১. আমার একার সুখ,
সুখ নহে ভাই, সকলের সুখ,
সখা, সুখ শুধু তাই।
আমার একার আলো সে যে অন্ধকার,
যদি না সবারে অংশ দিতে পাই।
সকলের সাথে বন্ধু, সকলের সাথে,
যাইব কাহারে বল; ফেলিয়া পশ্চাতে।
এক সাথে বাঁচি আর এক সাথে মরি, এসো বন্ধু,
এ জীবন সুমধুর করি।
ক. ‘ওপরের হাত সব সময় নিচের হাত থেকে শ্রেষ্ঠ’ – কথাটি কে বলেছেন?
খ. ‘রাষ্ট্র জাতির যৌথ জীবন আর যৌথ চেতনারই প্রতীক’ – উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. কবিতাংশটি ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের কোন দিকটিকে প্রতিফলিত করেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘কবিতাংশটি ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের আংশিক প্রতিচ্ছবি’ – তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘ওপরের হাত সব সময় নিচের হাত থেকে শ্রেষ্ঠ’ কথাটি ইসলামের নবি বলেছেন।
খ. আলোচ্য উক্তিটি দ্বারা জাতীয় জীবন ও জাতীয় চেতনার সাথে রাষ্ট্রের অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ককে বোঝানো হয়েছে। একটি জাতি যেভাবে জীবনযাপন করে, যে চেতনা ধারণ করে বেড়ে ওঠে রাষ্ট্রও সে অনুযায়ী পরিচিতি লাভ করে। রাষ্ট্র যদি তার নাগরিকদের আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য না করে, তবে রাষ্ট্রও তার প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হয়। অর্থাৎ যে রাষ্ট্র হাত পাতা আর চাটুকারিতাকে প্রশ্রয় দেয়, সে রাষ্ট্র কিছুতেই আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নাগরিক গড়ে তুলতে পারে না। কাজেই রাষ্ট্রের উচিত মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা এবং মানবিক বৃত্তি বিকাশের পথে যথাযথ ক্ষেত্র বা পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা জাতীয় জীবন ও জাতীয় চেতনার সাথে রাষ্ট্রের এমন অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ককেই বোঝানো হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশটি ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে বর্ণিত মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াস নিয়ে কল্যাণময় পৃথিবী রচনার দিকটিকে প্রতিফলিত করেছে।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক কীভাবে কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। লেখকের মতে, করুণার বশবর্তী হয়ে দান- কল্যাণ হলো মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াস, যা মানব-মর্যাদাকে অবমাননা করে কখনোই সম্ভব নয়। তাই প্রকৃতভাবে মানুষের কল্যাণ করতে চাইলে সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানো প্রয়োজন।
উদ্দীপকের কবিতাংশে কল্যাণময় পৃথিবী রচনার ক্ষেত্র তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে একজন মানুষ আরেকজন মানুষের সঙ্গে সুখ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। নিজ স্বার্থ উপেক্ষা করে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে কল্যাণময় পৃথিবী রচনা করতে চাইছে। যেখানে মানুষে মানুষে থাকবে না কোনো বৈষম্য। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকের কবিতাংশটি ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে বর্ণিত সকল শ্রেণির মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াস নিয়ে কল্যাণময় পৃথিবী রচনার দিকটিই প্রতিফলিত করেছে।
ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশটিতে কেবল কল্যাণময় পৃথিবী রচনায় কবির প্রত্যাশা ব্যক্ত হয়েছে, যা ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের আংশিক প্রতিচ্ছবি, পূর্ণাঙ্গ নয়।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক মানব-কল্যাণ ধারণাটির তাৎপর্য বিচারে সচেষ্ট হয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি সমাজে প্রচলিত মানব কল্যাপ কথাটির উপলব্ধিহীন প্রয়োগের বিভিন্ন দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। পাশাপাশি প্রকৃত মানব-কল্যাণ কীভাবে সম্ভব তার বিস্তারিত দিক তুলে ধরেছেন। মানব-কল্যাণ কথাটার অর্থ ক্ষুদ্রার্থে ব্যবহার করলে মানব-মর্যাদার যে অবমাননা ঘটে, সে বিষয়েও তিনি সকলকে সচেতন করেছেন। করুণার বশবর্তী হয়ে সামান্য দান-খয়রাত করে মানব-মর্যাদার অবমাননা না করে মানুষের সার্বিক মান সাধনের প্রতিই তিনি তাঁর মত প্রকাশ করেছেন। উদ্দীপকের কবিতাংশে কল্যাণময় পৃথিবী রচনায় পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির গুরুত্বের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। সংসারজীবনে সকলের সুখ-দুঃখ নিজের করে নিতে পারলেই প্রকৃত সুখের সন্ধান পাওয়া যায়। মানুষে মানুষে বৈষম্য দূর করে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতাই যে পারে কল্যাণময় পৃথিবী গড়ে তুলতে, সে বিষয়টিই উদ্দীপকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
‘মানব কল্যাণ’ প্রবন্ধে কল্যাণময় পৃথিবী রচনার গুরুতের পাশাপাশি দেশে মানব কল্যাণের প্রকৃত চিত্র উঠে এসেছে। মানব কল্যাণের নামে কীভাবে মানব-মর্যাদার অবমাননা ঘটানো হয়, সে বিষয়টিও প্রবন্ধটিতে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। মনুষ্যত্বের অবমাননার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে মানব-কল্যাণ কথাটির প্রকৃত অর্থ ও তাৎপর্য তুলে ধরায় প্রবন্ধটি নতুন মাত্রা লাভ করেছে। অন্যদিকে উদ্দীপকে কেবল ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের অন্যতম বিষয় কল্যাণময় পৃথিবী রচনার ক্ষেত্র তুলে ধরা হয়েছে, যা প্রবন্ধটির একটি খ-াংশ। আর কারণেই আমি মনে করি উদ্দীপকের কবিতাংশটি ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের একটি আংশিক প্রতিচ্ছবি, পূর্ণাঙ্গ নয়।
২. নদী কভু পান নাহি করে নিজ জল,
তরুগণ নাহি খায় নিজ নিজ ফল।
গাভী কচু নাহি করে নিজ দুগ্ধ পান;
কা‘দগ্ধ হয়ে করে পরে অন্ন দান।
স্বর্ণ করে নিজ রূপে অপরে শোভিত।
বংশী করে নিজ সুরে অপরে মোহিত।
শস্য জন্মাইয়া নাহি খায় জলধরে।
সাধুর ঐশ্বর্য শুধু পরহিত তরে।
ক. মানুষকে কোন পথে বেড়ে উঠতে হবে?
খ. মানব-কল্যাণ কথাটা আমরা সস্তা ও মামুলি বানিয়ে ফেলেছি কীভাবে?
