।

বাংলাদেশে মন্দার প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে করণীয়: বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত করোনা-উত্তর অর্থনৈতিক মন্দার কবল থেকে বেঁচে থাকতে হলে বাংলাদেশকে সর্বপ্রথম সামরিক খাতে ব্যয় সংকোচন করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এজন্য বিলাসবহুল গাড়ি, বিলাসসামগ্রী আমদানি বন্ধ করতে হবে। আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকা বাড়াতে হবে। দেশি পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে গণপরিবহণ বাড়িয়ে দিতে হবে।

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বেসরকারি খাত: করোনা-উত্তর বাংলাদেশের বেসরকারি খাত ধীরে ধীরে একটি নতুন যুগে প্রবেশ, করবে। বেসরকারি বিনিয়োগই কর্মসৃজন, ভোক্তা সৃষ্টি ও পোষণ, পণ্য ও সেবা উৎপাদনের হাতিয়ার। এজন্য সরকারি খাতের চেয়ে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের পাল্লা ভারী করা জরুরি এবং ব্যাংক ঋণপ্রবাহ স্নাসরি ক্ষুদ্র মাঝারিদের কাছে বিনা মাশুলে যাওয়া-আসা করতে পারে, বেল আউট-ইনসেনটিভ- প্রণোদনা সুযোগ-সুবিধা’ শুধু মধ্যস্বত্বভোগীরা নিতে না পারে এবং আইনের খড়গ শুধু প্রান্তিক শ্রেণির জন্য না হয় সে বিধান বা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

পরিণত হয়েছে দিগন্তবিস্তৃত সমভূমিতে, নদী পেয়েছে নতুন গতি, শুকনো। খেতে চলছে জল-সেচ। জগৎ ও জীবনের কর্মপ্রবাহের প্রতিটি স্তরে বিজ্ঞান তার অবদানের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। কৃষিবিজ্ঞানীরা বর্তমান শতাব্দীতে কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ব্যবহারকে সাফল্যজনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। অল্প জমিতে অধিকতর ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে নিবিড় চাষের জন্য যান্ত্রিক সরঞ্জামের আবিষ্কার কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লবের সূচনা করেছে। ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারের সঙ্গে আরও নানা ধরনের যান্ত্রিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির আবিষ্কার মানুষ ও পশুশ্রমকে মুক্তি দিয়েছে। একই সঙ্গে গোবর সার, কম্পোস্ট সার ও সবুজ সারের স্থলে রাসায়নিক সার; যথা: ইউরিয়া, টিএসপি, এএসপি ইত্যাদির আবিষ্কারের ফলে একর প্রতি উৎপাদন দ্বিগুণের ওপরে চলে গেছে। পাশাপাশি উল্লেখ করা যায় ধান ও গমের ক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল বীজ আবিষ্কারের কথা। ফিলিপাইনের আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্রে ইরি ধান আবিষ্কৃত হয়। এরপর বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ইরি-৮ নামক উচ্চ ফলনশীল ধান আবিষ্কার করে এ দেশের কৃষিক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা আবশ্যক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নোবেল প্রাইজ বিজয়ী বিজ্ঞানী নর্মান বেরলগের মাক্সিপাক ও অন্যান্য জাতের উচ্চ ফলনশীল গম আবিষ্কার করে কৃষিকাজের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে মহতী উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়োগজনিত সাফল্য শুধু ধান ও গমের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। বিজ্ঞানের এ সাফল্য দেশের প্রায় সকল ধরনের ফল, ফলাদি ও কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেই সাধিত হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে পোকামাকড় দমন ও নির্মূল করার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ ঘটেছে অন্য সকল ক্ষেত্রের মতোই। নানা ধরনের পোকার আক্রমণ থেকে শস্যকে রক্ষার জন্য ইনসেকটিসাইড বা পোকা দমনকারী বহু রাসায়নিক দ্রব্য আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে এড্রিন, ডায়াজিন, ক্লোর ছাড়াও রয়েছে অনেক পোকাধ্বংসী ওষুধ।

বাংলাদেশের কৃষিতে বিরাজমান অবস্থা: অধিক জনসংখ্যার ভারে বাংলাদেশ আজ নুয়ে পড়েছে। জনসংখ্যার গুরুভার সৃষ্টি করেছে প্রকট খাদ্য সমস্যা। আমাদের দেশের প্রচলিত প্রাচীন চাষাবাদ পদ্ধতি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সমতা বজায় রেখে কৃষিক্ষেত্রে ফসল উৎপাদন করতে পারছে না। আমাদের মাটির তুলনায় জাপানের মাটির স্বাভাবিক উৎপাদনক্ষমতা এক-চতুর্থাংশ। অথচ তারা কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের চেয়ে প্রায় অর্ধেক জমিতে সর্বাধিক ফসল ফলিয়ে খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, চীন, কোরিয়া প্রভৃতি দেশের কৃষিবিজ্ঞানকে আমরা ব্যবহার করতে পারি। তবে বাংলাদেশের কৃষিখাতে বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ব্যবহার দ্রুত ‘প্রসারিত হচ্ছে।

আমাদের কৃষি এবং আধুনিক প্রযুক্তি: আমাদের কৃষক সম্প্রদায় এখনো অনেক জায়গায় জমি চাষের জন্য গবাদিপশু চালিত লাঙল ব্যবহার করেন। এ ব্যবস্থা যেমন, কষ্টকর, তেমনই সময়সাধ্য। এ কাজে আমরা ট্রাক্টর ব্যবহার করে অল্প আয়াসে অধিক জমিতে চাষাবাদ করতে পারি। কৃষিক্ষেত্রের মান অনুযায়ী রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেতে পারে। উন্নত দেশগুলোর মতো আমরাও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফসল ফলানো থেকে শুরু করে অল্প আয়াসে অধিকতর ফসল কেটে ও মাড়াই করে আমাদের খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে পারি। মানুষের মৌলিক চাহিদার সবটাই জোগান দেয় কৃষি। তাই কৃষিকে অবহেলা করে বেঁচে থাকা যেমন সম্ভব নয়, তেমনই দেশ ও জাতির সামগ্রিক কল্যাণসাধনও অসম্ভব। আশার কথা, এদিকে লক্ষ। রেখেই সরকার কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে সচেতন। কৃষিব্যবস্থার সামগ্রিক কল্যাণের স্বার্থে এ দেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি-কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কৃষিকে মাধ্যমিক স্তর থেকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি সম্প্রসারণে সবরক সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছে।

উপসংহার: আমাদের জাতীয় উন্নয়ন সম্পূর্ণরূপে কৃষির ওপর নির্ভরশীল।

এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমেই কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে আমরাই পরনির্ভরশীলতার অভিশাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি।

( end of dhaka 23 )

প্রবন্ধ রচনা (5)

1. বাংলাদেশের পোশাকশিল্প।

0/21RB-23

ভূমিকা: বাংলাদেশ শিল্পোন্নত দেশ নয়। তথাপি যেসব শিল্পে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে তাদের মধ্যে পোশাকশিল্পের নাম সর্বাগ্রে। বাংলাদেশের পোশাক-শিল্পমান বিশ্বমানের। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের শতভাগই রপ্তানিমুখী। বিশ্ববাজারে এর বেশ চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ তার মোট রপ্তানি আয়ের ৮১.২% এর বেশি অর্জন করে তৈরি পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে।

পোশাকশিল্পের অতীত অবস্থা: প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এবং সরকারি

পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশে পোশাক বা বস্ত্রশিল্প সম্প্রসারিত হয়নি। ভারত ভাগের সময়, অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের দিকে উভয় পাকিস্তান মিলে কাপড়ের কলের সংখ্যা ছিল ১৪টি। ১৯৭০ সাল নাগাদ তা ১৪০টিতে উন্নীত হয়। যার মধ্যে মাত্র ৪৩টি ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বা বর্তমান বাংলাদেশে। বাংলাদেশকে পশ্চিম পাকিস্তানের কাপড়ের বাজার তৈরিই ছিল এ বৈষম্যের মূল কারণ।

পোশাকশিল্পের বর্তমান অবস্থা: স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে পোশাকশিল্পে

বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে পোশাকশিল্পে কয়েক লক্ষ শ্রমিক কর্মে নিয়োজিত। এসব শ্রমিকের ৮৪% নারী। নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, টঙ্গী এলাকায় প্রধান কেন্দ্রগুলো অবস্থিত। আর্দ্র জলবায়ু, নদী, সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগের সুব্যবস্থা, সুদক্ষ শ্রমিক ও প্রয়োজনীয় মূলধনের প্রতুলতা এসব অঞ্চলের পোশাকশিল্প উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে। চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, খুলনা, কুমিল্লা, কালীগঞ্জ এবং গোয়ালন্দে কাপড়ের কল রয়েছে। এছাড়া তাঁতশিল্প তো রয়েছেই। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় বেশ উন্নতমানের তাঁতের কাপড় তৈরি হয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাকশিল্পের অবদান: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাকশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এগুলো নিম্নরূপ:

ক. পোশাকশিল্প থেকে রপ্তানি আয়: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনে বিশেষ করে রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে তৈরি পোশাকশিল্পের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে রপ্তানি আয়ের প্রায়

৮১.২% আসে পোশাকশিল্প থেকে।

খ. বেকার সমস্যা সমাধানে অবদান: পোশাকশিল্প বাংলাদেশের বেকার সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে পোশাকশিল্পে প্রায় ৪০ লক্ষ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। বিশেষ করে

আমাদের নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ করে দিয়েছে এ শিল্প। নারীদের যোগ্যতানুযায়ী কাজের ধরন নির্ধারণ করে তাদের এ শিল্পে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিত্তহীন, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা নারীরা তাদের শ্রম বিনিয়োগ করে এ শিল্পের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে।

গ. দ্রুত শিল্পায়নে অবদান: পোশাকশিল্প আমাদের দেশে শিল্পের দ্রুত

প্রসার ঘটাচ্ছে। এ শিল্পকে কেন্দ্র করেই স্পিনিং, উইভিং, নিটিং, ডাইং, ফিনিশিং এবং প্রিন্টিংশিল্প গড়ে উঠছে। শুধু তা-ই নয়, প্যাকেজিং, গামটেপ, জিপার, বোতাম ও বগলস শিল্পের প্রসারও ঘটছে এ শিল্পের ওপর নির্ভর করেই।

ঘ. অন্যান্য অবদানঃ এ শিল্পের আমদানি-রপ্তানি কাজে ব্যবহারের জন্য পরিবহন সেক্টর তার কার্যক্ষমতা প্রসারের সুযোগ লাভ করেছে। এ শিল্পে বিনিয়োগ করে ব্যাংকগুলো লাভবান হচ্ছে এবং বিমা কোম্পানির প্রিমিয়াম বাড়ছে।

আমদানিকারক দেশসমূহ: বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পোশাক * আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারপরই রয়েছে জার্মানির স্থান। এরপর যথাক্রমে ফ্রান্স, ইতালি, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ড, কানাডা, বেলজিয়াম, স্পেন ও অন্যান্য দেশ।

পোশাকশিল্পের বাধা: বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ক্ষেত্রে বড়ো বাধাগুলো নিম্নরূপ:

অস্থিতিশীল রাজনীতি: দেশের অস্থিতিশীল রাজনীতি পোশাকশিল্পের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরিমাণমতো ও সময়মতো উৎপাদন ও অর্ডার অনুযায়ী কাজ সরবরাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক অস্থিরতা তথা হরতাল ও অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কার্যাবলির জন্য চুক্তি অনুযায়ী সময় মতো কাজ করতে না পারায় অনেক সময় কাজের অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। বাতিলকৃত কাজের ফলে লোকসান দিয়ে তখন এ শিল্পকে চরম অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় পড়তে হয়।

দক্ষ শ্রমিকের অভাব: পোশাকশিল্পে দক্ষ শ্রমিকের অভাব একটি বড়ো

সমস্যা। এ শিল্পের সিংহভাগ শ্রমিকই নারী। নারীদের প্রশিক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই এ শিল্পকে অদক্ষ নারী শ্রমিক নিয়ে কাজ করতে হয়। শুধু তা-ই নয়, এ ক্ষেত্রে দক্ষ পুরুষ শ্রমিকেরও অভাব রয়েছে।

কাঁচামাল সমস্যা: কাঁচামাল এ শিল্পের অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা।

দেশে পর্যাপ্ত কাঁচামাল না থাকায় বিদেশ থেকে তা আমদানি করতে হয়। এতে করে রপ্তানি আয়ের একটা বিরাট অংশ খরচ হয়ে যায়। অনেক সময় আমদানীকৃত কাঁচামাল নিম্নমানের হওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক বিদেশি ক্রেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে।

কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়া: যুক্তরাষ্ট্র ২০০৫ সালে পোশাক আমদানি ক্ষেত্রে

কোটা পদ্ধতি তুলে দিলে এ শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অনেক শিল্প- প্রতিষ্ঠান এতে করে বন্ধ হয়ে যায়। তা ছাড়া শুল্ক জটিলতা, আইটেমের বৈচিত্র্যহীনতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আন্তর্জাতিক বাজারে বিরূপ প্রভাব, দুর্বল শিল্পনীতি, আর্থিক মন্দা ইত্যাদি সমস্যা এ শিল্পের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

সমস্যা সমাধানে করণীয়: নিম্নলিখিত বিষয়গুলো পোশাকশিল্পের সমস্যা সমাধানে বিবেচ্য হতে পারে:

ক. দ্রুত রপ্তানির জন্য কার্গো বিমান চার্টার করার অনুমতি প্রদান;

খ. নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা;

গ. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা;

ঘ. কোটানীতি সংক্রান্ত দুর্নীতির অবসান;

ঙ. প্রয়োজনীয় কাঁচামাল দেশেই উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ;

চ. ইপিজেড-এর মতো সুযোগ-সুবিধা প্রদান।

উপসংহার: পোশাকশিল্প আমাদের গর্ব, আমাদের সম্পদ। দেশের বাইরে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের পোশাকশিল্পের প্রদর্শনী দেশে-বিদেশে প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছে। তাই এ শিল্পের সকল সমস্যা সমাধানে এবং জাতীয় অর্থনীতির এ অন্যতম সফল অংশকে গতিশীল রাখতে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বস্তুকলের পাশাপাশি তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য ও গুরুত্ব অনুধাবন করে এর ব্যবহার বজায় রাখতে হবে।

2. বাংলাদেশের উৎসব।

0/20RB-23

ভূমিকাঃ

উৎসব বাঙালির প্রাণ। উৎসব পেলেই বাঙালি মাতােয়ারা হয়ে ওঠে। সে যে উৎসবই হােক না কেন ধনী, দারিদ্র, নির্বিশেষে সকল বাঙালি বাংলা নববর্ষ, ঈদ, পুজো, বিভিন্ন পারিবারিক-সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় সব ধরনের উৎসবেই নিজেকে শামিল করে। উৎসবের দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উৎসব আমাদের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। উৎসবে বাংলাদেশ বিচিত্র রুপে ফুটে ওঠে। তাই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেনঃ

জননী, তােমার শুভ আহ্বান।
গিয়েছে নিখিল ভুবনে
নতুন ধানে হবে নবান্ন
তােমার ভবনে ভবনে।

উৎসব কী?

উৎসব হল আনন্দ প্রকাশ ও লাভের মাধ্যম, এক কথায় যাকে বলা যায় আনন্দানুষ্ঠান। অন্য কথায় , যে সাম্প্রদায়িক বা পারিবারিক সমাবেশ থেকে সুখ বা আনন্দ লাভ করা যায় তাকেই উৎসব বলে। আভিধানিক অর্থেও ‘উৎসব’ বলতে আনন্দময় অনুষ্ঠানকে বােঝায়। তবে সে আনন্দের রূপ-চেতনা সবসময় এক রকম হয় না। সেজন্য পারিবারিক আঙিনায় সীমিত এবং দশজনকে নিয়ে কৃত অনুষ্ঠানকেই উৎসব বলা হয়ে থাকে। ইংরেজি ফেস্টিভ্যাল’ কথার অর্থও উৎসব। তবে একটু ব্যাপক অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হয়। সমাজের দশজনের সঙ্গে এর সম্পর্ক। ব্যক্তি বা পরিবার সেখানে গৌণ, কখনাে বা অনুপস্থিত। উৎসব সেখানে নির্দিষ্ট ঋতু বা দিনের অনুষ্ঠানমালার সমাহার। মােটকথা বেশ বড় বা দেশব্যাপী সংঘটিত অনুষ্ঠানকে উৎসব বলা হয়ে থাকে।

প্রধানত সর্বসাধারণ বা বহুজনের জন্যে নির্দিষ্ট দিন, সময় বা ঋতুতে এক বা একাধিক স্থান কিংবা বিশেষ কোনাে সমাজে বা সম্প্রদায়ে অনুষ্ঠেয় আনন্দজনক ক্রিয়া-কর্মই উৎসব। বাংলাদেশের উৎসবের বিভিন্নতা রয়েছে। এ উৎসবগুলােকে কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। যেমন—ধর্মীয় উৎসব, সামাজিক উৎসব, সাংস্কৃতিক উৎসব, পারিবারিক উৎসব, মনীষীদের স্মরণােৎসব ইত্যাদি। কালের বিবর্তনে এসব উৎসবের কোনােটির রূপ বদলায়, কোনােটি বিলুপ্ত হয়, আবার কোনােটি নতুন সৃষ্টি হয়। তবে সব উৎসবের মূলেই রয়েছে আনন্দ।

বাঙালির উৎসব

যে জাতির উৎসব নেই, সে জাতির প্রাণও নেই, চলার শক্তিও নেই। প্রাগৈতিহাসিককাল থেকেই বাঙালি উৎসব প্রিয়। বাঙালি যখন কৃষিভিত্তিক সভ্যতার পত্তন করেছিল তখন থেকেই অদ্যাবধি তার জীবনে নবান্ন, পৌষ-পার্বণ, গাজন, গম্ভীরা, টুসু, ভাদু, চড়ক, মহরম, ঈদ, নববর্ষ, আউনি-বাউনি ইত্যাদি উৎসবগুলাে বাঙালি জাতির ভাব-কর্ম চেতনার মূর্ত প্রকাশক। উৎসব অনুসরণ করে আসে মেলা। তাই বাঙালির কাছে যে-কোনাে উৎসব মানেই হলাে মেলা। উৎসব আর মেলা হলাে বাঙালির কাছে সমার্থক।

বাংলাদেশের উৎসবের শ্রেণিবিভাগ

বাঙালি উৎসব প্রিয়। বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদশের ঋতু। বাংলার ষড়ঋতুপৃথিবীর যেকোন সৌন্দর্য পিপাসু মনকে যেমন আকৃষ্ট করে ঠিক তেমনি বাংলাদেশের উৎসবের বৈচিত্র্যটা মানুষের মনকে আন্দোলিত করে। ঐতিহ্য পরম্পরায় বাঙালির উৎসবগুলোকে কয়েকটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলোঃ

  • ধর্মীয় উৎসব
  • সামাজিক উৎসব
  • সাংস্কৃতিক উৎসব

ধর্মীয় উৎসব

বাংলাদেশের ধর্মীয় উৎসবগুলাের মধ্যে মুসলমানদের হজ, ঈদুল-ফিতর, ঈদুল-আজহা, মুহররম, হিন্দুদের দুর্গাপূজা, সরস্বতীপূজা, কালীপূজা, বৌদ্ধদের বুদ্ধ-পূর্ণিমা, খ্রিস্টানদের বড়দিন ইত্যাদি প্রধান।

ঈদ

মুসলমান সমাজের সবচেয়ে বড় উৎসব হচ্ছে ঈদ। এ উৎসবে আনন্দ আছে, কল্যাণ আছে। বাংলাদেশে বেশ ঘটা করে ঈদ উৎসব পালিত হয়। বছরে দুবার ঈদ আসে। প্রথমে ঈদ-উল-ফিতর, পরে ঈদ-উল-আজহা। প্রথমটি দান করার উৎসব। দ্বিতীয়টি ত্যাগ করার উৎসব।

  • ঈদ-উল-ফিতরঃ চন্দ্র-বছরের একটি বিশেষ মাস হচ্ছে রমজান। রমজান মাসে মুসলমানগণ রােজা রাখে। রােজার আর এক নাম সিয়াম সাধনা। এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদ-উল-ফিতর। একে রোজার ঈদও বলা হয়।
  • ঈদ-উল-আজহাঃ ঈদ-উল-আজহা হচ্ছে আত্মত্যাগের ঈদ। একে কুরবার্ণির ঈদও বলা হয়। জিলহজ মাসের দশ তারিখে পালিত হয় এ উৎসব। তবে ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে যে কুরবাণি করা হয় তা ওই চাঁদের এগারাে এবং বারাে তারিখেও করা যায়। উভয় ঈদই বাংলাদেশে বেশ আঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়।
  • সকলেই সেদিন একটু ভালাে পােশাক পরে। একটু ভালাে খাবারের আয়ােজন করে। পাড়া-পড়শিকে খাইয়ে তারা খুশি করে। ঈদের নামাজের জন্যে তারা ঈদগাহ ময়দানে যায়। এ ময়দানকে তখন মিলন-ময়দান বলে মনে হয়। নামাজ শেষে তারা কোলাকুলি করে। সকল ভেদাভেদ ভুলে যায়। ঈদ-উৎসবের মূল বাণী হচ্ছে মানুষে মানুষে ভালােবাসা, সকলের মাঝে একতা ও শান্তি। “ভােগে নয়, ত্যাগেই সুখ“ ঈদ এ কথা মনে করিয়ে দেয়। ঈদ শুধু উৎসব নয়, একটি গভীর অর্থ নিহিত আছে ঈদে। সকল বাঙালি মুসলমানকে এটা বুঝতে হবে। তবেই ঈদ-উৎসব সফল হবে।মুহররমমুহররম আরবি মাসের প্রথম মাস। এ মাসটি মুসলমানদের নিকট অতি পবিত্র। কারবালার ময়দানে ইমাম হােসেনের শহীদ হবার ঘটনা খুবই শােকাবহ। মুহররম মাসের দশ তারিখে ইমাম হােসেন শহীদ হন। আর তাই প্রতি বছর মুহররম মাসের দশ তারিখে এ শােকাবহ ঘটনার কথা মনে করে মুসলমানগণ হােসেনের জন্যে শােক প্রকাশ করেন। ওই দিনকে ‘আশুরা’ বলে। গভীর ভাবের আবেশে মুহররম উৎসব পালিত হয়।শিয়া মুসলমানগণ হােসেনের মাজারের অনুকরণে তাজিয়া বানায়। এই তাজিয়া নিয়ে তারা মিছিল করে। মিছিলকারীরা তরবারি, ঢাল, তীর-ধনুক ইত্যাদি হাতে করে যুদ্ধের অভিনয় করে। বর্ষা, লাঠি ইত্যাদিও যুদ্ধে ব্যবহূত হয়। মিছিলকারীদের মুখে ‘হায় হােসেন, হায় হােসেন রব শােনা যায়। ঢাকায় মুহররমের এই মিছিল হােসেনি দালান থেকে বের করা হয়। এ ছাড়া মানিকগঞ্জের গড়পাড়া, কিশােরগঞ্জের অষ্টগ্রাম এবং সৈয়দপুরে মুহররম উৎসব পালিত হয়।শবেবরাতবাংলাদেশের মুসলমান সমাজের একটি বড় উৎসব হচ্ছে শবেবরাত। এ রজনীতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের আগামী বছরের ভাগ্য নিরূপণ করেন। সারা বছর ধরে কার ভাগ্যে কী ঘটবে, এ রাতে তা নির্ধারিত হয়। চন্দ্র-বছরের একটি মাস ‘শাবান’। এই শাবান চাঁদের ১৪ তারিখের দিবাগত রাতই হচ্ছে শবেবরাত। এই রাতেই বাংলাদেশের মুসলমানেরা শবেবরাতের উৎসব পালন করে। এই পুণ্যরাতে নামাজই উৎসবের মূল বিষয়। এই উৎসবে তাই কোনাে আবেগ-উচ্ছাস নেই। আছে কেবল সাধনা।দুর্গাপূজাদুর্গাপূজা হিন্দু সমাজের বড় ধর্মীয় উৎসব। একদিকে দুর্গাদেবীর পূজা, অপরদিকে সবার পরশে পবিত্র করা পর্ব। এ কারণেই এই পূজার নাম দুর্গোৎসব। এই উৎসবের মতাে হিন্দু সমাজের আর কোনাে উৎসবই এমন আঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয় না। এ কারণে দুর্গাপূজাকে ‘কলির অশ্বমেধ’ বলা। দুর্গাপূজার একটি পৌরাণিক কাহিনি আছে। শাস্ত্রে আছে দুর্গম নামক অসুরকে বধ করায় মায়ের নাম দুর্গা। দুর্গম অসুরের কাজ ছিলাে জীবকে দুর্গতি দেওয়া। সেই দুর্গমকে বধ করে যিনি জীবজগতকে দুর্গতির হাত থেকে রক্ষা করেন, তিনি ‘মা দুর্গা’। বাংলাদেশে দুর্গাপূজা হয় শরৎকালে। বাসন্তী পূজার প্রচলনও আছে। তবে তা ব্যাপক নয়। অযােধ্যার রাজা ছিলেন দশরথ। তার পুত্র রামচন্দ্র। এই রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতাকে করেন লঙ্কার রাজা রাবণ। তখন রাবণকে বধ করে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য রামচন্দ দুর্গাপূজা করেন। ওই পূজা হয়েছিল শরৎকালে। এজন্য এ পূজার নাম শারদীয় দুর্গাপূজা।চৈতপূজার উৎসবচৈতপূজার উৎসব হিন্দু সমাজের একটি বড় অনুষ্ঠান। প্রতি বছর চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহে এ উৎসব পালিত হয়। ওই সপ্তাহের প্রথম দিকে উৎসব শুরু হয়, চৈত্র সংক্রান্তির দিন শেষ হয়। এ উৎসবের অন্য নাম চড়কপূজার উৎসব।রথযাত্রাবাংলাদেশের হিন্দু সমাজের আর একটি উৎসব রথযাত্রা। আষাঢ় মাসে এ উৎসব পালিত হয়। এ উৎসবের সাথে ‘যাত্রা’ কথাটি যােগ হয়েছে। যাত্রা বলতে সাধারণত ‘গমন’ বােঝায়। তবে এর বিশেষ অর্থ হচ্ছে পবিত্র তীর্থযাত্রার উৎসব। সে জন্যই বলা যায় রথযাত্রা, স্নানযাত্রা ইত্যাদি। রথযাত্রার দেবতা গমন করেন, ভক্তপূজারি তাঁর পিছু পিছু যান। জগন্নাথ দেবের রথযাত্রায়ও তাই ঘটে। এই যাত্রা উৎসব জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা থেকে শুরু হয়। শেষ হয় উলটো রথে।জন্মাষ্টমীবাংলাদেশের হিন্দু সমাজের আর একটি বিশেষ উৎসব জন্মাষ্টমী। বিভিন্ন এলাকায় বেশ ঘটা করে এ উৎসব পালিত হয়। বর্ণ-গােত্র নির্বিশেষে সকল হিন্দু এ উৎসবে ভক্তিতে, আনন্দে এবং আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠে। জন্মাষ্টমী হচ্ছে শ্রবণ বা ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথি। শ্রীকৃষ্ণ জন্ম গ্রহণ করেন এই তিথিতে হিন্দুদের কাছে এই মাস তাই অতি পবিত্র। প্রচলিত বিশ্বাস এই যে, এ মাসের ওই বিশেষ দিনের উপবাসেই সাত জনমের পাপ মাপ হয়। অন্যান্য পুণ্যদিবসে মান ও পূজা করলে যে ফল পাওয়া যায়, জন্মাষ্টমীর দিনে স্নান-পূজায় তার কোটি গুণ ফল মেলে।বুদ্ধ-পূর্ণিমাপ্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে আগত এক মহামানবকে কেন্দ্র করে বুদ্ধ-পূর্ণিমা উৎসব শুরু হয়। বাংলাদেশের বৌদ্ধ সমাজের এক অতি পবিত্র উৎসব। এটি মূলত বৈশাখি পূর্ণিমা। এ তিথিতে নেপালের কপিলাবস্তু ও দেবদহ রাজ্যের মধ্যবর্তী স্থান লুম্বিনীর শালবনে বুদ্ধদেবের জন্ম হয়। ঠিক এমনি দিনে বুদ্ধ গয়ার বােধিবৃক্ষ-মূলে বুদ্ধদেব বুদ্ধত্ব প্রাপ্ত হন। এ পুণ্যতিথিতেই কুশীনগরে মল্লাদের শালবনে জমক শালবৃক্ষ-মূলে বুদ্ধদেব মহানির্বাণ লাভ করেন। এই দিনটি পুণ্যস্মৃতি বিজড়িত ‘বৈশাখি পূর্ণিমা বা বুদ্ধ-পূর্ণিমা’। এটি বৌদ্ধ সমাজের খুবই গৌরবময় অনুষ্ঠান। এ উৎসবের মূল কথাই হচ্ছে বুদ্ধের বাণী-স্মরণ।প্রবারণা ও কঠিন চীবর দানপ্রবারণা ও কঠিন চীবর দান বৌদ্ধ সমাজের একটি বড় উৎসব। ‘প্রবারণা’ কথার অর্থ হচ্ছে বিশেষভাবে বারণ বা নিবারণ করা। বৌদ্ধ বিধানমতে প্রবারণার আসল অর্থ ত্রুটি বা নৈতিক স্খলন নির্দেশ করার জন্য অনুরােধ জানানাে। একজন শিষ্য নিজের দোষ দেখিয়ে দেবার জন্য অপরকে অনুরােধ করেন। তখন ওই অপর ব্যক্তি শিষ্যকে তার দোষ দেখিয়ে দেন। এটাই এ উৎসবের মূল তত্ত্ব। প্রবারণা উৎসব হয় শরৎকালে। শরতের মনােরম পরিবেশে বাঙালি বৌদ্ধদের ঘরে ঘরে এ উৎসবের সাড়া জাগে।বড়দিনবাংলাদেশের আর একটি বিশেষ উৎসব বড়দিন। এর ইংরেজি নাম ক্রিসমাস। খ্রিস্টান সমাজের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব এটি। এ উৎসবের মূল বিষয় হচ্ছে খ্রিস্টের আবির্ভাব উপলক্ষে আনন্দভােগ। বড়দিন জিশুখ্রিস্টের জন্মদিন। পঁচিশে ডিসেম্বর তারিখে বড়দিন পালিত হয়। এ ছাড়াও বাংলাদেশে আরও অনেক ছােটখাট ধর্মীয় উৎসব পালন করা হয়।সামাজিক উৎসববাংলাদেশের সামাজিক উৎসবগুলাের মধ্যে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও শহীদ দিবসকে বাংলাদেশে জাতীয় উৎসবের মর্যাদা দেয়া হয়ে থাকে।স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং একুশে ফেব্রুয়ারি২৬ মার্চকে স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ ডিসেম্বরকে বিজয় দিবস হিসেবে আনন্দ উৎসবে পরিণত করা হলেও একুশে ফেব্রুয়ারিকে শােক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৫২ সালের এ দিনে বাংলাভাষা তথা মাতৃভাষার জন্য সংগ্রাম করে সালাম, বরকত, রফিক, সফিউর, জব্বারসহ বাংলার অনেক দামাল ছেলে জীবন দিয়েছে। এ দিনটিকে উপলক্ষ করে বাংলাদেশে বইমেলা এবং নানা সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।বাংলা নববর্ষবাংলা নববর্ষ বাঙালিদের একটি প্রধান সামাজিক উৎসব। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি হচ্ছে পয়লা বৈশাখ। পুরাে বছরের দুঃখ, বেদনা, নৈরাশ্য পেছনে ফেলে বছরের নতুন এ দিনটি আসে। আমাদের মন তখন খুশিতে ভরে যায়, আমরা মেতে উঠি। বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ উদযাপন এদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্য। এই দিনটি উদযাপনের মাধ্যমে আমরা আমাদের সেই প্রাচীনতম ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক প্রবাহকে বাঁচিয়ে রেখেছি। নতুনকে গ্রহণ করার, পুরাতনকে মুছে ফেলার ও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষাও আমরা গ্রহণ করে থাকি নববর্ষ উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে। এ দিনটির। গুরুত্ব এখানেই। এ দিনে ‘হালখাতা’, ‘পুণ্যাহ’, ‘বৈশাখি মেলা’ ইত্যাদি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। হালখাতা বাংলাদেশের মানুষের একটি জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান। এ উৎসবের মধ্য দিয়ে নতুন করে হিসাবের খাতা চালু করা হয়। মিষ্টিমুখের মধ্য দিয়ে শুভ নতুন দিন কামনা করা হয়। তবে পহেলা বৈশাখের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান মেলা। সমগ্র বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ ও বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে প্রায় ২০০ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের উৎসবাদির মধ্যে সর্বজনীন উৎসব হিসেবে নববর্ষ শ্রেষ্ঠ উৎসব।

নবান্ন

নবান্ন আসলে শস্যের উৎসব। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে নবান্ন হয়ে থাকে। তবে পৌষ পার্বণেও কোনাে কোনাে অঞ্চলে নবান্ন উৎসব পালিত হয়। নবান্ন মূলত কৃষকের উৎসব।

পৌষ-পার্বণ

পৌষ-পার্বণ মূলত পিঠার উৎসব। এ উৎসব এখনাে বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনে আনন্দের বার্তা বয়ে আনে। এছাড়া পৌষ সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি উড়ানাে উৎসব। একে সাকরাইন উৎসব বলা হয়। এ উৎসবটি পুরােনাে ঢাকাবাসীরা উদযাপন করে। এ ছাড়াও বিয়ে, বনভােজন ইত্যাদি সামাজিক উৎসব পালিত হয়ে থাকে।

সাংস্কৃতিক উৎসব

একুশের বইমেলা, আলােচনা সভা, ঢাকা বইমেলা , প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ , ফেডারেশন কাপ ফুটবল লিগ প্রভৃতি বাংলাদেশের প্রধান প্রধান সাংস্কৃতিক উৎসব। সংস্কৃতিমনা জনগণ এসব উৎসব থেকে জ্ঞান এবং আনন্দ—দুটোই লাভ করে থাকে। একুশের বইমেলা ও আলােচনা উৎসব বাংলাদেশের মানুষকে ক্রমান্বয়ে সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই এ উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম।

পারিবারিক উৎসব

নবজাতকের জন্মলগ্ন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নানাবিধ পারিবারিক উৎসব বর্তমান। এগুলাের মধ্যে খাৎনা, অন্নপ্রাশন, বিয়ে, শ্রাদ্ধ, নবান্ন, পৌষপার্বণ প্রভৃতি প্রধান। নবজাতকের নাম রাখার দিনেও পারিবারিক উৎসবের আয়ােজন করা হয়। অনেক পরিবারেই জন্মােৎসব পালন করা হয় অত্যন্ত আঁকজমকের সঙ্গে। এছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের পারিবারিক উৎসবের প্রচলন লক্ষ করা যায়। এসব উৎসবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ তাদের জীবনকে পূর্ণ করে তােলে।

মনীষীদের স্মরণােৎসব

বাংলাদেশে প্রায়ই মনীষী স্মরণােৎসব অনুষ্ঠিত হয়। মনীষী-স্মরণােৎসবের মধ্যে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মীর মশাররফ হােসেন, মহাকবি কায়কোবাদ, ইসমাইল হােসেন সিরাজী, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লিকবি জসীমউদ্দীন, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান প্রধান। তাঁদের জন্ম, মৃত্যু এবং অবদান সম্পর্কে প্রতিবছরই আলােচনা ও স্মরণােৎসব অনুষ্ঠিত হয়। কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। বছরব্যাপী তাঁর জন্ম। শতবার্ষিক উৎসব পালন করা হয়েছে। ২৫ বৈশাখ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মােৎসব পালন করা হয়। এছাড়া এ.কে.ফজলুল হক, হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন। আহমদসহ বাংলাদেশের নেতাদের মৃত্যুদিন ও জন্মােৎসব অতি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়। প্রতিবছর এসব জাতীয় নেতার স্মরণ করা হয় তাঁদের অবদানের জন্য।

বাংলাদেশের উৎসবের সামাজিক দিক

বাঙালির সর্ববৃহৎ সার্বজনীন উৎসব হলাে পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ। এদিন বাঙালি নতুন সাজে বৈশাখকে বরণ করে। কোথাও কোথাও বৈশাখী মঙ্গল শােভাযাত্রা বের হয়। সে শােভাযাত্রায় থাকে নানারকমের পশুপাখির মুখােশ, ঘােড়ার গাড়ি, গরু ও মাহিষের গাড়ি, ঢােলবাদ্যসহ তা নগরের রাজপথ প্রদক্ষিণ করে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ছাড়াও প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শহরে নববর্ষ জাকজমকভাবে পালন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে বসে মেলা। এ মেলা কোথাও একদিন, কোথাও তিনদিন, কোথাও সাত দিনব্যাপী হয়ে থাকে। আগে নববর্ষের আসল রূপ খুঁজে পাওয়া যেত গ্রাম-বাংলার নববর্ষের মেলায়। নদীর ধারে বটের ঝুরির নিচে বসতো সে মেলা। সে মেলায় পাওয়া যেত হরেক রকমের সদাই-মিষ্টিমিঠাই, গুড়ের জিলাপি, রসগােল্লা, কদমা, খাজা, বাতাসা, মুড়ি-মুড়কি, তিলের নাড়ু, ঘুড়ি আরাে কত কী? এছাড়াও মেলায় পাওয়া যেত সাংসারিক সকল দ্রব্য-লাঙল, জোয়াল, মই, দা-বটি-খন্তা, কুড়াল। আরাে ছিল- মাটির পুতুল, কাঠের ঘােড়া, টিনের জাহাজ, কাপড়ের ও কাগজের পুতুল, পাখি, কত রকমের বাঁশি-

সবার চেয়ে আনন্দময়
ওই মেয়েটির হাসি
এক পয়সায় কিনেছে ও
তালপাতার এক বাঁশি।
ক্ষণিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্যটি এখন নতুন করে শহুরে স্থান দখল করেছে। বাঙালি হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সকলেই তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলাে ভাবগম্ভীর পরিবেশে সম্পূর্ণ করে থাকে। এ উৎসবগুলােতে প্রত্যেক ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্মীয় পােশাকে নিজেদের সাজিয়ে তােলে। প্রতিটি পরিবারে নানারকমের নানা স্বাদের রান্নার আয়ােজন হয়। একে অপরের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ ঘটে, কুশল বিনিময় হয়। এক সঙ্গে চলে ভােজন পর্ব। এভাবেই বাঙালির কাছে উৎসব এক নতুন বার্তা নিয়ে আসে।

সামাজিক জীবনে উৎসবের তাৎপর্য বা গুরুত্ব বা বৈশিষ্ট্য

সামাজিক জীবনে উৎসবের তাৎপর্য গভীর ও ব্যাপক। উৎসব মানুষের এক সামাজিক চেতনার আনন্দমুখর অভিব্যক্তি। তার সংস্কৃতির অন্যতম প্রাণ-প্রবাহ। উৎসবের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পায় জাতির আত্মপরিচয়। উৎসবই তার প্রকৃত দর্পণ। মানুষের উৎসব কবে? মানুষ যেদিন আপনার মনুষ্যত্বের শক্তি বিশেষভাবে স্মরণ করে, বিশেষভাবে উপলদ্ধি করে, সেইদিন। উৎসবে থাকে না প্রাত্যহিকতার মালিন্য-স্পর্শ, থাকে না প্রতিদিনের সাংসারিক সুখ-দুঃখের ক্ষুব্ধ চিত্র। উৎসবের মধ্য দিয়েই আমরা সর্বজয়ী মানবশক্তি উপলব্ধি করি। উৎসবের মধ্যেই ছড়িয়ে আছে। বাঙালির প্রাণের আকৃতি। আছে তার জীবনবােধ। আনন্দমুখর এই উৎসবপ্রাঙ্গণই হল তার মিলন-কামনার অন্যতম প্রেক্ষাপট। উৎসব তার সৃজনশীল মনেরই উচ্ছলিত ভাববিগ্রহ। এখানে তার ‘বার মাসে তের পার্বণ’-এর সমারােহ। উৎসবপ্রাচুর্য প্রমাণ করে তার একদা আর্থিক সচ্ছলতা, স্বতঃস্ফূর্ত প্রাণপ্রবাহ। সেদিন তার হাতে ছিল উদ্বৃত্ত অবকাশ-সময়। মনে ছিল সৃষ্টির বেদনাবিলাস। তাইতো কবি বলেছেন-

নিজন বিজন দিবসে
আজ উৎসবের ছটা
তাই প্রাণে লাগিয়ে দোলা
ওরে আয় সকলে যাই মেলায়

জাতীয় জীবনে উৎসবের গুরুত্ব

উৎসবের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পায় জাতির আত্মপরিচয়। উৎসবের মধ্যেই বাঙালি খুঁজে পেয়েছে তার জীবন-সাধনার সিদ্ধি। অনুভব করেছে, ‘প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র, দীন, একাকী- কিন্তু উৎসবের দিন বৃহৎ- সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ- সেদিন। সে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ।’ উৎসব ব্যতীত মানুষে মানুষে মিলনের এত বড় তীর্থ আর কিছুতেই নেই। গ্রামে যখন উৎসব হয়, তখন সমগ্র গ্রাম আনন্দে ও পরম শুভবােধে একটি পরিবারের রূপ নেয়। দেশব্যাপী যখন উৎসব হয়, তখন সমগ্র দেশ ও জাতি বৈচিত্র্যের মধ্যেও এক অখণ্ড ঐক্যের অনুভূতিতে নিজের সার্থকতা যেন খুঁজে পায়। বাংলাদেশের সভ্যতার এটাই সমন্বয়ী প্রতিভা এবং অনন্য বৈশিষ্ট্য।

প্রত্যেক জাতির জীবনে উৎসবের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশের জনজীবনেও উৎসব একটি সজীব ভূমিকা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশকে জানতে হলে এর জনজীবনের সঠিক পরিচয় জানা দরকার। সে পরিচয়ের অনেকটা পাওয়া যায় বাংলাদেশের উৎসবে। আর তাই বাংলাদেশের উৎসবের উৎস, স্বরুপ ও ঠিকানা সম্পর্কে চুড়ান্ত খোঁজখবর অতি জরুরি। কেননা, এতে বাংলাদেশের জনজীবনের মৌলিক ঐক্যের সন্ধান মিলবে। সহজ কথায় বলা যায়, বাংলাদেশের। পরিচয় রয়েছে উৎসবের মধ্যে। উৎসবে কেবল সমাজ, ইতিহাস ও সংস্কৃতির উপাদান লুকিয়ে নেই, মানুষে মানুষে সম্পর্কের উত্তম দিকগুলােও এতে লুকিয়ে রয়েছে।

উপসংহার

উৎসব মানুষকে সাংসারিক দুঃখ-কষ্ট থেকে সাময়িক মুক্তি দেয়। একটুক্ষণের জন্য হলেও মানুষ একঘেয়েমি অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করে উৎসবে এক নতুন জীবনের স্বাদ পায় – এজন্যই কবি বলেছে-

একদিন ঠিক মাটিতে হারাবো তুচ্ছ জীবন-নদী,
তার আগে সখী কোন ক্ষতি নেই উৎসব করি যদি।

বেদনাবিধুর জীবনে উৎসব এক নতুন প্রাণ ও নির্মল আনন্দ সঞ্চার করে। তাই উৎসবের শালীনতা ও পবিত্রতা রক্ষা করার ক্ষেত্রে আমাদের সকলেরই সচেতন এবং আন্তরিক হওয়া প্রয়ােজন। দলমত ভুলে গিয়ে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে উৎসবকে করে তুলতে হবে ঐক্য ও মিলনের প্রতীক। তাহলেই বাংলাদেশের উৎসব আমাদের কাছে নির্মল আনন্দের উৎস এবং কল্যাণের দৃষ্টান্ত হতে পারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত আমরাও বলতে চাই-

আমার আনন্দ সকলের আনন্দ হউক, আমার শুভ সকলের শুভ হউক, আমি যাহা পাই, তাহা পাঁচজনের
সহিত মিলিত হইয়া উপভােগ করি- এই কল্যাণী ইচ্ছাই উৎসবের প্রাণ।

3. জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন।

0/20RB-23

ভূমিকা: তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় বিশ্বে আবহাওয়াগত মারাত্মক বিপর্যয় শুরু হয়েছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই বিশেষ করে বাংলাদেশে স্বাভাবিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় বন্যা, টর্নেডো, ঝড়ঝঞ্ঝা, সাইক্লোনের মাত্রা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পে পেয়েছে এবং ঘটেছে পরিবেশ বিপর্যয় এ বিপর্যয়ের ফলে মানুষের জীবন আজ হুমকির সম্মুখীন। পৃথিবী মানুষের বসবাস উপযোগী থাকতে পারবে কি পারবে না, এ বিষয়ে সর্বত্র চলছে জোর আলোচনা। অনুষ্ঠিত হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তনের ওপর বিশ্ব সম্মেলন। পরিবেশ ও প্রকৃতির ওপর মানবসমাজের অত্যাচার এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে, প্রকৃতি এখন প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে। প্রকৃতির এ বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির মেলবন্ধ ঘটানো এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের স্বরূপ: বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, বৃক্ষনিধন, শিল্প-কারখানা স্থাপন, দূষণ ও নগরায়ণের ফলে আবহাওয়ায় একটি দীর্ঘস্থায়ী বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। একেই বলা হয় জলবায়ু পরিবর্তন। তবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নই জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তাই জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের অবশ্যই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সম্পর্কে জানতে হবে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধিকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলা হয়। যেহেতু পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে প্রতিনিয়ত নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ইত্যাদি আছড়ে পড়ছে জনবসতির ওপর।

জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান রূপ: গত ১০০ বছরে পৃথিবীর পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা প্রায় ১০ সেলসিয়াস (০.৯৮ ± ০.১৮০ সেলসিয়াস অথবা ১.৩ ± ০.৩২০ ফারেনহাইট বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে গত দশ বছরে যেসব ঝড়, বন্যা ও দাবানলের সৃষ্টি হয়েছে তা এ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রত্যক্ষ ফল। জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১০ সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর জলবায়ুতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। রেকর্ড থেকে জানা যায়, বিশ্বের উষ্ণতম বিশটি বছরের মধ্যে উনিশটি ১৯৮০ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে। ২০০০-২০০৯ বিশ্বের উষ্ণতম দশক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ: পরিবেশ ও প্রকৃতির ওপর মানবসমাজের

অত্যাচার ইতোমধ্যে এমন একপর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে, এখন তারা প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে। একদিকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গমন ক্রমাগত বাড়ছে, অন্যদিকে ‘উন্নয়ন’-এর নামে প্রতিনিয়ত বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে। ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আরও বেশি পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, ক্লোরোফ্লোরো কার্বনসহ আরও কিছু মারাত্মক ক্ষতিকর গ্যাস মজুদ হয়ে গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টি করছে। এ কারণে সূর্যের তাপ যে পরিমাণে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করছে, তার সবটা বের হতে পারছে না। তা ছাড়া এসব গ্যাসের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলের বাইরের দিকে যে ওজোন গ্যাসের আবরণ আছে, তা ক্রমেই ক্ষয় হচ্ছে। উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুর ওপর ভাগের ওজোন আবরণে ইতোমধ্যে বড়ো ফাটল সৃষ্টি হয়ে তা ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। ওজোন আবরণের ফলে আগে যেভাবে পৃথিবীর বুকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির আগমন বাধাগ্রস্ত হতো, এখন এ ফাটলের ফলে তার প্রবেশ সেই পরিমাণে আটকানো যাচ্ছে না। কার্বন ডাই- অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি, ওজোন আবরণের ক্ষয়বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়ছে। একই সঙ্গে এ বৃদ্ধির গতিও বাড়ছে। ফলে বদলে যাচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: জলবায়ু পরিবর্তন প্রকৃতিতে ফেলছে তার পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া। গলে যাচ্ছে পাহাড়ের মাথার বরফ, মেরু অঞ্চলের হিমবাহ। এসবের ফলে সমুদ্রের পানির স্তর ওপরে উঠে আসতে শুরু করেছে। অবস্থা এ রকম চলতে থাকলে পানির স্তরের উচ্চতা বাড়তে বাড়তে উপকূল ধরে ভেতরে প্রবেশ করতে থাকবে সমুদ্র ও সমুদ্রের লোনা পানি। জলোচ্ছ্বাসের প্রকোপ বাড়বে, প্লাবিত হতে থাকবে বিস্তীর্ণ অঞ্চল

সমুদ্রে তলিয়ে যাবে কোটি কোটি মানুষ ও জীবজন্তুর আবাসভূমি ও বনাঞ্চল। ১০ সেলসিয়াস উত্তাপ বাড়লেই বাংলাদেশের প্রায় ১৭% ভূমি সমুদ্রে তলিয়ে যাবে বলে অনেক গবেষক আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর বিজ্ঞানীদের মতে, বিশ্ব তাপনের প্রভাবে বর্তমানে প্রতি বছর দেড় লাখের বেশি মানুষ শুধু অপুষ্টি ও ম্যালেরিয়ার কারণে মারা যাচ্ছে। এ সংখ্যা ২০২০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ বেড়ে তিন লাখ হবে। ২০০৪ সালে ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে যে, বিশ্ব তাপনের প্রভাবে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে ১০ লাখ প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে কর্মসূচি: জলবায়ু পরিবর্তন ইতোমধ্যে বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ কারণে ১৯৭২ সালে স্টকহোমে প্রথম জাতিসংঘ পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আমাদের করণীয় বিষয়ে একাধিক ‘ধরিত্রী সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৩-১৪ই নভেম্বর ইউএনএফসিসি-র ১৯২টি সদস্য-দেশের অংশগ্রহণে জার্মানির বন শহরে COP-23 জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না আনতে পারলেও কয়েকটি ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

উপসংহার: জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের অস্তিত্বের প্রধান সংকট। এর ফলে বিশ্বের ভৌগোলিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য (Bio-diversity)। কৃষির ওপরেও এর বিরূপ প্রভাব লক্ষণীয়। তবে বাংলাদেশের ওপরে এর প্রভাব অত্যন্ত বেশি। অনেক গবেষকের মতে, বাংলাদেশের একদিকে মরুকরণ, অন্যদিকে বন্যা, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতির জন্য জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী। অন্য গবেষকরা বলছেন, এর জন্য ভারত কর্তৃক বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নদীতে দেওয়া বাঁধই দায়ী। কিন্তু এ বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে বলা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড়ো শিকার বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক মহলের যেমন নজর দেওয়া উচিত, তেমনিভাবে আমাদেরও উচিত নানামুখী পদক্ষেপ নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের করালগ্রাস থেকে মুক্তির উপায় বের করা।

4. স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

0/21RB-23

ভূমিকা: বাংলাদেশ দক্ষিণ-এশিয়ার উন্নয়নশীল একটি দেশ। নদীমাতৃক এদেশটিতে দেশি-বিদেশি অনেক নদী জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তাই স্বভাবতই এদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের প্রধান ৩টি নদী হলো পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা। এদের মধ্যে যমুনা ও মেঘনা নদীর ওপর দিয়ে ইতিমধ্যে সেতু তৈরি হয়েছে। বাকি ছিল শুধু পদ্মা নদী। দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের লোকজনকে পদ্মা নদী পার হয়ে রাজধানী ঢাকায় আসা-যাওয়া করতে হয়। তাই বর্তমান সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য জোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশ অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক উভয়ভাবেই লাভবান হবে। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য প্রতি এক টাকা খরচের বিপরীতে দুই টাকা লাভবান হবে বাংলাদেশ।’

পদ্মা সেতুর ইতিহাস: ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মেনিফেস্টোর মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল অন্যতম। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করে। এজন্য বিশ্বব্যাংক, ADB (Asian Development Bank) জাইকা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অজুহাত তুলে বিশ্বব্যাংক ঋণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সাথে সাথে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো পদ্মা সেতু নির্মাণে ঋণ প্রদান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর বিভিন্ন তর্ক-বিতর্কের পর আওয়ামীলীগ সভানেত্রী এবং তৎকালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা মহান জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন এবং গত ২৫ জুন ২০২২ সালে দেশবাসীর জন্য স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন: গত ২৫শে জুন ২০২২ সালে একটি জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শুভ উদ্বোধন করেন আওয়ামিলীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারা দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ ভবন আলোকসজ্জা করা হয় এবং সন্ধ্যার পর আতশবাজির মধ্যদিয়ে এই দিনটি স্মরণীয় করে রাখা হয়। এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় সকল দেশি বিদেশি অতিথিদের এবং পদ্মা সেতুর অর্থায়নে যারা ষড়যন্ত্র করেছিলেন তাঁদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর মধ্যদিয়ে সরকারের উদারতা প্রমাণিত হয় এবং সারা বিশ্বর মানুষকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে বাংলাদেশ চাইলে সবই পারে।

পদ্মা সেতুর বর্ণনা: দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার, প্রস্থ ২১.১০ মিটার। মোট পিলার সংখ্যা ৪২টি। ৪০টি নদীর মধ্যে, ২টি সংযোগ সেতুর সাথে। পাইল সংখ্যা ২৬৪টি। নদীর ভেতরের ৪০টি পিলারে ৬টি করে মোট ২৪০টি এবং সেতুর দুই পাশের দুটি পিলারে ১২টি করে মোট ২৪টি পাইল থাকবে। পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসানো হচ্ছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয়: প্রথমে ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস করে। ২০১১ সালে সংশোধিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যয় সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব: পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার জনগণের ভাগ্য বদলাবে। সাথে রাজধানী ঢাকার পৌনে দুই কোটি মানুষের খাদ্যদ্রব্যের জোগান সুলভ মূল্যে সম্ভব হবে। দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পাবে দ্রুত হারে।

শিল্পক্ষেত্রে: পদ্মা সেতু দিয়ে শিল্পের বেশিরভাগ কাঁচামাল আসবে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে। ফলে ঢাকা এবং চিটাগাংয়ের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামাল সংকটে ভুগবে না। কাঁচামাল সরবরাহ খরচ অনেক গুণ হ্রাস পাবে। দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান সরকারের ভিশন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে।

পদ্মা সেতুর রাজনৈতিক গুরুত্ব: পদ্মা সেতু বর্তমান সরকার রাজনৈতিকভাবে খুবই লাভবান হচ্ছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছিল। দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভোট সংখ্যা আওয়ামী লীগের জন্য সুবিধাজনক অবস্থানে যেতে পারে। সরকার হিসেবে আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতুকে সফলতা হিসেবে দেখাতে পারছেন।

বৈশ্বিক পরিচিতি: ‘পদ্মা সেতু’ এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম সেতু হবে। বিশ্বের প্রথম ১০টি সেতুর মধ্যে নাম আসবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা। ঋণ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাথে যে বাগ্-বিতণ্ডা হয়েছিল তা সারাবিশ্বে আলোচিত হয়েছিল। সেতুর কাজ সমাপ্ত হওয়াতে বর্তমান সরকার সক্ষমতা এবং সফলতার পরিচয় পাচ্ছে, অপরদিকে বিশ্বব্যাংকের প্রতি সমালোচনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিক থেকে বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক সফলতার পরিচয় পাবে ব’লে আশা করা যাচ্ছে।

পদ্মা সেতুর নেতিবাচক প্রভাব: পদ্মা সেতুর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক থাকলেও এর কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। দুই পাড়ের ফেরি ঘাটের লোকজনের কর্মসংস্থান লোপ পাবে। লঞ্চ, স্টিমার, ফেরিমালিকদের ব্যবসায় মন্দা দেখা দেবে। সেতুর উভয় পাশে নতুন শহর গড়ে উঠবে যাকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে। ওই এলাকার গরিব মানুষের কর্মসংস্থান লোপ পাবে। তবে আশা কির সরকার তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিবেন।

উপসংহার: পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্পকারখানা, গার্মেন্টস, গোডাউন গড়ে উঠবে। বিদেশিরা ওইসব এলাকায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে। গতিশীল হবে অর্থনীতির চাকা। ব্যবসা-বাণিজ্যে আসবে নতুন গতি। উন্নত হবে দেশ, উন্নত হবে ওই এলাকার মানুষের জীবনমান। পূরণ হবে বাঙালির একটি স্বপ্নের নাম, যা অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেবে।

5. জাতীয় উন্নয়নে তথ্য-প্রযুক্তি।

0/20RB-23

ভূমিকা: বিজ্ঞানকে মানবকল্যাণে প্রয়োগ করার কৌশল হচ্ছে প্রযুক্তি। মানুষ প্রতিনিয়ত গবেষণার মাধ্যমে প্রযুক্তির উন্নতি সাধন করছে। মানবজীবন বিকাশের যথার্থ উপায় এখন প্রযুক্তিবিদ্যা। তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বের সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূল হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব পরিমন্ডলে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় করতে এবং একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত হতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির বিকল্প নেই। দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে মহাকাশ গবেষণা পর্যন্ত সকল কাজকর্মে তথ্য-প্রযুক্তির বিজয় ঘোষিত হচ্ছে। আমাদের জাতীয় উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা ও গুরুত্ব অনেক। জাতীয় উন্নয়নের নানা ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে।

তথ্যপ্রযুক্তি ও জাতীয় উন্নয়নের ধারণা: তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, ব্যবস্থাপনা এবং সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতির সমন্বিত ও সুবিন্যস্ত রূপকে তথ্যপ্রযুক্তি বলে। ব্যাপক অর্থে কম্পিউটার, মাইক্রো ইলেকট্রনিক্স, টেলিকমিউনিকেশন ইত্যাদি বিষয় তথ্যপ্রযুক্তির মধ্যে পড়ে। এছাড়া ডাটাবেজ, সফটওয়‍্যার উন্নয়ন ইত্যাদি তথ্যপ্রযুক্তির অন্তর্গত। সাধারণ অর্থে টেলিফোন, ফ্যাক্স, টেলেক্স, ইন্টারনেট ইত্যাদিকে তথ্যপ্রযুক্তি বলে।

জাতীয় উন্নয়ন বলতে বোঝায় সামগ্রিক উন্নয়ন। অর্থাৎ জাতীয়ভাবে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক উন্নয়ন। এ দেশে বিগত এক যুগে তথ্যপ্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটেছে। এখনকার তরুণ প্রজন্ম তথা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির ফলে জাতীয়ভাবে আয় বাড়ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান সমৃদ্ধ হচ্ছে।

তথ্যপ্রযুক্তি ও বাংলাদেশ: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম প্রতিশ্রুতি এদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলা। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার মূলভিত্তিই হলো তথ্যপ্রযুক্তি। সরকার তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যেমন-

ক. দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য প্রায় সারা দেশকে ডিজিটাল টেলিফোন ও ইন্টারনেটের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

খ. সরকার ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা’ অনুমোদন করেছে।

গ. বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য বিদেশে বাজারজাতকরণের জন্য ‘আইসিটি বিজনেস প্রমোশন সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে।

ঘ. এনসিটিবি প্রণীত কারিকুলামে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টি বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে এবং প্রযুক্তিভিত্তিক পাঠদান প্রক্রিয়া, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফল প্রকাশ ইত্যাদি ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটেছে সমধিক। সেলফোন এবং ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক এখন সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও বৈপ্লবিক মাত্রা সূচিত করেছে। অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম বুথ, মোবাইল ব্যাংকিং প্রভৃতি সেবা সারাদেশে বিস্তৃত হয়েছে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্যে রেজিস্ট্রেশন এখন সেলফোনের মাধ্যমেই সম্ভব হচ্ছে। ই- মেইল, ফেসবুক আমাদের নৈমিত্তিক জীবনযাপনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তারপরও উন্নত দেশগুলোর তথ্যপ্রযুক্তিগত উন্নয়নের কাছে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। তবে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তথ্যপ্রযুক্তি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখছে।

জাতীয় উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি: বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন

বেড়েই চলেছে। জাতীয় উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির কিছু দিক তুলে ধরা হলো:

ক. তথ্যের আদান-প্রদান; সরকারি উদ্যোগে ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে যেখান থেকে ইউনিয়নবাসীরা কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্যের পাশাপাশি সরকারের নানা

মন্ত্রণালয়ের তথ্য পাচ্ছে।

খ. তথ্যপ্রযুক্তি ও কর্মসংস্থান: তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এক নতুন দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে কম্পিউটার হার্ডওয়‍্যার, সফ্টওয়্যার, ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ৭-৮ হাজার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে অনেকের কাজের সুযোগ হচ্ছে।

গ.তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা: তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে শিক্ষার মান বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কম্পিউটার শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা এখন কম্পিউটারেই শিখতে পারছে পাঠসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো। তাছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন বিখ্যাত লাইব্রেরির বই, বিখ্যাত শহর-বন্দর, দেশ ইত্যাদি সম্পর্কে মুহূর্তেই সংগ্রহ করতে পারছে বিভিন্ন উপাত্ত।

ঘ.টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন: শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা তথ্যপ্রযুক্তির উপর নির্ভর করে। টেলিনেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, টেলিযোগাযোগের ব্যয় কমানো, জরুরি ডাকব্যবস্থা, রেলস্টেশন, অপটিক্যাল ফাইবার, ব্যাকবোনের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা ইত্যাদি সবই তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সম্ভব।

ঙ. শিল্প ও অর্থনীতি সফটওয়্যারের মূল্য হ্রাস, ই-কমার্সভিত্তিক ব্যাংক স্থাপন ইত্যাদি সকল কাজ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে করা যায়।

চ. তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা: সুদক্ষ ব্যাংকিং ব্যবস্থা

দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। আর এই ব্যাংকিং খাতকে দক্ষ, যুগোপযোগী ও আধুনিক করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালুকরণের বিকল্প নেই।

ছ. যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা: তথ্যপ্রযুক্তির ফলে যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার অনেক উন্নতি সম্ভব। একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এখন আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা পাই। বিমান, রেলের টিকেট ব্যবস্থাপনা বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত

হচ্ছে।

জ. আত্ম-কর্মসংস্থান: তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং, সাইবার ক্যাফে, ফোন ও রিচার্জসহ নানা ধরনের কাজে অনেকের স্বাধীন ব্যবসায়ের সুযোগ হয়েছে।

ঝ. ব্যবসা ক্ষেত্রে: তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবসার ক্ষেত্রে নানা উন্নয়ন সাধন হয়েছে। ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্যের মূল ভিত্তিই তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় সহজ হয়েছে।

ঞ. চিকিৎসা ক্ষেত্রে: তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। রোগ নির্ণয় থেকে সার্জারি পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার বিপ্লব নিয়ে এসেছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে।

ট, পর্যটন ক্ষেত্রে: বিদেশি পর্যটকেরা এখন তাদের দেশ থেকেই ট আমাদের দেশের পর্যটন সম্পর্কিত তথ্য পেতে পারে। আমরাও জানতে পারছি সারা বিশ্বের পর্যটন ও এ-সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়। সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেই আমাদের সুন্দরবন ও কক্সবাজারকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার সুযোগ হয়েছে।

ঠ.সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে: সমাজ সচেতনতা ও সার্বিক সম্পর্ক

উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে যেমন দেশের মানুষের সমস্যা ও দুর্ভোগের কথা জানা যায়, তেমনি দেশি-বিদেশিদের সাথে সুসম্পর্কও গড়ে তোলা যায়। ফেইসবুক, টুইটার, লিংকড ইন প্রভৃতি সাইট সামাজিক যোগাযোগে অভূতপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ড.গবেষণা ক্ষেত্রে: বিভিন্ন গবেষণার জন্য এখন আর গবেষকদের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। দেশেই তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য তাঁরা পেয়ে যান তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

ঢ. মানবসম্পদ উন্নয়নে: দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ছাড়া কোনো

অবস্থাতেই দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি নানা ভূমিকা পালন করে।

উপসংহার: বর্তমান বিশ্বে যে জাতি তথ্যপ্রযুক্তিতে যত বেশি দক্ষ, তাদের সার্বিক অবস্থাও তত বেশি উন্নত। তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে মূল্যবান ইস্যু। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ ঘটেনি। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষার উন্নয়ন, চিকিৎসার উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বেকারত্ব দূর করার জন্য আমাদের নানা পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সকলের প্রচেষ্টার মাধ্যমেই বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির সফল বাস্তবায়ন ঘটবে।

(11)

1. (ক) বন্ধুর পিতৃবিয়োগে তাকে সান্ত্বনা জানিয়ে একটি বৈদ্যুতিন চিঠি লেখো।

অথবা,

(খ) শিক্ষাভ্রমণে যাওয়ার অনুমতি ও এক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রার্থনা করে তোমার কলেজ-অধ্যক্ষ বরাবর একটি আবেদনপত্র রচনা করো।

0/10RB-23

(ক) উত্তরঃ

New Message

To: nihan666@yahoo.com

Cc:

Всс:

Subject: পিতৃবিয়োগে সান্ত্বনা জানানো।

Text: বন্ধু

ই-মেইলের মাধ্যমে তোমার কষ্টের কথাটা জানতে পেরে খুব খারাপ লাগছে। আসলে এমন সময় কী বলে সান্ত্বনা দেবো তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। তবুও বলি, মনকে শক্ত করো। তুমি ভেঙে পড়লে তোমার ছোটো ভাই-বোনদের কী হবে ভেবেছ? মনে রাখবে, পৃথিবীতে কেউ চিরদিনের জন্য আসে না। মানুষ মরণশীল। সমবেদনা রইল; সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনাও। ভালো থেকো।

রাফিয়া।

(খ) উত্তরঃ

বরাবর

প্রধান শিক্ষক

মুনলাইট উচ্চ বিদ্যালয়, মানিকগঞ্জ।

বিষয়: শিক্ষাসফরে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও অনুমতির জন্য আবেদন।

জনাব,

বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা আপনার স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রী। সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা শিক্ষাসফরে যাওয়ার মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। পাঠ্যসূচিভুক্ত তত্ত্বীয় জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনে শিক্ষাসফরের কোনো বিকল্প নেই, সে বিষয়ে সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলী প্রায়ই আমাদেরকে অবগত করেন। বাস্তবিকই শিক্ষাসফর শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। যে বিষয়টা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত, সে বিষয়টা পড়ার পাশাপাশি যদি বাস্তবে তার সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায় তবে তা সে জ্ঞানলাভে আরও বেশি ফলপ্রসূ হবে, সে ব্যাপারে আপনি আমাদের চেয়েও ভালো জানেন। তাই আপনার অনুমতিসাপেক্ষে আমরা বগুড়ার মহাস্থানগড়ে পড়েছি, এবার এ ঐতিহাসিক স্থানটি বাস্তবে দেখতে চাই। বর্ধিত করতে চাই মহাস্থানগড় সম্পর্কে আমাদের জানার পরিধি।

অতএব,

মহোদয়ের কাছে বিনীত প্রার্থনা, আমাদেরকে শিক্ষাসফরের অনুমতি ও প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ দিয়ে বাধিত করবেন।

নিবেদক,

রাজু আহমেদ

মুনলাইট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে।

2. ক) উদাহরণসহ বিশেষ্য পদের শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ কর।

অথবা,

(খ) নিচের অনুচ্ছেদ থেকে নিম্নরেখ পদগুলোর ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি নির্দেশ করঃ

 আজ সারাদিন আকাশ সাদা মেঘে ঢাকা। মৃদু বাতাস বইছে। রাজিব ভাঙা ছাতা নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে। আমি জানালায় দাঁড়িয়ে আপন মনে গান পাইছি। উহ্ বড্ড ঠান্ডা।

0/5RB-23

(ক) উত্তরঃ বিশেষ্য পদকে নিম্নোক্ত ছয়টি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যেমন:

১। নামবাচক বিশেষ্য: যে পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, বস্তু, ভৌগোলিক স্থান বা সংজ্ঞা এবং গ্রন্থবিশেষের নাম প্রকাশ করা হয় তাকে নামবাচক বিশেষ্য বলে। নামবাচক বিশেষ্যকে আবার সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্যও বলা হয়ে থাকে। যেমন:
ক. ব্যক্তির নাম: কামাল, জামাল, রবীন্দ্রনাথ, রহিম, করিম, প্রমুখ।
খ. ভৌগোলিক স্থানের নাম: মক্কা, মদিনা, ঢাকা, নেপাল, রাজশাহী, বাংলাদেশ, ভারত, প্রভৃতি।

২। জাতিবাচক বিশেষ্য: যে পদ দ্বারা কোনো একজাতীয় প্রাণী বা পদার্থের নাম বুঝায় তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: গরু, ঘোড়া, মানুষ, পর্বত, নদী, ইংরেজ, প্রভৃতি।

৩। বস্তুবাচক বিশেষ্য: যে পদ দ্বারা কোনো উপাদানবাচক পদার্থের নাম বুঝায়, তাকে বস্তুবাচক বিশেষ্য বলে। বস্তুবাচক বিশেষ্যকে আবার দ্রব্যবাচক বিশেষ্যও বলা হয়। এ জাতীয় বস্তুর কেবল পরিমাণ নির্ণয় করা যায়, কিন্তু গণনা করা যায় না। যেমনঃ পানি, তৈল, চাল, চিনি, দুধ, মধু লবণ, প্রভৃতি।

৪। সমষ্টিবাচক বিশেষ্য: যে পদ দ্বারা বেশ কিছুসংখ্যক ব্যক্তি বা প্রাণীর সমষ্টি বুঝায়, তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: সভা, কাফেলা, সমাজ, মাহফিল, ঝাঁক, সমিতি, জনতা, দল, প্রভৃতি।

৫। ভাববাচক বিশেষ্য: যে বিশেষ্য পদ দ্বারা কোনো ক্রিয়ার ভাব বা কাজের ভাব প্রকাশিত হয়, তাকে ভাববাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: দর্শন (দেখার কাজ), ভোজন (খাওয়ার কাজ), শয়ন (শোয়ার কাজ), শ্রবণ (শোনার কাজ) প্রভৃতি।

৬. গুণবাচক বিশেষ্য: যে বিশেষ্য পদ দ্বারা কোনো বস্তুর দোষ বা গুণের নাম বুঝায় তাকে গুনবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: মধুর মিউষের গুণ – মধুরতা, সুন্দর বস্তুর গুণ – সৌন্দর্য, তরল পদার্থের গুণ – তারল্য, বীরের গুণ — বীর্য, অনুরূপ – সুখ, দুঃখ, সততা, মহত্ত্ব, দরিদ্রতা, ইত্যাদি। 

(খ) উত্তরঃ সাদা (বিশেষণ); বাতাস (বিশেষ্য); ভাঙা (বিশেষণ); গাইছি (ক্রিয়া), (উহ্) আবেগ।

3. (ক) ‘জ্ঞানচর্চায় বিজ্ঞান’ বিষয়ের ওপর দুই বন্ধুর মধ্যকার সংলাপ রচনা করো।

অথবা,

(খ) ‘মানুষ মানুষের জন্য’- এ শিরোনামে একটি পুদেগল্প রচনা করো।

0/10RB-23

(ক) উত্তরঃ

‘জ্ঞানচর্চায় বিজ্ঞানের ভূমিকা নিয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ’

হাদী: দোস্ত, শুনলাম তুই নাকি ইন্টারনেট কানেকশন নিয়েছিস?

সাদী : হ্যাঁ, নিলাম তো।

হাদী : ভালো হলো, স্যারের অ্যাসাইনমেন্ট করতে সুবিধা হবে।

সাদী : হ্যাঁ, স্যার যে কোথা থেকে সব লেটেস্ট বিষয় ধরে নিয়ে আসেন, বই খুঁজে কিছুই পাই না।

হাদী : তোর এখন সারা দুনিয়া খোলা।

সাদী : মানে কী?

হাদী : মানে খুব সোজা। যে বিষয়টি তোর জানা দরকার সে বিষয়টি টাইপ করে তুই গুগলে সার্চ দিবি। তারপর দেখবি তোর সামনে একাধিক অপশন এসে হাজির। তারপর তুই তোর পছন্দমতো সাইটটি ওপেন করে জেনে নে তোর প্রয়োজনীয় তথ্য।

সাদী : খুব ভালো তো। দোস্ত, আমি কিন্তু আগে নেট ব্যবহার করি নাই, তুই কিন্তু আমাকে একটু শিখিয়ে দিবি।

হাদী : কী যে বলিস না। আমি শিখাব না? তুই হলি আমার জানের দোস্ত।

সাদী : আচ্ছা হাদী, নেট কী সারাদিনই সার্চ করা যায়?

হাদী: আরে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা।

সাদী : তাই নাকি? ওদের কোনো অফিস আওয়ার নেই।

হাদী : না দোস্ত, তোমার জন্য সারাদিন খোলা।

সাদী: যাক, তাহলে ভালোই হলো, ক্লাস শেষে রাতে বাসায় ফিরে অ্যাসাইনমেন্টের কাজ করা যাবে।

(খ) উত্তরঃ

‘মানুষ মানুষের জন্য’

গত সপ্তাহ থেকে শীতের প্রকোপ অনেক বেড়ে গেছে। ঢাকা শহরের জামা-কাপড়ের দোকানগুলোতে শীতের পোশাকের বেচাকেনাও তাই বেশ রমরমা। বিকেলবেলা সৌরভ নিজের জন্য কিছু শীতের পোশাক কিনতে একটা শপিং মলে গেল। সে বেশ অবস্থাপন্ন বাবার সন্তান। ঢাকায় তাদের নিজস্ব বাড়ি-গাড়ি আছে। এক কথায় বলা যায়, আভিজাত্যের ভেতর দিয়েই তার বেড়ে ওঠা। দোকানে দোকানে ঘুরে সে অনেক শীতের পোশাক কিনে ফেলল। ওভারকোট, সোয়েটার, কানটুপি, হাতমোজা, চাদর ইত্যাদি পোশাক। এত কিছু কিনেও যেন তার মন ভরে না। কেনাকাটা শেষ হতে না হতেই সৌরভের এক বন্ধু ফোন করে ওকে শপিং মলের পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে যেতে বলে। রেস্টুরেন্টে গিয়ে সৌরভ দেখে ওর তিন বন্ধু মিলে আড্ডা দিচ্ছে। সৌরভও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠে। অনেক গল্পগুজব আর খাওয়া-দাওয়া করতে করতে রাত প্রায় দশটা বেজে গেল। সৌরভ আর দেরি করল না। বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল।

নিজেদের গাড়িতে বসে আছে সৌরভ। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে। গাড়িটা কারওয়ান বাজার এলাকায় এসে জ্যামে পড়ল। হঠাৎ গাড়ির জানালা দিয়ে ফুটপাতে চোখ পড়তেই সে দেখল কিছু মানুষ রাস্তার পাশে শুয়ে আছে। তাদের কারও গায়ে শীতের পোশাক নেই বললেই চলে। সৌরভ গাড়ির জানালাটা খুলে সেদিকে ভালো করে তাকায়। গাড়ির ভেতর শীতের বাতাস তার গায়ে কাঁটা দেয়। সৌরভ এই শীতে মানুষগুলোর এইভাবে শীতের কাপড় ছাড়া শুয়ে থাকতে দেখে তাদের কষ্ট অনুভব করার চেষ্টা করে।

আবছা অন্ধকারে সৌরভ দেখতে পায় একজন বৃদ্ধ খালি গায়ে কুঁকড়ে মাটিতে শুয়ে কাশছে। সৌরভ কয়েক মুহূর্ত ভেবে পাশের একটা প্যাকেট থেকে একটু আগে কেনা চাদরটা বের করে নিয়ে এগিয়ে যায় বৃদ্ধ লোকটার দিকে। সে দেখে বৃদ্ধ লোকটি কাঁপছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। সে একবার ভাবল লোকটাকে ডাকবে কিন্তু পরমুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলে হাতের চাদরটা মেলে বৃদ্ধের গায়ে জড়িয়ে দেয়। সৌরভের মনে একটা প্রশান্তির অনুভূতি তৈরি হয়। সেই মুহূর্তে জ্যাম ছেড়ে দিলে সৌরভ দ্রুত গাড়িতে এসে ওঠে। সৌরভ দেখতে পায় বৃদ্ধ লোকটা নিজের গায়ে চাদরটা আরও টেনে নেয়। একজন লোককে অন্তত শীতের কষ্ট থেকে পরিত্রাণ দিতে পেরে সৌরভ আনন্দিত হয়।

4. (ক) পদ্মা সেতু দর্শনের অনুভূতি ব্যস্ত করে দিনলিপি রচনা করো।

অথবা,

(খ) নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশযোগ্য একটি প্রতিবেদন রচনা করো।

0/10RB-23

(ক) উত্তরঃ

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সোমবার

রাত: ১০টা

কলাবাগান, ঢাকা।

চমৎকার একটি দিন কাটালাম আজ। কলেজের কয়েকজন বন্ধু মিলে গিয়েছিলাম দেশের সবচেয়ে বড়ো অবকাঠামো পদ্মা সেতু পরিদর্শনে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল, সেতু। এর মাধ্যমে লৌহজং, মুন্সিগঞ্জের সঙ্গে শরীয়তপুর ও. মাদারীপুর যুক্ত হয়েছে, ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সঙ্গে উত্তর- পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটেছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৭.১৫ কিলোমিটার। ২৬ নভেম্বর ২০১৪ পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০২২ সালের ২৫ জুন দেশের কোটি মানুষের কাঙ্ক্ষিত এ সেতু উদ্বোধন করা হয়। এরপর ২৬ জুন ২০২২ – সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় প্রমত্ত পদ্মার উপর নির্মিত এ সেতু। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয় এই সেতু। পদ্মা সেতু প্রথম দেখাতেই মনের মধ্যে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি তৈরি হয়েছিল। এই সেতুটি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিল্প বিকাশে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হওয়ার ফলে বাংলাদেশের তিন কোটিরও অধিক মানুষ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছে। ফলে প্রকল্পটি দেশের পরিবহণ নেটওয়ার্ক এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই সেতু নির্মাণের ফলে দেশের জিডিপি ৮.২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। মোটকথা, দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় পদ্মা সেতু সমগ্র দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ফসল হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।

(খ) উত্তরঃ

‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: জনজীবন বিপর্যস্ত’

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ঢাকা ॥ ২৭ মে ২০২৪।

সম্প্রতি যে বিষয়টি আমাদের ভাবিত করছে তা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। বর্তমানে আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে দৈনন্দিন জীবনে নেমে এসেছে অপ্রত্যাশিত দুর্ভোগ। এর নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান করছেন অর্থনীতিবিদগণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ অনেকগুলো। প্রথমত, মুনাফালোভী মজুতদাররা প্রায়ই অধিক মুনাফা অর্জনের মানসিকতায় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, বহির্বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যের সংকটের ফলে দেশের বাজারে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায়। তৃতীয়ত, সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা বৃদ্ধি। দেশের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ এরূপ ভাতা পেলেও অসুবিধার দায়ভার বহন করছে সমাজের বৃহত্তম অংশ। এমনকি চাকরিজীবীদের মধ্যেও কেউ কেউ এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। লক্ষণীয় ব্যাপার এই যে, সরকার কর্তৃক মহার্ঘভাতা ঘোষণার পরক্ষণেই অজ্ঞাত কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকে।

5. (ক) যে কোনো দশটি শব্দের বাংলা পারিভাষিক রূপ লেখঃ

First-aid, Manuscript, Public works, Transport, Boycott, Art, Acid, Quack, Para, Renew, Signal, Urban, Vaccine, Zone, E-mail.

অথবা,

(খ) বাংলায় অনুবাদ করঃ

Books are man’s best companion in life. You must have very good friends but you cann’t get them when you need them. But books are always ready to by your side. Some books may make you laugh; some other may give you much pleasure. So, we cannot be complete without books.

0/5RB-23

(ক) উত্তরঃ প্রাথমিক চিকিৎসা, পাণ্ডুলিপি, গণপূর্ত, পরিবহন, বর্জন, কলা, অম্ল, হাতুড়ে, অনুচ্ছেদ, নবায়ন, সংকেত, নগর, টিকা, অঞ্চল, বৈদ্যুতিন চিঠি।

(খ) উত্তরঃ বই মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সঙ্গী। আপনার অবশ্যই খুব ভালো বন্ধু আছে কিন্তু আপনি যখন তাদের প্রয়োজন তখন তাদের পেতে পারেন না। কিন্তু বই সবসময় আপনার পাশে প্রস্তুত. কিছু বই আপনাকে হাসাতে পারে; অন্য কেউ আপনাকে অনেক আনন্দ দিতে পারে। সুতরাং, বই ছাড়া আমরা সম্পূর্ণ হতে পারি না।

6. (ক) যে কোনো পাঁচটি বাক্যের অপপ্রয়োগ শুদ্ধ কর:

(i) সব পাখিরা নীড় বাঁধে না।

(ii) পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ভিতরে প্রবেশ নিষেধ।

(iii) এ বারের বন্যায় লোকটি সর্বশান্ত হলো।

(iv) আমার বক্তব্য আর দীর্ঘায়িত করবো না।

(iv) ‘অপরাহ্ন’ শব্দটি লিখতে অনেকেই ভুল করেন।

(vi) মাতাহীন শিশুর কী দুঃখ!

