টেক্সট বুক অ্যানালাইসিস
ক জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
১. কাজী নজরুল ইসলাম কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : ১৮৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
২. কাজী নজরুল ইসলাম বর্ধমান জেলার কোন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
৩. কাজী নজরুল ইসলামের পিতার নাম কী?
উত্তর : পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ।
৪. কাজী নজরুল ইসলামের মাতার নাম কী?
উত্তর : মাতার নাম জাহেদা খাতুন।
৫. বাংলাদেশের বিদ্রোহী কবি বলা হয় কাকে?
উত্তর : বাংলাদেশের বিদ্রোহী কবি বলা হয় কাজী নজরুল ইসলামকে।
৬. বাংলাদেশের জাতীয় কবি বলা হয় কাকে?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলামকে।
৭. কাজী নজরুল ইসলাম কত খ্রিষ্টাব্দে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলাম ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।
৮. কাজী নজরুল ইসলাম কত বছর বয়সে দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলাম ৪৩ বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
৯. কাজী নজরুল ইসলাম কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
১০. কাজী নজরুল ইসলামের কবর কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে অবস্থিত।
১১. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক তাঁর পথ চলার আগে কাকে সালাম জানাচ্ছেন?
উত্তর : ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক তাঁর পথ চলার আগে ‘তাঁর সত্যকে’ সালাম জানাচ্ছেন।
১২. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের কোন ভয় প্রাবন্ধিককে বিপথে নিয়ে যাবে না?
উত্তর : রাজভয়-লোকভয় প্রাবন্ধিককে বিপথে নিয়ে যাবে না।
১৩. অন্তরে কোনো ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের ভয় না থাকলে বাইরের কোনো ভয়ই কিছু করতে পারে না?
উত্তর : অন্তরে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের মিথ্যার ভয় না থাকলে বাইরের কোনো ভয়ই কিছু করতে পারে না।
১৪. কে বাইরের ভয় পায়?
উত্তর : যার ভেতরে ভয় সে বাইরের ভয় পায়।
১৫. কাজী নজরুল ইসলাম এর মতে, কী চিনলে মানুষের মনে আপনা-আপনি একটা জোর আসে?
উত্তর : নিজেকে চিনলে মানুষের মনে আপনা-আপনি একটা জোর আসে।
১৬. অনেক সময় কী দেখাতে গিয়ে নিজের সত্যকে অস্বীকার করে ফেলা হয়?
উত্তর : অনেক সময় বিনয় দেখাতে গিয়ে নিজের সত্যকে অস্বীকার করে ফেলা হয়।
১৭. অতিরিক্ত বিনয় মানুষকে কী করে?
উত্তর : অতিরিক্ত বিনয় মানুষকে ছোট করে।
১৮. গান্ধীজি তাঁর দেশবাসীকে কী শেখাচ্ছিলেন?
উত্তর : গান্ধীজি তার দেশবাসীকে স্বাবলম্বন শেখাচ্ছিলেন।
১৯. কাজী নজরুল ইসলামের মতে, অন্তরে কী থাকলে বাইরের গোলামি ভাব থেকে রেহাই পাওয়া যায় না?
উত্তর : অন্তরে গোলামির ভাব থাকলে বাইরের গোলামিভাব থেকে রেহাই পাওয়া যায় না।
২০. প্রাবন্ধিকের মতে, কী চিনলে আত্মনির্ভরতা আসে?
উত্তর : আত্মাকে চিনলে আত্মনির্ভরতা আসে।
২১. নজরুলের মতে, নিজে কী থেকে অন্য একজন মহাপুরুষকে প্রাণপণে ভক্তি করলেও দেশ উদ্ধার হবে না?
উত্তর : নিজে থেকে অন্য একজন মহাপুরুষকে প্রাণপণে ভক্তি করলেও দেশ উদ্ধার হবে না।
২২. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে কাকে নিজের ভগবান মনে করা ভণ্ডামি নয়?
উত্তর : নিজ আত্মাকে নিজের ভগবান মনে করা ভণ্ডামি নয়।
২৩. কী থাকলে মানুষের ধর্মের বৈষম্যের ভাব থাকে না?
উত্তর : আদম সত্যের মিল থাকলে মানুষের ধর্মের বৈষম্যের ভাব থাকে না।
২৪. নেতৃত্ব প্রদানের সামর্থ্য আছে এমন ব্যক্তিকে কী বলা হয়?
উত্তর : নেতৃত্ব প্রদানের সামর্থ্য আছে এমন ব্যক্তিকে কর্ণধার বলা হয়।
২৫. ‘কুর্নিশ’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর : ‘কুর্নিশ’ শব্দটির অর্থ অভিবাদন বা সম্মান প্রদর্শন।
২৬. কী করতে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়?