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশটি ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের কোন দিকটি তুলে ধরে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উক্ত দিকটিই ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের একমাত্র দিক নয়।’’- তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
২ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মানুষকে মানবিক-বৃত্তির বিকাশের পথে বেড়ে উঠতে হবে।
খ. মানব-কল্যাণের প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি না করার ফলে আমরা একে সস্তা ও মামুলি বানিয়ে ফেলেছি। বর্তমান সমাজে মানুষ মানব কল্যাণ কথাটিকে ক্ষুদ্রার্থে ব্যবহার করে থাকে। একমুষ্টি ভিক্ষা দেওয়াকেও তারা মানব কল্যাণ বলে মনে করে থাকে। অথচ এতে মানুষের প্রকৃত কল্যাণ সাধিত হয় না, বরং মানব-মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করা হয়। মূলত মানব কল্যাণের প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি না করার কারণেই আমরা একে সস্তা ও মামুলি বানিয়ে ফেলেছি।
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশটি ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে বর্ণিত মানব কল্যাণ কথাটির প্রকৃত তাৎপর্যের দিকটি তুলে ধরে ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক মানব-কল্যাণ ধারণাটির তাৎপর্য বিচারে সচেষ্ট হয়েছেন। তাঁর ধারণায় করুণাবশত দান-খয়রাত করা সংকীর্ণ মনোভাবের পরিচায়ক। এর বিপরীতে তিনি মনে করেন, মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াসই হলো মানব-কল্যাণ। তাঁর বিশ্বাস, পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা ও নিঃস্বার্থ মনোভাবই পারে মানুষের প্রকৃত কল্যাণ সাধন করতে।
উদ্দীপকের কবিতাংশে আমরা মানব কল্যাণ তথা অপরের কল্যাণ সাধনের গুরুত্বের দিকটি প্রত্যক্ষ করি। পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টি যেমন অপরের কল্যাণ সাধন করে থাকে, তেমনি মানুষেরও উচিত অপরের কল্যাণ সাধন করা। কারণ অপরের কল্যাণ সাধনের মধ্যেই রয়েছে মানুষের সার্বিক মুক্তি। ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের লেখকও এ বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব প্রদান করেছেন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের কবিতাংশটি ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে বর্ণিত মানব কল্যাণ কথাটির প্রকৃত তাৎপর্যের দিকটিই তুলে ধরে।
ঘ. উদ্দীপকে কেবল মানব-কল্যাণের প্রকৃত তাৎপর্যের দিকটি উঠে এসেছে, যা ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলেও প্রবন্ধটিতে আরও অনেক দিকের সমাবেশ ঘটেছে।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক যেমন মানব-কল্যাণের তাৎপর্যময় দিকের উল্লেখ করেছেন, তেমনি আরও নানা বিষয়ের প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করেছেন। মানুষের উপলব্ধিহীনতার কারণে মনুষ্যত্বের অবমাননার দিকটি প্রবন্ধটিতে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে। এছাড়া তিনি মানব-মর্যাদা বৃদ্ধির উপায়ও বাতলে দিয়েছেন। একটি রাষ্ট্র কীভাবে মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেতে পারে, সে বিষয়টিও প্রবন্ধটিতে উঠে এসেছে।
উদ্দীপকে কেবল মানব-কল্যাণ সাধনের প্রতি মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত, সে বিষয়টি সুন্দররূপে দৃষ্টান্তসহকারে তুলে ধরা হয়েছে। নদী, তরু, গাভি, কাষ্ঠ, স্বর্ণ, বংশী, শস্য প্রভৃতির কল্যাণময় ভূমিকার দিকটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে মানুষের কর্তব্য কী হওয়া উচিত, সে বিষয়টি কবি উপস্থাপন করেছেন। এখানে পারস্পরিক কল্যাণ সাধনই যে মানবজীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য, সে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।
উদ্দীপক ও ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের পর্যালোচনা থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, উদ্দীপকটি কেবল মানব-কল্যাণের প্রকৃত তাৎপর্যের দিকটি উপস্থাপন করলেও প্রবন্ধে এ দিকটি ছাড়াও আরও নানা বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। সেখানে যেমন রয়েছে মানব কল্যাণ সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা, তেমনি রয়েছে মানব-মর্যাদা বৃদ্ধিতে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ভূমিকা কী হওয়া উচিত তার দিকনির্দেশনা। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে নির্দেশিত দিকটিই ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের একমাত্র দিক নয়।
৩. সমাজসেবার ক্ষেত্রে বাংলার ক্ষুদিরাম, হাজি মুহম্মদ মুহসীন, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান। ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী বিশ্বখ্যাত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা, আর্জেন্টিনার চে গুয়েভারা প্রমূখ মহান নেতার নাম উল্লেখযোগ্য। মানব কল্যাণে আত্মনিয়োগ করার মাধ্যমেই ইতিহাসে তাঁরা চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁরা শুধু অর্থ দিয়ে নয়, নিঃস্বার্থভাবে জীবন দিয়ে মানব কল্যাণে আত্মনিয়োগ করে গেছেন। এসব মহৎপ্রাণ ব্যক্তির জীবনাদর্শ অনুসরণ করে মানবসেবায় আমরা নিজেদের উদ্বুদ্ধ করতে পারি।
ক. লেখকের মতে, কোন ধারণা সংকীর্ণ মনোভাবের পরিচায়ক?
খ. কীভাবে বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কারকে ধ্বংসের পরিবর্তে সৃজনশীল মানবিক কর্মে নিয়োগ করা যায়?
গ. উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে পারেনি’ – মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই করো।
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. লেখকের মতে, করুণাবশত, দান-খয়রাত করা সংকীর্ণ মনোভাবের পরিচায়ক।
খ. মুক্ত বিচারবুদ্ধির সাহায্যে বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কারকে ধ্বংসের পরিবর্তে সৃজনশীল মানবিক কর্মে নিয়োগ করা যায়। প্রাবন্ধিক আবুল ফজল তাঁর প্রবন্ধে মানব-কল্যাণ কথাটিকে মানব-মর্যাদার সহায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস দেখিয়েছেন। তিনি মনে করেন মানুষের মর্যাদাবৃদ্ধি মানবকল্যাণের অন্যতম শর্ত। আর এ ধরনের মানব কল্যাণ বাস্তবায়িত করতে হলে বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কারকে ধ্বংসের পরিবর্তে সৃজনশীল মানবিক কর্মে নিয়োজিত করতে হবে। আর মুক্ত বিচারবুদ্ধির সাহায্যেই কেবল তা সম্ভব।
গ. উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে বর্ণিত মহৎ প্রতিভাদের আদর্শের উত্তরাধিকারের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক মহৎ প্রতিভাদের আদর্শের উত্তরাধিকারের কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, সত্যিকার মানব কল্যাণ মহৎ চিন্তা-ভাবনার ফসল। আর বাংলাদেশের মহৎ প্রতিভারা সবাই মানবিক চিন্তা ও আদর্শের উত্তরাধিকার রেখে গেছেন। সে উত্তরাধিকার আমাদের জীবনে যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। তাদের দেখানো পথে চলতে হবে।
উদ্দীপকে মহৎ প্রতিভাদের জীবনাদর্শের কথা তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে ক্ষুদিরাম, হাজী মুহম্মদ মুহসীন, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বিশ্বনেতাদের মহৎ কর্ম চিত্রিত হয়েছে। মানব-কল্যাণে আত্মনিয়োগের মাধ্যমেই তাঁরা পৃথিবীতে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁদের জীবনাদর্শ অনুসরণ করলেই আমরা কল্যাণময় পৃথিবী রচনা করতে সক্ষম হব। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে বর্ণিত মহৎ প্রতিভাদের আদর্শের উত্তরাধিকারের দিকটিই প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে কেবল মহৎপ্রাণ মানুষদের জীবনাদর্শের উত্তরাধিকারের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে, যা ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের খ-িত চিত্র প্রকাশ করে।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক মানব-কল্যাণ কথাটির স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আর এটি করতে গিয়ে তিনি নানা বিষয়ের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন করুণার বশবর্তী হয়ে দান-খয়রাত করলে কীভাবে মানব-মর্যাদার অবমাননা ঘটে। আমাদের সমাজ যে এরূপ উপলব্বিহীন মানুষে ভরে আছে, সেটিও তিনি দৃষ্টান্ত দিয়ে দেখিয়েছেন। এছাড়া রাষ্ট্র, জাতি, সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীগত চেতনা কীভাবে মানব কল্যাণের অন্তরায় ঘটাচ্ছে, সে বিষয়টিও তিনি দেখিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি একটি আত্মমর্যাদাপূর্ণ জাতি গড়ে তোলার সহায়ক নির্দেশনাও দিয়েছেন।
কেবল মহৎপ্রাণ মানুষদের জীবনাদর্শের উত্তরাধিকারের দিকটি উঠে এসেছে। এ জীবনাদর্শ কীভাবে আমরা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করে এক কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারি, মানবসেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে পারি, সে বিষয়টিই মূলত উদ্দীপকে প্রাধান্য পেয়েছে। সুদীপক ও ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের পর্যালোচনা শেষে বলা যায়, ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধটির বিষয়বস্তুর পরিধি ব্যাপক। এখানে কল্যাণময় পৃথিবী রচনার মানসে নানা অনুষঙ্গের সমাবেশ ঘটানো হয়েছে। অন্যদিকে উদ্দীপকে কেবল মহৎ মানুষদের জীবনাদর্শ জভাবে আমাদের জীবনে প্রয়োগ করে মানব কল্যাণ সাধন করা যায় সে বিষয়টি উঠে এসেছে, যা প্রবন্ধটির একটি খ-াংশ। তাই বলা হয়, “শুদীপকের বিষয়বস্তু ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে পারেনি।”- মন্তব্যটি যথার্থ।
৪. মাদার তেরেসা আশৈশব স্বপ্ন দেখেন মানবসেবার। একসময় যোগ দেন খ্রিস্টান মিশনারি সংঘে। মানুষকে আরও কাছে থেকে সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন মিশনারিজ অব চ্যারিটি। তাঁর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আরও অনেকেই এগিয়ে আসেন এ মহান কাজে। একসময় এ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি লাভ করেন নোবেল পুরস্কার। সারা জীবনের তাঁর সবটুকু উপার্জনই বিলিয়ে দেন মানবের কল্যাণে।
ক. ছাত্রজীবনে আবুল ফজল কোন আন্দোলনে যুক্ত হন?