(vii) তাঁর সৌজন্যতায় মুগ্ধ হয়েছি।

(viii) আমি, তুমি ও সে আজ মেলায় যাবো।

অথবা,

(খ) নিচের অনুচ্ছেদের অপপ্রয়োগগুলো শুন্ধ কর :

পলাশের ছোট ভগ্নি বকুলের আজ বিয়ে। পলাশ আমার সবচেয়ে ঘনিষ্টতম বন্ধু। এ বিয়েতে সে আমাকে স্বপরিবারে নিমন্ত্রণ করলো। বরের বাড়িতে বিবাহোত্তর বর-কনের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানেও সে আমাকে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানালো। আশা করি, আসছে আগামীকাল আমরা ঐ বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদান করবো।

0/5RB-23

(ক) উত্তরঃ

(i) সব পাখি নীড় বাঁধে না।

(ii) পরীক্ষা চলাকালীন ভিতরে প্রবেশ নিষেধ।

(iii) এ বারের বন্যায় লোকটি সর্বস্বান্ত হলো।

(iv) আমার বক্তব্য আর দীর্ঘ করবো না।

(iv) ‘অপরাহ’ শব্দটি লিখতে অনেকেই ভুল করেন।

(vi) মাতৃহীন শিশুর কী দুঃখ।

(vii) তার সৌজন্যে মুগ্ধ হয়েছি।

(viii) তুমি, সে ও আমি আজ মেলায় যাবো।

(খ) উত্তরঃ পলাশের ছোট বোন বকুলের আজ বিয়ে। পলাশ আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এ বিয়েতে সে আমাকে সপরিবারে নিমন্ত্রণ করলো। বরের বাড়িতে বিবাহোত্তর বর-কনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও সে আমাকে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানালো। আশা করি, আগামীকাল আমরা ঐ বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদান করবো ।

7. (ক) সারাংশ লেখো:

সত্যিকার মানবকল্যাণ মহৎ চিন্তা-ভাবনারই ফসল। বাংলাদেশের মহৎ প্রতিভারা সবাই মানবিক চিন্তা আর আদর্শের উত্তরাধিকার রেখে গেছেন। দুঃখের বিষয়, সে উত্তরাধিকারকে আমরা জীবনে প্রয়োগ করতে পারিনি। বিদ্যাপতি-চণ্ডীদাস থেকে লালন প্রমুখ কবি এবং অপেক্ষাকৃত আধুনিককালে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল সবাই তো মানবিক চেতনার উদাত্ত কণ্ঠস্বর। বঙ্কিমচন্দ্রের অবিস্মরণীয় উক্তি: “তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?” এক গভীর মূল্যবোধেরই উৎসারণ।

অথবা,

(খ) ভাবসম্প্রসারণ করো: প্রকৃতির ওপর আধিপত্য নয়, চাই প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর সম্বন্ধ।

0/10RB-23

(ক) উত্তরঃ

সারাংশ: মহৎ চিন্তার মাধ্যমে প্রকৃত মানবকল্যাণ করা সম্ভব। আমাদের পূর্বপুরুষেরা মানবিক চিন্তার মাধ্যমে মানবকল্যাণের কথা ভেবেছেন। সকল প্রতিভাবান ব্যক্তিই মানবিক চেতনার ধারক।

(খ) উত্তরঃ

মূলভাব: আধিপত্য বিস্তার নয় বরং মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর সম্বন্ধই বেশি বাঞ্ছনীয়। মানুষকে প্রকৃতির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে হবে।

সম্প্রসারিত ভাব: জীব জগতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রাণী হচ্ছে মানুষ। সর্বশ্রেষ্ঠ বলেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মানুষ প্রকৃতির ওপর নির্ভর করেছে এবং প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তারে প্রয়াসী হয়েছে। মানুষ প্রথম দিকে একান্তই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল হলেও যখন সে সভ্য হতে শুরু করল তখন থেকেই পৃথিবীকে নিজেদের উপযোগী করে তোলার সর্বাঙ্গীণ প্রচেষ্টা চালিয়েছে। দেশ ও জনপদ গড়ে তোলার জন্য বন উজাড় করেছে, বন্যপ্রাণী ধ্বংস করেছে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে। প্রথমদিকে এর প্রভাব ব্যাপকভাবে লক্ষণীয় না হলেও শিল্পযুগের আবির্ভাবের পর থেকে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিগত শতাব্দীতে বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নয়নের ফলে মানুষ প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তারেই মনোযোগী হয়েছে বেশি। ফলে বন উজাড়, সাগর-নদ-নদী ভরাট, অত্যধিক কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ, পানিদূষণ, বায়ুদূষণ নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতির ওপর মানুষের এ সর্বগ্রাসী আধিপত্যের বিরূপ প্রতিক্রিয়া যে প্রকৃতি দেয়নি এমনটি নয়। বিশ্বে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে- ফলে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যাচ্ছে জনপথ। আবার অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, সাইক্লোন, টর্নেডো প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসছে মানুষের ওপর। এভাবে চলতে থাকলে হয়ত সমগ্র পৃথিবী একদিন মরুভূমিতে পরিণত হবে, নয়তো সমুদ্রের অতল জলে ডুবে যাবে। তবে এসব থেকে পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখার একটিই উপায়, প্রকৃতির ওপর আধিপত্যের পরিবর্তে প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হওয়া। পরিবেশের জন্য যা কিছু হুমকিস্বরূপ তার ব্যবহার সীমিত করে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা। পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বন সংরক্ষণ, বনায়ন ইত্যাদি কার্যক্রম শুরু করে মানুষ চাইছে প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর সম্বন্ধ গড়ে তুলতে।

মন্তব্য: প্রকৃতি তার অপার উপকরণ দিয়ে পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে তুলেছে তাই নিজের স্বার্থেই মানুষকে প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তারের পরিবর্তে মৈত্রীর সম্বন্ধ স্থাপন করতে হবে।

8. ক) বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম দৃষ্টান্তসহ উল্লেখ কর।

অথবা,

(খ) যে কোনো পাঁচটি শব্দের বানান শুদ্ধ করে লেখঃ

অহোরাত্রি, স্ববান্ধব, নিরব, সুস্থ্য, আমাবস্যা, শুধুমাত্র নির্দোষী, বন্দোপাধ্যায়।

0/5RB-23

(ক) উত্তরঃ বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম নিম্নরূপ :

১. যেসব শব্দে ই, ঈ বা উ, ঊ উভয় শুদ্ধ কেবল সেসব শব্দে ই বা উ এবং কার চিহ্ন  ি বা  ু হবে। যেমন—পল্লী, ধরণি, শ্রেণি, সূচিপত্র, রচনাবলি ইত্যাদি।

২. রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন—অর্জন, কর্ম, কার্য, সূর্য ইত্যাদি।

৩. সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম স্থানে ং হবে। যেমন—অহম্ + কার = অহংকার, সম্ + গীত = সংগীত ইত্যাদি।

৪. শব্দের শেষে বিগর্স (ঃ) থাকবে না। যেমন—কার্যত, প্রথমত, প্রধানত, প্রায়শ, মূলত ইত্যাদি।

৫. সব অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই, ঊ এবং এদের কারচিহ্ন  ি বা  ু ব্যবহার হবে। যেমন—আরবি, আসামি, ইংরেজি, বাঙালি, সরকারি, চুন ইত্যাদি।

(খ)উত্তরঃ শুদ্ধ বানান: আহোরাত্র, সবান্ধব, নীরব, সুস্থ, অমাবস্যা, শুধু/ মাত্র, নির্দোষ, বন্দ্যোপাধ্যায়।

9. (ক) বাক্য কাকে বলে? একটি সার্থক বাক্যে কী কী গুণ থাকা প্রয়োজন? উদাহরণ সহ আলোচনা কর।

অথবা,

(খ) বন্ধনীর নির্দেশমতো যে কোনো পাঁচটি বাক্যের রূপান্তর করঃ

(i) সূর্যোদয়ে অন্ধকার কেটে যাবে। (জটিল)

(ii) বিপদ ও দুঃখ একসাথে আসে। (সরল)

(iii) মন দিয়ে লেখাপড়া করা উচিত। (অনুজ্ঞা)

(iv) আমাকে যেতে হবে। (নেতিবাচক)

(v) নদীটি খুব সুন্দর। (বিস্ময়সূচক)

(vi) যিনি জ্ঞানী, তিনিই সত্যিকার ধনী। (সরল)

(vii) বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। (প্রশ্নবাচক)

(viii) তিনি আর বেঁচে নেই। (যৌগিক)

0/5RB-23

(ক) উত্তরঃ যে সুবিন্যস্ত পদসমষ্টি দ্বারা কোনো বিষয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয় তাকে বাক্য বলে বলে।

ডক্টর সুনীলকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘পরস্পর অর্থ সম্বন্ধবিশিষ্ট যে পদগুলোর দ্বারা একটি সম্পূর্ণ ধারণা বা বক্তব্য বা ভাব প্রকাশ পায়, সে পদগুলোর সমষ্টিকে বাক্য বলে।’
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, একটি সম্পূর্ণ মনোভাব যে সমস্ত পদ দ্বারা প্রকাশ করা যায়, তাদের সমষ্টিকে বাক্য বলে।

একটি সার্থক বাক্যের গুণাবলি: ভাষার বিচারে একটি সার্থক বাক্যের নিচে তিনটি গুণ থাকা আবশ্যক।
১। আকাঙ্ক্ষা, ২। আসত্তি এবং ৩। যোগ্যতা।

# আকাঙ্ক্ষা: বাক্যের অর্থ পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য এক পদের পর অন্য পদ শোনার যে ইচ্ছা, তা-ই আকাঙ্ক্ষা। যেমন: ‘চাঁদ পৃথিবীর চারিদিকে—’ বললে বাক্যটি সম্পূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করে না, আরও কিছু শোনার ইচ্ছা হয়। বাক্যটি এভাবে পূর্ণাঙ্গ করা যায়— ‘চাঁদ পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে’। এখানে আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি হয়েছে বলে পূর্ণাঙ্গ বাক্য।

# আসত্তি: বাক্যের অর্থসংগতি রক্ষার জন্য সুশৃঙ্খল পদ বিন্যাসই আসত্তি। মনোভাব প্রকাশের জন্য বাক্যে শব্দগুলো এমনভাবে পরপর সাজাতে হবে যাতে মনোভাব প্রকাশ বাধাগ্রস্ত না হয়। যেমন: কাল বিতরণী হবে উৎসব কলেজে আমাদের পুরষ্কার অনুষ্ঠিত। এখানে পদগুলোর সঠিকভাবে সন্নিবেশ না হওয়ায় বাক্যের অন্তনির্হিত ভাবটি যথাযথভাবে প্রকাশিত হয়নি। তাই এটিকে বাক্য বলা যায় না। এ ক্ষেত্রে পদগুলোকে নিচের যথাস্থানে সন্নিবিষ্ট করতে হবে। কাল আমাদের কলেজে পুরস্কার বিতরণী উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এটি একটি আসত্তি সম্পন্ন বাক্য।

যোগ্যতা: বাক্যস্থিত পদগুলোর অন্তর্গত এবং ভাবগত মিলনবন্ধনের যোগ্যতা। যেমন: বর্ষার বৃষ্টিতে প্লাবনের সৃষ্টি হয়। এটি একটি যোগ্যতাসম্পন্ন বাক্য। কারণ, বাক্যটিতে পদগুলোর অর্থগত এবং ভাবগত সমন্বয় রয়েছে। কিন্তু বর্ষার রৌদ্র প্লাবনের সৃষ্টি করে বললে বাক্যটি ভাব প্রকাশের যোগ্যতা হারাবে, কারণ, রৌদ্র প্লাবন সৃষ্টি করে না।

(খ) উত্তরঃ

(i)  (জটিল) যদি সূর্যোদয় হয় তবে অন্ধকার কেটে যাবে।

(ii) (সরল) বিপদ আসলে দুঃখও আসে।

(iii)  (অনুজ্ঞা) মন দিয়ে লেখাপড়া কর।

(iv)  (নেতিবাচক) আমি থাকতে পারব না।

(v)  (বিস্ময়সূচক) কী সুন্দর নদী !

(vi)  (সরল) জ্ঞানীরাই সত্যিকার ধনী।

(vii)  (প্রশ্নবাচক) বাংলাদেশ কি একটি উন্নয়নশীল দেশ নয়?

(viii)  (যৌগিক) তিনি জীবিত ছিলেন কিন্তু এখন আর বেঁচে নেই।

10. (ক) উদাহরণসহ ‘অ’ ধ্বনি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখ।

অথবা,

(খ) নিচের যে কোনো পাঁচটি শব্দের উচ্চারণ নির্দেশ কর :

নদী, ছাত্র, অক্ষর, অবিশ্বাস, ঐকতান, স্মরণীয়, গ্রাহ্য উদাহরণ.

0/5RB-23

(ক) উত্তরঃ অ ধ্বনি উচ্চারণের ৫ টি নিয়ম নিচে দেওয়া হলোঃ

১। শব্দের আদিতে যদি ‘অ’ থাকে এবং তারপরে ‘ই’-কার, ‘উ’-কার, থাকে তবে সে- ‘অ’ এর উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’-কারের মতো হয়। যথাঃ অভিধান (ওভিধান), অভিযান (ওভিজান), অতি (ওতি), মতি (মোতি), অতীত (ওতিত্), অধীন (অধীন্‌) ইত্যাদি।

২। শব্দের আদ্য-‘অ’ এর পরে ‘য’-ফলাযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সেক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ প্রায়শ ‘ও’-কারের মতো হয়। যেমনঃ অদ্য (ওদ্‌দো), অন্য (ওন্‌নো), অত্যাচার (ওত্‌তাচার), কন্যা (কোন্‌না), বন্যা (বোন্‌না) ইত্যাদি।

৩। শব্দের আদ্য-‘অ’ এর পর ‘ক্ষ’, ‘জ্ঞ’, থাকলে, সে ‘অ’পের উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’-কারের মতো হয়ে থাকে। যথাঃ অক্ষ (ওক্‌খো), দক্ষ (দোক্‌খো), যক্ষ (জোক্‌খো), লক্ষণ (লোক্‌খোন্‌), যজ্ঞ (জোগ্‌গোঁ), লক্ষ (লোক্‌খো), রক্ষা (রোক্‌খা) ইত্যাদি।

৪। শব্দের প্রথমে যদি ‘অ’ থাকে এবং তারপর ‘ঋ’-কার যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলেও, সেই ‘অ’-এর উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’-কারের মতো হয়। যথাঃ মসৃণ (মোসৃন্‌), বক্তৃতা (বোক্তৃতা), যকৃত (জোকৃত্‌)।

৫। শব্দের প্রথমে ‘অ’ যুক্ত ‘র’-ফলা থাকলে সেক্ষেত্রেও আদ্য ‘অ’-এর উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’-কার হয়ে থাকে। যথাঃ ক্রম (ক্রোম), গ্রহ (গ্রোহো), গ্রন্থ (গ্রোন্‌থো), ব্রত (ব্রোতো) ইত্যাদি।

(খ) উত্তরঃ

11. ক) উপসর্গ কাকে বলে? এ, অ, আ, সম, নি, উপসর্গগুলোর প্রত্যেকটির দ্বারা একটি করে শব্দ গঠন কর।

অথবা,

(খ) ব্যাসবাক্যসহ সমাস নির্ণয় কর (যে কোনো পাঁচটি) :

হিতাহিত, আকণ্ঠ, শতাব্দী, ভাবান্তর, রাজপথ, মৃগনয়না, প্রাণপাখি, গৃহস্থ।

0/5RB-23

(ক) উত্তরঃ যেসব বর্ণ বা বর্ণের সমষ্টি ধাতু এবং শব্দের আগে বসে সাধিত শব্দের অর্থের পরিবর্তন, সম্প্রসারণ কিংবা সংকোচন ঘটায়, তাদের বলা হয় উপসর্গ।

এ = উপসর্গ নেই।

অ + খ্যাতি = অখ্যাতি।

আ + বাদ = আবাদ।

সম + কাল = সমকাল।

নি + খাদ =নি + খাদ। 

(খ) উত্তরঃ হিত ও অহিত (দ্বন্দ্ব সমাস) ;

কণ্ঠ পর্যন্ত (অব্যয়ীভাব সমাস) ;

শত অব্দের সমাহার (দ্বিগু সমাস) ; 

অন্য ভাব (নিত্য সমাস) ;

পথের রাজা (ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস) ;

মৃগের নয়নের ন্যায় নয়ন যে নারীর (মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস) ; 

প্রাণ রূপ পাখি (রূপক কর্মধারয়) ;

গৃহে স্থিতি যার (উপপদ তৎপুরুষ বা ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি)।

( end of raj 23 )

1. (ক) বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।

অথবা ,

(খ) যে কোনো পাঁচটি বানান শুদ্ধ করঃ

 শিরোমনি, ইতিমধ্যে, পল্লীগ্রাম, দুর্বলতা, প্রত্নতাত্ত্বিক, প্রাণপুরুষ, ব্যাবহার, সোনালী।

0/5MB-23

(ক) উত্তরঃ বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম নিম্নরূপ :

১. যেসব শব্দে ই, ঈ বা উ, ঊ উভয় শুদ্ধ কেবল সেসব শব্দে ই বা উ এবং কার চিহ্ন  ি বা  ু হবে। যেমন—পল্লী, ধরণি, শ্রেণি, সূচিপত্র, রচনাবলি ইত্যাদি।

২. রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন—অর্জন, কর্ম, কার্য, সূর্য ইত্যাদি।

৩. সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম স্থানে ং হবে। যেমন—অহম্ + কার = অহংকার, সম্ + গীত = সংগীত ইত্যাদি।

৪. শব্দের শেষে বিগর্স (ঃ) থাকবে না। যেমন—কার্যত, প্রথমত, প্রধানত, প্রায়শ, মূলত ইত্যাদি।

৫. সব অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই, ঊ এবং এদের কারচিহ্ন  ি বা  ু ব্যবহার হবে। যেমন—আরবি, আসামি, ইংরেজি, বাঙালি, সরকারি, চুন ইত্যাদি।

(খ) উত্তরঃ শুদ্ধ বানান: শিরোমণি, ইতোমধ্যে, পল্লিগ্রাম, দুর্বলতা, প্রত্নতাত্ত্বিক, প্রাণপুরুষ, ব্যবহার।

2. (ক) সারমর্ম লেখো :

“জোটে যদি মোটে একটি পয়সা

খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি

দুটি যদি জোটে তবে অর্ধেকে

ফুল কিনে নিও, হে অনুরাগী।

বাজারে বিকায় ফল তন্দুল;

যে শুধু মিটায় দেহের ক্ষুধা

হৃদয় প্রাণের ক্ষুধা নাশে ফুল,

দুনিয়ার মাঝে সেই তো সুধা।”

অথবা,

(খ) ভাবসম্প্রসারণ করো:

মনেরে আজ কহ যে

ভালো-মন্দ যাহাই আসুক সত্যরে লও সহজে।

0/10MB-23

(ক) উত্তরঃ

সারমর্ম: মানুষের বেঁচে থাকার জন্য শারীরিক সুস্থতা অপরিহার্য। কিন্তু কেবল শরীর সুস্থ রাখলেই হবে না সেই সঙ্গে মনও সুস্থ রাখা প্রয়োজন। আর মনকে সুস্থ রাখতে দরকার সৌন্দর্যের সাধনা।

(খ) উত্তরঃ

মূলভাব: সত্যই সুন্দর, সত্যই বাস্তব। জীবন চলার পথে ভালো-মন্দ যা- ই ঘটুক সত্যকে সহজ ও সাবলীলভাবে গ্রহণ করতে পারলেই প্রকৃত সুখ পাওয়া যায়। ভালো এবং মন্দ উভয় সময়েই যে সত্যকে আঁকড়ে থাকতে পারে সেই প্রকৃত মানুষ।

সম্প্রসারিত ভাব: মানবজীবন বিচিত্র বৈশিষ্ট্যে গড়া, সুখ-দুঃখের সমন্বয়েই সে জীবন এগিয়ে চলে। জীবনে সফলতা লাভের জন্য অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে মানুষকে সামনে এগোতে হয়। একজন মানুষ সারা জীবন সুখেই কাটাবে, এটা হতে পারে না। সুখের বিপরীত পিঠেই রয়েছে দুঃখের দহন। অবশ্য ভালো-মন্দ দুটোই যদি না থাকত তবে মানুষ তার জীবনকে আপন সাধনায় সাজিয়ে মানবজন্মকে সার্থক করে তুলতে পারত না। শুধু সুখময় জীবন যেমন একঘেয়ে, শুধু দুঃখের জীবনও অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ফলে এ দুইয়ের সমন্বয়েই জীবনকে সাজাতে হবে, এটাই জীবনের অমোঘ বাস্তবতা। তাই সবরকম বাস্তবতায় সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ানোই শ্রেয়। যাঁরা পৃথিবীর এই যথার্থ সত্যটি মাথা পেতে গ্রহণ করতে পারেন তাঁরাই জগতে পূজনীয় ব্যক্তিত্ব, তাঁদেরই মানুষ যুগ যুগ ধরে সম্মানের আসন দান করে, শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। সাময়িক লাভ কিংবা লোভের বশে সত্যকে পাশ কাটিয়ে গেলে পরিণামে এর ফল ভালো হয় না। কারণ আমরা এড়িয়ে গেলে বা অস্বীকার করলেই প্রকৃত সত্যটি মিথ্যা হয়ে যায় না। সত্যকে অস্বীকার করার দন্ড হিসেবে পরবর্তী জীবনে চড়া মাসুল দিতে হয়। যে ব্যক্তি মূল সত্যকে চেনে এবং উপলব্ধি করতে জানে তার কাছে সত্য যে রূপেই আসুক না কেন সে তা গ্রহণ করবে এবং তাতে তার কোনো দ্বিধা থাকার কথা নয়। কিন্তু জীবন নিয়ে যারা ভয়ে থাকে, যারা প্রকৃত সত্যসন্ধানী নয় তারা মন্দ দেখলেই পিছিয়ে যায়। তাই সত্যসন্ধানী হতে হলে, বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চাইলে মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন। সত্য যে রূপেই আসুক না কেন তাকে সহজভাবে গ্রহণ করা উচিত।

মন্তব্য: বাস্তবতার পথে অগ্রসর হওয়াই জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। ভালো-মন্দ সকল পরিস্থিতিতে প্রকৃত সত্যের অনুসন্ধান করাই যথার্থ মানুষের বৈশিষ্ট্য। সাময়িক সুখ অর্জন বা দুঃখ এড়ানোর জন্য সত্যকে পরিহার করা অনুচিত।

3. (ক) প্রদত্ত উদ্দীপক অনুসরণে ‘প্রত্যাশা’ শিরোনামে একটি গল্প তৈরি করো:

বাস থেকে নামতেই বিরাট শহরের বৈচিত্র্য দেখে অনেকটাই ভয় পেয়ে গেল শামীম। এখানেই তাকে থাকতে হবে। আনমনে ভাবছিল সে। হঠাৎ একটা রিকশা এসে থামল তার পাশে। সে অবাক হয়ে দেখল একজন ভদ্রলোক তার দিকেই তাকিয়ে আছে……

অথবা,

(খ) ধুমপানের ক্ষতিকরণ দিক নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা করো।

0/20MB-23

(ক) উত্তরঃ

প্রত্যাশা

বাস থেকে নামতেই বিরাট শহরের বৈচিত্র্য দেখে অনেকটাই ভয় পেয়ে গেল শামীম। এখানেই তাকে থাকতে হবে। আনমনে ভাবছিল সে। হঠাৎ একটা রিকশা এসে থামলো তার পাশে। সে অবাক হয়ে দেখল একজন ভদ্রলোক তার দিকে তাকিয়ে আছেন। অপরিচিত শহরে ভদ্রলোকটির এভাবে তাকানো দেখে তার মনে কিছুটা আসার সঞ্চার হলো। তার প্রত্যাশা ছিল লোকটির সহযোগিতা নিয়ে সে তার গন্তব্যে পৌছাতে পারবে। সে আশায় শামীম লোকটির দিকে এগিয়ে গেল। লোকটি তৎক্ষণাৎ শামীমকে বললেন, তোমাকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে। আগে কোথাও দেখেছি বলে মনে হয়। লোকটি তাকে নানা প্রশ্ন করেন এবং কোনো সহযোগিতা লাগবে কি না, ‘জানতে চান। তার আন্তরিকতা দেখে শামীমের মনের ভয় কিছুটা লাঘব হয়। এত এত গাড়ি, সুউচ্চ ভবন ও বিচিত্র মানুষের মধ্যে সে তার গন্তব্যে পৌছতে পারবে বলে মনে হয় না। সত্যিই এত বড়ো শহরে পরিচিত মানুষ না থাকলে কত যে বিপদ হতে পারে সে সম্পর্কে শামীমের ধারণা রয়েছে। যাহোক, সে লোকটির আন্তরিকতাপূর্ণ মিষ্টি ব্যবহারে মোটামুটি নিশ্চিন্ত হয়। তার কাছে মনের সব কথা খুলে বলে। শামীম লোকটিকে জানায়, সে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে শহরে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে তার মামার বাসা। সেখানেই সে উঠবে। তাকে নেওয়ার জন্য মামার বাসস্ট্যান্ডে আসার কথা। কিন্তু সে মামার ফোন বন্ধ পাচ্ছে। এদিকে তার কাছেও কোনো মোবাইল নেই। তার মামার নম্বরটি কেবল তার মুখস্থ আছে। এখন কীভাবে সে তার গন্তব্যে পৌছাবে তা নিয়ে চিন্তিত। তার কথা শুনে লোকটি তাকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দেবেন বলে আশ্বস্ত করলেন। ওর মামার সমস্ত পরিচয় শুনে লোকটি বললেন, তিনি তাকে চেনেন। তিনি শামীমকে তার রিকশায় উঠিয়ে নিলেন। সেই ফাঁকে নানা বিষয়ে আলাপচারিতার সুযোগে লোকটি ওর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। সরলমনা শামীম তাকে বিশ্বাস করে। সে লোকটিকে জানায়, তার জীবনের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা- একদিন সে এ শহরের নামকরা একজন হবে। লোকটি তার কথা শুনে তাকে উৎসাহ দেন এবং প্রত্যাশা পূরণে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। এভাবে দীর্ঘ দুই ঘণ্টা দুজনে রিকশায় ঘুরতে থাকে; কিন্তু শামীম তার মামার বাসার সন্ধান পায় না। হঠাৎ লোকটি একটি গলির ভেতর রিকশা ঢুকিয়ে তাকে নামতে বলেন। রিকশায় বসা অবস্থায়ই লোকটি শামীমের ব্যাগ নিজের কাঁধে সুকৌশলে তুলে নেন। শামীমকে দাঁড় করিয়ে রেখে লোকটি তার মামাকে ডেকে আনার কথা বলে চলে যান। সন্ধ্যা পর্যন্ত লোকটি আর ফিরে আসেন না। তখন সে বুঝতে পারে তার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। ওর ব্যাগে সকল সার্টিফিকেটের মূল কপি, বাড়ি থেকে দেওয়া টাকা, জামাকাপড় ও বইপত্র ছিল। কিছুক্ষণ পর সেখানে একটি টহল পুলিশের’। গাড়ি এলে সে সব কথা তাদের খুলে বলে। পুলিশ সব কথা শুনে তার মামার ফোন নম্বরে ফোন দেয় এবং তাকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। জীবনে ঘটে যাওয়া এ দুর্ঘটনা নিয়ে সে চমৎকার কাহিনি ও চরিত্র সমন্বয়ে একটি নাটক লেখে। মামার সহায়তায় তার নাটকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর একজন নাট্য পরিচালক তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি শামীমের নাটকটি টেলিভিশনে প্রচার করতে চান এবং সেখানে মুখ্য চরিত্রে তাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। এমন সুযোগ পেয়ে তার খুশির যেন অন্ত নেই। জীবনে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে সে অসাধারণ অভিনয় করে। নাটকটি প্রচারের পর চারদিকে ‘তাকে নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। বিভিন্ন নাট্য পরিচালক তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন এবং সে হয়ে ওঠে জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী। তার জীবনে প্রত্যাশা ছিল- নামকরা একজন হওয়ার। সে প্রত্যাশা পূরণে সে সক্ষম হয়।

(খ) উত্তরঃ

ধুমপানের ক্ষতিকরণ দিক নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপঃ

রাজু : হ্যালো মীনা, তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?
মীনা : যথারীতি। তোমার পরীক্ষা কবে শুরু হবে?

রাজু : আমাদের পরীক্ষা দরজায় কড়া নাড়ছে (আসন্ন/খুব কাছেই)। কিন্তু পড়াশোনায় মন দিতে পারছি না। যাই হোক, গতকাল পত্রিকায় ধূমপানের বিপদ নিয়ে একটি ফিচার পড়েছিলাম। তুমি কি এটা নিয়ে সচেতন? পড়া

মীনা : অবশ্যই, আমিও ধূমপানের বিরুদ্ধে ভাবছি। ধূমপানের ফলে অনেক রোগ হয়। তুমি এটি সম্পর্কে কি মনে কর?

রাজু : আমি মনে করি ধূমপান এক ধরনের নেশা। তাছাড়া অন্য সব মারাত্মক আসক্তি শুরু হয় ধূমপানের মাধ্যমে।
মীনা : তোমার যুক্তি ঠিক। ধূমপান আমাদের জীবনকে ছোট করে ছাড়া কিছুই দেয় না। ধূমপানে অন্য কোন অপব্যবহার আছে বলে তুমি মনে করেন?
রাজু : ধূমপানে অনেক খরচ হয়। এছাড়া ধূমপায়ীর নিঃশ্বাসের মাধ্যমে দুর্গন্ধ ছড়ায়। তোমার কি তাই মনে হয় না?

মীনা : অবশ্যই। যখন কেউ তার সামনে ধূমপান করে তখন এটি অধূমপায়ীদের জন্য খুব বিরক্তিকর। ধূমপানের ধোঁয়া শিশুদের চোখে আঘাত করে। আমি কি ভুল?
রাজু : অবশ্যই না। প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করতে হবে।

মীনা : হ্যাঁ, এ ব্যাপারে প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে।
রাজু : তোমার মূল্যবান যুক্তির জন্য ধন্যবা

4. (ক) কোনো একটি ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের দিনলিপি তৈরি করো।

অথবা,

(খ) সড়ক দুর্ঘটনা ও তার প্রতিকার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করো।

0/10MB-23

(ক) উত্তরঃ

১০ এপ্রিল ২০২৪

বুধবার

রাত ১১টা ৪৫ মিনিট

নওগাঁ।

আজ সারাদিন আমার জন্য খুবই আনন্দের ছিল। আমরা ক্লাসের সব বন্ধু মিলে নওগাঁ জেলার পাহাড়পুরে গেলাম। ভোরে আমরা ১০ জন বন্ধু মিলে ঢাকা থেকে জামালগঞ্জ স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হলাম। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জামালগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে। নওগাঁ জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার হওয়ায় আমরা জামালগঞ্জ দিয়েই গেলাম। পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহারটি ১৮৭৯ সালে আবিষ্কৃত হয়। আমরা সেখানে পৌঁছে প্রথমেই বিহারটি ঘুরে দেখা শুরু করলাম। এর ভূমি পরিকল্পনা আমাকে মুগ্ধ করল। আমরা ১০ বন্ধু দুটি দলে ভাগ হয়ে বিহারটি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। আমাদের সঙ্গে একজন গাইড ছিলেন। তিনি আমাদের জানালেন এই বিহারটিতে ৮৯টি কক্ষ রয়েছে। তিনি আরও জানালেন, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা লাভ করে। বিহারটি অনেকক্ষণ। ঘুরে দেখার পর আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর আবার বিহারের ছোটো-বড়ো কক্ষগুলো ঘুরে দেখতে লাগলাম। জানতে পারলাম, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারটি পাল বংশের রাজা ধর্মপাল অষ্টম বা নবম শতকে তৈরি করেন। সারাদিন বিহারটি ঘুরে ঘুরে দেখার পর আমরা বিকাল ৫টায় ট্রেনে করে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।

(খ) উত্তরঃ

দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি: কারণ ও প্রতিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ নরসিংদী ॥ ১ জুন ২০২৪॥ বেদনাদায়ক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাই দুর্ঘটনা। আজকাল সড়ক দুর্ঘটনা একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি সারাদেশে ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে সড়ক দুর্ঘটনা। আর এই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে প্রতিদিনই নানা বয়স ও পেশার মানুষ। আত্মীয়স্বজন, মেধাবী ছাত্র, বুদ্ধিজীবীসহ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের খুব কাছের প্রিয় মানুষটিও। তাই এখনই সময়, এই সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো চিহ্নিত করে তা থেকে প্রতিকার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা। নিম্নে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার তুলে ধরা হলো-

ক. সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ সচেতনতার অভাব; খ. অসতর্কতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো; গ. যান্ত্রিক ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি রাস্তায় নামানো; ঘ. গাড়ির ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী বহন করা; ঙ. ভাঙা ও অপ্রশস্ত রাস্তাঘাট; চ. লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক; ছ. ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালানো; জ. ট্রাফিক আইন মেনে না চলা।

নিচে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উপায়গুলো দেওয়া হলো-

১. সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য সবার আগে প্রয়োজন নিরাপদ সড়ক। ২. দুর্ঘটনা এড়াতে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারে জনগণকে সচেতন করা। ৩. সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালানো। ৪. যান্ত্রিক ত্রুটি আছে এমন গাড়ি রাস্তায় নামানো বন্ধ করা। ৫. চালকদের দক্ষতা যাচাই করা এবং যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। ৬. লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধ করা। ৭. যানবাহন চলাচলের সরু রাস্তা প্রশস্ত করা। ট্রাফিক আইন মেনে চলা। ৮. অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল তোলা বন্ধ করা। ৯. নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি না চালানো। ১০. হাঁটার জন্য পথচারীদের ফুটপাত ব্যবহার করা।

উল্লিখিত বিষয়গুলো মেনে চললে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

5. (ক) অনুচ্ছেদটি শুদ্ধ করে লেখ :

ছেলেটি ভয়ানক মেধাবী ও বিনয়ী। তার মেধা পরিদর্শন করে সবাই মুগ্ধ। শিক্ষকবৃন্দরা মনে করেন আগামী ভবিষ্যতে সে অসামান্য সাফল্যতা বয়ে আনবে, যা ইতিপূর্বে অত্র প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব হয়নি। মা বাবাও স্বপ্ন অবলোকন করেন, ছেলেটি একদিন তাদের জীবনে বয়ে আনবে সুনাম ও স্বাচ্ছন্দ্য।

অথবা,

(খ) বাক্যগুলো শুদ্ধ কর (যে কোনো পাঁচটি)

(i) আবশ্যকীয় বিছানাপত্র নিয়ে আসবেন।

(ii) আমার এ কাজে মনোযোগীতা নেই।

(iii) আমি গীতাঞ্জলী পড়েছি।

(iv) তোমার দ্বারা সে অপমান হয়েছে।

((v) গণিত শাস্ত্র সকলের নিকট নিরস নহে।

(vi) তিনি তোমার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দেবেন।

(vii) তাহারা বাড়ি যাচ্ছে।

(viii) যাবতীয় লোকসমূহ সভায় উপস্থিত ছিল।

0/5MB-23

(ক) উত্তরঃ ছেলেটি প্রচণ্ড মেধাবী ও বিনয়ী। তার মেধা দেখে করে সবাই মুগ্ধ । শিক্ষকবৃন্দ মনে করেন ভবিষ্যতে সে অসামান্য সাফল্য/সফলতা বয়ে আনবে, যা ইতঃপূর্বে/ইতোপূর্বে এই প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব হয়নি। মা-বাবাও স্বপ্ন দেখেন, ছেলেটি একদিক তাদের জীবনে বয়ে আনবে সুনাম ও স্বাচ্ছন্দ্য।

(খ) উত্তরঃ

(i) আবশ্যক বিছানাপত্র নিয়ে আসবেন।

(ii) আমার এ কাজে মনোযোগ নেই।

(iii) আমি গীতাঞ্জলী পড়েছি।

(iv) তোমার দ্বারা সে অপমানিত হয়েছে।

((v) গণিত শাস্ত্র সকলের নিকট নীরস নহে।

(vi) তিনি তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন।

(vii) তারা বাড়ি যাচ্ছে।

(viii) যাবতীয় লোক সভায় উপস্থিত ছিল।

6. (ক) উপসর্গ কাকে বলে? উপসর্গ কত প্রকার ও কী কী উদাহরণসহ আলোচনা কর।

অথবা,

(গ) ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখ (যে কোনো পাঁচটি) ।

অনতিবৃহৎ, যুবজানি, নবযৌবন, গরমিল, বাহুলতা, গল্পপ্রেমিক, দোমনা, চিরসুখি।

0/4MB-23

(ক) উত্তরঃ কিছু অব্যয় আছে যেগুলি ধাতু অথবা শব্দের আগে যুক্ত হয়ে ধাতু বা শব্দের অর্থ বদলিয়ে দেয়- এ জাতীয় অব্যয়গুলোই হচ্ছে উপসর্গ। বলতে গেলে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত উপসর্গগুলোকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১) দেশী বা বাংলা উপসর্গ, ২) সংস্কৃত বা তৎসম উপসর্গ এবং ৩) বিদেশী উপসর্গ।

নিম্নে এই তিন প্রকার উপসর্গ সম্পর্কে উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো-

# দেশী বা বাংলা উপসর্গঃ

আর্যদের আগমনের পূর্বে বাংলায় যেসব জাতি বাস করতো, তাদের ভাষা থেকে যে সব উপসর্গ এসে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হচ্ছে, সে সব উপসর্গকে দেশী বা বাংলা উপসর্গ বলা হয়। বাংলা উপসর্গের সংখ্যা ২১টি। এগুলো হলো- অ, অঘা, অজ, অনা, আ, আড়্, আন, আব, ইতি, উন্‌, কদ, কু, নি, পাতি, বি, ভর, রাম, স, সা, সু ও হা।

# সংস্কৃত বা তৎসম উপসর্গঃ
যে সব উপসর্গ সংস্কৃত ভাষা থেকে এসে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হচ্ছে, সে সব উপসর্গকে সংস্কৃত বা তৎসম উপসর্গ বলা হয়। সংস্কৃত উপসের্গের সংখ্যা ২০ টি। এগুলো হলো- অতি, অধি, অনু, অপ, অপি, অব, অভি, আ, উপ, উত্‌, দুর্‌, নি নির্‌/নির, পরা, পরি, প্র, প্রতি, বি, সু ও সম্‌।

# বিদেশী উপসর্গঃ
বিদেশী ভাষা থেকে যেসব উপসর্গ বাংলা ভাষায় এসে প্রচলিত হয়ে গেছে, সে সব উপসর্গকে বিদেশী উপসর্গ বলা হয়। এরকম উপসর্গগুলো নিম্নরূপ-

আরবি উপসর্গ: লা, আম, বাজে, খাস।

ফারসি উপসর্গ: কার, দর, না, নিম, ফি, বদ, বে, বর, ব, কম।

ইংরেজি উপসর্গ: ফুল (full), হেড (head), হাফ (half), সাব (sub)।

(খ) উত্তরঃ নয় অতিবৃহৎ (নঞ তৎপুরুষ), যুবতী জায়া যার (বহুব্রীহি), নব যে যৌবন (সাধারণ কর্মধারয়), মিলের অভাব (অব্যয়ীভাব), বাহুলতার ন্যায় (উপমিত কর্মধারয়), গল্প প্রেমিক যে (সাধারণ কর্মধারয়), দুই দিকে মন যার (প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি), চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী (২য়া তৎপুরুষ)।

7. (ক) নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রিয় বন্ধুকে একটি চিঠি লেখো।

অথবা,

(খ) শহরের যানজট নিরসনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য একটি আবেদনপত্র লেখো।

0/10MB-23

(ক) উত্তরঃ

নরসিংদী

১লা বৈশাখ ১৪২২

প্রিয় প্লাবন,

আজ পহেলা বৈশাখ, শুভ নববর্ষ। আশা করি ভালো আছো। অনেকদিন তোমার খোঁজ খবর পাই না। ভুলে গেছ না কী? বন্ধু নববর্ষে বারবার মনে পড়ছে তোমার কথা। মনে পড়াটাই স্বাভাবিক। নববর্ষ আমাদের সার্বজনীন উৎসব, প্রাণের উৎসব, জাতীয় উৎসব। এদিনে তোমাকে কাছে ফেলে কতোই না ভালো লাগত! জীবন ও জীবিকার তাগিদে আমরা এক একজন একেক জায়গায় পড়ে আছি। কিন্তু প্রাণের টান কমে গেছে এটি মনে করার কোন কারণ নেই। আমার বিশ্বাস থেকে এই কথা বলছি। তোমারও মনোভাব সেরকমই হবে বলে আশাকরি।

নববর্ষ আমাদের জীবনকে উদ্দীপ্ত করে। অতীতের সব ব্যর্থতা, গ্লানি ভুলে গিয়ে নতুন দিনের আহ্বানে জেগে উঠি আমরা, স্বপ্ন দেখি নতুন করে। নববর্ষ তোমার জীবনকেও উদ্দীপ্ত করুক। নতুন দিনে আহ্বানে জেগে ওঠো তুমি, তোমার চোখের তারায় ভেসে উঠুক নতুন দিনের স্বপ্ন- এ আমার প্রার্থনা। নববর্ষ তোমার জীবনকে আরো আশাবাদী করুক। এ নববর্ষে আমরা সংকল্প করব, সকলের জীবন নতুনভাবে শুরু হোক। আমাদের সংস্কৃতি সমৃদ্ধ, এখন আমাদের দরকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ ঘটানো। নববর্ষের এ সম্মিলিত শক্তিই পারে আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটাতে। নিশ্চয়ই তুমি বিপুল উচ্ছ্বাসে বরণ করে নিচ্ছ নববর্ষকে। আগামী নববর্ষটা কি আমরা দু-বন্ধু একসঙ্গে কাটাতে পারি না? আমার অনুরোধ বিষয়টি তুমি বিবেচনা করে দেখবে।

আমাদের এখানে বেড়াতে এলে খুব খুশি হব, তোমারও ভালো লাগবে। তোমার আব্বা আম্মাকে আমার সালাম আর ছোট ভাই বোনকে আমার স্নেহ দিও। চিঠির উত্তর দিও।

ইতি,

তোমার বন্ধু আবির।

*[ এখানে প্রেরক ও প্রাপকের ঠিকানাসহ খাম আঁকতে হবে]

(খ) উত্তরঃ

তারিখ: ১৭ই মে ২০২৪

বরাবর,

সম্পাদক

দৈনিক প্রথম আলো

১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, ঢাকা-১২১৫।

জনাব,

আপনার বহুল প্রচারিত পত্রিকায় নিম্নলিখিত জনগুরুত্বসম্পন্ন পত্রটি প্রকাশ করে বাধিত করবেন।

নিবেদক

বাদল রায়

গেন্ডারিয়া, ঢাকা।

[অসহনীয় যানজটে স্থবির নগরজীবন]

ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। দেশের সমস্ত কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। নানা প্রয়োজনে দেশের সকল প্রান্তের মানুষ ঢাকা আসে। অফিস-আদালতের কাজ, ভ্রমণসহ নানা প্রয়োজনের কেন্দ্রস্থল ঢাকা। অথচ দেশের ব্যস্ততম এ শহরটি যানজটের কবলে পড়ে নাকাল। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রাস্তায় তীব্র ট্রাফিক জ্যাম লক্ষ করা যায়। দুঃসহ যানজটের কবলে পড়ে মানুষকে যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনের মধ্যে আটকে থাকতে হয় তখন ঢাকা সম্পর্কে মানুষের তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্ম হয়। ফার্মগেট থেকে গুলিস্তান যেতে যেখানে বড়জোর পনেরো মিনিট সময় দরকার, সেখানে যানজটের কারণে কখনো কখনো আড়াই ঘণ্টা লেগে যায়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সবগুলো সড়কেই একই চিত্র। এভাবেই মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান সময়। যেখানে দিনে পাঁচটি কাজ করা সম্ভব যানজটের কারণে হয়তো দুটি কাজ করা যায়। এ অবস্থায় দেশ অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ দুরবস্থা নিরসনকল্পে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিম্নলিখিত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

১. অবৈধ স্থাপনা ও ফুটপাত দখলকারীদের উচ্ছেদ করা;

২. রাস্তাসমূহ প্রয়োজনের অনুপাতে প্রশস্ত করা;

৩. যানবাহন চালকদের ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলতে বাধ্য করা;

৪. পাতাল রেলের ব্যবস্থা করা। এজন্য প্রয়োজনে উন্নত দেশের সাহায্য গ্রহণ করা;

৫. নগরীর চারদিক দিয়ে বিকল্প রেল স্থাপন করা;

৬. ফ্লাইওভারগুলোর নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত করা।

উপরোল্লিখিত ব্যবস্থসমূহ গ্রহণ করলে যানজটের তীব্রতা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।

নিবেদক

বাদল রায়

গেন্ডারিয়া, ঢাকা।

[এখানে ঠিকানা সংবলিত খাম আঁকতে হবে]

8. (ক) যে কোনো দশটি শব্দের পারিভাষিক রূপ লেখ :

Ability, Gain, Myth, Plant, Motion, Pole, Orbit. Debt, Capital, Deed, Civil, Valid, Global, Rank, Legend.

অথবা,

(খ) নিচের অনুচ্ছেদটি বাংলায় অনুবাদ কর :

A good teacher in one of the most important people in our country. Bangladesh needs good teacher. A good teacher makes lessons interesting. He also makes them confident and proves them clever. Everybody has something valuable in him. A good teacher discovers the treasure hidden inside each student.

0/5MB-23

(ক) উত্তরঃ সামর্থ্য, লাভ/ অর্জন, পৌরাণিক কাহিনি/ অতিকথা, উদ্ভিদ, গতি/প্রস্তাব, মেরু, কক্ষ ঋণ, পুঁজি/মূলধন, দলিল, দেওয়ানি/অসামরিক, বৈধ/সিদ্ধ, বৈশ্বিক, পদমর্যাদা, কিংবদন্তি।

(খ) উত্তরঃ

আমাদের দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ভাল শিক্ষক। বাংলাদেশে ভালো শিক্ষক দরকার। একজন ভালো শিক্ষক পাঠকে আকর্ষণীয় করে তোলে। তিনি তাদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং তাদের চতুর প্রমাণ করে। প্রত্যেকেরই তার মধ্যে মূল্যবান কিছু আছে। একজন ভালো শিক্ষক প্রতিটি শিক্ষার্থীর ভিতরে লুকিয়ে থাকা গুপ্তধন আবিষ্কার করেন।

9. (ক) বাক্য কাকে বলে? গঠন অনুসারে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।

অথবা,

(খ) নির্দেশ অনুযায়ী বাক্যন্তর কর (যে কোনো পাঁচটি) :

(i) যে লোক চরিত্রহীন সে পশুর চেয়েও অধম। (সরল)

(ii) তিনি থাকতে কোনো জিনিসের অভাব ছিল না। (জটিল)

(iii) প্রণাম করে পায়ের ধূলা নিলাম। (যৌগিক)

(iv) কিন্তু তারা তো নেই। (অস্তিবাচক)

(v) মানুষের তৈরি দুর্যোগেও অনেক ক্ষতি করে। (নেতিবাচক)

(vi) সময় নষ্ট না করে কাজটা শুরু করে দেয়া থাক। (অনুজ্ঞাবাচক)

(vii) জোড়াতালি দিয়ে কোনো সমস্যারই সমাধান করা যায়না। (প্রশ্নবোধক)

(viii) যদি ভুলগুলো শুধরে নিতে পারতাম। (বিস্ময়সূচক)

0/5MB-23

(ক) উত্তরঃ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক পদ বা শব্দের সমন্বয়ে যখন বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ পায় তখন তাকে বাক্য বলে। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, কোনো ভাষায় যে উক্তির স্বার্থ‘ক‘তা আছে এবং গঠ‘নে‘র দিক থেকে যা স্বয়ং‘সম্পূর্ণ, সেরূপ একক উক্তি‘কে ব্যাকরণে বাক্য বলে।

গঠন অনুসারে বাক্যকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সরল বাক্য, জটিল বা মিশ্র বাক্য, যৌগিক বাক্য।

# সরল বাক্য- যে বাক্যে একটি কর্তা এবং একটি ক্রিয়া থাকে, তাকে তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন – রহিমা ফুল তুলছে। এখানে রহিমা কর্তা এবং তুলছে ক্রিয়া। এই বাক্যে একটি কর্তা এবং একটি ক্রিয়া।

# জটিল বা মিশ্র বাক্য- যে বাক্যে একটি প্রধান খন্ডবাক্যের সাথে এক বা একাধিক আশ্রিত বাক্য পরস্পর যুক্ত হয়ে বাক্য গঠন করে। তাকে জটিল বা মিশ্র বাক্য বলে।

যেমন – তুমি যদি আসো, আমি যাবো। যে ব্যক্তি পরিশ্রম করে, সে ব্যক্তি সুখ লাভ করে।

# যৌগিক বাক্য: পরস্পর নিরপেক্ষ একাধিক সরলবাক্য যখন অর্থ ও গঠন অপরিবর্তিত রেখে সংযোজক অব্যয়ের দ্বারা মিলিত হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্য গঠন করে। তাকে যৌগিক বাক্য বলে।

যেমন – রাহিমা অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী কিন্তু নিয়মিত ক্লাস করে না। লোকটি গরীব কিন্তু সৎ।

(খ)  উত্তরঃ

(i) চরিত্রহীন লোক পশুর চেয়েও অধম। (সরল)

(ii) তিনি যখন ছিলেন তখন কোনো জিনিসের অভাব ছিল না। (জটিল)

(iii) প্রণাম করলাম এবং পায়ের ধূলা নিলাম। (যৌগিক)

(iv) কিন্তু তারা তো অনুপস্থিত। (অস্তিবাচক)

(v) মানুষের তৈরি দুর্যোগেও অনেক ক্ষতি করে। (নেতিবাচক)

(vi) সময় নষ্ট না করে কাজটা শুরু করো। (অনুজ্ঞাবাচক)

(vii) জোড়াতালি দিয়ে কোনো সমস্যার সমাধান করা যায় কি? (প্রশ্নবোধক)

(viii) ইশ্! যদি ভুলগুলো শুধরে নিতে পারতাম। (বিস্ময়সূচক)

10. (ক) আবেগ শব্দ কাকে বলে? উদাহরণসহ আবেগ শব্দের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর ।

অথবা,

(খ) নিচের অনুচ্ছেদ থেকে পাঁচটি বিশেষণ পদ নির্বাচন করঃ

সকালে মা তার ঘুমন্ত শিশুকে জাগিয়ে গরম দুধ খাওয়ালেন। এরপর আড়াই বছরের অবুঝ শিশুটিকে নিয়ে বাগানে লাল লাল ফুল দেখালেন। সদ্যোজাত ফুলগুলো ছিল চমৎকার। ঝকঝকে রোদে পরিবেশও ছিল সুখকর।

0/5MB-23

(ক) উত্তরঃ 

যে শব্দের মাধ্যমে মনের নানা ভাব ও আবেগকে প্রকাশ করা হয়,তাকে আবেগ শব্দ বলে। প্রকাশ অনুসারে আবেগ শব্দকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:

সিদ্ধান্তবাচক আবেগ শব্দ: এই জাতীয় আবেগ শব্দের সাহায্যে অনুমোদন প্রকাশ পায়।যেমন:বেশ,তাই হবে।
প্রশংসাবাচক আবেগ শব্দ: এ ধরনের আবেগ শব্দ প্রশংসা প্রকাশ করে।যেমন:বাঃ!বড় ভালো কথা বলেছ।
বিরক্তিবাচক আবেগ শব্দ: এ ধরনের আবেগ শব্দ ঘৃণা প্রকাশ করে।যেমন:ছিঃ ছিঃ,তুমি এত নীচ!
যন্ত্রণাবাচক আবেগ শব্দ: এ ধরনের আবেগ শব্দ আতঙ্ক প্রকাশ করে।যেমন:আঃ,কী আপদ।
সম্বোধনবাচক আবেগ শব্দ: এ ধরনের আবেগ শব্দ আহবান করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।যেমন:হে বন্ধু,তোমাকে অভিনন্দন।
বিস্ময়বাচক আবেগ শব্দ: এ ধরনের আবেগ আশ্চর্য হওয়ার ভাব প্রকাশ করে।যেমন:আরে,তুমি আবার এলে!

(খ) উত্তরঃ বিশেষণ পদঃ  ঘুমন্ত, গরম, আড়াই, অবুঝ, লাল লাল, সদ্যোজাত, চমৎকার, ঝকঝকে।

11. (ক) ‘অ’ ধ্বনি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখ।

অথবা ,

(খ) যে কোনো পাঁচটি শব্দের উচ্চারণ নির্দেশ করা:

ঊনসত্তর , জয়ধ্বনি, সৌন্দর্য, অন্নপূর্ণা, আসক্তি, প্রজাপতি, হিতৈষী, বিশেষজ্ঞ।

0/5MB-23

(ক) উত্তরঃ অ ধ্বনি উচ্চারণের ৫ টি নিয়ম নিচে দেওয়া হলোঃ

১। শব্দের আদিতে যদি ‘অ’ থাকে এবং তারপরে ‘ই’-কার, ‘উ’-কার, থাকে তবে সে- ‘অ’ এর উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’-কারের মতো হয়। যথাঃ অভিধান (ওভিধান), অভিযান (ওভিজান), অতি (ওতি), মতি (মোতি), অতীত (ওতিত্), অধীন (অধীন্‌) ইত্যাদি।

২। শব্দের আদ্য-‘অ’ এর পরে ‘য’-ফলাযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সেক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ প্রায়শ ‘ও’-কারের মতো হয়। যেমনঃ অদ্য (ওদ্‌দো), অন্য (ওন্‌নো), অত্যাচার (ওত্‌তাচার), কন্যা (কোন্‌না), বন্যা (বোন্‌না) ইত্যাদি।

৩। শব্দের আদ্য-‘অ’ এর পর ‘ক্ষ’, ‘জ্ঞ’, থাকলে, সে ‘অ’পের উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’-কারের মতো হয়ে থাকে। যথাঃ অক্ষ (ওক্‌খো), দক্ষ (দোক্‌খো), যক্ষ (জোক্‌খো), লক্ষণ (লোক্‌খোন্‌), যজ্ঞ (জোগ্‌গোঁ), লক্ষ (লোক্‌খো), রক্ষা (রোক্‌খা) ইত্যাদি।

৪। শব্দের প্রথমে যদি ‘অ’ থাকে এবং তারপর ‘ঋ’-কার যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলেও, সেই ‘অ’-এর উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’-কারের মতো হয়। যথাঃ মসৃণ (মোসৃন্‌), বক্তৃতা (বোক্তৃতা), যকৃত (জোকৃত্‌)।

৫। শব্দের প্রথমে ‘অ’ যুক্ত ‘র’-ফলা থাকলে সেক্ষেত্রেও আদ্য ‘অ’-এর উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’-কার হয়ে থাকে। যথাঃ ক্রম (ক্রোম), গ্রহ (গ্রোহো), গ্রন্থ (গ্রোন্‌থো), ব্রত (ব্রোতো) ইত্যাদি।

(খ) উত্তরঃ

প্রবন্ধ রচনা (5)

1. শৈশব স্মৃতি।

0/20MB-23

সূচনা : দিন আসে, দিন যায়। মানুষের জীবনের স্মৃতির অ্যালবাম ঋদ্ধ হতে থাকে। কিছু স্মৃতি মন থেকে মুছে যায়, আর কিছু স্মৃতি কখনাে ভােলা যায় না। মাঝে মাঝে জীবনের অতীত পানে যখন ফিরে তাকাই, তখন ফেলে আসা বর্ণাঢ্য সুখস্মৃতি মানস চোখে। মায়াবী রূপে ধরা দেয়। সেই দিনগুলাে ছিল বড়াে সুন্দর, বড়াে রঙিন, বড়াে মধুময়। জীবন থেকে চলে যাওয়া শৈশব-কৈশােরের সেই দিনগুলাে আজও ভুলতে পারছি না। সে দিনগুলাের কথা মনে হলেই মন পুলকে ভরে ওঠে। কত রঙিন ঘটনা, কত উচ্ছাস, কত। উল্লাস মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। মনে মনে বলতে থাকি—

সে যে কাল হলাে কতকাল
তবু যেন মনে হয় সেদিন সকাল । 

আমার শৈশবকাল : গ্রামেই আমার শৈশব-কৈশাের অতিবাহিত হয়েছে। নরসিংদী জেলার অন্তর্গত চর উজিলার একটি সুন্দর ছােট্ট গ্রাম। এ গ্রামেই বেড়ে উঠেছি আমি। নদীর কূল ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ গ্রামটি সত্যিই অপূর্ব। বাবা চাকরিসূত্রে শহরে থাকতেন। মাঝে মাঝে বাড়িতে আসতেন। আম, জাম, কাঁঠাল, নারকেল আর সুপারি গাছে ঘেরা ছায়া সুনিবিড় ছিল আমাদের বাড়িটি। দাদি, চাচা, ফুফু, ভাইবােন সবাই মিলে আমরা বাস করতাম । আমি ছিলাম পরিবারের সকলের আদরের । গ্রামের বন্ধুদের সাথে নদীতে সাঁতার প্রতিযােগিতায় মেতে উঠতাম, ঝড়ের দিনে দল বেঁধে আম কুড়াতাম, সারা গ্রাম হইচই করে ছুটে বেড়াতাম, গাছে উঠতাম, নদীর উপর ঝুঁকে থাকা গাছ থেকে লাফিয়ে পড়তাম, আরও কত কী।

বাবার স্মৃতি : বাবা ছিলেন আমার অকৃত্রিম বন্ধু । বাবা আমাকে লেখাপড়া, চলাফেরা সম্পর্কে নানা উপদেশ দিতেন। কী করলে প্রকৃত মানুষ হতে পারব সে কথা বলতেন । পরীক্ষার দিন বাবা বলতেনসবাইকে সালাম করতে হবে, দোয়া চাইতে হবে এবং প্রশ্ন বুঝে পরীক্ষার খাতায় উত্তর লিখতে হবে । বাবার উপদেশগুলাে আমার জীবনে অনেক উপকারে এসেছে । তাছাড়া তিনি নানা মজার মজার গান ও গল্প শােনাতেন। আজ বাবা নেই, কিন্তু বাবার কথাগুলাে আজও আমার সমস্ত অন্তর জুড়ে অক্ষয় হয়ে আছে।

মায়ের স্মৃতি : আমার শৈশব স্মৃতির মধ্যে মায়ের স্মৃতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । মাকে আমি ভুলতেই পারি না। মা যে আমাকে কতটা ভালােবাসতেন, তা বর্ণনা করার ভাষা আমার জানা নেই। তবে এতটুকু বলতে পারি, মা তাঁর জীবনের চেয়েও আমাকে বেশি ভালােবাসতেন। আমাকে সুখী দেখলে মা খুব খুশি হতেন, আমি একটু অসুস্থ হলে মা অস্থির হয়ে যেতেন। স্কুল বা অন্য কোথাও থেকে বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হলে মা উদ্বিগ্ন চিত্তে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করতেন। মায়ের মধুময় স্মৃতি মনে হলে আমার পক্ষে নিজেকে সামলানাে কষ্ট হয়। মনে পড়ে যায় সেই বিখ্যাত গানটি—

মধুর আমার মায়ের হাসি চাদের মুখে ঝরে।
মাকে মনে পড়ে, আমার মাকে মনে পড়ে। 


লেখাপড়ার স্মৃতি : শৈশবে আমি দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম । হইচই করে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখতাম। একদিন বাবা বললেন, তােমাকে কাল থেকে পড়া শুরু করতে হবে । পরদিন নতুন জামা-কাপড় পরে, নতুন বই-খাতা-কলম নিয়ে বাবার সাথে পড়ার ঘরে গেলাম। বাবা শিক্ষককে সালাম দিতে বললেন— আমি সালাম দিলাম। শিক্ষক হাসি দিয়ে সালামের উত্তর দিলেন এবং আমাকে আদর করে কাছে বসালেন। তারপর যত্নের সাথে বই খুলে পড়া বলে দিলেন- অ, আ, ই, ঈ। আমি মনােযােগ দিয়ে সেদিন দীর্ঘ সময় পড়েছিলাম । তারপর শুরু হলাে স্কুলে যাওয়ার পালা। পাঁচ বছর বয়সে আমাকে স্থানীয় স্কুলে ভর্তি করানাে হয় । বাড়ি থেকে স্কুল খুব দূরে ছিল না। হেঁটেই স্কুলে যেতে হতাে সমবয়সিদের সাথে স্কুলে যেতাম, ভালােই লাগত। এভাবে স্কুলে যাওয়া-আসা, শিক্ষকগণের আদর-স্নেহ-শাসন আর বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা-খুনসুটির মধ্য দিয়ে আমার শৈশবের স্কুল জীবনের দিনগুলাে বিশিষ্টতা লাভ করেছিল ।

বৃষ্টির দিনের স্মৃতি : বৃষ্টি হলে স্কুলে যেতে হতাে না। সেদিন আমার কী আনন্দ! ভাই-বােনেরা মিলে বারান্দায় নেচে গেয়ে বৃষ্টির আনন্দে মেতে উঠতাম। মায়ের বকুনি, বাবার শাসন কিন্তু কে শুনে কার কথা। হৈ-হুল্লোড় করে বাড়ি মাতিয়ে তুলতাম ।  কখনাে আবার বৃষ্টির তালে তালে সুর করে গান ধরতাম— 

মেঘের কোলে রােদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি
আজ আমাদের ছুটি ও ভাই আজ আমাদের ছুটি। 


স্কুল পালানাের স্মৃতি: ছােটোবেলায় আমি যে কতবার স্কুল পালিয়েছি তার হিসাব নেই । আজ স্কুলে যাব না, একথা বললেই মা ক্ষেপে যেতেন। তাই পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা এসব অজুহাত দেখিয়ে স্কুল কামাই করতাম । আবার বেশিরভাগ সময় বাড়ি থেকে বইপত্র নিয়ে বের হতাম কিন্তু স্কুলে যেতাম না। বইপত্র কোথাও লুকিয়ে রেখে বন্ধুদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতাম ও খেলাধুলা করতাম । দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলে বাড়িতে ফিরতাম । স্কুলের শিক্ষকরা মাঝে মাঝে বাড়িতে অভিযোগ জানাতেন । আর তখন সবার বকুনি শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে যেত ।

পাড়া বেড়ানাের স্মৃতি : আমি প্রায়ই বন্ধুদের সাথে বাইরে বেড়াতাম । তাদের নিয়ে এ পাড়া, ও পাড়া ঘুরে বেড়াতাম । পুকুরে, জলাশয়ে সাঁতার কাটতাম । কে কত ডুব দিতে পারে, কে কতক্ষণ পানির নিচে থাকতে পারে তার প্রতিযােগিতায় নামতাম । বিকেলে ফুটবল খেলতে মাঠে যেতাম। হা-ডু-ডু খেলা, গাছে চড়া ইত্যাদি কাজ আমার প্রিয় ছিল। গাছে চড়ে আম পাড়া, জাম খেয়ে মুখ রঙিন করা আমাদের কাছে খুব মজার ব্যাপার ছিল। আজ যখন কালেভদ্রে অবসর-অবকাশে হারানাে শৈশব খুঁজে পাওয়ার প্রত্যাশায় নজরুলের ‘লিচু চোর’ পড়ি— 

বাবুদের তাল-পুকুরে
হাবুদের ডাল-কুকুরে।
সেকি বাস করলে তাড়া
বলি থাম্ একটু দাঁড়া! 


তখন লিচু চোরের সাথে আমার শৈশবের অনেক সামঞ্জস্য দেখে বড়ােই পুলকিত হই। 

মামা বাড়ির স্মৃতি : শৈশবের আর একটি স্মৃতি আমাকে অত্যন্ত আনন্দ দেয় । তা হচ্ছে মামার বাড়ি বেড়াতে যাওয়া । মায়ের সাথে মামার বাড়ি বেড়াতে যেতাম। আমরা নৌকা করে যেতাম । মাঠের বুক চিরে জলের ওপর দিয়ে ভেসে ভেসে যাওয়া সে কী আনন্দ! যখন মামার বাড়ি পৌঁছতাম, তখন নানি আমাদের কত আদর করতেন, নাড়ু, চিড়া, মুড়ি, পিঠা ইত্যাদি খেতে দিতেন । বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে মামার দেশে কালবৈশাখীর ঝড় কিংবা কাঠফাটা রােদে আমাদের দুরন্তপনার স্মৃতি আমাকে আজও উন্মনা করে দেয় । কবির ভাষায়—

ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ
পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ । 


সেখানকার দিনগুলােতে অবাধ স্বাধীনতা ভােগ করতাম । জীবনে যে এত হাসি, এত আনন্দ আছে তা মামার বাড়িতেই উপলব্ধি করতাম । 

বন্ধুর স্মৃতি : শৈশব কালের আর একটি স্মৃতি আমাকে এখনও বেদনা দেয়। আমার বন্ধু ছিল সােহেল। একদিন তার ভীষণ জ্বর হলাে। খবর পেয়ে তাকে দেখতে গেলাম। গিয়ে দেখি সে বিছানায় ছটফট করছে, তার মা-বাবা কাঁদছে। আমি তার পাশে বসে জিজ্ঞেস করলাম সােহেল তাের কেমন লাগছে? সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল— আমার ছুটি হয়েছে, তােরা সুখে থাক, আমি চললাম। দেখতে দেখতে সে চলেই গেল। সেদিন প্রথম বুঝেছিলাম প্রিয়জন হারানাের বেদনা যে কত নির্মম, কত বেদনাময়! 

উপসংহার : আজ শৈশবের কত কথাই মনে পড়ছে । দিন আসে দিন যায় । কত স্মৃতি এসে জীবনের পাতায় জমা হয় । কিন্তু শৈশবের সেই সােনাঝরা স্মৃতি কোনােভাবেই ভুলতে পারি না। অনেক সময়ই ভাবি, শৈশবের দিনগুলাে যদি আবার ফিরে পেতাম। কিন্তু তা তাে কখনাে সম্ভব নয় । তাইতাে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের ন্যায় আমারও বলতে ইচ্ছে হয়— 

দিনগুলাে মাের সােনার খাঁচায় রইল না, রইল না ।
সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলাে ।

2. নারীশিক্ষা ও জাতীয় উন্নয়ন।

0/20MB-23

ভূমিকা: মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ‘নারী’ হোক ‘পুরুষ’ হোক তাদের বড়ো পরিচয় হলো তারা মানুষ। নারীদের মনুষ্যত্ব বিকাশের জন্য, উৎকৃষ্ট মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য শিক্ষার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। একটি আদর্শ জাতির জন্য আদর্শ মা প্রয়োজন, চিরন্তন এ সত্যকে অস্বীকার করলে চলবে না। মা যদি শিক্ষিত না হয়, তাহলে সন্তান শিক্ষিত হবে না। সন্তান শিক্ষিত না হলে স্বাভাবিকভাবেই জাতির ভবিষ্যৎ হয় অন্ধকার। নারীশিক্ষার প্রসার নিশ্চিত করা সম্ভব হলে জাতীয় অগ্রগতি নিশ্চিত হবে। সভ্যতার চরম উৎকর্ষের বহুমাত্রিক সুযোগ-সুবিধার চূড়ান্ত ব্যবহার করতে হলে নারীশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

নারীশিক্ষার অতীত ও বর্তমান: নারীশিক্ষার অতীত খুব সুখকর নয়।

নানারকম সমস্যা অতীতে নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে বাধা-বিঘ্নের সৃষ্টি করেছে। ব্রিটিশশাসিত অবিভক্ত ভারতে উনিশ শতকের আগে নারীশিক্ষা ছিল অবহেলিত বিষয়। তারও আগে থেকেই অবশ্য এ অবহেলার শিকড় প্রোথিত হয়। নারীরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল মূলত নিম্নলিখিত কারণে:

ক. ধর্মীয় অনুশাসন

খ. সংস্কার, কুসংস্কার

গ. পুরুষশাসিত সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

ঘ. নারীদের অজ্ঞতা, ধর্মীয় ভীতি

ঙ. সাংস্কৃতিক চেতনার অভাব

চ. শিক্ষা সম্পর্কে নারীদের উদাসীনতা

ছ. পরনির্ভরশীলতা।

উপর্যুক্ত কারণগুলো পাকিস্তান আমলেও আমাদের দেশে বিরাজমান ছিল। বর্তমান সময়ে নারীশিক্ষা আগের মতো দুর্দশার মধ্যে অবস্থান না করলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। এখনও আমাদের দেশে নারীরা পুরুষের সঙ্গে সমান হারে শিক্ষালাভ করতে পারছে না, অনেক অনেক পিছিয়ে আছে।

নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা: নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন

নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এক সেমিনারে বলেছেন, ‘নারীশিক্ষা একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রধান উপকরণসমূহের একটি।’ নেপোলিয়ান বলেছেন, ‘Let France have good mothers and she will have good sons’. নারীশিক্ষার প্রয়োজন যুগ যুগ ধরেই ছিল। বর্তমান সভ্যতার আলোকে নারীশিক্ষা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, পারিবারিক এমনকী ব্যক্তিগত উৎকর্ষের সঙ্গে নারীশিক্ষার গুরুত্ব জড়িয়ে পড়েছে। দেশের লোকসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। এ অর্ধেক নারী যদি শিক্ষা গ্রহণ না করে, মনুষ্যত্বের গুণাবলি অর্জন না করে শিক্ষার মাধ্যমে, তাহলে এ দেশের ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার তা অনস্বীকার্য। পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রেই শিক্ষিত নারীর প্রয়োজন। শিক্ষিত নারী তার সতীর্থ পুরুষকে নিজের শিক্ষাদীক্ষার মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভিত্তি তৈরি করতে পারে। নারীশিক্ষার অভাবে যেসব অসুবিধা হচ্ছে সেগুলো হলো:

আদর্শ পরিবার প্রত্যাশিতভাবে গড়ে উঠতে পারছে না;

শিক্ষিত সন্তান-সন্ততি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সমাজ বহুলাংশে পিছিয়ে থাকছে;

অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা কাটছে না;

দাম্পত্য বোঝাপড়া স্বচ্ছ হচ্ছে না;

অশিক্ষিত নারী কর্মহীন বিবেচনায় দেশের বোঝা হয়ে আছে;

নারীদের প্রকৃতিপ্রদত্ত গুণাগুণ বিকশিত হচ্ছে না; সামাজিক অনাচার বাড়ছে। পারিবারিক কলহ বাড়ছে;

নারী তার নিজের অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে পারছে না।

উপর্যুক্ত পরিস্থিতি আমাদের দেশে নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে তীব্র করে তুলেছে। নারীশিক্ষার অনগ্রসরতার কারণে দেশের সমাজব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব মারাত্মকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অভাবগুলোর প্রতিকার নারীশিক্ষার মাধ্যমেই করা সম্ভব বলে নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনো দ্বিধাই চলে না।

নারীশিক্ষা সম্পর্কে গৃহীত পদক্ষেপ: নারীশিক্ষা বিস্তারে স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। অবশ্য পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে খুবই যৎসামান্য। বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত নারীদের অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। তা ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও নিজেদের উদ্যোগে নারীশিক্ষা বিস্তারে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে, যা খুবই আশাব্যঞ্জক। স্বাধীন দেশে নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করছে। নারীর ক্ষমতায়ন ব্যবহারিক পর্যায়ে দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে নারীশিক্ষার চলমান কর্মফল থেকেই। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নারীদের আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। এসব গৃহীত ব্যবস্থা নারীদের সংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। তবু একটি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে নারীশিক্ষার যে অগ্রগতি হচ্ছে তার গন্তব্য নিশ্চয়ই অনেক দূর।

নারীশিক্ষা বিস্তারে করণীয় বিষয়: নারীশিক্ষা বিস্তারে সরকার কর্তৃক

আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বেসরকারি পর্যায়েও আরও বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত। সবার সমন্বিত উদ্যোগই কেবল নারীশিক্ষায় সফলতা এনে দিতে পারে। নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি নারীশিক্ষা বিস্তারের জন্য সরকার ও অন্যান্য মহলের লক্ষ রাখা দরকার।

• নারীশিক্ষাকে জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে বিবেচনা করতে হবে:

সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে;

গ্রাম ও শহর বিবেচনায় উপযুক্ত কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে;

প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে;

একটি মনিটরিং সেল স্থাপন করে বৎসরান্তে নারীশিক্ষার অগ্রগতি মূল্যায়ন করার প্রক্রিয়া চালু করতে হবে;

• বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করতে হবে;

• সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রচার-প্রচারণার

• ব্যবস্থা রাখতে হবে; কর্মমুখী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে;

• বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে;

•নারীশিক্ষাকে উৎসাহ প্রদানের জন্য শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

উপসংহার: নারীশিক্ষা আমাদের মতো দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাই নারীকে অশিক্ষিত রেখে জাতীয় উন্নয়নের কথা কল্পনাই করা যায় না। নারীশিক্ষাকে অগ্রগণ্য কর্মসূচি দ্বারা বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলে সুফল পাওয়া যাবে। আর তখনই দেশের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা সংযুক্ত হয়ে তা দেশকে সমৃদ্ধির শীর্ষে নিয়ে যাবে।

3. মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার।

0/20MB-23

ভূমিকা

বাংলাদেশ সহ বর্তমান বিশ্ব সভ্যতা যেসব মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে মাদকাসক্তি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। মাদকাসক্তি আমাদের ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনের জন্য এক ভয়াবহ অভিশাপ। এক মরণ নেশার নাম হল মাদকাসক্তি। মাদকাসক্তি নামটা শুনলেই  আমাদের মন চমকে ওঠে। মানুষ জানেন যে, নেশা সর্বনাশা। এরপরেও মানুষ এই সর্বনাশার ফাঁদে আটকে যায়। আমাদের সমাজে মাদকাসক্তি বিস্তার লাভ করেছে। সর্বনাশা ব্যাধি রূপে এই সর্বনাশার শিকার হয়ে আমাদের যুবসমাজ বিপন্ন করছে তাদের জীবনকে।

মাদকাসক্তির ভয় বহতা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে যতদিন যাচ্ছে ।মাদকাসক্তি একটি মরণফাঁদ আমাদের সমাজের জন্য। আর আমাদের যুবসমাজ, তরুণ সমাজ এই মরণ ফাঁদে আটকে যায় ।একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ার জন্য আমাদের তরুণ ও যুব সমাজকে রক্ষা করা একান্ত কর্তব্য। তাই আমাদের উচিত মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া।

মাদকাসক্তি কি

মাদকাসক্তি তাকে বলা হয়  যেসব দ্রব্য সামগ্রী ব্যবহার বা পান করলে নেশা সৃষ্টি হয় । আর মাদকাসক্ত তাদের বলা হয় যারা মাদক সেবন করে  । একজন ব্যক্তির জন্য একটি ক্ষতিকর শারীরিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া হল মাদকাসক্তি। মাদকাসক্তির নেশা হলো এমন এক নেশা যার কবল থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। আর মাদকাসক্তির ফল হল অকাল মৃত্যু। মাদকাসক্তির আকর্ষণ শক্তি এত তীব্র যে সকল মানুষের পক্ষে সহজ জীবনে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। 

যে দ্রব্য গ্রহণের ফলে মানুষের মনে নেতিবাচক প্রভাব আসে এবং যে দ্রব্যের প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায় তাকে বলা হয় মাদকাসক্তি। মাদকের প্রতি ব্যক্তির যখন আগ্রহ ক্রমশ বাড়তে থাকে তখন তাকে বলা হয় মাদকাসক্তি। তাই মাদকদ্রব্যের প্রতি নেশাকেই মাদকাসক্তি বলা হয়।

মাদক দ্রব্য কি

যেসব দ্রব্য সেবন করলে বা গ্রহণ করলে মানুষের মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন হয় এবং মানুষের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে সেগুলোকে বলা হয় মাদকদ্রব্য। মাদকদ্রব্য বলতে বোঝায় সেসব দ্রব্য যা প্রয়োগ করলে মানবদেহে সংজ্ঞাবহ এবং মস্তিষ্ক হ্রাস পায় তাকে মাদকদ্রব্য বলা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য রয়েছে। 

যেমন – প্রাচীন নেশা দ্রব্য হল গাঁজা, মদ, আফিম, ভাঙ ইত্যাদি। এছাড়াও বর্তমানে যেসব মাদকদ্রব্য প্রচলিত রয়েছে তা হলো – হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা, মারিজুয়ানা,মরফিন, কোকেন, প্যাথেডিন, এল এস ডি, চরস, পপি,ক্যানবিস,  হাশিশ, স্মাক ইত্যাদি।

মাদকদ্রব্যের প্রকারভেদ

পৃথিবীতে  মাদকদ্রব্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের।  এগুলোকে ভাগ করা যায় প্রধানত দুই ভাগে । যথা –

 প্রাকৃতিক ও 

রসায়নিক 

প্রাকৃতিক

প্রাকৃতিকভাবে যেসব মাদকদ্রব্য উৎপাদন করা হয় তাকে প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য বলা হয়। প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য সাধারণত গাছ থেকে উৎপাদন করা হয়। যেমন – গাজা, ভাঙ, আফিম, তাড়ি, চরস ইত্যাদি।

রাসায়নিক

রাসায়নিক ক্রিয়া বিক্রিয়ার মাধ্যমে পরীক্ষাগারে যে মাদকদ্রব্য উৎপাদন করা হয় তাকে রাসায়নিক মাদকদ্রব্য বলা হয়। প্রাকৃতিক মাদকদ্রব্য থেকে রাসায়নিক মাদকদ্রব্য বেশি ক্ষতিকর হয় এবং নেশা সৃষ্টি করে। রাসায়নিক মাদকদ্রব্য গুলো হল – হেরোইন, কোকেন, মরফিন, প্যাথেডিন , ইয়াবা, বিভিন্ন প্রকার এলকোহল, শূরা, সঞ্জীবনী ইত্যাদি। এছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংখ্যা অনুযায়ী নিকোটিন যুক্ত তামা দ্রব্য হল সিগারেট, জর্দা, চুরুট, নস্যি ইত্যাদি।

 মাদকের উৎস

বিশ্বব্যাপী মাদকদ্রব্য বিস্তৃত। মাদক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত হয়। মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুনাফা লোভী অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। অনেক দেশে মাদকের চোরা চালান, বিপণন, প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। মাদক চোরা চালানের প্রধান অঞ্চল হিসাবে যেগুলো পরিচিত সেগুলো হল –

গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল 

গোল্ডেন ক্রিসেন্ট 

গোল্ডেন ওয়েজ 

গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের পরিধি বার্মা, মায়ানমার ও লাউস।

গোল্ডেন ক্রিসেন্ট এর পরিধি ইরান, তুরস্ক, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। পাকিস্তানে সিংহভাগ উৎপন্ন হয়।

গোল্ডেন ওয়েজ নেপাল সীমান্ত ও ভারতে পাওয়া যায়। ভারত ও নেপাল সীমান্তে প্রচুর পরিমাণে গাজা, হেরোইন, আফিম ও কোকেন ইত্যাদি বেশি উৎপন্ন হয়। মাদক উৎপাদন ও চোরাচালানের বড় একটি নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর ও বলিভিয়ায়।বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ও  ছড়িয়ে পড়েছে এসব মাদকদ্রব্যের নেটওয়ার্ক।

মাদকাসক্তির কারণ

একজন ব্যক্তির মাদকাসক্তি হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। মাদকাসক্তি হওয়ার প্রধান কারণ গুলো হল-

  • নৈতিক শিক্ষার অভাব
  • পারিবারিক অশান্তি
  • বেকারত্ব
  • হতাশা ও বন্ধু-বান্ধবের প্ররোচনা
  • মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ীদের প্ররোচনা
  • পাশ্চাত্য জীবনের অন্ধ অনুকরণ
  • দেশের বিশেষ রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা
  • প্রেমে ব্যর্থতা
  • সৌখিনতা ও কৌতূহল বসত
  • মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা ইত্যাদি।

এছাড়াও যে সকল কারণে ব্যক্তি মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে তা হল-

হতাশা

আমাদের যুব সমাজের মাদকাসক্তি হওয়ার পেছনের প্রধান কারণ হলো হতাশা। আমাদের যুব সমাজ নিজেকে নিয়ে অনেক উচ্চ আশা পোষণ করে কিন্তু সে মোতাবেক  কাজ করে না। যার কারণে সে তার মনের আশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয় যার কারণে সে মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে।

 কুশংসর্গ

একজন মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে তার পরিবেশ। একজন মানুষ অনেক সময় মাদকাসক্ত বন্ধুর সাথে মিশে নিজের অজান্তেই মাদকদ্রব্য সেবনে সে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।

পারিবারিক কলহ

পারিবারিক কলহ ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দের অভাব আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বে কিশোরদের ভুল পথে পরিচালিত করে । একজন কিশোর মাদকের সংস্পর্শে এসে যায় সুস্থ সামাজিক পরিবেশের অভাবে  ।

কৌতুহলবশত

কৌতূহলবশত অনেক কিশোর – কিশোরী মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে কারণ মানুষের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ হয় নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি। তাই কৌতুহলবসত হয়ে একজন কিশোর মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে।

মাদকের উৎসভূমি

আফিম হলো মাদকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন মাদক। আফিম কৃষকেরা তৈরি করেন পপি ফুলের নির্যাস থেকে এবং এই নির্যাস থেকে হয় মরফিন বেস। আর সর্বনাশা হেরোইন তৈরি হয় আফিম থেকেই। মাদকদ্রব্য মারিজুয়ানা উৎপন্ন হয় যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া, জা্মাইকা, মরক্কো, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ব্রাজিল, জ্যামাইকা, গুয়েত মালা, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, ঘানা প্রভৃতি দেশে।জ্যামাইকা, মরক্কো, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভারত, জর্ডান এসব দেশে হাশিশ উৎপন্ন হয়।

মাদকদ্রব্য চোরা চালান

মাদকদ্রব্যের বিশাল অপরাধ জগতের সাথে জড়িত ব্যক্তিগত ছাড়াও আরো অনেক ব্যবসায়িক দিক রয়েছে ভারত ও পাকিস্তান থেকে পাচার হয়ে। আর এই মাদকদ্রব্য পশ্চিম ইউরোপের যেসব দেশে পাচার হয় সেগুলো হল- সুইজারল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি ও গ্রেট ব্রিটেনে। চোরা চালানের কেন্দ্রস্থল হিসাবে ব্যবহার করা হয় শ্রীলঙ্কাকে। বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য চোরাচালানের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয় গোল্ডেন ট্রাইংগেল ও গোল্ডেন ক্রিসেন্ট এর মাঝামাঝি হওয়ার কারণে।

বিশ্বব্যাপী মাদক দ্রব্যের ব্যবহার ও প্রতিক্রিয়া

মাদকের ভয়াবহতা বিস্তারের জন্য বাংলাদেশ সহ পুরো বিশ্ব আজ উদ্বেগ জনক অবস্থায় রয়েছে । মাদকাসক্ত হল ভয়াবহ পরিণতি ।মাদকাসক্ত হলো আজ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সমস্যা। সমাজের প্রায় সর্বক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় মাদকদ্রব্য ।

মাদকাসক্তের সংখ্যা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে যে, পৃথিবীর প্রায় শতাধিক দেশে ৫০ থেকে ৬০ কোটি মানুষ মাদকে আসক্ত। এই ক্ষতিকর মাদকদ্রব্য উৎপন্ন হয় পৃথিবীর ৩৬ টি দেশে কিন্তু মাত্র ৩৬ টি দেশে মাদক উৎপন্ন হলেও মাদকের লীলা ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে প্রায় শতাধিক দেশ। চিকিৎসকদের মতে, বাংলাদেশে ৫০ লক্ষেরও বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে। তবে মহিলাদের মধ্যে প্যাথেডিনে আসক্তির সংখ্যা বেশি। 

আমেরিকায় প্রায় ৪ কোটি নর  নারী কোকেন সেবন করে। মারিজুয়ানা সেবন করে দুই কোটি মানুষ। হেরোইন সেবন করে ১২ লক্ষ। মানুষ সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলোতেও একই সমস্যা রয়েছে।

মাদকাসক্ত হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ ও পরিণতি

আমাদের দেশসহ বিশ্বের দেশগুলো নেশার খপ্পরে পড়ে বিভ্রান্ত হয়ে গেছে কারণ মাদকাসক্তির পরিণতি খুবই ভয়াবহ। যাদের নেশায় আসক্তি রয়েছে তাদের আচার-আচরণের মধ্যে একটি খাপ ছাড়া ভাব পরিলক্ষিত হয়। নেশাগ্রস্ত হওয়ার ফলে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে চুরির অভ্যাস। কিশোরেরা বই, খাতা, কলম সহ অন্যান্য দ্রব্য হারিয়ে ফেলে। পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে ওঠে, চুরি, ডাকাতি, ছিন্তাইসহ বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয় যার কারণে সমাজে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা।

 কিশোরদের ইতিবাচক বিশ্বাসগুলো ভেঙ্গে ফেলছে এই সর্বনাশা মাদকদ্রব্য। যার কারনে পরিণত হচ্ছে মেরুদণ্ডহীন এই যুবসমাজ। নেশার জগতে বেশি প্রবেশ করে উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্ত ঘরের সন্তানেরা আর এই নেশার কারণে স্মৃতিশক্তি লোপ পায় এবং ধীরে ধীরে অগ্রসর হয় মৃত্যুর দিকে।

মাদকের নেশা দ্রুত প্রসারের কারণ

মানুষ নেশা করে থাকে সামাজিক শান্তি লাভের আশায় এবং হতাশা ও দুঃখবোধ দূর করতে । আবার অনেকে মাদকের ব্যবসা বেছে নিয়েছে অনেক দেশে অধিক অর্থ লাভের আশায় । তবে একটি মাফিয়া দল এই মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িয়ে আছে আর এই দল গুলোই সারা বিশ্বে মাদকগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।

পুরো পৃথিবীতে মাদক ছড়ানোর কারণ

আফিম বানানো হয় পপি গাছের ফুল থেকে । খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সাল থেকে আফিম ব্যবহার করা হয় আনন্দময় অনুভূতি তৈরি করতে এবং একই সাথে ব্যাথা কমানোর কাজে । আবার এই আফিম উনি শতকের দিকে  থেকে আলাদা করা হয় মারফিন নামক উপাদানকে আর পরীক্ষাগারে এই মারফিন থেকেই তৈরি করা হয় হিরোইন। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিগুলো ১৯৮০ ও ১৯৯০ এর দশকে মারফিন জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার করেন ব্যাথা নাশক হিসেবে।

আর এর প্রচলন করা হয় নেশা সৃষ্টিকারী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কে লুকিয়ে আর এর ফলস্বরূপ হাজার হাজার মানুষ নেশার কবলে পড়ে। মানুষের মস্তিষ্কে এন্ডোর ফিন নামক রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা মানুষের ব্যথার অনুভূতি জাগায় আর এন্ডোরফিন রেস্পেক্টর গুলোকে বন্ধ করে দেয় এই আফিম জাতীয় মাদক। আর এর সাথে সাথে মানুষের মস্তিষ্কে এন্ড্রেনালিন ও ডোপামিন তৈরিতে সাহায্য করে থাকে।

আর ঠিক এই কারণেই এই মাদকে মানুষের নিজের মধ্যে ভালো লাগা শুরু হয়ে যায়। মানুষের মস্তিষ্কের কোষে সময়ের সাথে সাথে টলারেন্স বাড়ে আফিম জাতীয় পদার্থের যার কারণে মানুষের একই জাতীয় অনুভূতি পেতে ইচ্ছা করে। আর এভাবে মানুষের মাদকের প্রতি আসক্ত বেড়ে যায়।

শিশু ও মাদকাসক্তি

বর্তমানে বাংলাদেশে মাদকের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বড় মানুষের সাথে সাথে ছোট ছোট শিশুদের মধ্যেও । প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে দুইজন মাদক সেবনকারী হল ৭ থেকে ১১ বছর বয়সের শিশু  এক জরিপে দেখা যায় । তবে এরা পরিমাণে মাদক কম ব্যবহার করে যার কারণে এদের মধ্যে মাদক নির্ভরশীলতার পরিমাণ কম থাকে। আর এই বয়সে শিশুদের মাদক সেবনের জন্য দায়ী হলো সামাজিক পরিবেশ সহ নিজ পরিবার।

প্রধানত বস্তি এলাকার শিশুরা মাদকাসক্তের সাথে বেড়ে ওঠে ।মাদক চোরা চালানোর মতো অপরাধ মূলক কাজের সাথে এরা সাথে জড়িয়ে পড়ে এবং সেই সাথে মাদক সেবনের সাথে ও জড়িয়ে পড়ে  । গবেষকরা মনে করেন, শতকরা চল্লিশ ৪০ থেকে ৬০ ভাগ শিশু এপি জেনেটিক্স এবং পরিবেশগত প্রভাবের কারণে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।

বয়সের সাথে নেশার সম্পর্ক

বাংলাদেশে বর্তমানে শতকরা ১০০ জনের মধ্যে বৃদ্ধ এবং শিশুর হার ৩৭ ভাগ এবং কিশোর ও তরুনের  ৬৩ ভাগ। ১৮ বছরের বেশি মাদক সেবী রয়েছে তিন দশমিক তিন ৩.৩ শতাংশ এবং ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে রয়েছে ১.৫ ভাগ। যারা মাদক সেবন করে তারা স্বাভাবিক মানুষের থেকে অনেক আগেই মৃত্যুবরণ করে যার কারণে বার্ধক্যে পৌঁছানোর আগে তাদের পরিণতি হওয়া শেষ হয়ে যায়। আবার শিশুদের মাদক সেবনে স্বাধীনতা থাকে না যার কারণে মাদক সেবনে শিশুদের পরিমাণও কম থাকে। যার কারণে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মাদক গ্রহণের পরিমাণ বেশি দেখা যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মাদক সেবন

বর্তমানে মাদক বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রাখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে পরিচয় ঘটে থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে  যার ফলশ্রুতিতে সহপাঠী বা আশে পাশের মানুষ দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং মাদকাসক্ত হয়ে ওঠে। সম্প্রতি যুক্ত রাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০০ জন কিশোরের উপর একটি পরীক্ষা চালানো হয় আর এতে দেখা যায় যে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে জড়িত তাদের মাদকাসক্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় পাঁচ গুণ।

এর সাথে মদ্যপানের প্রবণতা বেড়ে যায় তিনগুণ। মাদকাসক্ত হওয়ার সাথে সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো মাদকের সাহায্য করে থাকে মাদকের প্রচারণা বাড়ানোর বিভিন্ন কাজের সাথে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কে মাদকাসক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

মাদকের কুফল

মাদকাসক্ত ব্যক্তির জাতীয় ও সমাজ জীবনে ডেকে আনে ভয়াবহ পরিণতি। মাদকে আসক্ত ব্যক্তির ক্ষুধা, তৃষ্ণা, বিবেক, বুদ্ধি লোপ পায়, তাদের অনুভূতি কমে যায়। তাদের মধ্যে হাসি-কানা সকল বিচার বুদ্ধি কমে যায়। মানুষ নানা কারণে মাদক গ্রহণ করে থাকে আর একবার নেশার জগতে প্রবেশ করলে আর তারা বেরিয়ে আসতে পারে না। এই নেশা দিনের পর দিন আরো বাড়তে থাকে। মানুষ যখন নেশা করে তখন তারা ভাবে যে তারা সকল দুঃখ ভুলে যায়। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা এভাবে পরিবার ও সমাজের সুস্থ তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে।

 দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্তির ফলে একসময় মানুষ আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেঁছে নেয় যার কারণে পরিবারের ক্ষতি হয় অপূরণীয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তির মধ্যে ১৬ থেকে ৩০ বছরের মানুষই বেশি পরিলক্ষিত হয়। মাদক গ্রহণের ফলে দেহ ও মনের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে যার কারণে ব্যক্তি আক্রান্ত হয় বিভিন্ন জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে। মাদকাসক্ত দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করে এবং ব্যক্তির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে করে দেয় ধ্বংস।

মাদকাসক্তির প্রতিকার

বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে মাদকাসক্তির হাত থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য। কারণ মাদকাসক্তি এক ভয়াবহ রোগ। আমাদের দেশের তুলনায় পশ্চিমা বিশ্বে এর ভয়াবহতা অনেক বেশি। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি তা হল-