উত্তর : সমাজের নিয়ম পাল্টাতে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়।
২৭. সমাজের নিয়ম পাল্টাতে গেলে কাদের আক্রমণের শিকার হতে হয়?
উত্তর : সমাজের নিয়ম পাল্টাতে গেলে সমাজ-রক্ষকদের আক্রমণের শিকার হতে হয়।
২৮. ‘মেকি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : মেকি শব্দের অর্থ কপট।
২৯. ‘আগুনের ঝাণ্ডা’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর : ‘আগুনের ঝাণ্ডা’ শব্দটির অর্থ অগ্নিপতাকা।
৩০. ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?
উত্তর : ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি ‘রুদ্র-মঙ্গল’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
৩১. কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমি’ ভাবনা বিন্দুতে কীসের উচ্ছ্বাস জাগায়।
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমি’ ভাবনা বিন্দুতে সিন্ধুর উচ্ছ্বাস জাগায়?
৩২. কাজী নজরুল ইসলাম মানুষকে আরেক মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে কী হয়ে উঠতে চেয়েছেন?
উত্তর : কাজী নজরুল ইসলাম মানুষকে আরেক মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে ‘আমরা’ হয়ে উঠতে চেয়েছেন।
৩৩. কোনটি কাজী নজরুল ইসলামের প্রাণ প্রাচুর্যের উৎস বিন্দু?
উত্তর : সত্যের উপলব্ধি কাজী নজরুল ইসলামের প্রাণ প্রাচুর্যের উৎস বিন্দু।
খ অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
১. ‘আমার পথ দেখাবে আমার সত্য।’- কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিককে তাঁর কর্ণধার পথ দেখাবে।
কর্ণধার বলতে প্রাবন্ধিক মানুষের ভেতরকার ঐশ্বরিক শক্তি বা অলৌকিক ক্ষমতাকে বুঝিয়েছেন। মানুষের মগজ ও মন পরম স্রষ্টার পরম শক্তি জ্ঞানশক্তি ও প্রেমশক্তিতে ভরপুর। প্রাবন্ধিকের বিশ্বাস সত্য সব অসৎ শক্তিকে পরাজিত করে মানুষকে পূর্ণতার পথে নিয়ে যায়। তাই প্রাবন্ধিকের সত্য বা ঐশীশক্তি বা সৎ শক্তি সকল প্রকার আলস্য কর্ম-বিমুখতা, পঙ্গুত্ব, নৈরাজ্য, অবিশ্বাস ও জরাজীর্ণতাকে পিছনে ফেলে তাকে ন্যায় ও সত্যের পথ দেখাবে।
২. কাজী নজরুল ইসলাম-এর মতে, দেশের দীর্ঘদিনের পরাধীনতার কারণ কী?
উত্তর : আত্মনির্ভরতার অভাবই কাজী নজরুল ইসলামের মতে দেশের দীর্ঘদিনের পরাধীনতার কারণ।
কাজী নজরুল ইসলাম মনে করেন, আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে। তিনি বিশ্বাস করেন, এই আত্মনির্ভরতা যেদিন সত্যি সত্যিই আমাদের আসবে, সেইদিনই আমরা স্বাধীন হব। কিন্তু আমরা নিজের প্রতি বিশ্বাস না রেখে গান্ধীজির মতো মহাপুরুষের ওপর নির্ভর করেছিলাম। বলে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন বিলম্বিত হয়েছিল। অর্থাৎ স্পষ্টত বোঝা যায়, কাজী নজরুল ইসলাম আত্মনির্ভরতার অভাবকেই পরাধীনতার কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন।
৩. ‘মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম।’ কেন?