খ. মানব কল্যাণ মানব-অপমানে পরিণত হয়েছে কীভাবে?
গ. উদ্দীপকটি ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের কোন দিকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “মাদার তেরেসা ‘মানব কল্যাণ প্রবন্ধের মূল বক্তব্যের বাস্তব প্রতিফলন – মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
৪ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ছাত্রজীবনে আবুল ফজল বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনে যুক্ত হন।
খ. মানুষের স্বাভাবিক অধিকার আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ছাড়া মানব কল্যাণ মানব-অপমানে পরিণত হয়। লেখক বর্তমান পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখতে পান দুস্থ, অবহেলিত, বাস্তুহারা, স্বদেশ-বিতাড়িত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আবার রিলিফ, রিহেবিলিটেশন প্রভৃতি শব্দের ব্যবহারও বাড়ছে। তিনি আরও প্রত্যক্ষ করেন রেডক্রসের মতো সেবাধর্মী সংস্থার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এগুলোকে তিনি একধরনের মানব-অপমান বলে মনে করেন। কারণ এসবের মাধ্যমে কখনোই প্রকৃত মানব-কল্যাণ সাধিত হয় না। এগুলো মানুষকে ছোটো করে রাখার কৌশল ছাড়া কিছু নয়। সুতরাং, মানুষের স্বাভাবিক অধিকার আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ছাড়া মানব কল্যাণ মানব-অপমানে পরিণত হয়।
গ. মানুষের সার্বিক মঙ্গল সাধনের দিক থেকে উদ্দীপকটি ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক মানব কল্যাণ ধারণাটির তাৎপর্য বিচারে সচেষ্ট হয়েছেন। সাধারণভাবে অনেকে দুস্থ মানুষকে করুণাবশত দান-খয়রাত করাকে মানব কল্যাণ মনে করেন। কিন্তু লেখকের মতে, এমন ধারণা খুবই সংকীর্ণ মনোভাবের পরিচায়ক। তাঁর মতে, মানব-কল্যাণের লক্ষ্য সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানো।
উদ্দীপকের মাদার তেরেসা মানবতার পুরোধা ব্যক্তিত্ব। মানুষের সেবা করার জন্য তিনি সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন। গড়ে তোলেন মিশনারিজ অব চ্যারিটি। সারাজীবনের সবটুকু উপার্জন তিনি মানবের কল্যাগে বিলিয়ে দেন। তাঁর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে অনেকেই এ মহান কাজে যুক্ত হয়েছে। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি মানবতার ধারক হিসেবে কাজ করে গেছেন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে মানব-কল্যাণের প্রকৃত আদর্শ ফুটে উঠেছে, যা ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. মানব কল্যাণে মানুষের মর্যাদাবোধ বৃদ্ধি আর মানবিক চেতনা বিকাশের জন্যই মাদার তেরেসা ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের মূল বক্তব্যের বাস্তব প্রতিফলন।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক বলতে চেয়েছেন, মানব কল্যাণ মানব-মর্যাদার সহায়ক। মানুষকে মানুষ হিসেবে এবং মানবিক বৃত্তির বিকাশের পথেই বেড়ে উঠতে হবে; আর তার যথাযথ ক্ষেত্র রচনাই মানব কল্যাণের প্রাথমিক সোপান। সাধারণভাবে অনেকে দুস্থ মানুষদের করুণাবশত দান-খয়রাত করাকে মানব-কল্যাণ মনে করেন। কিন্তু লেখকের মতে, মানব কল্যাণের লক্ষ্য সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানো।
উদ্দীপকের মাদার তেরেসা তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময় মানব-কল্যাণে ব্যয় করেছেন। মানুষকে আরও কাছ থেকে সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন। তিনি আশৈশব স্বপ্ন দেখেন মানবসেবার। আর একসময় এ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি লাভ করেন নোবেল পুরষ্কার।
উদ্দীপকের মাদার তেরেসা মনুষ্যত্বকে বাদ দিয়ে মানুষের জৈব অস্তিত্বের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে মানবসেবার ব্রত গ্রহণ করেননি। আকাঙ্ক্ষা ছিল মানুষের সার্বিক মঙ্গল কামনা, যা মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের মূল বক্তব্যের অনুরূপ। লেখক মানুষের প্রতি সামার বন নয়, মানুষের কল্যাণের লক্ষ্যে সকল অন্মাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটাতে চেয়েছেন। তাই বলা উদ্দীপকের মাদার তেরেসার মধ্যে আলোচ্য প্রবন্ধের বাস্তব প্রতিফলন স্পষ্ট।
৫. সবুজ ও শাহিন একই গ্রামের বাসিন্দা। তাদের পাশের গ্রামে ভবন ধসে অনেক মানুষ আটকে পড়েছেন। খবর শুনে সমৃদ্ধ ও শাহিন সেখানে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে অসংখ্য মানুষের বাঁচার জন্য আর্তনাদ শুনে সবুজ নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে সকলের সঙ্গে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। কিন্তু শাহিন তা না করে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে বাড়ি ফেরে। পরে বিপদগ্রস্ত কিছু পরিবারকে এই সহায়তা করে। আর সবুজ উদ্ধারকাজ শেষ হলে তাদের সার্বিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থার চেষ্টা করে।
ক. ‘রাঙা প্রভাত’ কী জাতীয় রচনা?