  • সচেতনতা সৃষ্টি করা
  • মাদকের কুফল সম্পর্কে ব্যক্তিকে জানানো
  • মাদকের সহজলভ্যতা দূরীকরণ
  • বিভিন্ন তথ্য প্রচার করা মাদকের অপব্যবহার ও ভয়াবহতা সম্পর্কে 
  • ব্যক্তিগত ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি
  • বেকারত্ব দূরীকরণ
  • পরিবেশ ও মানবিক মূল্যবোধ গঠন
  • ছোটবেলা থেকে শিশুদের মাদকদ্রব্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলা
  • বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অফিস সংস্থা দপ্তর কে ধূমপানমুক্ত এলাকার ঘোষণা করা ও তা কার্যকর করা।

মাদকাসক্তির এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে বাঁচাতে সকলকে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সমাজ থেকে দূর করতে হবে বেকারত্বের অভিশাপ। তরুণদের পড়ালেখার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষের যদি নৈতিক গুনাগুন অর্জিত হয় তাহলে মানুষ নেশার জগত থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যারা মাদক বিক্রি করে তাদের শাস্তি দেওয়া। মাদকাসক্তদের জন্য নিরাময়ের ব্যবস্থা করাও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

মাদকাসক্তি প্রতিরোধ চিন্তা

যুব সমাজকে উদ্ধার করতে হবে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে মাদকের যে ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে তা থেকে। মাদকবিরোধী জনমত গঠন করতে হবে বেতার, টিভি, সংবাদপত্র ইত্যাদি মাধ্যমে । কারণ বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে  এবং সমাজ সেবীরা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন।

সমাজে নেতাদের কর্তব্য

সমাজের নেতাদের মাদকদ্রব্যের ব্যবহার কমাতে এগিয়ে আসতে হবে।মাদকাসক্তি কমানো সম্ভব হতে পারে এমনকি মাদকের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে সমাজের নেতারা যদি অবস্থান নেন তাহলে ।

আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্তব্য

মাদকের বিরুদ্ধে বিশ্বের সকল দেশের এগিয়ে আসা উচিত। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে মাদকের উৎপাদন, বিপণন ও পাচার রোধে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে সকল দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সজাগ থাকতে হবে এবং একযোগে কাজ করতে হবে।

আইন প্রণয়নকারী ও প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা

সরকারের আইন প্রণয়নকারী ও প্রয়োগকারী সংস্থাকে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করতে হবে কারণ একমাত্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পারে সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে এবং অপরাধ প্রবণতা কমাতে। তাই সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে আন্তরিকভাবে এবং মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

বিশ্বজুড়ে মাদকবিরোধী আন্দোলন ও বাংলাদেশ

বাংলাদেশে মাদকবিরোধী আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে বিশ্বের মধ্যে সর্বপ্রথম মাদক বিরোধী আন্দোলন হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৮৭ সালে মাদকবিরোধী আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে বিশ্বের প্রায় ৩২ টি দেশ। মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশ সোচ্চার হয়ে উঠেছে। ইরানে কঠোর শাস্তির বিধান হিসেবে প্রায় ৩১ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ১৯৯০ সাল থেকে মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করছে ঢাকার তেজগাঁয়ে অবস্থিত মাদক চিকিৎসা কেন্দ্র। এছাড়া ও রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রামে স্থাপন করা হয়েছে আরো তিনটি মাদক চিকিৎসা কেন্দ্র।

উপসংহার

যদি সমাজের কোন এক জায়গায় অশান্তি বিরাজ করে তাহলে এই সর্বনাশা নেশা গ্রাস করে পুরো জাতিকে মাদকাসক্তির কারণে। আমাদের তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে হবে মাদকাসক্তির কবল থেকে । আমাদের তরুণ সমাজ আজ মাদকের আসক্তির কারণে  অকাল মৃত্যুর দিকে ছুটে চলেছে। তরুণদের রক্ষা করতে না পারলে সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে না। তাই মাদকের করাল গ্রাস থেকে আমাদের বাঁচাতে হবে সমাজ তথা দেশকে।

  • হেরোইন প্যাথেডিন নেশার আস্তানা
  • তা দুমড়ে মুচড়ে দিতে ধর এ হাতখানা
  • বিশ্বের প্রান্তজুড়ে চলো প্রতিরোধ গড়ে তুলি
  • মরন যদি আসে তবে পেছনে ফিরব না।

4. মানবকল্যাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।

0/20MB-23

ভূমিকা:

বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও বিজ্ঞান মনষ্ক সমাজের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতি হল মানব সভ্যতার অগ্রগতির অন্যতম চালিকাশক্তি। বিজ্ঞানের অগ্রগতির মাধ্যমে আমরা প্রকৃতির রহস্য উদঘাটন করে নতুন নতুন জ্ঞান ও প্রযুক্তি লাভ করেছি। এই জ্ঞান ও আবিষ্কারগুলো আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে, আমাদের সমাজের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। 

বিজ্ঞানমনস্কতার সেকাল ও একাল:-

বিজ্ঞানমনস্কতার ধারণাটি প্রাচীনকাল থেকেই বিদ্যমান। প্রাচীন গ্রীসের দার্শনিকরা বিজ্ঞানের উপর জোর দিয়েছিলেন এবং যুক্তিবাদী চিন্তাধারার বিকাশে অবদান রেখেছিলেন। মধ্যযুগে, ইসলামী বিশ্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি হয়েছিল। তবে, রেনেসাঁর সময় বিজ্ঞানমনস্কতা একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁনছেছিল। এই সময়কালে, বিজ্ঞানীরা প্রাচীন বিশ্বের জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে নতুন আবিষ্কার ও তত্ত্বগুলির বিকাশ করেছিলেন।

আধুনিক যুগে, বিজ্ঞানমনস্কতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে আমাদের জীবনযাত্রার অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। বিজ্ঞান আমাদের স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, পরিবহন, এবং উৎপাদনশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করেছে। বাংলাদেশে বিজ্ঞানমনস্কতার অগ্রগতিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর গবেষণার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি হয়েছে।

বিজ্ঞানমনস্কতা ও জাতীয় উন্নয়ন:

জাতীয় উন্নয়ন বলতে একটি দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নকে বোঝায়। বিজ্ঞানমনস্কতা একটি দেশের জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিজ্ঞানমনস্কতার জাতীয় উন্নয়নে অবদানগুলি নিম্নরূপ:

ক) অর্থনৈতিক উন্নয়ন: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। বিজ্ঞানমনস্কতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে।

খ) সামাজিক উন্নয়ন: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি সামাজিক উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানমনস্কতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে সাহায্য করে।

গ) সাংস্কৃতিক উন্নয়ন: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি সাংস্কৃতিক উন্নয়নে অবদান রাখে। বিজ্ঞানমনস্কতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি থেকে সৃষ্ট নতুন ধারণা ও সম্ভাবনাগুলোকে গ্রহণ করতে সাহায্য করে।

ঘ) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি: বিজ্ঞানমনস্কতা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে। বিজ্ঞানমনস্ক মানুষরা নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করে। ফলে দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নায়ন হয়। 

উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে বিজ্ঞানমনস্কতা একটি দেশের জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ সমাজ।

বিজ্ঞানমনস্ক সমাজের রূপরেখা :

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি, বিজ্ঞানমনস্কতা হল চিন্তা-ভাবনার একটি প্রক্রিয়া যা যুক্তিবাদ, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রমাণের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। বিজ্ঞানমনস্ক মানুষেরা বিশ্বাস করে যে বিজ্ঞান হল বিশ্বকে বোঝার একটি নির্ভরযোগ্য উপায়। তারা প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে এবং অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের প্রতি সংবেদনশীল হয়। 

বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব :

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি বিশ্বকে দ্রুত গতিতে পরিবর্তন করছে। এই অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে, আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। বিজ্ঞান শিক্ষা আমাদেরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মূল ধারণা এবং তত্ত্বগুলি বুঝতে সাহায্য করে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পগুলিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাকরি পেতে হলে, আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। বিজ্ঞান শিক্ষা আমাদেরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করে তোলে এবং বিজ্ঞানের ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে সাহায্য করে। 

বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলার উপায়:

আমরা জানি, বিজ্ঞানমনস্কতা হল একটি চিন্তা-ভাবনার প্রক্রিয়া যা যুক্তিবাদ, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রমাণের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। বিজ্ঞানমনস্কতা আমাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে, জটিল সমস্যা সমাধানে এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতি থেকে সর্বাধিক সুবিধা পেতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলার জন্য নিম্নলিখিত উপায়গুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:

ক) বিজ্ঞান শিক্ষা: বিজ্ঞান শিক্ষা হল বিজ্ঞানমনস্কতার বিকাশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায়। বিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের মূল ধারণা এবং তত্ত্বগুলি বুঝতে পারে।

খ) বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের প্রচার: বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের প্রচার বিজ্ঞানমনস্কতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের মাধ্যমে, মানুষ বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং বিজ্ঞানের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে পারে।

গ) বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের প্রচার: বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের প্রচার বিজ্ঞানমনস্কতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের প্রচার মাধ্যমে, মানুষ বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারে।

ঘ) কুসংস্কার দূরীকরণ: কুসংস্কার বিজ্ঞানমনস্কতার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। কুসংস্কার দূরীকরণের মাধ্যমে, মানুষ বিজ্ঞান ও যুক্তির উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এছাড়াও, প্রাথমিক স্তর থেকেই শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা। বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়গুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত করা এবং বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন  করতে হবে। 

এই পদক্ষেপগুলি গ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গড়ে তুলতে পারি, যেখানে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ সমাজের মূল্যবোধ হবে।

উপসংহার :

বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে বিজ্ঞানমনষ্ক সমাজ একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিজ্ঞানমনষ্ক সমাজ গঠন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানমনষ্ক সমাজের মাধ্যমে বাংলাদেশে দারিদ্র্য দূরীকরণে, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ, প্রযুক্তি বিকাশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করতে পারবে। বাংলাদেশের জনগণের বিজ্ঞানমনস্ক হতে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজ্ঞানের গুরুত্ব বৃদ্ধি করতে হবে এবং গণমাধ্যমে বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়বস্তু প্রচার করতে হবে। বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ বিজ্ঞানের প্রতি মানুষের আস্থা হ্রাস করে। আমরা যদি বিজ্ঞানকে দায়িত্বশীল ভাবে ব্যবহার করি, তবে মানুষ বিজ্ঞানের উপর আরও বেশি আস্থা জ্ঞাপন করবে। বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে তোলার জন্য পরিবার, শিক্ষক, গণমাধ্যম এবং সরকারের সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।

5. বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

0/20MB-23

ভূমিকা: একটি দেশের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও রূপ ফুটে ওঠে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্য দিয়ে। বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি দেশে দেশে বিভিন্ন রূপে প্রতীয়মান হয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করে। আমাদের বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক অপূর্ব লীলানিকেতন, সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা, আমাদের এ দেশ। লীলাময়ী প্রকৃতি এ দেশে যেন মুক্তহস্তে তার সমস্ত সৌন্দর্য বিতরণ করেছে। শাশ্বতকাল ধরে এ অনুপম সৌন্দর্য মানবহৃদয়ে দোলা দেয়। মুগ্ধ কবিচিত্তে জন্ম দেয় সংগীতের উৎসধারা, ভাবুকের হৃদয়ে তোলে ভাবের হিল্লোল। বাংলাদেশের অসাধারণ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে এ দেশে ছুটে আসে সৌন্দর্যপ্রেমী মানুষ। বার্নিয়ের, ইবনে বতুতা, ফ্রেডারিক, আলেকজান্ডার প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ এ দেশের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন।

বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি: টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট এ দেশটি বিশ্বের দরবারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত। এ সৌন্দর্য যেমন দেশের ভূ- প্রাকৃতিক গঠনের দিক থেকে, তেমনি ঋতুবৈচিত্র্যের দিক থেকেও। দেশের দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগরের উত্তাল প্রতিধ্বনি নিয়তই এক অলৌকিক সুরের মায়াজাল সৃষ্টি করে চলেছে। হাজার হাজার মানুষ সেই সুরের মোহে ছুটে যায় সমুদ্রসৈকতে। উত্তরের ধূসর প্রকৃতির উদাসীনতার বাণী পাগলা বাউলের মতো মানুষকে ঘরছাড়া করে। অসংখ্য নদনদী জালের মতো সারা দেশে ছেয়ে রয়েছে। কলকল রবে এসব নদনদী সাগরের পানে ছুটে চলেছে প্রতিনিয়ত। এ দেশের অনুচ্চ পাহাড়, বন-বনানী যেন ঘোমটা মাথায় দিয়ে ধ্যানে বসেছে। আর এটাই আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এ নিয়েই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গঠন। এভাবে আমাদের দেশের ছোটো পরিধিতে প্রকাশ পেয়েছে প্রাকৃতিক রূপের লীলাখেলা।


প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বনাঞ্চল ও পাহাড়: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ বাংলাদেশ। অপূর্ব সৌন্দর্যে বিভূষিত এ দেশের প্রকৃতি। বৈচিত্র্যময় গাঙ্গেয় অববাহিকার সাগরতীরে জেগে ওঠা উর্বর পলিমাটিসমৃদ্ধ এ দেশের মাটিতে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য বনাঞ্চল। বিশ্বজুড়ে পরিচিত এ দেশের সুন্দরবনের নাম, সেখানকার বিশাল বনানীতে সৃষ্টি হয়েছে এক স্বতন্ত্র জীবনধারা। এ বনের বিচিত্র জীবজন্তু মানুষকে যেমন আকৃষ্ট করে, তেমনি মনে ভীতিরও সঞ্চার করে। বিশ্ববিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও চিত্রল হরিণ ছাড়াও সুন্দরবনে রয়েছে অসংখ্য জীবজন্তু। নদনদীতে যেমন রয়েছে নানা প্রজাতির মাছ, তেমনি রয়েছে রাক্ষুসে কুমির। সুন্দরবন ছাড়াও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে আকর্ষণীয় হয়ে রয়েছে ভাওয়াল ও মধুপুরের গড় বনাঞ্চল। পার্বত্য চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, সিলেট, বান্দরবানের বনাঞ্চলের সাথে পাহাড় এবং পাহাড় ঘেঁষে বয়ে যাওয়া নদীগুলো এক অপূর্ব সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। বনাঞ্চল ও পাহাড়ের আঁকাবাঁকা, উঁচু নিচু পথে চলার সময় যে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য চোখে পড়ে তা বিস্মৃত হওয়ার নয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাক্ষেত্র হিসেবে তা সহজেই মানুষের মনকে আকৃষ্ট করতে পারে। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের পাহাড়গুলো এক অফুরন্ত সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। এখনো দুর্গম চিম্বুক আর সাজেক উপত্যকার অপূর্ব সৌন্দর্য দেশবাসীর অজানা। ফয়’স লেক ও রাঙামাটির কাপ্তাই লেক পাহাড়ের বুকে সৃষ্টি করেছে এক অনাবিল সৌন্দর্যের মায়াজাল।

নদনদীর সৌন্দর্য: বাংলাদেশে নদনদীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এ দেশের নাম হয়েছে নদীমাতৃক দেশ। অসংখ্য নদীর জন্য বাংলাদেশের প্রকৃতি সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়ে উঠেছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলী, সুরমা প্রভৃতি নদী জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে। এ দেশের বুকের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এসব নদী মাটিকে উর্বর করে শস্য-শ্যামলা করে তুলেছে, প্রকৃতিকে করেছে বৈচিত্র্যময়। নদীর জলধারার প্রভাবে প্রকৃতিতে সবুজের সমারোহ এসেছে। নদীর বুকে বয়ে চলা নৌকা, লঞ্চ, স্টিমারগুলো এক অপূর্ব সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। বর্ষার সময় এসব নদী দুকূল প্লাবিত করে বয়ে চলে। এসব নদনদী ছাড়াও অসংখ্য খালবিল, হাওড়, দ্বীপ এ দেশের প্রকৃতিকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। হাতিয়া, সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপ ইত্যাদি দ্বীপ এ দেশের প্রকৃতিকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলেছে।

ঋতুবৈচিত্র্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য এক অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য যেন নিহিত রয়েছে এ দেশের ঋতুবৈচিত্র্যের মধ্যে। ছয়টি ঋতু নানা বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে পরিবর্তন ঘটায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রূপের। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে প্রকৃতি অতিষ্ঠ হয়ে এক রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। এ সময়ের কালবৈশাখী ঝড় গাছপালা ভেঙেচুরে প্রকৃতিকে যেন দুমড়েমুচড়ে দিয়ে যায়। এ সময় আম, কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন ফল পাকতে শুরু করে। বর্ষা আসে পরিপূর্ণ রূপ নিয়ে। চারদিকে পানি থইথই করে। সারাদিন ঝর ঝর বৃষ্টি পড়তে থাকে। সূর্যের মুখ দেখা যায় না বললেই চলে। নদীনালার পানি দুকূল ছাপিয়ে যেন পূর্ণ যৌবনার রূপধারণ করে। প্রচুর বৃষ্টিপাতে প্রকৃতি নতুনরূপ ধরে আবির্ভূত হয়। প্রকৃতির বুকে তখন সবুজের সমারোহ ও অপূর্ব শোভার সৃষ্টি হয়। চারদিকে কুহু-কেকার আনন্দধ্বনি জাগে। ফুলে ফুলে সুশোভিত হয়ে ওঠে বর্ষার প্রকৃতি। কেয়া, কদম, জুঁই ইত্যাদি ফুলের সৌরভে চারদিক ম-ম করে। হেমন্তের রূপ ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে দেখা দেয়। শস্যখেতের পাকা ফসলে প্রকৃতি এক অপরূপ সৌন্দর্য লাভ করে। চাষি মাথায় করে পাকা ধান ঘরে আনে। নতুন ধানের চালে উদ্যাপিত হয় নবান্ন উৎসব।

শীত ঋতু আসে তার গৈরিক উত্তরীয় নিয়ে। গাছপালা পাতা ঝরে শুষ্ক, বিবর্ণ ও শ্রীহীন হয়। তখন প্রকৃতি নিরাভরণ রূপ ধারণ করে। শীতের সকালে শিশির বিন্দুর ওপর সূর্যের রশ্মি পড়ে এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। শীতের শূন্যতা কাটিয়ে বিপুল সৌন্দর্য নিয়ে প্রকৃতিতে উপস্থিত হয় ঋতুরাজ বসন্ত। এ সময় গাছে গাছে নতুন পাতা দেখা দেয়। ফুলের সমারোহে কোকিলের গানে প্রকৃতি নতুন রূপে সজ্জিত হয়। এভাবে ছয়টি ঋতু বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তোলে।

উপসংহার: প্রকৃতি ও মানুষের জীবনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মধ্যেই দেশের প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সৌন্দর্যপ্রেমী মানুষকে করেছে ঘরছাড়া। প্রকৃতির বিচিত্র সৌন্দর্য এ দেশের মানুষের মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। এ দেশের যেদিকে দৃষ্টিপাত করা যায়, সেদিকেই দেখা যায় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। তাই কবি মুগ্ধচিত্তে বলেন-

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো, তুমি সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি।

( end of mym 23 )

1. (ক) যে কোনো পাঁচটি বাক্য শুদ্ধ করে লেখ :

(i) মেয়েটি বিদ্বান হলেও ঝগড়াটে।

(ii) অতি লোভে গাজন নষ্ট।

(iii) আমি এ ঘটনা চাক্ষুস প্রত্যক্ষ করেছি।

(iv) সূর্য উদয় হয়েছে।

(v) গাছটি সমূলসহ উৎপাটিত হয়েছে।

(vi) দৈন্যতা প্রশংসনীয় নয়।

(vii) বিধি লঙ্ঘন হয়েছে।

(viii) মাতাহীন শিশুর কী দুঃখ!

অথবা,

(খ) নিচের অনুচ্ছেদের অপপ্রয়োগগুলো শুদ্ধ কর :

এবার স্যার আমাদের ওপর রাগিয়া গেলেন। তিনি বললেন, তোমরা এস,এস, সি, পাশ করিলে কী করে? গিতাঞ্জলী, মুহূর্ত, দন্দ ইত্যাদি বানান পর্যন্ত ভুল কর।”

0/5Din.B-23

ক) 

(i) মেয়েটি বিদ্বান হলেও ঝগড়াটে। (মেয়েটি বিদুষী হলেও ঝগড়াটে।)

(ii) অতি লোভে গাঁজন নষ্ট। (অতি লোভে তাঁতি নষ্ট।)

(ii) আমি এ ঘটনা চাক্ষুস প্রত্যক্ষ করেছি। (আমি এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি।)

(iv) সূর্য উদয় হয়েছে। (সূর্য উদিত হয়েছে।)

(v) গাছটি সমূলসহ উৎপাটিত হয়েছে। (গাছটি সমূলে বা মূলসহ উৎপাটিত হয়েছে।)

(vi) দৈন্যতা প্রশংসনীয় নয়। (দীনতা বা দৈন্য প্রশংসনীয় নয়।)

(vii) বিধি লঙ্ঘন হয়েছে। (বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে।)

(viii) মাতাহীন শিশুর কী দুঃখ! (মাতৃহীন শিশুর কী দুঃখ!)

অথবা,

খ) এবার স্যার আমাদের ওপর রেগে  গেলেন। তিনি বললেন, “তোমরা এস. এস. সি. পাশ করলে কী করে? গীতাঞ্জলি, মুহূর্ত, দ্বন্দ্ব ইত্যাদি।

2. (ক) ভূমিকম্পের ভয়াবহতা নিয়ে দুই বন্ধুর কথোপকথন তুলে ধরো।

অথবা,

(খ) ‘লোভের পরিণাম’ শীর্ষক একটি খুদেগল্প রচনা করো।

0/10Din.B-23

(ক) উত্তরঃ

‘‘ভূমিকম্পের ভয়াবহতা নিয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ’’

মুহিত : রানা, ভূমিকম্পের কবলে কখনো পড়েছিলি?

রানা : হ্যাঁ, পড়েছি।

মুহিত : তখন কী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল?

রানা : আমি একটি ভবনের আট তলায় ছিলাম। দেখলাম, মানুষগুলো হুড়মুড় করে নামছে। কে কার আগে নামবে এ নিয়ে এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল।

মুহিত : কিন্তু এভাবে নামাতো ঠিক নয়। এতে বিপদের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

রানা : ঠিকই বলেছিস। এভাবে নামতে গিয়ে অনেকেই সেদিন মারাত্মক আহত হয়েছিল।

মুহিত : আচ্ছা রানা, ভূমিকম্পের সময় আসলে কী করা উচিত?

রানা : ভূমিকম্প হলে কখনো হুড়মুড় করে নামতে নেই। ধীরে সুস্থে নামা উচিত। বৃদ্ধ, শিশু ও নারীদের সহায়তা করা উচিত। নিচে নামতে না পারলে খাট বা টেবিলের নিচে কিংবা ঘরের পিলার সংলগ্নস্থানে বসে পড়া উচিত। সম্ভব হলে মাথায় বালিশ জাতীয় কিছু দিয়ে ঢাকা উচিত এতে আঘাত কম লাগার সম্ভাবনা থাকে।

মুহিত : পাশে বড়ো কোনো মাঠে জড়ো হলে ভালো হয়।

রানা : হ্যাঁ, খোলা মাঠে জড়ো হলে কোনো ভবন হেলে পড়লে প্রাণহানির ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

(খ) উত্তরঃ

‘লোভের পরিণাম’

লেখাপড়া সমাপ্ত করে আনাস চাকরির জন্য হণ্য হয়ে ঘোরে। অনেক জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়েও তার চাকরি হয় না। হতাশা তাকে মারাত্মকভাবে ঘিরে ধরে। এদিকে পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম হিসেবে তার প্রতি সকলে তাকিয়ে আছে। পরিবারে তার বৃদ্ধ মা-বাবা ও ছোট দুটি বোন রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ বছর আগে তার বাবা পঙ্গু হয়। বাবার চিকিৎসার খরচ যোগাতে যেটুকু জমি-জমা ছিল তা আগেই বিক্রি করতে হয়। ছোট যে দুটি বোন রয়েছে তার মধ্যে একজন দ্বাদশ শ্রেণিতে, অন্যজন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের লেখাপড়ার খরচ যোগানোও এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আনাসের বৃদ্ধা মা বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। সেখান থেকে সামান্য যা আয় হয় তা দিয়ে দুবেলা খাবার জোটে পরিবারের। ঢাকার ফুটপাতে হাঁটার সময় হঠাৎ একদিন আনাসের সাক্ষাত হয় তার গ্রামের মুনির সাহেবের সাথে। তিনি তার দুঃসম্পর্কের মামা হন। মুনির সাহেব একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। আনাস তার এলাকার ছেলে এবং আত্মীয় হিসেবে তার প্রতি সহমর্মিতা জন্ম নেয়। তাছাড়া ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ও সৎ হিসেবে এলাকায় আনাসের সুনাম আছে। সে বিবেচনায় মুনির সাহেব আনাসকে তার অফিসের হিসাব বিভাগে চাকরি দেন। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে চাকরি করে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সে এক্সিকিউটিভ থেকে সহকারি ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি পায়। ভালো বেতন পেয়ে সে তার পরিবারের অভাব দূর করতে সক্ষম হয়। আনাস যেমন সৎ ছিল, তেমনি ছিল সহজ-সরল প্রকৃতির। তাকে কেউ ভালোভাবে বুঝিয়ে কলিজা কেটেও নিতে পারত। ঢাকায় সে যে মেসে থাকত সেখানে মতি নামে একজন তার রুমে থাকত। একদিন মতি আনাসকে বলে, তার সাথে ব্যবসা করলে অল্পদিনে সে লাখপতি হতে পারবে। একথা শুনে আনাস নিজেকে সামলাতে পারে না। একটি মাল্টিপারপাস কোম্পানিতে মতির মাধ্যমে আনাস বেতনের অর্ধেক টাকা জমা করে দিতে থাকে। প্রথম দু’মাস এক হাজার টাকা করে লাভ দেয় মতি। সে আনাসকে বলে প্রতিমাসে যদি এক লাখ টাকা একসাথে জমা করে, তবে দুইমাস পর তার ডাবল ফেরত দেওয়া হবে। আনাস তার বৃদ্ধা মায়ের সকল সোনা-গহনা বিক্রি করে এবং গ্রামের আরো লোকের কাছ থেকে টাকা ধার করে পাঁচ লক্ষ টাকা তুলে দেয় “মতির হাতে। দুইমাস পরে পাঁচ লাখে দ্বিগুণ হিসেবে দশলাখ টাকা পাওয়ার আশায় সে চাকরি ছেড়ে দেয়। সে পরিকল্পনা করে দশ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা করে সে দ্রুত ধনী হয়ে উঠবে। এদিকে মতিকে গত চার পাঁচ দিন যাবৎ মেসের কেউ খুঁজে পায় না। আনাস তার মাল্টিপারপাস অফিসে গিয়ে দেখে সেখানে গেটে তালা ঝুলানো এবং কোনো সাইনবোর্ডও নেই। আনাসের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, সে প্রতারিত হয়েছে। তিন মাস পর গ্রামের লোকেরা আনাসের কাছ থেকে টাকা না পেয়ে থানায় মামলা করে। পুলিশ আনাসকে ধরে নিয়ে হাজতে দেয়। অর্থের অভাবে ছোট দুবোনের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। হাজতে থাকা অবস্থায় আনাসের বৃদ্ধ মা-বাবা মারা যায়। অতি লোভে পড়ে তার জীবনে নেমে আসে করুণ পরিণতি।

3. (ক) তোমার বোনের বিয়েতে আমন্ত্রণ জানিয়ে বন্ধুকে একটি বৈদ্যুতিন চিঠি লেখো।

অথবা,

(খ) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘সহকারী শিক্ষক’ পদে নিয়োগ লাভের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট একটি আবেদনপত্র লেখো।

0/10Din.B-23

(ক) উত্তরঃ

New Message

To: shadat125@gmail.com

Subject: বোনের বিয়েতে নিমন্ত্রণ প্রসঙ্গে।

Text:

প্রিয় শাদাত,

কেমন আছ? অনেক দিন হলো তোমার খবর জানি না। আমি ভালো আছি। তুমি জেনে আনন্দিত হবে যে, আমার বোন নীলার আগামী ৮ নভেম্বর ২০২৪, রোজ শুক্রবার শুভবিবাহ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তুমি আরও খুশি হবে যে, পাত্র কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। তোমার মতো পাত্রও জার্মানির মিউনিখে বসবাস করে। বিয়ের সব আয়োজন আমাকেই করতে হচ্ছে। তুমি অবশ্যই আসবে। তুমি এলে খুব মজা হবে। ভালো থেকো, সুস্থ থেকো।

পারভেজ।

(ক) উত্তরঃ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদনপত্রঃ

২৮. ০৮. ২০২২

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার,

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কুমিল্লা, বাংলাদেশ।

বিষয়: সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন।

জনাব, সবিনয় নিবেদন এই যে, গত ২৬ আগস্ট, ২০২৩ দৈনিক ‘ক’ পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম যে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের শূন্যপদে নিয়োগের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছে। আমি উক্ত পদে অন্য একজন প্রার্থী হিসেবে সদয় বিবেচনার জন্য আমার যোগ্যতা সম্পর্কিত তথ্যাবলি আপনার সমীপে পেশ করছি।

১. নাম : মো. রেজাউল করিম শাহীন

২. পিতার নাম : মো. আব্দুল কাদের ফরাজী

8. স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- জোরবাড়ীয়া, ডাকঘর- ফুলবাড়ীয়া, থানা- ফুলবাড়ীয়া, জেলা- ময়মনসিংহ।

৫. বর্তমান ঠিকানা : বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা-১২১৯।

৬. জন্ম তারিখ (এস.এস.সি সনদ অনুযায়ী): ১০. ০২. ১৯৮৮।

৭. ধর্ম : ইসলাম।

৮. জাতীয়তা : বাংলাদেশি।

৯. শিক্ষাগত যোগ্যতা :

পরীক্ষার নামপ্রাপ্ত বিভাগ/ গ্রেডপাসের সনবোর্ড/বিশ্বদ্যিালয়
এস.এস.সিA+২০১২ঢাকা বোর্ড
এইচ.এস.সিA২০১৪ঢাকা বোর্ড
বি. কমB২০১৭জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

১৩. অভিজ্ঞতা : গত ০৬. ০৪. ২০১২ তারিখ হতে লেকচার পাবলিকেশন্স লি.-এর বাংলা বিভাগে কর্মরত আছি এবং বর্তমানে উপব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করছি।

অতএব,

মহোদয়ের নিকট প্রার্থনা, উল্লিখিত তথ্যাবলির ভিত্তিতে ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে আমার মেধা ও দক্ষতা যাচাইপূর্বক উক্ত পদে নিয়োগ প্রদান করলে আমার কর্মদক্ষতার দ্বারা আপনার সন্তুষ্টি বিধানে সচেষ্ট থাকব।

নিবেদক-

মো. রেজাউল করিম।

সংযুক্তি :

১. শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদপত্রের সত্যায়িত অনুলিপি।

২. নাগরিকত্বের সনদপত্র।

৩. চারিত্রিক সনদপত্র।

৪. সদ্য তোলা ৪ কপি পাসপোর্ট আকারের সত্যায়িত ছবি।

৫. অভিজ্ঞতার সনদপত্র।

৬. শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সত্যায়িত সনদপত্র।

৭. ৩০০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক ড্রাফট।

[বি. দ্র. পত্রের শেষে ডাকটিকেট সংবলিত খাম, ঠিকানা ব্যবহার অপরিহার্য।]

4. ক) বাক্য কাকে বলে? গঠন অনুসারে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ উদাহরণসহ আলোচনা করঃ

অথবা,

(খ) বন্ধনীর নির্দেশ অনুসারে যে কোনো পাঁচটির বাক্যান্তর কর :

(i) পুলিশের লোক জানিবে কী করিয়া? (নেতিবাচক)

(ii) ভুল সকলেই করে। (প্রশ্নবাচক)

(iii) বিপদে ধৈর্য ধরা উচিত। (অনুজ্ঞাসূচক)

(iv) দশ মিনিট পর ট্রেন এলো। (যৌগিক)

(v) চুপ করো। (নির্দেশাত্মক)

(vi) মেঘ হলে বৃষ্টি হবে। (জটিল)

(vii) এটি ভারি লজ্জার কথা। (বিস্ময়সূচক)

(viii) যাদের বুদ্ধি নেই, তারাই একথা বিশ্বাস করবে। (সরল)

0/4Din.B-23

ক.) 

পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক পদ বা শব্দের সমন্বয়ে যখন বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ পায় তখন তাকে বাক্য বলে। যেমন— ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীন দেশে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত। উপরের উভয় পদসমষ্টিই মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করছে। সুতরাং এদের প্রত্যেকটি এক-একটি বাক্য।

ক. সরল বাক্য, খ. জটিল বাক্য, গ. যৌগিক বাক্য।

ক. সরল বাক্য: যে বাক্যে একটি মাত্র কর্তা (উদ্দেশ্য) এবং একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া (বিধেয়) থাকে, তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন— ছেলেটি দৌড়াচ্ছে। এখানে ‘ছেলেটি’ উদ্দেশ্য এবং ‘দৌড়াচ্ছে’ বিধেয়।

খ. জটিল বাক্য: যে বাক্যে একটি প্রধান খণ্ডবাক্যের সঙ্গে এক বা একাধিক আশ্রিত বাক্য পরস্পর সাপেক্ষভাবে যুক্ত হয়, তাকে মিশ্র বা জটিল বাক্য বলে।

আশ্রিত বাক্য

যে পরিশ্রম করে

প্রধান খণ্ডবাক্য

সেই সুখ লাভ করে।

গ. যৌগিক বাক্য: পরস্পর নিরপেক্ষ দুই বা ততোধিক সরল বা জটিল বাক্য সংযোজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত হয়ে একটি সম্পূর্ণ বাক্য গঠন করলে, তাকে যৌগিক বাক্য বলে। যেমন— কঠোর পরিশ্রম করব, তবুও ভিক্ষা করবো না।

অথবা,

(খ)

(i) (নেতিবাচক) পুলিশের লোক জানিবে না।

(ii) (প্রশ্নবাচক) ভুল কে না করে?

(iii) (অনুজ্ঞাসূচক) বিপদে ধৈর্য ধরো।
 (iv)  (যৌগিক) দশ মিনিট অতিক্রান্ত হলো, তারপর ট্রেন এলো।

(iv) (নির্দেশাত্মক) কথা বলিও না।

(v)  (জটিল) যদি মেঘ হয়, তাহলে বৃষ্টি হবে।

(vi) (বিস্ময়সূচক) কী লজ্জার কথা!

(viii) (সরল) বুদ্ধিহীনেরাই বা নির্বোধরাই একথা বিশ্বাস করবে।

5. (ক) যে কোনো দশটি শব্দের পারিভাষিক রূপ লেখ :

Key-word, Academy, Galaxy, Index, Bail, Manuscript, Dialect, Newspaper, Jail, Oath, Fundamental, Headline, Equality, Leaflet, Controller.

অথবা,

(খ) নিচের অনুচ্ছেদটি বাংলায় অনুবাদ কর :

The present world we live in is a global village. The countries of the world are now like the homes of a village. The countries are like the next door neighbour to one another. We can immediately know what happens in other countries. And we can also share their joys and sorrows with them.

0/5Din.B-23

ক.) পারিভাষিক রূপ: মূল-শব্দ, শিক্ষায়তন, ছায়াপথ, সূচক/নির্ঘণ্ট, জামিন, পাণ্ডুলিপি, উপভাষা, সংবাদপত্র, কারাগার/জেলখানা, শপথ, মৌল, শিরোনাম, সমতা, প্রচারপত্র, নিয়ন্ত্রক।

অথবা,

খ.) বর্তমান বিশ্বে আমরা বাস করছি একটি বিশ্ব গ্রাম। পৃথিবীর দেশগুলো এখন গ্রামের বাড়ির মতো। দেশগুলো পরস্পরের প্রতিবেশীর মতো। আমরা অবিলম্বে জানতে পারি অন্যান্য দেশে কি হয়। এবং আমরাও তাদের সাথে তাদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করতে পারি।

6. (ক) বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।

অথবা,

(খ) বানান শুদ্ধ করে লেখ (যে কোনো পাঁচটি) :

বিদ্যান, পিপিলিকা, বাল্মিকি, শান্ত্বনা, ষ্টেশন, পরাণ, সর্বশান্ত, ধংস ।

0/5Din.B-23

ক. বাংলা একাডেমি প্রনীত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ দেওয়া হলো-

(১) তৎসম শব্দে রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন – অর্জন, কর্ম, কার্য, সূর্য ।

(২) সকল অ-তৎসম শব্দে (তদ্ভব, দেশি, বিদেশি) ই, উ -কার হবে । যেমন- আসামি, দাদি, মাস্টারি, হিজরি, ধুলো, সুয্যি।

(৩) এগারো থেকে আঠারো পর্যন্ত সংখ্যাবাচক শব্দে ওকার বসে। যেমন- এগারো, বারো, তেরো, পানেরো, ষোলো, সতেরো, আঠারো ।

(৪) তৎসম শব্দে ট,ঠ,ড,ন,ঢ-এর পূর্বে যুক্তনাসিকার্বন ন হয়। যেমন – কণ্টক, প্রচন্ড, লন্ঠন ।

(৫) বিদেশি শব্দে শ/স বসে। যেমন – শয়তান, পুলিশ, স্টল, স্টেশন।

অথবা,

খ) শুদ্ধ বানান: বিদ্বান, পিপীলিকা, বাল্মীকি, সান্ত্বনা, স্টেশন, পরান, সর্বস্বান্ত, ধ্বংস।

7. (ক) সারাংশ লেখোঃ

আজকের দুনিয়াটা আশ্চর্যভাবে অর্থের বা বিত্তের ওপর নির্ভরশীল। লাভ ও লোভের দুর্নিবার গতি কেবল আগে যাবার নেশায় লক্ষ্যহীন প্রচণ্ড বেগে শুধুই আত্মবিনাশের পথে এগিয়ে চলেছে; মানুষ যদি এই মূঢ়তাকে জয় না করতে পারে, তবে মনুষ্যত্ব কথাটাই হয়তো লোপ পেয়ে যাবে। মানুষের জীবন আজ এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, সেখান থেকে আর হয়তো নামবার উপায় নেই; এবার উঠবার সিঁড়িটা না খুঁজলেই নয়।

অথবা,

(খ) ভাবসম্প্রসারণ করো: গতি যার নীচ সহ, নীচ সে দুর্মতি।

0/10Din.B-23

(ক) উত্তরঃ

সারাংশ: বর্তমান পৃথিবীতে মানুষ নেশাগ্রস্তের মতো ধন সম্পদের পেছনে ধাবমান। অর্থের এ অন্ধ নেশা মানুষের আত্মবিনাশের পথকেই প্রশস্ত করছে। অথচ এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এখনই এ নেশা পরিত্যাগ করা প্রয়োজন।

(খ) উত্তরঃ

মূলভাব: মানুষ যখন নিজের স্বার্থকে বড়ো করে দেখে তখন তার মধ্যকার মানবিকতা লোপ পায় এবং সে নিজ শ্রেণির শত্রুতে পরিণত হয়।

সম্প্রসারিত ভাব: মানুষ সামাজিক জীব। পরস্পর নানা প্রয়োজনে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। কখনো কখনো এই নির্ভরতা ও যোগাযোগের ভেতর দিয়ে মানুষ আরও বেশি মানবিক হয়ে ওঠে। আবার কখনো কখনো হীন স্বার্থবাদী স্বধর্মচ্যুত অমানবিক মানুষে পরিণত হয়। আলোচ্য উক্তিতে মূলত এই চিরন্তন সত্য উপস্থাপন করা হয়েছে। কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে মানুষ যখন নিজ ধর্ম-জাতিরর বিরুদ্ধে যায় তখন সে নিকৃষ্ট মানুষে পরিণত হয়। সে অধম-অমানবিক। সমাজের গভীর সত্যকে এই উক্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। সঙ্গদোষে যেমন লোহা ভাসে ঠিক তেমনি খারাপ মানুষ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভালো মানুষও খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এর বিপরীতও সমাজে দেখা যায়। সুগন্ধিযুক্ত ফুল যেমন কিছুকাল কাদায় ফেলে রাখলে কাদার মধ্যে কিছুটা হলেও সুবাস পাওয়া যাবে তেমনি সৎ, মানুষের সান্নিধ্যে এলে অসৎ মানুষের মাঝেও সৎ চিন্তার উদ্রেক হয়। সৎ সঙ্গ পেলে যেমন স্বর্গবাসের অনুভূতি হয় তেমনি অসৎ মানুষের সঙ্গে থাকলে সর্বনাশ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যে মানুষ নীচ স্বভাবের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, নিঃসন্দেহে তার আচরণও নীচ হবে।

মন্তব্য: আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করতে স্বজাতি-ধর্মের বিরুদ্ধে যেতে প্ররোচিত করে এমন মানুষকে বন্ধু করা উচিত নয়। নীচ বা অসৎ ব্যক্তিদের সঙ্গ ছেড়ে সৎ ও মহৎ মানুষদের সঙ্গী হতে হবে।

8. (ক) বাংলা নববর্ষ কীভাবে উদ্যাপন করেছ তার ওপর একটি দিনলিপি রচনা করো।

অথবা,

(খ) ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি’ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করো।

0/10Din.B-23

(ক) উত্তরঃ

১৪ এপ্রিল ২০২৪

রবিবার

রাত ১১টা ৪৫ মিনিট

ঝিনাইদহ।

এবার বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে এসেছি গ্রামে। ঠিক গ্রাম নয়, ছোট শহর বলা যায়। সঙ্গে এসেছেন আব্বা, আম্মা, ভাই-বোন, মামা সবাই। ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফুরফুরে বাতাসে কিছুক্ষণ সবুজ প্রকৃতিতে মিশে গেলাম। তারপর পুকুরে গোসল সেরে নতুন পাঞ্জাবি পায়জামা পরে বেরিয়ে পড়লাম। এখানকার স্কুল মাঠের পাশে বিশাল বটগাছের নিচে উদীচীর বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। সবুজ ঘাসের উপর বসে কখনো নবীনদের সম্মিলিত কন্ঠে, কখনো একক কণ্ঠে গান শুনে ভালো লাগল। তিন রাস্তার মোড়ে গেরুয়া পোশাক পরা বাউলরা মন মাতানো গান গাইছেন, শুনলাম কিছুক্ষণ। এর মধ্যেই চাচাত ভাই টেনে নিয়ে চলল নদীর পাড়ে। নৌকাবাইচ হবে। দশ বারোটা নৌকা চমৎকারভাবে সাজানো, ঢোল খঞ্জনি বাজিয়ে গান হচ্ছে। স্থানীয় এমপি সাহেব এসে গেছেন। শুরু হলো বাইচ। নৌকার দু’দিকে বসা রঙিন পোশাক পরা লোকেরা বৈঠা ফেলছে একতালে আর তর তর করে নৌকার ছুটে চলছে। কারা জিতল জানা হলো না, আলোচনা সভায় যোগ দিলাম। আলোচকরা খুব চমৎকার বললেন। নতুন কিছু বিষয় জানলাম। লাঞ্চ প্যাকেট দেওয়া হলো, খেয়ে নিলাম। তারপর ভাই বোনেরা মিলে আব্বা আম্মার সাথে ছুটলাম মেলায়। হাটের মাঠে মেলা। অনেক লোকের সমাগম, হরেক রকম দোকান, নানা রকম আওয়াজ। এর মধ্যে ঘুরে ঘুরে দরদাম করে নানা জিনিস কিনতে এবং দেখতে খুব ভালো লাগছিল। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। সুতারাং সারাদিনের মিষ্টি আনন্দ নিয়ে এবার বাড়ি ফেরা।

(খ) উত্তরঃ

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: জনজীবন বিপর্যস্ত’

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ঢাকা ॥ ২৭ মে ২০২৪।

সম্প্রতি যে বিষয়টি আমাদের ভাবিত করছে তা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। বর্তমানে আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে দৈনন্দিন জীবনে নেমে এসেছে অপ্রত্যাশিত দুর্ভোগ। এর নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান করছেন অর্থনীতিবিদগণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ অনেকগুলো। প্রথমত, মুনাফালোভী মজুতদাররা প্রায়ই অধিক মুনাফা অর্জনের মানসিকতায় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, বহির্বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যের সংকটের ফলে দেশের বাজারে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায়। তৃতীয়ত, সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা বৃদ্ধি। দেশের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ এরূপ ভাতা পেলেও অসুবিধার দায়ভার বহন করছে সমাজের বৃহত্তম অংশ। এমনকি চাকরিজীবীদের মধ্যেও কেউ কেউ এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। লক্ষণীয় ব্যাপার এই যে, সরকার কর্তৃক মহার্ঘভাতা ঘোষণার পরক্ষণেই অজ্ঞাত কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকে।

9. ক) উপসর্গ কাকে বলে? উপসর্গের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।

অথবা,

(খ) ব্যাসবাক্যসহ সমাস নির্ণয় কর (যে কোনো পাঁচটি) :

মায়েঝিয়ে, গুরুভক্তি, জাদুকর, হাতাহাতি, খেয়াঘাট, কুসুমকোমল, ত্রিভুবন,

দেশান্তর।

0/5Din.B-23

ক.) উপসর্গ-

কিছু অব্যয়সূচক শব্দাংশ রয়েছে যারা স্বাধীন পদ হিসেবে বাক্য ব্যবহৃত হতে পারে না; বরং শব্দের পূর্বে বসে নতুন অর্থবোধক শব্দ গঠন করতে পারে তাদের উপসর্গ বলা হয়। 

উপসর্গের প্রয়োজনীয়তাঃ

১. উপসর্গ বাক্যে অর্থদ্যোতনায়, অনুঘটকে মতো  কাজ করে।

২. উপসর্গ শব্দে যুক্ত হয়ে শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটিয়ে বক্তব্য ওজস্বী করে। যেমন-

অপ+কর্ম = অপকর্ম (নেতিবাচক অর্থে)

অপ+ রূপ= অপরূপ (ইতিবাচক অর্থে)

৩. শব্দকে প্রাঞ্জল ও সুনির্দিষ্ট অবয়বে উপস্থান করে। যেমন সু + অল্প =স্বল্প (এখানে ‘সু’ উপসর্গ, অল্প ‘শব্দটিকে আরও প্রাঞ্জল ও বৈশিষ্ট্যময় করেছে।)

অথবা,

(খ) মায়ে ও ঝিয়ে (দ্বন্দ্ব); গুরুকে ভক্তি (চতুর্থী তৎপুরুষ); জাদু করে যে (উপপদ তৎপুরুষ); হাতে হাতে যে লড়াই (ব্যতিহার বহুব্রীহি); খেয়ার ঘাট (৬ ষ্ঠী তৎপুরুষ); কুসুমের ন্যায় কোমল (উপমান কর্মধারয়); ত্রি(তিন) ভুবনের সমাহার (দ্বিগু); অন্যদেশ (নিত্য)।

10. ক) ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ উদাহরণসহ আলোচনা কর ।

অথবা,

(খ) নিম্নরেখ যে কোনো পাঁচটি শব্দের ব্যাকরণিক শ্রেণি নির্দেশ কর :

(i) এ মাসে নয়, আগামী মাসে তুমি যাবে।

(ii) বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি।

(iii) বাহ্! কী সুন্দর দৃশ্য।

(iv) হঠাৎ গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হলো।

(v) সুখ কে না চায়?

(vi) লাল রঙের ফুলে ছেয়ে গেছে বাগান ।

(vii) নজরুল তো আর দুজন হয় না।

(viii) সোনার তরী বিখ্যাত গ্রন্থ।

0/5Din.B-23

(ক) যে শব্দ বাক্যের ক্রিয়াকে বিশেষিত করে তাকে ক্রিয়াবিশেষণ বলে। ক্রিয়া- বিশেষণ ক্রিয়া সংঘটনের ভাব, কাল বা রূপ নির্দেশ করে। এটি ক্রিয়ার গুণ, প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও অর্থ—প্রকাশক শব্দ হিসেবে কাজ করে এবং ক্রিয়া সময়, স্থান, প্রকার, উৎস, তীব্রতা, উপকরণ ইত্যাদি প্রকৃতিগত অবস্থার অর্থগত ধারণা দেয়। যেমন: সে দ্রুত দৌড়াতে পারে। ধীরে ধীরে বায়ু বয়। ক্রিয়াবিশেষণের অর্থ ও অন্বয়গত শ্রেণিবিভাগ

১. ভাবজ্ঞাপক ক্রিয়াবিশেষণ: কোনো ক্রিয়া কীভাবে বা কেমনভাবে সংঘটিত হল তা বোঝায়। এগুলোর বেশির ভাগ গঠিত হয় ‘ভাবে’ বা ‘রূপে’ শব্দ যোগে। যেমন: সে দ্রুত দৌড়াতে পারে। কাজটা ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

২. সময় বা কালজ্ঞাপক ক্রিয়াবিশেষণ: এ জাতীয় ক্রিয়াবিশেষণ একশাব্দিক হলে প্রায়শই বিভক্তিহীন বা শূন্যবিভক্তিযুক্ত হয় অথবা এ/−য়/–তে যুক্ত হয়। যেমন— আজ যখন সে আসবে তখন তাকে থাকতে বলো। সেদিন তোমাকে পাই নি। অনেক ক্ষণ ধরে তার জন্যে বসে আছি।

৩. স্থানজ্ঞাপক ক্রিয়াবিশেষণ: এ জাতীয় ক্রিয়াবিশেষণ একশাব্দিক হলে এগুলোর শেষে প্রায়শই স্থানবাচক অধিকরণ—বিভক্তি/এ/—/—তে যুক্ত হয়। যেমন: আমার সামনে দাঁড়াও। এখানে বস। বড় আপা চট্টগ্রামে থাকেন।

৪. সংযোজক ক্রিয়াবিশেষণ: এ জাতীয় ক্রিয়াবিশেষণ দুটি বাক্যকে সংযোগ করে। জটিল বাক্যেও (যদি…. তাহলে, যিনি …. তিনি) ক্রিয়াবিশেষণের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন: কাজে তার মন নেই, তাছাড়া সে কাজ পারেও না।

৫. না-বাচক ক্রিয়াবিশেষণ: এ ধরনের ক্রিয়াবিশেষণ বাক্যকে না-বাচক বৈশিষ্ট্য দেয়। যেমন— তিনি গতকাল ঢাকায় যান নি। আমটা মিষ্টি নয়। ছেলেটা দুষ্টু নয়।

অথবা,

(খ)  নিম্নরেখ যে কোনো পাঁচটি শব্দের ব্যাকরণিক শ্রেণি নির্দেশ কর :

(i) এ মাসে নয়, আগামী মাসে তুমি যাবে। (যোজক)

(ii) বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি । (বিশেষ্য)

(iii) বাহ্! কী সুন্দর দৃশ্য। (আবেগ)

(iv) হঠাৎ গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হলো। (বিশেষণ)

(v) সুখ কে না চায়? (বিশেষ্য)

(vi) লাল রঙের ফুলে ছেয়ে গেছে বাগান। (বিশেষণ) 

(vii) নজরুল তো আর দুজন হয় না। (সর্বনাম)

(viii)সোনার তরী বিখ্যাত গ্রন্থ। (বিশেষ্য)

11. (ক) ‘ম-ফলা’ উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।

অথবা,

(খ) শুদ্ধ উচ্চারণ লেখ (যে কোনো পাঁচটি) : চর্যাপদ, চিহ্ন, সহস্র, ব্রাহ্মণ, প্রতিজ্ঞা, নবজাত, আহ্বান, ইতঃপূর্বে।

0/5Din.B-23

(ক)

ম-ফলা উচ্চারণের ৫টি নিয়ম উদাহরণসহ লেখা হলোঃ

ক. শব্দের প্রথম ম-ফলা থাকলে’ম’ উচ্চারিত হয় না । যেমন— স্মরণ—শঁরোন্, শ্মশান—শঁশান্ ।

খ. শব্দের মধ্যে ম-ফলা থাকলে যে বর্ণের সঙ্গে থাকে সেটি দ্বিত্ব উচ্চারিত হয় । যেমন— পদ্ম–পদদোঁ, রশ্মি — রোশি ।

গ. শব্দের শেষে ম-ফলা উচ্চারিত হয় । যেমন— বাগ্মী—বামি, যুগ্ম-যুগমো

ঘ. শব্দের মধ্যে ও শেষে যুক্তবর্ণের সঙ্গে ম-ফলা যুক্ত হলে ম-ফলা উচ্চারিত হয় । যেমন— লক্ষ্মণ—লখোন, সূক্ষ্ম—শুকখোঁ ।

ঙ. সংস্কৃত কিছু শব্দে ম-ফলা উচ্চারিত হয় । যেমন— কুষ্মাণ্ড—কুশ্মাণ্ডো, সুস্মিতা—শুসমিতা ।

অথবা,

খ) শুদ্ধ উচ্চারণ: চোরজাপদ, চিন্ হো,  শহোসম্রো, ব্রামহোন্ , প্রোতিগ্‌গা, নবোজাতো, আওভান, ইতোপপুরবে।

প্রবন্ধ রচনা (5)

1. মানবকল্যাণে বিজ্ঞান।

0/20Din.B-23

ভূমিকা : মানুষ একসময় গুহায় বাস করত। কিন্তু এখন মানুষ বিজ্ঞানের আশীর্বাদে আধুনিক জীবনে পদার্পণ করেছে বসবাস করছে আকাশচুম্বী অট্টালিকায় । বিজ্ঞানের আশীর্বাদে পৃথিবী আজ মানুষের হাতের মুঠোয় । বিজ্ঞানের অবদানে পথিবী আজ আলাে ঝলমলে; মানবজীবন সুখী-সমৃদ্ধ, আরাম-আয়েশপূর্ণ ও নিরাপদ। মানবজীবনের কথা চিন্তা করে আদিমকালে গােপনে বিজ্ঞানচর্চা শুরু হয়েছিল। বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ আজ আকাশে বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে । দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের বিশেষ অবদান রয়েছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে জাতীয় জীবনের উন্নতি ও অগ্রগতিও ত্বরান্বিত হচ্ছে । বিজ্ঞানের অবদানে মানুষের বিজয়ের কথা প্রকাশ পেয়েছে কবির কবিতা —

কে আজ পৃথ্বিরাজ জলে, স্থলে, ব্যোমে
কার রাজ্য পাট। 

বিজ্ঞানের সৃষ্টি : প্রকৃতির অন্ধ শক্তির ওপর জয়ী হওয়ার প্রয়ােজনেই একদিন সৃষ্টি হয়েছিল বিজ্ঞানের । পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীবৃন্দ মানুষের কল্যাণের জন্য ডুব দিয়েছিলেন প্রকৃতির অতলান্ত রহস্য সাগরে । সেই রহস্যাবরণ উন্মােচন করে মানুষের প্রতিভা আবিষ্কার করেছে প্রকৃতির কত গােপন সম্পদ ও শক্তি । জলে-স্থলে-আকাশে মানুষের আজ অপ্রতিহত গতি । বর্বর জীবনকে পশ্চাতে ধাওয়া করে বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ আজ সভ্যতার আলােকে উদ্ভাসিত ও সম্পদশালী । মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাধারা, জীবনের স্বপ্ন ও কল্পনার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে বিজ্ঞান। 


বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা : আদিমযুগে নিতান্ত প্রয়ােজনের তাগিদে মানুষের অবচেতনে মনে বিজ্ঞানের সূত্রপাত ঘটেছিল । তখন থেকেই মানুষ মানবকল্যাণের লক্ষ্যে বিজ্ঞানের নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকে এবং সফল হয়। সেই থেকে বিজ্ঞানই মানুষের পরম বন্ধু হয়ে ওঠে । বিজ্ঞান সম্পর্কে মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন—
Science is reality
Science is bonafide
Science is your constant friend
Science is always creative.

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান : বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি মুহূর্তও ভাবা যায় না। আধুনিক জীবন বলতে আমরা বুঝি যে জীবন চিন্তা-চেতনায় প্রগতিশীল, নিজের জীবন সম্পর্কে সচেতন এবং নতুনকে গ্রহণ করতে বদ্ধপিরকর। তাইতো অন্ধকার গুহার পরিবর্তে আলােকপিয়াসী হয়ে মানুষ বেছে নিয়েছে সুদৃশ্য নিকেতন । বিজ্ঞানের অবদান এ পরিবর্তে  প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করা বা মাইক্রো ওভেনে রান্না করা খাদ্য খাচ্ছে লজ্জা নিবারণে তাের করেছে শাশ-পানি ব্যান্ডের পছন্দের পােশাক। মােটকথা বিজ্ঞানের স্পর্শে আজ আমাদের জীবন হয়েছে সহজ ও সুন্দর। বিজ্ঞানের যাত্রা অরর প্রথম ধাপেই। দেখা যায় বিদ্যুতের বিস্ময়কর অবদান। তারপর এসেছে টেলিফোন, মুঠোফোন, টেলিভিশন, জেনারেটর, কাতল, প্যাপটপ, ক্যামেরা, লিফট ইত্যাদি। আর এভাবেই অতীতের গ্লানি চিহ্ন মুছে বিজ্ঞানের ছোঁয়ায় আজ আমরা আধুনিক । 

কায়িক শ্রম লাঘবে বিজ্ঞান : মানবকল্যাণের কথা চিন্তা করেই প্রাচীন যুগে বিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আধুনিক বিশ্বে মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের অবদান রয়েছে। কায়িক শ্রম লাঘবেও বিজ্ঞানের অবদান অনস্বাকায়। একসময় অল্প কিছু। উৎপাদন করতে মানুষকে অনেক পরিশ্রম করতে হতাে। কিন্তু বিজ্ঞানের বদৌলতে শিল্প-বিপ্লবের ফলে কল-কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এতে উৎপাদন বেড়েছে আর লাঘব হয়েছে কায়িক শ্রম। 

কৃষিকাজে বিজ্ঞান : আদিম মানুষের জীবিকা উপার্জনের একমাত্র পথ ছিল কৃষি । আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই কৃষি কাজের সাথে জড়িত । কৃষিকাজের উন্নয়নের জন্যও বিজ্ঞান বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। দীর্ঘ সময়। ও অনেক পরিশ্রম করে সনাতন পদ্ধতিতে লাঙল-জোয়াল-গােরু দিয়ে হালচাষের পরিবর্তে দ্রুত চাষ করার জন্য বিজ্ঞান ট্রাক্টর। আবিষ্কার করেছে । বেশি ফসল উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক সার ও অধিক ফলনশীল বীজ, ফসলের ক্ষতিকারক পােকা ধ্বংসের জন্য কীটনাশক আবিষ্কার বিজ্ঞানের অবদান। তাছাড়া জমিতে সেচ প্রদান, ফসল রােপণ, কর্তন, মাড়াইসহ বেশাকছু কাজের জন্য যন্ত্র। আবিষ্কার করেছে বিজ্ঞান । 

উন্নত চিকিৎসায় বিজ্ঞান : চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান সবচেয়ে বেশি। বিজ্ঞানের কল্যাণে রাতারাতি আধুনিক চিকিৎসা উন্নতির শিখরে পৌছে গেছে। বিজ্ঞানের কল্যাণেই আধুনিক মানুষ রােগহীন সুস্থ জীবনযাপন করছে, ছােটো-বড়াে নানা প্রকার। রােগের হাত থেকে সহজেই মুক্তি পাচ্ছে। রােগাক্রান্ত হওয়ার আগেই মানুষ প্রতিরােধের ব্যবস্থা করছে । যক্ষ্মা, হাট, কিডনি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, শিরা, যকৃৎ, ধমনি, পাকস্থলীতে আক্রান্ত রােগও বিজ্ঞানের কাছে হার মেনেছে । তাছাড়া রােগ নির্ণয়ের জন্য এক্সরে, ইসিজি, আলট্রাসনােগ্রাফি, ইটিটি, এন্ডােস্কপি যন্ত্র আবিষ্কার করা হয়েছে। পৃথিবীর যেকোনাে প্রান্ত থেকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ নিতে সৃষ্টি হয়েছে টেলিমেডিসিন পদ্ধতি । কৃত্রিম হাত-পায়ের ব্যবস্থা এমনকি নিঃসন্তান দম্পতির জন্য টেস্টটিউব বেবির ব্যবস্থাও করেছে। আধুনিক বিজ্ঞান। 

শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান : শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিশেষ অবদান রেখেছে। কাগজ, কলম ও মুদ্রণ যন্ত্র শিক্ষাক্ষেত্রে এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। মুদ্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে জ্ঞানী-গুণীর কথা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে । মূল্যবান গ্রন্থগুলাে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। বর্তমান যুগে ঘরে বসে ইন্টারনেটে কুরআন শরিফ থেকে শুরু করে সকল বই পড়া যায় । তাছাড়া রেডিও, টেলিভিশন, ক্যাসেটের মাধ্যমেও শিক্ষা লাভ করা যায় । 

তথ্য প্রদানে বিজ্ঞান : বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। এই যুগে যেকোনাে আলােড়িত ও আলােচিত ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে । কম্পিউটার, টেলিফোন, মুঠোফোন, ই-মেইল, এসএমএস, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনাে স্থানে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে পৃথিবীর যেকোনাে প্রান্তে একে অপরের সাথে যােগাযােগ করতে পারে বিজ্ঞানের কল্যাণে। তথ্য আদান-প্রদানের আরও উন্নত যন্ত্র টেলিপ্যাথি আবিষ্কারের পথে । এই যন্ত্রের মাধ্যমে কথা। বলার সময় অপর প্রান্তের মানুষের মনােভাব অনুভব করা যাবে । তাছাড়া ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পত্রিকা পড়া সম্ভব হচ্ছে । আধুনিক বিজ্ঞান মানুষের জীবনের জটিলতাকে সকল ক্ষেত্রে সহজ থেকে সহজতর করে দিয়েছে । 

সম্পদ আহরণে বিজ্ঞান : পৃথিবীতে বহু ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ আছে। এই সম্পদ আহরণ করতে আবিষ্কার করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও যন্ত্রপাতি । বৈজ্ঞানিক এ পদ্ধতি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মানুষ ভূ-গর্ভ থেকে তেল, গ্যাস, কয়লা, লােহা, চুনাপাথরসহ নানা সম্পদ আহরণ করছে এবং একেকটা সম্পদ একেক কাজে লাগিয়ে মানুষের চাহিদা পূরণ করছে। সমুদ্রের স্রোত,। নদীর পানি বাতাসের গতিকেও বিজ্ঞান মানুষের কাজে লাগাচ্ছে। কাজে লাগাচ্ছে পরিত্যক্ত বর্জ্য ও পশু-পাখির বিষ্টাকেও। 

আবহাওয়া নির্ণয়ে বিজ্ঞান : এক সময় মানুষ আবহাওয়ার পূর্বাভাস বুঝে নিত অভিজ্ঞতা ও ঋতু চক্রের মাধ্যমে । কোন ঋতুতে আবহাওয়া কেমন ছিল তার ওপর ভিত্তি করে তারা চলত। এতে বড়াে বড়াে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাতাে এবং প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হতাে। পূর্বে বন্যা, সুনামি, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়ে অসংখ্য মানুষ, গবাদি পশুসহ ঘরবাড়ি ও পরিবেশের অনেক ক্ষতি সাধিত হয়েছে । কিন্তু বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ মানুষকে আর এই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না। বিজ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ এক-দু’দিন আগেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে যায়। ফলে তারা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যথাসময়ে। অবস্থান নেয় এবং দুর্যোগ মােকাবিলা করতে প্রয়ােজনীয় প্রস্তুতি নেয় ।

যােগাযােগ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান : এক সময় মানুষ ছিল গৃহকেন্দ্রিক। কোথাও যেতে হলে পায়ে হেটে যেতে হতো। কেননা তখন কোনাে যানবাহনের ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান যােগাযােগের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এনেছে। এ যুগে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। যানবাহনের মাধ্যমে মানুষ এখন জলে, স্থলে, আকাশে, গ্রহে, উপগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে । স্থলপথে গাড়ি, টেন, জলপথে জাহাজ, আকাশপথে বিমান, ভিন্ন গ্রহে যেতে রকেট ইত্যাদি বিজ্ঞানেরই অবদান। বিনােদনে বিজ্ঞান : মন ভালাে তাে সব ভালাে । মন ভালাে থাকলে পড়ালেখা, কাজকর্ম সবকিছুই ভালাে লাগে। তাই মানুষের। মনকে প্রফুল্ল রাখতে বিজ্ঞান নানা প্রকার বিনােদনের ব্যবস্থা করেছে। বিজ্ঞান আধুনিক মানুষের বিনােদনসঙ্গী হয়ে ধরা দিয়েছে । বিশ্বসংস্কৃতি আজ বিজ্ঞানে পরিপূর্ণ হয়েছে। মােবাইল, বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, ক্যামেরা, ডিভিডি, ভিসিডি, ভিসিয়ার, ডিশ, বৈদ্যুতিক বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি সাংস্কৃতিক জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে । তাই কর্মশেষে কর্মক্লান্ত মানুষ বিনােদনের মাধ্যমে মনকে উৎফুল করে তােলে। 

শহুরে জীবনে বিজ্ঞান : শহুরে জীবনে মানুষ আর বিজ্ঞান অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত । শহরে আমাদের ঘুম ভাঙে গাড়ির হর্ন, কলিংবেল, গান বাজনা ও এলার্মঘড়ির শব্দে । ঘুম থেকে উঠে দিনের শুরু হয় টুথপেস্ট আর টুথব্রাশ দিয়ে। এরপর আসে সংবাদপত্র । তারপর গ্যাস অথবা হিটার কিংবা স্টোভে আমরা তাড়াতাড়ি রান্না করে খাই । রিকশা, অটোরিকশা, বাস, ট্রেন বা মােটরসাইকেলে চড়ে কর্মস্থলে পৌছাই। সিড়ির বদলে লিফটের সাহায্যে উপরে উঠে অফিস করি । টেলিফোন, টেলিগ্রাম, ফ্যাক্স, ই-মেইল, ইন্টারনেট ইত্যাদির সাহায্যে দূর-দূরান্তে খবর পাঠাই। কম্পিউটারে কাজের বিষয় লিখে রাখি । ক্লান্ত দেহটাকে আরাম দেওয়ার জন্য এসি কিংবা ইলেকট্রিক পাখার নিচে বসি– এভাবেই সারাদিন বিজ্ঞানের সাহায্যে আমরা জীবন পরিচালনা করছি। আবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দিনের অবসন্নতা দূর করতে মিউজিক প্লেয়ার কিংবা টিভি চালিয়ে মনটাকে সতেজ রাখতে চেষ্টা করি। ছেলে-মেয়েরা কম্পিউটারে তাদের নােট রাখে, কখনাে কখনাে ভিডিও গেমস খেলে । এমনিভাবে জীবনের প্রতি পদক্ষেপেই আমরা বিজ্ঞানের অবদান অনুভব করি । 

গ্রামীণ জীবনে বিজ্ঞান : যােগাযােগ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অবদানের জন্য মানুষ আজ দূরকে করেছে নিকট প্রতিবেশী। বাস, রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, মােটরসাইকেল সবই এখন গ্রামীণ জীবনের অংশ । ফলে বিজ্ঞান শহরজীবনকে অতিক্রম করে পৌছে গেছে গ্রামে। বর্তমানে গ্রাম্য জীবনেও বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরতা বেড়েই চলেছে। টুথপেস্ট, টুথব্রাশ, টিভি, রেডিও মােবাইল ফোন, টর্চ, স্নাে, পাউডার, সাবান, আয়না-চিরুনি, রাসায়নিক সার, কীটনাশক দ্রব্য, ট্রাক্টর ইত্যাদি এখন গ্রামীণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। শহরের মানুষ যেমন নিজেদের জীবনযাত্রাকে সহজ করতে বিজ্ঞানকে নিত্যসঙ্গী করেছে তেমনি গ্রামের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মানুষের জীবনেও ইলেকট্রিক হিটার, রান্নার গ্যাস, প্রেসার কুকার, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি অপরিহার্য হয়ে। উঠেছে। 

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অপকারিতা : বিজ্ঞানের স্পর্শে একদিকে যেমন মানুষের জীবন হয়েছে অর্থপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী, অন্যদিকে এর বীভৎস রূপও মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে অনিঃশেষ বেদনায় । বর্তমান সভ্যতার একটি কদর্য ও ভয়ানক রূপ হলাে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার । এই অস্ত্র ক্রমশ মানব-সভ্যতাকে হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কম্পিউটার নামক মহাশক্তির আবিষ্কার ও সর্বক্ষেত্রে এর ব্যবহার প্রতিটি দেশে বাড়িয়ে দিয়েছে বেকারত্ব। কম্পিউটারের মাধ্যমে মানুষ এখন সাইবার অপরাধী হ্যাকিংসহ নানা ধরনের অপরাধ করছে, যার গতি রােধ করা প্রায় অসাধ্য। সামাজিক যােগাযােগের মাধ্যম যেমন— ফেসবুক, টুইটার, ভিডিও, শেয়ারিং সাইট, ইউটিউব ইত্যাদির মাধ্যমে ভুল তথ্য নিমেষেই লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারীর কাছে পৌছে দেয়, যা সহিংসতা সৃষ্টি করে। বৈজ্ঞানিক যন্ত্র সংবলিত বড়াে বড়াে শিল্পকারখানা ও যন্ত্রচালিত গাড়িগুলাে নষ্ট করছে পরিবেশ। তাছাড়া বিশ্বের প্রতিটি দেশে তথ্য প্রযুক্তির ফলে সংঘটিত হয় বড়াে বড়াে ডাকাতি । তবে সত্যিকার অর্থে এসবের জন্য আমরা বিজ্ঞানকে দায়ী করতে পারি না। বরং প্রযুক্তির অপপ্রয়ােগকারী মানুষেরাই এর জন্য দায়ী। 

উপসংহার : বিজ্ঞান অনুসন্ধানী, আধুনিক জীবনে ক্রমপ্রবহমান ছন্দের মূল চালিকাশক্তি। বিজ্ঞানের একের পর এক আবিষ্কারে মানুষ স্তম্ভিত হচ্ছে। শহরজীবনে বিজ্ঞান যেমন প্রভাব বিস্তার করেছে, গ্রামীণ জীবনধারায় ঠিক সেভাবে সম্ভব হয়নি। তাই সচেতন জনসাধারণের প্রত্যেকেরই কর্তব্য গ্রামীণ জীবনধারাতেও বিজ্ঞানের বিস্তৃত ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। কেননা, বাংলাদেশের হৃৎপিণ্ড গ্রামবাংলায় বিজ্ঞানের যথার্থ প্রয়ােগই পারে তার উদ্ভাবনী শক্তিকে যাদুস্পর্শে সমৃদ্ধ করতে ।

2. মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্য।

0/20Din.B-23

ভূমিকা

জন্মের জন্যে আমরা মাতাপিতার কাছে ঋণী। এই ঋণ অপরিশোধ্য। এ জন্য প্রত্যেক ধর্মেই পিতামাতাকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’। ‘জননী স্বর্গ অপেক্ষা গরীয়সী’। “পিতা ধর্ম, পিতা কর্ম, পিতাই পরম তপস্যার ব্যক্তি’। পিতামাতা যেমন আমাদের স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে ছোট থেকে বড় করেছেন, তেমনি পিতামাতার প্রতিও আমাদের অনেক দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে।

সন্তানের জীবনে মা-বাবার অবদান

প্রত্যেক মা-বাবাই সীমাহীন আত্মত্যাগ করে পরম স্নেহে সন্তানকে বড় করে তোলেন। সন্তানকে লালন-পালন করা, তার লেখাপড়া, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে মা-বাবা সারাজীবনই উদ্বিগ্ন থাকেন। মা-বাবা নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ান, নিজে না পরে ভালো পোশাকটি সন্তানের গায়ে তুলে দেন। সন্তানের জন্য উৎকণ্ঠায় মা-বাবা বিনিদ্র রজনী কাটান। সন্তানের যে-কোনো অমঙ্গল মা-বাবার জন্য বেদনার কারণ হয়। কঠোর পরিশ্রম আর সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে মা-বাবা যা আয়-রোজগার করেন, তা নিঃস্বার্থভাবে সন্তানের জন্যই ব্যয় করেন। বটবৃক্ষের মতো মা-বাবার আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে সস্তান বড় হয়, বিকশিত হয়। সন্তানের প্রতি মা-বাবার এই যে মায়া-মমতা, তা স্বৰ্গীয়। সন্তানের জীবনে মা-বাবা আশীর্বাদস্বরূপ। তাই কোনো অবস্থাতেই মাতাপিতাকে অবহেলা করা সন্তানের জন্য গর্হিত কাজ। মাতাপিতার মনে কষ্ট জাগে, এমন আচরণ ও কথা কখনো বলা উচিত নয়।

মাতাপিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য

সন্তানের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হচ্ছে মাতাপিতাকে শ্রদ্ধা করা। তাঁদের শ্রেষ্ঠ সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করা। তাঁদের প্রতি সবসময় বিনম্র আচরণ করা। মনে রাখতে হবে, মাতাপিতার শাসনের আড়ালে থাকে ভালোবাসা, মঙ্গল কামনা। তাঁদের মতো অকৃত্রিম স্বজন পৃথিবীতে দ্বিতীয় আর কেউ নেই।

মাতাপিতা যেমনই হোক না কেন, সন্তানের কাছে তারা সব সময় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তাই তাঁদের অবাধ্য হওয়া কোনো ক্রমেই উচিত নয় । অবাধ্য সন্তান মাতাপিতার কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কৃতী সন্তান পিতামাতার কাছে মাথার মুকুটস্বরূপ। যে সন্তান মাতাপিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত, তারা জীবনে সাফল্য লাভ করে।

মাতা পিতার প্রতি কর্তব্য কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে একটি উদাহরণ দেয়া যায়- হযরত আব্দুল কাদির জিলানি (রা) ডাকাত কর্তৃক আক্রান্ত হয়েও মাতৃ-আজ্ঞা পালন করেছেন। মিথ্যাকথা না বলে। এতে ডাকাত সর্দার অভিভূত হয়ে সৎপথ অবলম্বন করেছিল। হযরত বায়েজিদ বোস্তামির (রা) অসুস্থ মাতার শিয়রে সারারাত পানির গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে থাকার ঘটনা এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মায়ের ডাকে দুর্যোগপূর্ণ রাতে সাঁতার দিয়ে দামোদর নদী পার হওয়ার কাহিনী কে না জানে । এঁরা সকলেই জীবনে সফল হয়েছেন এবং মহান ব্যক্তি হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন। কাজেই মাতাপিতার কথা মেনে চলা এবং তাঁদের প্রতি কর্তব্য পালন করা আমাদের জীবনে সফলতার সোপানও বটে।

অনেক মাতাপিতা আছেন, তাঁরা নিজে অশিক্ষিত হয়েও সন্তানকে উচ্চশিক্ষা দান করেন। সেই সন্তান পড়ালেখা করে উচ্চপদে আসীন হয়ে অনেক সময় তাদের মাতাপিতার প্রতি কোনো দায়িত্ব পালন করেন। না। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা দূরে থাক, ন্যূনতম দায়িত্ব ও কর্তব্যও পালন করেন না। এটা সবচেয়ে দুঃখের ও পরিতাপের বিষয়। কোনো সুসন্তান কখনো মা-বাবার প্রতি এমন অমানবিক আচরণ করতে পারে না। বৃদ্ধ অবস্থায় মা-বাবা সন্তানের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় তাঁদের অসুখ ও স্বাস্থ্যের প্রতি অধিক নজর দিতে হবে। তাঁদের সেবা-শুশ্রূষার প্রতি যত্নশীল হওয়া সন্তানের একান্ত কর্তব্য।

উপসংহার

মাত পিতার প্রতি কর্তব্য যথাযথভাবে পালন সুসন্তান হওয়ার আবশ্যিক শর্ত। বাস্তব ও ব্যবহারিক জীবনে মা-বাবার সেবা ও তাঁদের প্রতি যথার্থ কর্তব্য পালন করে সন্তান হিসেবে নিজের জন্মঋণ শোধ করা উচিত। যদিও মা-বাবার ঋণ অপরিশোধ্য, তবু তাঁদের যেন অযত্ন, অবহেলা না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের মনে কষ্ট হয়, এমন আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষত, বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবা যদি সন্তানের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা না পান, এর চেয়ে দুঃখের আর পরিতাপের কিছু নেই। এ অমানবিক ও হীন কাজ কেউ যেন না করে।

3. মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ।

0/20Din.B-23

ভূমিকা: হাজার বছর ধরে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে আসছে। বাঙালির প্রাকৃতিক পরিবেশেই মিশে আছে প্রতিবাদের ভাষা। বিদেশি শক্তির আগ্রাসন এ জাতি কোনোদিনই মেনে নিতে পারেনি। তাই ঔপনিবেশিক শোষকদের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে বারবার বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠেছে। স্বাধীনতার জন্য, মুক্তির জন্য আত্মদানের রক্তে বারংবার সিক্ত হয়েছে বাংলার মাটি। অবশেষে ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি অর্জন করে প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক সে মুক্তিযুদ্ধ যে বোধ বা চেতনাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছিল তারই নাম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তাকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে – মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা আমাদের প্রেরণা জোগাবে অনন্তকাল।

জাতীয়তাবাদী চেতনার জাগরণ: ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের জাঁতাকলে প্রায় দু’শ বছর ধরে নিষ্পেষিত হয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশ। ১৯৪৭ সালে সে জাঁতাকল থেকে উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ মুক্তিলাভ করলেও মুক্তি মেলেনি বাঙালি জাতির। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলেও পাকিস্তানি শাসকদের শৃঙ্খলে বন্দি হতে হয় বাঙালি জাতিকে। সে সময় বাঙালির প্রতি পাকিস্তানি শাসকদের সংকীর্ণ মনোভাব ও শোষণ-নিপীড়ন এ দেশের মানুষকে ভাবিয়ে তোলে। এর মধ্য দিয়ে একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে বাঙালি নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। এ জাতীয়তাবাদী চেতনার নিরিখেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে সংগ্রাম করে মুক্তির পথ খুঁজতে থাকে বাঙালি।

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি: ‘পাকিস্তান’ রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ এ অঞ্চলের মানুষের উপর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এ দেশের জনমানসে অসন্তোষ ও ক্ষোভ ক্রমশই তীব্র হতে থাকে। এরই অনিবার্য ফল হিসেবে ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার জয়লাভ, ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন থেকে ১৯৬৬-র ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর নজিরবিহীন ছাত্র গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিকাশ লাভ করে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে আমাদের যে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে উঠেছে, তার মূলে কাজ করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। গত চার দশকে নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকশিত হয়েছে আমাদের সমাজজীবনে। ব্যক্তিস্বাধীনতা, নারীমুক্তি আন্দোলন, নারীশিক্ষা, গণশিক্ষা, সংবাদপত্রের ব্যাপক বিকাশ সর্বোপরি গণতান্ত্রিক অধিকার ও চেতনা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে সমাজে। দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যে প্রবল গণজোয়ারের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারও প্রেরণা জুগিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সাহিত্যে বিশেষ করে কবিতা ও কথাসাহিত্যে এক নতুন ধারার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশে কবিতাচর্চা তথা সাহিত্যচর্চা আজকে যতটা ব্যাপ্তি পেয়েছে, তার পিছনে বড়ো প্রেরণা হিসেবে ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছে আমাদের গান এবং নাটকে। গণসচেতনতামূলক বক্তব্যধর্মী নাটক ব্যাপকভাবে রচিত হয়েছে স্বাধীনতার পর। আমাদের দেশাত্মবোধক গানের ক্ষেত্রে এক নতুন জোয়ার এনেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অসংখ্য গীতিকার তাঁদের গানে রচনা করেছেন মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাথা। আমাদের চলচ্চিত্রেও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা প্রকাশ পেয়েছে নিয়মিতভাবে।

বর্তমান প্রেক্ষাপট ও আজকের বাংলাদেশ: যে স্বপ্ন বা আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, সেই স্বপ্ন নানা কারণেই গত পাঁচ দশকেও সাফল্যের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। স্বাধীনতার পর বারবার সামরিক অভ্যুত্থান, হত্যা আর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের অপতৎপরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, যুবসমাজের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা, বেকারত্ব, জনস্ফীতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদি অবক্ষয় স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিপন্ন করে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কার্যকলাপ বারবার সংঘটিত হয়েছে প্রশাসনের ভেতরে ও বাইরে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রাপ্য সম্মান এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রয়োজন দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির সংঘবদ্ধ প্রয়াস ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে আন্তরিক পদক্ষেপ। এজন্য দুর্নীতিমুক্ত ও কল্যাণমূলক শাসনব্যবস্থা যেমন প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত গৌরবগাথা আর আত্মত্যাগের ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা।

উপসংহার: মুক্তির চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭১ সালে আমরা কঠিন আত্মত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তখনই সাফল্যে উদ্ভাসিত হবে, যখন এ স্বাধীনতা আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতায় রূপান্তরিত হবে। সে লক্ষ্যে আজ সমাজের সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনাকে ছড়িয়ে দেওয়া ও লালন করা প্রয়োজন। দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের মহৎ লক্ষ্যসমূহ জাগ্রত করা গেলে তবেই আমাদের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এক গৌরবময় স্তরে উত্তীর্ণ হবে।

4. বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প।

0/20Din.B-23

ভূমিকা: পৃথিবীব্যাপী জ্ঞানী ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ ছোটে লোক থেকে লোকান্তরে, দেশ থেকে দেশান্তরে। প্রতিনিয়ত মানুষ জানতে চায়, বুঝাতে চায়, জয় করতে চায় অজানাকে। তাই তো দেখি হিমালয়, চাঁদের মতো দুর্গম স্থানকে মানুষ জয় করেছে। পুরাতাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করে উপহার দিয়েছে নতুন পৃথিবী। এ প্রসঙ্গে মহানবির একটি বাণী উল্লেখযোগ্য ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন পর্যন্ত যাও’। অর্থাৎ জ্ঞানের জন্য, জানার জন্য সমস্ত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করতে হয়। পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মতো বাংলাদেশেরও আনাচকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য স্থান, অসংখ্য স্থাপত্য। পরিবর্তনশীল যড়বাতুর এ দেশ পৃথিবীর বুকে অন্যতম বৈচিত্র্যময় একটি দেশ। তাই দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বলেছেন, ‘সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি’। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় রয়েছে ঐতিহ্যময় পর্যটন স্থান। বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার সঙ্গে গলা মিলিয়ে আমরাও বলতে পারি যে, পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ রূপময়ী ও সমৃদ্ধিশালী জাতি ও দেশ হচ্ছে বাঙালি ও বাঙালির দেশ। বাংলাদেশের প্রকৃতি এবং বাঙালি জাতির – ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার উপায় হচ্ছে পর্যটন।

পর্যটনশিল্পের গুরুত্ব: অন্যান্য শিল্পের মতো পর্যটনও একটি শিল্প। কথায় আছে, ‘গ্রন্থগত বিদ্যা আর পর হস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন।’ আসলে জীবনভর ভারী ভারী বইপুস্তক পড়ে যতটুকু শেখা সম্ভব তার চেয়ে বেশি সম্ভব যদি চোখে দেখা যায়। কারণ মানুষ তার জ্ঞানের শতকরা ৭০ ভাগ চোখ নামক ইন্দ্রিয় দিয়ে অর্জন করে। যে আগ্রার তাজমহল কিংবা মিশরের পিরামিড বা নায়াগ্রার জলপ্রপাত চোখে দেখেনি, সে শুধু বই পড়ে তার মর্মার্থ বুঝাতে অপারগ। সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ জ্ঞানপিপাসু। মানুষ ও তার কীর্তি সম্পর্কে এবং প্রকৃতি ও তার মহিমার অজানা রহস্য পর্যটনের মাধ্যমেই জানা যায়। আদিবাসীদের জীবনযাপনের বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে মানুষ পর্যটনশিল্পের মাধ্যমে জানতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের আচার-আচরণ, স্থান, সৌন্দর্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতিনীতি, আকৃতি-প্রকৃতি, প্রাচীনত্বের নিদর্শন, পশুপাখি প্রভৃতি সম্পর্কে পর্যটনশিল্পের মাধ্যমেই জানা যায়। অতএব দেখা যায়, পর্যটনশিল্পের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

বাংলাদেশের পর্যটন স্থান: বাংলাদেশকে কেউ কেউ বলেছেন চির সুন্দরী, কেউ বলেছেন চিরসবুজ, কেউ বলেছেন সকল দেশের রানি, কেউবা আবার তুলনা করেছেন সোনার কাঠি, রূপার কাঠির সঙ্গে। অর্থাৎ আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে পৃথিবীর বড়ো বড়ো পণ্ডিত বিভিন্নভাবে সুন্দরের ব্যাখ্যা করেছেন। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের মতো বাংলাদেশকে নিয়েও ‘মায়াপুরী’র স্বপ্ন দেখে মানুষ। ষড়ঋতুর বৈচিত্র্য ছাড়াও সবুজ-শ্যামল দিখ প্রকৃতি মানুষকে সহজেই আকর্ষণ করে। বাংলাদেশের প্রকৃতি হচ্ছে মাতৃত্বের মতো শান্ত স্নেহদায়ী। উগ্র, নম্র সকলকেই তা ঘুম পাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্থান। পাহাড়পুর, রাঙামাটি, সাগরদিঘি, ময়নামতি, কুয়াকাটা, পাথরঘাটা, সোনারগাঁ, বান্দরবান, সুন্দরবনসহ আরও অসংখ্য পর্যটনের স্থান ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত রয়েছে বাংলাদেশের কক্সবাজারে। বাংলাদেশের একদিকে সুউচ্চ পাহাড় অন্যদিকে বিশাল জলরাশি। যা সহজেই পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বাংলাদেশে খোদ রাজধানীতে রয়েছে অসংখ্য ইতিহাস-আশ্রিত ঐতিহ্যময় স্থান এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ স্থান। তাই সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন-

‘নাগের বাঘের পাহারাতে

হচ্ছে বদল দিনে রাতে

পাহাড় তারে আড়াল করে

সাগর যে তার ধোয়ায় পাটি।’

পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা: বাংলাদেশে ইতঃপূর্বে পর্যটকদের জন্য কোনো নির্দিষ্টি সুযোগ-সুবিধা ছিল না। তারপরও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক মুগ্ধ হয়ে আসত শুধু প্রকৃতি অবলোকনের জন্য। সম্প্রতি সরকার পর্যটকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন স্থানে হোটেল ও মোটেল করেছে। বিভিন্ন বেসরকারি হোটেলের চেয়ে এসব সরকারি হোটেলে অত্যন্ত কমমূল্যে সিট রিজার্ভেশন সুবিধা দিয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন রকমের যানবাহনের ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। পর্যটকদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান ও সামগ্রিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করাই এর প্রাথমিক কাজ।

পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে পর্যটন কর্পোরেশনের দায়িত্ব: বাংলাদেশ পর্যটনশিল্পে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য দুর্লভ এবং সুন্দর স্থান। এ স্থানগুলোকে সংরক্ষণের জন্য পর্যটন কর্পোরেশনের বিশেষ দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের পর্যটন স্থানগুলোকে বিশ্বের মানুষের চোখের সামনে তুলে ধরতে হবে। থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ ও স্বল্পব্যয়ের আওতায় আনতে হবে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত’ করতে হবে। তাহলেই পর্যটনশিল্পে বাংলাদেশের স্থান বিশ্বের সুউচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে পর্যটন কর্পোরেশনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অপরিসীম।

উপসংহার: প্রখ্যাত শিল্পী, সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায় আধুনিক পর্যটন শিল্পনগরী ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন- ‘অর্ধেক সুন্দরী তুমি, অর্ধেক কল্পনা।’ তাঁর এ মন্তব্য সম্পর্কে আমরাও বলতে পারি, প্যারিসের অর্ধেক সৌন্দর্যকে কল্পনা করে নিতে হয় অথচ আমাদের বাংলাদেশের সবুজ-শ্যামল সৌন্দর্যকে কল্পনা করে নিতে হয় না। তা একই সঙ্গে দৃশ্যমান ও অনুভব্য। বাংলাদেশের পর্যটন স্থানের সৌন্দর্যের তুলনা হয় না। বাংলাদেশে পর্যটন করপোরেশন, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সর্বোপরি সকলেই একটু সচেতন হলে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আসনে আসীন হবে।

5. পদ্মা সেতু ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

0/20Din.B-23

ভূমিকা: পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মাণাধীন সেতু। স্বপ্নের এই সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটাবে। 

এই সেতুকে কেন্দ্র করে স্বপ্ন বুনছে দক্ষিন-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ। বাংলাদেশের সকল মানুষের আশা, এই স্বপ্নে পদ্মা সেতু বদলে দেবে দেশে অর্থনীতি এবং সেই সাথে উন্নত হবে মানুষের জীবনযাত্রা। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় এই প্রকল্প খুলে দেবে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।

পদ্মা সেতুর গুরুত্ব: বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এই দেশের বুক চিরে বয়ে চলেছে অসংখ্য নদনদী। প্রতিনিয়তই তাই আমাদের যাতায়াতব্যবস্থায় নৌপথের আশ্রয় নিতে হয়। 

ফলে যোগযোগব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রতা ও মন্থর গতি পরিলক্ষিত হয়। তাই যোগাযোগব্যবস্থাকে গতিশীল করার জন্য প্রয়োজন হয় পদ্মা সেতু। সেতু থাকলে দুই পাড়ের যোগাযোগব্যবস্থা উন্নতি হয়, সেই সাথে ব্যবসা বাণিজ্য ভালো হওয়ায় মানুষের জীবনমানেরও উন্নতি ঘটে।

পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রেক্ষাপট: পদ্মা সেতু দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। এজন্য এই অঞ্চলের মানুষ স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকারের কাছে তাদের দাবি বাস্তবায়নের কথা জানিয়ে এসেছে। 

অবশেষে ১৯৯৮ সালে এই সেতুর সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় এনে প্রথম সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০১ সালে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কিন্তু অর্থের জোগান না হওয়ায় সেতুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছিল। 

পরবর্তীতে, ২০০৭ সালে পদ্মা সেতুর প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়।পরে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে এই সেতুতে রেলপথ সংযুক্ত করে।

প্রতিবন্ধকতা ও বাংলাদেশের সক্ষমতা: বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু। এই প্রকল্প বিভিন্ন সময় প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছে। 

২০০৯ সালের পর বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদের সাথে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়। কিন্তু ২০১২ ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক; ফলে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যায় পদ্মা সেতুর প্রকল্প। 

পরবর্তীতে সরকার ঘোষণা দেয়, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের। ষড়যন্ত্রের বাধা জয় করে এগিয়ে চলে পদ্মা সেতুর কাজ, নিজস্ব অর্থায়নে দৃশ্যমান হতে থাকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

পদ্মা সেতুর বর্ণনা: পদ্মা সেতুই হবে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। মূল সেতুর দের্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ হবে ৭২ ফুট। 

সেতুটি হবে দ্বিতল, উপর দিয়ে চলবে যানবাহন এবং নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। সেতুটি নির্মিত হবে কংক্রিট এবং স্টিল দিয়ে। নদী শাসনের জন্য চীনের সিনহাইড্রো কর্পোরেশন কাজ পেয়েছে।

সেতুুটির দুই পাশের সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য কাজ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের আব্দুল মোমেন লিমিটেডকে। সেতুর নির্মাণকাজ তদারকি করছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বুয়েট এবং কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। 

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে ১৪টি নতুন স্টেশন নির্মান এবং ৬টি বিদ্যমান স্টেশন উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মান করা হয়েছে। 

আর এই ১৪টি স্টেশন হল- কেরানীগঞ্জ, নিমতলা, শ্রীনগর, মাওয়া, জাজিরা, শিবচর, ভাঙ্গা জংশন, নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লোহাগাড়া, নড়াইল, জামদিয়া ও পদ্ম বিল। এছাড়া অবকাঠামো উন্নয়নের ৬টি স্টেশন হল- ঢাকা, গেন্ডারিয়া, ভাঙ্গা, কাশিয়ানী, রূপদিয়া ও সিঙ্গিয়া।

মূল সেতুর পিলার ৪২টি এর ভিতর নদীর মধ্যে ৪০টি ও নদীর দুই পাশে ২টি পিলার রয়েছে। নদীর ভিতরের ৪০টি পিলারে ৬টি করে মোট ২৪০টি পাইল রয়েছে। 

এছাড়াও সংযোগ সেতুর দুই পাশের দুটি পিলারে ১২টি করে মোট ২৪টি পাইল রয়েছে। পিলারের উপর ৪১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। 

এখানে মূল সেতুর কাজ পেয়েছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। এই সেতুর স্থায়িত্ব হবে ১০০ বছর।

পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যয়: তৎকালীন সরকার ২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প পাশ হয়। এরপর ২০১১ সালে এই প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।

পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যয় দ্বিতীয় বারের মতো সংশোধন কর হয় ২০১৬ সালে। এই ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। 

পরবর্তীতে ২০১৯ সালে সেতুর ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। 

প্রথম দিকে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, আইডিবি এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। 

কিন্তু বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলে, বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

অথনৈতিক দিক দিয়ে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব: পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী। এই সেতু বাস্তবায়নের ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে। রাজধানীর সাথে মানুষের সরাসরি সংযোগ ঘটছে এবং সেই সাথে অর্থনীতির গতিশীল হবে। অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব তুলে ধার হল-

  1. শিল্পক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর গুরত্ব: পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সরাসরি যোগাযোগ হবে। এর ফলে এই অঞ্চলে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প কারখানা। পায়রা সমুদ্র বন্দর গতিশীল হবে সেতুকে কেন্দ্র করে। ফলে ব্যবসায়ের সুবিধার্থে স্থাপিত হবে নতুন শিল্পকারখানা।
  2. কৃষিক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকার ফলে ওই অঞ্চলের কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল পেতো না। পদ্মা সেতুর নির্মানের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা গতিশীল হয়। এতে কৃষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে। এতে করে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
  3. দারিদ্র বিমোচনে পদ্মাসেতুর প্রভাব: সেতু নির্মাণের ফলে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এর ফলে অনেক মানুষের কর্মস্থানের সুযোগ হবে। সহজেই মানুষ কাজের জন্য অন্যান্য স্থানে যেতে পারবে। ফলে বেকারদের কর্মসংস্থান হবে।

পরিবেশ ভারাসাম্যের পদ্মা সেতুর ভূমিক: পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে নদীর দুইপাশের এলাকায় নদীর পাড় বাঁধা হচ্ছে। যার কারণে নদীভাঙন রোধ করা যাচ্ছে। 

তাছাড়াও নদীর ও সড়কের রাস্তার দুই পাশে বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে। এতে এসবা এলাকার পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করে বলে অবাধে বৃক্ষনিধন হয়। কিন্তু পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ওই অঞ্চলে বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ দেওয়া সহজ হবে। ফলে তাদের জ্বালানির চাহিদা পূরণ হবে। সেই সাথে বৃক্ষনিধন কমে যাবে।

উপসংহার: বাংলাদেশের মানুষের একটি স্বপ্নের নাম পদ্মা সেতু। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেবে। এই সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠবে ব্যাপক শিল্পকারখানা, গার্মেন্টস, গোডাউন ইত্যাদি। এই সেতুর অচিরেই বদলে দেবে দেশের অর্থনীতি, উন্নত করবে মানুষের জীবনযাত্রা।

(Dinaj 23 end )

1. (ক) নিচের অনুচ্ছেদের অপপ্রয়োগ সংশোধন করো:

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা বিচিত্রময়। তার শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি যেমন ‘বিদ্রোহী’ কবিতা, তেমনি অশ্রুজলে ভেজা অনেক বিরহের গানও তিনি লিখেছেন। তার সৃষ্টিকর্ম বাংলা ভাষাকে বৈচিত্রভাবে সমৃদ্ধ করেছে। সব শিশুরা নজরুলের কবিতা ভালোবাসে। কবির প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ শ্রদ্ধাঞ্জলী।

অথবা,

(খ) নিচের বাক্যগুলো শুদ্ধ করে লেখো:

i. সাধারণ ভুল বুঝতে না পারা লজ্জস্কর।

ii. পড়ালেখার প্রতিযোগীতা থাকা ভালো।

iii. দৈন্যতা কোনোকালেই প্রশংসনীয় নয়।

iv. মামলা চালাতে গিয়ে লোকটি সর্বশান্ত হলো।

v. ভুল লিখতে ভুল করো না।

vi. সব পাখিগুলো উড়ে চলে গেল।

vii. বাংলাদেশ একটি উন্নতশীল দেশ।

viii. মেয়েটি বিদ্যান কিন্তু ঝগড়াটে।

0/5Ctg.B-23

(ক) উত্তরঃ

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা বৈচিত্র্যময়। তাঁর সৃষ্টি যেমন ‘বিদ্রোহী’ কবিতা, তেমনি চোখের জলে ভেজা অনেক বিরহের গানও তিনি লিখেছেন। তাঁর সৃষ্টিকর্ম বাংলা ভাষাকে বিচিত্রভাবে সমৃদ্ধ করেছে। শিশুরা নজরুলের কবিতা ভালোবাসে। কবির প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ শ্রদ্ধাঞ্জলি।

(খ) উত্তরঃ

i. সাধারণ ভুল বুঝতে না পারা লজ্জস্কর।

উত্তর: সাধারণ ভুল বুঝতে না পারা লজ্জাকার।

ii. পড়ালেখার প্রতিযোগীতা থাকা ভালো।

উত্তর: পড়ালেখায় প্রতিযোগিতা থাকা ভালো।

iii. দৈন্যতা কোনোকালেই প্রশংসনীয় নয়।

উত্তর: দীনতা কোনো কালেই প্রশংসনীয় নয়।

iv. মামলা চালাতে গিয়ে লোকটি সর্বশান্ত হলো।

উত্তর: মামলা চালাতে গিয়ে লোকটি সর্বস্বান্ত হলো।

v. ভূল লিখতে ভুল করো না।

উত্তর: ভুল লিখতে ভুল করো না।

vi. সব পাখিগুলো উড়ে চলে গেল।

উত্তর:সব পাখি উড়ে চলে গেল ।

vii. বাংলাদেশ একটি উন্নতশীল দেশ।

উত্তর: বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ।

viii. মেয়েটি বিদ্যান কিন্তু ঝগড়াটে।

উত্তর: মেয়েটি বিদ্বান কিন্তু ঝগড়াটে।

2. (ক) ভূমিকম্পকালীন করণীয় সম্পর্কে বন্ধুর প্রতি একটি ই-মেইল রচনা করো।

অথবা,

(খ) শিক্ষাসফরে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে অধ্যক্ষ বরাবর একটি আবেদনপত্র রচনা করো।

0/10Ctg.B-23

(ক) উত্তরঃ

New Message

To: rakib@gmail.com

Cc:

Bcc:

Subject: ভূমিকম্পের সময় করণীয় প্রসঙ্গে।

Text:

প্রিয় রাকিব

আশা করি ভালো আছিস। আমিও ভালো আছি। তোকে আজ একটি বিষয়ে সচেতন করার জন্য লিখছি। তুই তো জানিস আজকাল প্রায়ই ভূমিকম্প হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন বড়ো ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতেও রয়েছে তাই ভূমিকম্পের সময় কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয় তা জানা জরুরি। ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়ো করে ভবন থেকে নামার চেষ্টা করা উচিত নয়। কম্পন থামলে দ্রুত বেরিয়ে খোলা আকাশের নিচে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। ঘরে থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে টেবিল, ডেস্ক বা শক্ত কোনো আসবাবপত্রের নিচে আশ্রয় নিতে হবে গ্যাসের চুলা বন্ধ করতে হবে। বিম, কলাম ও পিলার ঘেঁষেও আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকলে ব্যাগ মাথায় দিয়ে শক্ত বেঞ্চ অথবা শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিতে হবে। ঘরের বাইরে থাকলে গাছ, উচু বাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে খোলা জায়গা গিয়ে দাঁড়াতে হবে। আজ এটুকুই লিখছি। ভালো থাকিস।

ধন্যবাদান্তে,

সুমি।

(খ) উত্তরঃ

১৯ মে ২০২৪

অধ্যক্ষ,

জাজিরা ডিগ্রি কলেজ, শরীয়তপুর।

বিষয়: শিক্ষাসফরে যাওয়ার অনুমতি প্রসঙ্গে আবেদন।

জনাব,

সবিনয় নিবেদন এই যে, আমরা একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আসন্ন গ্রীষ্মের ছুটি শিক্ষাসফরের মধ্য দিয়ে কাটাব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এগারোসিন্ধু এলাকাকে শিক্ষাসফরের স্থান নির্বাচন করেছি। বাংলার বারোভূঁইয়াদের অন্যতম বীরযোদ্ধা ঈশা খাঁর স্মৃতিবিজড়িত এগারোসিন্ধু সফর করে আমরা ঈশা খাঁর আমলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করতে চাই। এ সফরের স্থায়িত্ব হবে চার দিন। আমরা চাঁদা উত্তোলনের মাধ্যমে কিছু টাকা জোগাড় করেছি। অবশিষ্ট টাকা কলেজ ফান্ড থেকে পেলে আমাদের শিক্ষাসফর সফল হবে। আমরা আমাদের প্রত্যেকের অভিভাবকের অনুমতি নিয়েই এ শিক্ষাসফর শুরু করব। আপনার অনুমতি পেলেই আমরা সফরের একটি সুবিধাজনক তারিখ নির্ধারণ করতে পারি। অতএব, শিক্ষাসফরের অনুমতি দান ও আর্থিক সহযোগিতার জন্য আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ করছি।

নিবেদক,

মাহফুজ শাকুরী

সাধারণ সম্পাদক

কলেজ ছাত্র সংসদ

জাজিরা ডিগ্রি কলেজ, শরীয়তপুর।

3. (ক) অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৩-এর সমাপনী দিবস নিয়ে একটি দিনলিপি রচনা করো।

অথবা,

(খ) তোমার কলেজে অনুষ্ঠিত বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বিষয়ে একা প্রতিবেদন রচনা করো।

0/10Ctg.B-23

(ক) উত্তরঃ

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

মঙ্গলবার

রাত ১০:০০টা

শাহবাগ, ঢাকা

বাঙালির প্রাণের মেলা হিসেবে পরিচিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা। আমার মতো গ্রন্থপ্রেমিক সারা বছর অপেক্ষায় থাকে ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য। প্রতিবছর বইমেলায় যাওয়া হলেও বইমেলার সমাপনী দিবসে এবারই প্রথম গিয়েছিলাম। দুপুরের দিকে আজ বইমেলায় গিয়েছিলাম আমার বন্ধু কথার সঙ্গে। দোয়েল চত্বরের দিক দিয়ে ঢুকেই একটু অবাক হলাম। অন্যান্য দিনের চাইতে আজকের বইমেলায় ভিড় ছিল অনেক বেশি। একটু পরেই বুঝতে পারলাম বইমেলার শেষ দিন বলে সবাই আজ ছুটে এসেছে প্রাণের এই মেলায়। প্রথমেই প্রবেশ করলাম বাংলা একাডেমির মেলা প্রাঙ্গণে। বইয়ের স্টলগুলোতে সেই চিরচেনা ভিড় দেখলাম। সবাই সবার পছন্দের বই কিনতে ব্যস্ত পুরো প্রাঙ্গণ জুড়েই যেন অনুভব করলাম ভাঙনের সুর।

বইয়ের স্টলগুলো তল্পিতল্পা গুছিয়ে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল আর বইপ্রেমীরা শেষ সময়ে এসে নিজেদের পছন্দের বই কিনছিল। আমার বন্ধু কথা পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে ‘রবীন্দ্রজীবনের কিশোর গল্প’ বইটি কিনল। মহামারির দুই বছর পর এবারই যথা সময়ে শুরু হয়েছিল অমর একুশে গ্রন্থমেলা। যা প্রকাশক, লেখক ও পাঠক সকলের জন্য ছিল অত্যন্ত আনন্দের। বিকেলের দিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ২০২৪ বইমেলায় প্রকাশিত মোট বইয়ের সংখ্যাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চের পাশে গিয়ে আমি ও আমার বন্ধু ছবি তুললাম। তারপর দুজনে চলে গেলাম সোহরাওয়াদী উদ্যান প্রাঙ্গণে। সেখানে পাঞ্জেরী, প্রথমা, সময় প্রকাশনী, কথা প্রকাশ, অন্য প্রকাশ, কাকলী প্রকাশনীর স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখলাম। সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্টলগুলো বই গুছিয়ে ফেরার প্রস্তুতি শুরু করছিল। তখন আমার মন বিষাদে ভরে উঠছিল। আজকের পর বিস্তীর্ণ এই প্রান্তরে বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসবে না দোকানিরা, বইপ্রেমীরাও পাবে না নতুন বইয়ের সুঘ্রাণ। বেদনাবিধুর মন নিয়ে বই মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে এলাম। আনন্দ বেদনার এক মিশ্র অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল হৃদয় জুড়ে। এখন এই দিনলিপি লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে আবার এক বছরের অপেক্ষা প্রাণের বইমেলার জন্য।

(খ) উত্তরঃ

২ জুন ২০২৪

অধ্যক্ষ

ক্যামব্রিয়ান কলেজ, ঢাকা।

বিষয়: কলেজের বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান সম্পর্কিত প্রতিবেদন।

সূত্র: ক.ক ১৮০(২৭)/২৪, ৩০.০৫.২০২৪

জনাব,

আপনার আদেশানুসারে ক্যামব্রিয়ান কলেজে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করছি।

‘ক্যামব্রিয়ান কলেজে বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত’

২৯ মে ২০২৪ ক্যামব্রিয়ান কলেজের বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারেও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজনের দায়িত্ব ছিল কলেজ সংসদের ক্রীড়া উদ্যাপন কমিটির উপর। কমিটির সদস্যদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সুন্দরভাবে ক্রীড়ানুষ্ঠান পরিচালিত হয়েছে।

এবারের প্রতিযোগিতার ইভেন্টগুলো ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। পঁচিশটিরও বেশি ইভেন্টে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। ইভেন্টগুলোর মধ্যে বিভিন্ন রকমের দৌড়, লাফ, বর্শা নিক্ষেপ, লৌহগোলক নিক্ষেপ, চাকতি নিক্ষেপ, দ্রুত হাঁটা, সাইকেল রেস ইত্যাদি ছিল উল্লেখযোগ্য। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক পৃথক বিষয় নির্ধারিত ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ এবং আমন্ত্রিত মহিলাদের জন্য ‘বালিশ খেলা’ ইভেন্টটি অনেক বেশি উপভোগ্য হয়েছিল। এছাড়াও পুরুষ অতিথিদের জন্য ছিল ‘হাঁড়ি ভাঙা’ খেলা। কলেজের শিক্ষকবৃন্দ ও কর্মীদের জন্যও ছিল প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা। ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের পুরস্কৃত করা হয়। প্রতিযোগিতায় ছেলেদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগীর গৌরব অর্জন করে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র মেহেদি হাসান এবং মেয়েদের মধ্যে একাদশ শ্রেণির লিনা হক।

বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদবোধন হয়েছিল সকাল নয়টায়। অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করেছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী মহোদয়। সারাদিন প্রতিযোগিতা চলার পর বিকেল পাঁচটায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয়। অনুষ্ঠানে অভিভাবক ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বহু আমন্ত্রিত অতিথি দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

কলেজের অনেক শিক্ষার্থী এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল। কলেজের ক্রীড়া শিক্ষকের নির্দেশনায় শিক্ষার্থীরা ক্রীড়ানুশীলনের প্রতি দারুণ আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। এ প্রতিযোগিতার বাছাই পর্বে অনেককে বাদ দিতে হয়েছে। তবে ক্রীড়াচর্চায় উৎকর্ষের কিছু অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। সেজন্য কলেজে নিয়মিত খেলাধুলা চর্চার সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রধান অতিথি স্কুল কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তিনি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন।

এবারের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে কলেজের বিশাল মাঠটি সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছিল। প্রতিযোগীদের কুচকাওয়াজ, তোপধ্বনি, পায়রা ওড়ানো ইত্যাদি আনুষ্ঠানিকতা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। পুরো অনুষ্ঠানেই কলেজের শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলার পরিচয় দিয়েছে। কলেজের শিক্ষকবৃন্দও প্রতিযোগীদের আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। সব মিলিয়ে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানটি কলেজের গৌরবজনক ইতিহাসে নতুন মাত্রা সংযোজন করতে সক্ষম হয়েছে।

নিবেদক

মেহেরুন্নাহার রূপা

মানবিক বিভাগ, রোল নম্বর-৮৩

দ্বাদশ শ্রেণি।

[এখানে প্রতিষ্ঠান ও প্রতিবেদকের ঠিকানাসহ খাম আঁকতে হবে]

4. (ক) বাংলা একাডেমির প্রমিত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখো।

অথবা,

(খ) যেকোনো পাঁচটি শব্দের শুদ্ধ বানান লেখো:

মনোপুত, আবিস্কার, শ্রদ্ধাঞ্জলী, সমিচীন, পৈত্রিক, অনুসুয়া, ভূবন, সুধি।

0/5Ctg.B-23

(ক) উত্তরঃ

বাংলা একাডেমির প্রমিত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়মঃ

১. তৎসম অর্থাৎ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অবিকৃত সংস্কৃত শব্দের বানান যথাযথ ও অপরিবর্তিত থাকবে ।
২. যে সব তৎসম শব্দে ই, ঈ বা উ, ঊ উভয়ই শুদ্ধ, সেসব শব্দে কেবল ই বা উ এবং তার -কার চিহ্ন ই-কার, উ-কার ব্যবহৃত হবে । যেমনঃ কিংবদন্তি। 
৩. রেফ-এর পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন: অৰ্চনা; অর্জন।
৪. সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত ম স্থানে অনুস্বার হবে। যেমনঃ অহম + কার = অহংকার ।
৫. শব্দের শেষে বিসর্গ থাকবে না।

(খ) উত্তরঃ

অশুদ্ধশুদ্ধ
মনোপুতমনঃপূত
আবিস্কারআবিষ্কার
শ্রদ্ধাঞ্জলীশ্রদ্ধাঞ্জলি
সমিচীনসমীচিন
পৈত্রিকপৈতৃক
অনুসুয়াঅনুসূয়া
ভূবনভুবন
সুধিসুধী

5. (ক) ‘অ’ ধ্বনি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখো।

অথবা,

(খ) যেকোনো পাঁচটি শব্দের উচ্চারণ লেখো:

বঞ্চিত, ভরসা, অদ্বিতীয়, অধ্যক্ষ, লক্ষ, অরণ্য, আহ্বান, প্রভাত।

0/5Ctg.B-23

(ক) উত্তরঃ

১। শব্দের আদিতে যদি ‘অ’ থাকে এবং তারপরে ‘ই’-কার, ‘উ’-কার, থাকে তবে সে- ‘অ’ এর উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’-কারের মতো হয়। যথাঃ অভিধান (ওভিধান), অভিযান (ওভিজান), অতি (ওতি), মতি (মোতি), অতীত (ওতিত্), অধীন (অধীন্‌) ইত্যাদি।

 ২। শব্দের আদ্য-‘অ’ এর পরে ‘য’-ফলাযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে সেক্ষেত্রে ‘অ’-এর উচ্চারণ প্রায়শ ‘ও’-কারের মতো হয়। যেমনঃ অদ্য (ওদ্‌দো), অন্য (ওন্‌নো), অত্যাচার (ওত্‌তাচার), কন্যা (কোন্‌না), বন্যা (বোন্‌না) ইত্যাদি।

 ৩। শব্দের আদ্য-‘অ’ এর পর ‘ক্ষ’, ‘জ্ঞ’, থাকলে, সে ‘অ’পের উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’-কারের মতো হয়ে থাকে। যথাঃ অক্ষ (ওক্‌খো), দক্ষ (দোক্‌খো), যক্ষ (জোক্‌খো), লক্ষণ (লোক্‌খোন্‌), যজ্ঞ (জোগ্‌গোঁ), লক্ষ (লোক্‌খো), রক্ষা (রোক্‌খা) ইত্যাদি।

 ৪। শব্দের প্রথমে যদি ‘অ’ থাকে এবং তারপর ‘ঋ’-কার যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলেও, সেই ‘অ’-এর উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’-কারের মতো হয়। যথাঃ মসৃণ (মোসৃন্‌), বক্তৃতা (বোক্তৃতা), যকৃত (জোকৃত্‌)।

 ৫। শব্দের প্রথমে ‘অ’ যুক্ত ‘র’-ফলা থাকলে সেক্ষেত্রেও আদ্য ‘অ’-এর উচ্চারণ সাধারণত ‘ও’-কার হয়ে থাকে। যথাঃ ক্রম (ক্রোম), গ্রহ (গ্রোহো), গ্রন্থ (গ্রোন্‌থো), ব্রত (ব্রোতো) ইত্যাদি।

(খ) উত্তরঃ #

শব্দউচ্চারণ
বঞ্চিতবোন্ চিতো
ভরসাঅদ্ দিতিয়ো
অদ্বিতীয়অদ্ দিতিয়ো
অধ্যক্ষওদ্ ধোক্ খো
লক্ষলোকখো্
অরণ্যঅরোন্‌নো.
আহ্বানআওভান্
প্রভাতপ্রোভাত্

6. (ক) ‘উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে’- আলোচনা করো।

অথবা,

(খ) যেকোনো পাঁচটি শব্দের ব্যাসবাক্যসহ সমাস নির্ণয় করো:

অনৈক্য, ছেলেমেয়ে, যথারীতি, দেশান্তর, আশীবিষ, মৌমাছি, কুম্ভকার, পঞ্চনদ।

0/5Ctg.B-23

(ক) উত্তরঃ

বাংলা ভাষায় এমন কতগুলো অব্যয়সূচক শব্দাংশ রয়েছে যা স্বাধীন পদ হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে না কিন্তু অন্য কোনো শব্দের পূর্বে বসে নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত এ ধরনের অব্যয়সূচক শব্দাংশকে উপসর্গ বলে। অর্থাৎ যে অব্যয়সূচক শব্দ বা শব্দাংশ ধাতু বা শব্দের পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন করে সে অব্যয়সূচক শব্দ বা শব্দাংশই হলো উপসর্গ।

উপসর্গের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- এর নিজস্ব কোনো অর্থবাচকতা নেই কিন্তু অন্য শব্দের আগে যুক্ত হলে অর্থদ্যোতকতা সৃষ্টি হয়। যেমন: ‘অ’ একটি উপসর্গ। এটি কোনো নির্দিষ্ট অর্থবাচক শব্দ নয়। তবে অন্য শব্দের আগে বসে এটি অর্থদ্যোতক হয়ে ওঠে। যেমন: ‘কাজ’ শব্দের আগে ‘অ’ উপসর্গটি যুক্ত হলে হয় অকাজ, যার অর্থ- নিন্দনীয় কাজ। এখানে অর্থের সংকোচন হয়েছে। এ রকম ‘পূর্ণ’ (ভরা) শব্দের আগে ‘পরি’ উপসর্গ যোগ করায় ‘পরিপূর্ণ’ হলো। এটি ‘পূর্ণ’ শব্দের সম্প্রসারিত রূপ। ‘হার’ শব্দের সঙ্গে ‘আ’ যুক্ত হয়ে ‘আহার’ (খাওয়া), ‘প্র’ যুক্ত হয়ে ‘প্রহার’ (মারা), ‘বি’ যুক্ত হয়ে ‘বিহার’ (ভ্রমণ), ‘পরি’ যুক্ত হয়ে ‘পরিহার’ (ত্যাগ), ‘উপ’ যুক্ত হয়ে ‘উপহার’ (পুরস্কার), ‘সম’ যুক্ত হয়ে ‘সংহার’ (হত্যা) ইত্যাদি বিভিন্ন অর্থে বিভিন্ন শব্দ তৈরি হয়েছে। – এসব ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো বিভিন্ন অর্থের দ্যোতক। এখানে উল্লেখ্য যে, নাম বা কৃদন্ত শব্দের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে স্বাধীনভাবে থাকলে উপসর্গের কোনো অর্থ নেই। কিন্তু কৃদন্ত বা নাম শব্দের সঙ্গে যুক্ত হলেই আশ্রিত শব্দকে অবলম্বন করে বিশেষ অর্থদ্যোতকতা সৃষ্টি করে। তাই বলা হয়, উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে।

ব্যতিক্রম: বাংলা ভাষায় ‘অতি’ ও ‘প্রতি’ দুটি উপসর্গের কখনো কখনো স্বাধীন প্রয়োগ হতে পারে। যেমন:

ক. মাথা প্রতি পাঁচ-টাকা খরচ।

খ. অতি বাড়া ভালো না।

অর্থাৎ উপসর্গের নিজস্ব কোনো অর্থ না থাকলেও অন্য শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তা শব্দের অর্থের পরিবর্তন, সম্প্রসারণ বা সংকোচন করতে পারে। অতএব, আমরা বলতে পারি উক্তিটি যথার্থ।

(খ) উত্তরঃ

প্রদত্ত শব্দব্যাসবাক্যসমাসের নাম
অনৈক্যন ঐক্যনঞ তৎপুরুষ সমাস
ছেলেমেয়েছেলে ও মেয়েদ্বন্দ্ব সমাস
যথারীতিরীতিকে অতিক্রম না করেঅব্যয়ীভাব সমাস
দেশান্তরঅন্য দেশনিত্য সমাস
আশীবিষআশীতে বিষ যারবহুব্রীহি সমাস
মৌমাছিমৌ (মধু) আশ্রিত মাছিমধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
কুম্ভকারকুম্ভ করে যেউপপদ তৎপুরুষ সমাস
পঞ্চনদপঞ্চ নদীর সমাহারদ্বিগু সমাস

7. (ক) উদাহরণসহ বিশেষণ পদের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো।

অথবা,

(খ) নিচের অনুচ্ছেদ থেকে পাঁচটি বিশেষণ পদ চিহ্নিত করো:

পদ্মা সেতু আর মেট্রোরেল বাংলাদেশের দুটি যুগান্তকারী সাফল্য। প্রমত্তা পদ্মার বুকে অভাবনীয় গৌরবের প্রতীক পদ্মা সেতু। পক্ষান্তরে মেট্রোরেল ঢাকা মহানগরীর দুর্বিষহ যানজট নিরসনে নতুন সংযোজন। গৌরবময় এই দুটি সাফল্য জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে সুদৃঢ় সাহস আর আত্মবিশ্বাসে জাগ্রত করেছে।

0/5Ctg.B-23

(ক) উত্তরঃ

যে শব্দশ্রেণি অন্য শব্দের অর্থকে বিশদ বা সীমিত করে শব্দটিকে বিশেষিত করে, তাকে বিশেষণ বলে। যেমন: লাল টুপি। সুন্দর বাগান ইত্যাদি। বিশেষণ দুইভাগে বিভক্ত। যথা: ১. নাম বিশেষণ, ২. ভাব বিশেষণ।

১. নাম বিশেষণ:

যেসব বিশেষণ অন্য কোনো বিশেষ্য বা সর্বনামকে বিশেষিত করে অর্থাৎ গুণ, দোষ, অবস্থা, সংখ্যা ও পরিমাণ বোঝায়, সেগুলোকে ‘নাম বিশেষণ’ বলে। যেমন: • বিশেষ্যের বিশেষণ অনেক মাছ উঠেছে আজ বাজারে। • সর্বনামের বিশেষণ তিনি রূপবান ও গুণবান।

২. ভাব বিশেষণ:

যেসব বিশেষণ বিশেষ্য ও সর্বনাম ছাড়া অন্য শব্দশ্রেণিকে বিশেষিত করে অর্থাৎ অবস্থা, সময় ও ভাব বোঝায়, সেগুলোকে ভাব বিশেষণ বলে। ভাব বিশেষণ দুই প্রকার। যথা: • ক. ক্রিয়া বিশেষণ ও • খ. বিশেষণের বিশেষণ।

ক. ক্রিয়া বিশেষণ: বাংলায় যে শব্দশ্রেণি ক্রিয়া সংঘটনের ভাব, কাল বা রূপ নির্দেশ করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে।

যেমন: • ক্রিয়া সংঘটনের ভাব: আস্তে আস্তে পানি বাড়ে। • ক্রিয়া সংঘটনের কাল পরে একবার এসো।

খ. বিশেষণের বিশেষণ: যে বিশেষণ অন্য বিশেষণকে বিশোষিত করে তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে।

যেমন: • নাম বিশেষণের বিশেষণ: এই কারণে সে অতিশয় মর্মাহত। • ক্রিয়া বিশেষণের বিশেষণ: রকেট অতি দ্রুত চলে।

(খ) উত্তর:

(i) দুটি; (ii) যুগান্তকারী; (iii) প্রমত্তা; (iv) অভাবনীয়; (v) দুর্বিষহ; (vi) নতুন; (vii) গৌরবময়; (viii) সুদৃঢ়।

8. (ক) বাক্য কাকে বলে? গঠন অনুসারে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো।

অথবা,

(খ) নির্দেশ অনুসারে যেকোনো পাঁচটি বাক্যান্তর করো:

i. সে চুপ রইল। (নেতিবাচক)

ii. দেশপ্রেমিক ব্যক্তি দেশকে ভালোবাসে। (যৌগিক)

iii. আমি মিথ্যা বলিনি। (অস্তিবাচক)

iv. বিদ্বানকে সবাই শ্রদ্ধা করে। (প্রশ্নবাচক)

v. স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত। (অনুজ্ঞাসূচক)

vi. ভোরের বাতাস নির্মল। (বিস্ময়সূচক)

vii. শিক্ষক আসা মাত্রই শিক্ষার্থীরা উঠে দাঁড়াল। (জটিল)

viii. জননী ও জন্মভূমি কি স্বর্গের চেয়েও প্রিয় নয়। (নির্দেশাত্মক)

0/5Ctg.B-23

(ক) উত্তরঃ

যে সুনিব্যস্ত পদ বা পদসমষ্টি দ্বারা কোনো বিষয়ে বক্তার সম্পূর্ণ মনোভাব প্রকাশ পায়, তাকে বাক্য বলে।

গঠন অনুসারে বাক্যকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

  • সরল বাক্য।
  • জটিল বা মিশ্র বাক্য।
  • যৌগিক বাক্য।

সরল বাক্য- যে বাক্যে একটি কর্তা এবং একটি ক্রিয়া থাকে, তাকে তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন – রহিমা ফুল তুলছে। এখানে রহিমা কর্তা এবং তুলছে ক্রিয়া। এই বাক্যে একটি কর্তা এবং একটি ক্রিয়া।

জটিল বা মিশ্র বাক্য- যে বাক্যে একটি প্রধান খন্ডবাক্যের সাথে এক বা একাধিক আশ্রিত বাক্য পরস্পর যুক্ত হয়ে বাক্য গঠন করে। তাকে জটিল বা মিশ্র বাক্য বলে।

যেমন – তুমি যদি আসো, আমি যাবো। যে ব্যক্তি পরিশ্রম করে, সে ব্যক্তি সুখ লাভ করে।

যৌগিক বাক্য: পরস্পর নিরপেক্ষ একাধিক সরলবাক্য যখন অর্থ ও গঠন অপরিবর্তিত রেখে সংযোজক অব্যয়ের দ্বারা মিলিত হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্য গঠন করে। তাকে যৌগিক বাক্য বলে।

যেমন – রাহিমা অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী কিন্তু নিয়মিত ক্লাস করে না। লোকটি গরীব কিন্তু সৎ।

(খ) উত্তরঃ

i. সে চুপ রইল। (নেতিবাচক)

উত্তর: সে কোনো কথা বলল না ।

ii. দেশপ্রেমিক ব্যক্তি দেশকে ভালোবাসে। (যৌগিক)

উত্তর: তিনি দেশপ্রেমিক তাই দেশকে ভালোবাসেন।

iii. আমি মিথ্যা বলিনি। (অস্তিবাচক)

উত্তর: আমি সত্য বলছি।

iv. বিদ্বানকে সবাই শ্রদ্ধা করে। (প্রশ্নবাচক)

উত্তর: বিদ্বানকে কি সবাই শ্রদ্ধা করে না ?

v. স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত। (অনুজ্ঞাসূচক)

উত্তর: স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হও।

vi. ভোরের বাতাস নির্মল। (বিস্ময়সূচক)

উত্তর: ভোরের বাতাস কি নির্মল !

vii. শিক্ষক আসা মাত্রই শিক্ষার্থীরা উঠে দাঁড়াল। (জটিল)

উত্তর: যখনই শিক্ষক আসলেন তখনই শিক্ষার্থীরা উঠে দাঁড়াল।

viii. জননী ও জন্মভূমি কি স্বর্গের চেয়েও প্রিয় নয়। (নির্দেশাত্মক)

উত্তর: জননী ও জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও প্রিয়।

9. ক) সারাংশ লেখো:

বিদ্যা মানুষের মূল্যবান সম্পদ, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। কিন্তু চরিত্র তদপেক্ষাও মূল্যবান। অতএব, কেবল বিদ্বান বলিয়াই কোনো লোক সমাদর লাভের যোগ্য বলিয়া বিবেচিত হইতে পারে না। চরিত্রহীন ব্যক্তি যদি নানা বিদ্যায় আপনার জ্ঞানভাণ্ডার পূর্ণ করিয়াও থাকে, তথাপি তাহার সঙ্গ পরিত্যাগ করাই শ্রেয়। প্রবাদ আছে যে, কোনো কোনো বিষধর সর্পের মস্তকে মণি থাকে। মণি মহামূল্যবান পদার্থ বটে, কিন্তু তাই বলিয়া যেমন মণি লাভের নিমিত্ত বিষধর সর্পের সাহচর্য লাভ করা বুদ্ধিমানের কার্য নহে, সেইরূপ বিদ্যা আদরণীয় হইলেও বিদ্যালাভের নিমিত্ত বিদ্বান দুর্জনের নিকট গমন বিধেয় নহে।

অথবা,

(খ) ভাবসম্প্রসারণ করো: পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিকই পথের সৃষ্টি করে।

0/10Ctg.B-23

(ক) উত্তরঃ

সারাংশ: চরিত্র মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ অলংকার এবং তা বিদ্যার চেয়েও অধিক মূল্যবান । চরিত্রহীন ব্যক্তি বিদ্বান হলেও তার সঙ্গ পরিত্যাগ করা উচিত। কেননা, দুর্জনের সাহচর্যে সচ্চরিত্র ব্যক্তির চরিত্রও কলুষিত হতে পারে।

(খ) উত্তরঃ

মূলভাবঃ

জগতের খ্যাতিমান ব্যক্তিরা নিজেদের জীবনের পথ নিজেরাই সৃষ্টি করে নেয়। অপরের সৃষ্ট পথ অনুসরণ করে না। 

সম্প্রসারিত ভাবঃ

মানুষের সব ধরনের সৃষ্টির মূলেই রয়েছে তার চেষ্টা। চেষ্টা দ্বারাই মানুষ অসাধ্যকে সাধন করেছে। পথিকমাত্রই তার সুবিধামতাে চলার পথ সৃষ্টি করে নেয় এবং চেষ্টা-সাধনা বলে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে। সুতরাং পথিক ও পথ এ দুটি পরস্পর পরস্পরের সাথে সম্পৃক্ত। পথ ছাড়া যেমন পথিক চলতে পারে না ঠিক তেমনই পথিক ছাড়া পথেরও কোনাে মূল্য থাকে না। তবে পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিককেই তার পথ সৃষ্টি করে নিতে হয়। পথিক যে নির্দিষ্ট পথ দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে, সেখানেই পথের সৃষ্টি হয়। এ পথ একদিনে সৃষ্টি হয় না। 

পথিকের অনবরত যাতায়াতের ফলে চরণাঘাতে পথের জঞ্জাল বিদূরিত হয়। অর্থাৎ বারবার পায়ের আঘাতে সবুজ ঘাস সজীবতা হারিয়ে ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং একটি সুগম, পথের সৃষ্টি করে। পথের মতাে মানবজীবনও নানা সমস্যায় জর্জরিত। এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য পথিকের মতাে মানুষকেও প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যেতে হয়। তবেই সে সফলতা লাভ করে। কোনাে মানুষের জীবনেই সফলতা এমনি এমনি আসে না। সফলতা পেতে হলে তাকে প্রচুর পরিশ্রম ও সাধনা করতে হয়। এই পরিশ্রম ও সাধনার বলেই মানুষ আজ সভ্যতার সর্বোচ্চ শিখরে আরােহণ করতে সক্ষম হয়েছে। 

মহাপুরুষদের জীবনী পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, তাদের জীবনে সফলতা এমনি এমনি আসেনি। এ সফলতা অর্জনের জন্য তাদেরকে প্রচুর ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং অবর্ণনীয় দুঃখকষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। কাজেই জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও সফলতা অর্জন করতে হলে একাগ্র সাধনা ও চেষ্টা দ্বারা সকল বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। মানুষ নিজেই স্বীয় সৌভাগ্যের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক। মানুষ সাধনা দ্বারা অসাধ্য সাধন করে, চলার পথ সুগম করার জন্য শত বাধাবিপত্তি মােকাবিলা করে। ফলশ্রুতিতে সে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। 

মন্তব্যঃ

মানুষ সাধনা বলে তার প্রয়ােজনীয় জিনিস সৃষ্টি করে, চলার পথ মসৃণ করার জন্য শত বাধাবিপত্তি মােকাবিলা করে।

10. (ক) যেকোনো দশটি শব্দের পারিভাষিক রূপ লেখো:

Walkout, Vehicle, Dialogue, Ethics, Generation, Highway List, Mail, Plant, Manuscript, Quantity, Renew, Skill Tradition, Urban.

অথবা,

(খ) নিচের অনুচ্ছেদটি বাংলায় অনুবাদ করো:

Trees are our friends. It helps us in different ways. It gives us shade, food, fuel, medicine and oxygen. Trees make our environment beautiful. Trees are our valuable wealth. It is very much necessary to make afforestation programme successful.

0/10Ctg.B-23

(ক) উত্তরঃ

ইংরেজি শব্দপারিভাষিক শব্দইংরেজি শব্দপারিভাষিক শব্দ
Walkoutসভা বর্জনPlantউদ্ভিদ
VehicleযানবাহনManuscriptপাণ্ডুলিপি
Dialogueসংলাপ , কথোপকথনQuantityমাত্রা , পরিমাণ
Ethicsনীতিশাস্ত্রRenewনবায়ন
Generationউৎপাদান, প্রজন্মSkillদক্ষতা
Highwayমহাসড়ক , জনপথUrbanপৌর
Mailবাক ব্যবস্থাTraditionঐতিহ্য
Listতালিকা

(খ) উত্তরঃ

বঙ্গানুবাদ: গাছ আমাদের বন্ধু। এটি নানাভাবে আমাদের উপকার করে। এটি আমাদের বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। এটি আমাদের ছায়া, খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ এবং অক্সিজেনের জোগান দেয়। এটি প্রকৃতির সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে। বৃক্ষ আমাদের মূল্যবান সম্পদ, তাই সরকার বৃক্ষরোপণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।

11. (ক) একটি ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা করো।

অথবা,

(খ) গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়ানো বিষয়ে একটি খুদেগল্প রচনা করো।

0/10Ctg.B-23

(ক) উত্তরঃ

ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপঃ

সুমন : হ্যালো সৌমিক, কেমন আছিস?

সৌমিক : ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?

সুমন : ভালো। আচ্ছা তোর কি এই শুক্রবারে কোনো কাজ আছে?

সৌমিক : নাতো। কেন?

সুমন : তাহলে চল ময়নামতির ‘শালবন বৌদ্ধ বিহার’ থেকে ঘুরে আসি।

সৌমিক : কুমিল্লা যেতে চাচ্ছিস?

সুমন : হ্যাঁ।

সৌমিক : আচ্ছা ওখানে কী কী আছে দেখার মতো?

সুমন : ময়নামতি জাদুঘর, শালবন বিহার ও শালবন বৌদ্ধ বিহার।

সৌমিক : আচ্ছা, এই বিহারটি কে নির্মাণ করেন।

সুমন : সপ্তম শতাব্দীর শেষ দিকে দেব বংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদের এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন।

সৌমিক: বিহারটি দেখতে কেমন?

সুমন : এটি চৌকো আকৃতির। এই প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ। বিহারের ১১৫টি কক্ষ আছে। কক্ষের সামনে আছে ৮.৫ ফুট চওড়া টানা বারান্দা ও তার শেষ প্রান্তে অনুচ্চ দেওয়াল। মন্দিরটির অবস্থান বিহারের একদম মাঝখানে। নির্মাণের সময় বিহার থেকে বের হওয়ার একটিই মাত্র পথ ছিল।

সৌমিক : এতদিন পরও সব আগের মতোই আছে?

সুমন : না অনেক কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে কিন্তু অবয়ব এখনো টিকে আছে। তাছাড়া মাটি খুঁড়ে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়ামাটির ফলক, সিলমোহর, ব্রোঞ্জ ও মাটির মূর্তি পাওয়া গেছে।

সৌমিক : তাহলে তো দেখার মতো অনেক কিছু আছে।

সুমন : হ্যাঁ। সেখানে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক ভিড় করে এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখার জন্য।

সৌমিক : ঠিক আছে তাহলে আগামী শুক্রবার আমরাও ময়নামতি যাচ্ছি এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে।

সুমন : আচ্ছা। তাহলে আগামী শুক্রবার সকালে আসিস। দেখা সুমন : হচ্ছে। ভালো থাকিস।

সৌমিক: তুইও ভালো থাকিস।

(খ) উত্তরঃ

সাগরের অনেক দিন থেকেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়ানোর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তা হয়ে ওঠেনি। যখন গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে তার কলেজ বন্ধ হয় তখন তার বাড়ি যাওয়ার জন্য মন অস্থির হয়ে ওঠে। তাই পরিবারের সকলের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যায়। গ্রামে সাগরের কিছু বন্ধু আছে। সাগর গ্রামে গিয়েই তাদের নিয়ে সারা দিন হইচই করে বেড়ায়। নদীতে মাছ ধরে, গ্রামের মাঠে ফুটবল, গোল্লাছুট খেলে আর ভোরবেলায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে আম-জামসহ নানা ফলমূল কুড়িয়ে আনে। তাদের দলের মধ্যে সবুজ আর শাকিল ছিল সবার চেয়ে দুষ্ট। ওরা মানুষকে জ্বালাতন করে মজা পায়। হঠাৎ একদিন সাগরের বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নেয় রাতে জব্বার চাচার বাড়ি থেকে হাঁস এনে বনভোজনের আয়োজন করবে। যে কথা সেই কাজ। প্রতিবারের ন্যায় এবারও বনভোজনের আয়োজন হলো সাকিবদের. বাড়ির পেছনের আমবাগানে। তারা সবাই নিজ বাড়ি থেকে চালডাল, লবণ, পেঁয়াজ-রসুন, মরিচ-হলুদ নিয়ে আসে। তাদের মধ্যে নাহিদ ছিল রান্নায় সিদ্ধহস্ত। সে সানন্দে রান্নার দায়িত্ব গ্রহণ করে। সে যেহেতু রান্না করবে তাই বাসা থেকে কিছু নিয়ে আসেনি। তাদের মধ্যে আনন্দ ভোজন রসিক। সে একাই একটা হাঁস সাবাড় করে দিতে পারে’। এজন্য বনভোজনের সময় সে বাসা থেকে সবচেয়ে বেশি জিনিস আনে। বনভোজন শেষ হলে যে যার বাড়িতে চলে যায়। পরের দিন দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমবাগানে সবাই আড্ডা দিচ্ছে এমন সময় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে বাতাস বইতে শুরু করে। ঝড়ো হাওয়ায় সবাই হই-হুল্লোড় করে আম কুড়াতে শুরু করে। ঝড়ের মধ্যে বাইরে থাকলে মা-বাবা বকা দেবে তাই সবাই বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। সারা দিন ঘোরাঘুরি, আড্ডা আর আম কুড়িয়ে সবাই বাসায় ফেরার পর বাবা-মায়ের বকুনি খাওয়ার পালা শুরু হয়। সাগরের মা অবশ্য বেশি বকাঝকা করেননি। শুধু কয়েকবার রাগান্বিত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন- কোথায় ছিলি সারা দিন? সাগর দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করে। তারপর মা ধমক দিয়ে বলেন- ‘যা, রুমে গিয়ে পড়তে বস।’ সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ে নাহিদ। ওর বাবা মারতে আসলে ও দৌড়াতে দৌড়াতে সাগরদের বাড়ি এসে আশ্রয় নেয়। সাগরের বাড়িতে রাতে থেকে পরের দিন পরিস্থিতি ঠিক হলে নাহিদ বাড়ি যায়। দুপুরে বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নেয় আজ তারা নদীর পাড়ে আড্ডা দিতে যাবে। গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এভাবেই সাগরের দিন পার হয়।

প্রবন্ধ রচনা (5)

1. নারীর ক্ষমতায়ন।

0/20Ctg.B-23

ভূমিকা: একবিংশ শতাব্দীতে সারা বিশ্ব যে বিষয়গুলো আলোচনার ঝড় তুলেছে নারীর ক্ষমতায়ন এর মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে নারীর যে মানবেতর অবস্থান কেবল তা থেকে মুক্তিই নয়, সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রিক যে- কোনো ধরনের সমস্যা সমাধান ও নীতি নির্ধারণে নারীর অংশগ্রহণকে অন্যতম অপরিহার্য বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

ক্ষমতায়ন কী?: ‘ক্ষমতায়ন’ শব্দটি তুলনামূলকভাবে নতুন। ক্ষমতায়ন বলতে মূলত বোঝায় নারীর স্বাধীনতা ও সকল ক্ষেত্রে অধিকার প্রতিষ্ঠা, বিশেষ করে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা। ক্ষমতা হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ- বস্তুগত, মানবিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ। নারীর ক্ষমতায়নের অর্থই হলো, সমাজের প্রতিটি স্তরে এমন একটি সুস্থ পরিবেশ থাকবে যেখানে নারী আপন মহিমায় স্বাধীন ও মর্যাদার অধিকারী হয়ে উঠবে; নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে বস্তুগত, মানবিক ও জ্ঞান সম্পদের উপর। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া নারীর শিক্ষা প্রসার এবং দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার তাগিদ দিয়েছেন। নারী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী সুফিয়া কামালও নারীর বন্ধনমুক্তি ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন।

নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্য: শিশুকাল থেকে নারীর ভেতর বপন করা হয় নীচতার এক বীজ। এর জন্যে অনেকখানি দায়ি পিতৃতান্ত্রিক মতাদর্শ, ধর্মীয় গোঁড়ামি। ক্ষমতায়নের লক্ষ্যই হলো পিতৃতান্ত্রিক মতাদর্শ ও অধস্তনতার অনুশীলনকে রূপান্তর করা। একমাত্র সম-অংশীদারিত্বেই ক্ষমতায়নের ভিত্তি প্রস্তুত হয়। নারীর ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া পুরুষের বিরুদ্ধে নয়, পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্য নির্যাতক ও শোষকের অবস্থান থেকে পুরুষকে মুক্ত করা। বিদ্যমান সমাজে পুরুষের দায়িত্বের পাশাপাশি নারীর দায়িত্ব প্রতিষ্ঠা, পুরুষের অধিকারের পাশাপাশি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা। সম অধিকার ও দায়িত্বের ভিত্তিতে পুরুষরা গৃহস্থালি ও সন্তান লালন-পালনে সমানভাবে অংশগ্রহণ করবে, পাশাপাশি নারীরাও পুরুষের দায়িত্ব পালনে সমানভাবে অংশ নেবে। ১৯৯৪ সালে অনুষ্ঠিত কায়রো সম্মেলনে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টিকেই বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়। ১৭৯টি দেশের অংশগ্রহণে ১১৫ পৃষ্ঠার একটি প্রস্তাবনায় সাম্য, ন্যায়বিচার, সন্তান ধারণের প্রশ্নে নারীর ইচ্ছার প্রাধান্য, নারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রভৃতি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে প্রতিবন্ধকতা: দু-একজন নারী সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা মুক্ত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেই নারীর ক্ষমতায়ন হয় না। নারীর ক্ষমতায়ন দেশের জনসংখ্যার শতকরা ৫০ ভাগ যে নারী তাদের সঠিক ক্ষমতায়নকে বোঝায়। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। প্রধান দুটি প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে:

ক. প্রচলিত মূল্যবোধ ও আইনের সীমাবদ্ধতা: সমাজে প্রচলিত মূল্যবোধ নারীকে পুরুষের অধস্তন করে রাখে। শিশুবয়স থেকেই নারী দেখে সমাজে পুরুষদের প্রভাব। শিশুকাল থেকেই সে আচার-আচরণ, পোশাক, চলাফেরা ও কথা বলার ধরন প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিভিন্নধর্মী নিয়মের জালে আবদ্ধ হয়ে যায়। পিতৃতন্ত্রের পক্ষে এমন সব মূল্যবোধ তৈরি হয় যা নারীকে ছুড়ে ফেলে দেয় অন্ধকার আবর্তে। নারী শিক্ষার সুযোগ পায় না, স্বাবলম্বী হতে পারে না; সর্বোপরি আর্থিক বা মানসিকভাবে তাকে পুরুষের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়। প্রচলিত আইনও নারীর বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। সংবিধানে নারী-পুরুষের সম অধিকারের কথা বলা হলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ হচ্ছে না। যৌতুক, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ প্রভৃতি অপরাধে শাস্তির বিধান থাকলেও আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায় অপরাধী। সম্পত্তির উত্তরাধিকার, বিয়ে, বিবাহ- বিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব- সব ক্ষেত্রেই আইনের কাঠামোগত দুর্বলতায় নারী হয় বঞ্চিত। দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে যে সন্তানকে সে জন্ম দেয়, বড় করে, সে সন্তানের অভিভাবকত্ব পায় না নারী। সম্প্রতি বাবার নামের পাশাপাশি মায়ের নামের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। সম্পত্তির ক্ষেত্রে মুসলিম আইনে নারী পুরুষের অর্ধেক পায়, হিন্দু নারীরা কিছুই পায় না।

খ. পশ্চাৎপদ রক্ষণশীল ধর্মান্ধ মানসিকতা: সমাজে রক্ষণশীল মনোভাবাপন্ন কিছু লোক নারীকে সর্বক্ষেত্রে অবদমিত করে রাখতে চায়। নারীমুক্তিকে তারা ধর্মের চরম অবমাননা বলে ভাবে। কুসংস্কারে আচ্ছন্ন নিয়মের জালে তারা নারীসমাজকে আবদ্ধ করে রাখতে চায়। আজও গ্রামবাংলার বহু নারী রক্ষণশীল ধর্মীয় মনোভাবাপন্ন কিছু লোকের ফতোয়ার শিকার। এটি নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা।

প্রচার মাধ্যমগুলোতে নেতিবাচক ভাবে নারীকে উপস্থাপন: প্রচার মাধ্যমগুলোতে নারীকে সবসময় পুরুষের অধস্তন হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। বিজ্ঞাপন চিত্রে অহেতুক নারীর উপস্থিতি টেনে আনা হয়। চলচ্চিত্র কিংবা নাটনে নারীকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন শাড়ি কিংবা গয়না ছাড়া নারীদের আর কিছুই চাইবার নেই। গণমাধ্যমে নারীকে হীনভাবে উপস্থাপন করার জন্যে নারীরাও অনেকাংশে দায়ী।

-ক. নারীর স্বার্থ রক্ষাকারী আইন প্রবর্তন: বিয়ে, বিবাহ-বিচ্ছেদ, সন্তান ধারণে পূর্ণ স্বাধীনতা, সম্পত্তিতে সম অধিকার, সন্তানের অভিভাবকত্ব প্রভৃতি বিষয়ে সনাতন আইন পালটে নারী-পুরুষের সমান স্বার্থ রক্ষাকারী আইন প্রবর্তন করতে হবে।

-খ. শিক্ষার ব্যাপক সুযোগ ও রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ: নারীকে নিজ নিজ অধিকার ও ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন করে তোলার জন্যে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। নারীকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় নীতি-নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী সতামতের প্রাধান্য দিতে হবে।

-গ. প্রচার মাধ্যমগুলোতে নারীকে সম্মানজনকভাবে উপস্থাপন: প্রচার মাধ্যমে নারীকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা চলবে না। যথাযোগ্য সম্মানের সাথে এবং রুচিসম্মতভাবেই গণমাধ্যমগুলোতে আসবে নারী চরিত্র।

-ঘ. নারীর কাজের স্বীকৃতি: নারীকে তার কাজের যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হবে। সন্তান লালন ও গৃহস্থালি কাজকে কিছুতেই ছোট করে দেখা চলবে না। বরং পুরুষকেও এসব কাজে সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে যাতে নারী-পুরুষ উভয়ই ঘরে-বাইরে সমানভাবে কাজে অংশ নিতে পারে।

-ঙ. রক্ষণশীল মানসিকতার পরিবর্তন: ধর্মকে পুঁজি করে রক্ষণশীলদের যে ফতোয়াবাজি তা বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।

উপসংহার: এঙ্গোলস তাঁর ‘অরিজিন অব দ্যা ফ্যামিলি গ্রন্থে বলেছেন, “নারী মুক্তি তখনই সম্ভব যখন নারীরা সমাজের প্রতিটি কমংকাণ্ডে সমগুরুত্ব নিয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।” আর নারীকে মুক্তি দেওয়ার জন্যে, নারীর উন্নয়নের জন্যে, এক একথায় নারীর ক্ষমতায়নের জন্যে দরকার সব ধরনের প্রতিবন্ধকতার অবসান। প্রয়োজন শিক্ষার প্রসার ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি। নারী স্বাধীনতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও মতামত প্রদানে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে নারীর ক্ষমতায়নে আর কোনো অপশক্তিই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।

2. দেশপ্রেম।

0/20Ctg.B-23

ভূমিকা: স্বদেশ মানুষের কাছে পরম সাধনার ধন, পরম নিবাস। স্বদেশের মানুষ, স্বদেশের রূপ-প্রকৃতি, তার পশু-পাখি এমনকী তার প্রতিটি ধূলিকণাও মানুষের কাছে প্রিয় ও পবিত্র। যে দেশ আলো দিল, বাতাস দিল, অন্ন-পানি দিল, বস্ত্র দিল, তার প্রতি যদি সেই শ্যামল স্নেহে প্রতিপালিত সন্তানদের মমতামণ্ডিত আনুগত্যবোধ না থাকে, তবে তারা কেবল অকৃতজ্ঞই নয়, বিশ্বের সকল নিন্দনীয় বিশেষণে বিশেষিত।

স্বদেশপ্রেম: যে ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিবেশের মধ্যে মানুষ জন্মগ্রহণ করে এবং বড়ো হয়ে ওঠে, সে পরিবেশের প্রতি, সেখানকার মানুষের প্রতি তার একটি স্বাভাবিক আকর্ষণ গড়ে ওঠে। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি এ আজন্ম আকর্ষণই স্বদেশপ্রেম। স্বদেশপ্রেম সকলের অন্তরেই থাকে। কখনও এ প্রেম থাকে সুপ্ত অবস্থায়, কখনও থাকে তা সুপ্রকাশিতভাবে। সুখের দিনে স্বদেশপ্রেম থাকে সুপ্তিমগ্ন। কিন্তু দুঃখের দিনে আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে স্বদেশপ্রেম উদ্দীপিত হয়ে ওঠে। পরাধীনতার দুঃখ-বেদনায়, বিদেশিদের অকথ্য নির্যাতনে অন্তরের সুপ্ত স্বদেশপ্রেমের ঘুম ভাঙে। কিংবা দেশ যখন শত্রুর আক্রমণে পর্যুদস্ত হয়, তখন সমগ্র জাতি স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বদেশের ও স্বজাতির মানমর্যাদা রক্ষাকল্পে রণক্ষেত্রে প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার জন্য দলে দলে ছুটে যায়। তখন মনে হয়- ‘নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই।’

স্বদেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ও উন্মেষ: প্রকৃতপক্ষে স্বদেশপ্রেমের উদ্ভব আত্মসম্মানবোধ থেকে। যে জাতির আত্মসম্মানবোধ যত প্রখর, সে জাতির স্বদেশপ্রেম তত প্রবল। স্বদেশপ্রেম এক প্রকার পরিশুদ্ধ ভাবাবেগ। নিঃস্বার্থ, হিংসাবিহীন দেশপ্রেমই প্রকৃত স্বদেশপ্রেম। ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র স্বার্থের গণ্ডি উপেক্ষা করে বৃহত্তর স্বার্থের দিকে মন যখন পরিচালিত হয়; যখন আত্মকল্যাণ অপেক্ষা বৃহত্তর কল্যাণবোধ সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন জ্বলে ওঠে স্বদেশের প্রতি ভালোবাসার নিষ্কলুষ প্রদীপ শিখা। দেশপ্রেমিকের দেশ সেবার পথে বাধা অনেক, অত্যাচার সীমাহীন। কিন্তু পথের ঝড়, ঝঞ্ঝা, বজ্রপাত তাদের দৃঢ় বলিষ্ঠ পদক্ষেপের নিকট মিথ্যে প্রমাণিত হয়। ইতিহাসের পানে তাকালে এর ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত মেলে। পরদেশি কিংবা স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু কিংবা উদ্যত অস্ত্র তাদের নিবৃত্ত করতে পারে না। আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাসও স্বদেশপ্রেমের গর্বে গর্বিত। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং সর্বশেষে ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান আমাদের স্বদেশপ্রেমের প্রমাণ দেয়।

অন্ধ স্বদেশপ্রেমের পরিণতি: স্বদেশপ্রেম দেশ ও জাতির গৌরবের বস্তু হলেও অন্ধ স্বদেশপ্রেম বা উগ্র জাতীয়তাবাদ ধারণ করে ভয়ংকর রূপ। জাতিতে জাতিতে সংঘাত ও সংঘর্ষ অনিবার্য করে তোলে অন্ধ স্বদেশপ্রেম। আমরা স্বদেশের জয়গান গাইতে গিয়ে যদি অপরের স্বদেশপ্রেমকে আহত করি, তবে সেই স্বদেশপ্রেম বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্যে ডেকে আনে ভয়াবহ রক্তাক্ত দ্বন্দ্ব-সংঘাত। হিটলারের তৎকালীন জার্মানি কিংবা মুসোলিনির ইতালি উগ্র-জাতীয়তাবাদের নগ্নরূপ। চলমান বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্র কর্তৃক দুর্বল রাষ্ট্রসমূহের প্রতি আগ্রাসী মনোভাব অন্ধ স্বদেশপ্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ।

দেশপ্রেম ও রাজনীতি: বস্তুত রাজনীতিবিদের প্রথম ও প্রধান শর্তই হলো দেশপ্রেম। স্বদেশপ্রেমের পবিত্র বেদিমূলেই রাজনীতির পাঠ। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ রাজনীতিবিদ দেশের সদাজাগ্রত প্রহরী। পরাধীন বাংলাদেশের দিকে দিকে যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গড়ে উঠেছিল, তাদের সকলেরই মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল পরাধীনতার বন্ধন থেকে দেশজননীর শৃঙ্খল-মোচন। তাদের অবদানেই আজ দেশ স্বাধীন। আজও দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বর্তমান। রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে এখনও কত নতুন দলের আবির্ভাব ও নিষ্ক্রমণ। কিন্তু আজ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই মহত্তর, বৃহত্তর কল্যাণবোধ থেকে ভ্রষ্ট। রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন ব্যক্তিগত এবং দলীয় স্বার্থ চিন্তাই অনেক ক্ষেত্রে প্রবল। দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে, মানুষের প্রয়োজনে সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়ার সাধনা, দেশপ্রেমের অঙ্গীকার ও সার্থকতা এখন প্রায়ই অনুপস্থিত। সংকীর্ণ রাজনীতিসর্বস্ব দেশপ্রেম প্রকৃতপক্ষে ধ্বংস ও সর্বনাশের পথকেই করে প্রশস্ত।

স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বভাবনা: যথার্থ দেশপ্রেমের সাথে বিশ্বপ্রেমের কোনো অমিল নেই, নেই কোনো বিরোধ, বরং স্বদেশপ্রেমের ভেতর দিয়ে বিশ্বপ্রেমের এক মহৎ উপলব্ধি, জাগরণ। স্বদেশ তো বিশ্বেরই অন্তর্ভুক্ত। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে মানুষ বিশ্বপ্রেমের এ বাণীকে জাতীয় জীবনে গ্রহণ করলেই সংকীর্ণ অন্ধ জাতীয়তাবোধ থেকে আমাদের মুক্তি। বিশ্বপ্রেমের উজ্জ্বল আলোকে আমাদের স্বদেশপ্রেম হবে উদ্ভাসিত। আমরা স্বদেশকে ভালোবেসে বিশ্বদেবতারই বন্দনা করি। আজ যখন বিশ্বের সর্বত্র গণতন্ত্রের প্রবল জোয়ার এসেছে তখন বিশ্ব নাগরিকত্বের চেতনা হবে তাকে যথার্থভাবে গ্রহণ করা। স্বদেশ-চেতনা তো বিশ্ববোধেরই প্রাথমিক শর্ত। দেশের জল-মাটি-অরণ্য-পশুপাখি-মানুষ-সংস্কৃতিকে ভালোবাসতে পারলে পৃথিবীর মানুষকেও ভালোবাসা যায়। তখনই তার মধ্যে জন্ম নেয় বিশ্বাত্মবোধ।

উপসংহার: দেশপ্রেম আমাদের মনের জ্বলন্ত অগ্নিশিখা। সেই অনলে অন্তরের যত কিছু পাপবোধ, যা কিছু ক্ষুদ্র, গ্লানিময় তার আহূতিদানেই আমাদের জীবন পরিশুদ্ধ হয়। এক মহৎ চেতনার বিভায় মানব-জন্ম হয় ভাস্বর। মানুষের জীবনে যদি দেশপ্রেমের চেতনা না থাকে, যদি বৃহত্তর কল্যাণবোধ থাকে অসুন্দরের ছদ্মবেশে আচ্ছন্ন, তাহলে হৃদয়ের কোন ঐশ্বর্য নিয়ে মানুষ মহৎ হবে? বৃহৎ হবে কোন সম্পদ নিয়ে? কোথায় তাহলে জীবনের মহিমা? কোথায় সেই উন্নত উত্তরাধিকার? দেশপ্রেম তো শুধু কতগুলো প্রাণহীন শব্দসমাহার নয়, নয় কোনো নিছক বিমূর্ত আদর্শ। স্বদেশপ্রীতির মধ্যেই মনুষ্যত্বের উদ্বোধন, মহৎ জীবনের সংকল্প, বিশ্বভ্রাতৃত্বের বন্ধন।

3. দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।

0/20Ctg.B-23

ভূমিকা:

বর্তমান উন্নত সভ্যতা মানুষের দীর্ঘ শতাব্দীর সাধনার ফলাফল। এই বিজ্ঞান আমাদের গুহা মানব পূর্বপুরুষদের দ্বারা অগ্রণী ছিল। বিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়েছিল যেদিন থেকে তারা পাথরের মধ্যে ঘর্ষণের মাধ্যমে আগুন আবিষ্কার করেছিল। বর্তমানে সভ্যতা ও বিজ্ঞান একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানুষ প্রতি মুহূর্তে বিজ্ঞানের দিকে ঝুঁকছে। আজকের মানুষ ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের ওপর নির্ভর। এই বিজ্ঞান এখন আকাশ-পাতাল সব জাগায় ছড়িয়ে আছে। তাই আজ বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া জীবন প্রায় মৃত্যুতে পরিণত হয়েছে।

বর্তমান জীবনের বিজ্ঞান নির্ভরতা:

মহান বিজ্ঞানীদের সাধনা এবং গবেষণার ফলে আমরা আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সহজেই পাচ্ছি। বিজ্ঞান ছাড়া আজ আমরা কিছু ভাবতে পারি না, এককভাবে পদক্ষেপও নিতে পারি না। যে ঘড়িটি আপনাকে ভোরবেলা ঘুম থেকে জাগায়, তারপর দাঁত মাজার জন্য টুথব্রাশ, এগুলো সবকিছুই বিজ্ঞানের আবিষ্কার। তারপর চা, রান্নার হিটার, খবরের কাগজ, মিলের তৈরি জামাকাপড়, বিনোদনের জন্য সিনেমা, টেলিভিশন, ফ্রিজ, কম্পিউটার ইত্যাদির সাথে বিজ্ঞান ব্যাপকভাবে জড়িত। কৃষিকাজ, কারখানার যন্ত্রপাতি এমনকি মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান অপরিহার্য। এক কথায়, ঘরের কোণে, রাস্তায়, স্কুলে, কলেজে, অফিস-আদালতে, বিনোদনে, অনুষ্ঠানে, প্রতিষ্ঠানে ইত্যাদি জায়গাতে বিজ্ঞানকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।

চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যাপক সাফল্য অনস্বীকার্য। রোগ নির্ণয় থেকে নিরাময় পর্যন্ত বিজ্ঞানের দ্বারা রক্ত, মল, প্রস্রাব ইত্যাদি পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা হয়। এছাড়াও বিজ্ঞান মানুষের হাতে পেনিসিলিন, বিভিন্ন ভ্যাকসিন, এক্স-রে, কার্ডিওগ্রাফি, ইসিজি এর মত আশীর্বাদ দিয়েছে। রক্তচাপ পরিমাপের জন্য স্ফিগমোম্যানোমিটার উদ্ভাবিত হয়। ক্লোরোফর্ম মানুষকে অবচেতন করার জন্য উদ্ভাবিত হয়েছিল, এছাড়াও আল্ট্রাসনোগ্রাফ মেশিন ছিল বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার।

অবসর বিনোদন:

বিজ্ঞানের লক্ষ্য শুধু শরীরকে ভালো অবস্থায় রাখাই নয়, অবসরে জীবনযাপন করার ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান নজর রেখেছে। বিজ্ঞান দিয়েছে সিনেমা, থিয়েটার, রেডিও, টিভি, ভিডিও, ভিসিআর, সিডি, মোবাইল ছাড়াও আরও অনেক যন্ত্র যেমন বোতাম টিপে গান বাজানো, নাটক, টেলিফোন, এয়ার কন্ডিশনার, ফ্রিজ ইত্যাদি সবই বিজ্ঞানের আবিষ্কার।

যানবাহন ব্যবস্থা: 

এখনকার মানুষ আর ঘরে বসে সময় কাটায় না। কেউ দীর্ঘ দূরত্বের ভ্রমণে যায়, কেউ অফিসের কাজে, কেউ কারখানায়, কেউ কর্মক্ষেত্রে তাদের জন্য সর্বদা একটি গাড়ি প্রস্তুত থাকে। সাইকেল, ট্রেন, ট্রাম, বাস, লরি, মোটর কার থেকে শুরু করে কোন কিছুরই অভাব নেই, এছাড়াও দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা হচ্ছে বিমান, ইন্টারনেট, ইমেইল। আর এ সবকিছুই বিজ্ঞানের আবিষ্কার। তাই এখন আর দূরত্ব নেই হাতের মুঠোয় চলে এসেছে এই পৃথিবী।

বাড়িতে বিজ্ঞান:

আমরা যদি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হিসাব করি তাহলে দেখতে পাই বিজ্ঞান আমাদের একের পর এক উপহার দিয়েছে: টুথপেস্ট, চায়ের সরঞ্জাম, সংবাদপত্র, রেডিও, খবর, খবরের কাগজ, কলম, বই, গ্যাস ওভেন, চুলা, ফ্রিজ, এয়ার কুলার, বৈদ্যুতিক পাখা, লোহা, তেল, সাবান, প্রসাধনী, পোশাক, ওষুধ ইত্যাদি কিছুই বিজ্ঞান বাদ দিয়ে নয়। বর্তমানে এগুলো বাদ দিলে জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়বে।

চাষবাসের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

কৃষিক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের অবদান কম নয়। বিজ্ঞান দিয়েছে উন্নত যন্ত্রপাতি, ট্রাক্টর, পাম্প মেশিন, উন্নত বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদি যার ফলশ্রুতিতে পৃথিবী সবুজ হয়ে উঠেছে আর এর সুবাদে সবার মুখে দুই মুঠো খাবার জুটেছে। গরিবদের কপালে জুটেছে কর্ম। বিজ্ঞান না থাকলে হয়ত অনেক কর্মক্ষেত্র তৈরিই হতোনা। 

মহাকাশ গবেষণায় বিজ্ঞান:

বিজ্ঞানের অবদানে বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি করেছে। আকাশের সাহায্যে আমরা আবহাওয়ার খবর জানতে পারি এবং রেডিও এবং টিভিতে দূরবর্তী ঘটনার সাক্ষী হতে পারি। পৃথিবীর এক প্রান্তে যা বলা হয় তা অন্য প্রান্তে শোনা যায় টেলিফোন, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ই-মেইলের মাধ্যমে এবং বাইরের শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য নজরদারির সাহায্যে। প্রতিনিয়ত মহাকাশে যে পরিবর্তন হচ্ছে তা আপরা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে জানতে পারি। যেমন হাবাল টেলিস্কোপ, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ইত্যাদি অন্যতম। 

উপসংহার:

বিজ্ঞানের দ্বারা বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার করেছে যা এক আঘাতে বিশ্বকে ধ্বংস করে দিতে পারে। ঠিক তেমনই ঘটেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের দুটি ফুলের মতো শহর হিরোশিমা এবং নাগাসাকি তে। আমেরিকার পারমাণবিক বোমা দ্বারা শ্মশানে পরিণত হয়েছিল সেই স্থানগুলি। মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে তাই প্রত্যাকটি মানুষের উচিত বিজ্ঞানকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা, অন্যথায় হিরোশিমা এবং নাগাসাকির মতো ধ্বংসের ভয় থেকে যাবে। তাই বিজ্ঞানের ভালো দিক যেমন আছে তেমনি খারাপ দিকও আছে। তাই মানুষের উচিত বিজ্ঞানকে প্রানীকূলের জন্য যথাযথ কল্যাণে ব্যবহার করা। একমাত্র মানুষই পারে এই পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে।

4. অধ্যবসায়।

0/20Ctg.B-23

ভূমিকা:

কীর্তিমান ব্যক্তির যেমন মৃত্যু নেই , তেমনি নিঃশেষও নেই । এ পৃথিবীতে সে নিজস্ব কীর্তির মহিমায় লাভ করে অমরত্ব । জগতে যারা কীর্তিমান হয়েছেন , তারা প্রত্যেকেই ছিলেন অধ্যবসায়ী । সাফল্য লাভের জন্য বারবার চেষ্টা ও সংগ্রাম করার নামই অধ্যবসায় । যদিও মানুষ মাত্রই ভুল করে , তথাপি কোনো কাজের ব্যর্থতার গ্লানি মুছে ফেলে সফলতার দ্বারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যে মহান প্রচেষ্টা , যে একাগ্রতা ও নিষ্ঠা , তারই নাম অধ্যবসায়।

অধ্যবসায় কি:

জীবনে সাফল্য অর্জনের জন্য যে উদ্দেশ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, স্ব-বিশ্বাস, অভ্যাস, ধৈর্য, প্রচেষ্টা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সাফল্য লাভের অদম্য আকাঙ্খা হচ্ছে অধ্যবসায়।

জীবনে সফল হতে চাই একাগ্রতা ও নিষ্ঠা। সফলতার পথের প্রথম এবং অনিবার্য শর্ত হলো অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া ব্যক্তি জীবন কিংবা জাতীয় জীবন কোনো ক্ষেত্রেই সফলতা কল্পনাও করা যায় না। একমাত্র অধ্যবসায়ের বলেই মানুষ জীবনে চলার পথের সকল বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে সফলতার শীর্ষে আরোহন করতে পারে।

অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা:

জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম । মানবজীবনের যেকোনো কাজে বাধা আসতে পারে , কিন্তু সে বাধাকে ভয় করা কাপুরুষতা । যাদের মন “ সংশয়ে সংকল্প সদা টলে ”, তারা সহজে সাফল্যকে করায়ত্ত করতে সক্ষম হয় না । রাতের আঁধার পেরিয়ে যেমন উজ্জ্বল সূর্য উদিত হয় , তেমনি অবিরাম চেষ্টার ফলেই মানুষের ভাগ্যাকাশে উদিত হয় সাফল্যের ধ্রুবতারা ।

অধ্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য:

জীবনে সাফল্য থাকবে, জীবনে সাফল্য ব্যর্থতাও থাকবেই। দুই মিলেই হয় জীবন। সুতরাং সাফল্যে পেতে হলে যে গুনটি থাকা প্রয়োজন তা হলো অধ্যবসায়। আবার জীবনে ব্যর্থতা আসতেই পারে তাই বলে কি সাফল্যের স্বপ্নকে ঘুম পাড়িয়ে রাখলে চলবে কি, তাই হাল ছেড়ে বসে থাকা যাবে না। আমরা জানি দিনের পর যেমন রাত আসে ঠিক তেমনি আমাদের জীবনেও অনেক ব্যর্থতার পরে সাফল্য আসবেই যদি অধ্যবসায় থাকতে পারি। তাইতো কবি কালীপ্রসন্ন ঘোষ বলেছেন-

❝পারিব না এ কথাটি বলিও না আর, পারো কি না পারো করো যতন আবার, একবার না পারিলে দেখো শত বার।❞

ধ্যবসায় হচ্ছে,বার বার ব্যর্থ হওয়ার পরও সাফল্য লাভের আশায় চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। অধ্যবসায়ের মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন সেগুলো হলো উদ্দেশ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, স্ব-বিশ্বাস, অভ্যাস, ধৈর্য, প্রচেষ্টা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সাফল্য লাভের অদম্য আকাঙ্খা এই সব মিলে অধ্যবসায় হয়ে থাকে।

অধ্যবসায়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য:

সাফল্য একদিনে আসেনা এর জন্য অনেক প্ররিশ্রম করতে হয়। আদিম মানুষ অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মাটিতে, পানিতে, আকাশে বৈরীশক্তিকে মােকাবিলা করে নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় সফল হয়েছে। যেমন, অনাবাদি জমি আবাদ করে ফসল ফলানাে, জলাভূমি ভরাট করে নগর পত্তন, মরুভূমিকে মরূদ্যানে রূপান্তর- সবই অধ্যবসায়ের দান। আদিম গুহাচারী মানুষ আজ মহাশূন্যে পাড়ি জমিয়েছে। জ্ঞানবিজ্ঞান, সাহিত্য-দর্শন, চিকিৎসা-শিল্পকলা ইত্যাদি প্রতিটি শাখায় মানুষের যে অভাবনীয় অগ্রগতি তার মূলে রয়েছে নিরন্তর সাধনা, উদ্যম, উদ্যোগ আর নিরবচ্ছিন্ন কর্মপ্রচেষ্টা এই সব মিলিয়ে হয়েছ অধ্যবসায়। অধ্যবসায়ের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে ফ্র্যাঙ্ক লয়েড উক্তিটি উল্লেখ করা যায় –“সাফল্যের জন্য ৩টি মূল্য দিতে হবে: ভালোবাসা, কঠোর পরিশ্রম, আর স্বপ্নকে বাস্তব হতে দেখার জন্য ব্যর্থতার পরও কাজ করে যাওয়া।”

অর্থনীতি ও অধ্যবসায় :

একটি দেশের অর্থনীতি উন্নত হয় সেই দেশের মানুষ কতটা পরিশ্রমী দিচ্ছে তার উপর নির্ভির করে। কোন দেশের অর্থনীতি উন্নত তখনি হয় যখন সেই দেশের মানুষ পরিশ্রমী হয়। তাই বলা হয়, একটি দেশের অর্থনীতির কাঠামো নির্মাণ হয় ওই দেশের মানুষ দ্বারা। বিশ্বের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে অনুন্নত দেশের মানুষ উন্নত দেশের মানুষের চেয়ে কম পরিশ্রমী। উন্নত বিশ্বে যা কিছু অর্জিত হয়েছে তার পিছনে অধ্যবসায় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। দেশের মানুষ যদি পরিশ্রমী বা অর্থনীতি শক্তিশালী না হয় তাহলে দেখা যায় অনেক সমস্যা। তাই একটি দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে প্রয়োজন মানুষের পরিশ্রমী আর এই পরিশ্রমী হচ্ছে অধ্যবসায়।

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় :

ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ, তাদের উপরই নির্ভর করে জাতির আশা – আকাঙ্ক্ষা । জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য ছাত্রজীবনেই তাদেরকে অধ্যবসায়ী হতে হবে । অলস , কর্মবিমুখ ও হতাশ ছাত্রছাত্রী কখনো বিদ্যার্জন কিংবা পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ করতে পারে না । অধ্যবসায়ী ছাত্র অল্প মেধাশক্তিসম্পন্ন হলেও সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয় । কাজেই অকৃতকার্য ছাত্র – ছাত্রীকে হতাশ না হয়ে পুনরায় দ্বিগুণ উৎসাহে অধ্যবসায়ে মনোনিবেশ করা উচিত । কারণ অধ্যবসায়ই পারে ব্যর্থতার গ্লানি মুছে দিয়ে সাফল্যের পথ দেখাতে ।

অধ্যবসায়ের চর্চা:

কোন কিছু চর্চা বাইরে না। অধ্যবসায় এমন এক চর্চা যার মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করতে পারে। অধ্যবসায় জন্মগতভাবে লাভ করা যায় না। অধ্যবসায় অর্জন করে নিতে হয়। তাহলেই সকল কাজে আসবে সাফল্য। আমেরিকান সফল উদ্যোক্তা আর্নল্ড গ্লাসগো বলেছেন –

সাফল্যের আগুন একা একা জ্বলে না। এটা তোমাকে নিজ হাতে জ্বালাতে হবে

যে মানুষ মাতৃগর্ভ থেকে আসে পৃথিবীতে সে প্রথমে হাটতে পারে না। কিন্তু ধীরে ধীরে সে অল্প অল্প করে হাটতে শিখে। তাই আমাদের উচিত ছোট বেলা থেকেই অধ্যবসায়ের চর্চা করা।

অধ্যবসায় ও সফলতা:

অফুরন্ত সৌন্দর্যের ক্ষণস্থায়ী এক মধুর নিকুঞ্জ আমাদের এ পৃথিবী । ক্ষণস্থায়ী এ পৃথিবীতে মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য । মৃত্যুর ধ্বংসলীলার মাধ্যমে মানুষের নিথর দেহের বিলুপ্তি ঘটলেও তার মহৎ কর্মের সুরভি কখনো শেষ হবার নয় । যে লোক বিফলতার তিক্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজে অগ্রসর হয় , সফলতা তার জন্য নিশ্চিত । অবিচলিত অধ্যবসায়ের দ্বারা সফলতার শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছা অসম্ভব কিছু নয় । একমাত্র অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই মানবজীবনে সোনালি অধ্যায়ের সূচনা করা যেতে পারে । কর্মের সুফল ও খ্যাতির আলোকবর্তিকায় সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠার জন্য অধ্যবসায়কে কন্ঠের হার করে নিতে হবে ।

জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়:

ব্যক্তি মিলে গঠিত হয় পরিবার আর কতগুলো পরিবার সমাজ এবং গোটা সমাজের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ হলো রাষ্ট্র । জাতীয় জীবনে তথা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে সার্বিক উন্নতির পূর্বশর্ত হচ্ছে অধ্যবসায় । যে জাতি অলস , কর্মবিমুখ ও উদ্যমহীন , সে জাতি প্রতিযোগিতামুখর পৃথিবীতে পিছিয়ে পড়তে বাধ্য । পৃথিবীতে অনেক জাতি সম্পদের অপ্রতুলতা সত্ত্বেও শুধুমাত্র অধ্যবসায়ের গুণে , জ্ঞানে ও ধনে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে । জাপান , জার্মানি এবং অতিসম্প্রতি মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর অনেক দেশ কেবল অধ্যবসায়ের গুণে উন্নতির পথে ধাবিত হয়েছে । প্রকৃতপক্ষে অধ্যবসায়ী জাতি ব্যক্তিক ও রাষ্ট্রিক উন্নতির পথে কার্যকরী অবদান রাখতে সক্ষম হয় ।

উপসংহার :

মহাকালের অনন্ত প্রবাহে মানুষ পায় এক সীমাবদ্ধ জীবন । এ যেন “অনন্ত ঘুমের মধ্যে ক্ষণিকের জন্য চোখ মেলে তাকানো । ” ক্ষণকালের এ জীবনে মানুষ স্মরণীয় – বরণীয় হয়ে ওঠে নিজের কর্মফলের মাধ্যমে । যারা সংকল্পে অটল , অধ্যবসায়ী এবং পরিশ্রমী তাদের অসাধ্য কিছুই নেই । যে ব্যক্তি পুনঃ পুনঃ চেষ্টার মাধ্যমে অধ্যবসায়ের কণ্টকিত পথ থেকে বিচ্যুত হয় না , তার জীবনেই সফলতার সৌরভমণ্ডিত পুষ্প ফোটে । একমাত্র অধ্যবসায়ের গুণেই মানবজীবন সাফল্যমণ্ডিত হয় এবং স্মরণীয় ও বরণীয় হিসেবে অধ্যবসায়ীর নাম ইতিহাসের পাতায় লিখিত হয় স্বর্ণাক্ষরে ।

5. অদম্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ।

0/20Ctg.B-23

ভূমিকা:

বর্তমানে যে গতিতে এই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে এটি একটি অকল্পনীয় বিষয় । এই হারে আমাদের দেশের উন্নয়ন হতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই এটি উচ্চ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর অনেক সংগ্রাম করে আমাদের এই সোনার বাংলা গড়তে হয়েছে। কিছু বছর আগেও বাংলাদেশে অনেক বেশি অভাব অনটন ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই চিত্রের বিপরীত।

যেভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তি বাণিজ্য এবং আমদানি ও রপ্তানি খেতে উন্নয়ন হচ্ছে এভাবে চললে এই দেশের প্রতিটি মানুষ অনেক বেশি আপগ্রেড হয়ে যাবে।