উত্তর : বিদ্রোহী ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা তুলে ধরেছেন।
আমরা সবাই একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। সবাই মিলে একই আকাশের তলে বসবাস করি, সবার রক্তই লাল, সৃষ্টিকর্তার আলো, বাতাস, খাদ্য উপভোগ করি। আবার আমরা সবাই একই সত্তার গুণগান করি। তাই ধর্মের মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই। মানুষ হিসেবে আমরা একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি এজন্য প্রাবন্ধিকের কাছে ‘মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম’।
৪. ‘আমি আছি’- এই কথা না বলে সবাই বলতে লাগলাম ‘গান্ধীজি আছেন”- উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : “আমি আছি’ এই কথা না বলে সবাই বলতে লাগলাম গান্ধীজি আছেন”-উক্তিটিতে আমরা যে গান্ধীজির আদর্শ ঠিকমতো বুঝতে পারি নি তা বোঝানো হয়েছে।
মহাত্মা গান্ধী জাতির অভিভাবকরূপে এদেশের মানুষদের স্বাবলম্বনের শিক্ষা দিচ্ছিলেন। প্রত্যেকটি মানুষকে শেখাচ্ছিলেন নিজের ওপর বিশ্বাস অটুট রাখতে। কিন্তু সেদিন আমরা তাঁর আদর্শ, তাঁর কথা ঠিক বুঝিনি। ফলে আমরা নিজের অস্তিত্বের ঘোষণা না করে বলেছিলাম, ‘গান্ধীজি আছেন’। আর নিজের পরিবর্তে গান্ধীজির ওপর নির্ভরশীলতার বিষয়টিই ব্যক্ত হয়েছে আলোচ্য উক্তিতে।
৫. অন্তরে মিথ্যার ভয় থাকলে প্রাবন্ধিক কেন বাইরের ভয়কে ভয় মনে করেন?
উত্তর : অন্তরে যদি ভণ্ডামি, ছলনা, দুর্বলতা থাকে তাহলে বাইরের যে-কোনো শক্তিই তাকে পরাজিত করে বলে প্রাবন্ধিক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
যে-বাংলাদেশ সারা পৃথিবীর লোককে দিনের পর দিন নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতে পারে তারাই আজ সকলের দ্বারে ভিখারি। এদেশের ঐশ্বর্য বিদেশিরা লুটে নিয়ে যায় তার প্রতিবাদ না করে বাংলাদেশের মানুষেরা তাদের গোপনে সাহায্য করে বলে প্রাবন্ধিক আলোচ্য উক্তির অবতারণা করেছেন।
৬. কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দু-মুসলমানদের মিলনের অন্তরায়কে দূর করতে চেয়েছিলেন কেন?
উত্তর : মানব-ধর্মকে সবচেয়ে বড় ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করায় এবং হিন্দু-মুসলমানের মিলন প্রত্যাশায় কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায়কে দূর করতে চেয়েছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলাম আজীবন মানব-ধর্মে বিশ্বাসী। তাঁর কাছে মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায় বা ফাঁকি কোনখানে তা দেখিয়ে দিয়ে এর গলদ দূর করা এবং দেশব্যাপী মানব-ধর্ম তথা সব ধর্মের মানুষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা। আর এই কারণেই তিনি হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায় দূর করতে চেয়েছিলেন।
৭. ‘ভুলের মধ্য দিয়েই সত্যকে পাওয়া যায়।’বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : পৃথিবীতে যেমন অন্ধকার ভেদ করে আলো উদ্ভাসিত হয় তেমনি ভুলের পাহাড়ের মধ্য দিয়েই প্রকৃত সত্যের সন্ধান পাওয়া যায়।
মানুষ পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর এই পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধের দ্বারা আকৃষ্ট হয়। ইন্দ্রিয়ের দ্বারা সে প্রতিনিয়ত ভুল করে। সে ভুল যদি নিজের জ্ঞান দ্বারা সে নিজে উপলব্ধি করে তাহলে নিজেকে সংশোধন করা যায়। সংশোধিত হওয়ার পর সে তার প্রকৃত সত্য খুঁজে পায়। তাই এ কথা বলা যায় যে, মানুষ ভুল করে, সে ভুল আবার কখনো ফুল হয়ে ফুটে ওঠে।
৮. ‘যার নিজের ধর্মে বিশ্বাস আছে, যে নিজের ধর্মের সত্যকে চিনেছে, সে কখনো অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না।’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সুন্দরের পূজারি কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে মানব-ধর্মের কথা বলেছেন।
ধর্মে কোনো ভেদাভেদ বা বৈষম্য নেই। পৃথিবীতে প্রত্যেক ধর্মই সত্য। শুধু ধর্মের ক্রিয়াকলাপ বা আচার-অনুষ্ঠান এক এক ধর্মের এক এক রকম। যে তার নিজের ধর্মের বিধি-বিধান সঠিকভাবে দিব্যজ্ঞানে চিনতে পারে তার অন্য ধর্মের প্রতি কোনো বিদ্বেষ বা অবহেলা থাকতে পারে না। তাই নিজ ধর্মের স্বরূপ জানলে নিজ ধর্মের প্রতি বিশ্বাস স্থাপিত হয় এবং সেই-ই প্রকৃত সত্য জানতে পারে বলে তার অন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণা থাকে না।