খ. যে রাষ্ট্র হাত পাতা বা চাটুকারিতাকে প্রশ্রয় দেয়, সে রাষ্ট্রের পরিণতি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের শাহিন চরিত্রের মধ্যে ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের কোন ি দকটি সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘শাহিন নয়, সবুজের মধ্য দিয়েই মানব কল্যাণের আদর্শ ফুটে উঠেছে’ – ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি যুক্তিসহ বিচার করো।
৫ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘রাঙা প্রভাত’ একটি উপন্যাস।
খ. যে রাষ্ট্র হাত পাতা বা চাটুকারিতাকে প্রশ্রয় দেয়, সে রাষ্ট্র কখনোই আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নাগরিক সৃষ্টি করতে পারে না। হাত পাতা বা চাটুকারিতা মানবচরিত্রের দুটি নেতিবাচক দিক। যে মানুষ বা জাতি এই দুটি কাজকে প্রশ্রয় দেয়, তারা যেন প্রকারান্তরে নিজের বা ঐ জাতির মর্যাদাকেই ভূলুণ্ঠিত করে। ফলে ঐ ব্যক্তি যেমন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়, তেমনি ঐ জাতিও সুনাগরিক সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়। কারণ রাষ্ট্র জাতির যৌথ জীবন আর যৌথ চেতনারই প্রতীক।
গ. যারা দুস্থ মানুষকে করুণাবশত দান-খয়রাত করাকে মানব কল্যাণ মনে করে, ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের সেই দিকটি উদ্দীপকের শাহিন চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক বলেছেন যে, আমাদের সমাজের অনেকে আছেন, যারা দান-খয়রাত আর কাঙালি ভোজনকে মানব কল্যাণ মনে করেন। তারা মনে করেন, মানুষের জৈবঅস্তিত্বের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়াই মানব কল্যাণ। অনেকে আবার বাহক কুড়োবার জন্যও এসব করে থাকেন। কেউ কেউ এক মুষ্টি ভিক্ষা দেওয়াকেও মানব কল্যাণ মনে করেন, যা লেখক মানতে রাজি নন। উদ্দীপকের শাহিন ভবন ধসে আটকে পড়া মানুষদের দুরবস্থা দেখতে গিয়ে কিছু না করে ফিরে আসে। পরবর্তীকালে সে কিছু পরিবারকে অর্থ সহায়তা করে। এর মধ্যদিয়েই সে মনে করে সে অনেক বড় কাজ করে ফেলেছে। কিন্তু মানব কল্যাণের উৎস মানুষের মর্যাদাবোধ বৃদ্ধি আর মানবিক চেতনা বিকাশের সাথে সম্পর্কিত। তাই বলা যায়, ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে যারা সাময়িক অনুগ্রহ করাকে মানব কল্যাণ মনে করে শাহিন তাদের সমগোত্রীয়।
ঘ. উদ্দীপকের শাহিন সাময়িক অনুগ্রহ করাকে মানব কল্যাণ মনে করলেও মানব কল্যাণের প্রকৃত স্বরূপ ফুটে উঠেছে সবুজের মধ্য দিয়ে। ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক মানব কল্যাণ ধারণাটির তাৎপর্য বিচারে সচেষ্ট হয়েছেন। তাঁর মতে, মানব-কল্যাণ হলো মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াস, যা মানব-মর্যাদার সহায়ক। এ কল্যাণের লক্ষ্য সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উপ ঘটানো। কিন্তু যারা দয়া বা করুণার বশবর্তী হয়ে দান-খয়রাতকে মানব কল্যাণ মনে করে, তারা কখনোই প্রকৃত মানবসেবক নয়। উদ্দীপকের শাহিন ভবন ধসে আটকে পড়া মানুষদের আর্তনাদ শুনতে পেলেও অনুভব করতে পারেনি। তাই সাময়িক অর্থ দানকেই সে তাদের সমস্যার সমাধান হিসেবে ধরে নিয়েছে। কিন্তু সবুজ ঘটনাস্থলে পৌছামাত্রই উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছে। নিজের প্রয়োজনকে উপেক্ষা করে তাদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করেছে।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে মানব-কল্যাণের যে আদর্শ তুলে ধরা হয়েছে, তা কেবল উদ্দীপকের সবুজের মধ্যেই দেখতে পাওয়া যায়। কারণ সে বিপদগ্রস্ত মানুষগুলোর সার্বিক কল্যাণের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে চেয়েছে, কিন্তু শাহিন তা করেনি। সে কেবল আর্থিক অনুদান দিয়েই নিজের দায়িত্বের ইতি টানে। মনুষ্যত্বের অবমাননা যে ব্রিয়াকর্মের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি তাকে কিছুতেই মানব-কল্যাণ নামে অভিহিত করা যায় না। তাই ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের আলোকে বলা যায়, উদ্দীপকের শাহিন নয়, সবুজের মধ্যে মানব কল্যাণের স্বরূপ ফুটে উঠেছে।
৬. অন্নহীনে অন্নদান, বস্ত্র বস্ত্রহীনে
তৃষাতুরে জলদান, ধর্ম ধর্মহীনে
মূর্খজনে বিদ্যাদান, বিপন্নে আশ্রয়,
রোগীরে ঔষধদান, ভয়ার্তে অভয়
গৃহহীনে গৃহদান, অন্ধেরে নয়ন,
পীড়িতে আরোগ্যদান, শোকার্তে সান্ত¡না;
স্বার্থশূন্য হয় যদি এ দ্বাদশ দান
স্বর্ণের দেবতা নহে দাতার সমান।
ক. কীসের সহায়তায় কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব?
খ. মানব-কল্যাণ কীভাবে মানব-মর্যাদার সহায়ক হয়ে উঠবে?