এগুলো সম্ভব হচ্ছে শুধুমাত্র কঠোর পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনার কারণে। দেশে বিগত বছরে বড় বড় বেশ কিছু প্রজেক্ট সফল হওয়ার কারণে এই দেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কিভাবে চলতে থাকলে আমাদের এই অদম্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ কে কেউই দমিয়ে রাখতে পারবেনা।

শিক্ষাগত উন্নয়ন:

বলা হয়ে থাকে একটি জাতির মেরুদন্ডই হচ্ছে শিক্ষা। যে দেশ যত বেশি শিক্ষিত হবে সেই দেশ তত বেশি উন্নয়ন তো হবে। আর এই কথাটা মাথায় রেখেই আমাদের দেশের সরকার এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন।

শিক্ষাব্যবস্থায় এক অনন্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে বিগত কয়েক বছরে। দেশের প্রতিটি ছেলেমেয়ে যেন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে এই কারণে প্রতিটা গ্রামে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে দিয়েছে এদেশের সরকার ব্যবস্থা।

এছাড়াও তাদেরকে ফ্রিতে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি সরকার থেকে প্রতিটি ছেলে মেয়ের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা দেওয়া হয়ে থাকে।

আর্থিকভাবে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে সাহায্য করার পাশাপাশি বিনামূল্যে বই বিতরণসহ আরো যাবতীয় সুবিধা তাদেরকে প্রদান করা হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রথম শ্রেণী হতে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিটি পাঠ্যবই সরকার থেকে বিনামূল্যে প্রদান করা হয়ে থাকে।

এই শিক্ষাব্যবস্থাকে এত সহজ করে দেওয়ার জন্যই আমাদের দেশে এখন শিক্ষিতর হার অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছে। বিগত বছরগুলোতে আমাদের দেশে নারী শিক্ষার হার একদমই কম ছিল যা বর্তমানে ছেলেদের থেকেও নারীদের বেশি শিক্ষিতর হার হয়েছে।

যদিও বর্তমানে 96% শিক্ষার হার রয়েছে। কিন্তু এই অদম্য অগ্রযাত্রার গতিতে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে থাকলে আগামী কিছুদিনের মধ্যেই ১০০ শতাংশ শিক্ষার হার নিশ্চিত করা যাবে বলে আমরা আশাবাদী।

অবকাঠামো গত উন্নয়ন:

একটি দেশকে তখনই উন্নয়নশীল দেশ বলা যাবে যখন এই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। আর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হলে দেশটির অবকাঠামো গত উন্নয়নের বিকল্প নেই।

গত ২০২২ – ২০২৩ সালে আমাদের এই দেশে এমন কিছু অবকাঠামো কত উন্নয়ন হয়েছে যা গত ১০০ বছরেও হয়নি । বাংলাদেশ সরকার যে সমস্ত বড় বড় প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিল তার প্রতিটি বর্তমানে আমাদের চোখের সামনে। বহুল প্রতীক্ষিত আমাদের পদ্মা সেতু রয়েছে এর মধ্যে অনেক বড় একটি প্রকল্প।

এছাড়াও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ আরো অনেক বড় বড় অবকাঠামগত উন্নয়ন হয়েছে আমাদের এই ছোট দেশটিতে। আমাদের দেশে আগে ব্রীজের সংখ্যা অনেক কম ছিল যা বর্তমানে অনেক বেশি হারে বেড়ে গেছে।

এছাড়াও আমাদের দেশে যেখানে আগে বিশ্বরোড গুলো ছিল দুই লেনের সেখানে বর্তমানে বিশ্বরোড গুলোতে নতুনভাবে কাজ চলছে যেগুলো ছয় লেনের রোড বানানো হবে। এই ছয় লেন এর বিশ্ব রোড গুলোর কাজ পরিপূর্ণভাবে শেষ হলে দেশটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।

এগুলো ছাড়াও আমাদের দেশ থেকে প্রথম বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে মহাকাশে। বিগত বছরগুলোতে যেখানে বাংলাদেশের প্রতিটা ঘরে বিদ্যুৎ ছিল না সেখানে বর্তমান সরকার গ্রামেগঞ্জে প্রতিটা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আগের বড় বড় অবকাঠামো গত উন্নয়নের সময় বহির্বিশ্বের সাহায্য লাগতো কিংবা বিভিন্ন ধরনের লোন গ্রহণ করতে হতো। কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণ করার সময় এত বড় একটি প্রকল্পে বাহিরের কোন সাহায্য ছাড়াই নিজ অর্থায়নে এটি সম্পূর্ণ করা হয়েছে।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন:

প্রতিটা সেক্টরের যেভাবে উন্নতি হয়েছে ঠিক একই ভাবে দেশটির অর্থনৈতিকভাবেও অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কোন দেশের অর্থনীতি যত বেশি উন্নয়নশীল হবে সেই দেশটি তত বেশি উন্নয়ন হবে এটাই স্বাভাবিক।

বাংলাদেশের জিডিপি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে যা অনেক ভালো একটি অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের লক্ষণ । ২০০৫ থেকে ২০০৬ অর্থবছরে এই দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৫.৪ শতাংশ এবং সেই অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল গরে ৫৪৩ মার্কিন ডলার যা তখনকার ডলারের মূল্য অনুযায়ী ৪৫ হাজার টাকার আশেপাশে ছিল।

কিন্তু বর্তমান অর্থবছরে এই দেশের জিডিপি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে যা বর্তমানে ১০% এর ও বেশি উন্নয়নশীল।

জিডিপি বৃদ্ধির হার বাড়াসহ দেশের প্রতিটি মানুষের গর মাথাপিছু আয় ও অনেক গুণে বেড়ে গিয়েছে।

কমেছে পরনির্ভরতা অর্থাৎ অন্য কারো থেকে সাহায্য নিয়ে কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার যে প্রচলন ছিল সেটি অনেক হারে কমে গিয়েছে। এমনকি আগের থেকে বর্তমানে বাজেট এবং প্রকল্প গুলো অনেক বড় বড় এবং খুবই উন্নতমানের।

প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বড় বড় বাজেট পাস করা হচ্ছে বিগত অর্থবছর গুলো থেকেই।

দেশে দারিদ্রতার হার কমা সহ বেড়েছে মানুষের মাথাপিছু আয় ও। এই অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নশীল হওয়ার ফলে বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু এবং মানুষ এখন কিছু বছর বেশি বেঁচে থাকার সুযোগ পাচ্ছে।

চিকিৎসা খাতে উন্নয়ন:

অদম্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করতেই হবে। কারণ বর্তমানে দেশের চিকিৎসা খাতে অনেক বেশি উন্নয়ন হয়েছে বিগত বছরগুলোর তুলনায়।

কিছু বছর আগেও মানুষের অনেক ধরনের অপারেশন করতে হলে বাহিরে উন্নত বিশ্বে যেতে হতো। কিন্তু বর্তমানে দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে উন্নতির ফলে অনেক বড় এবং কঠিন অপারেশন গুলো দেশেই সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে।

তাছাড়া আগে যে সকল অপারেশন করার পর ডাক্তাররা নিশ্চিত হতে পারত না যে অপারেশনটি সম্পন্ন হবে কিনা সেসব কঠিন অপারেশনগুলো এখন নিমিষেই সম্পন্ন করা হচ্ছে।

আগের তুলনায় বর্তমানে অপারেশন সাকসেসফুল হওয়ার পরিমাণ ও অনেক শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। অনেক ধরনের মেশিন বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়েছে যেগুলো বাংলাদেশের চিকিৎসার মান কে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।

এখন বাংলাদেশের প্রতিটা জেলা এবং থানায় রয়েছে সরকারি সদর হাসপাতাল যেখানে বিনামূল্যে রোগীরা চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছে। মাত্র ১০ টাকা দিয়ে টিকিট ক্রয় করার মাধ্যমে রোগীরা তাদের রোগের চিকিৎসা যথার্থভাবে নিতে পারছে।

এই অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশকে আরো অনেক দূর নিয়ে যাওয়ার জন্য অবশ্যই দেশবাসীকে সাথে থাকতে হবে এবং দেশের উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে।

প্রযুক্তিগত উন্নতি:

দেশটিতে যেভাবে প্রযুক্তিগত উন্নতি দেখা যাচ্ছে এই উন্নয়নের কারণে অদম্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ আরো গতি পেয়েছে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে দেশের প্রতিটি সেক্টরে প্রচুর কাজ করা হয়েছে।

গতবছরেরগুলোতে গুটি কয়েক মোবাইল ব্যবহারকারী থাকলেও বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় 12 কোটির বেশি মোবাইল ব্যবহার করে রয়েছে । আর প্রতিটি মোবাইল ব্যবহারকারীকে ইন্টারনেটের আওতায় আনার জন্য দেশের প্রতিটা আনাচে-কানাচে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ এর টেলি যোগাযোগ কোম্পানি বিটিআরসির পক্ষ থেকে অসংখ্য টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে যাতে করে গ্রাম অঞ্চলগুলোতেও পরিপূর্ণভাবে ইন্টারনেট প্রদান করা সম্ভব হয়।

আর এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে বর্তমানে ৪ কোটির অধিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। প্রতিটি দেশের উন্নয়ন গতিশীল হবে তখনই যখন দেশটিতে পরিপূর্ণভাবে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা হবে।

এই ইন্টারনেট সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে দেশের মোবাইল অপারেটর গুলোও কাজ করে যাচ্ছে। দেশের প্রতিটা আনাচে-কানাচে এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে যাতে করে প্রতিটা মানুষ প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

প্রযুক্তিগত দিক থেকে বাংলাদেশের অনেক বড় একটি উন্নয়ন হচ্ছে বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইট স্থাপন। স্যাটেলাইট টি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করার মাধ্যমে এই দেশের টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা অন্য এক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটা অঞ্চলে রয়েছে ফোরজি ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা। আর এই ফোরজি প্রযুক্তি থেকে আরো অনেক উন্নত প্রযুক্তি 5g এর কাজ ও বর্তমান চলমান রয়েছে।

দেশের জনপ্রিয় অপারেটর গ্রামীণফোন এই ৫জি ইন্টারনেট ব্যবস্থার বেশ কিছু এক্সপেরিমেন্ট ও করেছে । দেশে প্রতিটা অঞ্চলে 5g পৌছে গেলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন অনেক বেশি করে দেখা যাবে।

আর দেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে আমাদের দেশের যুবকরা ফ্রিল্যান্সিং করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের মাধ্যমে এ দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে আরো সচ্ছল করে তুলছে।

বহির্বিশ্বের সাথে বাণিজ্য:

একটি দেশের উন্নয়ন অনেকটা নির্ভর করে সেই দেশের আমদানি ও রপ্তানি ব্যবস্থার ওপর। বিগত বছরগুলো থেকে আমাদের দেশ রপ্তানিতে অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। এখন অনেক ধরনের পণ্য বাইরের দেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে আমাদের এই বাংলাদেশ থেকেই।

এছাড়াও বাইরের বড় বড় দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যিক চুক্তির কারণে এই দেশের অর্থনৈতিকভাবে যেমন উন্নয়ন হচ্ছে তেমনি দেশের আরো অনেক খাতে উন্নয়ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

এখন প্রায় প্রতিবছরে চার থেকে পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলার আয় করা হয় শুধুমাত্র এই রপ্তানি থেকে। আর প্রতি বছরই এই সংখ্যাটিকে ব্রেক করে নতুন আরো একটি বড় সংখ্যা আমদানিকৃত অর্থের মধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি।

এই আমদানিকৃত অর্থের সংখ্যা দিন দিন বাড়ার ফলে এই দেশ উন্নত হচ্ছে এবং বহির্বিশ্বের কাছে পরিচিত লাভ করছে। আশা করা হচ্ছে আগামী বেশ কিছু বছর এর মধ্যেই আমরা পণ্য আমদানি করে একটি উন্নত শীল দেশে রূপান্তরিত হতে পারব।

উপসংহার:

অদম্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এই বিষয়টি ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকলে একসময় উন্নত বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ একটি পরিচিত নাম হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে হচ্ছে।

তবে শুধুমাত্র দেশের সরকার চেষ্টা করলে এটি সম্ভব নয়। আমরা যারা সাধারণ জনগণ আছি তাদেরকেও সমান তালে এই অদম্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বাত্মক সাহায্য করতে হবে।

এই ছোট্ট অদম্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ রচনা তে বাংলাদেশের সমস্ত ভালো দিক এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা চোখের সামনে যা দেখতে পাচ্ছি এতে করে মনে হচ্ছে কিছু বছরের মধ্যেই এই দেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে পরিণত হবে।

( end of ctg 23 )

1. অধ্যবসায়।

0/20SB-22

ভূমিকা:

কীর্তিমান ব্যক্তির যেমন মৃত্যু নেই , তেমনি নিঃশেষও নেই । এ পৃথিবীতে সে নিজস্ব কীর্তির মহিমায় লাভ করে অমরত্ব । জগতে যারা কীর্তিমান হয়েছেন , তারা প্রত্যেকেই ছিলেন অধ্যবসায়ী । সাফল্য লাভের জন্য বারবার চেষ্টা ও সংগ্রাম করার নামই অধ্যবসায় । যদিও মানুষ মাত্রই ভুল করে , তথাপি কোনো কাজের ব্যর্থতার গ্লানি মুছে ফেলে সফলতার দ্বারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যে মহান প্রচেষ্টা , যে একাগ্রতা ও নিষ্ঠা , তারই নাম অধ্যবসায়।

অধ্যবসায় কি:

জীবনে সাফল্য অর্জনের জন্য যে উদ্দেশ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, স্ব-বিশ্বাস, অভ্যাস, ধৈর্য, প্রচেষ্টা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সাফল্য লাভের অদম্য আকাঙ্খা হচ্ছে অধ্যবসায়।

জীবনে সফল হতে চাই একাগ্রতা ও নিষ্ঠা। সফলতার পথের প্রথম এবং অনিবার্য শর্ত হলো অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া ব্যক্তি জীবন কিংবা জাতীয় জীবন কোনো ক্ষেত্রেই সফলতা কল্পনাও করা যায় না। একমাত্র অধ্যবসায়ের বলেই মানুষ জীবনে চলার পথের সকল বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে সফলতার শীর্ষে আরোহন করতে পারে।

অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা:

জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম । মানবজীবনের যেকোনো কাজে বাধা আসতে পারে , কিন্তু সে বাধাকে ভয় করা কাপুরুষতা । যাদের মন “ সংশয়ে সংকল্প সদা টলে ”, তারা সহজে সাফল্যকে করায়ত্ত করতে সক্ষম হয় না । রাতের আঁধার পেরিয়ে যেমন উজ্জ্বল সূর্য উদিত হয় , তেমনি অবিরাম চেষ্টার ফলেই মানুষের ভাগ্যাকাশে উদিত হয় সাফল্যের ধ্রুবতারা ।

অধ্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য:

জীবনে সাফল্য থাকবে, জীবনে সাফল্য ব্যর্থতাও থাকবেই। দুই মিলেই হয় জীবন। সুতরাং সাফল্যে পেতে হলে যে গুনটি থাকা প্রয়োজন তা হলো অধ্যবসায়। আবার জীবনে ব্যর্থতা আসতেই পারে তাই বলে কি সাফল্যের স্বপ্নকে ঘুম পাড়িয়ে রাখলে চলবে কি, তাই হাল ছেড়ে বসে থাকা যাবে না। আমরা জানি দিনের পর যেমন রাত আসে ঠিক তেমনি আমাদের জীবনেও অনেক ব্যর্থতার পরে সাফল্য আসবেই যদি অধ্যবসায় থাকতে পারি। তাইতো কবি কালীপ্রসন্ন ঘোষ বলেছেন-

❝পারিব না এ কথাটি বলিও না আর, পারো কি না পারো করো যতন আবার, একবার না পারিলে দেখো শত বার।❞

ধ্যবসায় হচ্ছে,বার বার ব্যর্থ হওয়ার পরও সাফল্য লাভের আশায় চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। অধ্যবসায়ের মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন সেগুলো হলো উদ্দেশ্য নির্ধারণ, পরিকল্পনা, স্ব-বিশ্বাস, অভ্যাস, ধৈর্য, প্রচেষ্টা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সাফল্য লাভের অদম্য আকাঙ্খা এই সব মিলে অধ্যবসায় হয়ে থাকে।

অধ্যবসায়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য:

সাফল্য একদিনে আসেনা এর জন্য অনেক প্ররিশ্রম করতে হয়। আদিম মানুষ অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মাটিতে, পানিতে, আকাশে বৈরীশক্তিকে মােকাবিলা করে নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় সফল হয়েছে। যেমন, অনাবাদি জমি আবাদ করে ফসল ফলানাে, জলাভূমি ভরাট করে নগর পত্তন, মরুভূমিকে মরূদ্যানে রূপান্তর- সবই অধ্যবসায়ের দান। আদিম গুহাচারী মানুষ আজ মহাশূন্যে পাড়ি জমিয়েছে। জ্ঞানবিজ্ঞান, সাহিত্য-দর্শন, চিকিৎসা-শিল্পকলা ইত্যাদি প্রতিটি শাখায় মানুষের যে অভাবনীয় অগ্রগতি তার মূলে রয়েছে নিরন্তর সাধনা, উদ্যম, উদ্যোগ আর নিরবচ্ছিন্ন কর্মপ্রচেষ্টা এই সব মিলিয়ে হয়েছ অধ্যবসায়। অধ্যবসায়ের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে ফ্র্যাঙ্ক লয়েড উক্তিটি উল্লেখ করা যায় –“সাফল্যের জন্য ৩টি মূল্য দিতে হবে: ভালোবাসা, কঠোর পরিশ্রম, আর স্বপ্নকে বাস্তব হতে দেখার জন্য ব্যর্থতার পরও কাজ করে যাওয়া।”

অর্থনীতি ও অধ্যবসায় :

একটি দেশের অর্থনীতি উন্নত হয় সেই দেশের মানুষ কতটা পরিশ্রমী দিচ্ছে তার উপর নির্ভির করে। কোন দেশের অর্থনীতি উন্নত তখনি হয় যখন সেই দেশের মানুষ পরিশ্রমী হয়। তাই বলা হয়, একটি দেশের অর্থনীতির কাঠামো নির্মাণ হয় ওই দেশের মানুষ দ্বারা। বিশ্বের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে অনুন্নত দেশের মানুষ উন্নত দেশের মানুষের চেয়ে কম পরিশ্রমী। উন্নত বিশ্বে যা কিছু অর্জিত হয়েছে তার পিছনে অধ্যবসায় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। দেশের মানুষ যদি পরিশ্রমী বা অর্থনীতি শক্তিশালী না হয় তাহলে দেখা যায় অনেক সমস্যা। তাই একটি দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে প্রয়োজন মানুষের পরিশ্রমী আর এই পরিশ্রমী হচ্ছে অধ্যবসায়।

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় :

ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ, তাদের উপরই নির্ভর করে জাতির আশা – আকাঙ্ক্ষা । জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য ছাত্রজীবনেই তাদেরকে অধ্যবসায়ী হতে হবে । অলস , কর্মবিমুখ ও হতাশ ছাত্রছাত্রী কখনো বিদ্যার্জন কিংবা পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ করতে পারে না । অধ্যবসায়ী ছাত্র অল্প মেধাশক্তিসম্পন্ন হলেও সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয় । কাজেই অকৃতকার্য ছাত্র – ছাত্রীকে হতাশ না হয়ে পুনরায় দ্বিগুণ উৎসাহে অধ্যবসায়ে মনোনিবেশ করা উচিত । কারণ অধ্যবসায়ই পারে ব্যর্থতার গ্লানি মুছে দিয়ে সাফল্যের পথ দেখাতে ।

অধ্যবসায়ের চর্চা:

কোন কিছু চর্চা বাইরে না। অধ্যবসায় এমন এক চর্চা যার মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করতে পারে। অধ্যবসায় জন্মগতভাবে লাভ করা যায় না। অধ্যবসায় অর্জন করে নিতে হয়। তাহলেই সকল কাজে আসবে সাফল্য। আমেরিকান সফল উদ্যোক্তা আর্নল্ড গ্লাসগো বলেছেন –

সাফল্যের আগুন একা একা জ্বলে না। এটা তোমাকে নিজ হাতে জ্বালাতে হবে

যে মানুষ মাতৃগর্ভ থেকে আসে পৃথিবীতে সে প্রথমে হাটতে পারে না। কিন্তু ধীরে ধীরে সে অল্প অল্প করে হাটতে শিখে। তাই আমাদের উচিত ছোট বেলা থেকেই অধ্যবসায়ের চর্চা করা।

অধ্যবসায় ও সফলতা:

অফুরন্ত সৌন্দর্যের ক্ষণস্থায়ী এক মধুর নিকুঞ্জ আমাদের এ পৃথিবী । ক্ষণস্থায়ী এ পৃথিবীতে মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য । মৃত্যুর ধ্বংসলীলার মাধ্যমে মানুষের নিথর দেহের বিলুপ্তি ঘটলেও তার মহৎ কর্মের সুরভি কখনো শেষ হবার নয় । যে লোক বিফলতার তিক্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজে অগ্রসর হয় , সফলতা তার জন্য নিশ্চিত । অবিচলিত অধ্যবসায়ের দ্বারা সফলতার শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছা অসম্ভব কিছু নয় । একমাত্র অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই মানবজীবনে সোনালি অধ্যায়ের সূচনা করা যেতে পারে । কর্মের সুফল ও খ্যাতির আলোকবর্তিকায় সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠার জন্য অধ্যবসায়কে কন্ঠের হার করে নিতে হবে ।

জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়:

ব্যক্তি মিলে গঠিত হয় পরিবার আর কতগুলো পরিবার সমাজ এবং গোটা সমাজের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ হলো রাষ্ট্র । জাতীয় জীবনে তথা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে সার্বিক উন্নতির পূর্বশর্ত হচ্ছে অধ্যবসায় । যে জাতি অলস , কর্মবিমুখ ও উদ্যমহীন , সে জাতি প্রতিযোগিতামুখর পৃথিবীতে পিছিয়ে পড়তে বাধ্য । পৃথিবীতে অনেক জাতি সম্পদের অপ্রতুলতা সত্ত্বেও শুধুমাত্র অধ্যবসায়ের গুণে , জ্ঞানে ও ধনে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে । জাপান , জার্মানি এবং অতিসম্প্রতি মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর অনেক দেশ কেবল অধ্যবসায়ের গুণে উন্নতির পথে ধাবিত হয়েছে । প্রকৃতপক্ষে অধ্যবসায়ী জাতি ব্যক্তিক ও রাষ্ট্রিক উন্নতির পথে কার্যকরী অবদান রাখতে সক্ষম হয় ।

উপসংহার :

মহাকালের অনন্ত প্রবাহে মানুষ পায় এক সীমাবদ্ধ জীবন । এ যেন “অনন্ত ঘুমের মধ্যে ক্ষণিকের জন্য চোখ মেলে তাকানো । ” ক্ষণকালের এ জীবনে মানুষ স্মরণীয় – বরণীয় হয়ে ওঠে নিজের কর্মফলের মাধ্যমে । যারা সংকল্পে অটল , অধ্যবসায়ী এবং পরিশ্রমী তাদের অসাধ্য কিছুই নেই । যে ব্যক্তি পুনঃ পুনঃ চেষ্টার মাধ্যমে অধ্যবসায়ের কণ্টকিত পথ থেকে বিচ্যুত হয় না , তার জীবনেই সফলতার সৌরভমণ্ডিত পুষ্প ফোটে । একমাত্র অধ্যবসায়ের গুণেই মানবজীবন সাফল্যমণ্ডিত হয় এবং স্মরণীয় ও বরণীয় হিসেবে অধ্যবসায়ীর নাম ইতিহাসের পাতায় লিখিত হয় স্বর্ণাক্ষরে ।

2. বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের ভবিষ্যৎ।

0/20SB-22

উত্তর:

পর্যটনশিল্পে বাংলাদেশ

ভূমিকা: পৃথিবীব্যাপী জ্ঞানী ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ ছোটে লোক থেকে লোকান্তরে, দেশ থেকে দেশান্তরে। প্রতিনিয়ত মানুষ জানতে চায়, বুঝতে চায়, জয় করতে চায় অজানাকে। তাই তো দেখি হিমালয়, চাঁদের মতো দুর্গম স্থানকে মানুষ জয় করেছে। পুরাতাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করে উপহার দিয়েছে নতুন পৃথিবী। এ প্রসঙ্গে মহানবীর একটি বাণী উল্লেখযোগ্য ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন পর্যন্ত যাও’। অর্থাৎ জ্ঞানের জন্য, জানার জন্য সমস্ত বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করতে হয়। পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মতো বাংলাদেশেরও আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য স্থান, অসংখ্য স্থাপত্য। পরিবর্তনশীল ষড়ঋতুর এ দেশ পৃথিবীর বুকে অন্যতম বৈচিত্র্যময় একটি দেশ। তাই দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বলেছেন, ‘সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি’। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় রয়েছে ঐতিহ্যময় পর্যটন স্থান। বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার সাথে গলা মিলিয়ে আমরাও বলতে পারি যে, পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ রূপময়ী ও সমৃদ্ধিশালী জাতি ও দেশ হচ্ছে বাঙালি ও বাঙালির দেশ। বাংলাদেশের প্রকৃতি এবং বাঙালি জাতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার উপায় হচ্ছে পর্যটন।

পর্যটনশিল্পের গুরুত্ব: অন্যান্য শিল্পের মতো পর্যটনও একটি শিল্প। কথায় আছে, ‘গ্রন্থগত বিদ্যা আর পর হস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন’। আসলে জীবনভর ভারী ভারী বইপুস্তক পড়ে যতটুকু শেখা সম্ভব তার চেয়ে বেশি সম্ভব যদি চোখে দেখা যায়। কারণ মানুষ তার জ্ঞানের শতকরা ৭০ ভাগ চোখ নামক ইন্দ্রিয় দিয়ে গ্রহণ করে। যে নাকি আগ্রার তাজমহল কিংবা মিশরের পিরামিড বা নায়াগ্রার জলপ্রপাত চোখে দেখেনি সে বই পড়ে তার মর্মার্থ বুঝতে অপারগ। সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ জ্ঞানপিপাসু। মানুষ ও তার কীর্তি সম্পর্কে এবং প্রকৃতি ও তার মহিমার অজানা রহস্য পর্যটনের মাধ্যমেই জানা যায়। আদিবাসীদের জীবনযাপনের বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে মানুষ পর্যটনশিল্পের মাধ্যমে জানতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের আচার-আচরণ, স্থান, সৌন্দর্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতি-নীতি, আকৃতি-প্রকৃতি, প্রাচীনত্বের নিদর্শন, পশুপাখি প্রভৃতি সম্পর্কে পর্যটনশিল্পের মাধ্যমেই জানা যায়। অতএব দেখা যায়, পর্যটনশিল্পের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

বাংলাদেশের পর্যটন স্থান: বাংলাদেশকে কেউ কেউ বলেছেন চিরসুন্দরী, কেউ বলেছেন চিরসবুজ, কেউ বলেছেন সকল দেশের রানী, কেউবা আবার তুলনা করেছেন সোনার কাঠি, রূপার কাঠির সাথে। অর্থাৎ আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে পৃথিবীর বড়ো বড়ো পণ্ডিত বিভিন্ন রকম সুন্দরের ব্যাখ্যা করেছেন। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের মতো বাংলাদেশকে নিয়েও মায়াপুরীর স্বপ্ন দেখে মানুষ। ষড়ঋতুর বৈচিত্র্য ছাড়াও সবুজ-শ্যামল স্নিগ্ধ প্রকৃতি মানুষকে সহজেই আকর্ষণ করে। বাংলাদেশের প্রকৃতি হচ্ছে মাতৃত্বের মতো শান্ত স্নেহদায়ী। উগ্র, নম্র সকলকেই তা ঘুমপাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্থান। পাহাড়পুর, রাঙামাটি, সাগরদিঘি, ময়নামতি, কুয়াকাটা, পাথরঘাটা, সোনারগাঁ, বান্দরবান, সুন্দরবন, আরও অসংখ্য পর্যটনের স্থান ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত রয়েছে বাংলাদেশের কক্সবাজারে। বাংলাদেশের এক দিকে সুউচ্চ পাহাড় অন্যদিকে বিশাল জলরাশি। যা সহজেই পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বাংলাদেশে খোদ রাজধানীতে রয়েছে অসংখ্য ইতিহাস-আশ্রিত ঐতিহ্যময় স্থান এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ স্থান। তাই সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন:

নাগের বাঘের পাহারাতে

হচ্ছে বদল দিনে রাতে পাহাড়

তারে আড়াল করে সাগর

যে তার ধোয়ায় পাটি।

পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা: বাংলাদেশে ইতিপূর্বে পর্যটকদের জন্য কোনো

নির্দিষ্টি সুযোগ-সুবিধা ছিল না। তারপরও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক মুগ্ধ হয়ে আসত শুধু প্রকৃতি অবলোকনের জন্য। সম্প্রতি সরকার পর্যটকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন স্থানে হোটেল ও মোটেল করেছে। বিভিন্ন বেসরকারি হোটেলের চেয়ে এসব সরকারি হোটেলে অত্যন্ত কমমূল্যে সিট রিজার্ভেশন সুবিধা দিয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন রকমের যানবাহনের ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। পর্যটকদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান ও সামগ্রিক সুযোগ- সুবিধা প্রদান করাই এর প্রাথমিক কাজ।

পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে পর্যটন করপোরেশনের দায়িত্ব: বাংলাদেশ পর্যটনশিল্পে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য দুর্লভ এবং সুন্দর স্থান। এ স্থানগুলোকে সংরক্ষণের জন্য পর্যটন করপোরেশনের বিশেষ দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের পর্যটন স্থানগুলোকে বিশ্বের মানুষের চোখের সামনে তুলে ধরতে হবে। থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং যাতায়াতব্যবস্থা সহজ ও স্বল্পব্যয়ের আওতায় আনতে হবে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই পর্যটনশিল্পে বাংলাদেশের স্থান বিশ্বের সুউচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে পর্যটন করপোরেশনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অপরিসীম।

উপসংহার: প্রখ্যাত শিল্পী, সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায় আধুনিক পর্যটন শিল্পনগরী ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন- ‘অর্ধেক সুন্দরী তুমি, অর্ধেক কল্পনা।’ তাঁর এ মন্তব্য সম্পর্কে আমরাও বলতে পারি, প্যারিসের অর্ধেক সৌন্দর্যকে কল্পনা করে নিতে হয় অথচ আমাদের বাংলাদেশের সবুজ, শ্যামল সৌন্দর্যকে কল্পনা করে নিতে হয় না। তা একই সাথে দৃশ্যমান ও অনুভব্য। বাংলাদেশের পর্যটন স্থানের সৌন্দর্যের তুলনা হয় না। বাংলাদেশে পর্যটন করপোরেশন, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সর্বোপরি সকলেই একটু সচেতন হলে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আসনে আসীন হবে।

3. আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও বর্তমান বাংলাদেশ।

0/20SB-22

উত্তর:

ভূমিকা: বিজ্ঞানকে মানবকল্যাণে প্রয়োগ করার কৌশল হচ্ছে প্রযুক্তি। মানুষ প্রতিনিয়ত গবেষণার মাধ্যমে প্রযুক্তির উন্নতি সাধন করছে। মানবজীবন বিকাশের যথার্থ উপায় এখন প্রযুক্তিবিদ্যা। তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বের সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূল হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব পরিমন্ডলে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় করতে এবং একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত হতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির বিকল্প নেই। দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে মহাকাশ গবেষণা পর্যন্ত সকল কাজকর্মে তথ্য-প্রযুক্তির বিজয় ঘোষিত হচ্ছে। আমাদের জাতীয় উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা ও গুরুত্ব অনেক। জাতীয় উন্নয়নের নানা ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে।

তথ্যপ্রযুক্তি ও জাতীয় উন্নয়নের ধারণা: তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, ব্যবস্থাপনা এবং সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতির সমন্বিত ও সুবিন্যস্ত রূপকে তথ্যপ্রযুক্তি বলে। ব্যাপক অর্থে কম্পিউটার, মাইক্রো ইলেকট্রনিক্স, টেলিকমিউনিকেশন ইত্যাদি বিষয় তথ্যপ্রযুক্তির মধ্যে পড়ে। এছাড়া ডাটাবেজ, সফটওয়‍্যার উন্নয়ন ইত্যাদি তথ্যপ্রযুক্তির অন্তর্গত। সাধারণ অর্থে টেলিফোন, ফ্যাক্স, টেলেক্স, ইন্টারনেট ইত্যাদিকে তথ্যপ্রযুক্তি বলে।

জাতীয় উন্নয়ন বলতে বোঝায় সামগ্রিক উন্নয়ন। অর্থাৎ জাতীয়ভাবে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক উন্নয়ন। এ দেশে বিগত এক যুগে তথ্যপ্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটেছে। এখনকার তরুণ প্রজন্ম তথা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির ফলে জাতীয়ভাবে আয় বাড়ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান সমৃদ্ধ হচ্ছে।

তথ্যপ্রযুক্তি ও বাংলাদেশ: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম প্রতিশ্রুতি এদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলা। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার মূলভিত্তিই হলো তথ্যপ্রযুক্তি। সরকার তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যেমন-

ক. দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য প্রায় সারা দেশকে ডিজিটাল টেলিফোন ও ইন্টারনেটের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

খ. সরকার ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা’ অনুমোদন করেছে।

গ. বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য বিদেশে বাজারজাতকরণের জন্য ‘আইসিটি বিজনেস প্রমোশন সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে।

ঘ. এনসিটিবি প্রণীত কারিকুলামে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টি বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে এবং প্রযুক্তিভিত্তিক পাঠদান প্রক্রিয়া, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফল প্রকাশ ইত্যাদি ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটেছে সমধিক। সেলফোন এবং ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক এখন সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও বৈপ্লবিক মাত্রা সূচিত করেছে। অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম বুথ, মোবাইল ব্যাংকিং প্রভৃতি সেবা সারাদেশে বিস্তৃত হয়েছে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্যে রেজিস্ট্রেশন এখন সেলফোনের মাধ্যমেই সম্ভব হচ্ছে। ই- মেইল, ফেসবুক আমাদের নৈমিত্তিক জীবনযাপনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তারপরও উন্নত দেশগুলোর তথ্যপ্রযুক্তিগত উন্নয়নের কাছে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। তবে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তথ্যপ্রযুক্তি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখছে।

জাতীয় উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি: বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন

বেড়েই চলেছে। জাতীয় উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির কিছু দিক তুলে ধরা হলো:

ক. তথ্যের আদান-প্রদান; সরকারি উদ্যোগে ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে যেখান থেকে ইউনিয়নবাসীরা কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্যের পাশাপাশি সরকারের নানা

মন্ত্রণালয়ের তথ্য পাচ্ছে।

খ. তথ্যপ্রযুক্তি ও কর্মসংস্থান: তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এক নতুন দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে কম্পিউটার হার্ডওয়‍্যার, সফ্টওয়্যার, ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ৭-৮ হাজার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে অনেকের কাজের সুযোগ হচ্ছে।

গ.তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা: তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে শিক্ষার মান বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কম্পিউটার শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা এখন কম্পিউটারেই শিখতে পারছে পাঠসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো। তাছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন বিখ্যাত লাইব্রেরির বই, বিখ্যাত শহর-বন্দর, দেশ ইত্যাদি সম্পর্কে মুহূর্তেই সংগ্রহ করতে পারছে বিভিন্ন উপাত্ত।

ঘ.টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন: শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা তথ্যপ্রযুক্তির উপর নির্ভর করে। টেলিনেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, টেলিযোগাযোগের ব্যয় কমানো, জরুরি ডাকব্যবস্থা, রেলস্টেশন, অপটিক্যাল ফাইবার, ব্যাকবোনের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা ইত্যাদি সবই তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সম্ভব।

ঙ. শিল্প ও অর্থনীতি সফটওয়্যারের মূল্য হ্রাস, ই-কমার্সভিত্তিক ব্যাংক স্থাপন ইত্যাদি সকল কাজ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে করা যায়।

চ. তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা: সুদক্ষ ব্যাংকিং ব্যবস্থা

দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। আর এই ব্যাংকিং খাতকে দক্ষ, যুগোপযোগী ও আধুনিক করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালুকরণের বিকল্প নেই।

ছ. যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা: তথ্যপ্রযুক্তির ফলে যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার অনেক উন্নতি সম্ভব। একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এখন আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা পাই। বিমান, রেলের টিকেট ব্যবস্থাপনা বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত

হচ্ছে।

জ. আত্ম-কর্মসংস্থান: তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং, সাইবার ক্যাফে, ফোন ও রিচার্জসহ নানা ধরনের কাজে অনেকের স্বাধীন ব্যবসায়ের সুযোগ হয়েছে।

ঝ. ব্যবসা ক্ষেত্রে: তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবসার ক্ষেত্রে নানা উন্নয়ন সাধন হয়েছে। ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্যের মূল ভিত্তিই তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় সহজ হয়েছে।

ঞ. চিকিৎসা ক্ষেত্রে: তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। রোগ নির্ণয় থেকে সার্জারি পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার বিপ্লব নিয়ে এসেছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে।

ট, পর্যটন ক্ষেত্রে: বিদেশি পর্যটকেরা এখন তাদের দেশ থেকেই ট আমাদের দেশের পর্যটন সম্পর্কিত তথ্য পেতে পারে। আমরাও জানতে পারছি সারা বিশ্বের পর্যটন ও এ-সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়। সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেই আমাদের সুন্দরবন ও কক্সবাজারকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার সুযোগ হয়েছে।

ঠ.সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে: সমাজ সচেতনতা ও সার্বিক সম্পর্ক

উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে যেমন দেশের মানুষের সমস্যা ও দুর্ভোগের কথা জানা যায়, তেমনি দেশি-বিদেশিদের সাথে সুসম্পর্কও গড়ে তোলা যায়। ফেইসবুক, টুইটার, লিংকড ইন প্রভৃতি সাইট সামাজিক যোগাযোগে অভূতপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ড.গবেষণা ক্ষেত্রে: বিভিন্ন গবেষণার জন্য এখন আর গবেষকদের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। দেশেই তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য তাঁরা পেয়ে যান তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

ঢ. মানবসম্পদ উন্নয়নে: দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ছাড়া কোনো

অবস্থাতেই দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি নানা ভূমিকা পালন করে।

উপসংহার: বর্তমান বিশ্বে যে জাতি তথ্যপ্রযুক্তিতে যত বেশি দক্ষ, তাদের সার্বিক অবস্থাও তত বেশি উন্নত। তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে মূল্যবান ইস্যু। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ ঘটেনি। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষার উন্নয়ন, চিকিৎসার উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বেকারত্ব দূর করার জন্য আমাদের নানা পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সকলের প্রচেষ্টার মাধ্যমেই বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির সফল বাস্তবায়ন ঘটবে।

4. মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আমাদের দেশপ্রেম।

0/20SB-22

উত্তর:

ভূমিকা: বাঙালির সুদীর্ঘকালের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে এ জাতি চিরকালই মুক্তিপ্রিয়। বাঙালির প্রাকৃতিক পরিবেশেই আছে তার প্রতিবাদের ভাষা। পরের বশ্যতা এ জাতি কোনোকালেই মেনে নিতে পারেনি। তাই বারবার এ ভূমিতে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠেছে। সেই আগুনে তার শৌর্য- বীৎ দীপ্ত হয়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি অর্জন করে তার প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল যে বোধ বা চেতনাকে কেন্দ্র করে তারই নাম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তাকে চিরসমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রেরণা জোগাবে আবহমান কাল।

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি: ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের জাঁতাকলে প্রায় ২০০

বছর ধরে নিষ্পেষিত হয়েছিল এ জাতি। ১৯৪৭ সালে সেই জাঁতাকল থেকে এ উপমহাদেশের মানুষ মুক্তিলাভ করলেও মুক্তি আসেনি বাঙালি জাতির। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানি শাসকদের শৃঙ্খলে আবার বন্দি হলো বাঙালি জাতি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ধাপে ধাপে সংগ্রাম করে এ বন্দিদশা থেকে মুক্তির পথ খুঁজছিল বাঙালি জাতি।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি শাসনের প্রথম বলির শিকার হন ভাষাশহিদ রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত প্রমুখ। ‘৫৪ সালে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার জয়লাভ; ৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন হতে ‘৬৬-র ছয় দফা আন্দোলন; ‘৬৯- এর নজিরবিহীন ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন গণআন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বিকাশ লাভ করে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করে। দশ দিন পর ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনেও ৩১০টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। এরপর ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার গড়িমসি ও ভুট্টোর ভেটো অব্যাহত থাকে। অবশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১ মার্চ হতে ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন চলতে থাকে। লাখ লাখ জনতার উপস্থিতিতে ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতাসংগ্রামে ‘যার যা কিছু আছে’ তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার আহ্বান জানানো হয়। সর্বশেষ ২৫ শে মার্চ রাতে নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালির ওপর পাক-বাহিনীর বর্বর আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৫শে মার্চ মধ্যরাত, অর্থাৎ ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর পরেই ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’- এ স্বতঃস্ফূর্ত স্লোগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ: ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি

হানাদার বাহিনী অতর্কিতে হামলা চালায় নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। তারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় পিলখানা, রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। মধ্যরাতের পর হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রেফতারের পূর্বেই, অর্থাৎ ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাঁর স্বাক্ষরিত ঘোষণা বার্তাটি তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করা হয়। এরপর চট্টগ্রামের ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ থেকে ২৬ ও ২৭ শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচারিত হয় স্বাধীনতার ঘোষণা। সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে স্বতঃস্ফূর্ত মুক্তির সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী, এম মনসুর আলীকে অর্থমন্ত্রী, এএইচএম, কামারুজ্জামানকে স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী এবং খোন্দকার মোশতাক আহমদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করে মুজিবনগরে বসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। অস্থায়ী সরকারের এক আদেশে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এম.এন.এ. অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল (পরবর্তীতে জেনারেল) এমএজি ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি করে সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং ১১ জন সেক্টর কমান্ডারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৭১-এর ১৭ এপ্রিল বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলাকে ‘মুজিবনগর’ নামকরণ করে সেই মুক্ত ভূ-খন্ডে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে অদ্বায়ী সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যগণ শপথ গ্রহণ করেন। এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক সনদ বা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমএনএ, মুহম্মদ ইউসুফ আলী। একই অনুষ্ঠানে কর্নেল এমএজি ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয় এবং কর্নেল এমএজি, ওসমানীর নেতৃত্বে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

৪ ডিসেম্বর হতে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ শুরু হয়। ৬ ডিসেম্বর ভারত সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। দেশের অভ্যন্তরে পাকবাহিনী মরণকামড় দিয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালাতে থাকে। পাকবাহিনীর সমর্থনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগর হতে মার্কিন সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরের দিকে প্রেরণ করে। বাংলাদেশের পক্ষ নিয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সপ্তম নৌবহরকে অগ্রসর না হওয়ার জন্য হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে। এ নিষেধ উপেক্ষা করে সপ্তম নৌবহর যদি বঙ্গোপসাগরে আসত তাহলে হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হতো। পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে পাকবাহিনী আলবদর, রাজাকারদের সহযোগিতায় ১৪ই ডিসেম্বর অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিকাল ৫টা এক মিনিটে রমনা রেসকোর্স (বর্তমানে সোহরাওয়াদী উদ্যান) যৌথ কমান্ডের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনালের জগজিৎ সিং অরোরা এবং পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনালের নিয়াজি পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন। এ সময় মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করেন ডেপুটি চিফ (অব. স্টাফ গ্রুপ) ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে আমাদের যে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে উঠেছে তার মূলে কাজ করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকশিত হয়েছে আমাদের সমাজজীবনে। ব্যক্তিস্বাধীনতা, নারীমুক্তি আন্দোলন, নারীশিক্ষা, গণশিক্ষা, সংবাদপত্রের ব্যাপক বিকাশ সর্বোপরি গণতান্ত্রিক অধিকার চেতনা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে সমাজে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের জন্ম দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে দেশে গণতান্ত্রিকব্যবস্থা এবং অবাধ স্বাধীন গণতন্ত্র চর্চার মধ্য দিয়ে পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সাহিত্যে এক নবতর সাহিত্যধারার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশে সাহিত্যচর্চা আজকে যতটা ব্যাপ্তি পেয়েছে তার পেছনে বড়ো প্রেরণা ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছে সংগীত এবং নাটকের মধ্য দিয়ে। গণসচেতনতামূলক বক্তব্যধর্মী নাটক ব্যাপকভাবে রচিত হয়েছে স্বাধীনতার পর। আমাদের দেশাত্মবোধক গানের ক্ষেত্রে এক নতুন জোয়ার এনেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অসংখ্য গীতিকার তাঁদের গানে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাথা রচনা করেছেন। তবে আমাদের চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আশানুরূপভাবে প্রতিফলিত হয়নি। খুব সামান্যসংখ্যক চলচ্চিত্রেই মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা প্রকাশ পেয়েছে।

উপসংহার: মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কঠিন আত্মত্যাগের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তখনই পূর্ণাঙ্গ সাফল্যে উদ্ভাসিত হবে, যখন রাজনৈতিক স্বাধীনতা আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতায় রূপান্তরিত হবে। সেই লক্ষ্যে আজ সমাজের সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনাকে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। দেশের প্রত্যেক মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধের মহৎ লক্ষ্যসমূহ তুলে ধরে, সেগুলো বাস্তবায়নে সকলকে সম্পৃক্ত করা গেলেই আমাদের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এক গৌরবময় স্তরে উত্তীর্ণ হবে।

5. রূপসি বাংলাদেশ।

0/20SB-22

ভূমিকা

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি এই বাংলাদেশ। অপরুপা এ দেশের সবুজ বন বনানী, সুবিশাল ম্যানগ্রোভ বনরাজি, নদনদী, শ্যামল পাহাড়, বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত, প্রাচীন ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভ্রমণ পিপাসু উৎসাহী মানুষকে আকৃষ্ট করে আসছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে দু’চোখ ঝুড়িয়ে যায়। তাই রূপমুগ্ধ, বিষয়-পুলকিত কবি তার আবেগ-স্নিগ্ধ উচ্চারণে বাংলাকে বলেছেন-‘রূপসি বাংলা’। ছয় ঋতুর দেশ এই রুপসি বাংলাদেশ। ৫৬ হাজার বর্গমাইল দেশটি যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক মিউজিয়াম। সবুজ শ্যামল প্রকৃতির জন্যে এর প্রশংসা যুগ যুগ ধরে কবিদের বাণীতে উচ্চারিত হয়েছে। তাইতাে কবি বলেন-

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক অবস্থান

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ। বাংলাদেশের মাঝামাঝি স্থান দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা চলে গেছে। এজন্য বাংলাদেশের জলবায়ু মােটামুটি সমভাবাপন্ন। মৌসুমি বায়ুর প্রভাব দেশের জলবায়ুর ওপর এত বেশি যে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঋতুতে জলবায়ুর কিছুটা তারতম্য লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪° সেলসিয়াস এবং শীতকালীন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ০৭° সেলসিয়াস। এ দেশের বার্ষিক বৃষ্টিপাতের গড় ২০৩ সেন্টিমিটার। পশ্চিমাংশ অপেক্ষা পূর্বাংশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি। বর্ষাকালে আমাদের দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বাংলাদেশের মােট বৃষ্টিপাতের পাঁচ ভাগের চার ভাগই বর্ষাকালে হয়ে থাকে। শীতকালে উত্তর-পূর্ব শুষ্ক মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। বাংলাদেশের উত্তরে ভাওয়াল ও মধুপুর গড়। গেরুয়া রঙের মাটিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি গজারি গাছ। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর আর সুন্দরবন। পূর্বে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সাজানাে চা-বাগান। এরই মাঝে বিশাল সব ছায়াবৃক্ষ। পশ্চিমে ধু-ধু প্রান্তর। প্রকৃতির রুক্ষতার মাঝেও এখানে দেখা যায় সারি সারি আম্রকানন, আখের খেত কিংবা পানের বরজ। বাংলাদেশের সুন্দরবন সুন্দরী গাছের জন্য বিখ্যাত। কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূল বিশ্বের সর্ববৃহৎ সৈকত। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশাল এলাকাজুড়ে সীমাহীন সৌন্দর্যের সমাবেশ। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর পাহাড়ের কোল ঘেঁষে আদিবাসীদের বসবাস। হাতে গােনা শহরগুলাে বাদ দিলে বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। গ্রামের সৌন্দর্যে কোনাে কৃত্রিমতা নেই। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু মাঠ আর মাঠ। প্রকৃতিগত অবস্থান বিবেচনায় বাংলাদেশকে সমৃদ্ধিশালী দেশ বলা যায়।

বাংলাদেশের মাটি

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। ছােট-বড় অসংখ্য নদী এদেশে জালের মতাে ছড়িয়ে আছে। প্রতিবছর বন্যায় এ নদীগুলাে পলিমাটি বহন করে। আর এ কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল পলিমাটি দিয়ে গঠিত। পলি মাটির উর্বরতার কারণে এদেশে ভালাে ফসল জন্মায়। এদেশের প্রায় অধিকাংশ অঞ্চলে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন করা হয়।

বাংলাদেশের তাপমাত্রা

বাংলাদেশ নাতিশীতােষ্ণ মণ্ডলে অবস্থিত। এদেশের ওপর দিয়ে ক্রান্তীয় মৌসুমি বায়ু বছরের প্রায় অধিকাংশ সময় প্রবাহিত হয়। ফলে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি। বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪৫° সেলসিয়াস এবং শীতকালে ১৫ থেকে ২৫° সেলসিয়াস থাকে। এদেশে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বেশি শীত ও এপ্রিল-মে মাসে গরম বেশি থাকে। তবে প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়ের কারণে যেভাবে সমস্ত পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আমাদের দেশেও তার প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

জলবায়ু

মৌসুমি বায়ু এ দেশের ওপর দিয়ে বছরের অধিকাংশ সময়ই প্রবাহিত হয়। ফলে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে বায়ু প্রবাহের দিক পরিবর্তিত হয়। গ্রীষ্মকালে এদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। এ বায়ু প্রচুর জলীয় বাষ্প বহন করে। ফলে গ্রীষ্মের শেষে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঋতুবৈচিত্র্য

উত্তরে হিমালয়, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। পৃথিবীর মানচিত্রে এশিয়ার ছােট্ট, সবুজ ভূমি বাংলাদেশ। এর নদী-নালা, খাল-বিল, এর পাহাড়-টিলা, বন-বনানী, এর সমতল ভূমি মিলে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া এক বিচিত্র রূপের অপূর্ব সমারোহ। প্রকৃতির রূপসী কন্যা আমাদের এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তার ঋতুবৈচিত্র্যের মধ্যে চমৎকারভাবে প্রত্যক্ষ করা যায়। বার মাসে ছয় ঋতুর এদেশে প্রতিটি ঋতু তার অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে আগমন করে এবং নিজের অনাবিল সৌন্দর্য উপহার দিয়ে বিদায় নেয়। সারাটি বছর নব নব রূপের মধ্যে আমাদের বসবাস। প্রকৃতি পাল্টায়। আকাশ রং বদলায়। আমাদের মনের আকাশেও লাগে তার ছোঁয়া। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ, অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ।

গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্তের নিয়ত লীলা এর নিসর্গকে দিয়েছে বিচিত্র বিভূতি। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড রােদ, ছাতিমের স্নিগ্ধ ছায়া, নদীর নীলাভ গহ্বর থেকে জেগে ওঠা বালুচরে খেয়ালি দুপুরে হঠাৎ হাওয়ার মাতম গ্রীষ্মের এই বাংলাদেশ বর্ষায় একেবারে ভিন্ন রকম। শুধু কুলছাপানাে কালাে জল, শুধু সারাদিন সারারাত গলে পড়ে আকাশ। গ্রীষ্মের বুকফাটা বাংলাদেশ বর্ষায় ফিরে পায় অকূল যৌবন। আসে শরৎ, ধীর, সজল, লাবণ্যময়। তার সাদা কাশফুল, স্বচ্ছ নীল আকাশে উড়ে যাওয়া বলাকার সারি আর রাত্রিভর অবিরাম, অকৃপণ নীলিমা তার পেয়ালা থেকে ঢেলে দেয় জোছনার সফেদ স্নিগ্ধতা। হেমন্তে পাকে ধান। বাংলাদেশের মুখে তখন মাতৃত্বের মহিমা। এর মধ্যে ঘাসের বুকে জমে ওঠে শিশির। শীত আসে। পাতা ঝরে। ভােরের বাঁকা রােদে ঘাসের ডগায় লেগে থাকা অসংখ্য শিশিরকণায় ঝলমল করে লক্ষ কোটি বাংলাদেশ।

তারপর বসন্ত। হাওয়া বয় দক্ষিণে। ফুলে ওঠে নৌকার পাল। বৃক্ষের বাকল চিরে বেরিয়ে আসে পাতা। রােদে তা পান্নার মতােই ঝলমল করে। রিপ ভ্যান উইঙ্কল -এর মতাে ‘এ দেশ যেন গাঢ় শীতার্ত রাত্রির দীর্ঘ সুপ্তি থেকে জেগে ওঠে।’ কড়ি ও কোমলে বাঁধা এর জলবায়ু, এর প্রকৃতি। যেমন প্রকৃতি, তেমনি সাহিত্য আর সংস্কৃতি। হেমন্তের ধানী রং উদাস অন্তরাগে যে মাঝি নদীজলে ভাসায় ডিঙি, দূর অচেনা গায়ে কোনােদিন না পাওয়া কলসি কাঁখের বধূটির জন্যে, গলায় তােলে সুর— বর্ষায় খরস্রোতা নদীতে দক্ষ হাতে সেই ধরে হাল।

বলিষ্ঠ মুঠিতে ধরে রাখে লাঙলের বাঁট — জেগে ওঠা চরে নিশীথে প্রতিধ্বনিত হয় তারই হুংকার। এদেশে যেমনি রয়েছে লালন-রবীন্দ্রনাথ, তেমনি নজরুল-মাইকেল। যেমনি নন্দলাল, তেমনি জয়নুল। যেমন আব্বাসউদ্দিন, তেমনি রমেশ শীল কিংবা অমর নট বুলবুল চৌধুরী। খােল-করতালের আদিবাসী উৎসবের পাশে এখানে সকাল-সন্ধ্যায় উচ্চারিত হয় শান্ত, আজান ধ্বনি, বাজে মন্দিরের কাঁসার ঘণ্টা। সুন্দরবনের ডােরাকাটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার আর গােখরার বিশাল ফণার নিচেই তাে এখানে বাস করে আয়তচোখ অসংখ্য হরিণ শিশু। তাই বলতে হয় – বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

বাংলাদেশ প্রকৃতির নন্দনকাননের সৌন্দর্যমণ্ডিত কোনাে সার্থক চিত্রশিল্পীর নিখুঁত চিত্রকর্মের সঙ্গে তুলনীয়। ব-দ্বীপ সদৃশ এ বঙ্গভূমির রয়েছে বিচিত্র ভূভাগ এবং সমুদ্র শুনিত বিস্তীর্ণ উপকূল। সমুদ্র তটরেখা ও ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন যা অবর্ণনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। এখানে আছে সমান্তরাল ভূমি, পাহাড়-পর্বত, জলপ্রপাত, চা-বাগানের আহামরি দৃশ্য, সবুজ গালিচার মতাে শস্য ক্ষেত, মাঠ-প্রান্তর। আর বিশেষ করে মাকড়সার জালের মতাে ছড়িয়ে আছে রূপালি সব ছােট বড় নদনদী। এছাড়া আমাদের এই সবুজ শ্যামল বাংলার প্রকৃতি জুড়ে ছয় ঋতুর অপরূপ খেলা চলে বছর জুড়ে। বাংলাদেশের প্রকৃতি যেন বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের খনি। এর রৌদ্রময় উজ্জ্বল দিন, স্নিগ্ধ জোৎস্নাময় রাত, দিগন্ত জোড়া ছায়াঘন বন-বনানী, কত না নদীর রুপালি ঢেউয়ের হাসি ইত্যাদির তুলনা নেই। এ দেশের কাজলকালাে দিঘির জলে ফুটে থাকা অযুত শাপলার শােভা, মাঠে মাঠে হাওয়ার দোলা, সরষে ফুলের অফুরন্ত সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করে। এমনই বিচিত্র ও অপরূপ সৌন্দর্যের আধার আমাদের এই বাংলাদেশ। আর এ জন্যই এ দেশে এত সাধক, কবি, শিল্পী ও কর্মীর এমন অপূর্ব সমাবেশ। এত রূপ আর এত মহিমার প্রকৃতিঘেরা দেশ আর কি কোথাও আছে?

বাংলাদেশের প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বৈচিত্র্যতা

প্রকৃতির অঢেল সৌন্দর্যের রূপ ছড়িয়ে আছে গােটা দেশ জুড়ে। তবে অঞ্চলভেদে বৈচিত্র্যও আছে। শাল মহুয়ার ঘন বীথি, ঝিলিমিলি ঝিল আর বিশাল বিল প্রকৃতিকে করেছে ঐশ্বর্যশালী ও লাবণ্যময়। পশ্চিম অঞ্চলের অবারিত প্রান্তর, বালুময় পথঘাটে আছে ধূলিধূসর রুক্ষতা। তবে মাঠের পর মাঠ আখের ক্ষেত, আম বাগান ও পানের বরজ আছে। সেখানেও দিগন্ত জুড়ে সবুজ শ্যামলিমা। পূর্বাঞ্চলে নীলাভ পাহাড়ের ঢালে বিছানাে চায়ের বাগানগুলাে যেন সবুজ সিঁড়ির ধাপ দিয়ে সাজানাে। তারই ফাঁকে ফাঁকে ছায়াবীথির বিস্তার। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া – পাহাড়ি নদীর বুকে ঢলে পড়া সূর্যের আভা রঙের কারুকাজ ফুটিয়ে তােলে। মধুপুর ও ভাওয়াল অঞ্চলের প্রকৃতিতে রয়েছে ভিন্নতর দৃশ্যপট। সেখানে গেরুয়া মাটিতে সারি সারি গজারি গাছের বিস্তার। আর দক্ষিণের উপকূল জুড়ে রয়েছে সুন্দরবন।

সেখানে রয়েছে চির সবুজ পাতার টোপর পরা পল্লবঘন তরুবীথি। আর সেখানেই বসতি পেতেছে ডােরাকাটা বাঘ আর চিত্রল হরিণেরা। দক্ষিণের সুনীল সাগরের বুকে ভেসে থাকা দ্বীপাঞ্চলে রয়েছে আর এক ধরনের চিত্র। সেখানে প্রকৃতির দৃশ্যপট তৈরি করেছে তাল-নারকেল-সুপুরির বাগান। বেত-শােলা-কেওড়ার বন আর প্রান্তর জোড়া ধানক্ষেত। সেখানে ঘর বেঁধেছে। সংগ্রামে দুর্জয় মানুষেরা। জলােচ্ছ্বাসের মতাে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে তারা বাঁচে আর সমুদ্র শান্ত থাকলে তারা বাঁচে সাগরের সঙ্গে মিতালি করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর উপমহাদেশের এ দেশটি তাই মন-মাতানাে, দৃষ্টিনন্দন এবং কবি লেখক তৈরিতে সহায়ক হয়েছে। এর সৌন্দর্যে বিভাের হয়ে কবি পেয়েছে ভাষা, মানুষ পেয়েছে আশা। পর্যটক চোখ খুলে মন ভরে উপভােগ করে এর সৌন্দর্য, মেটায় অন্তরের তৃষ্ণা। এর অনুপম নৈসর্গিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য উপভােগের জন্য বাংলাদেশ যুগে যুগে হাতছানি দিয়েছে কাছের ও দূরের ভ্রমণপিপাসুদের। অনেকেই তাদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতায় প্রশক্তি গেয়েছেন বাংলাদেশের মনলােভা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের। এমনই একজন পর্যটকের উক্তিঃ

বাংলাদেশে প্রবেশের হাজার দুয়ার খােলা রয়েছে কিন্তু বেরুবার একটিও নেই।

সমুদ্র সৈকত, লেক ও দ্বীপাঞ্চল

পৃথিবীর দীর্ঘতম বেলাভূমি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। আর এ কক্সবাজারের কথা বললেই চোখে ভাসে মুক্ত আকাশ। সামনে অবারিত জলরাশি।

শুভ্র ফেনিল ঢেউ যে কাউকে মুহূর্তে তন্দ্রাচ্ছন্ন করে ফেলে। রয়েছে সাগর মােহনায় নৈসর্গিক শােভামণ্ডিত দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এছাড়াও রয়েছে সােনাদিয়া দ্বীপ, সাগর কন্যা নিঝুম দ্বীপসহ আরও অনেক দ্বীপের মনলােভা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃশ্যপট। ফয়েস লেকের নৈসর্গিক সৌন্দর্য যেমন অপরূপ তেমনি মােহনীয়। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা। প্রকৃতির কোলে অথই জলরাশি শুধু কৌতূহল জাগায়। এর সমুদ্রতট থেকে দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য। সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালী করে বেঁচে থাকে এখানকার মানুষ।

বনভূমি ও পাহাড়

পৃথিবীর সবচেয়ে বড়াে ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। প্রকৃতির নিজের হাতে গড়া এ বন নানা জীববৈচিত্র্যে ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে, নানা বৃক্ষরাজিতে শােভিত গভীর রহস্যে ভরা। পাহাড়িয়া অঞ্চল বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধতর করেছে। এ অঞ্চলটি বৃহত্তর ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বান্দরবান অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। ময়মনসিংহের মধুপুর ও গাজীপুরের ভাওয়ালের গড়, কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ের বনাঞ্চল যেন অপার সৌন্দর্যের আধার। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িয়া অঞ্চল, গারাে পাহাড়ের পাদদেশ ও সিলেটের সবুজে সবুজে ছাওয়া বিস্তীর্ণ চা বাগানসহ সমগ্র পাহাড়িয়া অঞ্চল জীববৈচিত্র্যে ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ।

পল্লি-প্রকৃতি

তুমি যাবে ভাই, যাবে মাের সাথে। আমাদের ছােট গাঁয়?

হরিতে-হিরণে, সবুজে-শ্যামলে, সুজল-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের এই দেশ বাংলাদেশ।যার মূলভিত্তি ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছােট ছােট গ্রামগুলাে। প্রায় বিরানব্বই হাজার গ্রাম নিয়ে গঠিত এই দেশের শতকরা ৮৫ জন লােক পল্লিগ্রামে বাস করে। পল্লির সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা রূপ নিয়ে কবির কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল-

আমাদের গ্রামখানি ছবির মতন, মাটির তলায় এর ছড়ানাে রতন

নদ-নদী ও হাওর-বাঁওড়

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এর নদী-নালা, হাওড়-বাওড়, খাল-বিল সব মিলে৷ টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া- এক বিচিত্র রূপের অপূর্ব সমারােহ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, আড়িয়াল খাঁ, কর্নফুলী আর বুড়িগঙ্গা যার বুকে ভেসে থাকা রংবেরঙের পাল তােলা সারিসারি নৌকার অপূর্ব দৃষ্টিনন্দন রূপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও মােহনীয় ও আকর্ষণীয় করে তােলেছে। অপরদিকে পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জুড়ে অবস্থিত চলনবিল এবং সিলেট অঞ্চলের হাকালুকি হাওড়সহ অসংখ্য হাওড়-বাওড় এদেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে বিশিষ্টতা দান করেছে। তাই আজ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এগুলাে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে।

বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চল

বাংলাদেশের বেশির ভাগ অঞ্চল পলিগঠিত বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চল। উর্বর এ সমভূমি অঞ্চলে দৃষ্টিগােচর হয় সবুজের সমারােহ। সবুজ মাঠের দিকে তাকালে মনে হয় এ যেন সবুজের বিশাল সমুদ্র। শস্যসম্ভবা সবুজ শ্যমলিমা যখন মৃদুমন্দ বাতাসে আলােড়িত হয় তখন মনে হয় সবুজ উর্মিমালা বুঝিব ধেয়ে যাচ্ছে দিগন্তের পানে।

সংস্কৃতি

হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে গড়া এ দেশ। এ দেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এর রূপমাধুর্যে যেন একটি স্বতন্ত্র মাত্রা যােগ করেছে। বাংলা বর্ষবরণ ও বসন্তবরণের মতাে অনুষ্ঠানগুলাে আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়েছে। এগুলাে রঙ, রূপ ও বৈচিত্রে সমকালীন প্রকৃতির অনুরূপ। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশে এগুলাে ভিন্ন ও রােমাঞ্চকর আমেজ সৃষ্টি করে। ফলে সুপ্ত মনের পাতায় পাতায়, মনের অজান্তেই আমরা এঁকে যাই প্রকৃতির ছবি, লিখি কবিতা, গেয়ে উঠি গান। মন হারিয়ে যায় অজানা ঠিকানায়।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়

বাংলাদেশের প্রকৃতি কখনাে কখনাে ধ্বংসাত্মকরূপে আবির্ভূত হয়। গ্রীষ্মের আগমনে বাংলার প্রকৃতি রুক্ষ ও বিবর্ণ হয়ে ওঠে। প্রচণ্ড তাপে হারিয়ে যায়, সবুজ প্রকৃতির অপরূপ শ্যামল শােভা। ফেটে চৌচির হয়ে যায় ফসলের মাঠ, শুকিয়ে যায় নদী, চারিদিকে কেবল ধু-ধু হাহাকার। ভয়াল রুদ্র রূপ নিয়ে হাজির হয় কালবৈশাখি। এটি উড়িয়ে নিয়ে যায় আমাদের বাড়িঘর, ভেঙে ফেলে গাছপালা। প্রচণ্ড গরমে মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে। মানুষ তখন চাতক পাখির ন্যায় আকাশ পানে চেয়ে থাকে। বর্ষাকালেও প্রকৃতি মাঝে মাঝে ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত বন্যায় সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। বন্যা, জলােচ্ছাসের ফলে মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখকষ্ট ভােগ করতে হয়। উপকূলবর্তী মানুষের সাথে প্রকৃতি সবসময় বৈরী আচরণ করে। জলােচ্ছাসের সাথে তাদের প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। অতিরিক্ত বন্যায় গবাদি পশুর অনেক ক্ষতি সাধিত হয়। শীতকালে আমাদের দেশের গরিব মানুষদের দুঃখের সীমা থাকে না। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষদের বেশি শীতের কষ্ট সহ্য করতে হয়। শীতে বৃদ্ধ ও শিশুদের বেশি কষ্ট হয়ে থাকে। নানান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের সময় কাটাতে হয়।

উপসংহার

বাংলাদেশের প্রকৃতির ন্যায় এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোথাও পরিলক্ষিত হয় না। প্রকৃতিই বাংলাদেশকে আলাদা বৈশিষ্ট্য দান করেছে। বাংলাদেশের ছয়টি ঋতু তাদের সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যে কানায় কানায় ভরিয়ে তুলেছে বাংলার প্রকৃতিকে। এর প্রভাব বাঙালির হৃদয়েও পরিলক্ষিত হয়। প্রকৃতি এ দেশের মানুষের মনকে নানা রঙের আলপনায় বিচিত্র অনুভবে রঙিন করে  তােলে। প্রকৃতির কল্যাণেই আমরা বাংলাদেশে চিরকাল সুখ, সৌন্দর্য ও শান্তি অনুভব করি।

(11)

1. (ক) বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বন্ধুর নিকট বৈদ্যুতিন পত্র প্রেরণ করো।

অথবা,

(খ) একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারীর শূন্য পদে নিয়োগের জন্য আবেদনপত্র লেখো।

0/10SB-22

(ক) উত্তরঃ

New Message

To: safinahmed@gmail.com

Cc:

Bcc:

Subject: বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।

Text: প্রিয় সাফিন

শুভ নববর্ষ। আজ পহেলা বৈশাখ। আশা করছি বন্ধুদের সঙ্গে দিনটা অনেক আনন্দে কাটাবে। আজ বিভিন্ন জায়গায় বাঙালির প্রাণের মেলা বসেছে। সেসব অনুষ্ঠান প্রাণ ভরে উপভোগ করবে। ইলিশ-পান্তা খাবে। সর্বোপরি, তোমার দিনটি আনন্দে কাটুক এই কামনা করি।

রিজভী।

(খ) উত্তরঃ

৮ মে ২০২৪

ব্যবস্থাপনা পরিচালক

পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

৪৩ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সড়ক, ঢাকা-১২১৭

বিষয়: ‘অফিস সহকারী’ পদে নিয়োগের জন্য আবেদন।

জনাব সবিনয় নিবেদন এই যে, গত ২৮ জুন ২০২৪ ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, আপনার প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী পদে লোক নিয়োগ করা হবে। আমি উক্ত পদের একজন প্রার্থী হিসেবে আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য আপনার বিবেচনার জন্য আবেদনপত্রের সাথে উপস্থাপন করছি।

১. নাম : মো. রেজাউল করিম শাহীন

২. পিতার নাম : মো. আব্দুল কাদের ফরাজী

৩. স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- জোরবাড়ীয়া, ডাকঘর- ফুলবাড়ীয়া, থানা- ফুলবাড়ীয়া, জেলা- ময়মনসিংহ।

৪. বর্তমান ঠিকানা : বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা-১২১৯।

৫. জন্ম তারিখ (এস.এস.সি সনদ অনুযায়ী): ১০. ০২. ১৯৮৮।

৬. ধর্ম : ইসলাম।

৭. জাতীয়তা : বাংলাদেশি।

৮. শিক্ষাগত যোগ্যতা :

পরীক্ষার নামপ্রাপ্ত বিভাগ/ গ্রেডপাসের সনবোর্ড/বিশ্বদ্যিালয়
এস.এস.সিA+২০১২ঢাকা বোর্ড
এইচ.এস.সিA২০১৪ঢাকা বোর্ড
বি. কমB২০১৭জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

৯. অভিজ্ঞতা :অফিস সহকারী হিসেবে দুই বছর কাজের অভিজ্ঞতা।

অতএব,

বিনীত প্রার্থনা উল্লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে আমাকে আপনার প্রতিষ্ঠানে অফিসার পদে নিয়োগ প্রদানের জন্য বিবেচনা করলে কৃতজ্ঞ থাকব।

নিবেদক

মাহমুদুল ইসলাম।

সংযুক্তি:

১. শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদপত্রের অনুলিপি।

২. নাগরিকত্বের সনদের অনুলিপি।

৩. অভিজ্ঞতার সনদের অনুলিপি।

৪. দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

* [এখানে পদের নামসহ আবেদনকারী ও পত্র প্রাপকের ঠিকানা-সংবলিত খাম আঁকতে হবে।।

2. (ক) গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকারের উদাহরণসহ সংজ্ঞা লেখ।

অথবা,

(খ) বন্ধনীর নির্দেশ অনুসারে বাক্যান্তর কর (যে কোনো পাঁচটি) :

(i) সদা সত্য কথা বলা উচিত। (অনুজ্ঞাবাচক)

(ii) দেশপ্রেমিককে কে না ভালোবাসে। (নির্দেশাত্মক)

(iii) শহিদের মৃত্যু নেই। (অস্তিবাচক)

(iv) শিশুরা দূষণযুক্ত পরিবেশ চায়। (নেতিবাচক)

(v) দরিদ্র হলেও তার মন ছোট নয়। (যৌগিক)

(vi) মানবতার ধর্মই বড় ধর্ম। (প্রশ্নবোধক)

(vii) ছাত্রদের অধ্যয়নই তপস্যা। (জটিল)

(viii) যেমন কর্ম করবে তেমন ফল পাবে। (সরল)

0/5SB-22

(ক) উত্তরঃ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক পদ বা শব্দের সমন্বয়ে যখন বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ পায় তখন তাকে বাক্য বলে। যেমন— ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীন দেশে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত। উপরের উভয় পদসমষ্টিই মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করছে। সুতরাং এদের প্রত্যেকটি এক-একটি বাক্য।

ক. সরল বাক্য, খ. জটিল বাক্য, গ. যৌগিক বাক্য।

ক. সরল বাক্য: যে বাক্যে একটি মাত্র কর্তা (উদ্দেশ্য) এবং একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া (বিধেয়) থাকে, তাকে সরল বাক্য বলে।

যেমন— ছেলেটি দৌড়াচ্ছে। এখানে ‘ছেলেটি’ উদ্দেশ্য এবং ‘দৌড়াচ্ছে’ বিধেয়।

খ. জটিল বাক্য: যে বাক্যে একটি প্রধান খণ্ডবাক্যের সঙ্গে এক বা একাধিক আশ্রিত বাক্য পরস্পর সাপেক্ষভাবে যুক্ত হয়, তাকে মিশ্র বা জটিল বাক্য বলে।

গ. যৌগিক বাক্য: পরস্পর নিরপেক্ষ দুই বা ততোধিক সরল বা জটিল বাক্য সংযোজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত হয়ে একটি সম্পূর্ণ বাক্য গঠন করলে, তাকে যৌগিক বাক্য বলে।

যেমন— কঠোর পরিশ্রম করব, তবুও ভিক্ষা করবো না।

অথবা,

(খ) উত্তরঃ

i) সদা সত্য কথা বলা উচিত। (অনুজ্ঞাবাচক) (সদা সত্য কথা বলবে।)

(ii) দেশপ্রেমিককে কে না ভালোবাসে। (নির্দেশাত্মক) (দেশপ্রেমিককে সবাই ভালোবাসে।)

(iii) শহিদের মৃত্যু নেই। (অস্তিবাচক) (শহিদ অমর।)

(iv) শিশুরা দূষণমুক্ত পরিবেশ চায়। (নেতিবাচক) (শিশুরা দূষিত পরিবেশ চায় না। )

(v) দরিদ্র হলেও তার মন ছোট নয়। (যৌগিক) (তিনি দরিদ্র কিন্তু মন ছোট নয়।)

(vi) মানবতার ধর্মই বড় ধর্ম। (প্রশ্নবোধক) (মানবতার ধর্মই বড় ধর্ম নয় কী?)

(vii) ছাত্রদের অধ্যয়নই তপস্যা। (জটিল)  (যারা ছাত্র, তাদের অধ্যয়নই তপস্যা।)

(viii) যেমন কর্ম করবে তেমন ফল পাবে। (সরল) (কর্ম অনুসারে ফল পাবে।)

3. (ক) সারাংশ লেখো:

জ্ঞান যে বাহুতে বল দেয়, জ্ঞানের তাই শ্রেষ্ঠ ফল নয়; জ্ঞানের চরম ফল যে তা চোখে আলো দেয়। জনসাধারণের চোখে জ্ঞানের আলো আনতে হবে, যাতে মানুষের সভ্যতার যা সব অমূল্য সৃষ্টি, – তার জ্ঞান-বিজ্ঞান, – তার কাব্যকলা, তার মূল্য জানতে পারে।

জনসাধারণ যে বঞ্চিত, সে কেবল অন্ন থেকে বঞ্চিত বলে নয়, তার পরম দুর্ভাগ্য যে সভ্যতার এইসব অমৃত থেকে সে বঞ্চিত। জনসাধারণকে যে শেখাবে একমাত্র অন্নই তার লক্ষ্য, মনে সে তার হিতৈষী হলেও, কাজে তার স্থান জনসাধারণের বঞ্চকের দলে। পৃথিবীর যেসব দেশে আজ জনসংঘ মাথা তুলেছে, জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষার প্রচারেই তা সম্ভব হয়েছে। তার কারণ কেবল এই নয় যে, শিক্ষার গুণে পৃথিবীর হালচাল বুঝতে পেরে জনসাধারণ জীবনযুদ্ধে জয়ের কৌশল আয়ত্ত করেছে। এর একটি প্রধান কারণ সংখ্যার অনুপাতে জনসাধারণের সমাজে শক্তি লাভের যা গুরুতর বাধা অর্থাৎ সভ্যতা লোপের আশঙ্কা, শিক্ষিত জনসাধারণের – বিরুদ্ধে সে বাধার ভিত্তি ক্রমশই দুর্বল হয়ে আসে।

অথবা,

(খ) ভাবসম্প্রসারণ করো: স্বদেশের উপকারে নাই যার মন কে বলে মানুষ তারে? পশু সেই জন।

0/10SB-22

(ক) উত্তরঃ

সারাংশ: ক্ষুধা মুক্তির সংগ্রামই মানুষের মূল লক্ষ্য নয়। সভ্যতার যেসব অর্জন সেসব উপভোগের জন্য বঞ্চিত মানুষকে প্রস্তুত করতে হবে। শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে সংখ্যাগুরু জনসাধারণের জীবন চেতনা এর অনুকূলে জাগিয়ে তুলতে হবে।

(খ) উত্তরঃ

স্বদেশের উপকারে নাই যার মন কে বলে মানুষ তারে? পশু সেই জন।

মূলভাব : দেশের প্রতি যার ভালোবাসা নেই সেই ব্যক্তি পশুর সমান।

সম্প্রসারিত ভাব : জন্মভূমি মানুষের একটি পরম পবিত্র মধুময় স্থান। জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও মহীয়ান। ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদদী গরীয়সী।’ জন্মভূমির আলো-বাতাস, ফুল-ফল, মাটি-জল আমাদের জীবনকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ‘মিছা মণিমুক্তা হেম, স্বদেশের ি প্রেম। তার চেয়ে রত্ন নাই আর। দেশের প্রতি ভালোবাসা ইমানের অঙ্গ। সুতরাং দেশকে ভালোবাসা এবং দেশের মঙ্গলের জন্য চেষ্টা করা প্রতেকেরই একান্ত কর্তব্য। দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার মধ্যেই নাগরিক জীবনের একটি মহান দিক পরিস্ফুট হয়। স্বদেশের মঙ্গল ও কল্যাণে যিনি উদাসীন, দেশের প্রতি যার কোনো দায়িত্ববোধ নেই বিবেকহীন পশু আর তার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। দেশপ্ৰেম-শূন্য নীচাশয় ব্যক্তিরা কখনোই ভেবে দেখে না যে, দেশের জলাশয় তাদের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে, শস্যক্ষেত্র ক্ষুধার অন্ন যোগাচ্ছে, নদ-নদী, হাওর-বাঁওড় মাছের চাহিদা পূরণ করছে, উদ্যানগুলো সুস্বাদু ফল দ্বারা রসনা পরিতৃপ্ত করছে। যে দেশ নানা দিক থেকে এত উপকার করছে সেই দেশের প্রতি যাদের কোনো কর্তব্য ও ভালোবাসা নেই–নিঃসন্দেহে তারা কৃতঘ্ন। মানুষ বিবেকবান পক্ষান্তরে পশু বিবেকহীন। পশুর একমাত্র চিন্তা তার থাকা-খাওয়া ও উদরপূর্তি। দেশপ্রেমহীন মানুষ ও পশুর অনুরূপ তাদের চিন্তা আত্মস্বার্থকেন্দ্রিক। তারা পশুর মতো নির্বোধ ও বিবেচনাহীন। দেশপ্রেম যার নেই তার মধ্যে কখনোই মহত্বের পরিচয় মিলে না।

মন্তব্য : স্বদেশপ্রেম এবং স্বদেশের কল্যাণ নাগরিক জীবনের একটি অপরিহার্য উপাদান। স্বদেশের উপকারে যিনি উদাসীন তিনি মানুষ হয়েও পশুতুল্য।

4. (ক) উপসর্গের সংজ্ঞা দাও। বাংলা শব্দ গঠনে উপসর্গের ভূমিকা লেখ ।

অথবা,

(খ) ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখ (যে কোনো পাঁচটি) : ধনদৌলত; সতীর্থ; জয় পতাকা; গায়েহলুদ; তেপান্তর; অতীন্দ্রিয়; রাজপথ; প্রগতি।

0/5SB-22

(ক) উত্তরঃ উপসর্গ: কিছু অব্যয়সূচক শব্দাংশ রয়েছে যারা স্বাধীন পদ হিসেবে বাক্য ব্যবহৃত হতে পারে না; বরং শব্দের পূর্বে বসে নতুন অর্থবোধক শব্দ গঠন করতে পারে তাদের উপসর্গ বলা হয়। 

 উপসর্গের ভূমিকা:

১. উপসর্গ বাক্যে অর্থদ্যোতনায়, অনুক্সটকে মতো কাজ করে।

 ২. উপসর্গ শব্দে যুক্ত হয়ে শব্দের অর্থের পরিবর্তন আঁটিয়ে বক্তব্য ওজস্বী করে।

যেমন-

অপ+কর্ম = অপকর্ম (নেতিবাচক অর্থে) অপ+ রূপ= অপরূপ (ইতিবাচক অর্থে)

৩. শব্দকে প্রাঞ্জল ও সুনির্দিষ্ট অবয়বে উপস্থান করে। যেমন সু + অল্প স্বল্প (এখানে ‘সু’ উপসর্গ অল্প ‘শব্দটিকে আরও প্রাঞ্জল ও বৈশিষ্ট্যময় করেছে)

অথবা,

(খ) উত্তরঃ ধন ও দৌলত (দ্বন্দ্ব); সমান তীর্থ যার (বহুব্রীহি); জয় সূচক পতাকা (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়); গায়ে হলুদ দেয়া হয় যে অনুষ্ঠানে (বহুব্রীহি); তে (তিন) প্রান্তরের সমাহার (দ্বিগু); ইন্দ্রিয়কে অতিক্রম করে (অব্যয়ীভাব); পথের রাজা (তৎপুরুষ); প্র (প্রকৃষ্ট) গতি (প্রাদি)

5. (ক) তোমার কলেজে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপনের একটি দিনলিপি রচনা করো।

অথবা,

(খ) দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ ও তার প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ উপযোগী একটি প্রতিবেদন তৈরি করো।

0/10SB-22

(ক) উত্তরঃ

২১. ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বুধবার

রাত ১১টা ৫৮ মিনিট

ঢাকা।

ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ আমাদের দেশের জন্য জাতীয় শহিদ দিবস আর বৃহত্তর পরিসরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আমাদের দেশের দামাল ছেলেরা ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আমাদের দেশের দামাল ছেলেরা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রাজপথে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে দমিয়ে ‘রাখতে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্রের প্রথম ষড়যন্ত্র ভাষা নিয়ে। তাদের • ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিতে সালাম, বরকত, রফিকরা সেদিন রাজপথে আন্দোলনে নেমে শহিদ হয়েছিলেন। সেই ভাষা শহিদদের স্মরণে দিনটা শুরু হলো প্রভাতফেরির মাধ্যমে। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমরা সমবেত হলাম। শিক্ষকবৃন্দ এসে প্রভাতফেরিতে যোগদান করলে শুরু হলো খালি ‘পায়ে আমাদের পদযাত্রা। সে সঙ্গে সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হচ্ছিল ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’। প্রভাতফেরিটি কলেজের শহিদ মিনারে পৌঁছালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এক মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা শহিদদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হলো। তারপর কলেজে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিলাম বন্ধুদের সঙ্গে। কবিতা আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠানের পর কলেজের অধ্যক্ষ ও অন্য শিক্ষকগণ আজকের দিনটির মহিমান্বিত দিক আমাদের সামনে তুলে ধরলেন। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে প্রবন্ধ ও কবিতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন অধ্যক্ষ মহোদয়। আমি নিজেও প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকারের জন্য পুরস্কার পেলাম। অনুষ্ঠান শেষে বাড়িতে এসে বাবাকে পুরস্কার দেখালাম। বাবা খুব খুশি হলেন।

(খ) উত্তরঃ

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: জনজীবন বিপর্যস্ত’

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ঢাকা ॥ ২৭ মে ২০২৪।

সম্প্রতি যে বিষয়টি আমাদের ভাবিত করছে তা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। বর্তমানে আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে দৈনন্দিন জীবনে নেমে এসেছে অপ্রত্যাশিত দুর্ভোগ। এর নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান করছেন অর্থনীতিবিদগণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ অনেকগুলো। প্রথমত, মুনাফালোভী মজুতদাররা প্রায়ই অধিক মুনাফা অর্জনের মানসিকতায় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, বহির্বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যের সংকটের ফলে দেশের বাজারে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায়। তৃতীয়ত, সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা বৃদ্ধি। দেশের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ এরূপ ভাতা পেলেও অসুবিধার দায়ভার বহন করছে সমাজের বৃহত্তম অংশ। এমনকি চাকরিজীবীদের মধ্যেও কেউ কেউ এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। লক্ষণীয় ব্যাপার এই যে, সরকার কর্তৃক মহার্ঘভাতা ঘোষণার পরক্ষণেই অজ্ঞাত কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকে।

6. (ক) বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।

অথবা,

(খ) যে কোনো পাঁচটি শব্দের বানান শুদ্ধ করে লেখ : উচ্চাস; সম্বর্ধনা; শুশ্রূষা; বয়ঃজেষ্ঠ্য; দূরাবস্থা; সুষ্ট; বাল্মিকী; পৈত্রিক

0/5SB-22

(ক) উত্তরঃ বাংলা একাডেমি প্রনীত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ দেওয়া হলো-

(১) তৎসম শব্দে রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন – অর্জন, কর্ম, কার্য, সূর্য ।

(২) সকল অ-তৎসম শব্দে তেদ্ভব, দেশি, বিদেশি) ই, উ -কার হবে । যেমন- আসামি, দাদি, মাস্টারি, হিজরি, ধুলো, সুয্যি।

(৩) এগারো থেকে আঠারো পর্যন্ত সংখ্যাবাচক শব্দে ওকার বসে। যেমন- এগারো, বারো, তেরো, পানেরো, ষোলো, সতেরো, আঠারো

(৪) তৎসম শব্দে ট,ঠ,ড,ন,ঢ-এর পূর্বে যুক্তনাসিকার্বন ন হয়। যেমন – কণ্টক, প্রচন্ড, লন্ঠন ।

(৫) বিদেশি শব্দে শ/স বসে। যেমন – শয়তান, পুলিশ, স্টল, স্টেশন।

অথবা,

(খ) উত্তরঃ  শুদ্ধ বানান: উচ্ছ্বাস, সংবর্ধনা; শুশ্রূষা; বয়োজ্যেষ্ঠ; দুরবস্থা; সুষ্ঠু; বাল্মীকি; পৈতৃক।

7. (ক) যে কোনো দশটি শব্দের বাংলা পারিভাষিক রূপ লেখ : Hygiene; Token; Biography; Aid; Deputation; Eye-wash; Racism; Quack: Oath: Cartoon; War crime Galaxy; Up-to date: Justice; Legend.