গ. উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উদ্দীপকে নির্দেশিত দ্বাদশ দানই পারে ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে বর্ণিত লেখকের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে।’ – মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই করো।
৬ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. লেখকের মতে, মুক্তবুদ্ধির সহায়তায় পরিকল্পনামাফিক পথে কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব।
খ. কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব হলে মানব কল্যাণ মানব-মর্যাদার সহায়ক হয়ে উঠবে। ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক কল্যাণময় পৃথিবী রচনার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। কল্যাণময় পৃথিবী বলতে তিনি এমন পৃথিবীকে বুঝিয়েছেন যেখানে মানব-মর্যাদা কখনো ক্ষুণ্ন হয় না। বরং সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় সেখানে মানুষের উত্তরণ ঘটে। তিনি মনে করেন মুক্তবুদ্ধির সহায়তায় পরিকল্পনামাফিক পথে চললে তা সম্ভব; কারণ একমাত্র সুষ্ঠু পরিকল্পনাকারীকে সৃজনশীল মানবিক কর্মে নিয়োগ করা যায়। তাই বলা যায়, কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব হলেই মানব কল্যাণ মানব-মর্যাদার সহায়ক হয়ে উঠবে।
গ. উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে বর্ণিত মানব কল্যাণের তাৎপর্যপূর্ণ দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক মানব-মর্যাদার জয়গান গেয়েছেন। প্রবন্ধটিতে তিনি সবার ওপরে মানুষের মর্যাদাকে সমুন্নত করে তুলে ধরেছেন। তিনি মনে করেন মানুষের মর্যাদাকে যদি মানুষ যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়, তবেই প্রকৃত মানব কল্যাণ সাধিত হবে। কল্যাণময় পৃথিবী গড়ে তুলতে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উদ্দীপকের বিষয়বস্তুতে আমরা প্রকৃত মানব কল্যাণের উপায় সম্পর্কে অবগত হই। মানুষ নানাবিধ সমস্যায় জর্জড়িত। তাই মানুষের কল্যাণ করতে চাইলে প্রথমে তাদের সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে এবং সে অনুযায়ী সাহায্য করতে হবে। আর অবশ্যই তা হতে হবে স্বার্থশূন্য। কবি এখানে মানব কল্যাণ সাধনকল্পে বারো প্রকার দানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন, যার মাধ্যমে প্রকৃত মানব কল্যাণ সাধন সম্ভব। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে বর্ণিত মানব কল্যাণের তাৎপর্যপূর্ণ দিকটিই প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ. ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের লেখকের মতে, প্রকৃত মানব-কল্যাণ তখনই সম্ভব যখন মানুষের সার্বিক মঙ্গল সাধিত হবে, যা উদ্দীপকে নির্দেশিত দ্বাদশ দানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব। ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক মানব-কল্যাণ কথাটির প্রকৃত তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছেন। মানুষকে করুণাবশত দান-খয়রাত করাকেই অনেকে মানব-কল্যাণ বলে মনে করে থাকেন। কিন্তু লেখকের মতে, এমন ধারণা খুবই সংকীর্ণ মনোভাবের পরিচায়ক। তাঁর মতে, মানব-কল্যাণ হলো মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াস।
উদ্দীপকে প্রকৃত মানব-কল্যাণ সাধনে দ্বাদশ দানের উল্লেখ করা হয়েছে। কবির মতে, সমাজে কেউ বিত্তবান, আবার কেউ অসহায়। যারা সম্পদশালী তারা আর্থিকভাবে সাহায্য দিয়ে সমাজের দীন-দুঃখীদের সাহায্য করতে পারে। আর যাদের সে সামর্থ্য নেই, তারা সান্ত¡না দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে, অসুস্থকে সেবা দিয়ে এবং সাধ্যমতো শ্রম দিয়ে অপরের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে। এভাবে সমাজের মানুষ যদি একে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসে, তবে কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপক ও ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধ উভয় ক্ষেত্রেই প্রকৃত মানব-কল্যাণ সাধনের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। উদ্দীপকের কবি মানব-কল্যাণে কার্যকর দ্বাদশ দানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। আবার আলোচ্য প্রবন্ধে ভাষক মানুষের সার্বিক মঙ্গল সাধনের প্রতি জোর দিয়েছেন। তাই বলা যায়, “উদ্দীপকে নির্দেশিত দ্বাদশ দানই পারে ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে বর্ণিত লেখকের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে।”- মন্তব্যটি যথা
৭. পরশ সাহেব ক্ষমতা পেয়ে অতীতকে ভুলে গেছেন। অবৈধ পন্থায় অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। গ্রামে গিয়ে মানবসেবার ঘোষণাও দিয়েছেন। তাঁর ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এক রোগাটে চেহারার বৃদ্ধ সাহায্যের জন্য আসে। তিনি একসময় খুব ধনাঢ্য থাকলেও দুরারোগ্য ব্যাধির কবলে পড়ে আজ নিঃস্ব। পরশ সাহেব বৃদ্ধকে বিশ টাকার একটি নোট বের করে দিয়ে ছবি তুলতে চাইলেন। লোকটি উক্ত টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ভেজা চোখে বাড়ি চলে গেলেন। একসময় পরশ সাহেবের বাবা সেই বৃদ্ধ লোকটির আড়তের কর্মচারী ছিল।
ক. কী দেওয়াকেও আমরা মানব কল্যাণ মনে করে থাকি?
খ. মনুষ্যত্বের অবমাননা’ বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের পরশ সাহেবের মধ্যে ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের বৃদ্ধ লোকটির দান ফেরতের ঘটনাটি ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের লেখকের চিন্তাকে কীভাবে স্পর্শ করেছে বলে তুমি মনে করো? বিশ্লেষণাত্মক উত্তর দাও।
৭ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. একমুষ্টি ভিক্ষা দেওয়াকেও আমরা মানব-কল্যাণ মনে করে থাকি। পড়ে
খ. মনুষ্যত্বের অবমাননা বলতে লেখক লোক দেখানো মামুলি বস্তুর দানকে বুঝিয়েছেন। সমাজে মানব-কল্যাণের নামে কিছু লোক মূলত এর অবমাননা করে। তারা সস্তা ও নিম্নমানের জিনিস দান-খয়রাত করে নিজেকে দানশীল প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে দানগ্রহণকারী ব্যক্তির মানবিক ও সামাজিক মর্যাদা ভলুষ্ঠিত হয়। লোক দেখানোর নিমিত্তে এমন দান গর্হিত কাজ। এজন্য লেখক একে মনুষ্যত্বের অবমাননা বলেছেন।
গ. উদ্দীপকের পরশ সাহেবের মধ্যে ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের সংকীর্ণ মনোভাবের দিকটি ফুটে উঠেছে। ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে মানব কল্যাণ করতে গিয়ে মানবিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার প্রসঙ্গটি তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের সমাজের কিছু লোক নিজেকে দানবীর বা সমাজসেবকে পরিণত করার নিমিত্তে সংকীর্ণ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। সম্ভা ও মামুলিভাবে দান খয়রাত দিয়ে এ লোকেরা মানুষকে খাটো করে।
উদ্দীপকে সংকীর্ণ মানসিকতা প্রদর্শন করেছে পরশ সাহেব। তিনি অবৈধ উপায়ে সম্পদের মালিক হয়েছেন। সম্পদ ও ক্ষমতার দাপটে মানুষকে তিনি আর মানুষ মনে করেন না। লোকে তাকে দানশীল বলবে এই আশায় সে সমাজে মানবসেবার ঘোষণা দেয়। দরিদ্র বৃদ্ধ একটি লোক তার কাছে সাহায্যের জন্য এলে তাকে বিশ টাকার নোট দিয়ে ছবি তুলতে চায় পরশ সাহেব। আত্মমর্যাদাবোধে উদ্বুদ্ধ লোকটি সেই টাকা ফেরত দিয়ে চলে যায়। এতে পরশ সাহেবের সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয় ফুটে ওঠে। ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের লেখকও এ বিষয়টির অবতারণা করেছেন। প্রাবন্ধিক মনে করেন, একমুষ্টি ভিক্ষা দিয়ে যারা ভাবেন মানব কল্যাণ করেছেন, তারা মূলত মনুষ্যত্ব আর মানবিক মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করেছেন। তাঁর মতে, করুণাবশত দান-খয়রাত করা মানব কল্যাণের পর্যায়ে পড়ে না। এটা দানকারীর আত্মপ্রচারের নিমিত্ত মাত্র, যা হীন মানসিকতাকে প্রকাশ করে।