অথবা,

(খ) নিচের অনুচ্ছেদটি বাংলায় অনুবাদ কর : In the modern world women have proved that they can go ahead with men shoulder to shoulder. It is not that their only duty is to serve as a mother and wife. They have many things to do there remain many ways open for them. They can work in offices schools, colleges and universities. They have formed a great asset for the nation

0/10SB-22

(ক) উত্তরঃ  পারিভাষিক রূপ: স্বাস্থ্য বিদ্যাঃ প্রতীক; জীবনচরিত্র/ জীবনী; সাহায্য; প্রেষণ: ধোঁকা; বর্ণবাদঃ হাতুড়েঃ শপথ; ব্যঙ্গচিত্র; যুদ্ধাপরাধ; ছায়াপথ; হালনাগাদ; ন্যায়/ বিচার/ বিচারপতি, কিংবদন্তি

অথবা,

(খ) উত্তরঃ আধুনিক বিশ্বে মহিলারা প্রমাণ করেছে যে, তারা পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। শুধু মা ও স্ত্রী হিসাবে কাজ করাই তাদের একমাত্র কর্তব্য নয়। তাদের অনেক কিছু করার আছে। তাদের জন্য অনেক পথ খোলা রয়েছে। তারা অফিস,স্কুল, কলেজ, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতে পারে।জাতির জন্য তারা এক বিশাল সম্পদ তৈরি করেছে।

8. (ক) বিশেষ্য পদ কাকে বলে? উদাহরণসহ বিশেষ্য পদের শ্রেণিবিভাগ বিশ্লেষণ কর।

অথবা,

(খ) নিচের অনুচ্ছেদ থেকে পাঁচটি বিশেষণ পদ চিহ্নিত কর : “আব্বু ছোটোমামা হয়েছে। আব্বু ছোটোমামা হয়েছে।” আড়াই বছরের মেয়ের সদ্য-ঘুমভাঙা গলায় ভাঙা ভাঙা বুলি শুনে সে চমকে ওঠে, মিন্টু কি ঢুকে পড়লো অস্ত্রশস্ত্র হাতে? এর মানে পিছে পিছে ঢুকছে মিলিটারি। তার মানে—। না, দরজার ছিটকিনি ও খিল সব বন্ধ। তাকে কি মিন্টুর মতো দেখাচ্ছে? মিলিটারি আবার ভুল করে বসবে না তো? এর মধ্যে তার পাঁচ বছরের ছেলেটা গম্ভীর চোখে তাকে পর্যবেক্ষণ করে রায় দেয়, “আব্বুকে ছোটোমামার মতো দেখাচ্ছে। আব্বু তা হলে মুক্তিবাহিনী তাই না?”

0/5SB-22

(ক) উত্তরঃ যে শব্দশ্রেণি দ্বারা কোনো ব্যক্তি, জাতি, সমষ্টি, বস্তু, স্থান, কাল, ভাব, কর্ম বা গুণের নাম বোঝায় তাকে বিশেষ্য বলে। যেমন- নজরুল, ঢাকা, মেঘনা, গাছ, পর্বত, নদী, সভা, সমিতি, জনতা, দুঃখ, সুখ ইত্যাদি। বিশেষ্যকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—

১। সংজ্ঞা বা নামবাচক বিশেষ্য: যে বিশেষ্য বিশেষ ব্যক্তি, স্থান, দেশ, শিল্পকর্ম, পত্রিকা, বই, মাস, দিন ইত্যাদির সুনির্দিষ্ট নাম বোঝায় তাকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: রবীন্দ্রনাথ, ঢাকা, বংলাদেশ, পদ্মা, বৈশাখ, শনিবার ইত্যাদি।

২। সাধারণ বিশেষ্য: এ জাতীয় বিশেষ্য বিশেষ বা নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি, স্থান বা জিনিষের নাম না বুঝিয়ে সাধারণ ও সামগ্রিকভাবে ওই শ্রেণিকে বোঝায়। যেমন: ‘মানুষ’ সাধারণ বিশেষ্য, কিন্তু ‘নজরুল’ সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য। এরকম-নদী, পর্বত, গাছ, পাখি ইত্যাদি সাধারণ বিশেষ্য ।

বিশেষ্যের অন্তর্গত শ্রেণিবিভাগ: বিশেষ্যকে— (ক) ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা, (খ) গণনযোগ্যতা, (গ) সজীবতা, (ঘ) অন্য শব্দশ্রেণিজাত বিশেষ্য

হিসেবে ভাগ করা যায়। যেমন: নাম বোঝায় যা দেখা যায়, স্পর্শ করা যায়, ঘ্রাণ নেওয়া যায়, পরিমাপ করা যায়। যেমন: পানি, গোলাপ, হাত ইত্যাদি। (ii) ভাব বিশেষ্য: নির্বস্তুক অবস্থা, মনোগত ভাব বা গুণগত বৈশিষ্ট্য ইত্যাদির নাম বোঝায়। যেমন— আনন্দ, দুঃখ, ইচ্ছা, রাগ, সন্দেহ, সাহস ইত্যাদি।

ক. ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা অনুসারে সাধারণ বিশেষ্যকে দু ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: (i) মূর্ত বিশেষ্য: এ জাতীয় বিশেষ্য এমন ব্যক্তি বা বস্তুর

খ. গণনযোগ্যতা অনুসারে সাধারণ বিশেষ্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন: (i) গণন বিশেষ্য: যেমন: দিন (তিন দিন বা চার দিন), শিক্ষক (শিক্ষকবৃন্দ), অতিথি (অতিথিবৃন্দ) ইত্যাদি। (ii) পরিমাণ বিশেষ্য: যেমন: চাল, ডাল, চিনি, তেল, পানি, মাটি ইত্যাদি। (iii) সমষ্টি বিশেষ্য: যেমন— শ্রেণি, দল, গুচ্ছ, ঝাঁক, জনতা, বাহিনী, সমাজ, সভা, সমিতি মিছিল, শ্রেণি, সংসদ ইত্যাদি।

অথবা, 

(খ) উত্তরঃ বিশেষণ পদ চিহ্নিত: আড়াই; সদ্য-ঘুমভাঙা; ভাঙা ভাঙা পাঁচ; গম্ভীর ।

9. (ক) ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল ও কুফল সম্পর্কে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা করো।

অথবা,

(খ) উপযুক্ত শিরোনামসহ নিচের সংকেত অনুসরণে একটি খুদেগল্প লেখো: বাড়ি বাড়ি ঘুরে কাজ করে আরজিনা বেগম। আরজিনার দুই ছেলে মোতলেব আর আলেপ। বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বড়ো ছেলে মোতালেবকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার আশা বুকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে। কিন্তু মাদকাসক্তির কারণে মোতালেব………..

0/10SB-22

(ক) উত্তরঃ

ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল ও কুফল সম্পর্কে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপঃ

অয়ন : তোর বাসায় ব্রডব্যান্ডের স্পিড কেমন?

অমি : ৫১২এম.বি.পি.এস. রেগুলার; মাঝে মাঝে বাড়ে। আমি খুব একটা ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করি না। আমার ওয়াইম্যাক্স আছে।

অয়ন : তাহলে ভালো স্পিড পাস?

আমি : হ্যা দোস্ত; মাঝে মাঝে সারারাতই ফেসবুক ইউটিউব চলতে থাকে।

অয়ন : যদিও তোর ব্যক্তিগত ব্যাপার; তারপরও আমার কাছে বিষয়টা ভালো লাগল না। এভাবে ইন্টারনেটের ব্যবহার মোটেও ভালো না।

অমি : কেন, এভাবে ব্যবহার করলে সমস্যা কী?

অয়ন : সমস্যা আছে। তুই অনেক বেশি সময় ওখানে দিয়ে ফেলছিস। তাছাড়া তুই শিক্ষামূলক তেমন কিছুও করছিস না।

অমি : শিক্ষামূলক কাজ পরেও করা যাবে; কিন্তু এখন তো মজা করতে হবে।

অয়ন : না রে, ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার না হলে সেটা ক্ষতির কারণই হয়। তোর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখেছিস? কালো দাগ পড়ে গেছে।

অমি : তাহলে কি ব্যবহার বন্ধ করে দেব?

অয়ন : তা তো বলিনি; গঠনমূলক কাজে বেশি ব্যবহার করবি।

অমি : বুঝিনি; একটু সহজ করে বল।

অয়ন : যেমন ধর সমস্ত বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে; তুই এটা নিয়ে পড়তে পারিস। অথবা ভূমিকম্প নিয়ে পড়তে পারিস; যেহেতু আমরা এখন ভূমিকম্পের আতঙ্কের মধ্যে আছি।

অমি : এগুলো তো সারাদিনই টিভিতে দেখায়। এগুলো নিয়ে আবার পড়ার কী আছে?

অয়ন : আচ্ছা তোর যা জানতে ইচ্ছা করে তাই নিয়েই পড়িস। মোটকথা ভালো কিছু জানার জন্যে, শেখার জন্যে ইন্টারনেট ব্যবহার কর।

আমি : আর আনন্দের জন্যে কিছুই করবো না?

অয়ন : আনন্দের জন্যেও ব্যবহার করবি; তবে সেটা নিজের ক্ষতি না করে।

অমি : গলা তো শুকিয়ে গেল; চল একটু চা খাই।

অয়ন : চল, রফিক ভাইয়ের চা-টা ফাটাফাটি। ওখানে গিয়েই খাই।

(খ) উত্তরঃ

‘‘স্বপ্নভঙ্গ জীবন’’

বাড়ি বাড়ি ঘুরে কাজ করে আরজিনা বেগম। আরজিনার দুই ছেলে মোতালেব আর আলেপ। বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বড়ো ছেলে মোতালেবকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার আশা বুকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে। কিন্তু মাদকাসক্তির কারণে মায়ের সেই স্বপ্নভঙ্গ হয়। যখন মোতালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তখন গোটা গ্রামে উৎসবের জোয়ার বইছিল। হতদরিদ্র ঘরের সন্তানের এমন সাফল্যে সবাই আশ্চর্য হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আরজিনা বেগম এবং তার পরিবারের সংগ্রামের চিত্র প্রচারিত হয়। স্থানীয় প্রশাসন এবং বিভিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। গর্বে আরজিনা বেগমের বুকটা যেন ভরে গিয়েছিল। তার আশা একদিন ছেলে, অনেক বড়ো হবে। বড়ো চাকরি করে পরিবারের দুঃখ দূর করবে। তাকে তখন আর কষ্টের গ্লানি বইতে হবে না। এমন স্বপ্ন আরজিনার চোখে-মুখে ভেসে ওঠে। ঋণ গ্রহণকারী এনজিও’র কর্মকর্তাকে তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন সকল ঋণ শোধ করে দেবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তারা। ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার পর মায়ের কষ্টের কথা ভুলে যায়। মা বাড়ি বাড়ি কাজ করে ছেলের লেখাপড়ার খরচ জোগান দেয়। আবার ঋণের টাকার সুদ পরিশোধেও তার মাকে হিমশিম খেতে হয়। অনাহারে-অর্ধাহার থেকেও ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্নে আরজিনা বেগম অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যায়। তার ধারণা ছেলে মন দিয়ে লেখাপড়া করছে! কিন্তু কথায় আছে- ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’। মোতালেবের ক্ষেত্রে এ কথা সম্পূর্ণ সত্য হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাট আঙিনায় পা রাখতেই সে যেন নিজেকে স্বাধীন ভাবতে শুধু করে। অতীত ভুলে বেপরোয় হয়ে ওঠে সে। তার সহপাঠীদের মধ্যে কয়েকজন আগের থেকেই মাদকাসক্ত ছিল। বিত্তশালী পরিবারের এসব সন্তন অর্থের প্রাচুর্যে বেপরোয়া জীবনযাপন করত। মদ ও গাঁজা সেবন তদের কাছে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। টাকা-পয়সার অভাব না থাকায় সহজেই এরা বন্ধু বানাতে সক্ষম হয়। মোতালেব তাদের সংস্পর্শে রঙিন দুনিয়ায় প্রবেশ করে। লেখাপড়ায় মনোযোগী না হয়ে আড্ডায় সে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। সিগারেট খাওয়াতো স্বাভাবিক। এখন সে নিয়মিত মদ, গাঁজা সেবন করে। মায়ের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ করে না। টাকার প্রয়োজনেই কেবল মাকে ফোন করে এবং দুর্ব্যবহার করে। ছেলের এমন আচরণে আরজিনা বেগম নিভৃতে কান্না করে। এদিকে সে পরপর দুই বছর বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। তৃতীয় বছরে এসে তেমন ক্লাসও করেনি। বেশ কয়েকবার মাদকাসক্ত অবস্থায় পুলিশের হাতে আটক হয়। তার মা এসবের কিছুই জানেন না। অনেক কষ্ট করে ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয় মোতালবের মাকে। আরজিনা বেগম তো আশায় আছে ছেলে লেখাপড়া শেষ করলে তার সুখের অন্ত থাকবে না। এনজিওর ঋণের চাপে আরজিনা বেগমকে, তার একমাত্র সম্বল বসতভিটা বন্ধক রাখতে হয়। কিন্তু হায়! মাদকাসক্ত ছেলে তার সব স্বপ্ন নিঃশেষ করে দেয়। হঠাৎ একদিন সকালবেলা তার বাড়িতে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স হাজির হয়; সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। ছেলে তার অতিরিক্ত মদ্যপানে মৃত্যুরবণ করেছে। আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয় আরজিনা বেগমের আর্তনাদে। কী হতে কী হয়ে গেল- কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সে। তার সোনার স্বপ্ন লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। মাদক কেড়ে নিয়েছে জীবন ও স্বপ্ন দুটোই। এভাবেই মাদকাসক্তির কবলে স্বপ্ন মরে যায়।

10. (ক) বাক্য শুদ্ধ করে লেখ (যে কোনো পাঁচটি) :

i) সকল ছাত্রগণ পাঠে মনোযোগী নয়।

(ii) অন্যায়ের প্রতিফল দুনিবার্য।

(iii) বেগম রোকেয়ার মতো বিদ্বান নারী এ কালেও বিরল।

(iv) তার সৌজন্যতায় মুগ্ধ হলাম।

(v) আমি এ ঘটনা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করেছি।

(vi) মাদকাসক্তি ভালো নয়।

(vii) অপমান হবার ভয় নেই।

(viii) প্রয়াত কবিকে আমরা সবাই অশ্রুজলে বিদায় দিলাম ।

অথবা,

(খ) অনুচ্ছেদটি শুদ্ধ করে লেখ :নিজ ব্যক্তিত্বের বৈচিত্র্যতা দেখাতে সে সর্বদা সচেষ্ট। এ লক্ষে বিনা প্রয়োজনে মিটিং চলাকালীন সময়েও সে যখন-তখন দাঁড়িয়ে পড়ে। কেউ তার সমালোচনা করলে অপমানবোধ করে সে। নিজের দৈন্যতা সে বুঝতেই পারে না কখনো। তাই নিজ অহংকারবোধ নিয়েই চলতে থাকে সে।

0/5SB-22

(ক) উত্তরঃ

i) সকল ছাত্রগণ পাঠে মনোযোগী নয়। (সকল ছাত্র/ ছাত্রগণ পাঠে মনোযোগী নয়।)

(ii) অন্যায়ের প্রতিফল দুনিবার্য। (অন্যায়ের প্রতিফল অনিবার্য।)

(iii) বেগম রোকেয়ার মতো বিদ্বান নারী এ কালেও বিরল। (বেগম রোকেয়ার মাতা বিদুষী নারী এ কালেও বিরল।)

(iv) তার সৌজন্যতায় মুগ্ধ হলাম। (তার সৌজন্যে মুগ্ধ হলাম।)

(v) আমি এ ঘটনা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করেছি। (আমি এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি।)

(vi) মাদকাসক্তি ভালো নয়। (মাদকাসক্তি ভালো নয়।)

 (vii) অপমান হবার ভয় নেই। (অপমানিত হবার ভয় নেই।)

(viii) প্রয়াত কবিকে আমরা সবাই অশ্রুজলে বিদায় দিলাম।(প্রয়াত কবিকে আমরা চোখের জলে বিদায় দিলাম।)

অথবা,

(খ) উত্তরঃ নিজ ব্যক্তিত্বের বৈচিত্র্য দেখাতে সে সর্বদা সচেষ্ট। এ লক্ষ্যে বিনা প্রয়োজনে মিটিং চলাকালীন সে যখন-তখন দাঁড়িয়ে পড়ে। কেউ তার সমালোচনা করলে অপমানিতবোধ করে সে। নিজের দীনতা সে বুঝতেই পারে না কখনো। তাই নিজ অহংকারবোধ নিয়েই চলতে থাকে সে।

11. (ক) বাংলা ‘এ’ ধ্বনি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।

অথবা,

(খ) যে কোনো পাঁচটি শব্দের উচ্চারণ লেখ : উল্লাস; ঐকতান; আবশ্যক; চিহ্নিত; স্বাগত; প্রণীত; ব্যতীত; নক্ষত্র।

0/5SB-22

(ক) উত্তরঃ এ’ ধ্বনি উচ্চারণের ৫ টি নিয়ম নিচে দেওয়া হলোঃ

১। শব্দের প্রথমে যদি ‘এ’-কার থাকে এবং তারপরে ই, ঈ, উ, ঊ, এ, ও, য়, র, ল, শ, এবং, হ থাকলে সাধারণত ‘এ’ অবিকৃতভাবে উচ্চারিত হয়। যথাঃ একি (একি), দেখি, (দেখি), মেকি (মেকি), ঢেঁকি (ঢেঁকি), বেশি (বেশী) ইত্যাদি।

২। শব্দের আদ্য ‘এ’-কারের পরে যদি ং (অনুস্বার) ঙ কিংবা ঙ্গ থাকে এবং তারপরে ‘ই’ (হ্রস্ব বা দীর্ঘ) ‘উ’ (হ্রস্ব বা দীর্ঘ) অনুপস্থিত থাকে তবে সেক্ষেত্রে ‘এ’, ‘অ্যা’-কারে রুপান্তরিত হয়। যথাঃ বেঙ [ব্যাঙ, কিন্ত ‘ই’-কার সংযুক্ত হলে বেঙি], খেংরা (খ্যাংরা কিন্তু খেঙ্‌রি), বেঙ্গমা (ব্যাঙ্‌গোমা কিন্তু বেঙ্‌গোমি), লেংড়া (ল্যাঙ্‌ড়া কিন্তু লেঙ্‌ড়ি), নেংটা (ন্যাঙ্‌টা কিন্ত নেঙটি) ইত্যাদি।

৩। এ-কারযুক্ত একাক্ষর (monosyllable) ধাতুর সঙ্গে আ-প্রত্যয়যুক্ত হলে, সাধারণত সেই ‘এ’ কারের উচ্চারণ ‘অ্যা’ কার হয়ে থাকে। যথাঃ খেদা (খেদ্‌+আ=খ্যাদা), ক্ষেপা (ক্ষেপ্‌+আ=খ্যাপা), ঠেলা (ঠেল্‌+আ=ঠ্যালা) ইত্যাদি।

৪। মূলে ‘ই’-কার বা ঋ-কারযুক্ত ধাতু প্রাতিপাদিকের সঙ্গে আ-কার যুক্ত হলে সেই ই-কার এ-কার রূপে উচ্চারিত হবে, কখনো “অ্যা”-কার হবে না। যথাঃ কেনা (কিন্‌ ধাতু থেকে), মেলা (<মিল্‌), লেখা (<লিখ্‌), গেলা (গিল্‌), মেশা (মিশ্‌) ইত্যাদি।

৫। একাক্ষর (monosyllable) সর্বনাম পদের ‘এ’ সাধারণত স্বাভাবিকভাবে অর্থাৎ অবিকৃত ‘এ’-কার রূপে উচ্চারিত হয়। যথাঃ কে, সে, এ, যে ইত্যাদি।

খ) উত্তরঃ

( end of syt 23 )

1. (ক) সারাংশ লেখো:

মানুষের একটা বড়ো পরিচয় সে ভাবতে পারে। করতে পারে যেকোনো বিষয়ে চিন্তা। যে চিন্তা ও ভাব মানুষকে সাহায্য করে মানুষ হতে। পশুপাখিকে পশুপাখি হতে ভাবতে হয় না- পারেও না ওরা ভাবতে বা চিন্তা করতে। সে বালাই ওদের নেই। যেটুকু পারে তার পরিধি অত্যন্ত সংকীর্ণ- বাঁচা ও প্রজননের মধ্যে তা সীমিত। সভ্য- অসভ্যের পার্থক্যও এ ধরনের। যারা যত বেশি চিন্তাশীল, সভ্যতার পথে তারাই তত বেশি অগ্রসর। আর চিন্তার ক্ষেত্রে যারা পেছনে পড়ে – আছে, সভ্যতারও পেছনের সারিতেই তাদের স্থান।

অথবা,

(খ) ভাবসম্প্রসারণ করো: প্রাণ থাকলে প্রাণী হয় কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না।

0/10JB-23

(ক) উত্তরঃ

সারাংশ: মানুষ জন্মগতভাবেই ভাবনা-চিন্তা করতে সক্ষম। এই ক্ষেত্রে অন্য পশুপাখিরা অসহায়। তারা সীমিত পরিধির মধ্যে থেকে জীবিকা ও প্রজনন পদ্ধতি সচল রেখেছে। ভালো-মন্দ চিন্তা করার সক্ষমতা সভ্যতার মাপকাঠি নির্ণয় করে।

(খ).উত্তর:

মূলভাব: প্রাণীর শুধু প্রাণ আছে বলেছ তারা প্রাণ। মানুষের মন বা বিবেক আছে কিন্তু পশুদের তা নেই। কিন্তু মন এমন এক অমূল্য সম্পদ যার প্রভাবে মানুষ প্রাণী হয়েও মানুষ নামে পরিচিত। মনই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে পৃথক করেছে ।

সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীতে যত প্রকার জীব রয়েছে তার প্রতিটিরই প্রাণ

আছে। এ বিচারে মানুষও অন্য দশটা প্রাণীর মতো একটা প্রাণী। শুধু মনই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে। পৃথিবীতে নিজেকে । আত্মপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য মানুষকে মহৎ গুণাবলির অধিকারী হতে হয়। মানুষের মধ্যে দুটি সত্তা বিরাজমান- একটি প্রাণীসত্তা, অন্যটি মানবসত্তা। শুধু প্রাণকে ধারণ করেই মানুষ নামের যোগ্য হওয়া যায় না। জগতের অন্যান্য প্রাণীর প্রাণ আছে, অনুরূপ মানুষেরও প্রাণ আছে। কিন্তু মানুষের মাঝে এমন কতগুলো মানবীয় বৈশিষ্ট্য আছে, যা অন্য প্রাণীর নেই। এখানেই মানুষের সঙ্গে অন্যান্য প্রাণীর পার্থক্য। মানুষের মন আছে বলেই মানুষ তার হৃদয়বৃত্তির বিকাশের সুযোগ পেয়েছে। তাই অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা হয়ে দৈনন্দিন জীবনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ- লালসা স্বার্থচিন্তা, কুমন্ত্রণা ইত্যাদির ক্লেদাক্ত স্পর্শ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারে। পৃথিবীতে যে প্রাণী মানবদেহের আকৃতি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেও তার হৃদয়বৃত্তির বিকাশ ঘটাতে পারেনি এবং তার মনের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারেনি- সে মূলত প্রাণীর সমতুল্য। যে মানুষ ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় বিবেচনা করতে পারে এবং মনের মধ্যে মহৎ গুণাবলি অর্জন করে, সে যথার্থ মনুষ্যত্বের অধিকারী হতে পারে। মনের বিকাশের মাধ্যমে মানুষ মহৎ গুণাবলি অর্জন করতে পারে এবং যথার্থ মানুষের মর্যাদা পায়। তাই শুধু প্রাণ নয়, মনই মানুষকে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

মন্তব্য: মানুষ এবং পশুর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে- মানুষের বিচার-বুদ্ধির ক্ষমতা, মহানুভবতা, ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি গুণ রয়েছে, কিন্তু পশুর নেই। শুধু প্রাণই নয়, মন বা বিবেকই মানুষকে মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আত্মপরিচয়ের মর্যাদা দিয়েছে।

2. (ক) অর্থ অনুসারে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।

অথবা,

(খ) বাক্য রূপান্তর কর (যে কোনো পাঁচটি)

(i) দুর্জনকে দূরে রাখা উচিত। (অনুজ্ঞাবাচক)

(ii) এখানে আসতেই হলো। (নেতিবাচক)

(iii) সাহিত্য জীবনের স্বাভাবিক প্রকাশ। (প্রশ্নবাচক)

(iv) সূর্যোদয়ে অমানিশা কেটে যাবে। (জটিল)

(vi) রচনায় সহজবোধ্য শব্দ ব্যবহার করা উচিত। (অনুজ্ঞা)

(vi) শীতের পিঠা খেতে খুব মজা। (বিস্ময়সূচক)

(vii) যা তার প্রাপ্তি তাই তার দান। (সরল)

(viii) বাংলাদেশ চিরস্থায়ী হোক। (নির্দেশাত্মক)

0/5JB-23

(ক) উত্তরঃ অর্থ অনুসারে বাক্যকে ৭ ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ-

১। বর্ণনাত্মক বা নির্দেশাত্মক বাক্য
২। প্রশ্নবোধক বা প্রশ্নাত্মক বাক্য
৩। অনুজ্ঞা বা আদেশসূচক বাক্য
৪। ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক বাক্য
৫। কার্যকারণাত্মক বাক্য
৬। সংশয়সূচক বা সন্দেহদ্যােতক বাক্য
৭। আবেগসূচক বাক্য

# বর্ণনাত্মক বা নির্দেশাত্মক বাক্যঃ যে বাক্য দ্বারা কোন কিছু বর্ণনা বা বিবৃতি করা হয় তাকে, বর্ণনাত্মক বা নির্দেশাত্মক বাক্য বলে। যেমন – গরু মাঠে ঘাস খায়। স্মৃতিসৌধ সাভারে অবস্থিত।

বর্ণনাত্মক বা নির্দেশাত্মক বাক্য আবার দুপ্রকার। যথাঃ অস্থিবাচক বা হ্যাঁ বোধক বাক্য, নেতিবাচক বা না বোধক বাক্য।

# অস্থিবাচক বা হ্যাঁ বোধক বাক্য: যে বাক্য দ্বারা কোন ঘটনা, ভাব বা বক্তব্যের অস্থিত্ব বা হ্যাঁ সূচক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে অস্থিবাচক বা হ্যাঁ বোধক বাক্য বলে। যেমন – ইফাদ চুপ করে রইল।

# নেতিবাচক বা না বোধক বাক্য: যে বাক্য দ্বারা কোন ঘটনা, ভাব বা বক্তব্যের না সূচক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে নেতিবাচক বা না বোধক বাক্য বলে। যেমন – ইফাদ কোন কথা বলল না।

# প্রশ্নবোধক বা প্রশ্নাত্মক বাক্য: যে বাক্য দ্বারা কোন কিছু জিজ্ঞেস করা বা জানতে চাওয়া হয়, তাকে প্রশ্নবোধক বা প্রশ্নাত্মক বাক্য বলে। যেমন – তুমি কোন ক্লাসে পড়?, যাবে নাকি?

# অনুজ্ঞা বা আদেশসূচক বাক্য: যে বাক্য দ্বারা আদেশ, নিষেধ, উপদেশ, আবেদন, অনুরোধ ইত্যাদি বোঝায়, তাকে অনুজ্ঞা বা আদেশসূচক বাক্য বলে। যেমন: সদা সত্য কথা বলবে।

# ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক বাক্য: যে বাক্য দ্বারা মনের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, প্রার্থনা, আশীর্বাদ ইত্যাদি প্রকাশ পায়, তাকে ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক বাক্য বলে। যেমন – তোমার মঙ্গল হোক।

# কার্যকারণাত্মক বাক্য: যে বাক্য দ্বারা কোন কারণ বা শর্ত বোঝায়, তাকে কার্যকারণাত্মক বাক্য বলে। যেমন – দুঃখ বিনা জগতে সুখ লাভ করা যায় না।

# সংশয়সূচক বা সন্দেহদ্যােতক বাক্য: যে বাক্য দ্বারা কোন সন্দেহ, সংশয় কিংবা কোন সম্ভাবনা প্রকাশ পায় তাকে সংশয়সূচক বা সন্দেহদ্যােতক বাক্য বলে। যেমন – হয়তো সুদিন আসবে।

# আবেগসূচক বাক্য: যে বাক্য দ্বারা হর্ষ, বিষাদ, আনন্দ, বিস্ময়, বিহ্বল বা মনের আকস্মিক আবেগ বাা উচ্ছ্বাস প্রকাশ পায়, তাকে আবেগসূচক বাক্য বলে। যেমন: আহা! কী দেখিলাম!

(খ) উত্তরঃ

(i) (অনুজ্ঞাবাচক) দুর্জনকে দূরে রাখবে।

(ii) (নেতিবাচক) এখানে না এসে পারলাম না।

(iii) (প্রশ্নবাচক) সাহিত্য জীবনের স্বাভাবিক প্রকাশ নয় কি ?

(iv) (জটিল) যখন সূর্যোদয় হবে, তখন অমানিশা কেটে যাবে।

(vi) (অনুজ্ঞা) রচনায় সহজবোধ্য শব্দ ব্যবহার করবে।

(vi) (বিস্ময়সূচক) শীতের পিঠা খেতে কী মজা!

(vii) (সরল) প্রাপ্তিই তার দান।

(viii) (নির্দেশাত্মক) বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

3. (ক) ‘ব’-ফলা উচ্চারণের যে কোনো পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।

অথবা,

(খ) যে কোনো পাঁচটি শব্দের উচ্চারণ লেখ : পর্যন্ত, বিজ্ঞাপন, অধ্যক্ষ, ব্যতিক্রম, গণতন্ত্র, দুঃখ, অসহ্য, গ্রহণ।

0/5JB-23

(ক) উত্তরঃ ব-ফলা উচ্চারণের ৫ টি নিয়ম নিচে দেওয়া হলোঃ

১। আদ্য ব্যঞ্জনবর্ণে ‘ব’-ফলা সংযুক্ত হলে সাধারণত সে ব-ফলার কোনো উচ্চারণ হয় না। যেমনঃ স্বাধিকার (শাধিকার্‌), স্বদেশ (শদেশ্‌), জ্বালা (জালা), ত্বক (তক্‌), শ্বাপদ (শাপদ্‌) ইত্যাদি।

২। শব্দের মধ্যে কিংবা শেষে ‘ব’-ফলা থাকলে সংযুক্ত বর্ণের উচ্চারণ দ্বিত্ব ঘটে থাকে। যথাঃ দ্বিত্ব (দিত্‌তো), বিশ্ব (বিশ্‌শো), বিশ্বাস (বিশ্‌শাশ), বিদ্বান (বিদ্‌দান), পক্ক (পক্‌কো) ইত্যাদি।

৩। উৎ (উদ্‌), উপসর্গযোগে গঠিত শব্দের ‘ৎ’ (দ্‌)-এর সঙ্গে ‘ব’-ফলার ‘ব’ বাংলা-উচ্চারণে সাধারণত অবিকৃত থাকে। যথাঃ উদ্বেগ (উদ্‌বেগ্‌), উদ্বোধন (উদ্‌বোধন্‌), উদ্বেলিত (উদ্‌বেলিতো), উদ্বিগ্ন (উদ্‌বিগ্‌নো) ইত্যাদি।

৪। বাংলা শব্দে ক্‌ থেকে সন্ধির সূত্রে আগত-‘গ’ এর সঙ্গে ‘ব’-ফলা যুক্ত হলে সেক্ষেত্রে ‘ব’-এর উচ্চারণ প্রায়শ অক্ষত থাকে। যথাঃ দিগ্বিদিক (দিগ্‌বিদিক্‌), দিগ্ববলয় (দিগ্‌বলয়), দিগ্বিজয় (দিগ্‌বিজয়), ঋদ্বেগ (রিদ্‌বেগ্‌) ইত্যাদি।

৫। এছাড়া ‘ব’-এর সঙ্গে এবং ‘ম’-এর সঙ্গে ‘ব’-ফলা যুক্ত হলে, সে ‘ব’-এর উচ্চারণ অবিকৃত থাকে। যথাঃ ব-এর সঙ্গেঃ বাব্বা (বাব্‌ বা), সব্বাই (শব্‌বাই), শাব্বাশ (শাব্‌বাশ্‌), তিব্বত (তিব্বত্‌), নব্বই (নোব্‌বোই) ইত্যাদি।

(খ) উত্তরঃ

4. (ক) একুশের চেতনা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা করো।

অথবা,

(খ) নিচের উদ্দীপকটি অনুসরণে একটি খুদেগল্প লেখো:

সবুজ শ্যামল এই প্রকৃতিকে উজাড় হতে দেখে বেদনায় তৃণার মনটা কেঁদে ওঠে……..

0/10JB-23

(ক) উত্তরঃ

‘একুশের চেতনা’ বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপঃ

রুমা : নিলু, কেমন আছ? অনেকদিন পরে তোমার সঙ্গে দেখা হলো।

নিলু : আমি ভালো আছি রুমা, তুমি কেমন আছ? সত্যিই অনেক দিন পর।

রুমা : আমিও ভালো আছি, তবে আমি একটা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। আগামী ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে একুশের চেতনা নিয়ে আমাকে একটা বক্তৃতা প্রদান করতে হরে।

নিলু : এটা তো খুব ভালো বিষয়। আশা করি তুমি খুব সুন্দরভাবে বক্তৃতা উপস্থাপন করতে পারবে।

রুমা : একুশের চেতনা বিষয়ে তোমার কি কোনো ধারণা আছে?

নিলু : হ্যাঁ, আমার পরিষ্কার ধারণা আছে। সেজন্য তোমাকে ভাষা দিবসের ইতিহাস জানতে হবে।

রুমা : আমাকে বুঝিয়ে বলো, দয়া করে।

নিলু : ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত থেকে পাকিস্তান আলাদা হয়ে যায়। পূর্ব পাকিস্তান একটি প্রদেশে পরিণত হয়। পাকিস্তান সরকার দেশ পরিচালনার জন্য উর্দু ভাষাকে নির্বাচন করে।

রুমা : কিন্তু আমরা তো বাঙালি, আমাদের দেশ পরিচালনার ভাষা উর্দু হয় কীভাবে?

নিলু : আমি তাই বলছি, আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে ধর্মের ভিত্তিতে যুক্ত হলেও আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি তাদের থেকে আলাদা। তারা একটি ভিন্ন ভাষা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল।

রুমা : তারপর কী হলো?

নিলু : পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ মানুষের মুখের ভাষা ছিল বাংলা আর ৩.২৭ শতাংশ মানুষ উর্দুতে কথা বলতো। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষাকে দমিয়ে রেখে ৩.২৭ শতাংশ মানুষের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র করে।

রুমা : ধন্যবাদ নিলু। তোমার সঙ্গে কথা বলে একুশের চেতনা সম্পর্কে আমি পরিষ্কার ধারণা পেলাম।

নিলু : তোমাকেও ধন্যবাদ মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শোনার জন্যে।

(খ) উত্তরঃ

‘প্রকৃতি বাঁচাও’

সবুজ শ্যামল এই প্রকৃতিকে উজাড় হতে দেখে বেদনায় তৃণার মনটা কেঁদে ওঠে। কিছুদিন আগেও তার বাড়ির চারপাশে সারি সারি গাছ ও বনের উপস্থিতি ছিল। আঁকাবাঁকা সরু পথ দিয়ে বাড়িতে যেতে হৃদয়টা জুড়িয়ে যেত। ছায়াঘেরা নির্মল পরিবেশ হৃদয় ছুঁয়ে যেত। তৃণা যেখানেই যেত, তার গ্রামের এ প্রাকৃতিক পরিবেশ তাকে আকর্ষণ করত প্রবলভাবে। কোথাও গেলে প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসার জন্য সে ব্যাকুল হয়ে যেত। এবার পরীক্ষা থাকায় অনেক দিন তার গ্রামে যাওয়া হয়নি। প্রায় তিন মাস পর গ্রামে এসে সে অবাক হয়ে গেল। সবুজে ঘেরা গ্রামীণ পরিবেশ যেন হঠাৎ পালটে গেছে। বড়ো অচেনা মনে হচ্ছে তার নিজ গ্রামকে। নানা জাতের ছোটো-বড়ো গাছগাছালির সমাহারে যে গ্রামখানি তাকে মায়ার ডোরে বেঁধে রেখেছিল; যেখানে পাখিরা আপন মনে কিচিরমিচির করত; সন্ধ্যায় ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক যেখানে নিত্য শোনা যেত; সবুজ শ্যামল গ্রামে গাছে গাছে শোভা পেত নানা রকমের ফুল ও সুস্বাদু ফল; আজ সেখানে এসবের কোনো চিহ্ন নেই। ছায়া সুনিবিড় গ্রামখানি আজ রুক্ষ মূর্তি ধারণ করেছে। প্রকৃতি যেন চিৎকার করে বলছে, আমাকে বাঁচাও, বাঁচাও! তৃণার ‘ভেতরে শূন্যতার হাহাকার সবকিছু খানখান করে দিচ্ছে। মানুষ কেন এত নিষ্ঠুর হয়? কীভাবে পারল গাছ কেটে এভাবে উজাড় করতে? মনে মনে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজে সে। গরমের দিনে যে বটের ছায়ায় সে বিশ্রাম নিত, গ্রীষ্মের খরতাপে যেসব গাছের বাতাসে শরীর শীতল হতো- আজ সেসবের অস্তিত্ব নেই। তার মনে আছে, একবার প্রচণ্ড ঝড় হয়েছিল। বাতাসের গতিবেগ এতটাই প্রবল ছিল যে, পাশের গ্রামের কুঁড়েঘরগুলো উড়ে গিয়ে বহুদূরে পড়েছিল। অথচ গাছগাছালিতে ঘেরা তাদের গাঁয়ের একটি ঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কারণ, এ গাছগুলো ঝড়ের তীব্রতাকে মোকাবিলা করে গ্রামের মানুষের ঘরগুলোকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। তার এই ভেবে কষ্ট হয় যে, এখন ঝড় হলে লন্ডভন্ড হয়ে যাবে পুরো গ্রাম। মানুষ কত অবিবেচক হলে এভাবে বনভূমিকে উজাড় করতে পারে- তা ভেবেই পায় না তৃণা। বাড়িতে এসে বাবার কাছে জানতে চায়, গ্রামের এমন পরিবেশ কীভাবে হলো। বাবা তাকে জানান, গ্রামের মানুষ এখন আর কাঁচা ঘরে থাকতে চায় না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় তারা সবাই এখন পাকা বাড়ি নির্মাণে ব্যস্ত। এজন্য গ্রামে বেশ কয়েকটি ইটভাটা স্থাপিত হয়েছে। এসব ইটভাটায় জ্বালানির চাহিদা মেটাতে প্রচুর কাঠ প্রয়োজন হয়। গ্রামের মানুষর টাকার লোভে এবং উন্নত জীবনের আশায় এসব গাছ কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে। গাছ বিক্রির টাকায় ইট কিনে তারা পাকা বাড়ি নির্মাণ করে। ফলে ইটভাটায় গাছের চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি বনভূমি উজাড় হওয়ার পথও প্রশস্ত হয়েছে। মানুষ উন্নত জীবন ও স্বার্থের জন্য প্রকৃতিকে এভাবে ধ্বংস করছে জেনে তৃণা ব্যথিত হয়। সে প্রকৃতির এ দুর্দশা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে গ্রামে একটি সংগঠন গড়ে তোলে, যার নাম ‘আমরা বাঁচাব প্রকৃতি’। এ সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, গাছ কাটতে অনুৎসাহিত করা এবং প্রতিটি বাড়িতে ১০টি করে নতুন গাছের চারা রোপণ করতে উৎসাহিত করা। সেই সঙ্গে প্রকৃতি উজাড় করার ফলে আমাদের কী কী ক্ষতি হবে সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে তোলা। অল্পদিনের মধ্যেই তার এর সংগঠনটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং – মানুষ প্রকৃতি রক্ষার উপযোগিতা বুঝতে সক্ষম হয়। মাত্র পাঁচ বছরের ব‍্যবধানে তৃণার সংগঠনের প্রচেষ্টায় তার গ্রামটি আবার সবুজে সবুজে ভরে ওঠে। তার এমন অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একজন পরিবেশবান্ধব মানুষ হিসেবে সে জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হয়।

5. (ক) যে কোনো পাঁচটি বাক্যের অপপ্রয়োগ শুদ্ধ করে লেখ :

(i) আমি সাক্ষী দিব না।

(ii) এক পৌষে শীত যায় না। 

(iii) সব পাখিরা ঘরে আসে না।

(iv) আমি সন্তোষ হলাম।

(v) দৈন্যতা সবসময় ভালো নয় ।

(vi) অপমান হবার ভয় নেই।

(vii) তিনি স্বস্ত্রীক নিউমার্কেটে গিয়েছেন।

(viii) তাহাকে এখান থেকে যাইতে হবে। 

অথবা

(খ) নিচের অনুচ্ছেদের অপপ্রয়োগগুলো শুদ্ধ করে লেখ : বৃষ্টি চলাকালীন সময়ে অসীম ফিরে এল। সে খুবই সুবুদ্ধিমান । তার আপাদমস্তক পর্যন্ত ভেজা। পোশাক পাল্টানো আবশ্যকীয়। কিন্তু প্রথমেই সে আকণ্ঠভোজন করিল। তা দেখে অসীমের মা বিস্মিত হলেন। তবে, অসীম নিঃসন্দিহান যে, তার অসুখ হবে না।

0/5JB-23

(ক) উত্তরঃ

(i) আমি সাক্ষ্য দিব না।

(ii) এক মাঘে শীত যায় না। 

(iii) সব পাখি ঘরে আসে না।

(iv) আমি সন্তুষ্ট হলাম।

(v) দৈন্য/ দীনতা সবসময় ভালো নয় ।

(vi) আপমানিত হবার ভয় নেই।

(vii) তিনি সস্ত্রীক/স্ত্রীসহ নিউমার্কেটে গিয়েছেন।

(viii) তাহাকে এখান যেতে যাইতে হবে। 

(খ) উত্তরঃ বৃষ্টি চলাকালীন/বৃষ্টির সময়ে অসীম ফিরে এল। সে খুবই বুদ্ধিমান। তার আপদমস্তক ভেজা। পোশাক পাল্টানো আবশ্যক । কিন্তু প্রথমেই সে আকণ্ঠভোজন করল। তা দেখে অসীমের মা বিস্মিত হলেন। তবে অসীম নিঃসন্দেহ যে তার অসুখ হবে না।

6. (ক) “উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে” ব্যাখ্যা কর।

অথবা,

(খ) ব্যাসবাক্যসহ সমাস নির্ণয় কর (যে কোনো পাঁচটি) : একচোখা, ছিন্নবস্তু, ফুলকুমারী, জলচর, উদ্বেল, তেপান্তর, অভূতপূর্ব, একাদশ।

0/5JB-23

(ক) উত্তরঃ অর্থহীন অথচ অর্থদ্যোতক যেসব অব্যয় নাম শব্দ বা কৃদন্ত শব্দের আগে বসে শব্দগুলোর অর্থ সংকোচন, প্রসারণ বা অন্য কোনো পরিবর্তন সাধন করে থাকে, তাদের বাংলায় উপসর্গ বলে।

উপসর্গের কোন অর্থবাচকতা নেই, অর্থদ্যোতকতা আছে মাত্র। এগুলো নাম শব্দ বা কৃদন্ত শব্দের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে যদি স্বাধীনভাবে থাকে, তাহলে এদের কোনো অর্থ হয় না। আর যদি নাম শব্দ বা কৃদন্ত শব্দ কোনো একটির সঙ্গে যুক্ত হয়, তবেই এগুলো আশ্রিত শব্দকে অবলম্বন করে বিশেষ বিশেষ অর্থদ্যোতকতা সৃষ্টি করতে পারে।

তবে বাংলায় ‘অতি’ ও ‘প্রতি’ এ দুটো উপসর্গ কখনো কখনো স্বাধীনভাবেও প্রয়োগ হতে পারে।

(খ) উত্তরঃ

একদিকে চোখ যার (প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি); ছিন্ন যে বস্ত্র (সাধারণ কর্মধারয়); কুমারী ফুলের ন্যায় (উপমিত কর্মধারয়); জলে চরে যে (উপপদ তৎপুরুষ); বেলাকে অতিক্রান্ত (অব্যয়ীভাব); তিন প্রান্তরের সমাহার (দ্বিগু); পূর্বে ভূত নয় যা (নঞ তৎপুরুষ); একের অধিক দশ (কর্মধারয়)।

7. (ক) বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম উদাহরণসহ লেখ।

অথবা,

(খ) যে কোনো পাঁচটি শব্দের শুদ্ধ বানান লেখ : বাংগালী, দূরাবস্থা, মহত্ব, বাঞ্চনীয়, ইতিপূর্বে, শান্তনা, কথোপোকোথন, মুমূর্ষ।

0/5JB-23

(ক) উত্তরঃ বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম নিম্নরূপ :

১. যেসব শব্দে ই, ঈ বা উ, ঊ উভয় শুদ্ধ কেবল সেসব শব্দে ই বা উ এবং কার চিহ্ন  িবা  ু হবে। যেমন—পল্লী, ধরণি, শ্রেণি, সূচিপত্র, রচনাবলি ইত্যাদি।

২. রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন—অর্জন, কর্ম, কার্য, সূর্য ইত্যাদি।

৩. সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম স্থানে ং হবে। যেমন—অহম্ + কার = অহংকার, সম্ + গীত = সংগীত ইত্যাদি।

৪. শব্দের শেষে বিগর্স (ঃ) থাকবে না। যেমন—কার্যত, প্রথমত, প্রধানত, প্রায়শ, মূলত ইত্যাদি।

৫. সব অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই, ঊ এবং এদের কারচিহ্ন  ি বা  ু ব্যবহার হবে। যেমন—আরবি, আসামি, ইংরেজি, বাঙালি, সরকারি, চুন ইত্যাদি।

(খ)উত্তরঃ শুদ্ধ বানান: বাঙালি, দুরবস্থা, মহত্ত্ব, বাঞ্ছনীয়, ইতোপূর্বে/ইতঃপূর্বে, সান্ত্বনা, কথোপকথন, মুমূর্ষু।

8. (ক) যে কোনো দশটি শব্দের বাংলা পারিভাষিক রূপ লেখঃ

Acting, Cabinet, Copyright, Documentary, Forecast, Hostage Instalment, Judgement, Manifesto, Note, Public works, Vacation.

অথবা,

(খ) নিচের অনুচ্ছেদটি বাংলায় অনুবাদ কর : Our total environment influences our life and way of our living. The main elements of human environment are men, animals, plants, soil, air and water. There are relationship between these elements. When these relationships are disturbed, life becomes difficult or impossible.

0/10JB-23

(ক) উত্তরঃ পারিভাষিক রূপ: ভারপ্রাপ্ত, মন্ত্রিপরিষদ বা মন্ত্রিসভা, লেখস্বত্ব, প্রামাণ্য বা দলিলমূলক, পূর্বাভাস, জিম্মি, কিস্তি, রায়, ইশতেহার, মন্তব্য, গণপূর্ত, অবকাশ বা ছুটি।

(খ) উত্তরঃ আমাদের মোট পরিবেশ আমাদের জীবন এবং আমাদের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। মানব পরিবেশের প্রধান উপাদান হল মানুষ, প্রাণী, গাছপালা, মাটি, বায়ু এবং জল। এই উপাদানগুলির মধ্যে সম্পর্ক আছে। যখন এই সম্পর্কগুলি বিঘ্নিত হয়, তখন জীবন কঠিন বা অসম্ভব হয়ে ওঠে।

9. (ক) উদাহরণসহ ক্রিয়া পদের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।

অথবা,

(খ) নিম্নোক্ত যে কোনো পাঁচটি বাক্যের নিম্নরেখ শব্দের ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি নির্ণয় কর :

(i) পায়ে হাঁটা পথ ধরে সোজা এগিয়ে চললাম। 

(ii) দারুণ সুন্দর দেখতে।

(iii) সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু।

(iv) বুঝিয়াছিলাম মেয়েটির রূপ বড় আশ্চর্য।

(v) সবাই রাঙামাটি যেতে চাইছে।

(vi) বিপদ কখনও একা আসে না।

(vii) বেশ, তাই হবে।

(viii) কাজটা ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

0/5JB-23

(ক) উত্তরঃ যে পদ দিয়ে কোনো কাজ করা,  হওয়া ইত্যাদি বোঝায়, সেগুলোকে ক্রিয়াপদ বলে। যেমন—লেখে, পড়ে, যায়, খায় ইত্যাদি।

অর্থের দিক থেকে ক্রিয়াপদ দুই প্রকার:

১. সমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়াপদের প্রয়োগে বাক্যের অর্থ সবটুকু প্রকাশ পায় তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন: ক্লাস শুরু হয়েছে। ফল বেরিয়েছে।

২. অসমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়াপদের সাহায্যে বাক্যের অর্থ সবটুকু প্রকাশ হয় না, সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশের জন্য আর কিছু ক্রিয়ার প্রয়োজন পড়ে, সেগুলোকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন: পরীক্ষার জন্য তৈরি হয়ে এসো। ভালো ফল হলে সবাই খুশি। এসব বাক্যে ‘হয়ে’, ‘হলে’ এসব ক্রিয়াপদ পর্যন্ত বললে অর্থের সম্পূর্ণ প্রকাশ হয় না। তাই এগুলো অসমাপিকা ক্রিয়াপদ।

গঠনের দিক থেকেও ক্রিয়াপদকে ভাগ করা যায়—

১. মৌলিক ক্রিয়া: যেসব ক্রিয়াপদ  মৌলিক ধাতু থেকে গঠিত হয়, তাকে মৌলিক ক্রিয়া বলে।  যেমন: সে ভাত খায় (খা+য়)।

২. যৌগিক ক্রিয়া: অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে অন্য কোনো ধাতু যোগে যে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়, তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন: সে পাস করে গেল।

৩. প্রযোজক ক্রিয়া বা ণিজন্ত ক্রিয়া: যে ক্রিয়া একজনের প্রযোজনা বা উদ্যোগে অপরজন কর্তৃক সম্পাদিত হয়, তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বা ণিজন্ত ক্রিয়া বলে। যেমন: শিক্ষক ছাত্রকে পড়ান।

বাক্যে ব্যবহারের সময় ক্রিয়ার কর্ম থাকা না থাকার দিক থেকে ক্রিয়াপদকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—

১. সকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্ম থাকে, তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। 
যেমন: ছাত্ররা বই পড়ে। এখানে ‘পড়ে’ ক্রিয়ার কর্ম ‘বই’। সে জন্য ‘পড়ে’ সকর্মক ক্রিয়া।

২. অকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্ম থাকে না, তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে। 
যেমন: সে বাড়ি যায়। এখানে ‘যায়’ ক্রিয়ার কোনো কর্ম নেই বলে তা অকর্মক ক্রিয়া। (‘বাড়ি’ কর্ম নয়, অধিকরণ)

৩. দ্বিকর্মক ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। 
যেমন: শিক্ষক ছাত্রকে অঙ্ক করান। এখানে ‘ছাত্রকে’ ও ‘অঙ্ক’-এ দুটি কর্ম আছে বলে ‘করান’ ক্রিয়াটি দ্বিকর্মক ক্রিয়া।

(খ) উত্তরঃ

(i) পায়ে হাঁটা পথ ধরে সোজা এগিয়ে চললাম। (বিশেষণ)

(ii) দারুণ সুন্দর দেখতে। (বিশেষণের বিশেষণ)

(iii) সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু। (অনুসর্গ)

(iv) বুঝিয়াছিলাম মেয়েটির রূপ বড় আশ্চর্য। (ক্রিয়া)

(v) সবাই রাঙামাটি যেতে চাইছে। (সর্বনাম)

(vi) বিপদ কখনও একা আসে না। (বিশেষ্য)

(vii) বেশ, তাই হবে। (আবেগ)

(viii) কাজটা ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। (ক্রিয়া বিশেষণ)

10. (ক) বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের অনুভূতি ব্যক্ত করে একটি দিনলিপি রচনা করো।

অথবা,

(খ) ‘শীতার্ত মানুষের দুঃসহ জীবন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন রচনা করো।

0/10JB-23

(ক) উত্তরঃ

১৪ এপ্রিল ২০২৪

রবিবার

রাত ১১টা ৪৫ মিনিট

ঝিনাইদহ।

এবার বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে এসেছি গ্রামে। ঠিক গ্রাম নয়, ছোট শহর বলা যায়। সঙ্গে এসেছেন আব্বা, আম্মা, ভাই-বোন, মামা সবাই। ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফুরফুরে বাতাসে কিছুক্ষণ সবুজ প্রকৃতিতে মিশে গেলাম। তারপর পুকুরে গোসল সেরে নতুন পাঞ্জাবি পায়জামা পরে বেরিয়ে পড়লাম। এখানকার স্কুল মাঠের পাশে বিশাল বটগাছের নিচে উদীচীর বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। সবুজ ঘাসের উপর বসে কখনো নবীনদের সম্মিলিত কন্ঠে, কখনো একক কণ্ঠে গান শুনে ভালো লাগল। তিন রাস্তার মোড়ে গেরুয়া পোশাক পরা বাউলরা মন মাতানো গান গাইছেন, শুনলাম কিছুক্ষণ। এর মধ্যেই চাচাত ভাই টেনে নিয়ে চলল নদীর পাড়ে। নৌকাবাইচ হবে। দশ বারোটা নৌকা চমৎকারভাবে সাজানো, ঢোল খঞ্জনি বাজিয়ে গান হচ্ছে। স্থানীয় এমপি সাহেব এসে গেছেন। শুরু হলো বাইচ। নৌকার দু’দিকে বসা রঙিন পোশাক পরা লোকেরা বৈঠা ফেলছে একতালে আর তর তর করে নৌকার ছুটে চলছে। কারা জিতল জানা হলো না, আলোচনা সভায় যোগ দিলাম। আলোচকরা খুব চমৎকার বললেন। নতুন কিছু বিষয় জানলাম। লাঞ্চ প্যাকেট দেওয়া হলো, খেয়ে নিলাম। তারপর ভাই বোনেরা মিলে আব্বা আম্মার সাথে ছুটলাম মেলায়। হাটের মাঠে মেলা। অনেক লোকের সমাগম, হরেক রকম দোকান, নানা রকম আওয়াজ। এর মধ্যে ঘুরে ঘুরে দরদাম করে নানা জিনিস কিনতে এবং দেখতে খুব ভালো লাগছিল। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। সুতারাং সারাদিনের মিষ্টি আনন্দ নিয়ে এবার বাড়ি ফেরা।

(খ) উত্তরঃ

‘শীতার্ত মানুষের দুঃসহ জীবন’

মফস্বল প্রতিনিধি ॥ রংপুর ॥ ১ ডিসেম্বর ২০২৪ ॥ শীতকাল আমাদের এই গ্রীষ্মপ্রধান দেশে শীতের যে হিমশীতল পরশ নিয়ে আসে তা খানিকটা স্বস্তিদায়ক বটে। তাজা শাকসবজি, ফলমূল ও পিঠা-পুলির কারণে অনেকের কাছেই শীতকাল আনন্দময়। তবুও শীতকাল কিছু মানুষের জন্য অভিশাপস্বরূপ। বাস্তুহারা এবং নিম্ন আয়ের লোকজন এ সময় আরও বেশি অসহায় হয়ে পড়ে। জীবনযাত্রার তাগিদে শীতের প্রকোপকে উপেক্ষা করে তারা ঘর ছেড়ে বের হয় কাজের সন্ধানে। কিন্তু গত তিন দিন ধরে দেশজুড়ে বয়ে চলা শৈত্যপ্রবাহের দরুন শীতার্ত মানুষের জীবন দুঃসহ হয়ে উঠেছে। হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ শৈত্যপ্রবাহ আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারীতে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে। শীতের প্রকোপে ইতোমধ্যেই দেশের উত্তরাঞ্চলের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষ শীতের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদের অধিকাংশেরই শীতের কাপড় কেনার মতো সামর্থ্য নেই। শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। গত কয়েকদিনে শীতের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৪ জন মারা গেছে। শীতকালীন সময়ের নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য যেসব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে কর্তৃপক্ষের শৈথিল্যের কারণে সেগুলো তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। তাছাড়া প্রয়োজনের তুলনায় তা নিতান্তই অপ্রতুল। তাই সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ কার্যকর করার পাশাপাশি অসহায় ও শীতার্ত এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব।

11. (ক) পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার উৎসাহ দিয়ে ছোটো ভাইকে একটি ই-মেইল লেখো।

অথবা,

(খ) শিক্ষাসফরে যাওয়ার অনুমতি ও আর্থিক সাহায্য চেয়ে তোমার কলেজের অধ্যক্ষের নিকট একটি আবেদনপত্র লেখো।

0/10JB-23

(ক) উত্তরঃ

New Message

To: bornaislam96@gmail.com

Cc:

Bcc:

Subject: পরীক্ষায় ভালো ফল পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়া প্রসঙ্গে।

Text: বর্ণা, কেমন কাটছে নতুন কলেজ-জীবন? নতুন জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধান হয়েছে তো? আশা করি, এখন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু তুই কি এখনো আগের মতোই আলসেমি করিস? আলসেমিটা ছেড়ে দে। এখন আর আগের মতো অলস জীবন কাটালে চলবে না। একে তো তুই এখন আমাদের থেকে অনেক দূরে থাকিস, তার ওপরে আবার উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য উঁচু ক্লাসে উঠেছিস। আমরা তো এখন আর তোর পাশে নেই যে তোকে পড়ার তাগাদা দেব, তাই বলছি, পরীক্ষায় ভালো ফল করতে হলে পড়লেখার কোনো বিকল্প নেই। এখন তোকে নিজ দায়িত্বেই সব কাজ দেখেশুনে একা একা করতে হবে। নিজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে, সামনে পড়ে আছে তোর ভবিষ্যৎ জীবন। আশা করি, তুই বুঝতে পেরেছিস। বাড়িতে সবাই ভালো আছি। আমাদের জন্য চিন্তা করিস না।

স্বর্ণা।

(খ) উত্তরঃ

২৭ জুন ২০২৪

বরাবর

অধ্যক্ষ

রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী।

বিষয়: শিক্ষাসফরে যাওয়ার অনুমতি প্রসঙ্গে আবেদন।

জনাব,

সবিনয় নিবেদন এই যে, আমরা একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আসন্ন গ্রীষ্মের ছুটি শিক্ষাসফরের মধ্য দিয়ে কাটাব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এগারোসিন্দু এলাকাকে শিক্ষাসফরের স্থান নির্বাচন করেছি। বাংলার বারোভূঁইয়াদের অন্যতম বীরযোদ্ধা ঈশা খাঁর স্মৃতিবিজড়িত এগারোসিন্ধু সফর করে আমরা ঈশা খাঁর আমলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করতে চাই। এ সফরের স্থায়িত্ব হবে চার দিন। আমরা চাঁদা উত্তোলনের মাধ্যমে কিছু টাকা জোগাড় করেছি। অবশিষ্ট টাকা কলেজ ফান্ড থেকে পেলে আমাদের শিক্ষাসফর সফল হবে। আমরা আমাদের প্রত্যেকের অভিভাবকের অনুমতি নিয়েই এ শিক্ষাসফর শুরু করব। আপনার অনুমতি পেলেই আমরা সফরের একটি সুবিধাজনক তারিখ নির্ধারণ করতে পারি। অতএব, শিক্ষাসফরের অনুমতি দান ও আর্থিক সহযোগিতার জন্য আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ করছি।

নিবেদক,

মাহফুজ শাকুরী

সাধারণ সম্পাদক

কলেজ ছাত্র সংসদ জাজিরা ডিগ্রি কলেজ, শরীয়তপুর।

প্রবন্ধ রচনা করো (যেকোনো একটি): (5)

1. জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

0/1JB-23

ভূমিকা: হাজার বছর ধরে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে আসছে। বাঙালির প্রাকৃতিক পরিবেশেই মিশে আছে প্রতিবাদের ভাষা। বিদেশি শক্তির আগ্রাসন এ জাতি কোনোদিনই মেনে নিতে পারেনি। তাই ঔপনিবেশিক শোষকদের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে বারবার বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠেছে। স্বাধীনতার জন্য, মুক্তির জন্য আত্মদানের রক্তে বারংবার সিক্ত হয়েছে বাংলার মাটি। অবশেষে ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি অর্জন করে প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক সে মুক্তিযুদ্ধ যে বোধ বা চেতনাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছিল তারই নাম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তাকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে – মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা আমাদের প্রেরণা জোগাবে অনন্তকাল।

জাতীয়তাবাদী চেতনার জাগরণ: ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের জাঁতাকলে প্রায় দু’শ বছর ধরে নিষ্পেষিত হয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশ। ১৯৪৭ সালে সে জাঁতাকল থেকে উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ মুক্তিলাভ করলেও মুক্তি মেলেনি বাঙালি জাতির। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলেও পাকিস্তানি শাসকদের শৃঙ্খলে বন্দি হতে হয় বাঙালি জাতিকে। সে সময় বাঙালির প্রতি পাকিস্তানি শাসকদের সংকীর্ণ মনোভাব ও শোষণ-নিপীড়ন এ দেশের মানুষকে ভাবিয়ে তোলে। এর মধ্য দিয়ে একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে বাঙালি নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। এ জাতীয়তাবাদী চেতনার নিরিখেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে সংগ্রাম করে মুক্তির পথ খুঁজতে থাকে বাঙালি।

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি: ‘পাকিস্তান’ রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ এ অঞ্চলের মানুষের উপর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এ দেশের জনমানসে অসন্তোষ ও ক্ষোভ ক্রমশই তীব্র হতে থাকে। এরই অনিবার্য ফল হিসেবে ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার জয়লাভ, ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন থেকে ১৯৬৬-র ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর নজিরবিহীন ছাত্র গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিকাশ লাভ করে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে আমাদের যে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে উঠেছে, তার মূলে কাজ করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। গত চার দশকে নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকশিত হয়েছে আমাদের সমাজজীবনে। ব্যক্তিস্বাধীনতা, নারীমুক্তি আন্দোলন, নারীশিক্ষা, গণশিক্ষা, সংবাদপত্রের ব্যাপক বিকাশ সর্বোপরি গণতান্ত্রিক অধিকার ও চেতনা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে সমাজে। দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যে প্রবল গণজোয়ারের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারও প্রেরণা জুগিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সাহিত্যে বিশেষ করে কবিতা ও কথাসাহিত্যে এক নতুন ধারার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশে কবিতাচর্চা তথা সাহিত্যচর্চা আজকে যতটা ব্যাপ্তি পেয়েছে, তার পিছনে বড়ো প্রেরণা হিসেবে ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছে আমাদের গান এবং নাটকে। গণসচেতনতামূলক বক্তব্যধর্মী নাটক ব্যাপকভাবে রচিত হয়েছে স্বাধীনতার পর। আমাদের দেশাত্মবোধক গানের ক্ষেত্রে এক নতুন জোয়ার এনেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অসংখ্য গীতিকার তাঁদের গানে রচনা করেছেন মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাথা। আমাদের চলচ্চিত্রেও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা প্রকাশ পেয়েছে নিয়মিতভাবে।

বর্তমান প্রেক্ষাপট ও আজকের বাংলাদেশ: যে স্বপ্ন বা আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, সেই স্বপ্ন নানা কারণেই গত পাঁচ দশকেও সাফল্যের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। স্বাধীনতার পর বারবার সামরিক অভ্যুত্থান, হত্যা আর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের অপতৎপরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, যুবসমাজের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা, বেকারত্ব, জনস্ফীতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদি অবক্ষয় স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিপন্ন করে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কার্যকলাপ বারবার সংঘটিত হয়েছে প্রশাসনের ভেতরে ও বাইরে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রাপ্য সম্মান এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রয়োজন দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির সংঘবদ্ধ প্রয়াস ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে আন্তরিক পদক্ষেপ। এজন্য দুর্নীতিমুক্ত ও কল্যাণমূলক শাসনব্যবস্থা যেমন প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত গৌরবগাথা আর আত্মত্যাগের ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা।

উপসংহার: মুক্তির চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭১ সালে আমরা কঠিন আত্মত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তখনই সাফল্যে উদ্ভাসিত হবে, যখন এ স্বাধীনতা আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতায় রূপান্তরিত হবে। সে লক্ষ্যে আজ সমাজের সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনাকে ছড়িয়ে দেওয়া ও লালন করা প্রয়োজন। দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের মহৎ লক্ষ্যসমূহ জাগ্রত করা গেলে তবেই আমাদের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এক গৌরবময় স্তরে উত্তীর্ণ হবে।

2. কৃষিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও কৃষক।

0/20JB-23

ভূমিকা: বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করছে এবং প্রায় ৬০ ভাগ কর্মসংস্থানের উৎস হলো কৃষি। আমরা যে শিল্প খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি, সেই শিল্পের কাঁচামালও আসে কৃষি খাত থেকে। দেশের মানুষের খাদ্য উৎপাদনসহ, শিল্প উন্নয়ন ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও কৃষির ভূমিকাই প্রধান। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কৃষি ও কৃষকের উন্নতির উপরই দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভর করে।

জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষি ও কৃষক: যেহেতু আমাদের অর্থনীতির মূল অবকাঠামো কৃষির উপর দন্ডায়মান, সে কারণেই জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষি ও কৃষকের ভূমিকা অপরিমেয়। কৃষি উৎপাদন কম হলে যে শুধু খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে তাই নয়, সেই সাথে যেসব শিল্প, কৃষিভিত্তিক কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল সেসব শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যহত হব। একই সাথে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হবে আকাশচুম্বী। কৃষি উৎপাদন ব্যহত হলে অভ্যন্তরীণ ও বর্হিবাণিজ্য থামকে দাঁড়ায়। অপরদিকে কৃষি উৎপাদন ভালো হলেই দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তাই এ ক্ষেত্রে কৃষকের ভূমিকাই মূখ্য।

জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে কৃষি ও কৃষকের ভূমিকা: যে দেশের অর্থনীতি কৃষির উপর দাঁড়িয়ে আছে, সে দেশের জাতীয় আয়ে কৃষির ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের দেশে শিল্পের কাঁচামাল থেকে শুরু করে খাদ্য দ্রব্যসহ প্রায় সকল উৎপাদিত দ্রব্যের উৎসই হলো কৃষি। দেশের কৃষিজাত বিভিন্ন পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে এবং দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।

খাদ্য উৎপাদনে কৃষি ও কৃষক: বাঙালির খাদ্য তালিকায় অপরিহার্য খাবার ভাত, ডাল, মাছ, শাক-সব্জি, ফল ইত্যাদি সবই কৃষকের চাষাবাদের ফসল। বাংলাদেশের ২.২০ কোটি চাষযোগ্য জমির প্রায় ৯০ ভাগ জমিতেই উৎপাদিত হয় খাদ্য শস্য। এ দেশের ৭০ ভাগ জমি ব্যবহৃত হয় ধান উৎপাদনের জন্য। কিন্তু নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগে এদেশে ফসল নষ্ট হয়। তাছাড়া জনসংখ্যার বিপরীতে চাষযোগ্য জমি কম হওয়ায় এবং বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার না করায় আমরা এখনও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। তবুও ৮০ ভাগ খাদ্য আমাদের কৃষকই যোগান দেয়।

পৃষ্টি সমস্যা সমাধানে কৃষি ও কৃষকের ভূমিকা: পুষ্টিহীনতা আমাদের দেশের একটি অন্যতম সমস্যা। গ্রামের জনসংখ্যার অধিকাংশই অপুষ্টিতে ভুগছে। শতকরা ৭০ জন মহিলা রক্তশূন্যতায় ভুগছে, প্রতিবছর ৩০ হাজার শিশু অন্ধ হয়ে যাচ্ছে ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে। ৪-১৪ বছরের ৭৪ শতাংশ ছেলে এবং ৭৫ শতাংশ মেয়ে রক্তশূন্যতায় ভুগছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলার ১২ লাখ লোক অপুষ্টির করণে গলগন্ড রোগে আক্রান্ত। কৃষক নানা রকম পুষ্টিকর শাকসবজি ও ফল উৎপাদন করে এই পুষ্টিহীনতা দূরীকরণে অবদান রাখছে।

শিল্পায়নে কৃষি ও কৃষকের অবদান: শিল্পায়নেও কৃষির অবদান অবর্ণনীয়। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প বস্ত্রশিল্প। এই শিল্পের মূল কাঁচামাল কৃষি থেকেই আসে। অপরদিকে চিনি শিল্পের মূল কাঁচামাল আখও কৃষি থেকেই আসছে। কৃষকের হাতে উৎপাদিত হচ্ছে গম, যা থেকে তৈরি হচ্ছে উৎকৃষ্ট মানের আটা, ময়দা ইত্যাদি। এভাবেই বাংলাদেশের ছোট বড় প্রায় প্রতিটি শিল্পই কৃষিকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে।

রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে কৃষি ও কৃষকের অবদান: বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশ আসে কৃষি খাত থেকে। সোনালি আঁশের কথা আমরা সকলেই জানি, যা রপ্তানি করে আমাদের দেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। এই সোনালি আঁশ তথা পাট কৃষকেরই উৎপাদিত পণ্য। বর্তমানে পাটজাত নানা দ্রব্য যেমন, থলে, বস্তা প্রভৃতি রপ্তানি হচ্ছে। পাটের পরেই রয়েছে চায়ের স্থান। প্রতিবছর বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণে চা রপ্তানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। তবে বর্তমানে কিছুটা হ্রাস পেলেও এক সময় কৃষিখাত থেকে এদেশের ৭০/৭৫ ভাগ রপ্তানি আয় আসত।

কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কৃষি ও কৃষকেরভূমিকা: বেকার সমস্যা বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা। কৃষি ক্ষেত্রে কাজের জন্য শ্রমিকের প্রয়োজন হয়, ফলে প্রচুর লোক এখান থেকেই জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে। আবার কৃষিজাত কাঁচামাল থেকে হচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠান। সে সব প্রতিষ্ঠানেও প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন। এভাবে সৃষ্টি হচ্ছে অনেক লোকের কর্মসংস্থান।

বাংলাদেশের কৃষক:

‘ভোর না হতেই লাঙ্গল কাধে, মাঠ পানে কে যায়?

সে আমাদের গাঁয়ের কৃষক, বাস আমাদের গায়।’

বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে এমনই কৃষকের বাস। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই, প্রতিটি কৃষক লাঙ্গল কাধে নিয়ে মাঠ পানে ছুটতে থাকে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, অক্লান্ত পরিশ্রম করে সে ফসল ফলায়। ভোরবেলা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে তার এই পরিশ্রম। এভাবেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রতিটি কৃষক আমাদেরই জন্য উৎপাদন করে যাচ্ছে খাদ্য শস্য ও অন্যান্য কৃষিজাত দ্রব্য।

কৃষকের অতীত অবস্থা: বাংলাদেশের কৃষকের অতীত অবস্থা আমরা ইতিহাস, লোককথা, প্রবাদ-প্রবচনের মধ্য দিয়েই বুঝতে পারি। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার বর্ণনায় বাংলাদেশের কৃষকদের কথা স্থান পেয়েছে। এদেশের কৃষকের এক সময় ছিল গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ। সেই সাথে কৃষাণীর পরনে থাকত তাঁতের শাড়ী আর নানা রকম অলংকার।

কৃষকের বর্তমান অবস্থা: অতীতে বাংলাদেশের লোক সংখ্যা ছিল কম, সেই তুলনায় চাষযোগ্য জমি ছিল বেশি, সাথে ছিল উর্বর জমি, সেই কারণে ফসল ফলত অধিক। কিন্তু বর্তমানে এদেশে আর সেই অবস্থা নেই। এখন দরিদ্র, শিক্ষাহীন, অসহায় কৃষক তার কষ্টের ন্যায্য মূল্য আর পায় না। তবে বর্তমানের কৃষকরা মান্ধাতার আমলের কুপমন্ডকতা ও কুসংস্কার থেকে বেরিয়েছে। তাই তার নিজেদের উন্নয়নের চেষ্টা করে চলেছে অবিরাম।

কৃষি ও কৃষকের সমস্যা: বাংলাদেশের কৃষিখাত নানা সমস্যায় জর্জরিত, যার ভুক্তভোগী হচ্ছে এদেশের কৃষকরা। এসব সমস্যা অতিক্রম করে কৃষি কাজ চালিয়ে যেতে তাদের অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। নিম্নে বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকদের কিছু প্রধান সমস্যা তুলে ধরা হলো।

মূলধনের অভাব: বর্তমানে দেশের অধিকাংশ কৃষকই গরীব ফলে তারা প্রায়ই কাজ করতে গিয়ে মূলধন সংকটে পড়ছেন। ফলে সঠিক সময়ে মূলধনের অভাবে সঠিক কাজটি না করতে পেরে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

প্রশিক্ষণের অভাব: কৃষিতে ফলন বাড়ানোর জন্য দক্ষ কৃষকের বিকল্প নেই। আমাদের দেশের বেশিরভাগ কৃষকই অশিক্ষিত এবং অদক্ষ। এমনকি তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেই।

কৃষি উপকরণের অভাব: এদেশের কৃষকরা এখনও পুরাতন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি ও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির অভাবে অনেক পিছিয়ে যাচ্ছেন।

সেচ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা: শুকনো মৌসুমে কৃষকরা ইরি ধান চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সেচ দিতে পারেন না। ফলে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ: প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতি বছর আমাদের দেশের অনেক ফসল নষ্ট হয় এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা।

ত্রুটিপূর্ণ বাজার: আমাদের দেশের কৃষিজাত দ্রব্যের বাজার ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন।

সংরক্ষণ ব্যবস্থার ত্রুটি: আমাদের দেশে উদ্বৃত্ত ফসল সংরক্ষণের সুব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ার কারণে প্রতিবছরই অনেক ফসল নষ্ট হয়ে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়ছে।

কৃষি খাত এবং কৃষকের উন্নয়নের জন্য করণীয়: বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন এবং কৃষকদের অবস্থার উন্নতির জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। যেমন-

– কৃষকদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

– বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করার জন্য কৃষকদের হাতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও কীটনাশক পৌঁছে দিতে হবে।

– ভূমিহীন কৃষকদের জন্য ভূমির ব্যবস্থা করতে হবে।

– সেচ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে।

– কৃষকদেরকে স্বল্প সুদে ঋণদান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

– বাজার ব্যবস্থায় ত্রুটিপূর্ণ বিষয়গুলোর সংস্কার করতে হবে।

– কৃষিজাত দ্রব্য সঠিকভাবে সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।

উপসংহার: কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অপরিসীম ভূমিকা রাখছে অথচ এদেশের কৃষকের অবস্থা এখনও নাজুক। তাদের সামাজিক মর্যাদা নেই বললেই চলে। এই জন্য শিক্ষিত নাগরিকের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো প্রয়োজন। যে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী শহরে বসে কৃষকের ভাগ্য নির্ধারণ করেন তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নই দেশের উন্নয়ন। কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে গৃহীত সময়োচিত পদক্ষেপই জাতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পারে। তাই এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

3. বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প।

0/20JB-23

ভূমিকা: পৃথিবীব্যাপী জ্ঞানী ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ ছোটে লোক থেকে লোকান্তরে, দেশ থেকে দেশান্তরে। প্রতিনিয়ত মানুষ জানতে চায়, বুঝাতে চায়, জয় করতে চায় অজানাকে। তাই তো দেখি হিমালয়, চাঁদের মতো দুর্গম স্থানকে মানুষ জয় করেছে। পুরাতাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করে উপহার দিয়েছে নতুন পৃথিবী। এ প্রসঙ্গে মহানবির একটি বাণী উল্লেখযোগ্য ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন পর্যন্ত যাও’। অর্থাৎ জ্ঞানের জন্য, জানার জন্য সমস্ত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করতে হয়। পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মতো বাংলাদেশেরও আনাচকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য স্থান, অসংখ্য স্থাপত্য। পরিবর্তনশীল যড়বাতুর এ দেশ পৃথিবীর বুকে অন্যতম বৈচিত্র্যময় একটি দেশ। তাই দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বলেছেন, ‘সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি’। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় রয়েছে ঐতিহ্যময় পর্যটন স্থান। বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার সঙ্গে গলা মিলিয়ে আমরাও বলতে পারি যে, পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ রূপময়ী ও সমৃদ্ধিশালী জাতি ও দেশ হচ্ছে বাঙালি ও বাঙালির দেশ। বাংলাদেশের প্রকৃতি এবং বাঙালি জাতির – ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার উপায় হচ্ছে পর্যটন।

পর্যটনশিল্পের গুরুত্ব: অন্যান্য শিল্পের মতো পর্যটনও একটি শিল্প। কথায় আছে, ‘গ্রন্থগত বিদ্যা আর পর হস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন।’ আসলে জীবনভর ভারী ভারী বইপুস্তক পড়ে যতটুকু শেখা সম্ভব তার চেয়ে বেশি সম্ভব যদি চোখে দেখা যায়। কারণ মানুষ তার জ্ঞানের শতকরা ৭০ ভাগ চোখ নামক ইন্দ্রিয় দিয়ে অর্জন করে। যে আগ্রার তাজমহল কিংবা মিশরের পিরামিড বা নায়াগ্রার জলপ্রপাত চোখে দেখেনি, সে শুধু বই পড়ে তার মর্মার্থ বুঝাতে অপারগ। সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ জ্ঞানপিপাসু। মানুষ ও তার কীর্তি সম্পর্কে এবং প্রকৃতি ও তার মহিমার অজানা রহস্য পর্যটনের মাধ্যমেই জানা যায়। আদিবাসীদের জীবনযাপনের বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে মানুষ পর্যটনশিল্পের মাধ্যমে জানতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের আচার-আচরণ, স্থান, সৌন্দর্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতিনীতি, আকৃতি-প্রকৃতি, প্রাচীনত্বের নিদর্শন, পশুপাখি প্রভৃতি সম্পর্কে পর্যটনশিল্পের মাধ্যমেই জানা যায়। অতএব দেখা যায়, পর্যটনশিল্পের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

বাংলাদেশের পর্যটন স্থান: বাংলাদেশকে কেউ কেউ বলেছেন চির সুন্দরী, কেউ বলেছেন চিরসবুজ, কেউ বলেছেন সকল দেশের রানি, কেউবা আবার তুলনা করেছেন সোনার কাঠি, রূপার কাঠির সঙ্গে। অর্থাৎ আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে পৃথিবীর বড়ো বড়ো পণ্ডিত বিভিন্নভাবে সুন্দরের ব্যাখ্যা করেছেন। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের মতো বাংলাদেশকে নিয়েও ‘মায়াপুরী’র স্বপ্ন দেখে মানুষ। ষড়ঋতুর বৈচিত্র্য ছাড়াও সবুজ-শ্যামল দিখ প্রকৃতি মানুষকে সহজেই আকর্ষণ করে। বাংলাদেশের প্রকৃতি হচ্ছে মাতৃত্বের মতো শান্ত স্নেহদায়ী। উগ্র, নম্র সকলকেই তা ঘুম পাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্থান। পাহাড়পুর, রাঙামাটি, সাগরদিঘি, ময়নামতি, কুয়াকাটা, পাথরঘাটা, সোনারগাঁ, বান্দরবান, সুন্দরবনসহ আরও অসংখ্য পর্যটনের স্থান ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত রয়েছে বাংলাদেশের কক্সবাজারে। বাংলাদেশের একদিকে সুউচ্চ পাহাড় অন্যদিকে বিশাল জলরাশি। যা সহজেই পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বাংলাদেশে খোদ রাজধানীতে রয়েছে অসংখ্য ইতিহাস-আশ্রিত ঐতিহ্যময় স্থান এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ স্থান। তাই সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন-

‘নাগের বাঘের পাহারাতে

হচ্ছে বদল দিনে রাতে

পাহাড় তারে আড়াল করে

সাগর যে তার ধোয়ায় পাটি।’

পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা: বাংলাদেশে ইতঃপূর্বে পর্যটকদের জন্য কোনো নির্দিষ্টি সুযোগ-সুবিধা ছিল না। তারপরও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক মুগ্ধ হয়ে আসত শুধু প্রকৃতি অবলোকনের জন্য। সম্প্রতি সরকার পর্যটকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন স্থানে হোটেল ও মোটেল করেছে। বিভিন্ন বেসরকারি হোটেলের চেয়ে এসব সরকারি হোটেলে অত্যন্ত কমমূল্যে সিট রিজার্ভেশন সুবিধা দিয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন রকমের যানবাহনের ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। পর্যটকদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান ও সামগ্রিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করাই এর প্রাথমিক কাজ।

পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে পর্যটন কর্পোরেশনের দায়িত্ব: বাংলাদেশ পর্যটনশিল্পে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য দুর্লভ এবং সুন্দর স্থান। এ স্থানগুলোকে সংরক্ষণের জন্য পর্যটন কর্পোরেশনের বিশেষ দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের পর্যটন স্থানগুলোকে বিশ্বের মানুষের চোখের সামনে তুলে ধরতে হবে। থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ ও স্বল্পব্যয়ের আওতায় আনতে হবে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত’ করতে হবে। তাহলেই পর্যটনশিল্পে বাংলাদেশের স্থান বিশ্বের সুউচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে পর্যটন কর্পোরেশনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অপরিসীম।

উপসংহার: প্রখ্যাত শিল্পী, সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায় আধুনিক পর্যটন শিল্পনগরী ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন- ‘অর্ধেক সুন্দরী তুমি, অর্ধেক কল্পনা।’ তাঁর এ মন্তব্য সম্পর্কে আমরাও বলতে পারি, প্যারিসের অর্ধেক সৌন্দর্যকে কল্পনা করে নিতে হয় অথচ আমাদের বাংলাদেশের সবুজ-শ্যামল সৌন্দর্যকে কল্পনা করে নিতে হয় না। তা একই সঙ্গে দৃশ্যমান ও অনুভব্য। বাংলাদেশের পর্যটন স্থানের সৌন্দর্যের তুলনা হয় না। বাংলাদেশে পর্যটন করপোরেশন, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সর্বোপরি সকলেই একটু সচেতন হলে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আসনে আসীন হবে।

4. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও তার প্রতিকার।

0/20JB-23

ভূমিকাঃ

বাজারে আগুন মাথায় হাত

শুন্য থলে হাতে যাচ্ছে তাজ

শুধু তাজ নয়, বাংলাদেশের হাজারো তাজ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করতে পারছে না। বেঁচে থাকার জন্যে মানুষের নানাবিধ দ্রব্য ও উপকরণের প্রয়োজন হয়। উপকরণের সবগুলো সে নিজে তৈরি করতে পারে না। জীবন ধারণের অধিকাংশ দ্রব্যই মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। মূল্যস্তর ঠিক থাকলে সে দ্রব্যটি তার আয়ের টাকায় সংগ্রহ করে জীবন ধারণা নিশ্চিত করতে পারে। দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পেলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়, সংসার চালানো তখন কঠিন হয়ে পড়ে। প্রতিবছরই বিভিন্ন কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।

দৈনন্দিন জীবনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি চিত্রঃ

আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতি কোন আলোচিত সংবাদ নয়। বরং আজকাল দৈনন্দিন জীবনের সংবাদে পরিণত হয়েছে। মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদা তথা খাদ্য, বস্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতির প্রয়োজন মিটাতে হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের চাহিদা পূরণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সেই সাথে আমাদের সামাজিক, জাতীয় ও অর্থনীতিক  জীবনের গতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। মানুষ প্রাত্যহিক জীবনধারণের অনেক দ্রব্যসামগ্রী ব্যবহার করে থাকে কিন্তু সেগুলাে নিজে তৈরি করে না। তারা পরস্পরে ক্রয়বিক্রয় বিনিময়ের মাধ্যমে প্রতিদিনের চাহিদা নিবারণ করে থাকে। কিন্তু বর্তমানে নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যমূল্য এমনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে যা মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। গত ২০২০ থেকে ২০২২ সালের দ্রব্যমূল্যের চিত্র পর্যালােচনা করলে দেখা যায় যে প্রতিটি পণ্যের মূল্য প্রায় দ্বিগুণ হারে বেড়েছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কারণঃ

বর্তমানে বিশ্ব বাজারে জিনিসপত্র চলাচলের ব্যবস্থা সহজ হলেও জটিলতা মুক্ত পণ্য বাজার তৈরি হচ্ছে না।  লাগামহীন এ ঊর্ধ্বগতির পেছনে অনেক কারণ বর্তমান। নিম্নে এগুলাে আলােচনা করা হলাে:

মুদ্রাস্ফীতিঃ

মূল্যস্ফীতির চাপ যেমন সামলানো যাচ্ছে না, তেমনি নিত্যপণ্যের দামেও লাগাম টানা যাচ্ছে না। কয়েক মাস ধরেই মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের আশপাশে আটকে আছে। এ কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে গিয়ে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। মজুরি সূচক ও মূল্যস্ফীতি প্রায় কাছাকাছি চলে আসছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, গত জানুয়ারি মাসে মাসওয়ারি সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশে। তবে তা ডিসেম্বরের চেয়ে কিছুটা কমেছে। ডিসেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।

উৎপাদন অপ্রতুলতাঃ

বাংলাদেশ কষিপ্রধান দেশ। এ দেশের শতকরা ৮০ ভাগ লােক কষির উপর নির্ভরশীল। অথচ কৃষিকে আধুনিকীকরণে কোনাে পদক্ষেপ গ্রহণ হচ্ছে না। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যও কোনাে কৌশল গ্রহণ করা হয় না। ফলে মানুষের প্রয়ােজন অনুযায়ী উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং দ্রব্যমূল্য দিন দিন বেড়েই চলেছে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধিঃ

দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়।

এই স্লোগানে বাংলাদেশ অনেকটা এগিয়ে যাচ্ছে। তারপরও বর্তমানে প্রায় ২০ কোটি মানুষ এদেশে বসবাস করে জীবনধারণ করেছে। জনবহুল এদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ধীরে ধীরে আবাদি জমি নষ্ট করে সেখানে ঘরবাড়ি তৈরি করছে। ফলে উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে এবং জনগনের চাহিদে অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হচ্ছে না। তাই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চোরাকারবার ও চাঁদাবাজিঃ

অসাধু ব্যবসায়ীদের অধিক টাকার লোভে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পাচার মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। চোরাই পথে বিদেশে পাচার করায় খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয় এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। তেমনি আবার পথে পথে চাঁদাবাজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে দেয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে এক ট্রাক মালামাল ঢাকায় পৌছাতে পুলিশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাঁদা দিতে প্রায় ট্রাকভাড়ার সমান লেগে যায়। আবার ট্রাকে মালামাল আনা-নেওয়া, মাললােড, আনলােড খাজনা খরচে অনেক টাকা ব্যয় হয়। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।

কৃষি ভর্তুকির অভাবঃ

কৃষি উৎপাদনে ব্যবহার্য উপকরণের আকাশচুম্বী দাম হওয়ায় কৃষক প্রয়ােজনীয় উপকরণ যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয়। আবার সুদমুক্ত ঋণের অভাবে অনেক নিত্যপ্রয়ােজনীয় পণ্য উৎপাদন থেকে বিরত থাকেন। ফলে নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যে অপ্রতুলতা চোখে পড়ে। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।

বাজার নিয়ন্ত্রণের অভাবঃ

উৎপাদিত পণ্যের মূল্যনির্ধারণ ও বাজার মূল্যনির্ধারণ করে তা তদারকির অভাবেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। অসাধু অর্থলােভী কিছু ব্যবসায়ীর কারণে একই পণ্য বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। যার মূল কারণ হচ্ছে সঠিকভাবে বাজার মনিটরিং না করা।