ঘ. উদ্দীপকের বৃদ্ধ লোকটির দান ফেরতের ঘটনাটি ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের লেখকের মনুষ্যত্ব ও মানবিক মর্যাদার চিন্তাকে স্পর্শ করেছে।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক মনুষ্যত্ব ও মানবিক মর্যাদার বিষয়টি নিয়ে যুক্তিপূর্ণ আলোচনা করেছেন। লেখকের চিন্তায় ধরা পড়েছে মানব কল্যাণের নামে সমাজে মানুষের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়। সেখানে যেনতেন উপায়ে দান করে নিজেকে জাহির করার মনোবাসনা পূরণ করা হয়।
উদ্দীপকে বৃদ্ধ লোকটি মানবিক মর্যাদায় উদ্বুদ্ধ একজন ব্যক্তি। তাঁর অভাব থাকলেও আত্মসম্মানবোধ আছে। দুরারোগ্য ব্যাধিতে তিনি অভাবগ্রস্ত হয়ে সংকটে পড়েছেন। নিরূপায় হয়ে তাঁর একসময়ের কর্মচারীর ছেলের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু বিশ টাকার নোট দিয়ে ছবি ওঠাতে চাইলে তা অমর্যাদাকর জ্ঞান করেন। এজন্য সেই টাকা ফেরত দিয়ে তিনি চলে যান। এতে তাঁর মানবিক মর্যাদাবোধের পরিচয় প্রকাশ পায়। মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে ভিক্ষাবৃত্তিকে লেখক নিরুৎসাহিত করেছেন। তিনি মনে করেন, এতে ব্যক্তির মানসিক মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়। ইসলামের নবি এক লোককে ভিক্ষার পরিবর্তে কুঠার কিনে দেন পরিশ্রম করে বাঁচার জন্য। নবি বলেছেন, ওপরের হাত সবসময় নিচের হাত থেকে শ্রেষ্ঠ। নিচের হাত মানে যে মানুষ হাত পেতে গ্রহণ করে। হাত পাতা বা ভিক্ষা চাওয়া তাইতো নিকৃষ্ট কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে একান্ত বিপদে পড়ে যারা সাহায্য প্রার্থী হয় তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়া দরকার। বিত্তবানদের দানের নামে সন্তা ও মামুলি জিনিস দিয়ে তাদেরকে অপমান করা উচিত নয়। এমনটি করলে মনুষ্যত্ব যেমন লোপ পায় তেমনি মানবিক মর্যাদাও ক্ষুণ্ন হয়। লেখকের এমন চিন্তা উদ্দীপকের বৃদ্ধ লোকটির দান ফেরানোর মধ্য দিয়ে প্রস্ফূটিত হয়েছে।
৮. উদ্দীপক-১: কবির সাহেবের কাছে একটি অনাথ ছেলে এসে কাজ চাইলে তিনি তাকে দশটি টাকা ভিক্ষা দিয়ে বিদায় করে দেন।
উদ্দীপক-২: বাদল সাহেবের কাছ একটি অনাথ ছেলে এসে ভিক্ষা চাইলে তিনি তাকে কাজের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য বদলের প্রস্তাব দেন। ছেলেটি তাতে রাজি হলে তাকে তিনি একটি সরকারি কারিগরি শিক্ষা কেন্দ্রে ভর্তি করিয়ে দেন। ছেলেটির হোস্টেলে থাকা-খাওয়া বাবদ হয় খরচ আসে তা বাদল সাহেব বহন করেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিনামূল্যে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করে ছেলেটি আজ স্বাবলম্বী।
ক. মানব কল্যাণের কুৎসিত রূপ কোথায় দেখা যায়?
খ. ‘এ সত্যটা অনেক সময় ভুলে থাকা হয়।’ – কোন সত্যটা? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপক-১ ‘মানব কল্যাণ’ প্রবন্ধের কোন দিকটিকে তুলে ধরে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উদ্দীপক-২ এ ‘মানব কল্যাণ’ রচনার মূলভাব ফুটে উঠেছে’- মন্তব্যটির যথার্থতা আলোচনা করো।
৮ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মানব কল্যাণের কুৎসিত রূপ আমাদের আশপাশে, চারদিকে তাকালেই দেখা যায়।
খ. সব রকম কল্যাণকর্মেরই যে সামাজিক পরিণতি রয়েছে, সে সত্যটা অনেক সময় ভুলে থাকা হয়। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের সবকিছুর সঙ্গেই তার সম্পর্ক বিদ্যমান। ফলে মানুষের কর্মের সাথে যে কেবল ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকে তা নয়, তার সামাজিক পরিণতি বা ঝড়পরধষ ঈড়হংবয়ঁবহপব-ও অবিচ্ছিন্ন। যেহেতু সব মানুষই সমাজের অঙ্গ তাই তার সব রকম কল্যাণ-কর্মেরও রয়েছে সামাজিক পরিণতি। আর এ সত্যটিই অনেক সময় ভুলে থাকা হয়।
গ. উদ্দীপক-১ আলোচ্য প্রবন্ধে উল্লিখিত ‘মানব-কল্যাণ’ সম্পর্কে মানুষের ভ্রান্ত ধারণার স্বরূপ তুলে ধরে। মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে আবুল ফজল মানব কল্যাণ সম্পর্কে মানুষের প্রচলিত ধারণাটি তুলে ধরেছেন। অধিকাংশ মানুষেরই বিশ্বাস মানুষকে করুণাবশত দান-খয়রাত করলেই তার কল্যাণ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে এর মধ্য দিয়ে মানুষের প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করা হয়। বলে মনে করেন আবুল ফজল। তাঁর মতে, করুণা প্রদর্শনে নয় বরং দুস্থ মানুষকে তার হীন দশা থেকে মুক্ত করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহায্য করার মাধ্যমেই সত্যিকারের মানব কল্যাণ সম্ভব।
উদ্দীপক-১-এ আমরা দেখি কবির সাহেবের কাছে একটি ছেলে এসে কর্মসংস্থানের জন্য আবেদন জানায়। কবির সাহেব তাকে দশটি টাকা দিয়ে বিদায় করে দেন। এর মধ্য দিয়ে কবির সাহেবের সংকীর্ণ মনোবৃত্তির স্বরূপই ফুটে উঠেছে। ছেলেটিকে তিনি স্বাবলম্বনের পথ প্রদর্শনের পরিবর্তে ভিক্ষাবৃত্তিতে উৎসাহিত করেন, যা মানুষের জন্য সবচেয়ে মর্যাদাহানিকর কাজ। দশ টাকা দান করাকেই কবির সাহেব মানব-কল্যাণ হিসেবে মনে করেছেন। ‘মানব-কল্যাণ’ রচনা অনুসারে বলা যায়, কবির সাহেবের এ ভাবনাটি নিতান্তই অমূলক ও ভ্রান্ত।
ঘ. সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে মানুষের সার্বিক মঙ্গল সাধনই ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের মূলভাব, যার স্বরূপ উদ্দীপক-২ এ ফুটে উঠেছে।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে আবুল ফজল মানব কল্যাণ ধারণাটির তাৎপর্য বিচারে সচেষ্ট হয়েছেন। সাধারণত অনেকেই দান-খয়রাত করাকেই মানব-কল্যাণ ভেবে ভুল করেন। লেখকের মতে, মানব কল্যাণ হলো মানুষের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করার নিরন্তর প্রয়াস। উদ্দীপক-২ এ আমরা ইতিবাচক একটি সামাজিক বার্তার সন্ধান পাই। বাদল সাহেবের কাছে একটি ছেলে ভিক্ষা চাইলে তিনি ছেলেটিকে স্বাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ দেন। ছেলেটি তাঁর কথায় রাজি হলে তিনি ছেলেটির পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ শেখার ব্যবস্থ করে দেন। ছেলেটির ভরণ-পোষণের দায়িত্বও কাঁধে তুলে নেন। বাদল সাহেবের প্রত্যক্ষ সহযোগিতাই সেদিনের দুস্থ ছেলেটিকে মর্যাদাবান, স্বাবলম্বী মানুষে পরিণত করেছে। মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখকও ঠিক এভাবেই মানব কল্যাণ নিশ্চিতের প্রত্যাশী।
মানব-কল্যাণের মূল লক্ষ্য অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানো। একজন ভিক্ষুককে কয়েকটি টাকা বা অন্য কোনো সাহায্য দান করার মাধ্যমে তার সার্বিক মঙ্গল নিশ্চিত করা যায় না বরং এতে তার মর্যাদাহীন অবস্থাকেই প্রকারান্তরে সমর্থন হয়। এই বিষয়টিকেই আলোচ্য প্রবন্ধ মানুষের মনুষ্যত্ববোধ ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করার শামিল বলেছেন। উদ্দীপকের বাদল সাহেবের মাঝেও এ বিষয়ে সচেতনতা লক্ষণীয়। প্রবন্ধের লেখকের মতে, এ ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হয়ে আমাদের মানুষের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল নিশ্চিতে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। তাঁর মতে, মানুষকে মর্যাদার সাথে জীবনযাপনে সক্ষম করে তোলাই মানব-কল্যাণের প্রস্তুত উদ্দেশ্য। মানুষের মাঝে মনুষ্যত্ববোধ, মুক্তবুদ্ধির জাগরণ এবং স্বাবলম্বনের মাধ্যমে আত্মমর্যাদা অর্জনই কল্যাণকামী সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। উদ্দীপকের বাদল সাহেবের মাঝে এই প্রয়াসই ফুটে উঠেছে। সুতরাং উদ্দীপক-২ এ আলোচা প্রবন্ধের মূলভাব অৰ্থাৎ প্ৰকৃত মানৰ-কল্যাণ নিশ্চিতকরণের প্রসঙ্গটি ফুটে উঠেছে। অর্থাৎ, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।
৯. চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা, আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা যেখানে নেই সেখানে মুক্তি নেই। মানুষের অগ্নবস্ত্রের সমস্যা। সিমাধানের চেষ্টা করতে হবে এই মুক্তির দিকে লক্ষ রেখে। ক্ষুৎপিপাসায় কাতর মানুষটিকে তৃপ্ত রাখতে না পারলে আব্বার অমৃত উপলদ্ধি করা যায় না বলেই ক্ষুৎপপাসার তৃপ্তির প্রয়োজন। একটা বড়ো লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি রেখেই অল্পবঘ্নের সমাধান করা ভালো, নইলে তা আমাদের বেশি দূর নিয়ে যাবে না।
ক. কীসের সাথে মানব-মর্যাদার তথ্য ঐঁসধহ ফরমহরঃু-র সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য?
খ. ‘দুঃখের বিষয়’ বলতে প্রাবন্ধিক কী বুঝিয়েছেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকটি ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের সাথে কীভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক ও ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধ অবলম্বনে মতামত দাও।
৯ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মানব-কল্যাণের সাথে মানব-মর্যাদার তথা ঐঁসধহ ফরমহরঃু-র সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।
খ. আমরা যে বাংলাদেশের মহৎ প্রতিভাদের রেখে যাওয়া আদর্শের উত্তরাধিকারকে জীবনে প্রয়োগ করতে পারিনি, ‘দুঃখের বিষয়’ বলতে প্রাবন্ধিক এ বিষয়টি বুঝিয়েছেন। সত্যিকার মানব-কল্যাণ মহৎ চিন্তা-ভাবনার ফসল। যুগে যুগে বাংলাদেশে অনেক মহৎ প্রতিভার জন্ম হয়েছে। তাঁরা আমাদের জন্য মানবিক চিন্তা ও আদর্শের উত্তরাধিকার রেখে গেছেন। কিন্তু আমরা সেই আদর্শের পথে চলতে ব্যর্থ হয়েছি। ‘দুঃখের বিষয়’ বলতে প্রাবন্ধিক এ বিষয়টিকেই বুঝিয়েছেন।
গ. মানব কল্যাণে মানুষের জৈব অস্তিত্বকে প্রাধান্য দেওয়া সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণার স্বরূপটিই উদ্দীপকটিকে ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধের আলোচ্য প্রবন্ধের লেখক আবুল ফজল ‘মানব কল্যাণ’ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকেরই ধারণা ভিক্ষা সাথে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।
আলোচ্য প্রবন্ধের লেখক আবুল ফজল ‘মানব-কল্যাণ’ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকেরই ধারণা ভিক্ষা বা অন্য কোনোভাবে অনুগ্রহ প্রদান করতে পারলেই বুঝি মানব কল্যাণ নিশ্চিত হয়। কিন্তু আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক তুলে ধরেছেন, মনুষ্যত্বকে বাদ দিয়ে কেবল মানুষের জৈব অস্তিত্বকে প্রাধান্য দিয়ে মানব-মঙ্গলের প্রয়াস ফলপ্রসূ হতে পারে না।
উদ্দীপকে মানবমুক্তির লক্ষ্যে মানুষের মানসিক মুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে মানুষের জৈবিক চাহিদাকে অস্বীকার করা হয়নি।
তবে মানবিক সত্তার মুক্তি ব্যতীত কেবল ক্ষুৎপিপাসা নিবারণের ভাবনা ভাবলে সমাজের বিশেষ কোনো পরিবর্তন সাধন সম্ভব নয়।
মানসিক মুক্তির প্রথম সোপানই হলো মনুষ্যত্ববোধে উজ্জীবিত হওয়া। মানুষের সার্বিক উন্নয়নে জৈবিক চাহিদা ও মানসিক মুক্তির এই দ্বান্দ্বিক অবস্থানের স্বরূপ ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধেও প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ. উদ্দীপক ও আলোচ্য প্রবন্ধ অবলম্বনে বলা যায়, মানুষের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য চাই মানবিক বোধ ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা। ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে আবুল ফজল সচেষ্ট হয়েছেন মানব কল্যাণ ধারণাটির তাৎপর্য বিচারে। করুণাবশত দান-খয়রাত করাকে লেখক মানব-কল্যাণ নয় বরং মানব-অবমাননা বলেই মনে করেন। তাঁর মতে, মানব কল্যাণ হলো মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াস যার লক্ষ্য সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানো। তিনি বিশ্বাস করেন, মুক্তবুদ্ধির চর্চাই মানবিক পৃথিবী নির্মাণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
উদ্দীপকে মানুষের সার্বিক মুক্তি বলতে চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা ও আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতাকে নির্দেশ করা হয়েছে। ক্ষুৎপিপাসা মিটলেও মানসিক মুক্তির দেখা না মিললে কখনোই মানবিক পৃথিবীর প্রত্যাশা করা যায় না। তাই ক্ষুৎপিপাসা মেটানোর সাথে সাথে মানসিক মুক্তির দিকটিকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে উদ্দীপকে। এক্ষেত্রে প্রকারান্তরে মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও মনুষ্যত্বের বিকাশকেই উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং মানব কল্যাণ’ প্রবন্ধেও এ বিষয়গুলোকে মানব কল্যাণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য বলে বিবেচনা করা হয়েছে।
মানব-কল্যাণ প্রকৃতপক্ষে কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিষয় নয়, কেবল সদিচ্ছার ওপরও এটি নির্ভরশীল নয়। মানব কল্যাণে সমাজের প্রতিটি পর্যায়ের সমন্বিত অংশগ্রহণ এবং পরিকল্পনামাফিক কার্যক্রম পরিচালনা জরুরি। কেবল মানুষের জৈবিক চাহিদা মিটলেই মানব-কল্যাণ সময় কল্যাণ হলেও গোটা সমাজের মানবিক উন্নয়ন নিশ্চিত না হলে কোনো কল্যাণ প্রয়াসই দীর্ঘস্থায়ী সফলতার মুখ দেখে না। নিশ্চিত করা যায় না। সমাজের মানুষ ও সামাজিক কর্মকা-গুলো একে অপরের সাথে ঘনিষ্টভাবে সংযুক্ত। তাই ব্যক্তির বা ব্যক্তিগোষ্ঠীর অৰৰ কল্যাপে তাই প্রয়োজন সেই সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তৎপর হওয়া, যা মানুষকে মানুষ হিসেবে নিজের মর্যাদা বুঝতে শেখাবে। আলোচ্য প্রবন্ধে রয়েছে। উদ্দীপক ও প্রবন্ধের সার্বিক বিশ্লেষণে বলা যায়, মুক্তবুদ্ধির চর্চার মাধ্যমে মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি অন্যকেও মর্যাদা দিতে শেখাবে। এমন মানবিক সমাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে মুক্তবুদ্ধি চর্চার বিকল্প নেই, যার তাগিদ উদ্দীপক ও মোনবিক সমাজ নির্মাণ করতে পারলেই প্রকৃত মানব-কল্যাণ নিশ্চিত হবে।
১০. আর্থিক সংগতি না থাকায় ষষ্ঠ শ্রেণিতেই পড়াশোনার ইতি টানতে বাধ্য হয়েছিলেন পলান সরকার। তিনি ছিলেন বই পাগল মানুষ। প্রতিবছর স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যারা ১ থেকে ১০-এর মধ্যে মেধাতালিকায় স্থান পেত, তাদের তিনি একটি করে বই উপকার দিতেন। এখান থেকেই শুরু হয় তার বই বিলির অভিযান। একটানা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে করেছেন এই কাজ। নিজের টাকার কিনে পায়ে হেঁটে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ছোটো-বড়ো সবার দোরগোড়ায় বই হাতে পৌঁছে যেতেন পলান সরকার। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমি হাঁটতে হাঁটতে এই সমাজটাকে বদলানোর আন্দোলনে নেমেছি।”
ক. ‘র্যাশনাল’ শব্দের অর্থ কী?