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাঃ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল নয়। এ দেশে ক্ষমতার জন্য বিভিন্ন আন্দোলন হরতাল, ধর্মঘট, মারামারি রাহাজানি, অবরােধ ইত্যাদির কারণে নিত্যপ্রয়ােজনী দ্রব্যসামগ্রী একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিতে বাধার সৃষ্টি হয়। ফলে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।

মজুতদার ও সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্যঃ

আমাদের দেশে অসাধু ব্যবসায়ীতে ভরপুর। তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারে হাহাকার তুলে দেয় আর অর্থশালী কিছু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্য মজুদ করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করে দেয়। ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।

খরা, বন্যা ইত্যাদির প্রভাবঃ

শুকনাে মৌসুমে খরা এবং বর্ষার সময় বন্যার ফলে প্রচুর ফসল নষ্ট হয়। ফলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক থাকে না। ফসল কম হওয়ার ফলে চাহিদা মেটানােও সম্ভব হয় না। এতে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়।

সরকারের উদাসীনতাঃ

সরকার ইচ্ছে করলে কঠোর অধ্যাদেশ জারি করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। কিন্তু সরকারের উদাসীনতার সুযােগে ব্যবসায়ীরা মূল্য বাড়িয়ে দেয়।

করারােপঃ

কোন দ্রব্যে নতুন কর ধার্য করলে সে দ্রব্যের দাম স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। আমাদের মত অনুন্নত দেশে করারােপ না করে অর্থনীতির আন্তর্জাতিক ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন। তাই বাধ্য হয়ে সরকার কর আরােপ করেন, ফলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়।

সামাজিক মর্যাদা রক্ষাঃ

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের মানুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের চলতে হয়। তাল মিলাতে গিয়ে তারা বিলাসিতাই গা ভাসিয়ে দেয়। এ বিলাসিতাই তাদের মধ্যে বেশি দামে দ্রব্য ক্রয়ের মানসিকতা সৃষ্টি করে। এভাবে নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায়।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিকারঃ

নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যসমূহ জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার ভেতরে রাখা সরকারের কর্তব্য। কিন্তু তা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। দ্রব্যের মূল্য একবার বেড়ে গেলে তা কমানাে খুবই কঠিন। তাই মূল্য যাতে না বাড়ে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া সরকারের দায়িত্ব। দ্রব্যমূল্য কমানাে বা স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে সরকারকে অভ্যন্তরীণ কঠোর নীতি ও আমদানি-রফতানির ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরােধের জন্য নানা উপায় বর্তমান। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ ও দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির প্রতিরােধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিম্নে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরােধে করণীয় দিক নিয়ে আলােচনা করা হলাে :

১. উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী যােগান নিশ্চিত করতে হবে। 

২. জনসংখ্যাবৃদ্ধি রােধ করে সমবণ্টনের মাধ্যমে চাহিদা নিবারণের ব্যবস্থা করতে হবে। 

৩. মজুতদার ও ফটকাবাজদের জন্য আইন প্রণয়ন ও প্রয়ােগ করতে হবে। যাতে করে তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্যবৃদ্ধি করতে না পারে। 

৪. পণ্যমূল্য নির্ধারণ ও বাজার তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। 

৫. কৃষি ভর্তুকি বৃদ্ধি করে কৃষকদের উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। উৎপাদন বাড়লে বাজারে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল হবে। 

৬. চাঁদাবাজ ও চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে আইন প্রণয়ন করে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। 

৭. ব্যবসায়ীরা যাতে ইচ্ছামতাে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য সরকার একটি নিয়ন্ত্রণ কমিটি গঠন করে তাদের হাতে দায়িত্ব ন্যস্ত করবে।

৮. প্রতিটি ক্রয়বিক্রয় কেন্দ্রে দ্রব্যমূল্যের তালিকা ঝুলিয়ে দিতে হবে এবং সে অনুযায়ী বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। 

৯. কৃষিপণ্য উৎপাদনে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে ভালাে বীজ ও কীটনাশক সার সরবরাহের নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। 

১০. পরিবহণ ও যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। যাতে সহজে পণ্য সামগ্রী একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে চাহিদা পূরণ করতে সহজ হয়। 

১১. সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে বিলাসিতাপূর্ণ প্রতিযােগিতার অবসান ঘটাতে হবে। 

১২. একচেটিয়া বাজারকে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রতিযােগিতামূলক বাজার সৃষ্টি করতে হবে।

১৩. প্রয়ােজনে নতুন আইন প্রণয়ন করে কঠোরভাবে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করতে হবে।

১৪. এছাড়া মদ্রাস্ফীতি, চোরাকারবার, মজুতদারি ইত্যাদি ব্যাপারে সজাগ থাকলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রােধ করা সম্ভব হবে। 

উপসংহারঃ

দৈনন্দিন জীবনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আমাদের জাতীয় সমস্যার একটি। প্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য স্থিতিশীল রাখা আমাদের মত দরিদ্র দেশের জন্যে অতীব প্রয়ােজন। অনেক সময় সরকার ভর্তুকি প্রদান করে বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রয়াস পায়। তবে দ্রব্যমূল্যকে স্থিতিশীল রাখার কার্যকর পন্থা হল চোরাচালানি, মজুতদারি রােধ করা এবং কঠোর হস্তে আইন প্রয়ােগ করা। যে সমস্ত কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হয় তার প্রতিকার করলেই আমরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হাত থেকে মুক্তি পাব। তবে দ্রব্যমূল্য হ্রাস করা সম্ভব না হলে ও সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ তা স্থিতিশীল রাখা সম্ভব।

5. আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও বাংলাদেশ।

0/20JB-23

উত্তর:

ভূমিকা: বিজ্ঞানকে মানবকল্যাণে প্রয়োগ করার কৌশল হচ্ছে প্রযুক্তি। মানুষ প্রতিনিয়ত গবেষণার মাধ্যমে প্রযুক্তির উন্নতি সাধন করছে। মানবজীবন বিকাশের যথার্থ উপায় এখন প্রযুক্তিবিদ্যা। তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বের সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূল হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব পরিমন্ডলে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় করতে এবং একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত হতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির বিকল্প নেই। দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে মহাকাশ গবেষণা পর্যন্ত সকল কাজকর্মে তথ্য-প্রযুক্তির বিজয় ঘোষিত হচ্ছে। আমাদের জাতীয় উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা ও গুরুত্ব অনেক। জাতীয় উন্নয়নের নানা ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে।

তথ্যপ্রযুক্তি ও জাতীয় উন্নয়নের ধারণা: তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, ব্যবস্থাপনা এবং সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতির সমন্বিত ও সুবিন্যস্ত রূপকে তথ্যপ্রযুক্তি বলে। ব্যাপক অর্থে কম্পিউটার, মাইক্রো ইলেকট্রনিক্স, টেলিকমিউনিকেশন ইত্যাদি বিষয় তথ্যপ্রযুক্তির মধ্যে পড়ে। এছাড়া ডাটাবেজ, সফটওয়‍্যার উন্নয়ন ইত্যাদি তথ্যপ্রযুক্তির অন্তর্গত। সাধারণ অর্থে টেলিফোন, ফ্যাক্স, টেলেক্স, ইন্টারনেট ইত্যাদিকে তথ্যপ্রযুক্তি বলে।

জাতীয় উন্নয়ন বলতে বোঝায় সামগ্রিক উন্নয়ন। অর্থাৎ জাতীয়ভাবে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক উন্নয়ন। এ দেশে বিগত এক যুগে তথ্যপ্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটেছে। এখনকার তরুণ প্রজন্ম তথা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির ফলে জাতীয়ভাবে আয় বাড়ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান সমৃদ্ধ হচ্ছে।

তথ্যপ্রযুক্তি ও বাংলাদেশ: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম প্রতিশ্রুতি এদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলা। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার মূলভিত্তিই হলো তথ্যপ্রযুক্তি। সরকার তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যেমন-

ক. দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য প্রায় সারা দেশকে ডিজিটাল টেলিফোন ও ইন্টারনেটের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

খ. সরকার ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা’ অনুমোদন করেছে।

গ. বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য বিদেশে বাজারজাতকরণের জন্য ‘আইসিটি বিজনেস প্রমোশন সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে।

ঘ. এনসিটিবি প্রণীত কারিকুলামে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টি বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে এবং প্রযুক্তিভিত্তিক পাঠদান প্রক্রিয়া, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফল প্রকাশ ইত্যাদি ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটেছে সমধিক। সেলফোন এবং ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক এখন সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও বৈপ্লবিক মাত্রা সূচিত করেছে। অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম বুথ, মোবাইল ব্যাংকিং প্রভৃতি সেবা সারাদেশে বিস্তৃত হয়েছে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্যে রেজিস্ট্রেশন এখন সেলফোনের মাধ্যমেই সম্ভব হচ্ছে। ই- মেইল, ফেসবুক আমাদের নৈমিত্তিক জীবনযাপনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তারপরও উন্নত দেশগুলোর তথ্যপ্রযুক্তিগত উন্নয়নের কাছে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। তবে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তথ্যপ্রযুক্তি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখছে।

জাতীয় উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি: বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন

বেড়েই চলেছে। জাতীয় উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির কিছু দিক তুলে ধরা হলো:

ক. তথ্যের আদান-প্রদান; সরকারি উদ্যোগে ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে যেখান থেকে ইউনিয়নবাসীরা কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্যের পাশাপাশি সরকারের নানা

মন্ত্রণালয়ের তথ্য পাচ্ছে।

খ. তথ্যপ্রযুক্তি ও কর্মসংস্থান: তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এক নতুন দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে কম্পিউটার হার্ডওয়‍্যার, সফ্টওয়্যার, ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ৭-৮ হাজার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে অনেকের কাজের সুযোগ হচ্ছে।

গ.তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা: তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে শিক্ষার মান বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কম্পিউটার শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা এখন কম্পিউটারেই শিখতে পারছে পাঠসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো। তাছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন বিখ্যাত লাইব্রেরির বই, বিখ্যাত শহর-বন্দর, দেশ ইত্যাদি সম্পর্কে মুহূর্তেই সংগ্রহ করতে পারছে বিভিন্ন উপাত্ত।

ঘ.টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন: শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা তথ্যপ্রযুক্তির উপর নির্ভর করে। টেলিনেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, টেলিযোগাযোগের ব্যয় কমানো, জরুরি ডাকব্যবস্থা, রেলস্টেশন, অপটিক্যাল ফাইবার, ব্যাকবোনের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা ইত্যাদি সবই তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সম্ভব।

ঙ. শিল্প ও অর্থনীতি সফটওয়্যারের মূল্য হ্রাস, ই-কমার্সভিত্তিক ব্যাংক স্থাপন ইত্যাদি সকল কাজ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে করা যায়।

চ. তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা: সুদক্ষ ব্যাংকিং ব্যবস্থা

দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। আর এই ব্যাংকিং খাতকে দক্ষ, যুগোপযোগী ও আধুনিক করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালুকরণের বিকল্প নেই।

ছ. যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা: তথ্যপ্রযুক্তির ফলে যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার অনেক উন্নতি সম্ভব। একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এখন আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা পাই। বিমান, রেলের টিকেট ব্যবস্থাপনা বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালিত

হচ্ছে।

জ. আত্ম-কর্মসংস্থান: তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং, সাইবার ক্যাফে, ফোন ও রিচার্জসহ নানা ধরনের কাজে অনেকের স্বাধীন ব্যবসায়ের সুযোগ হয়েছে।

ঝ. ব্যবসা ক্ষেত্রে: তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবসার ক্ষেত্রে নানা উন্নয়ন সাধন হয়েছে। ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্যের মূল ভিত্তিই তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় সহজ হয়েছে।

ঞ. চিকিৎসা ক্ষেত্রে: তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। রোগ নির্ণয় থেকে সার্জারি পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার বিপ্লব নিয়ে এসেছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে।

ট, পর্যটন ক্ষেত্রে: বিদেশি পর্যটকেরা এখন তাদের দেশ থেকেই ট আমাদের দেশের পর্যটন সম্পর্কিত তথ্য পেতে পারে। আমরাও জানতে পারছি সারা বিশ্বের পর্যটন ও এ-সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়। সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেই আমাদের সুন্দরবন ও কক্সবাজারকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার সুযোগ হয়েছে।

ঠ.সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে: সমাজ সচেতনতা ও সার্বিক সম্পর্ক

উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে যেমন দেশের মানুষের সমস্যা ও দুর্ভোগের কথা জানা যায়, তেমনি দেশি-বিদেশিদের সাথে সুসম্পর্কও গড়ে তোলা যায়। ফেইসবুক, টুইটার, লিংকড ইন প্রভৃতি সাইট সামাজিক যোগাযোগে অভূতপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ড.গবেষণা ক্ষেত্রে: বিভিন্ন গবেষণার জন্য এখন আর গবেষকদের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। দেশেই তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য তাঁরা পেয়ে যান তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

ঢ. মানবসম্পদ উন্নয়নে: দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ছাড়া কোনো

অবস্থাতেই দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি নানা ভূমিকা পালন করে।

উপসংহার: বর্তমান বিশ্বে যে জাতি তথ্যপ্রযুক্তিতে যত বেশি দক্ষ, তাদের সার্বিক অবস্থাও তত বেশি উন্নত। তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে মূল্যবান ইস্যু। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ ঘটেনি। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষার উন্নয়ন, চিকিৎসার উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বেকারত্ব দূর করার জন্য আমাদের নানা পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সকলের প্রচেষ্টার মাধ্যমেই বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির সফল বাস্তবায়ন ঘটবে।

( end of jass 2023 )

1. মাদকাসক্তি ও তরুণ সমাজ।

0/20CB-23

ভূমিকা:

বর্তমানে সমাজ ও দেশের জন্য মাদকাসক্তি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদকের নীল নেশা আজ তার বিশাল থাবা বিস্তার করে চলেছে এ দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এ এক তীব্র নেশা। হাজার হাজার তরুণ এ নেশায় আসক্ত। এ মরণনেশা থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করা না গেলে এ হতভাগ্য জাতির পুনরুত্থানের স্বপ্ন অচিরেই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য অংশ আজ এক সর্বনাশা মরণনেশার শিকার। যে তারুণ্যের ঐতিহ্য রয়েছে সংগ্রামের, প্রতিবাদের, যুদ্ধ জয়ের, আজ তারা নিঃস্ব হচ্ছে মরণনেশার করাল ছোবলে। মাদক নেশার যন্ত্রনায় ধুঁকছে শত-সহস্র তরুণ প্রাণ। ঘরে ঘরে সৃষ্টি হচ্ছে হতাশা। ভাবিত হচ্ছে সমাজ। তাই অচিরেই এই মাদকাসক্তির কারণ উদ্ঘাটন করে এর প্রতিকার করতে হবে।

মাদকাসক্তি :

মাদকাসক্তি একটি স্নায়বিক ক্রিয়া। এর প্রভাবে ব্যক্তির চিন্তা-চেতনা ও আচার-আচরণে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তি যুব সম্প্রদায়ের এক আদিম প্রবণতা। শাব্দিক অর্থে মাদকাসক্তি বলতে ড্রাগ বা মাদকদ্রব্যের প্রতি এক প্রবল আকর্ষণকে বোঝায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, নেশা এমন একটি মানসিক বা শারীরিক অবস্থা, যার সৃষ্টি হয়েছে জীবিত প্রাণী ও মাদক ওষুধের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে।

মাদকদ্রব্য :

মাদক শব্দের অর্থ হল – মত্ততা জন্মায় এমন দ্রব্য। অর্থাৎ নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্যকেই মাদকদ্রব্য বলে। মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে স্নায়বিক বৈকল্য দেখা দেয় ও বারবার ওই দ্রব্য গ্রহণের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হয়। মাদকদ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমেই কেবল এ আসক্তি প্রশমিত হয়। অন্যথায় শরীরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) মাদকদ্রব্য সম্পর্কে মন্তব্য করেছেনঃ নেশা জাতীয় যেকোন দ্রব্যই মদ, আর যাবতীয় মদই হারাম।

সকল প্রকার নেশা জাতীয় দ্রব্য হারাম হওয়া সত্ত্বেও এসব দ্রব্যসামগ্রীর প্রতি মানুষের আকর্ষণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ‘মাদকাসক্তি হচ্ছে চিকিৎসা গ্রহণযোগ্য নয় এমন দ্রব্য অতিরিক্ত পরিমাণে ক্রমাগত বিক্ষিপ্তভাবে গ্রহণ করা এবং এসব দ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া’

মাদকদ্রব্যের প্রকারভেদ

আধুনিক বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য লক্ষ করা যায়। সভ্যতার বিবর্তনের মধ্য দিয়ে মাদকদ্রব্যেরও যথেষ্ট পরিমাণে উন্নতি হয়েছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রকারের মাদকদ্রব্য দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে যেসব মাদকদ্রব্যের সেবন সর্বাধিক বেশি সেগুলো হলোঃ গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবা, রেকটিফাইড স্পিরিট, মদ, বিয়ার, তাড়ি, পঁচুই, কোকেন, আফিম, মারিজুয়ানা, ভাং, ক্যানাবিস, হাসিস, ঘুমের ওষুধ, প্যাথেড্রিন ইনজেকশন ইত্যাদি।

মাদকদ্রব্যের উৎস

আধুনিক বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কমবেশি মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়। কোনো দেশে কম আবার কোনো দেশে অনেক বেশি। যেমন, গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল (লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড), গোল্ডেন ক্রিসেন্ট (আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরান), গোল্ডেন ওয়েজ- এ তিন স্থানে পপি উৎপাদিত হয়। এই পপি ফুলের নির্যাস থেকে আফিম এবং এই আফিম থেকেই সর্বনাশা হেরোইন তৈরি হয়। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, জ্যামাইকা, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, ঘানা, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও থাইল্যান্ডসহ ১১টি দেশে মারিজুয়ানা উৎপন্ন হচ্ছে। দক্ষিণ আমেরিকার পেরু, কলম্বিয়া, ব্রাজিল, বলিভিয়া প্রভৃতি দেশ কোকেন উৎপাদনে বিখ্যাত। তাছাড়া এশিয়া মহাদেশের প্রায় অনেক দেশেই আফিম, হেরোইন ও হাসিস উৎপন্ন হয়।

মাদকদ্রব্যের ব্যাবহার পদ্ধতি

সাম্প্রতিককালে আন্তর্জাতিক ড্রাগ ব্যবসায়ীরা নানা ধরণের মাদকের ব্যবসা ফেঁদেছে। এসব মাদকের ব্যবহার পদ্ধতিও নানারকমের। ধূমপানের পদ্ধতি, নাকে শোকার পদ্ধতি, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ত্বকের নিচে গ্রহণের পদ্ধতি এবং সরাসরি রক্তপ্রবাহে অনুপ্রবেশকরণ পদ্ধতি। বিভিন্ন রকম ড্রাগের মধ্যে হেরোইন আজ সব নেশাকেই ছাড়িয়ে গেছে। এর আসক্তি অত্যন্ত তীব্র। নিছক কৌতূহল যদি কেউ হেরোইন সেবন করে তবে এই নেশা সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো তার ঘাড়ে চেপে বসে।

মাদকাসক্তির কারণ

মাদকাসক্তির বহুবিধ কারণ রয়েছে। আমাদের সমাজে বিভিন্ন কারণে মাদকাসক্তির প্রভাব লক্ষ করা যায়। এ পর্যন্ত বিজ্ঞানী, গবেষক ও চিকিৎসকরা মাদকাসক্তির অন্তরালে বিভিন্ন কারণের কথা বলেছেন। নিম্নে তা বর্ণনা করা হলোঃ-

হতাশাঃ মাদকাসক্তির অন্যতম প্রধান একটি কারণ হলো হতাশা। এই হতাশার করণেই ব্যক্তি তার নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। যার ফলে সাময়িকভাবে আত্মমুক্তির জন্য সর্বনাশা মাদকাসক্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে।

সঙ্গদোষঃ মাদকাসক্তির জন্য সঙ্গদোষ আরেকটি মারাত্মক কারণ। নেশাগ্রস্ত বন্ধু- বান্ধবের মাধ্যমে এটি বিস্তার লাভ করে।

কৌতূহলঃ কৌতূহলও মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ। অনেকেই মাদকাসক্তির ভয়াবহতা জেনেও কৌতূহলবশত মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে।

সহজ আনন্দ লাভের বাসনাঃ অনেক সময় মানুষ মাদককে আনন্দ লাভের সহজ উপায় হিসেবে মাদক গ্রহণ করে এবং ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।

মনস্তাত্ত্বিক বিশৃঙ্খলাঃ তরুণদের মধ্যে মাদক গ্রহণের জন্য এটি অন্যতম কারণ। পরীক্ষায় ফেল, পারিবারিক কলহ, প্রেমে ব্যর্থতা, বেকারত্ব ইত্যাদি কারণে তারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।

ধর্মীয় মূল্যবোধের বিচ্যুতিঃ ধর্মীয় মূল্যবোধ মানুষকে সচেতন করে তোলে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ধর্মীয় মূল্যবোধের বিচ্যুতি হওয়ার ফলে মাদকাসক্তির বিস্তার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মাদকাসক্তির লক্ষণ

যখন কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, তখন তার মধ্যে কিছু কিছু লক্ষণ ও চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়। যেমন : আচারআচরণের পরিবর্তন; রাতে ঠিকমতাে ঘুম না হওয়া এবং দিনে বসে বসে ঝিমানাে; গুছিয়ে কথা বলায় অপারগতা; খাবার গ্রহণের প্রতি অনীহা, চিত্তচাঞ্চল্য, মেজাজ কখনও খুব ভালাে, কখনও খুব খারাপ থাকা; মনােযােগ দেওয়ার ক্ষমতা কমতে থাকা; আড্ডায় বেশি সময় নষ্ট করা; আর্থিক চাহিদা বাড়তে থাকা; দিনের একটি বিশেষ সময়ে বাড়ির বাইরে যাওয়ার জন্য মন চঞ্চল হয়ে ওঠা; শরীর ক্রমান্বয়ে শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

মাদকাসক্তির কুফল

মাদকাসক্তি একধরনের মরণ নেশা। মৃত্যুই তার একমাত্র গন্তব্যস্থল। মাদক গ্রহণ ধীরে ধীরে স্নায়ুকে দুর্বল করে তোলে। শরীরের রোগ- প্রতিরোধ ক্ষমতা আস্তে আস্তে নিঃশেষ করে দেয়। তাছাড়া ক্ষুধা ও যৌন অনুভূতি হ্রাস ঘটায়। মাদক গ্রহণে শ্বাস-প্রশ্বাস ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসে। হৃদস্পন্দন দ্রুত হয় এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। রাগান্বিতভাব, নিদ্রাহীনতা, উগ্র মেজাজ, ওজন হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। মাদকদ্রব্য ব্যবহারের ফলে স্বাভাবিক প্রজনন ক্ষমতায় ক্ষতিকর প্রভাবসহ মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণ করলে এইচআইভি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এককথায় মাদকাসক্ত মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।

মাদকাসক্তির প্রভাব

সারাবিশ্বে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও চোরাচালানের মাধ্যমে এর ব্যাপক প্রসার ঘটায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি এক মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে করেছে। মাদকের নিষ্ঠুর ছোবলে অকালে ঝরে পড়ছে লক্ষ লক্ষ প্রাণ । অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে বহু তরুণের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। আমাদের দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাদকাসক্তির ধ্বংসাত্মক প্রভাব নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ-

যুবসমাজের ওপর প্রভাব : মাদকদ্রব্যের অবৈধ পাচার আমাদের দেশের যুবসমাজের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করছে। যার ফলে যুবসমাজের বিরাট একটা অংশ অবচেতন ও অকর্মণ্য হয়ে পরছে।

সামাজিক বিশৃঙ্খলা : মাদকাসক্তরা মাঝে মাঝে মাদকগ্রহণের জন্য চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ইত্যাদি বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করে। যার ফলে সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয়।

শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি : মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে তারা মারাত্মকভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিবার ও সমাজে তারা বিভিন্ন অস্বাভাবিক আচরণ করে।

পারিবারিক ভাঙন ও হতাশা বৃদ্ধি : মাদকদ্রব্য ও মাদকাসক্তির প্রভাবে আমাদের সমাজে পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহ এবং এ সম্পর্কিত হতাশা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। পারিবারিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নষ্ট হয়।

নৈতিক অধঃপতন : মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের বাহ্যিক আচরণ প্রকাশ পায়। যেকোনো ব্যাপারে তখন ব্যক্তির মধ্যে চরম নৈতিক অধঃপতন লক্ষ করা যায়।

শিক্ষার ওপর প্রভাব : অনেক মেধাবী ও ভালো ছাত্রছাত্রী মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ জীবনকে নষ্ট করছে। তাই দেখা যায় মাদকাসক্তি সমস্যা আমাদের দেশের শিক্ষার ওপর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করছে।

মাদকের নেশা দ্রুত প্রসারের কারণ

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ক্ষেত্রে হতাশা ও দুঃখবােধ থেকে সাময়িক স্বস্তিলাভের আশা থেকেই এই মারাত্মক নেশা ক্রমবিস্তার লাভ করছে। পাশাপাশি এ কথাও সত্য যে, অনেক দেশে বিপথগামী মানুষ ও বহুজাতিক সংস্থা উৎকট অর্থ লালসায় বেছে নিয়েছে রমরমা মাদক ব্যবসার পথ। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে বিভিন্ন দেশের মাফিয়া চক্র। মাদকের ঐ কারবারিরা সারা বিশ্বে তাদের ব্যবসা ও হীনস্বার্থ রক্ষায় এই নেশা পরিকল্পিতভাবে ছাড়িয়ে দিচ্ছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের উপায়

মাদকদ্রব্যের এই সর্বনাশা ব্যবহার বর্তমান বিশ্বে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এ জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়ঃ-

  • মাদকদ্রব্য উৎপাদন ও আমদানি রোধ করার জন্য প্রতিরোধ কর্মসূচি আরো জোরদার করা।
  • মাদক ব্যবসা ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তােলা।
  • সমাজের প্রত্যেক মানুষকেই মাদকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করা।
  • বেকারত্ব হ্রাস করা এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা।
  • স্কুল, কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য বইয়ে মাদকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা।
  • আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকরী ভূমিকা পালন করা।
  • সরকারি উদ্যোগ বৃদ্ধি করা।
  • সভা, সমিতি, সেমিনার ও আলোচনার মাধ্যমে মাদক প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা।
  • মাদক প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রনসংস্ক্রান্ত আইন বাস্তবায়ন করা।
  • মাদকাসক্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ভেষজ ও মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ।
  • সুস্থ বিনোদনমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে তরুণদের সম্পৃক্ত করে নেশার হাতছানি থেকে তাদের দূরে রাখা।
  • মানবিক মূল্যবোধ গঠন ও পরিবেশন।
  • পিতা-মাতা কর্তৃক শিক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ।
  • ব্যক্তিগত ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি।

মাদকাসক্তির প্রতিকার ও বাংলাদেশ

মাদকাসক্তির প্রতিকার আন্দোলনে বাংলাদেশের ভূমিকা দিন দিন ত্বরান্বিত হচ্ছে। আধুনিক (আমরা ধূমপান নিবারণ করি) সংস্থাটি মাদক নিরাময় আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাছাড়া রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ইত্যাদি গণমাধ্যমগুলোও সব সময় মাদক নিরাময়ে কাজ করছে। তারা সবসময় মাদকাসক্তির ভয়ানক পরিণাম নিয়ে বিভিন্ন নাটক প্রচার করে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করছে। এছাড়া বাংলাদেশে বর্তমানে Narcoties Control Act 1990 চালু আছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও প্রতি বছর ২৬ জুন মাদকদ্রব্যের পাচার, অপব্যবহারবিরোধী দিবস পালন করে আসছে।

উপসংহার

ভীরু খুঁজে সাহস, দুর্বল খুঁজে শক্তি, দুঃখী খুঁজে সুখ। কিন্তু অধঃপতন ছাড়া তারা আর কিছুই পায় না। সভ্যতার এই আধুনিক যুগে মাদকাসক্তির কালসাপ রুপ ধারণ করেছে। এর ছোবলে হারিয়ে যাচ্ছে অজস্র তরুণ-তরুণীর সম্ভবনাময় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। এর প্রভাব বাংলাদেশে ক্রমেই বেড়ে চলছে। মাদক প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে মাদকের অতল গর্ভে হারিয়ে যাবে আমাদের দেশের সম্ভবনাময় ভবিষ্যৎ। তাই মাদক প্রতিরোধের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগ, সামাজিক প্রতিরোধ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা উচিত।

2. বাংলাদেশের পোশাকশিল্প।

0/20CB-23

ভূমিকা: বাংলাদেশ শিল্পোন্নত দেশ নয়। তথাপি যেসব শিল্পে বাংলাদেশ এভূত উন্নতি সাধন করেছে তাদের মধ্যে পোশাকশিল্পের নাম সর্বাগ্রে। বাংলাদেশের পোশাক-শিল্পমান বিশ্বমানের। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের শতভাগই রপ্তানিমুখী। বিশ্ববাজারে এর বেশ চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ তার মোট রপ্তানি আয়ের ৮১.২% এর বেশি অর্জন করে তৈরি পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে।

পোশাকশিল্পের অতীত অবস্থা: প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশে পোশাক বা বস্ত্রশিল্প সম্প্রসারিত হয়নি। ভারত ভাগের সময়, অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের দিকে উভয় পাকিস্তান মিলে কাপড়ের কলের সংখ্যা ছিল ১৪টি। ১৯৭০ সাল নাগাদ তা ১৪০টিতে উন্নীত হয়। যার মধ্যে মাত্র ৪৩টি ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বা বর্তমান বাংলাদেশে। বাংলাদেশকে পশ্চিম পাকিস্তানের কাপড়ের বাজার তৈরিই ছিল এ বৈষম্যের মূল কারণ।

পোশাকশিল্পের বর্তমান অবস্থা: স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে পোশাকশিল্পে কয়েক লক্ষ শ্রমিক কর্মে নিয়োজিত। এসব শ্রমিকের ৮৪% নারী। নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, টঙ্গী এলাকায় প্রধান কেন্দ্রগুলো অবস্থিত। আর্দ্র জলবায়ু, নদী, সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগের সুব্যবস্থা, সুদক্ষ শ্রমিক ও প্রয়োজনীয় মূলধনের প্রতুলতা এসব অঞ্চলের পোশাকশিল্প উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে। চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, খুলনা, কুমিল্লা, কালীগঞ্জ এবং গোয়ালন্দে কাপড়ের কল রয়েছে। এছাড়া তাঁতশিল্প তো রয়েছেই।

বাংলাদেশের অনেক জায়গায় বেশ উন্নতমানের তাঁতের কাপড় তৈরি হয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাকশিল্পের অবদান: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাকশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এগুলো নিম্নরূপ:

ক. পোশাকশিল্প থেকে রপ্তানি আয়: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনে বিশেষ করে রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে তৈরি পোশাকশিল্পের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮১.২% আসে পোশাকশিল্প থেকে।

খ. বেকার সমস্যা সমাধানে অবদান: পোশাকশিল্প বাংলাদেশের বেকার সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে পোশাকশিল্পে প্রায় ৪০ লক্ষ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ করে দিয়েছে এ শিল্প। নারীদের যোগ্যতানুযায়ী কাজের ধরন নির্ধারণ করে তাদের এ শিল্পে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিত্তহীন, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা নারীরা তাদের শ্রম বিনিয়োগ করে এ শিল্পের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে।

গ. দ্রুত শিল্পায়নে অবদানঃ পোশাকশিল্প আমাদের দেশে শিল্পের দ্রুত গ প্রসার ঘটাচ্ছে। এ শিল্পকে কেন্দ্র করেই স্পিনিং, উইভিং, নিটিং, ডাইং, ফিনিশিং এবং প্রিন্টিংশিল্প গড়ে উঠছে। শুধু তা-ই নয়, প্যাকেজিং, গামটেপ, জিপার, বোতাম ও বগলস শিল্পের প্রসারও ঘটছে এ শিল্পের ওপর নির্ভর করেই।

ঘ. অন্যান্য অবদান: এ শিল্পের আমদানি-রপ্তানি কাজে ব্যবহারের জন্য পরিবহণ সেক্টর তার কার্যক্ষমতা প্রসারের সুযোগ লাভ করেছে। এ শিয়ে বিনিয়োগ করে ব্যাংকগুলো লাভবান হচ্ছে এবং বিমা কোম্পানির প্রিমিয়াম বাড়ছে।

আমদানিকারক দেশসমূহ: বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারপরই রয়েছে জার্মানির স্থান। এরপর যথাক্রমে ফ্রান্স, ইতালি, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, বেলজিয়াম, স্পৈন ও অন্যান্য দেশ।

পোশাকশিল্পের বাধা : বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ক্ষেত্রে বড়ো বাধাগুলো নিম্নরূপ:

অস্থিতিশীল রাজনীতি: দেশের অস্থিতিশীল রাজনীতি পোশাকশিল্পের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরিমাণমতো ও সময়মতো উৎপাদন ও অর্ডার অনুযায়ী কাজ সরবরাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক অস্থিরতা তথা হরতাল ও অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কার্যাবলির জন্য চুক্তি অনুযায়ী সময় মতো কাজ করতে না পারায় অনেক সময় কাজের অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। বাতিলকৃত কাজের ফলে লোকসান দিয়ে তখন এ শিল্পকে চরম অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় পড়তে হয়।

দক্ষ শ্রমিকের অভাব: পোশাকশিল্পে দক্ষ শ্রমিকের অভাব একটি বড় সমস্যা। এ শিল্পের সিংহভাগ শ্রমিকই নারী। নারীদের প্রশিক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই এ শিল্পকে অদক্ষ নারী শ্রমিক নিয়ে কাজ করতে হয়। শুধু তা-ই নয়, এ ক্ষেত্রে দক্ষ পুরুষ শ্রমিকেরও অভাব রয়েছে। কাঁচামাল সমস্যা: কাঁচামাল এ শিল্পের অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা। দেশে পর্যাপ্ত কাঁচামাল না থাকায় বিদেশ থেকে তা আমদানি করতে হয়। এতে করে রপ্তানি আয়ের একটা বিরাট অংশ খরচ হয়ে যায়। অনেক সময় আমদানিকৃত কাঁচামাল নিম্নমানের হওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক বিদেশি ক্রেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে।

কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়া: যুক্তরাষ্ট্র ২০০৫ সালে পোশাক আমদানি ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি তুলে দিলে এ শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান এতে করে বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া শুল্ক জটিলতা, আইটেমের বৈচিত্র্যহীনতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আন্তর্জাতিক বাজারে বিরূপ প্রভাব, দুর্বল শিল্পনীতি, আর্থিক মন্দা ইত্যাদি সমস্যা এ শিল্পের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

সমস্যা সমাধানে করণীয়: নিম্নলিখিত বিষয়গুলো পোশাকশিল্পের সমস্যা সমাধানে বিবেচ্য হতে পারে-

ক. দ্রুত রপ্তানির জন্য কার্গো বিমান চার্টার করার অনুমতি প্রদান

খ. নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা

গ. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা

ঘ. কোটানীতি সংক্রান্ত দুর্নীতির অবসান

ঙ. প্রয়োজনীয় কাঁচামাল দেশেই উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ

চ. ইপিজেড-এর মতো সুযোগ-সুবিধা প্রদান

উপসংহার: পোশাকশিল্প আমাদের গর্ব, আমাদের সম্পদ। দেশের বাইরে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের পোশাকশিল্পের প্রদর্শনী দেশে-বিদেশে প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছে। তাই এ শিল্পের সকল সমস্যা. সমাধানে এবং জাতীয় অর্থনীতির এ অন্যতম সফল অংশকে গতিশীল রাখতে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বস্ত্রকলের পাশাপাশি তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য ও গুরুত্ব অনুধাবন করে এর ব্যবহার বজায় রাখতে হবে।

3. বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পদ্মাসেতুর অবদান।

0/20CB-23

ভূমিকা: পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মাণাধীন সেতু। স্বপ্নের এই সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটাবে। 

এই সেতুকে কেন্দ্র করে স্বপ্ন বুনছে দক্ষিন-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ। বাংলাদেশের সকল মানুষের আশা, এই স্বপ্নে পদ্মা সেতু বদলে দেবে দেশে অর্থনীতি এবং সেই সাথে উন্নত হবে মানুষের জীবনযাত্রা। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় এই প্রকল্প খুলে দেবে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।

পদ্মা সেতুর গুরুত্ব: বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এই দেশের বুক চিরে বয়ে চলেছে অসংখ্য নদনদী। প্রতিনিয়তই তাই আমাদের যাতায়াতব্যবস্থায় নৌপথের আশ্রয় নিতে হয়। 

ফলে যোগযোগব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রতা ও মন্থর গতি পরিলক্ষিত হয়। তাই যোগাযোগব্যবস্থাকে গতিশীল করার জন্য প্রয়োজন হয় পদ্মা সেতু। সেতু থাকলে দুই পাড়ের যোগাযোগব্যবস্থা উন্নতি হয়, সেই সাথে ব্যবসা বাণিজ্য ভালো হওয়ায় মানুষের জীবনমানেরও উন্নতি ঘটে।

পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রেক্ষাপট: পদ্মা সেতু দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। এজন্য এই অঞ্চলের মানুষ স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকারের কাছে তাদের দাবি বাস্তবায়নের কথা জানিয়ে এসেছে। 

অবশেষে ১৯৯৮ সালে এই সেতুর সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় এনে প্রথম সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০১ সালে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কিন্তু অর্থের জোগান না হওয়ায় সেতুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছিল। 

পরবর্তীতে, ২০০৭ সালে পদ্মা সেতুর প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়।পরে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে এই সেতুতে রেলপথ সংযুক্ত করে।

প্রতিবন্ধকতা ও বাংলাদেশের সক্ষমতা: বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু। এই প্রকল্প বিভিন্ন সময় প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছে। 

২০০৯ সালের পর বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদের সাথে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়। কিন্তু ২০১২ ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক; ফলে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যায় পদ্মা সেতুর প্রকল্প। 

পরবর্তীতে সরকার ঘোষণা দেয়, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের। ষড়যন্ত্রের বাধা জয় করে এগিয়ে চলে পদ্মা সেতুর কাজ, নিজস্ব অর্থায়নে দৃশ্যমান হতে থাকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

পদ্মা সেতুর বর্ণনা: পদ্মা সেতুই হবে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। মূল সেতুর দের্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ হবে ৭২ ফুট। 

সেতুটি হবে দ্বিতল, উপর দিয়ে চলবে যানবাহন এবং নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। সেতুটি নির্মিত হবে কংক্রিট এবং স্টিল দিয়ে। নদী শাসনের জন্য চীনের সিনহাইড্রো কর্পোরেশন কাজ পেয়েছে।

সেতুুটির দুই পাশের সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য কাজ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের আব্দুল মোমেন লিমিটেডকে। সেতুর নির্মাণকাজ তদারকি করছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বুয়েট এবং কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। 

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে ১৪টি নতুন স্টেশন নির্মান এবং ৬টি বিদ্যমান স্টেশন উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মান করা হয়েছে। 

আর এই ১৪টি স্টেশন হল- কেরানীগঞ্জ, নিমতলা, শ্রীনগর, মাওয়া, জাজিরা, শিবচর, ভাঙ্গা জংশন, নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লোহাগাড়া, নড়াইল, জামদিয়া ও পদ্ম বিল। এছাড়া অবকাঠামো উন্নয়নের ৬টি স্টেশন হল- ঢাকা, গেন্ডারিয়া, ভাঙ্গা, কাশিয়ানী, রূপদিয়া ও সিঙ্গিয়া।

মূল সেতুর পিলার ৪২টি এর ভিতর নদীর মধ্যে ৪০টি ও নদীর দুই পাশে ২টি পিলার রয়েছে। নদীর ভিতরের ৪০টি পিলারে ৬টি করে মোট ২৪০টি পাইল রয়েছে। 

এছাড়াও সংযোগ সেতুর দুই পাশের দুটি পিলারে ১২টি করে মোট ২৪টি পাইল রয়েছে। পিলারের উপর ৪১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। 

এখানে মূল সেতুর কাজ পেয়েছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। এই সেতুর স্থায়িত্ব হবে ১০০ বছর।

পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যয়: তৎকালীন সরকার ২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প পাশ হয়। এরপর ২০১১ সালে এই প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।

পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যয় দ্বিতীয় বারের মতো সংশোধন কর হয় ২০১৬ সালে। এই ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। 

পরবর্তীতে ২০১৯ সালে সেতুর ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। 

প্রথম দিকে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, আইডিবি এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। 

কিন্তু বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলে, বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

অথনৈতিক দিক দিয়ে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব: পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী। এই সেতু বাস্তবায়নের ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে। রাজধানীর সাথে মানুষের সরাসরি সংযোগ ঘটছে এবং সেই সাথে অর্থনীতির গতিশীল হবে। অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব তুলে ধার হল-

  1. শিল্পক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর গুরত্ব: পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সরাসরি যোগাযোগ হবে। এর ফলে এই অঞ্চলে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প কারখানা। পায়রা সমুদ্র বন্দর গতিশীল হবে সেতুকে কেন্দ্র করে। ফলে ব্যবসায়ের সুবিধার্থে স্থাপিত হবে নতুন শিল্পকারখানা।
  2. কৃষিক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকার ফলে ওই অঞ্চলের কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল পেতো না। পদ্মা সেতুর নির্মানের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা গতিশীল হয়। এতে কৃষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে। এতে করে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
  3. দারিদ্র বিমোচনে পদ্মাসেতুর প্রভাব: সেতু নির্মাণের ফলে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এর ফলে অনেক মানুষের কর্মস্থানের সুযোগ হবে। সহজেই মানুষ কাজের জন্য অন্যান্য স্থানে যেতে পারবে। ফলে বেকারদের কর্মসংস্থান হবে।

পরিবেশ ভারাসাম্যের পদ্মা সেতুর ভূমিক: পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে নদীর দুইপাশের এলাকায় নদীর পাড় বাঁধা হচ্ছে। যার কারণে নদীভাঙন রোধ করা যাচ্ছে। 

তাছাড়াও নদীর ও সড়কের রাস্তার দুই পাশে বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে। এতে এসবা এলাকার পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করে বলে অবাধে বৃক্ষনিধন হয়। কিন্তু পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ওই অঞ্চলে বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ দেওয়া সহজ হবে। ফলে তাদের জ্বালানির চাহিদা পূরণ হবে। সেই সাথে বৃক্ষনিধন কমে যাবে।

উপসংহার: বাংলাদেশের মানুষের একটি স্বপ্নের নাম পদ্মা সেতু। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেবে। এই সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠবে ব্যাপক শিল্পকারখানা, গার্মেন্টস, গোডাউন ইত্যাদি। এই সেতুর অচিরেই বদলে দেবে দেশের অর্থনীতি, উন্নত করবে মানুষের জীবনযাত্রা।

4. মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশ।

0/20CB-23

উত্তর:

ভূমিকা: বাঙালির সুদীর্ঘকালের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে এ জাতি চিরকালই মুক্তিপ্রিয়। বাঙালির প্রাকৃতিক পরিবেশেই আছে তার প্রতিবাদের ভাষা। পরের বশ্যতা এ জাতি কোনোকালেই মেনে নিতে পারেনি। তাই বারবার এ ভূমিতে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠেছে। সেই আগুনে তার শৌর্য- বীৎ দীপ্ত হয়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি অর্জন করে তার প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল যে বোধ বা চেতনাকে কেন্দ্র করে তারই নাম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তাকে চিরসমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রেরণা জোগাবে আবহমান কাল।

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি: ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের জাঁতাকলে প্রায় ২০০

বছর ধরে নিষ্পেষিত হয়েছিল এ জাতি। ১৯৪৭ সালে সেই জাঁতাকল থেকে এ উপমহাদেশের মানুষ মুক্তিলাভ করলেও মুক্তি আসেনি বাঙালি জাতির। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানি শাসকদের শৃঙ্খলে আবার বন্দি হলো বাঙালি জাতি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ধাপে ধাপে সংগ্রাম করে এ বন্দিদশা থেকে মুক্তির পথ খুঁজছিল বাঙালি জাতি।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি শাসনের প্রথম বলির শিকার হন ভাষাশহিদ রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত প্রমুখ। ‘৫৪ সালে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার জয়লাভ; ৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন হতে ‘৬৬-র ছয় দফা আন্দোলন; ‘৬৯- এর নজিরবিহীন ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন গণআন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বিকাশ লাভ করে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করে। দশ দিন পর ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনেও ৩১০টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। এরপর ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার গড়িমসি ও ভুট্টোর ভেটো অব্যাহত থাকে। অবশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১ মার্চ হতে ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন চলতে থাকে। লাখ লাখ জনতার উপস্থিতিতে ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতাসংগ্রামে ‘যার যা কিছু আছে’ তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার আহ্বান জানানো হয়। সর্বশেষ ২৫ শে মার্চ রাতে নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালির ওপর পাক-বাহিনীর বর্বর আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৫শে মার্চ মধ্যরাত, অর্থাৎ ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর পরেই ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’- এ স্বতঃস্ফূর্ত স্লোগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ: ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি

হানাদার বাহিনী অতর্কিতে হামলা চালায় নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। তারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় পিলখানা, রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। মধ্যরাতের পর হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রেফতারের পূর্বেই, অর্থাৎ ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাঁর স্বাক্ষরিত ঘোষণা বার্তাটি তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করা হয়। এরপর চট্টগ্রামের ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ থেকে ২৬ ও ২৭ শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচারিত হয় স্বাধীনতার ঘোষণা। সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে স্বতঃস্ফূর্ত মুক্তির সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী, এম মনসুর আলীকে অর্থমন্ত্রী, এএইচএম, কামারুজ্জামানকে স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী এবং খোন্দকার মোশতাক আহমদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করে মুজিবনগরে বসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। অস্থায়ী সরকারের এক আদেশে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এম.এন.এ. অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল (পরবর্তীতে জেনারেল) এমএজি ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি করে সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং ১১ জন সেক্টর কমান্ডারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৭১-এর ১৭ এপ্রিল বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলাকে ‘মুজিবনগর’ নামকরণ করে সেই মুক্ত ভূ-খন্ডে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে অদ্বায়ী সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যগণ শপথ গ্রহণ করেন। এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক সনদ বা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমএনএ, মুহম্মদ ইউসুফ আলী। একই অনুষ্ঠানে কর্নেল এমএজি ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয় এবং কর্নেল এমএজি, ওসমানীর নেতৃত্বে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

৪ ডিসেম্বর হতে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ শুরু হয়। ৬ ডিসেম্বর ভারত সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। দেশের অভ্যন্তরে পাকবাহিনী মরণকামড় দিয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালাতে থাকে। পাকবাহিনীর সমর্থনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগর হতে মার্কিন সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরের দিকে প্রেরণ করে। বাংলাদেশের পক্ষ নিয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সপ্তম নৌবহরকে অগ্রসর না হওয়ার জন্য হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে। এ নিষেধ উপেক্ষা করে সপ্তম নৌবহর যদি বঙ্গোপসাগরে আসত তাহলে হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হতো। পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে পাকবাহিনী আলবদর, রাজাকারদের সহযোগিতায় ১৪ই ডিসেম্বর অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিকাল ৫টা এক মিনিটে রমনা রেসকোর্স (বর্তমানে সোহরাওয়াদী উদ্যান) যৌথ কমান্ডের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনালের জগজিৎ সিং অরোরা এবং পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনালের নিয়াজি পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন। এ সময় মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করেন ডেপুটি চিফ (অব. স্টাফ গ্রুপ) ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে আমাদের যে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে উঠেছে তার মূলে কাজ করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকশিত হয়েছে আমাদের সমাজজীবনে। ব্যক্তিস্বাধীনতা, নারীমুক্তি আন্দোলন, নারীশিক্ষা, গণশিক্ষা, সংবাদপত্রের ব্যাপক বিকাশ সর্বোপরি গণতান্ত্রিক অধিকার চেতনা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে সমাজে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের জন্ম দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে দেশে গণতান্ত্রিকব্যবস্থা এবং অবাধ স্বাধীন গণতন্ত্র চর্চার মধ্য দিয়ে পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সাহিত্যে এক নবতর সাহিত্যধারার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশে সাহিত্যচর্চা আজকে যতটা ব্যাপ্তি পেয়েছে তার পেছনে বড়ো প্রেরণা ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছে সংগীত এবং নাটকের মধ্য দিয়ে। গণসচেতনতামূলক বক্তব্যধর্মী নাটক ব্যাপকভাবে রচিত হয়েছে স্বাধীনতার পর। আমাদের দেশাত্মবোধক গানের ক্ষেত্রে এক নতুন জোয়ার এনেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অসংখ্য গীতিকার তাঁদের গানে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাথা রচনা করেছেন। তবে আমাদের চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আশানুরূপভাবে প্রতিফলিত হয়নি। খুব সামান্যসংখ্যক চলচ্চিত্রেই মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা প্রকাশ পেয়েছে।

উপসংহার: মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কঠিন আত্মত্যাগের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তখনই পূর্ণাঙ্গ সাফল্যে উদ্ভাসিত হবে, যখন রাজনৈতিক স্বাধীনতা আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতায় রূপান্তরিত হবে। সেই লক্ষ্যে আজ সমাজের সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনাকে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। দেশের প্রত্যেক মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধের মহৎ লক্ষ্যসমূহ তুলে ধরে, সেগুলো বাস্তবায়নে সকলকে সম্পৃক্ত করা গেলেই আমাদের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এক গৌরবময় স্তরে উত্তীর্ণ হবে।

5. আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ।

0/20CB-23

ভূমিকা: বিজ্ঞানকে মানবকল্যাণে প্রয়োগ করার কৌশল হচ্ছে প্রযুক্তি। মানুষ প্রতিনিয়ত গবেষণার মাধ্যমে প্রযুক্তির উন্নতি সাধন করছে। মানবজীবন বিকাশের যথার্থ উপায় এখন প্রযুক্তিবিদ্যা। তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বের সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকান্ডের মূল হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় কদাতে এবং একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত হতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির বিকল্প নেই। দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে মহাকাশ গবেষণা পর্যন্ত সকল কাজকর্মে তথ্য-প্রযুক্তির বিজয় ঘোষিত হচ্ছে। আমাদের জাতীয় উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা ও গুরুত্ব অনেক। জাতীয় উন্নয়নের নানা ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে।

তথ্যপ্রযুক্তি ও জাতীয় উন্নয়নের ধারণা; তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, ব্যবস্থাপনা এবং সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতির সমন্বিত ও সুবিন্যস্ত রূপকে তথ্যপ্রযুক্তি বলে। ব্যাপক অর্থে কম্পিউটার, মাইক্রো ইলেকট্রনিক্স, টেলিকমিউনিকেশন ইত্যাদি বিষয় তথ্যপ্রযুক্তির মধ্যে পড়ে। এছাড়া ডাটাবেজ, সফটওয়্যার উন্নয়ন ইত্যাদি তথ্যপ্রযুক্তির অন্তর্গত। সাধারণ অর্থে টেলিফোন, ফ্যাক্স, টেলেক্স, ইন্টারনেট ইত্যাদিকে তথ্যপ্রযুক্তি বলে। জাতীয় উন্নয়ন বলতে বোঝায় সামগ্রিক উন্নয়ন। অর্থাৎ জাতীয়ভাবে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক উন্নয়ন। এ দেশে বিগত এক যুগে তথ্যপ্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটেছে। এখনকার তরুণ প্রজন্ম তথা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির ফলে জাতীয়ভাবে আয় বাড়ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান সমৃদ্ধ হচ্ছে।

তথ্যপ্রযুক্তি ও বাংলাদেশ: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম প্রতিশ্রুতি এদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলা। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার মূলভিত্তিই হলো তথ্যপ্রযুক্তি। সরকার তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যেমন-

ক. দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য প্রায় সারা দেশকে ডিজিটাল টেলিফোন ও ইন্টারনেটের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

খ. সরকার ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা’ অনুমোদন করেছে।

গ. বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য বিদেশে বাজারজাতকরণের জন্য ‘আইসিটি বিজনেস প্রমোশন সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে।

ঘ. এনসিটিবি প্রণীত কারিকুলামে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টি বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে এবং প্রযুক্তিভিত্তিক পাঠদান প্রক্রিয়া, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফল প্রকাশ ইত্যাদি ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটেছে সমধিক। সেলফোন এবং ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক এখন সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও বৈপ্লবিক মাত্রা সূচিত করেছে। অনলাইন ব্যাংকিং, এটিএম বুথ, মোবাইল ব্যাংকিং প্রভৃতি সেবা সারাদেশে বিস্তৃত হয়েছে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্যে রেজিস্ট্রেশন এখন সেলফোনের মাধ্যমেই সম্ভব হচ্ছে। ই- মেইল, ফেসবুক আমাদের নৈমিত্তিক জীবনযাপনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তারপরও উন্নত দেশগুলোর তথ্যপ্রযুক্তিগত উন্নয়নের কাছে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। তবে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তথ্যপ্রযুক্তি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখছে।

জাতীয় উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি: বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। জাতীয় উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির কিছু দিক তুলে ধরা হলো:

ক. তথ্যের আদান-প্রদান: সরকারি উদ্যোগে ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে যেখান থেকে ইউনিয়নবাসীরা কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্যের পাশাপাশি সরকারের নানা’ মন্ত্রণালয়ের তথ্য পাচ্ছে।

খ. তথ্যপ্রযুক্তি ও কর্মসংস্থান: তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এক নতুন দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে কম্পিউটার হার্ডওয়‍্যার, সফ্টওয়্যার, ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ৭-৮ হাজার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে অনেকের কাজের সুযোগ হচ্ছে।

গ. তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা: তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে শিক্ষার মান বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কম্পিউটার শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা এখন কম্পিউটারেই শিখতে পারছে পাঠসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো। তাছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন বিখ্যাত লাইব্রেরির বই, বিখ্যাত শহর-বন্দর, দেশ ইত্যাদি সম্পর্কে মুহূর্তেই সংগ্রহ করতে পারছে বিভিন্ন উপাত্ত।

ঘ. টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন: শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা তথ্যপ্রযুক্তির উপর নির্ভর করে। টেলিনেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, টেলিযোগাযোগের ব্যয় কমানো, জরুরি ডাকব্যবস্থা, রেলস্টেশন, অপটিক্যাল ফাইবার, ব্যাকবোনের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা ইত্যাদি সবই তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সম্ভব।

ঙ. শিল্প ও অর্থনীতি সফটওয়‍্যারের মূল্য হ্রাস, ই-কমার্সভিত্তিক ব্যাংক স্থাপন ইত্যাদি সকল কাজ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে করা যায়।

চ. তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা: সুদক্ষ ব্যাংকিং ব্যবস্থা দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। আর এই ব্যাংকিং খাতকে দক্ষ, যুগোপযোগী ও আধুনিক করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালুকরণের বিকল্প নেই।

ছ. যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা: তথ্যপ্রযুক্তির ফলে যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার অনেক উন্নতি সম্ভব। একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এখন আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা পাই। বিমান, রেলের টিকেট ব্যবস্থাপনা বিশেষ সফটওয়‍্যারের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

জ. আত্ম-কর্মসংস্থান: তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং, সাইবার ক্যাফে, ফোন ও রিচার্জসহ নানা ধরনের কাজে অনেকের স্বাধীন ব্যবসায়ের সুযোগ হয়েছে।

ঝ. ব্যবসা ক্ষেত্রে: তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবসার ক্ষেত্রে নানা উন্নয়ন সাধন হয়েছে। ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্যের মূল ভিত্তিই তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় সহজ হয়েছে।

ঞ. চিকিৎসা ক্ষেত্রে: তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। রোগ নির্ণয় থেকে সার্জারি পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার বিপ্লব নিয়ে এসেছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে।

ট. পর্যটন ক্ষেত্রে: বিদেশি পর্যটকেরা এখন তাদের দেশ থেকেই আমাদের দেশের পর্যটন সম্পর্কিত তথ্য পেতে পারে। আমরাও জানতে পারছি সারা বিশ্বের পর্যটন ও এ-সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়। সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেই আমাদের সুন্দরবন ও কক্সবাজারকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার সুযোগ হয়েছে।

ঠ. সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে: সমাজ সচেতনতা ও সার্বিক সম্পর্ক উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে যেমন দেশের মানুষের সমস্যা ও দুর্ভোগের কথা জানা যায়, তেমনি দেশি-বিদেশিদের সাথে সুসম্পর্কও গড়ে তোলা যায়। ফেইসবুক, টুইটার, লিংকড ইন প্রভৃতি সাইট সামাজিক যোগাযোগে অভূতপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ড. গবেষণা ক্ষেত্রে: বিভিন্ন গবেষণার জন্য এখন আর গবেষকদের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। দেশেই তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য তাঁরা পেয়ে যান তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

ঢ. মানবসম্পদ উন্নয়নে: দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ছাড়া কোনো অবস্থাতেই দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি নানা ভূমিকা পালন করে।

উপসংহার: বর্তমান বিশ্বে যে জাতি তথ্যপ্রযুক্তিতে যত বেশি দক্ষ, তাদের সার্বিক অবস্থাও তত বেশি উন্নত। তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে মূল্যবান ইস্যু। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ ঘটেনি। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষার উন্নয়ন, চিকিৎসার উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বেকারত্ব দূর করার জন্য আমাদের নানা পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। সকলের প্রচেষ্টার মাধ্যমেই বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির সফল বাস্তবায়ন ঘটবে।

(11)

1. ক) গঠনরীতির আলোকে বাক্যের প্রকারভেদ আলোচনা কর।

অথবা

(খ) নির্দেশনা অনুযায়ী যে কোনো পাঁচটি বাক্যের রূপান্তর কর :

(i) বিপদে অধীর হতে নেই। (অনুজ্ঞাবাচক)

(ii) আমার পথ দেখাবে আমার সত্য। (জটিল)

(iii) সেই বাঁশির সুর খুব মিষ্টি। (বিস্ময়সূচক)

(iv) জন্মভূমিকে সবাই ভালোবাসে। (নেতিবাচক)

(v) যেহেতু বৃষ্টি হয়েছে, সেহেতু ফসল ভালো হবে। (সরল)

(vi) সকলেই ফুল ভালোবাসে। (প্রশ্নবাচক)

(vii) আমি তোমার মঙ্গল কামনা করি। (প্রার্থনাসূচক)

viii) এমন কথা সে মুখে আনিতে পারিত না। (অস্তিবাচক)

0/5CB-23

(ক) উত্তরঃ গঠন অনুসারে বাক্যকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১। সরল বাক্য। ২। জটিল বা মিশ্র বাক্য। ৩।যৌগিক বাক্য।

# সরল বাক্য- যে বাক্যে একটি কর্তা এবং একটি ক্রিয়া থাকে, তাকে তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন – রহিমা ফুল তুলছে। এখানে রহিমা কর্তা এবং তুলছে ক্রিয়া। এই বাক্যে একটি কর্তা এবং একটি ক্রিয়া।

জটিল বা মিশ্র বাক্য- যে বাক্যে একটি প্রধান খন্ডবাক্যের সাথে এক বা একাধিক আশ্রিত বাক্য পরস্পর যুক্ত হয়ে বাক্য গঠন করে। তাকে জটিল বা মিশ্র বাক্য বলে। যেমন – তুমি যদি আসো, আমি যাবো। যে ব্যক্তি পরিশ্রম করে, সে ব্যক্তি সুখ লাভ করে।

# যৌগিক বাক্য: পরস্পর নিরপেক্ষ একাধিক সরলবাক্য যখন অর্থ ও গঠন অপরিবর্তিত রেখে সংযোজক অব্যয়ের দ্বারা মিলিত হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্য গঠন করে। তাকে যৌগিক বাক্য বলে।

যেমন – রাহিমা অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী কিন্তু নিয়মিত ক্লাস করে না। লোকটি গরীব কিন্তু সৎ।

(খ)  উত্তরঃ

(i) (অনুজ্ঞাবাচক) বিপদে অধীর হয়ো না।

(ii) (জটিল) যা আমার পথ তা দেখাবে আমার সত্য।

(iii) (বিস্ময়সূচক) কী মিষ্টি বাঁশির সুর !

(iv) (নেতিবাচক) জন্মভূমিকে ভালোবাসে না এমন কেউ নেই।

(v) (সরল) বৃষ্টি হলে ফসল ভালো হবে।

(vi) (প্রশ্নবাচক) ফুল কে না ভালোবাসে?

(vii) (প্রার্থনাসূচক) তোমার মঙ্গল হোক।

viii) (অস্তিবাচক) এমন কথা তার মুখে আনিতে সে অপারগ ছিল।

2. (ক) নারীশিক্ষার গুরুত্ব বিষয়ে বাবা ও মেয়ের সংলাপ রচনা করো।

অথবা,

(খ) ‘এক বিকেল’ শিরোনামে একটি খুদেগল্প রচনা করো।

0/10CB-23

(ক) উত্তরঃ নারীশিক্ষার গুরুত্ব বিষয়ে বাবা ও মেয়ের সংলাপ:

বাবা : সুরভী, মা তােমার তাে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ। এবার তুমি কী করবে? 

মেয়ে: বাবা, আমার বান্ধবীরা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ে অংশ নিচ্ছে। আমিও ভর্তি হতে চাই। 

বাবা : এটাতাে খুব ভালাে কথা। আমি চাই আমার মেয়ে অনেক দূর পর্যন্ত লেখাপড়া করবে । বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য শিক্ষাই এখন বড়াে হাতিয়ার। আজকাল ছেলেদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মেয়েরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। তুমি কি এ বিষয়টা উপলব্ধি করতে পার? 

মেয়ে : হ্যা বাবা, আমাদের কলেজের ইংরেজির শিক্ষকও এ বিষয়ে আমাদের সচেতন করতেন । আমিও স্বপ্ন দেখি বড়াে কিছু হওয়ার। আমি নিজের একটা পরিচিতি গড়ে তুলতে চাই। 

বাবা : একটা কথা সবসময় মনে রেখাে, তুমি যতদূর পর্যন্ত লেখাপড়া করতে চাও করবে। আমি ও তােমার মা সবসময় তােমার পাশে থাকব। আমি চাই তুমি আইন বিষয়ে পড়। আমার স্বপ্ন তুমি আইনজীবী হবে । রাষ্ট্রের বিভিন্ন আইনি লড়াইয়ে সাহসিকতার প্রমাণ রাখবে । সারা দেশে তােমার সুনাম ছড়িয়ে পড়বে। এটা কেবল নাম, যশ, প্রতিপত্তির জন্যই নয়, বরং সমাজে তােমার পরিচিতি গড়ে তােলার জন্যও জরুরি। 

মেয়ে : আমিও এমন কিছু করতে চাই, যেন সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারি । শিক্ষা না থাকলে সভা প্রতিপন্ন করে। আমি পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চাই।

বাবা : অবশ্যই মা। বর্তমানে নারীশিক্ষার ব্যাপারে আমাদের দেশে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যে দেশের প্রধান প্রধান পদ অলংকার করে আছেন নারীরা, সে দেশে নারীরা পিছিয়ে থাকবে এটা ভাবাই যায় না। তুমি তােমার স্বপ্ন পরণের পথে অগ্রসর হও। এর জন্য সকল সহায়তা ও পরামর্শ আমরা তোমাকে দেবো।

মেয়ে: ধন্যবাদ বাবা তােমরা আমার সাথে থাকলে আমি সবকিছু জয় করতে পারব। আমি উচ্চশিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য নারীকেও শিক্ষিত হয়ে উঠতে উদ্বুদ্ধ করব।

(খ) উত্তরঃ

‘এক বিকেল’

প্রীতমের বাবার অনেক দিন থেকেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তা হয়ে উঠছিল না। প্রিতম ও তার ছোটো ভাই-বোনেরা প্রতিদিন বাবা বাসায় এলে এ নিয়ে তাঁকে অস্থির করে তোলে। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। তার বাবা অফিসের কাজ শেষ করে দুপুরেই বাসায় চলে আসেন। খাওয়া শেষ করে সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বলেন। আজ বিকেলে সবাই মজা করে ঘুরবে- এ কথা জানাতেই প্রীতম ও তার ভাই-বোনদের খুশির যেন সীমা নেই। বেলা তিনটার দিকে তারা বেরিয়ে পড়ল। তাদের গন্তব্য পদ্মা বহুমুখী সেতু ও মাওয়া ফেরিঘাট। ঢাকা থেকে একটি গাড়িতে তারা রওনা দেয় পদ্মা সেতুর উদ্দেশ্যে। যাত্রাবাড়ি পার হতেই সুপ্রশস্ত ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে যানজটহীন পথচলা তাদের মুগ্ধ করে। কোথাও থামতে হয়নি। সরাসরি চলে যেতে পেরেছে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে। টোল প্লাজায় টোল পরিশোধ করে তারা ছুটে চলল পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে। সে কী অনুভূতি তাদের। চোখজুড়ানো, মনমাতানো এক অনুভূতি নিয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে তাদের গাড়ি চলতে থাকল। বাংলাদেশে এমন একটি সেতু নির্মিত হয়েছে তা ভাবতেই গর্বে সবার বুক ভরে গেল। বিধিনিষেধ থাকায় তারা পদ্মা সেতুর ওপর দাঁড়াতে পারল না। বিশাল জলরাশির ওপর দিয়ে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে তারা পৌছে গেল জাজিরা প্রান্তে। এই সেতুকে কেন্দ্র করে সেখানে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন তারা প্রত্যক্ষ করল। সেখানে রাস্তাঘাট, শিল্প-কারখানা, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ মানুষের জীবনযাত্রায় অভাবনীয় পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। তারা সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া প্রান্তে চলে আসে। মাওয়া ঘাটে এসে পদ্মার তাজা ইলিশ খাবে না, তা হতে পারে না। মাওয়া ঘাটের কাছে যেতেই দুই পাশে সারি সারি রেস্টুরেন্ট থেকে ভাজা ইলিশের ঘ্রাণ তাদের বিমোহিত করল। জিভে জল চলে আসে সবার। গাড়ি পার্ক করে একটি রেস্টুরেন্টের সামনে নেমে পড়ল সবাই। প্রিতমের বাবা একটি বড়ো ইলিশ মাছ কিনলেন। মাছটি কেটে ভাজা হলো। এরপর সরিষার তেল দিয়ে ভাজা মাছ, লেজের ভর্তা, বেগুন ভাজি ও ডাল দিয়ে পেট পুরে সবাই খেয়ে নিলো। মনের আনন্দে সবাই আবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলো। এমন একটি খুশির বিকেলের জন্যই যেন তারা অধীর আগ্রহে ছিলো। ফেরার পথে তাদের আনন্দের বিকেলটি যেন বিষণ্ণতায় ছেয়ে গেল। ঢাকার কাছাকাছি একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা তাদের সবার হৃদয়কে ভারী করে তুলল। প্রাইভেট কার ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর দৃশ্য তাদের একটি বিকেলের আনন্দকে যেন বিষাদে পরিণত করল। আনন্দ ও বিষাদে ভরা এই এক বিকেলের কথা কোনোদিন তারা ভুলে থাকতে পারবে না।

3. ক) যে কোনো দশটি শব্দের বাংলা পারিভাষিক রূপ লেখার প্রীতিমাল Acid, Balcony, Catalogue, Data, Ethics, Goods, Headline, Idiom, Legend, Option, Racism, Memorandum, Neutral, Sponsor, Quality!

অথবা

খ) নিচের অনুচ্ছেদটি বাংলায় অনুবাদ কর :

Walking is the best suited to all kinds of health. Both the young and the old can walk and help their bodies make active as long as they live. On the other hand, gymnastic exercises are best suited to young people only. However, today most doctors advise some patients, suffering from particular diseases for jogging.

0/5CB-23

(ক)উত্তরঃ

অম্ল, ঝুল-বারান্দা; তালিকা/গ্রন্থতালিকা, উপাত্ত, নীতিবিদ্যা, পণ্য/মাল, শিরোনাম, বাগধারা, কিংবদন্তি, ইচ্ছা, স্বাজাতিকতা, স্মারকলিপি, নিরপেক্ষ, পোষক / পোষণ করা, গুণ/উপযোগিতা।

(খ) উত্তরঃ

হাঁটা সব ধরনের স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। অল্পবয়সী এবং বৃদ্ধ উভয়েই হাঁটতে পারে এবং যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন তাদের দেহকে সক্রিয় করতে সহায়তা করে। অন্যদিকে, জিমন্যাস্টিক ব্যায়াম শুধুমাত্র তরুণদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। যাইহোক, আজ বেশিরভাগ ডাক্তার কিছু নির্দিষ্ট রোগে আক্রান্ত রোগীদের জগিং করার পরামর্শ দেন।

4. (ক) বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম লেখ।

অথবা

(খ) যে কোনো পাঁচটি শব্দের বানান শুদ্ধ কর :

পুরষ্কার, নুপুর, স্নেহাশিস, সমিচিন, মুমুর্ষ, সুষ্ঠ, আকাংখা, বুদ্ধিজিবী 

0/5CB-23

(ক)উত্তরঃ

বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ম নিম্নরূপ :

১. যেসব শব্দে ই, ঈ বা উ, ঊ উভয় শুদ্ধ কেবল সেসব শব্দে ই বা উ এবং কার চিহ্ন  ি বা  ু হবে। যেমন—পল্লী, ধরণি, শ্রেণি, সূচিপত্র, রচনাবলি ইত্যাদি।

২. রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন—অর্জন, কর্ম, কার্য, সূর্য ইত্যাদি।

৩. সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পূর্ব পদের অন্তস্থিত ম স্থানে ং হবে। যেমন—অহম্ + কার = অহংকার, সম্ + গীত = সংগীত ইত্যাদি।

৪. শব্দের শেষে বিগর্স (ঃ) থাকবে না। যেমন—কার্যত, প্রথমত, প্রধানত, প্রায়শ, মূলত ইত্যাদি।

৫. সব অতৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই, ঊ এবং এদের কারচিহ্ন  ি বা  ু ব্যবহার হবে। যেমন—আরবি, আসামি, ইংরেজি, বাঙালি, সরকারি, চুন ইত্যাদি।

(খ)উত্তরঃ শুদ্ধ বানান: পুরস্কার, নূপুর, স্নেহাশিস, সমীচীন, মুমূর্ষু, সুষ্ঠু, আকাঙ্ক্ষা, বুদ্ধিজীবী।

5. (ক) আবেগ শব্দ কাকে বলে? উদাহরণসহ আবেগ শব্দের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।

অথবা

(খ) নিচের অনুচ্ছেদের নিম্নরেখ পাঁচটি শব্দের ব্যাকরণিক শ্রেণি নির্দেশ কর :

একটু মিটমিট করিয়া ক্ষুদ্র  আলো জ্বলিতেছে— দেয়ালের উপর চঞ্চল ছায়া, প্রেতবৎ নাচিতেছে। আহার প্রস্তুত হয় নাই—এজন্য হুকা হাতে, নির্মীলিত লোচনে আমি ভাবিতেছিলাম যে, আমি যদি নেপোলিয়ন হইতাম, তবে ওয়াটারলু জিতিতে পারিতাম কিনা।

0/5CB-23

(ক)উত্তরঃ  যে শব্দের মাধ্যমে মনের নানা ভাব ও আবেগকে প্রকাশ করা হয়,তাকে আবেগ শব্দ বলে। প্রকাশ অনুসারে আবেগ শব্দকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:

সিদ্ধান্তবাচক আবেগ শব্দ: এই জাতীয় আবেগ শব্দের সাহায্যে অনুমোদন প্রকাশ পায়।যেমন:বেশ,তাই হবে।
প্রশংসাবাচক আবেগ শব্দ: এ ধরনের আবেগ শব্দ প্রশংসা প্রকাশ করে।যেমন:বাঃ!বড় ভালো কথা বলেছ।
বিরক্তিবাচক আবেগ শব্দ: এ ধরনের আবেগ শব্দ ঘৃণা প্রকাশ করে।যেমন:ছিঃ ছিঃ,তুমি এত নীচ!
যন্ত্রণাবাচক আবেগ শব্দ: এ ধরনের আবেগ শব্দ আতঙ্ক প্রকাশ করে।যেমন:আঃ,কী আপদ।
সম্বোধনবাচক আবেগ শব্দ: এ ধরনের আবেগ শব্দ আহবান করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।যেমন:হে বন্ধু,তোমাকে অভিনন্দন।
বিস্ময়বাচক আবেগ শব্দ: এ ধরনের আবেগ আশ্চর্য হওয়ার ভাব প্রকাশ করে।যেমন:আরে,তুমি আবার এলে!

(খ)উত্তরঃ মিটমিট (ক্রিয়া বিশেষণ), ক্ষুদ্র (বিশেষণ), নাচিতেছে (ক্রিয়া), হুকা (বিশেষ্য), তবে (যোজক)।

6. (ক) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তোমার অনুভূতি ব্যস্ত করে দিনলিপি রচনা করো।

অথবা,

(খ) দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য একটি প্রতিবেদন রচনা করো।

0/10CB-23

(ক) উত্তরঃ

২১, ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বুধবার

রাত ১১টা ৫৮ মিনিট

ঢাকা।

ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ আমাদের দেশের জন্য জাতীয় শহিদ দিবস আর বৃহত্তর পরিসরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আমাদের দেশের দামাল ছেলেরা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রাজপথে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে দমিয়ে রাখতে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্রের প্রথম ষড়যন্ত্র ভাষা নিয়ে। তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিতে সালাম, বরকত, রফিকরা সেদিন রাজপথে আন্দোলনে নেমে শহিদ হয়েছিলেন। সেই ভাষাশহিদদের স্মরণে দিনটা শুরু হলো প্রভাতফেরির মাধ্যমে। করোনা মহামারির কারণে এবারের প্রভাতফেরির আয়োজন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে করা হয়। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমরা ক’জন সমবেত হলাম। শিক্ষকবৃন্দ এসে প্রভাতফেরিতে যোগদান করলে শুরু হলো খালি পায়ে আমাদের পদযাত্রা। সে সাথে সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হচ্ছিল ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’। প্রভাতফেরিটি কলেজের শহিদ মিনারে পৌঁছলে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এক মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে ভাষাশহিদদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হলো। তারপর কলেজে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিলাম বন্ধুদের সাথে। কবিতা আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠানের পর, কলেজের অধ্যক্ষ ও অন্য শিক্ষকগণ আজকের দিনটির মহিমান্বিত দিক আমাদের সামনে তুলে ধরলেন। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে প্রবন্ধ ও কবিতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন অধ্যক্ষ মহোদয়। আমি নিজেও প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকারের জন্য পুরস্কার পেলাম। অনুষ্ঠান শেষে বাড়িতে এসে বাবাকে পুরস্কার দেখালাম। বাবা খুব খুশি হলেন।

(খ) উত্তরঃ

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: জনজীবন বিপর্যন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক । ঢাকা। ২৭ শে মে ২০১৯৷৷ সম্প্রতি যে বিষয়টি আমাদের ভাবিত করছে তা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। বর্তমানে আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে দৈনন্দিন জীবনে নেমে এসেছে অপ্রত্যাশিত দুর্ভোগ। এর নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান করছেন অর্থনীতিবিদগণ। বিশেষজ্ঞের মতে, এ আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ অনেকগুলো। প্রথমত, মুনাফালোভী মজুতদাররা প্রায়ই অধিক মুনাফা অর্জনের মানসিকতায় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, বহির্বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যের সংকটের ফলে দেশের বাজারে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায়। তৃতীয়ত, সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি। দেশের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ এরূপ ভাতা পেলেও অসুবিধার দায়ভার বহন করছে সমাজের বৃহত্তম অংশ। এমনকি চাকরিজীবীদের মধ্যেও কেউ কেউ এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। লক্ষণীয় ব্যাপার এই যে, সরকার কর্তৃক মহার্ঘ ভাতা ঘোষণার পরক্ষণেই অজ্ঞাত কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। সরকারি কর্মচারীগণ যে হারে মহার্ঘ ভাতা পেয়েছেন, দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে সরকারি কর্মচারীরাও এ সমস্যার শিকার হয়েছেন। তাই অবিলম্বে এ অনাকাঙ্ক্ষিত মূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধকল্পে যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক।

মূল্য বৃদ্ধি এদেশে এটাই প্রথম তা নয়। এদেশে এটি একটি নিয়মিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে মূল্য বৃদ্ধিজনিত এমন নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টির ঘটনা বিরল। ।। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও এমনটি ঘটলে বিক্ষোভ দানা বাঁধে, সরকারকে জবাবদিহি করতে হয়। কিন্তু এদেশের সরলপ্রাণ মানুষ এরূপ কোনো ঘটনা নিয়ে বেশি মাতামাতি পছন্দ করে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তারা এদেশে জাতীয় সমস্যা বলেই ধরে নিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ হলেও দুর্নীতিবাজ কর্মচারী ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের লাভের পরিমাণ বেশি। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে বার বার। আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটা অসাধু শ্রেণি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ফায়দা লুটে নিচ্ছে। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে বিপদাপন্ন করে যারা নিজেদের সুখ-সম্পদ আহরণের চেষ্টায় মত্ত, তারা দেশের শত্রু, জনগণের শত্রু। এসব অসৎ ও দুর্নীতিবাজ লোকদের উৎখাত করা এখন সময়ের দাবি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের সচেতনতা একান্ত অপরিহার্য।

7. (ক) ‘এ’ ধ্বনি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখ ।

অথবা

(খ) নিচের যে কোনো পাঁচটি শব্দের উচ্চারণ লেখ : ঐকতান, বিজ্ঞান, ঔপন্যাসিক, ছাত্র, অসীম, প্রধান, পরীক্ষা, কবি।

0/5CB-23

(ক) উত্তরঃ

‘এ’ ধ্বনি উচ্চারণের ৫ টি নিয়ম নিচে দেওয়া হলোঃ

১। শব্দের প্রথমে যদি ‘এ’-কার থাকে এবং তারপরে ই, ঈ, উ, ঊ, এ, ও, য়, র, ল, শ, এবং, হ থাকলে সাধারণত ‘এ’ অবিকৃতভাবে উচ্চারিত হয়। যথাঃ একি (একি), দেখি, (দেখি), মেকি (মেকি), ঢেঁকি (ঢেঁকি), বেশি (বেশী) ইত্যাদি।

২। শব্দের আদ্য ‘এ’-কারের পরে যদি ং (অনুস্বার) ঙ কিংবা ঙ্গ থাকে এবং তারপরে ‘ই’ (হ্রস্ব বা দীর্ঘ) ‘উ’ (হ্রস্ব বা দীর্ঘ) অনুপস্থিত থাকে তবে সেক্ষেত্রে ‘এ’, ‘অ্যা’-কারে রুপান্তরিত হয়। যথাঃ বেঙ [ব্যাঙ, কিন্ত ‘ই’-কার সংযুক্ত হলে বেঙি], খেংরা (খ্যাংরা কিন্তু খেঙ্‌রি), বেঙ্গমা (ব্যাঙ্‌গোমা কিন্তু বেঙ্‌গোমি), লেংড়া (ল্যাঙ্‌ড়া কিন্তু লেঙ্‌ড়ি), নেংটা (ন্যাঙ্‌টা কিন্ত নেঙটি) ইত্যাদি।

৩। এ-কারযুক্ত একাক্ষর (monosyllable) ধাতুর সঙ্গে আ-প্রত্যয়যুক্ত হলে, সাধারণত সেই ‘এ’ কারের উচ্চারণ ‘অ্যা’ কার হয়ে থাকে। যথাঃ খেদা (খেদ্‌+আ=খ্যাদা), ক্ষেপা (ক্ষেপ্‌+আ=খ্যাপা), ঠেলা (ঠেল্‌+আ=ঠ্যালা) ইত্যাদি।

৪। মূলে ‘ই’-কার বা ঋ-কারযুক্ত ধাতু প্রাতিপাদিকের সঙ্গে আ-কার যুক্ত হলে সেই ই-কার এ-কার রূপে উচ্চারিত হবে, কখনো “অ্যা”-কার হবে না। যথাঃ কেনা (কিন্‌ ধাতু থেকে), মেলা (<মিল্‌), লেখা (<লিখ্‌), গেলা (গিল্‌), মেশা (মিশ্‌) ইত্যাদি।

৫। একাক্ষর (monosyllable) সর্বনাম পদের ‘এ’ সাধারণত স্বাভাবিকভাবে অর্থাৎ অবিকৃত ‘এ’-কার রূপে উচ্চারিত হয়। যথাঃ কে, সে, এ, যে ইত্যাদি।

(খ) উত্তরঃ

8. (ক) যে কোনো পাঁচটি বাক্যের অপপ্রয়োগ শুদ্ধ করে লেখ :

(i) পরবর্তীতে আপনি আবার আসবেন।

(ii) অন্যায়ের প্রতিফল দুর্নিবার্য ।

(iii) কারো ফাল্গুনমাস, কারো সর্বনাশ।

(iv) দ্রব্যমূল্যের দাম ক্রমবর্ধমান।

(v) তার সৌজন্যতায় মুগ্ধ হলাম।

(vi) কথাটি প্রমাণ হয়েছে।

(vii) আজকাল খাঁটি গরুর দুধ বড়ই দুর্লভ।

(viii) পরীক্ষা চলাকালিন হর্ন বাজানো নিষেধ।

অথবা

(খ) নিচের অনুচ্ছেদটির অপপ্রয়োগগুলো শুদ্ধ করে লেখ :

উদয়মান সূর্যকে সবাই সমীহ করে। অস্তমান সূর্যকে কেউ সমীহ করে না। নদীর জলে যে অস্তমান সূর্যের ছায়া পড়েছে তা দেখে আমি প্রীত হলাম। আমি প্রতিদিন নদীর কোলে বসি। নদীর হাওয়া সাস্তের পক্ষে ভালো।

0/5CB-23

(ক) উত্তরঃ

(i) আপনি আবার আসবেন।

(ii) অন্যায়ের প্রতিফল অনিবার্য।

(iii) কারো পৌষমাস, কারো সর্বনাশ।

(iv) দ্রব্যমূল্য ক্রমবর্ধমান বা দ্রব্যের দাম ক্রমবর্ধমান।

(v) তার সৌজন্যে মুগ্ধ হলাম।

(vi) কথাটি প্রমাণিত হয়েছে।

(vii) আজকাল গরুর খাঁটি  দুধ বড়ই দুর্লভ।

(viii) পরীক্ষা চলাকালীন হর্ন বাজানো নিষেধ।

(খ) উত্তরঃ উদীয়মান সূর্যকে সবাই সমীহ করে। অস্তায়মান সূর্যকে কেউ সমীহ করে না। নদীর জলে যে অস্তায়মান সূর্যের ছায়া পড়েছে তা দেখে আমি প্রীত হলাম। আমি প্রতিদিন নদীর কূলে  বসি। নদীর হাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো।

9. (ক) সারমর্ম লেখো:

ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা,

হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা

তোমার আদেশে। যেন রসনায় মম

সত্যবাক্য ঝলি ওঠে খরখভূগ সম

তোমার ইঙ্গিতে। যেন রাখি তব মান

তোমার বিচারাসনে লয়ে নিজ স্থান।

অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে

তব ঘৃণা তারে যেন তৃণ সম দহে।

অথবা,

(খ) ভাবসম্প্রসারণ করো: সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত।

0/10CB-23

(ক) উত্তরঃ

সারমর্ম: ক্ষমা করা মহৎ গুণ। ক্ষমার অজুহাতে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া সমীচীন নয়। সেক্ষেত্রে যে অন্যায় করে আর যে ক্ষমা করে দুজনই সমান অপরাধী। দুজনকেই তাই সমানভাবে ঘৃণা করা উচিত।

(খ) উত্তরঃ

মূলভাবঃ

একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেই কাউকে সুশিক্ষিত বলা যায় না। সুশিক্ষিত হতে হলে সৃজনশীল জ্ঞান এবং প্রয়ােগ দক্ষতা অর্জন করতে হয়। 

সম্প্রসারিত ভাবঃ

শিক্ষা মানুষকে আলােকিত করে। তার চেতনাকে শানিত করে, ন্যায়-অন্যায়বােধ সৃষ্টি করে। আর এ সবকিছুই মানুষকে মনুষ্যত্বসম্পন্ন ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। সাধারণভাবে শিক্ষা বলতে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকেই বুঝি। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই মানবজীবনের একমাত্র শিক্ষা নয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের আচার-আচরণ ও কর্মপ্রণালি অনেক সময় বুদ্ধি-বিবেকহীন সাধারণ মানুষের চেয়েও হীন, ক্ষেত্রবিশেষে পশুর মতাে হয়ে থাকে। এজন্য মানুষমাত্রেরই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক বিষয়ে জ্ঞানার্জন করতে হয়। আর এজন্য প্রয়ােজন হয় স্বীয় উদ্যোগ, প্রচেষ্টা ও নিরলস সাধনা। কেননা নিজস্ব বুদ্ধি-বিবেক প্রয়ােগ করে প্রকৃতি ও পরিবেশ থেকে শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জন করতে না পারলে কেউ সুশিক্ষিত হতে পারে না। 

একথা অনস্বীকার্য যে, বর্তমান সময়ের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মূলত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। এ ধরনের শিক্ষায় পরীক্ষা পাশ কিংবা কতকগুলাে সনদ লাভ করা গেলেও আলােকিত মানুষ হওয়া যায় না। এ ধরনের শিক্ষা প্রকৃত অর্থে জ্ঞানার্জনের জন্য নয় বরং জীবিকা অর্জনের জন্যে। তাই প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় উচ্চ ডিগ্রি লাভ করলেই সুশিক্ষিত হওয়া যায় না। আমাদের সমাজে এমন অনেকে আছেন যারা প্রাতিষ্ঠানিক কোনাে শিক্ষা লাভ না করেই প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং সংগ্রামময় জীবন থেকে অনেক কিছু শিখে স্বশিক্ষিত হয়েছেন। তাঁদের জ্ঞান, দর্শন, আচার-আচরণ ও শিক্ষা মানুষকে মুগ্ধ করে। তারা তাদের জ্ঞানের আলােয় চারিদিক আলােকিত করে তােলেন। তাই আমাদের সকলের উচিত সার্টিফিকেট লাভের শিক্ষায় পরিণত না হয়ে জ্ঞানার্জনের শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া। 

মন্তব্যঃ

জীবনের পরিপূর্ণ সত্য উপলব্ধি করার জন্য দরকার সুশিক্ষা। সুশিক্ষাই পারে মানুষের আত্মিক উন্নতি সাধন করতে।

10. (ক) উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে’—বিশ্লেষণ কর।

অথবা

(খ) যে কোনো পাঁচটি শব্দের ব্যাসবাক্যসহ সমাস নির্ণয় কর : পৃষ্ঠপ্রদর্শন, মায়েঝিয়ে, উপকূল, লাঠালাঠি, ধর্মঘট, দম্পতি, পঙ্কজ, যৌবনসূর্য।

0/5CB-23

(ক) উত্তরঃ অর্থহীন অথচ অর্থদ্যোতক যেসব অব্যয় নাম শব্দ বা কৃদন্ত শব্দের আগে বসে শব্দগুলোর অর্থ সংকোচন, প্রসারণ বা অন্য কোনো পরিবর্তন সাধন করে থাকে, তাদের বাংলায় উপসর্গ বলে।

উপসর্গের কোন অর্থবাচকতা নেই, অর্থদ্যোতকতা আছে মাত্র। এগুলো নাম শব্দ বা কৃদন্ত শব্দের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে যদি স্বাধীনভাবে থাকে, তাহলে এদের কোনো অর্থ হয় না। আর যদি নাম শব্দ বা কৃদন্ত শব্দ কোনো একটির সঙ্গে যুক্ত হয়, তবেই এগুলো আশ্রিত শব্দকে অবলম্বন করে বিশেষ বিশেষ অর্থদ্যোতকতা সৃষ্টি করতে পারে।

তবে বাংলায় ‘অতি’ ও ‘প্রতি’ এ দুটো উপসর্গ কখনো কখনো স্বাধীনভাবেও প্রয়োগ হতে পারে।

(খ)উত্তরঃ

পৃষ্টকে প্রদর্শন (২য়া তৎপুরুষ), 

মায়ে ও ঝিয়ে (দ্বন্দ্ব),

কূলের সমীপে (অব্যয়ীভাব),

লাঠিতে লাঠিতে যে লড়াই (ব্যতিহার বহুব্রীহি),

ধর্ম রক্ষার্থে যে ঘট (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়),

জায়া ও পতি (দ্বন্দ্ব),

পঙ্কে জন্মে যা (উপপদ তৎপুরুষ),

যৌবন রূপ সূর্য (রূপক কর্মধারয়)।

11. (ক) বাংলা নববর্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বন্ধুর উদ্দেশ্যে একটি বৈদ্যুতিন চিঠি লেখো।

অথবা,

(খ) তোমার কলেজে বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের অনুমতি চেয়ে অধ্যক্ষের নিকট একটি আবেদনপত্র লেখো।

0/10CB-23

(ক) উত্তরঃ

New Message।

To: safinahmed@gmail.com

Cc:

Bcc:

Subject : বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।

Text: প্রিয় সাফিন,

শুভ নববর্ষ। আজ পহেলা বৈশাখ। আশা করছি বন্ধুদের সঙ্গে দিনটা অনেক আনন্দে কাটাবে। আজ বিভিন্ন জায়গায় বাঙালির প্রাণের মেলা বসেছে। সেসব অনুষ্ঠান প্রাণ ভরে উপভোগ করবে। ইলিশ-পান্তা খাবে। সর্বোপরি, তোমার দিনটি আনন্দে কাটুক এই কামনা করি।

রিজভী।

(খ) উত্তরঃ

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অধ্যক্ষ

নাসিরাবাদ সরকারি কলেজ

নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম

বিষয়: বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের অনুমতির জন্য আবেদন।

মহোদয়,

সবিনয় নিবেদন এই যে, আমরা আপনার কলেজের একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী। আমাদের কলেজে সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হলেও বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন হয় না। বিতর্ক আমাদের মেধার বিকাশে সহায়তা করে। এজন্য আমরা কলেজে বিতর্ক প্রতিযোগিতার প্রয়োজন অনুভব করছি।

অতএব,

মহোদয় সমীপে বিনীত নিবেদন, বিতর্ক প্রতিযোগিতার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কথা চিন্তা করে বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজান অনুমতিদানে আপনার মর্জি হয়।

নিবেদক

একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পক্ষে

নাঈমা সুলতানা

নাসিরাবাদ সরকারি কলেজ

নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম।

( end of cumillah 23 )

1. ক) ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল ও কুফল সম্পর্কে পরামর্শ জানিয়ে ছোটো ভাইকে একটি বৈদ্যুতিন চিঠি লেখো।

অথবা,

(খ) কোনো উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরির জন্য আবেদনপত্র লেখো।

0/10BB-23

(ক) উত্তরঃ

New Message

To: iqbalhossain@yahoo.com

Cc:

Bcc:

Subject: ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল ও কুফল।

Text:

প্রিয় ইকবাল,

তোমার ই-মেইল পেয়ে জানতে পারলাম, তুমি ইন্টারনেট ব্যবহার করছ। জেনে খুশি হলাম।

আধুনিক যুগে ইন্টারনেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইন্টারনেটে পত্রিকা পড়া যায়। সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সহজেই খুঁজে বের করা যায়। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঢুকে দেশ-বিদেশের নানা খবর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায়। গান শোনা, সিনেমা দেখা ইত্যাদি বিনোদনের কাজেও ব্যবহার করা যায় ইন্টারনেটকে। এছাড়া ই- মেইল, ফেসবুক, ভাইবার, স্কাইপি প্রভৃতি ব্যবহার করে অতি সহজেই মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।

তবে এটি ব্যবহারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কেননা, এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। যেমন: অতিমাত্রায় ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে আসক্তি তৈরি হয়, পড়াশোনার ক্ষতি হয়। পাশাপাশি, কিছু মিল্লা মানুষ তাদের খারাপ কাজের মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে থাকে, যা এক ধরনের অপরাধ। তাই সবসময় সতর্ক থেকে ইতিবাচক কাজে ব্যবহার করবে এটিকে।

তোমার বড়ো ভাই।

(খ) উত্তরঃ

২০.০৩. ২০২৩

বরাবর

অধ্যক্ষ,

ফুলবাড়ীয়া মহাবিদ্যালয় ফুলবাড়ীয়া, ময়মনসিংহ।

বিষয়: সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ লাভের জন্য আবেদন।

জনাব,

গত ২৮ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানতে পারলাম, আপনার অধীনে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় • বিষয়ে একজন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। উক্ত পদের একজন প্রার্থী হিসেবে আমি আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য আপনার সদয় বিবেচনার জন্য’উপস্থাপন করছি।

১. নাম : মো. রেজাউল করিম শাহীন

২. পিতার নাম : মো. আব্দুল কাদের ফরাজী

8. স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- জোরবাড়ীয়া, ডাকঘর- ফুলবাড়ীয়া, থানা- ফুলবাড়ীয়া, জেলা- ময়মনসিংহ।

৫. বর্তমান ঠিকানা : বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা-১২১৯।

৬. জন্ম তারিখ (এস.এস.সি সনদ অনুযায়ী): ১০. ০২. ১৯৮৮।

৭. ধর্ম : ইসলাম।

৮. জাতীয়তা : বাংলাদেশি।

৯. শিক্ষাগত যোগ্যতা :

পরীক্ষার নামপ্রাপ্ত বিভাগ/ গ্রেডপাসের সনবোর্ড/বিশ্বদ্যিালয়
এস.এস.সিA+২০১২ঢাকা বোর্ড
এইচ.এস.সিA২০১৪ঢাকা বোর্ড
বি. কমB২০১৭জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

১৩. অভিজ্ঞতা : গত ০৬. ০৪. ২০১২ তারিখ হতে লেকচার পাবলিকেশন্স লি.-এর বাংলা বিভাগে কর্মরত আছি এবং বর্তমানে উপব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করছি।

অতএব,

মহোদয়ের নিকট প্রার্থনা, উল্লিখিত তথ্যাবলির ভিত্তিতে ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে আমার মেধা ও দক্ষতা যাচাইপূর্বক উক্ত পদে নিয়োগ প্রদান করলে আমার কর্মদক্ষতার দ্বারা আপনার সন্তুষ্টি বিধানে সচেষ্ট থাকব।

নিবেদক-

মো. রেজাউল করিম।

সংযুক্তি :

১. শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদপত্রের সত্যায়িত অনুলিপি।

২. নাগরিকত্বের সনদপত্র।

৩. চারিত্রিক সনদপত্র।

৪. সদ্য তোলা ৪ কপি পাসপোর্ট আকারের সত্যায়িত ছবি।

৫. অভিজ্ঞতার সনদপত্র।

৬. শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সত্যায়িত সনদপত্র।

৭. ৩০০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক ড্রাফট।

[বি. দ্র. পত্রের শেষে ডাকটিকেট সংবলিত খাম, ঠিকানা ব্যবহার অপরিহার্য।]

2. (ক) সম্প্রতি পড়া একটি বই সম্পর্কে দুই বন্ধুর একটি সংলাপ রচনা করো।

অথবা,

(খ) ‘মোবাইল ফোনে বন্ধুত্বের পরিণাম’ বিষয়ক একটি খুদেগল্প রচনা করো।

0/10BB-23

(ক) উত্তরঃ

সম্প্রতি পড়া একটি বই সম্পর্কে দুই বন্ধুর সংলাপঃ

কেয়া: শুভ সকাল শিলা।

শিলা: শুভ সকাল। কেমন আছ কেয়া?

কেয়া: এইতো ভালো। তুমি কেমন আছ?

শিলা: ভালো। জানো কেয়া, অসাধারণ একটি উপন্যাস পড়লাম গতকাল।

কেয়া: কোন উপন্যাস?

শিলা: লালসালু।

কেয়া: ও তাই? এটাতো আমিও পড়েছি। চমৎকার উপন্যাস।

শিলা: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ কী চমৎকারভাবে ধর্ম ব্যবসায়ীদের ভণ্ডামির চিত্র তুলে ধরেছেন দেখেছ?

কেয়া: তবে আক্কাসের ভূমিকা কিন্তু প্রশংসনীয়।

শিলা: আর জমিলার?

কেয়া: ও তো অতুলনীয়। মজিদ তথা অন্ধ সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে জমিলাইতো একমাত্র প্রতিবাদী চরিত্র।

শিলা: তবে খালেক ব্যাপারীর বড় স্ত্রী আমেনার জন্য খুব খারাপ লেগেছে।

কেয়া: ওই বদমাশ মজিদের কূটকৌশলের কারণেইতো আমেনার এই পরিণতি হলো।

শিলা: আর খালেক ব্যাপারী বুঝি এর জন্য দায়ী নয়?

কেয়া: অবশ্যই দায়ী। গ্রামের বিত্তশালী ও প্রভাবশালী হয়েও মজিদের প্রতি তার আনুগত্য দেখে অবাক হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে, বল?

শিলা: হ্যা, তা তো বটেই। তবে সর্বোপরি উপন্যাসটা কিন্তু কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের জন্য শক্তিশালী হাতিয়ার।

কেয়া: তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন আরেকটা নতুন উপন্যাস পড়ছি ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’।

শিলা: নাম শুনেছি বইটার। পড়িনি। দিওতো আমাকে।

কেয়া: অবশ্যই দেব।

শিলা: তোমাকে ধন্যবাদ শিলা।

(খ) উত্তরঃ

‘মোবাইল ফোনে বন্ধুত্বের পরিণাম’

আজ নাহিনের খুব খুশির দিন। কারণ আজ তার ছোটো চাচা আসবে। ছোটো চাচা আসার অর্থই হলো আজ বাসায় অনেক হৈ-হুল্লোড় হবে। তার ছোটো চাচা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। হলে থাকে, মাঝে মাঝেই সময় পেলে নাহিনের কাছে চলে আসে। প্রতিবারই কোনো না কোনো মজার গিফট নিয়ে আসে তার জন্য। নাহিন ঘরে ঢুকে দেখল তার চাচা বসে আছে। সে তাকে একটা ছোট্ট প্যাকেট ধরিয়ে দিল। প্যাকেট খুলে নাহিন খুশিতে লাফিয়ে উঠল- ‘আমার নিজের মোবাইল!’ কিন্তু পরক্ষণেই আবার মন খারাপ করে ফেলল, তার আম্মু বকবে, এই ভেবে। ছোটো চাচা ওর ভাব দেখে বলল, ‘সমস্যা নেই, তোর আম্মু কিছু বলবে না।’ খুশিতে এক হাত লাফিয়ে উঠল নাহিন। এরপর থেকে এই মোবাইলটাই ওর সঙ্গী হয়ে উঠল। এই ছবি তুলছে তো এই গান শুনছে। একদিন স্কুলের ক্লাস পার্টির জন্য আম্মুর কাছ থেকে নাহিন ২০০ টাকা নিল। হঠাৎ ওর চোখে পড়ল টাকার ওপর লেখা মোবাইল নম্বর ০১৭১১…মিসড কল প্লিজ। নাহিনের মাথায় হঠাৎ কী জানি দুষ্টবুদ্ধি খেলে গেল। তাই মোবাইল থেকে মিসড কল দিল সে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কেউ একজন কল ব্যাক করল। নাহিনের ফোন ধরার সাহস হচ্ছিল না কিন্তু তার কাছে এটা বেশ মজার একটা খেলা মনে হচ্ছিল। ও প্রতিদিনই এই নাম্বারে মিসড কল দেয়। কেউ ব্যাক করে কিন্তু নাহিন ফোন রিসিভ করে না। এভাবে বেশ কয়েক দিন কেটে গেল।

একদিন দুপুরবেলা একটা কালো গাড়ি, এসে থামে স্কুলের গেটে। অন্যদিনের মতো নাহিন সেদিন স্কুল থেকে বের হয়ে অপেক্ষা করছিল গাড়ির জন্য। একটু পর নাহিন ওর মোবাইলে একটা পরিচিত নম্বর থেকে কল দেখতে পায়। নাহিন জানত আজ তার সঙ্গে দেখা করতে আসবে তার মোবাইলের বন্ধু। নাহিন বুঝতে পারে তাকে কালো গাড়িটা থেকে ইঙ্গিত করতে থাকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। নাহিন দ্বিধা ভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। হঠাৎ নাহিন টের পায় তার মুখ কেউ চেপে ধরেছে। নাহিন তারস্বরে চেঁচানোর চেষ্টা করে। হঠাৎ করেই সে ধস্তাধস্তির শব্দ শুনতে পায়। ও বুঝতে পারে ওর চাচাকে বলে রাখায় | সময়মতো চাচা তার বন্ধুদের নিয়ে এসে হাজির হয়েছে।

পরদিন পত্রিকার পাতায় সংবাদ বের হয়: নাহিনের বীরত্বের জন্য শিশু পাচারকারী চক্র ধরা পড়েছে। বাবা, এসে আলতো করে নাহিনের মাথার চুল নেড়ে দিয়ে বলেন, ‘আমার ছেলেটা তো খুব সাহসী হয়ে গেছে। কিন্তু মোবাইলে না জেনেশুনে কখনো বন্ধুকে বিশ্বাস করতে নেই। তাতে বিপদ হতে পারে।

3. (ক) উদাহরণসহ ব-ফলা উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম লেখ।

অথবা,

(খ) যে কোনো পাঁচটি শব্দের শুদ্ধ উচ্চারণ লেখ : ঐশ্বর্য, আবৃত্তি, প্রেতাত্মা, দ্রষ্টব্য, উপমা, প্রশ্ন, দক্ষ, হিংস্র।

0/5BB-23

ক.) ১. শব্দের আদ্য ব-ফলা অনুচ্চারিত থাকে। যেমন: দ্বিতীয় > দিতিয়ো, ত্বক > তক্, জ্বালা > জালা ।

২. শব্দের মধ্যে কিংবা শেষে ব-ফলা থাকলে ব-ফলা উচ্চারিত না হয়ে ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়।

যেমন: বিশ্ব > বিশো, বিদ্বান > বিদ্‌দান্, পক্ক > পক্‌কো।

৩. যুক্তব্যঞ্জনের ব-ফলা অনুচ্চারিত থাকে। যেমন: উজ্জ্বল > উজ্জল, উচ্ছ্বাস > উচ্‌চ্ছাশ, তত্ত্ব > ততো ।

৪. সন্ধি ও সমাসবদ্ধ পদের ব-ফলা অবিকৃতভাবে উচ্চারিত হয়।

যেমন: উদ্বোধন > উদ্‌বোধোন, উদ্বেগ > উদ্‌বেগ, দিগ্বিজয় > দিগ্‌বিজয় ।

৫. ‘ব’ এবং ‘ম’-এর সাথে ব-ফলা যুক্ত হলে সে ‘ব’-এর উচ্চারণ অবিকৃত থাকে।

যেমন: বাব্বা > বাব্‌বা, সাব্বাশ > শাবাশ, লম্ব > লম্‌বো, নব্বই > নবোই ।

অথবা,

4. (ক) উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে। “আলোচনা কর।

অথবা,

(খ) ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখ (যে কোনো পাঁচটি): দম্পতি, আমরা, আয়কর, যুগান্তর, রাজপদ, সপ্তর্ষি, গৃহ।

0/5BB-23

(ক) 
বাংলা ভাষার যেসব সুনির্দিষ্ট অব্যয়জাত শব্দাংশ ধাতু বা শব্দের পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন করে, তারে উপসর্গ বলে। উপসর্গের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, ‘এর কোনো অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে। প্রত্যেকটি উপসর্গ মূলত এক ধরনের শব্দাংশ। এরা কোথাও পৃথকভাবে ব্যবহৃত হয় না, এদের নিজস্ব কোনো অর্থও নেই। ধাতু বা শব্দের পূর্বে যুক্ত হয়ে এরা মূল শব্দ বা ধাতুর অর্থের পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংকোচন বা তার পূর্ণতা সাধন করে। যেমন: ‘কার’ একটি শব্দ। এর সঙ্গে বিভিন্ন উপসর্গ যুক্ত হয়ে নানা নতুন শব্দ গঠিত হতে পারে—
উপরের সাধিত শব্দগুলো থেকে প্র, উপ, অধি, অপ উপসর্গগুলো পৃথক করলে তাদের আলাদা কোনো অর্থ পাওয়া যায় না। কিন্তু অন্য শব্দের পূর্বে যুক্ত হয়ে ওই শব্দগুলোকে নানা অর্থবৈচিত্র্য দান করেছে। এভাবেই নিজস্ব অর্থহীন উপসর্গ অন্য কোনো শব্দ বা ধাতুর পূর্বে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করতে পারে। এ জন্যই বলা। হয়- উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই; কিন্তু অর্থদ্যোতকতা আছে।

অথবা,

(খ) 

জায়া ও পতি (দ্বন্দ্ব);

সে, তুমি ও আমি (দ্বন্দ্ব);

আয়ের ওপর কর (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়);

অন্য যুগ (নিত্য সমাস):

পথের রাজা (ষষ্ঠী তৎপুরুষ);

সপ্ত ঋষির সমাহার (দ্বিগু);

গৃহের কর্মী (ষষ্ঠী তৎপুরুষ);

ইষ্টকে অতিক্রম না করে (অব্যয়ীভাব)

5. (ক) গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা কর।

অথবা,

(খ) বন্ধনীর নির্দেশ অনুসারে যে কোনো পাঁচটি বাক্যের বাক্যান্তর করা

(i) মানুষটা সমস্ত রাত খেতে পাবেনা। (প্রশ্নবাচক)

(ii) সদা সত্য কথা বলা উচিৎ। (অনুজ্ঞা)

(iii) যা বার্ধক্য, তাকে সব সময় বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। (সরল)

(iv) মাতৃভূমিকে সকলেই ভালোবাসে। (নেতিবাচক)

(v) আমার পথ দেখাবে আমার সত্য। (জটিল)

(vi) তাতে সমাজ জীবন চলে না। (অস্তিবাচক)

(vii) একেই কি বলে সভ্যতা? (নেতিবাচক)

(viii) অন্যায় করো না। (নির্দেশাত্মক)

0/5BB-23

ক.) গঠন অনুসারে বাক্যকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
সরল বাক্য।
জটিল বা মিশ্র বাক্য।
যৌগিক বাক্য।

সরল বাক্য- যে বাক্যে একটি কর্তা এবং একটি ক্রিয়া থাকে, তাকে তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন – রহিমা ফুল তুলছে। এখানে রহিমা কর্তা এবং তুলছে ক্রিয়া। এই বাক্যে একটি কর্তা এবং একটি ক্রিয়া।

যৌগিক বাক্য: পরস্পর নিরপেক্ষ একাধিক সরলবাক্য যখন অর্থ ও গঠন অপরিবর্তিত রেখে সংযোজক অব্যয়ের দ্বারা মিলিত হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্য গঠন করে। তাকে যৌগিক বাক্য বলে।

যেমন – রাহিমা অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী কিন্তু নিয়মিত ক্লাস করে না। লোকটি গরীব কিন্তু সৎ।

খ.) 

(i) মানুষটা সমস্ত রাত খেতে পাবেনা। (প্রশ্নবাচক) (মানুষটা সমস্ত রাত খেতে পাবে কি?)

(ii) সদা সত্য কথা বলা উচিৎ। (অনুজ্ঞা) (সদা সত্য কথা বলবে।)

(iii) যা বার্ধক্য, তাকে সব সময় বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। (সরল) (বার্ধক্যকে সবসময় বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। )

(iv) মাতৃভূমিকে সকলেই ভালোবাসে। (নেতিবাচক) (জন্মভূমিকে ভালোবাসেনা এমন কেউ নেই। )

(v) আমার পথ দেখাবে আমার সত্য। (জটিল) (যা আমার সত্য, তা আমার পথ দেখাবে।)

(vi) তাতে সমাজ জীবন চলে না। (অস্তিবাচক)  (তাতে সমাজ জীবন অচল।)

(vii) একেই কি বলে সভ্যতা? (নেতিবাচক) (একে সভ্যতা বলে না।)

(viii) অন্যায় করো না। (নির্দেশাত্মক) (অন্যায় করা অনুচিত।)

6. (ক) যে কোনো পাঁচটি বাক্য শুদ্ধ করে লেখ :

(i) অশ্রুজলে বুক ভেসে গেল।

(ii) আসছে আগামীকাল কলেজ খুলবে।

(iii) এক পৌষে শীত যায় না।

(iv) একের লাঠি, দশের বোঝা।

(v) অধ্যাপনাই ছাত্রদের তপস্যা।

(vi) অতি লোভে তাতী নষ্ট।

(vii) মাদকাশক্তি ভালো নয়।

(viii) এটি লজ্জাস্কর ব্যাপার। 

অথবা,

অনুচ্ছেদের অপপ্রয়োগগুলো শুদ্ধ কর : ভুলের মধ্য দিয়ে গিনোই তবে সভাকে পাওয়া যায়। কোনো ভুল করিয়াছি বুঝতে পারলেই আমি প্রাণ খুলে তা অস্বীকার করে নেব। কিন্তু না বুঝেও নয়, ভয়েও নয়। ভুল করছি বা না করেছি বুঝেও শুধু জেনের খাতিরে বা গো বজায় রাখার জন্য ভুলটাকে ধরে থাকব না। তাহলে আমার সেই নিই নিতে যাবে।

0/5BB-23

ক.) 

(i) অশ্রুজলে বুক ভেসে গেল। (চোখের জলে/অশ্রুতে বুক ভেসে গেল।)

(ii) আসছে আগামীকাল কলেজ খুলবে। (আগামীকাল কলেজ খুলবে।)

(HI) এক পৌষে শীত যায় না। (এক মাঘে শীত যায় না। )

(iv) একের লাঠি, দশের বোঝা।  ( দশের লাঠি একের বোঝা।)

(v) অধ্যাপনাই ছাত্রদের তপস্যা। (অধ্যয়নই ছাত্রদের তপস্যা।)

(vi) অতি লোডে ভার্তী নষ্ট। (অতি লোভে তাঁতি নষ্ট।)

(vii) মাদকাশক্তি ভালো নয়। (মাদকাসক্তি ভালো নয়।)

(viii) এটি লজ্জাস্কর ব্যাপার। (এটি লজ্জাকর ব্যাপার। )

অথবা

খ,) ভুলের মধ্য দিয়ে গিয়েই তবে সত্যকে পাওয়া যায়। কোনো ভুল করছি বুঝতে পারলেই আমি প্রাণ খুলে তা স্বীকার করে নেব। কিন্তু না বুঝেও নয়, ভয়েও নয়। ভুল করছি বা করেছি বুঝেও শুধু জেদের খাতিরে বা গোঁ বজায় রাখবার জন্য ভুলটাকে ধরে থাকব না। তাহলে আমার আগুন সেই দিনই নিভে যাবে।

7. (ক) তোমার কলেজে ‘বসন্তবরণ’ উৎসব-এর একটি দিনলিপি প্রস্তুত করো।

অথবা,

(খ) সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন রচনা করো।

0/10BB-23

(ক) উত্তরঃ

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বুধবার

রাত ১০টা

ঢাকা।

আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। শীতের পরে বসন্ত এসে প্রকৃতিকে নতুনভাবে সাজিয়ে দেয়, বসন্তের প্রকৃতি আমার খুব ভালো লাগে। আমাদের কলেজে প্রতিবছরই বসন্তবরণে একটি অনুষ্ঠান হয়। আজ সকালে আমি বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়েছিলাম। কলেজের মাঠে একটি মঞ্চ বানিয়ে সেখানে মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে গান, কবিতা, নাচ ইত্যাদি পরিবেশনার সঙ্গে চলছিল বসন্ত বন্দনা। একজন গেয়েছিল লগ্নজিতার ‘বসন্ত এসে গেছে’ গানটি। তবে সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আহা আজি-এ বসন্তে’ গানটির পরিবেশনা। আমার বন্ধু সাদিয়া ‘ফুলে ফুলে, ঢোলে ঢোলে…’ গানটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন – করেছিল। অনুষ্ঠান শেষে একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে সংগীত পরিবেশন করেছিল শিল্পী অর্ণব। কনসার্ট শেষে সমাপনী বক্তব্য – রাখেন আমাদের কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি তাঁর বক্তব্যে বসন্তবরণের সঙ্গে বাঙালি জাতির ঐতিহ্য ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বলেন। কিছুক্ষণ আগেই বাসায় এসেছি। আজ সারা দিন খুব আনন্দে কেটেছে, আবার কবে বসন্ত আসবে তার জন্য আমি অপেক্ষা করছি।

(খ) উত্তরঃ

১৭ এপ্রিল ২০২৪

নির্বাহী পরিচালক

সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর

ঢাকা- ১০০০।

বিষয়: সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার বিষয়ে প্রতিবেদন।

সূত্র: সওজ/২১(৩)/২৪, ১৩.০৪.২০২৪

মহোদয়,

আপনার আদেশপ্রাপ্ত হয়ে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ ও তার প্রতিকার বিষয়ে নিচে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করছি।

‘সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার’

সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানে একটি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রতিদিনই সংবাদ মাধ্যমে আমরা দুর্ঘটনার খবর পেয়ে থাকি। প্রতিটি দুর্ঘটনাই আমাদেরকে কষ্ট দেয়। মর্মান্তিক এসব দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের ও পেশার মানুষ। এ সকল দুর্ঘটনার ফলে আমরা হারাচ্ছি আমাদের প্রিয়জন, কাছের মানুষ, আপনজন, মেধাবী বন্ধু। বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, রাস্তায় বেরোলেই সকলের মনে একটা ভীতি কাজ করে। অনেকে এটাও ভেবে থাকেন, বাসা থেকে বের হয়েছেন, সুস্থভাবে ফিরতে পারবেন কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এতকিছুর পরও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই বললেই চলে। তাছাড়া দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থাও নেই বলেই মনে হয়।

সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ চালকদের, বেপোরোয়া গাড়ি চালানো, যানবাহনের যান্ত্রিক ত্রুটি, রাস্তাঘাটের দুরবস্থা ইত্যাদির প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সজাগ দৃষ্টি রাখলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানো সম্ভব। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামে একটি সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। নিরাপদ সড়কের দাবিসংশ্লিষ্ট আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে সচেতন মহলের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এসব দাবির প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। আমরা অকালে আমাদের প্রিয়জন ও কাছের মানুষদের হারাতে চাই না।

  • সড়ক দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এর পিছনে প্রধানত দায়ী-

১. চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো।

২. ত্রুটিযুক্ত যানবাহন রাস্তায় নামানো।

৩. যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়াই গাড়ি চালানো।

৪. ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা।

৫. গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা।

৬. জনপথে অতিরিক্ত বাঁক ও গতিরোধক।

৭. প্রশিক্ষণহীন অদক্ষ চালক।

  • দুর্ঘটনারোধে যেসকল প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে-

১. চালকদের যথাযথ কারিগরি প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়া।

২. উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যতীত অন্য কাউকে লাইসেন্স প্রদান না করা।

৩. রাস্তার প্রশস্ততা বৃদ্ধি এবং প্রতিনিয়ত সংস্কারের দিকে নজর রাখা।

৪. রাস্তা চলাচলের সময় পথচারীদের এবং গাড়ি চালনার সময় ড্রাইভারের অন্যমনস্ক না হওয়া।

৫. গণমাধ্যমে প্রচারের মাধ্যমে সকলকে প্রতিনিয়ত সচেতন করা।

৬. প্রতিটি দুর্ঘটনার যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তির দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করা।

নিবেদক

আসলামুল হক,

প্রশাসনিক কর্মকর্তা

সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর।

[এখানে প্রতিষ্ঠান ও প্রতিবেদকের ঠিকানাসহ খাম আঁকতে হবে।

8. (ক) বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের পাঁচটি নিয়ে লেখ ।

অথবা,

(খ) যে কোনো পাঁচটি শব্দের বানান শুদ্ধ করে লেখ : আবিস্কার, আকাংখা, মুহুর্ত, মনিষী, ঐকতান, শ্রদ্ধাঞ্জলী, প্রতিদন্দ্বি, অপোরাহ্ন।

0/5BB-23


ক.) 

১. সকল অতৎসম শব্দের বানানে ই-কার হবে। যেমন: কাহিনি, সরকারি।

২. সকল অতৎসম শব্দে উ-কার হবে। যেমন: কুলা, চুন, পুব, মুলা, পুজো। ৩. অতৎসম শব্দের বানানে ণ ব্যবহৃত হবে না। যেমন: ইরান, কোরান, গভর্নর, পরান।

৪. বিশেষণ পদ সাধারণত পরবর্তী পদের সঙ্গে যুক্ত হবে না। যেমন: লাল পদ্ম, নীল আকাশ।

৫. হস্ চিহ্ন যথাসম্ভব বর্জিত হবে। যেমন: টক, টাক, ডিশ, শখ, বক ।

অথবা,

খ.) শুদ্ধ বানান: আবিষ্কার; আকাঙ্ক্ষা; মুহূর্ত; মনীষী; ঐকতান; শ্রদ্ধাঞ্জলি; প্রতিদ্বন্দ্বী; অপরাহ্ন।

9. (ক) ক্রিয়াপদ কাকে বলে? উদাহরণসহ ক্রিয়াপদের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।

অথবা,

(খ) নিম্নরেখ যে কোনো পাঁচটি শব্দের ব্যাকরণিক শ্রেণি নির্দেশ কর :

(i) তুমি যে আমার কবিতা।

(ii) সাদা  কাপড় পরলেই মন সাদা হয় না।

(iii) বুঝিলাম মেয়েটির রূপ বড় আশ্চর্য।

(iv) যথা ধর্ম, তথা জয়।

(vi) পয়লা বৈশাখ বাঙালির উৎসবের দিন।

(vi) চাহিয়া দেখিলাম – হঠাৎ কিছু বুঝিতে পরিলাম না।

(vii) বাঃ! বড় চমৎকার ছবি এঁকেছ তো।

(vi) ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ো না।

0/5BB-23

ক.)

যে শব্দশ্রেণি দ্বারা কোনো কিছু করা, ঘটা, হওয়া ইত্যাদি বোঝায় তাকে ক্রিয়া বলে । যেমন: সে হাসছে । বাগানে ফুল ফুটেছে। এবার বৃষ্টি হবে। নানা মানদণ্ডে ক্রিয়াকে বিভক্ত করা যায়। যথা—

১. ভাব প্রকাশের সম্পূর্ণতা অনুসারে: ক. সমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্যের ভাবের পরিসমাপ্তি ঘটে, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন: ছেলেরা বল খেলছে। সুমন ভাত খাচ্ছে।

খ. অসমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া দ্বারা বাক্যের ভাবের পরিসমাপ্তি ঘটে না, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে । যেমন: আমি বাড়ি গিয়ে ভাত খাব। সে কাজটি করে বাসায় যাবে।

২. কর্মপদ সংক্রান্ত ভূমিকা অনুসারে:

ক. অকর্মক ক্রিয়া: বাক্যের অন্তর্গত যে ক্রিয়া কোনো কর্ম গ্রহণ করে না, তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে।

যেমন: শিশুটি খেলছে ।
খ. সকর্মক ক্রিয়া: বাক্যের অন্তর্গত যে ক্রিয়া মাত্র একটি কর্ম গ্রহণ করে, তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন: অনিন বাগান থেকে ফুল তুলছে।

গ. দ্বিকর্মক ক্রিয়া: বাক্যের অন্তর্গত যে ক্রিয়া দুটি কর্ম গ্রহণ করে, তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে । যেমন: মুন্নি

মাসুমকে একটি কলম দিয়েছে। ঘ. প্রযোজক ক্রিয়া: কর্তার যে ক্রিয়া অন্যকে দিয়ে করানো হয়, তাকে প্রযোজক বা ণিজন্ত ক্রিয়া বলে। যেমন: মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।

৩. গঠন বৈশিষ্ট্য অনুসারে:

ক. যৌগিক ক্রিয়া: একটি সমাপিকা ও একটি অসমাপিকা ক্রিয়া যদি একত্রে একটি বিশেষ বা সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশ করে, তবে তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন: ধরে ফেলছে। উঠে পড়ছে। নেমে পড়েছে। খেয়ে ফেলেছে ইত্যাদি ।

খ. সংযোগমূলক ক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধন্যাত্মক শব্দের সাথে সমাপিকা ক্রিয়া যোগ করে যে ক্রিয়া। গঠিত হয়, তাকে সংযোগমূলক ক্রিয়া বলে। যেমন: নাচ করা। গান গাওয়া। মশা মারা। ছেলে ধরা ইত্যাদি ।

৪. স্বীকৃতি অনুসারে:

ক. অস্তিবাচক ক্রিয়া: যে ক্রিয়া দ্বারা অস্তিবাচক বা হ্যাঁ-বোধক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে অস্তিবাচক ক্রিয়া বলে। যেমন: আমি কাল বাড়ি যাব।

খ. নেতিবাচক ক্রিয়া: যে ক্রিয়া দ্বারা নেতিবাচক বা না-বোধক অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে নেতিবাচক ক্রিয়া বলে । যেমন: সে আমার কথা বোঝেনি।

অথবা,

খ.) তুমি (ব্যক্তিবাচক সর্বনাম); সাদা (বর্ণবাচক বিশেষণ); বুঝিলাম (ক্রিয়া); যথা…তথা (যোজক); পয়লা বৈশাখ (বিশেষ্য); চাহিয়া দেখিলাম (যৌগিক ক্রিয়া); বাঃ! (আবেগ); ধান (বিশেষ্য)

10. ( ক) ভাবসম্প্রসারণ করো: কালো আর ধলো বাহিরে কেবল, ভিতরে সবারই সমান রাঙা।

অথবা,

(খ) সারাংশ লেখো:

মানুষের মনেও যখন রসের আবির্ভাব না থাকে, তখনই সে জড়পিণ্ড। তখন ক্ষুধা-তৃষ্ণা-ভয়-ভাবনাই তাকে ঠেলে কাজ করায় তখন প্রতি কাজে পদে পদেই তার ক্লান্তি। সেই নিরস অবস্থাতেই মানুষ অন্তরের নিশ্চলতা থেকে বাইরেও কেবলি নিশ্চলতা বিস্তার করতে থাকে। তখনই তার যত খুঁটি-নাটি, যত আচার-বিচার, যত শাস্ত্র-শাসন। তখন মানুষের মন গতিহীন বলেই বাইরেও আষ্টেপৃষ্ঠে সে আবদ্ধ।

0/10BB-23

(ক) উত্তরঃ

মূলভাব: সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। তাঁর সৃষ্টিতে কোনো ভেদাভেদ নেই। কিন্তু মানুষ নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে তৈরি করেছে কৃত্রিম জাতি ও বর্ণপ্রথা। মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করেছে দুর্ভেদ্য প্রাচীর। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। বাহ্যিক পার্থক্য থাকলেও সব মানুষ এক, সব মানুষের ভেতরেই প্রবাহিত হয় লাল রক্ত। মানুষের কোনো জাতভেদ নেই। যে ধর্মের হোক না কেন তার সত্য পরিচয় সে মানুষ।

সম্প্রসারিত ভাব: মানুষের মর্যাদা সবকিছুর ওপরে বলে বিবেচনা করা দরকার। কোনো ধর্ম, বর্ণ, সংস্কার মানুষের চেয়ে বড়ো হতে পারে না। এ জগতে যা কিছু রয়েছে, সবই মানুষের কল্যাণের জন্য নিয়োজিত। সবকিছুর আয়োজন মানুষের উপকারের লক্ষ্যে। তাই বাইরের রং যেমনই হোক মানুষকে সবার ওপরে স্থান দিয়ে তার মর্যাদা স্বীকার করতে হয়। কিন্তু এ সত্য উপেক্ষা করে কেউ কেউ নিজেদের অভিজাত ভাবে। ফলে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি হয়, জাতিতে জাতিতে সংঘর্ষ ঘটে। সাদা, কালো, ধনী, গরিব, উচ্চবর্ণ, নিম্নবর্ণ এসব পার্থক্য মানুষের ভেতরে ঘৃণার সঞ্চার ঘটায়। এগুলো মানুষের মানবিক বিকাশের অন্তরায় তাই মানুষের জীবনের বিকাশ ঘটাতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো বিধি-নিষেধ দিয়ে জীবনকে আবদ্ধ রাখা অনুচিত। মানুষকে যদি মর্যাদা দেওয়া হয় তবে জীবন সুখকর হয়ে ওঠে। কীভাবে মানুষের কল্যাণ হবে তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। মানবজীবনের মর্যাদা স্বীকার করে নিয়ে মানুষের উপকার করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। মানুষ নিজের তাগিদে সভ্যতার উদ্ভব ঘটিয়েছে। সেই সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সৃষ্টি করেছে শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন। এভাবে আদি থেকে বর্তমান পর্যন্ত মানুষ তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় বহন করে চলেছে। তাই সব বাধা দূর করে, সব আদর্শের প্রভাব বাদ দিয়ে মানুষের জীবন মর্যাদার আসনে বসাতে হবে।

মন্তব্য: মানুষ সৃষ্টির সেরা, আশরাফুল মাখলুকাত। তাই সৃষ্টির যেদিকে তাকাই না কেন, মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিছু চোখে পড়ে না। গায়ের রং, বংশ মর্যাদা, জাতভেদ নিয়ে মানুষে মানুষে বৈষম্য সৃষ্টি করা একেবারেই অনুচিত।

(খ) উত্তরঃ

সারাংশ: জীবনে চলার পথে মানুষকে নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়। পথ চলার বৈচিত্র্যময় আনন্দ সে যদি উপভোগ করতে না পারে তাহলে শাস্ত্রীয় বিধানে কুসংস্কার তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। সে তখন জড় বস্তুতে পরিণত হয়ে যায়।

11. (ক) যে কোনো দশটি শব্দের বাংলা পারিভাষিক রূপ লেখ :

By-law, Forecast, Postpaid Surplus, Bookpost, Stamp, Deed of gift, Embargo, Terminology. Up-to-date, Impeachment, Lien, Gratuity, Public works, Ethics.

অথবা,

(খ) নিচের অনুচ্ছেদটি বাংলায় অনুবাদ কর। Man is the architect of his own life. If he makes a proper division of his time and does his duties accordingly, he is sure to prosper in life. Youth is the golden season of life. In youth the mind can be moulded in any form. It is called seed time of life.

0/10BB-23

(ক) উপ-আইন, পূর্বাভাস, পরে প্রদত্ত, উদ্বৃত্ত, খোলাডাক, ডাকটিকিট / সিলমোহর, দানপত্র,নিষেধাজ্ঞা, পরিভাষা, হালনাগাদ, অভিসংশন, পূর্বস্বত্ব, আনুতোষিক, গণপূর্ত, নীতিবিদ্যা।

অথবা,

(খ) মানুষ তার নিজের জীবনের স্থপতি। যদি সে তার সময়ের সঠিক বিভাজন করে এবং সেই অনুযায়ী তার দায়িত্ব পালন করে, তবে সে নিশ্চিতভাবে জীবনে উন্নতি করবে। তারূণ্য জীবনের সোনালী ঋতু। তারূণ্যে মনকে যে কোনো রূপে ঢালাই করা যায়। একে জীবনের বীজ সময় বলা হয়।

প্রবন্ধ রচনা (5)

1. বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প।

0/20BB-23

ভূমিকা: পৃথিবীব্যাপী জ্ঞানী ও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ ছোটে লোক থেকে লোকান্তরে, দেশ থেকে দেশান্তরে। প্রতিনিয়ত মানুষ জানতে চায়, বুঝাতে চায়, জয় করতে চায় অজানাকে। তাই তো দেখি হিমালয়, চাঁদের মতো দুর্গম স্থানকে মানুষ জয় করেছে। পুরাতাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করে উপহার দিয়েছে নতুন পৃথিবী। এ প্রসঙ্গে মহানবির একটি বাণী উল্লেখযোগ্য ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন পর্যন্ত যাও’। অর্থাৎ জ্ঞানের জন্য, জানার জন্য সমস্ত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করতে হয়। পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মতো বাংলাদেশেরও আনাচকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য স্থান, অসংখ্য স্থাপত্য। পরিবর্তনশীল যড়বাতুর এ দেশ পৃথিবীর বুকে অন্যতম বৈচিত্র্যময় একটি দেশ। তাই দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বলেছেন, ‘সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি’। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় রয়েছে ঐতিহ্যময় পর্যটন স্থান। বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার সঙ্গে গলা মিলিয়ে আমরাও বলতে পারি যে, পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ রূপময়ী ও সমৃদ্ধিশালী জাতি ও দেশ হচ্ছে বাঙালি ও বাঙালির দেশ। বাংলাদেশের প্রকৃতি এবং বাঙালি জাতির – ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার উপায় হচ্ছে পর্যটন।

পর্যটনশিল্পের গুরুত্ব: অন্যান্য শিল্পের মতো পর্যটনও একটি শিল্প। কথায় আছে, ‘গ্রন্থগত বিদ্যা আর পর হস্তে ধন, নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়োজন।’ আসলে জীবনভর ভারী ভারী বইপুস্তক পড়ে যতটুকু শেখা সম্ভব তার চেয়ে বেশি সম্ভব যদি চোখে দেখা যায়। কারণ মানুষ তার জ্ঞানের শতকরা ৭০ ভাগ চোখ নামক ইন্দ্রিয় দিয়ে অর্জন করে। যে আগ্রার তাজমহল কিংবা মিশরের পিরামিড বা নায়াগ্রার জলপ্রপাত চোখে দেখেনি, সে শুধু বই পড়ে তার মর্মার্থ বুঝাতে অপারগ। সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ জ্ঞানপিপাসু। মানুষ ও তার কীর্তি সম্পর্কে এবং প্রকৃতি ও তার মহিমার অজানা রহস্য পর্যটনের মাধ্যমেই জানা যায়। আদিবাসীদের জীবনযাপনের বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে মানুষ পর্যটনশিল্পের মাধ্যমে জানতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের আচার-আচরণ, স্থান, সৌন্দর্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতিনীতি, আকৃতি-প্রকৃতি, প্রাচীনত্বের নিদর্শন, পশুপাখি প্রভৃতি সম্পর্কে পর্যটনশিল্পের মাধ্যমেই জানা যায়। অতএব দেখা যায়, পর্যটনশিল্পের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

বাংলাদেশের পর্যটন স্থান: বাংলাদেশকে কেউ কেউ বলেছেন চির সুন্দরী, কেউ বলেছেন চিরসবুজ, কেউ বলেছেন সকল দেশের রানি, কেউবা আবার তুলনা করেছেন সোনার কাঠি, রূপার কাঠির সঙ্গে। অর্থাৎ আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে পৃথিবীর বড়ো বড়ো পণ্ডিত বিভিন্নভাবে সুন্দরের ব্যাখ্যা করেছেন। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের মতো বাংলাদেশকে নিয়েও ‘মায়াপুরী’র স্বপ্ন দেখে মানুষ। ষড়ঋতুর বৈচিত্র্য ছাড়াও সবুজ-শ্যামল দিখ প্রকৃতি মানুষকে সহজেই আকর্ষণ করে। বাংলাদেশের প্রকৃতি হচ্ছে মাতৃত্বের মতো শান্ত স্নেহদায়ী। উগ্র, নম্র সকলকেই তা ঘুম পাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্থান। পাহাড়পুর, রাঙামাটি, সাগরদিঘি, ময়নামতি, কুয়াকাটা, পাথরঘাটা, সোনারগাঁ, বান্দরবান, সুন্দরবনসহ আরও অসংখ্য পর্যটনের স্থান ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত রয়েছে বাংলাদেশের কক্সবাজারে। বাংলাদেশের একদিকে সুউচ্চ পাহাড় অন্যদিকে বিশাল জলরাশি। যা সহজেই পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বাংলাদেশে খোদ রাজধানীতে রয়েছে অসংখ্য ইতিহাস-আশ্রিত ঐতিহ্যময় স্থান এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ স্থান। তাই সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন-

‘নাগের বাঘের পাহারাতে

হচ্ছে বদল দিনে রাতে

পাহাড় তারে আড়াল করে

সাগর যে তার ধোয়ায় পাটি।’

পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা: বাংলাদেশে ইতঃপূর্বে পর্যটকদের জন্য কোনো নির্দিষ্টি সুযোগ-সুবিধা ছিল না। তারপরও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক মুগ্ধ হয়ে আসত শুধু প্রকৃতি অবলোকনের জন্য। সম্প্রতি সরকার পর্যটকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন স্থানে হোটেল ও মোটেল করেছে। বিভিন্ন বেসরকারি হোটেলের চেয়ে এসব সরকারি হোটেলে অত্যন্ত কমমূল্যে সিট রিজার্ভেশন সুবিধা দিয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন রকমের যানবাহনের ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। পর্যটকদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান ও সামগ্রিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করাই এর প্রাথমিক কাজ।

পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে পর্যটন কর্পোরেশনের দায়িত্ব: বাংলাদেশ পর্যটনশিল্পে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য দুর্লভ এবং সুন্দর স্থান। এ স্থানগুলোকে সংরক্ষণের জন্য পর্যটন কর্পোরেশনের বিশেষ দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের পর্যটন স্থানগুলোকে বিশ্বের মানুষের চোখের সামনে তুলে ধরতে হবে। থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ ও স্বল্পব্যয়ের আওতায় আনতে হবে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত’ করতে হবে। তাহলেই পর্যটনশিল্পে বাংলাদেশের স্থান বিশ্বের সুউচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে পর্যটন কর্পোরেশনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অপরিসীম।

উপসংহার: প্রখ্যাত শিল্পী, সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায় আধুনিক পর্যটন শিল্পনগরী ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন- ‘অর্ধেক সুন্দরী তুমি, অর্ধেক কল্পনা।’ তাঁর এ মন্তব্য সম্পর্কে আমরাও বলতে পারি, প্যারিসের অর্ধেক সৌন্দর্যকে কল্পনা করে নিতে হয় অথচ আমাদের বাংলাদেশের সবুজ-শ্যামল সৌন্দর্যকে কল্পনা করে নিতে হয় না। তা একই সঙ্গে দৃশ্যমান ও অনুভব্য। বাংলাদেশের পর্যটন স্থানের সৌন্দর্যের তুলনা হয় না। বাংলাদেশে পর্যটন করপোরেশন, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সর্বোপরি সকলেই একটু সচেতন হলে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আসনে আসীন হবে।

2. বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

0/20BB-23

ভূমিকা: একটি দেশের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও রূপ ফুটে ওঠে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্য দিয়ে। বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি দেশে দেশে বিভিন্ন রূপে প্রতীয়মান হয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করে। আমাদের বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক অপূর্ব লীলানিকেতন, সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা, আমাদের এ দেশ। লীলাময়ী প্রকৃতি এ দেশে যেন মুক্তহস্তে তার সমস্ত সৌন্দর্য বিতরণ করেছে। শাশ্বতকাল ধরে এ অনুপম সৌন্দর্য মানবহৃদয়ে দোলা দেয়। মুগ্ধ কবিচিত্তে জন্ম দেয় সংগীতের উৎসধারা, ভাবুকের হৃদয়ে তোলে ভাবের হিল্লোল। বাংলাদেশের অসাধারণ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে এ দেশে ছুটে আসে সৌন্দর্যপ্রেমী মানুষ। বার্নিয়ের, ইবনে বতুতা, ফ্রেডারিক, আলেকজান্ডার প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ এ দেশের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন।

বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি: টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট এ দেশটি বিশ্বের দরবারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত। এ সৌন্দর্য যেমন দেশের ভূ- প্রাকৃতিক গঠনের দিক থেকে, তেমনি ঋতুবৈচিত্র্যের দিক থেকেও। দেশের দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগরের উত্তাল প্রতিধ্বনি নিয়তই এক অলৌকিক সুরের মায়াজাল সৃষ্টি করে চলেছে। হাজার হাজার মানুষ সেই সুরের মোহে ছুটে যায় সমুদ্রসৈকতে। উত্তরের ধূসর প্রকৃতির উদাসীনতার বাণী পাগলা বাউলের মতো মানুষকে ঘরছাড়া করে। অসংখ্য নদনদী জালের মতো সারা দেশে ছেয়ে রয়েছে। কলকল রবে এসব নদনদী সাগরের পানে ছুটে চলেছে প্রতিনিয়ত। এ দেশের অনুচ্চ পাহাড়, বন-বনানী যেন ঘোমটা মাথায় দিয়ে ধ্যানে বসেছে। আর এটাই আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এ নিয়েই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গঠন। এভাবে আমাদের দেশের ছোটো পরিধিতে প্রকাশ পেয়েছে প্রাকৃতিক রূপের লীলাখেলা।


প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বনাঞ্চল ও পাহাড়: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ বাংলাদেশ। অপূর্ব সৌন্দর্যে বিভূষিত এ দেশের প্রকৃতি। বৈচিত্র্যময় গাঙ্গেয় অববাহিকার সাগরতীরে জেগে ওঠা উর্বর পলিমাটিসমৃদ্ধ এ দেশের মাটিতে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য বনাঞ্চল। বিশ্বজুড়ে পরিচিত এ দেশের সুন্দরবনের নাম, সেখানকার বিশাল বনানীতে সৃষ্টি হয়েছে এক স্বতন্ত্র জীবনধারা। এ বনের বিচিত্র জীবজন্তু মানুষকে যেমন আকৃষ্ট করে, তেমনি মনে ভীতিরও সঞ্চার করে। বিশ্ববিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও চিত্রল হরিণ ছাড়াও সুন্দরবনে রয়েছে অসংখ্য জীবজন্তু। নদনদীতে যেমন রয়েছে নানা প্রজাতির মাছ, তেমনি রয়েছে রাক্ষুসে কুমির। সুন্দরবন ছাড়াও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে আকর্ষণীয় হয়ে রয়েছে ভাওয়াল ও মধুপুরের গড় বনাঞ্চল। পার্বত্য চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, সিলেট, বান্দরবানের বনাঞ্চলের সাথে পাহাড় এবং পাহাড় ঘেঁষে বয়ে যাওয়া নদীগুলো এক অপূর্ব সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। বনাঞ্চল ও পাহাড়ের আঁকাবাঁকা, উঁচু নিচু পথে চলার সময় যে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য চোখে পড়ে তা বিস্মৃত হওয়ার নয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাক্ষেত্র হিসেবে তা সহজেই মানুষের মনকে আকৃষ্ট করতে পারে। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের পাহাড়গুলো এক অফুরন্ত সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। এখনো দুর্গম চিম্বুক আর সাজেক উপত্যকার অপূর্ব সৌন্দর্য দেশবাসীর অজানা। ফয়’স লেক ও রাঙামাটির কাপ্তাই লেক পাহাড়ের বুকে সৃষ্টি করেছে এক অনাবিল সৌন্দর্যের মায়াজাল।

নদনদীর সৌন্দর্য: বাংলাদেশে নদনদীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এ দেশের নাম হয়েছে নদীমাতৃক দেশ। অসংখ্য নদীর জন্য বাংলাদেশের প্রকৃতি সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়ে উঠেছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলী, সুরমা প্রভৃতি নদী জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে। এ দেশের বুকের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এসব নদী মাটিকে উর্বর করে শস্য-শ্যামলা করে তুলেছে, প্রকৃতিকে করেছে বৈচিত্র্যময়। নদীর জলধারার প্রভাবে প্রকৃতিতে সবুজের সমারোহ এসেছে। নদীর বুকে বয়ে চলা নৌকা, লঞ্চ, স্টিমারগুলো এক অপূর্ব সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। বর্ষার সময় এসব নদী দুকূল প্লাবিত করে বয়ে চলে। এসব নদনদী ছাড়াও অসংখ্য খালবিল, হাওড়, দ্বীপ এ দেশের প্রকৃতিকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। হাতিয়া, সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপ ইত্যাদি দ্বীপ এ দেশের প্রকৃতিকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলেছে।

ঋতুবৈচিত্র্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য এক অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য যেন নিহিত রয়েছে এ দেশের ঋতুবৈচিত্র্যের মধ্যে। ছয়টি ঋতু নানা বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে পরিবর্তন ঘটায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রূপের। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে প্রকৃতি অতিষ্ঠ হয়ে এক রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। এ সময়ের কালবৈশাখী ঝড় গাছপালা ভেঙেচুরে প্রকৃতিকে যেন দুমড়েমুচড়ে দিয়ে যায়। এ সময় আম, কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন ফল পাকতে শুরু করে। বর্ষা আসে পরিপূর্ণ রূপ নিয়ে। চারদিকে পানি থইথই করে। সারাদিন ঝর ঝর বৃষ্টি পড়তে থাকে। সূর্যের মুখ দেখা যায় না বললেই চলে। নদীনালার পানি দুকূল ছাপিয়ে যেন পূর্ণ যৌবনার রূপধারণ করে। প্রচুর বৃষ্টিপাতে প্রকৃতি নতুনরূপ ধরে আবির্ভূত হয়। প্রকৃতির বুকে তখন সবুজের সমারোহ ও অপূর্ব শোভার সৃষ্টি হয়। চারদিকে কুহু-কেকার আনন্দধ্বনি জাগে। ফুলে ফুলে সুশোভিত হয়ে ওঠে বর্ষার প্রকৃতি। কেয়া, কদম, জুঁই ইত্যাদি ফুলের সৌরভে চারদিক ম-ম করে। হেমন্তের রূপ ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে দেখা দেয়। শস্যখেতের পাকা ফসলে প্রকৃতি এক অপরূপ সৌন্দর্য লাভ করে। চাষি মাথায় করে পাকা ধান ঘরে আনে। নতুন ধানের চালে উদ্যাপিত হয় নবান্ন উৎসব।

শীত ঋতু আসে তার গৈরিক উত্তরীয় নিয়ে। গাছপালা পাতা ঝরে শুষ্ক, বিবর্ণ ও শ্রীহীন হয়। তখন প্রকৃতি নিরাভরণ রূপ ধারণ করে। শীতের সকালে শিশির বিন্দুর ওপর সূর্যের রশ্মি পড়ে এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। শীতের শূন্যতা কাটিয়ে বিপুল সৌন্দর্য নিয়ে প্রকৃতিতে উপস্থিত হয় ঋতুরাজ বসন্ত। এ সময় গাছে গাছে নতুন পাতা দেখা দেয়। ফুলের সমারোহে কোকিলের গানে প্রকৃতি নতুন রূপে সজ্জিত হয়। এভাবে ছয়টি ঋতু বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তোলে।

উপসংহার: প্রকৃতি ও মানুষের জীবনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মধ্যেই দেশের প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সৌন্দর্যপ্রেমী মানুষকে করেছে ঘরছাড়া। প্রকৃতির বিচিত্র সৌন্দর্য এ দেশের মানুষের মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। এ দেশের যেদিকে দৃষ্টিপাত করা যায়, সেদিকেই দেখা যায় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। তাই কবি মুগ্ধচিত্তে বলেন-

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো, তুমি সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি।

3. শুদ্ধাচার।

0/20BB-23

ভূমিকা: মানুষ দৈন্দিন জীবনে তার আচার-আচরণ ও সার্বিক জীবাচরণে যে শুদ্ধতার চর্চা করে, তা-ই শুদ্ধাচার। শুদ্ধাচার মানুষের জীবনকে সুনিয়ন্ত্রিত করে। ব্যক্তিগতভাবে সবাই যখন শুদ্ধাচারী হয়ে উঠতে শুরু করে, তখন সমাজও ধীরে ধীরে শুদ্ধাচারী হয়ে ওঠে। সমাজ থেকে অন্যায়-অত্যাচার দূর করে শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে শুদ্ধাচার ভূমিকা রাখে।

শুদ্ধাচার কী: সামাজিক মূল্যবোধ নীতি-নৈতিকতার ভিত্তিতে মানুষের আচরণের শুদ্ধতম রূপই হলো শুদ্ধাচার। শুদ্ধাচার ও শিষ্টাচারে সম্পর্ক অনেক ঘনিষ্ঠ। ব্যক্তি ও সমাজজীবনের শিষ্টাচার পালনের মধ্য দিয়েই মানুষ শুদ্ধাচারী হয়ে ওঠে। মানুষের জীবনে শুদ্ধাচার কোনো একক গুণ নয়; বরং নানাবিধ গুণ ও সু-আচারের সমষ্টি হলো শুদ্ধাচার। মূলত পরিস্থিতি অনুমানে গ্রহণযোগ্য ও বর্জনীয় আচরণ এর পার্থক্য বুঝতে পারা থেকেই শুদ্ধাচারের সূচনা হয়।

শুদ্ধাচারের শিক্ষা: শুদ্ধাচারের শিক্ষা মানুষের সামাজিকীকরণের অংশ। সামাজিকীকরণের প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করে পরিবার, এ প্রক্রিয়ায় মানুষ সমাজের নিয়মকানুন সম্পর্কে জানে ও নৈতিকতা এবং মানবিকতা থেকে উৎসারিত আচরণ আত্মস্থ করে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও মানুষ শুদ্ধাচার শিখে থাকে। গুরুজনের সঙ্গে আলাপচারিতায় খাওয়ার সময়, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময়, ধর্মীয় কাজে ও জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই শুদ্ধাচার চর্চা করা যায়। শুদ্ধাচারের শিক্ষা শৈশবে শুরু হয়ে আজীবন চলতে থাকে।

শুদ্ধাচারের ক্ষেত্র: মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই শুদ্ধাচারের গুরুত্ব ও উপস্থিতি রয়েছে। পরিবার, ঘরোয়া পরিবেশ, দৈনন্দিন জীবন, সামাজিক পরিমণ্ডল, শিক্ষা গ্রহণ ও কর্মক্ষেত্র সব জায়গাতেই শুদ্ধাচারের চর্চা করা যায়।

শুদ্ধাচারের উদাহরণ: পারিবারিক জীবনে শুদ্ধাচারের উদাহরণ হলো- বাইরে থেকে বাসায় ফিরে সবার খোঁজ নেওয়া, পরিবারের অন্যদের সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনা করা, নিজের কাজ নিজে করার চেষ্টা করা ইত্যাদি। দৈনন্দিন জীবনে কারো সঙ্গে দেখা হলে তাকে আগে সালাম দেওয়া, স্মিত হেসে কথা বলা, অনুমতি ছাড়া কারো জিনিস না নেওয়া, জীবনে সময়ানুবর্তী হওয়া, যে স্থানের যে নিয়ম তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা, নিজেকে নিয়মের ব্যতিক্রম না ভাবা শুদ্ধাচারের উদাহরণ। শিক্ষাক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঝগড়া না করা, শিক্ষক-শিক্ষিকাকে সম্মান করা, নিয়মিত ক্লাসে যাওয়া, সময়মতো পড়া শেষ করা ইত্যাদি শুদ্ধাচারের অংশ। কর্মজীবনে মানুষকে প্রতিদিন অনেক ধরনের কাজ ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হয়। করণীয় ও বর্জনীয় আচরণ হলো কর্মক্ষেত্রের শুদ্ধাচার। কর্মক্ষেত্রে শুদ্ধাচারের মধ্যে নিজের কাজকে ভালোবাসা, কোনো কাজকে ছোটো মনে না করা, নিজের ভুল শিকার করা, নির্ধারিত সময়ে কর্মক্ষেত্রে আসা ইত্যাদি কর্মক্ষেত্রের শুদ্ধাচার।

শুদ্ধাচার ও সৌন্দর্যের সঙ্গে মানবাত্মার সম্পর্ক: মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা অর্থাৎ সভ্য। কারণ, মানুষই কেবল শুদ্ধাচারের চর্চা করে থাকে। মানুষের বিবেক ও বুদ্ধির কারণে সে সৃষ্টির সেরা জীব। বিবেক মানুষকে উদ্ভাসিত করে তোলে। মানুষ যা দেখে সৌন্দর্য তার চেয়ে বেশি, মানুষ কেবল বাইরের দিকে কেমন তা নয়, তবে ভেতরে যা আছে তার প্রকৃত সৌন্দর্য নির্ধারণ করে। আর এই প্রবৃত্তিই হচ্ছে মানুষের অন্তর্নিহিত প্রবণতা। মানুষের যা কিছু ভালো গুণ আছে তার চর্চাই হলো শুদ্ধাচার; যা প্রকাশ করে সৌন্দর্য।

শুদ্ধাচার চর্চা: শুদ্ধাচারের চর্চার মধ্য দিয়ে মানবমন পরিপূর্ণতা ও প্রীতি লাভ করে। পৃথিবীর সকল পাপ-পুণ্য, ভালো-মন্দ, ধর্ম-অধর্মের পার্থক্য নির্ধারণে মানুষকে পরিচালিত করে তার মন। আর মনকে বিকশিত; উদ্ভাসিত ও প্রীতিময় করে তোলে শুদ্ধাচার ও সৌন্দর্যচর্চা। মন বা হৃদয় দ্বারা পরিচালিত হয়ে মানুষ সদ্‌ব্যবহার ও কাজ করে এবং শিক্ষা, সাধনা ও অনুশীলন তখনই সার্থক হয়, যখন মানুষ শুদ্ধাচারের অনুশীলন করে। মানবসত্তা শুদ্ধাচারের চর্চার মাধ্যমে বিকশিত হয়।

শুদ্ধাচার ও নৈতিক শিক্ষা: সকল প্রকার অমঙ্গলকর, অনৈতিকতা, অশ্লীলতাকে পরিহার করে বিশুদ্ধ জীবনাচারের শিক্ষা গ্রহণ করাই হচ্ছে নৈতিক শিক্ষা। পারিবারিক আবহে, বসবাসের পরিমন্ডলে আত্মীয়- স্বজনদের প্রভাবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, গুরুজন, খেলার সঙ্গী, সহপাঠী, বন্ধুবান্ধব সকলের সাহচর্যে ধীরে ধীরে শৈশব-কৈশোর জুড়েই মানুষ নৈতিকতা ও শুদ্ধাচার শিখে থাকে। মাতা-পিতার সেবা করা, বড়োদের সম্মান করা, সত্য কথা বলা, ছোটোদের স্নেহ করা, মানুষ ও অন্য কোনো প্রাণীকে কষ্ট না দেওয়া, অন্যায় না করা, অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেওয়া এসবই নৈতিক শিক্ষার অংশ। তাই নৈতিক শিক্ষা অর্জনের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় শুদ্ধাচার।

শুদ্ধাচার ও আধুনিক রাষ্ট্র: রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে নিম্ন পর্যায় থেকে উচ্চপর্যায় সর্বক্ষেত্রে শুদ্ধাচারের চর্চা প্রয়োজন। একজন যোগ্য শাসকের গুণাবলি প্রকাশিত হয় তার শুদ্ধাচারের মধ্য দিয়ে। আধুনিক রাষ্ট্রকে কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করা হয়। কল্যাণ রাষ্ট্র তখনই সার্থকতা অর্জন করবে, যখন রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বস্তরে শুদ্ধাচার ও সৌন্দর্যের অনুশীলন থাকে। জাতীয় জীবনে সর্বোচ্চ পর্যায়ে শুদ্ধাচার প্রকাশ পায় রাষ্ট্র পরিচালনা ও নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে। শুদ্ধাচার চর্চার মধ্য দিয়ে অনেক রাষ্ট্র ও জাতি পেয়েছে বিনম্র, শান্ত, নিরপেক্ষ জাতির গৌরব। তাই ব্যক্তিজীবনে যেমন শুদ্ধাচার শ্রেষ্ঠ গুণ, তেমনি আধুনিক, কল্যাণ রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও তাই। শুদ্ধাচার চর্চা রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি হ্রাস করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।

শুদ্ধাচারের সার্বিক গুরুত্ব: মানবজীবনে শুদ্ধাচারের গুরুত্ব অপরিসীম। শুদ্ধাচারী মানুষ সহজেই অন্যের মন জয় করতে পারেন। ফলে সমাজে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। শুদ্ধাচারী মানুষ বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন সবার কাছে, সবাই তাঁকে সমাজের নেতৃত্বে দেখতে চায়। ‘ফলে ব্যক্তির পক্ষে মহৎ কাজ করাও সম্ভবপর হয়ে ওঠে। শুদ্ধাচারী ব্যক্তি সাধারণ মানুষের জন্য মডেল বা অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। সমাজের মানুষ তাঁকে উঁচু অবস্থানে স্থান দেয়। মানুষ প্রকৃতিগতভাবে অন্যের কাছ থেকে সদাচরণ আশা করে, প্রকাশ না করলেও মনে মনে স্নিগ্ধ ব্যবহার ও সামান্য প্রশংসা প্রত্যাশা করে। তাই ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির শুদ্ধাচার সমাজে বয়ে আনে সাম্য ও শান্তি। তাই সার্বিকভাবে শুদ্ধাচারের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অত্যধিক।

উপসংহার: শুদ্ধাচারকে একক একটি গুণ না বলে একগুচ্ছ ভালো আচরণের সম্মিলন বলা যায়। একজন ব্যক্তি ভদ্র নাকি অভদ্র, উদ্ধত নাকি শান্ত- সবকিছুরই প্রকাশ ঘটে ব্যক্তির আচরণে। আচরণের মধ্য দিয়ে মানুষের যথার্থ ব্যক্তিত্বকে নিরূপণ করা যায়। তাই ব্যক্তির, আচরণের মধ্যেই শুদ্ধাচারের স্বরূপ বিদ্যমান। মোটকথা, ব্যক্তির সর্বোত্তম আচরণই শুদ্ধাচার। শুদ্ধাচার সকলের মধ্যে বর্তমান থাকা বাঞ্ছনীয়।

4. চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান।

0/20BB-23

ভূমিকা : বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ । বিজ্ঞানই বিশ্ব সভ্যতাকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে। বিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে আধুনিক সভ্যতা। সেই আদিম যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য বিজ্ঞান অমূল্য অবদান রেখেছে। বর্তমান সভ্যতার অগ্রগতির মূলে বিজ্ঞানের দুটি আবিষ্কার সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলাে হলাে : মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার ও বিদ্যুতের আবিষ্কার। বিজ্ঞানের এ সকল বিস্ময়কর অগ্রগতির পথ ধরেই চিকিৎসাক্ষেত্রে এসেছে এক অভাবনীয় পরিবর্তন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান নতুন আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ‘Health is wealth’- স্বাস্থ্যই সম্পদ’-কথাটির সাথে সারা বিশ্বের সকলেই পরিচিত । অঢেল ধন-সম্পদ আর প্রতিপত্তির অধিকারী হলেও যদি স্বাস্থ্য ভালাে না থাকে তাহলে জীবনে সুখী। হওয়া যায় না। আর মানুষের মূল্যবান সম্পদ স্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য প্রয়ােজন উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা । যত দিন যাচ্ছে আবিকৃত হচ্ছে নব নব চিকিৎসা পদ্ধতি। আর এসব চিকিৎসা পদ্ধতির আবির্ভাবে মানুষ জটিল ও দুরারােগ্য ব্যাধি থেকে আরােগ্য লাভ করছে।
বিজ্ঞান শব্দের অর্থ : বিজ্ঞান শব্দের অর্থ হলাে বিশেষ জ্ঞান। অনুসন্ধান প্রিয় মানুষের বস্তুগত বিষয় সম্পর্কে ধারণা এবং বিভিন্ন কৌশলে তার ওপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা থেকেই নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কৃত হয়েছে। এরূপ প্রতিটি আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে কার্যকারণ সম্পর্ক। আর এ ধরনের যুক্তিযুক্ত আবিষ্কারকেই বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার বলা হয়। বিজ্ঞানের নানাবিধ আবিষ্কারের পেছনে কাজ করছে মানুষের প্রয়ােজন, মানুষের কল্যাণ ও মানুষের বিকশিত হবার দুর্নিবার ইচ্ছা। বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনে সাথে বিজ্ঞান এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে, বিজ্ঞানই যেন মানবজীবনের গতি নিয়ন্ত্রণ করছে। মানুষের দৈনন্দিন প্রয়ােজন মেটানাের জন্য বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত সৃষ্টিমুখর হয়ে উঠছে।

সভ্যতার উৎকর্ষে বিজ্ঞানের যাত্রা : সভ্যতার বিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর বিকাশ । যেদিন মানুষ আগুন আবিষ্কার করল, ঠিক সেদিন থেকেই বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল। বিজ্ঞান মানুষের সীমাবদ্ধতা দূর করে উন্নত জীবনযাপনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মূলত সহস্র বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে বর্তমানে বিজ্ঞান লাভ করেছে পূর্ণতর সমৃদ্ধি।

প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা : প্রাচীনকালে মানুষ ছিল অসহায় । তখন রােগ নির্ণয়ের কোনাে ব্যবস্থা ছিল না বলে সামান্য রােগেও মানুষের করুণ পরিণতি ঘটত। চিকিৎসার জন্য তাদের প্রকৃতির শরণাপন্ন হতে হতাে। অসুস্থতার সময় তারা বিভিন্ন গাছ-গাছালি, তাবিজ, কবজ, দোয়া-কালাম, পানি পড়া এবং ঝাড়ফুঁকের ওপর নির্ভরশীল ছিল । তখন মানুষের জীবনও ছিল খুবই সংকটাপন্ন। মানুষের মতাে ইতর প্রাণীরাও ছিল অসহায় ।

আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সূচনা : আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কারের ফলে চিকিৎসাক্ষেত্রে মানুষের ধ্যান-ধারণায় পরিবর্তন এসেছে । বিজ্ঞানের বদৌলতে প্রাচীন পদ্ধতির কবিরাজি চিকিৎসার স্থলে হােমিওপ্যাথি ও এলােপ্যাথিক চিকিৎসার উদ্ভাবন করা হয় । পেনিসিলিন, ক্লোরােমাইসিন, স্ট্রেপটোমাইসিন ইত্যাদি ঔষধ আবিষ্কারের ফলে মানুষ তথাকথিত শাস্ত্রীয় চিকিৎসা, তাবিজ-কবজ ও ঝাড়ফুকের মতাে কুসংস্কারের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে দিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে । এসব। চিকিৎসা ব্যবস্থা আধুনিক বিজ্ঞানেরই বিস্ময়কর অবদান।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অবদান : বিজ্ঞান মানুষের জীবনকে সহজ করেছে। অধ্যাপক রঞ্জনের আবিষ্কৃত রঞ্জন রশি’, অধ্যাপক কুরি ও মাদাম কুরি আবিষ্কৃত ‘রেডিয়াম’ বিজ্ঞান জগতে যুগান্তর এনেছে । পেনিসিলিন, ক্লোরােমাইসিন ও স্ট্রেপটোমাইসিন ইত্যাদি মহৌষধ মানুষকে নানা প্রকার দুরারােগ্য ব্যাধি থেকে রক্ষা করছে। বসন্তের জীবাণু ধ্বংস করার জন্য জেনর ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করেন। এছাড়া আধুনিক কম্পিউটারের মাধ্যমে রােগ নির্ণয় কৌশল চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবিশ্বাস্য সাফল্য এনে দিয়েছে ।

রােগ নির্ণয়ে বিজ্ঞান : প্রাচীনকালে মানুষের দেহে কোনাে রােগব্যাধি হলে তা নির্ণয়ের ব্যবস্থা ছিল না। চিকিৎসকরা তখন নিজেদের মন গড়া অভিজ্ঞতার সাহায্যে ঔষধপত্র নির্ধারণ করতেন। ফলে অনেক সময় ঠিক চিকিৎসা সম্ভব হয়ে উঠত না। কিন্তু কালক্রমে রােগ নির্ণয়ের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে চিকিৎসা পদ্ধতি অনেকটা সহজতর হয়েছে। অধ্যাপক রঞ্জনের আবিস্কৃত রঞ্জন রশ্মি, এক্সরে, আলট্রাসনােগ্রাফি এবং অধ্যাপক কুরি ও মাদামকুরি আবিস্কৃত রেডিয়াম চিকিৎসাক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। রঞ্জন রশ্মির সাহায্যে শরীরের অদৃশ্য বস্তু দেখার ব্যবস্থা রয়েছে এবং রেডিয়ামের সাহায্যে ক্যানসারের মতাে ভয়ংকর ক্ষতের স্থান নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। এক্স-রে মেশিন না হলে রােগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি হতাে এবং এর ফলে সুচিকিৎসা কোনােদিনই সম্ভব হতাে না। তাছাড়া রােগীর রক্ত, মল-মূত্র ইত্যাদি উপাদান পরীক্ষার জন্য আধুনিক যেসব পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে, তাও বিজ্ঞানেরই অবদান। বর্তমানে কম্পিউটারের মাধ্যমেও রােগ নির্ণয়ের সুন্দর ব্যবস্থা আবিস্কৃত হয়েছে। ফলে চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।

রােগ প্রতিরােধের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান : এমন কিছু রােগব্যাধি আছে, যা প্রতিরােধের জন্য বিজ্ঞান পূর্বেই ব্যবস্থা নির্দেশ করেছে। যেমনশিশুর জন্মের পর বিভিন্ন মেয়াদে ডিপিটি পােলিও, হাম, গুটি বসন্ত, যক্ষ্মা, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার, ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস ইত্যাদি টিকা দেওয়া হচ্ছে। ফলে অনেক রােগ দেহে সৃষ্টি হওয়ার আগেই প্রতিরােধক ব্যবহৃত হচ্ছে। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে অগণিত শিশু রক্ষা পাচ্ছে।

রােগ নিরাময়ে বিজ্ঞান : রােগ নির্ণয় এবং রােগ প্রতিরােধের ব্যবস্থাই চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড়াে অবদান । এক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বড়াে সাফল্য হলাে বিভিন্ন রােগ নিরাময়ের জন্য নানা রকম ঔষধপত্রের আবিষ্কার। এক সময় দুরারােগ্য ব্যাধির চিকিৎসার কোনাে ব্যবস্থাই ছিল না। বিজ্ঞান সেসব রােগ নিরাময়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। যেমন- যক্ষ্মার ব্যাপারে একটি প্রবাদ বাক্য প্রচলিত ছিল যে, যার হয় যক্ষ্মা তার নেই রক্ষা’ । এখন আর যক্ষ্মা কোনাে দুরারােগ্য ব্যাধি নয় । তাছাড়া ভয়ংকর জলাতংক রােগ, কুষ্ঠরােগ ইত্যাদি নিরাময়ের জন্যও বিজ্ঞান কার্যকর ঔষধ ও ইনজেকশন আবিষ্কার করেছে। বর্তমান বিশ্বে যে দুটি রােগ সবচেয়ে দুরারােগ্য বলে গণ্য হচ্ছে তা হলাে ক্যানসার ও এইডস। এই দুই রােগের চিকিৎসার কোনাে সুব্যবস্থা করা আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়ে। উঠেনি। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এর প্রতিরােধের উপায় নিরূপণের জন্য। এক কালের মহামারি বসন্ত রােগ থেকে মুক্তির জন্য আবিস্কৃত হয়েছে ভ্যাক্সিন। মানবদেহে অন্য মানুষের হৃৎপিণ্ড সংযােজনের মতাে অলৌকিক ক্ষমতা বিজ্ঞানেরই এক বিস্ময়কর অবদান । এখন আবার কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড তৈরি করা হচ্ছে এবং রােগীর দেহে সংযােজন করে তা দীর্ঘদিন। কর্মক্ষম রাখার কৃতিত্বপূর্ণ দৃষ্টান্তও বিজ্ঞানেরই সৃষ্টি । প্লাস্টিক সার্জারির সাহায্যে আজকাল অসুন্দর ও অমসৃণ চেহারাকে সুন্দর ও মসৃণ করা হয় । তারুণ্যকে কীভাবে স্থায়ী করা যায়, সে বিষয়েও বিজ্ঞান নিরন্তর গবেষণা অব্যাহত রেখেছে। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে অন্যান্য রােগের মতাে সমস্ত রােগব্যাধি নিরাময়ের ব্যবস্থাই বিজ্ঞান নিশ্চিত করতে পারবে।

বিজ্ঞান চিকিৎসা ক্ষেত্রের বড়াে আশীর্বাদ : বিজ্ঞান বিশ্বসভ্যতায় বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। বিজ্ঞান অনেক অসাধ্যকে বাস্তব রূপ দান করেছে। বিজ্ঞান অন্যান্য ক্ষেত্রে আশীর্বাদ ও অভিশাপ বয়ে আনলেও চিকিৎসাক্ষেত্রে এনেছে শুধু আশীর্বাদ। এ ব্যাপারে কিপলিং বলেন, বিজ্ঞানের আশীর্বাদে বিশ্বমানবতা কখনাে উল্লসিত হয়, আবার কখনাে তার বিভীষিকাময় রূপ বিশ্বসভ্যতাকে থামিয়ে দেয়, কিন্তু চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান এনেছে শুধুই আশীর্বাদ।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের নতুন সংযােজন : সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গবেষণা চালিয়ে চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করেছে যা বিশ্ব সভ্যতায় যুগান্তকারী প্রভাব ফেলেছে। জেনেটিক টেকনােলজির রহস্য উদ্ঘাটনের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দুরারােগ্য ব্যাধি শনাক্ত করে চিকিৎসা আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। ইতােমধ্যে কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড সৃষ্টির পথ বিজ্ঞান উন্মোচন করেছে। আবার কৃত্রিম রক্ত, প্রােটিন ইত্যাদি আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানীরা নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। টেস্টটিউব শিশুর জন্মদান পদ্ধতিও বর্তমানে বাংলাদেশে চালু হয়েছে। মূলত বিজ্ঞানে তথা চিকিৎসা বিজ্ঞানে অসম্ভব বলে কোনােকিছুই আর থাকছে না।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যর্থতা : চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান যেমন উন্নতি সাধন করছে পাশাপাশি এর কিছু ব্যর্থতাও রয়েছে । চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান যেমন মানবসমাজের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনছে আবার বিজ্ঞান-সৃষ্ট নানা যন্ত্র সভ্যতার অবাধ বিকাশের কারণে অনেক জটিল রােগেরও জন্ম হচ্ছে, যা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। বর্তমান সময়ে এইডস একটি মারাত্মক ব্যাধি। বিজ্ঞানীরা এখনও এ রােগের কোনাে স্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করতে পারেনি । এক্ষেত্রে বিজ্ঞান ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সম্প্রতি সার্স, ইবােলা ভাইরাসও বিজ্ঞানকে ফাঁকি দিয়ে মানুষের জীবনের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উপসংহার : বিজ্ঞান বিশ্বসভ্যতার জন্য একাধারে আশীর্বাদ ও অভিশাপ দুটোই । তবে চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান কেবল আশীর্বাদই নিয়ে এসেছে। প্রবাদ আছে যে, ‘সুস্থ শরীরে সুস্থ মন বিরাজ করে। মানুষের এ সুস্থ শরীরের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য বিজ্ঞান নিঃসন্দেহে মুখ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে ।

5. মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেম।

0/20BB-23

উত্তর:

ভূমিকা: বাঙালির সুদীর্ঘকালের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে এ জাতি চিরকালই মুক্তিপ্রিয়। বাঙালির প্রাকৃতিক পরিবেশেই আছে তার প্রতিবাদের ভাষা। পরের বশ্যতা এ জাতি কোনোকালেই মেনে নিতে পারেনি। তাই বারবার এ ভূমিতে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠেছে। সেই আগুনে তার শৌর্য- বীৎ দীপ্ত হয়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি অর্জন করে তার প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল যে বোধ বা চেতনাকে কেন্দ্র করে তারই নাম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তাকে চিরসমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রেরণা জোগাবে আবহমান কাল।

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি: ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের জাঁতাকলে প্রায় ২০০

বছর ধরে নিষ্পেষিত হয়েছিল এ জাতি। ১৯৪৭ সালে সেই জাঁতাকল থেকে এ উপমহাদেশের মানুষ মুক্তিলাভ করলেও মুক্তি আসেনি বাঙালি জাতির। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানি শাসকদের শৃঙ্খলে আবার বন্দি হলো বাঙালি জাতি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ধাপে ধাপে সংগ্রাম করে এ বন্দিদশা থেকে মুক্তির পথ খুঁজছিল বাঙালি জাতি।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি শাসনের প্রথম বলির শিকার হন ভাষাশহিদ রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত প্রমুখ। ‘৫৪ সালে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার জয়লাভ; ৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন হতে ‘৬৬-র ছয় দফা আন্দোলন; ‘৬৯- এর নজিরবিহীন ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন গণআন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বিকাশ লাভ করে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করে। দশ দিন পর ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনেও ৩১০টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। এরপর ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার গড়িমসি ও ভুট্টোর ভেটো অব্যাহত থাকে। অবশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১ মার্চ হতে ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন চলতে থাকে। লাখ লাখ জনতার উপস্থিতিতে ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতাসংগ্রামে ‘যার যা কিছু আছে’ তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার আহ্বান জানানো হয়। সর্বশেষ ২৫ শে মার্চ রাতে নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালির ওপর পাক-বাহিনীর বর্বর আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৫শে মার্চ মধ্যরাত, অর্থাৎ ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর পরেই ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’- এ স্বতঃস্ফূর্ত স্লোগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ: ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি

হানাদার বাহিনী অতর্কিতে হামলা চালায় নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। তারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় পিলখানা, রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। মধ্যরাতের পর হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রেফতারের পূর্বেই, অর্থাৎ ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাঁর স্বাক্ষরিত ঘোষণা বার্তাটি তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করা হয়। এরপর চট্টগ্রামের ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ থেকে ২৬ ও ২৭ শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচারিত হয় স্বাধীনতার ঘোষণা। সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে স্বতঃস্ফূর্ত মুক্তির সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী, এম মনসুর আলীকে অর্থমন্ত্রী, এএইচএম, কামারুজ্জামানকে স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী এবং খোন্দকার মোশতাক আহমদকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করে মুজিবনগরে বসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। অস্থায়ী সরকারের এক আদেশে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এম.এন.এ. অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল (পরবর্তীতে জেনারেল) এমএজি ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি করে সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং ১১ জন সেক্টর কমান্ডারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৭১-এর ১৭ এপ্রিল বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলাকে ‘মুজিবনগর’ নামকরণ করে সেই মুক্ত ভূ-খন্ডে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে অদ্বায়ী সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যগণ শপথ গ্রহণ করেন। এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক সনদ বা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমএনএ, মুহম্মদ ইউসুফ আলী। একই অনুষ্ঠানে কর্নেল এমএজি ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয় এবং কর্নেল এমএজি, ওসমানীর নেতৃত্বে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

৪ ডিসেম্বর হতে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ শুরু হয়। ৬ ডিসেম্বর ভারত সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। দেশের অভ্যন্তরে পাকবাহিনী মরণকামড় দিয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালাতে থাকে। পাকবাহিনীর সমর্থনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগর হতে মার্কিন সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরের দিকে প্রেরণ করে। বাংলাদেশের পক্ষ নিয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সপ্তম নৌবহরকে অগ্রসর না হওয়ার জন্য হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে। এ নিষেধ উপেক্ষা করে সপ্তম নৌবহর যদি বঙ্গোপসাগরে আসত তাহলে হয়তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হতো। পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে পাকবাহিনী আলবদর, রাজাকারদের সহযোগিতায় ১৪ই ডিসেম্বর অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিকাল ৫টা এক মিনিটে রমনা রেসকোর্স (বর্তমানে সোহরাওয়াদী উদ্যান) যৌথ কমান্ডের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনালের জগজিৎ সিং অরোরা এবং পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনালের নিয়াজি পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন। এ সময় মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করেন ডেপুটি চিফ (অব. স্টাফ গ্রুপ) ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে আমাদের যে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে উঠেছে তার মূলে কাজ করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকশিত হয়েছে আমাদের সমাজজীবনে। ব্যক্তিস্বাধীনতা, নারীমুক্তি আন্দোলন, নারীশিক্ষা, গণশিক্ষা, সংবাদপত্রের ব্যাপক বিকাশ সর্বোপরি গণতান্ত্রিক অধিকার চেতনা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে সমাজে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের জন্ম দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে দেশে গণতান্ত্রিকব্যবস্থা এবং অবাধ স্বাধীন গণতন্ত্র চর্চার মধ্য দিয়ে পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সংসদীয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সাহিত্যে এক নবতর সাহিত্যধারার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশে সাহিত্যচর্চা আজকে যতটা ব্যাপ্তি পেয়েছে তার পেছনে বড়ো প্রেরণা ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছে সংগীত এবং নাটকের মধ্য দিয়ে। গণসচেতনতামূলক বক্তব্যধর্মী নাটক ব্যাপকভাবে রচিত হয়েছে স্বাধীনতার পর। আমাদের দেশাত্মবোধক গানের ক্ষেত্রে এক নতুন জোয়ার এনেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। অসংখ্য গীতিকার তাঁদের গানে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাথা রচনা করেছেন। তবে আমাদের চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আশানুরূপভাবে প্রতিফলিত হয়নি। খুব সামান্যসংখ্যক চলচ্চিত্রেই মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা প্রকাশ পেয়েছে।

উপসংহার: মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কঠিন আত্মত্যাগের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তখনই পূর্ণাঙ্গ সাফল্যে উদ্ভাসিত হবে, যখন রাজনৈতিক স্বাধীনতা আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতায় রূপান্তরিত হবে। সেই লক্ষ্যে আজ সমাজের সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনাকে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। দেশের প্রত্যেক মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধের মহৎ লক্ষ্যসমূহ তুলে ধরে, সেগুলো বাস্তবায়নে সকলকে সম্পৃক্ত করা গেলেই আমাদের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এক গৌরবময় স্তরে উত্তীর্ণ হবে।

( end of bar 23 )

Note: Everything in this post is collected from other sites, platforms,books,ect.