খ. কীভাবে কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব বলে প্রাবন্ধিক মনে করেন?
গ. উদ্দীপকের পলান সরকারের প্রয়াসে ‘মানব-কল্যাণ’ রচনার কোন প্রসঙ্গটি লক্ষণীয়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “লান সরকারের মাঝে ‘মানব-কল্যাণ’ রচনার লেখকের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে।’ – মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
১০ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘র্যাশনাল’ শব্দের অর্থ- বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন।
খ. প্রাবন্ধিক মনে করেন, মুক্তবুদ্ধির চর্চার মাধ্যমে সুপরিকল্পিত পথে কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব। ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক মানব-কল্যাণের প্রকৃত তাৎপর্য উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন অনেকে দুস্থ মানুষকে করুণাবশত দান-খয়রাত করাকে মানব কল্যাণ বলে মনে করেন। কিন্তু লেখকের মতে, এমন কাজ সংকীর্ণ মনোভাবের পরিচায়ক। কালে এভাবে কখনোই কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব নয়। তাঁর মতে, মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াসই হলো মানব-কল্যাণ। অর্থাৎ সঙ্গ অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানোই মানব-কল্যাণ। তাই প্রাবন্ধিকের বিশ্বাস মুক্তবুদ্ধির চর্চার মাধ্যমে পরিকল্পনামাফিক পথেই কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব।
গ. উদ্দীপকের পলান সরকারের প্রয়াসে ‘মানব কল্যাণ’ প্রবন্ধে উল্লিখিত মনুষ্যত্ব ও মুক্তবুদ্ধির বিকাশের মাধ্যমে সমাজ বদলের প্রচেষ্টার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে আবুল ফজল মানব কল্যাণে মানবিক-বৃত্তি তথা মনুষ্যত্বের বিকাশ এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। লেখকের মতে, মানব-কল্যাণ মলত মানুষকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছাতে সহায়তা করাকেই বোঝায়। তার জন্য সমাজের জনসমষ্টির মাঝে মানবিকতা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
উদ্দীপকে উল্লিখিত পলান সরকার একজন মহৎপ্রাণ ব্যক্তি। আজীবন তিনি নিঃস্বার্থভাবে মানুষকে স্বশিক্ষিত করার জন্য বই বিলিয়ে গিয়েছেন। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ মূল্যবোধের অধিকারী হয়, যা মনুষ্যত্ববোধে উজ্জীবিত হওয়ারই উপায়। মুক্তবুদ্ধির চর্চায়ও বই পড়ার বিকল্প নেই। এভাবেই বইয়ের মাধ্যমে সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখেছেন পলান সরকার। মানব কল্যাণ রচনায়ও মনুষ্যত্বের বিকাশ ও মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।
ঘ. প্রকৃত মানব-কল্যাণ নিশ্চিতকরণে নিবেদিত হওয়ায় পলান সরকারের মাঝে ‘মানব-কল্যাণ’ রচনার লেখকের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে।
আলোচ্য প্রবন্ধে আবুল ফজল সত্যিকারের মানব কল্যাণের স্বরূপ ও তার তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। দান-খয়রাতের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করার ধারণাটি সংকীর্ণতার পরিচায়ক এবং এতে মানুষের মর্যাদাকে অবমাননাই করা হয়। লেখকের মতে, সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানোই মানব কল্যাণের আসল উদ্দেশ্য। এজন্য তিনি মুক্তবুদ্ধির সহায়তার মানবিক পৃথিবী নির্মাণের প্রত্যাশী। উদ্দীপকে বর্ণিত পলান সরকার ছিলেন নিঃস্বার্থ এক বইয়ের ফেরিওয়ালা। ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষের কাছে জ্ঞানের আলো বিতরণ করে বেড়িয়েছেন তিনি। স্বশিক্ষায় সুশিক্ষিত মানুষেরাই মনুষ্যত্ব ও মুক্তবুদ্ধির ধারক। আর তেমন মানুষ সৃষ্টিতেই ভূমিকা রাখতে চেয়েছেন পলান সরকার। এভাবেই সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা উচিত বলে ‘মানব-কল্যাণ’ রচনায় উল্লেখ করেছেন লেখক।
আলোচ্য প্রবন্ধের লেখকের মতে, মানব-কল্যাণকে কেবল ব্যক্তিপর্যায় থেকে দেখলেই হবে না। একজন মানুষের জৈবিক অস্তিত্বের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে তাকে কিছু সহায়তা করার নাম মানব কল্যাণ নয়। মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সমাজ সংস্কারের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে প্রবন্ধে। এক্ষেত্রে লেখক মানুষকে মানুষ হিসেবে এবং মানবিক-বৃত্তির বিকাশের পথ ধরে বেড়ে উঠতে দেওয়ার যথাযথ ক্ষেত্র রচনাকে বলেছেন মানব কল্যাণের প্রথম সোপান। প্রতিটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানেরই এ সোপান রচনার সমন্বিতভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং মানবিক সমাজ গড়তে হবে। তবেই মানুষের প্রকৃত মর্যাদা নিশ্চিত হবে। মানুষকে মৃত্যু হিসেবে দেখার ক্ষেত্রে মুক্তবুদ্ধির চর্চার বিকল্প নেই। তাই লেখক মানব-কল্যাণ নিশ্চিতে এ দিকটিতেও জোর দিয়েছেন। উদ্দীপকের পলান সরকার মানুষকে স্বশিক্ষিত করে তুলতে সবার দোরগোড়ায় বই পৌঁছে দিয়েছেন। জ্ঞানের স্পর্শে মানুষের মনের সংকীর্ণতা ল হয়। মানুষের মাসে মুলাবোধ তথা, মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ ঘটে। মুক্তবুদ্ধির চর্চায় মানবিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যেই নিঃস্বার্থভাবে কর করে গেছেন পলান সরকার। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল মানুষের সত্যিকারের কল্যাণ নিশ্চিত করা। তিনি তাই ‘মানব-কল্যাণ’ রচনার লেখকের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হয়েছেন বলেই আমি মনে করি। অর্থাৎ আমার মতে, প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথাযথ।
